কনে দেখা আলো পর্ব-১২+১৩

0
242

#উপন্যাস
#কনে_দেখা_আলো
#পর্ব_বার

নিজের ডেরায় ঢুকে হাঁপাতে থাকে শমসের। একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে আজ। আরেকটু হলেই মেয়েটা তাকে ধরে ফেলেছিল প্রায়। জঙ্গল থেকে বিদায় হয়েছে নিশ্চিত হওয়ার পরেই সে নিজের ডেরায় ঢুকেছে।
হ্যাঁ, আজ প্রায় তিনমাস যাবত এই জীর্ণশীর্ণ ভাঙাচোরা মন্দিরটাই তার ডেরা। সামনে ইয়াবড় জিভ বের করে রাখা প্রায় প্রমাণ সাইজের এক কালীমূর্তি। এক হাত কনুই থেকে খসে পড়া। তবু খড়গ ধরা হাতটি এখনো অক্ষত। মাঝরাতে যখন ঘুম ভেঙে যায়, তখন সেই খড়গ ধরা হাতের দিকে তাকালে যেকোনো দুর্বলচিত্ত মানুষের সেখানেই ভবলীলা সাঙ্গ হয়ে যাওয়ার কথা। প্রথমদিকে তারও যে একটু আধটু ভয় ভয় লাগত না, একথা গলায় জোর দিয়ে বলতে পারে না। কিন্তু সেটাকে পাত্তা দেওয়ারও বান্দা সে নয়।
নীরব নির্জন জঙ্গলে রাত বিরেতে কতরকম যে শব্দ হয়! পাতার শনশন… মর্মর! বিজাতীয় কোনো পাখির বিচিত্র সুর, বন্যপ্রাণীর গা হিম করা চিৎকার! মাঝে মাঝে মাটির ওপর দিয়ে কী যেন হেঁটে যায় বুকে ভর করে। প্রথমদিকে যখন ঘুম আসতে চাইত না, তখন মাদুরে শুয়ে শুয়ে এসব আওয়াজ শুনে রাত কাবার করে দিত সে।

শমসেরকে নতুন জীবন দেওয়া ‘শুভাকাঙ্ক্ষী’ লোকটি তাকে এখানে রেখে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করেছিল, ‘কীরে ছ্যাড়া, থাকবার পারি তো এইখানে? ভয়ে মইরা পইড়া থাকিস না য্যান!’
আজীবন কম কথা বলা শমসের সেদিনও খুব বেশি কথা বলেনি। শুধু একবার জিজ্ঞেস না করে পারেনি, ‘আপনে আমারে বাঁচাইবার চাইতাছেন ক্যান?’
‘কারণ তর লগে আমার পীরিত হইছে বুঝছস? বাঁচাইবার চাইতাছেন ক্যান! এ্যাহ! এইডা জাইনা তর কিয়ের কাম? বাঁইচা থাকনের চেষ্টা করিস। মূর্তি দেইখা ভয় খাওনের কিছু নাই। যে যাই কউক, এই মাটির মূর্তি তর কুনো ক্ষতি করব না!’
শমসের আর কিছুই জিজ্ঞেস করেনি।

লোকটি যাওয়ার আগে নিজেই বলে গিয়েছিল, ‘আমি আসুম মাঝে মইধ্যে। কিছু শুকনা খাবার দিয়া গ্যালাম। এইডা দিয়া দিন চারেক পার কইরা দে। এই জঙ্গলের এক মাথায় একটা ছোট পাহাড় আছে। সেই পাহাড়ে ছোট মতন একটা ঝর্ণা আছে। সেইখান থেইকা পানি আইনা খাইতে পারবি। আমি অখন যাই। এইখানে আমার বেশিক্ষণ থাকা নিরাপদ না। তুইও একটু চোখকান খুইলা রাখিস কয়েকটা দিন! কুনো অন্যরকম আওয়াজ পাইলে এদিক সেদিকে গা ঢাকা দিস। বুঝছস? বুইঝা শুইনা চলোন লাগব!’
কথাগুলো বলেই সে চলে যেতে উদ্যত হয়েছিল। তারপর কী মনে করে পেছন ফিরে বলেছিল, ‘তরে বাঁচাইয়া রাখতাছি বেবাকের লাইগা। এইডা পরে বুঝবি। তুই বাঁইচা থাকলে ম্যালা মাইনষে বাঁচব! এই গেরামডাও বাঁইচা যাইব।’

কথাগুলো ভীষণ হেঁয়ালির মতো মনে হয়েছিল শমসেরের কাছে। তার এই ঠুনকো জীবনটা কীভাবে অনেক মানুষের জন্য এত দামি, এই ভীষণ কঠিন ধাঁধা সে সমাধান করতে পারেনি। অবশ্য খুব বেশি মাথাও ঘামায়নি এটা নিয়ে। গত কয়েকদিনে তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোই বারবার ঘুরেফিরে মনে পড়েছে আর একে একে ছেঁড়া সুতো জোড়া দিয়ে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করে গেছে শমসের।

জীবনটা তার কোনোদিনই সরল ছিল না। সংগ্রাম করেই বাঁচতে শিখেছে সে আজীবন।
মা মরে গেল হুট করে। অভাবে, কষ্টেশিষ্টে দিনগুলো চলেই যাচ্ছিল তাদের মা-ছেলের। মাঝে মাঝে ওদের একচালা বস্তির টিনের ঘরটাতে মাংসের সুবাস ভেসে আসত। প্রাণ ভরে সেই সুবাস নাকে টেনে নিতে নিতে সে অবাক হয়ে দেখত, মা কেরোসিনের চুলায় গরুর মাংস চড়িয়েছে। একটা পাত্রে পোলাওয়ের চাল ধুয়ে রাখা। শমসের অবাক হয়ে মাকে বলত, ‘ও মা, এগুলান কই পাইছ?’
মা কিছু না বলে মিটিমিটি হাসত। খাওয়ার সময় জোর করে ওর পাতে আরো দুটো মাংসের খণ্ড দিতে দিতে বলত, ‘ভালা কইরা খা। উনি কদ্দিন পরে আইসা বাজারঘাট কইরা দিলেন। আবার কোনদিন আইবার পারবেন কেডায় জানে!’
এই উনি মানে যে কে, এটা বুঝেছে বুদ্ধি হওয়ার পরে। আব্দুল রফিক সাহেব মাসে দুই মাসে তাদের হতদরিদ্র সেই ঘরটাতে পায়ের ধূলি দিত। সেদিন তাদের বাড়িতে ভালোমন্দ রান্না হতো। মা তাকে খেয়ে যাওয়ার জন্য অনেক অনুনয় বিনয় করত। মাঝে মাঝে তিনি খেতে বসতেন, মাঝে মাঝে বসতেন না। সেই দিনের পরেও আরো দশ বারোদিন তাদের কোনো অভাব থাকত না। বাসায় ভালো রান্নাবান্না হতো। মায়ের চোখেমুখে হাসি আনন্দ ঝিলমিল করত।

দিনে দিনে বস্তিতে নানারকম অকথা কুকথা ভেসে বেড়াতে লাগল। কেউ কেউ তাকে পথেঘাটে দেখে নোংরা ইঙ্গিত করে বলত, ‘কীরে ছ্যাড়া, তর মায়ের ভাতার আইছে?’ বলেই অশ্লীল একটা হাসি দিত। পাশ থেকে কেউবা টিপ্পনী কেটে বলত, ‘ভাতার কস ক্যা? ক নাগর! খিক খিক খিক!’
কিশোর শমসের ভোঁস ভোঁস করে ফুঁসত এসব কথা শুনে। মাকে গিয়ে বলত, ‘আমি কামাই কইরা তুমারে খাওয়ামু। তুমি হেই ব্যাডারে আর বাড়িত আইবার দিবা না। যদি দাও, আমি কইলাম গলায় দড়ি দিয়া মরুম!’
ছোটবেলা থেকেই প্রচণ্ড জেদি শমসেরের যেই কথা সেই কাজ। মায়ে তার এই হুমকি শুনে কেঁদে বুক ভাসিয়ে বলত, ‘আচ্ছা বাপ, তর কথাই থাকব। আমি না কইরা দিমু। তুই কিছু করিস না বাপ আমার। আর একটা কথা জাইনা রাখ, তর মায়ে কুনো খারাপ কাম করেনি। তোরে যারা খারাপ কথা কইছে, বেবাকে মিছা কথা কইছে!’

ফ্ল্যাশব্যাকের মতো ঘটনাগুলো ভেসে উঠতে থাকে মনের পর্দায়। মায়ে ছেলের দিনগুলো হাসি আনন্দ দুঃখ কষ্টে কেটেই যাচ্ছিল একরকম।
শমসের বড় হলো। আব্দুল রফিক কিন্তু এতকিছুর পরেও তাদের বাড়িতে ঠিকই আসত। ততদিনে শমসের বুঝতে পেরেছে, যারা আজেবাজে কথা বলে তারা না জেনেই বলে। আব্দুল রফিক আর তার মায়ের মধ্যে এমন কোনো খারাপ সম্পর্ক নাই যার জন্য তার মাকে এমন অপবাদ দেওয়া যায়। যে সম্পর্ক ছিল সেটা ছিল পুরোপুরি মানবতার। মানবতার খাতিরেই আবদুল রফিক তাদের বাড়িতে আসত। তাদেরকে সাহায্য করত। কারণ শমসেরের নানা একসময় তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন। তিনি না থাকলে হয়ত আব্দুল রফিক এতে সহজে কাপড়ের ব্যবসার নাড়ি নক্ষত্র বুঝতে পারতেন না।

কাপড়ের ব্যবসার কাজে অনেক আগে থেকেই শহরে আসা যাওয়া ছিল আব্দুল রফিকের। শমসের তখনো জন্মায়নি। তার নানা মোরশেদুল রহিম তখন বেঁচে ছিলেন। তিনি বেঁচে থাকতে শমসেরদের অবস্থা এত খারাপ ছিল না। মোরশেদুল করিম ছিলেন পাইকারি কাপড়ের বিক্রেতা। ঢাকার গাউসিয়াতে তিনি একটা কাপড়ের দোকানের কর্মচারি ছিলেন। দোকানের জন্য তিনি প্রত্যন্ত এলাকা থেকে খুচরা দরে কাপড় কিনে আনতেন। আব্দুল রফিক ঢাকায় কাপড় কিনতে এসে তার সঙ্গে পরিচিত হয়। কাজের প্রয়োজনে তাকে মোরশেদুল করিমের বাসাতেও আসতে হয়। সেই আসা যাওয়া থেকেই শমসেরের মাও তাকে চিনত।
মোরশেদুল করিম মারা যাওয়ার পরে শমশেরের মা মোটামুটি পানিতে পড়ে যায়। বাপের চাকরিটা তো আর মেয়ের করার উপায় ছিল না। সেটা খাটাখাটুনির কাজ। দুর দূরান্তে যাওয়া আসা করতে হয়। মহিলা মানুষের জন্য ম্যালা ঝক্কির কাজ। জমানো সামান্য যেটুকু টাকা ছিল, সেটাও তখন তলানিতে ঠেকেছে। আর তারচেয়ে বড় বিপদের কথা হলো এই, ততদিনে শমসের দুনিয়াতে এসে গেছে।

মায়ের কাছে নিজের বাবার কথা জানতে চেয়ে সদুত্তর পায়নি শমসের। তার বাবা নাকি বউ বাচ্চাকে রেখে বিদেশে গিয়েছিল। সেখান থেকে আর ফেরেনি। হয়ত সেখানে নতুন সংসার শুরু করেছে তার বাবা।
শমসেরের মন এটুকু উত্তরে সন্তুষ্ট হয়নি। বাবার নাম পরিচয় আর কোন দেশে সে গিয়েছে, এসব ভালোমত জানা থাকলে যে করেই হোক সে তার বাবার খোঁজ সে বের করেই ছাড়ত! কিন্তু এসবের কোনো কিছুই তার বোকাসোকা মায়ের জানা ছিল না।
মোরশেদুল করিমের মেয়ে আর নাতির দুঃসময়ে আব্দুল রফিক সহৃদয়তার হাত বাড়িয়ে দেয়। সেই হাতে কোনো পাপ ছিল না। একদিন নিজের পাশে বসিয়ে আব্দুল রফিক তাকে সবকিছু খুলে বলে। এটা জানার পরে শমসেরের মনেও আর কোনো দ্বিধা থাকে না।

কিন্তু ভাগ্য যাকে জন্মদুঃখী করে দুনিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে, সে কীভাবে এত সহজে সুখের সন্ধান পাবে? বটগাছের মতো ছায়াদাতা মানুষটিই শিকড় উপড়ে চলে গেল!
আব্দুল রফিক তাকে গ্রামে নিয়ে এসে নিজের ব্যবসার কাজে লাগিয়ে দিয়েছিল। ভালোই চলছিল সবকিছু। আব্দুল রফিক শহর থেকে মালামাল নিয়ে আসত। তাকে সবসময় সঙ্গে করে নিয়ে যেত। গ্রামে আব্দুল রফিক আর আব্দুল লতিফ এই দুই ভাইয়ের ভালো দাপট আর প্রভাব প্রতিপত্তি। সেই প্রভাবে শমসেরও মাথা উঁচু করে চলত। সে বেশি একটা কথাবার্তা বলত না। কারো সাথে মিশত টিশত না। কেউ মিশতে এলে অন্যদিকে রাস্তা মাপত। এতকিছুর পরেও কেউ থাকে ঘাঁটাতে আসত না। কিন্তু ভাগ্যের ফের! কী থেকে কী হয়ে গেল!
হয়ত পুলিশের হাতে এতদিনে তার ভবলীলাই সাঙ্গ হয়ে যেত। কিন্তু আবারও এক অপ্রত্যাশিত ‘রক্ষাকবচ’ তাকে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরিয়ে আনল। হয়ত তার অপাপবিদ্ধা জন্মদুঃখী মায়েরই কোনো পুণ্যের প্রতিদান হবে! সৃষ্টিকর্তা বারবার শতেক উছিলায় তাকে নতুন জীবন দান করে চলেছেন!

তিন মাস এই জঙ্গলের সাথে গাঁটছড়া বেঁধে নিয়ে প্রায় অভ্যস্তই হয়ে পড়েছে এতদিনে। তার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী লোকটি মাঝে মাঝে দরকারি জিনিসপত্র দিয়ে যায়। খুবই অল্প আয়োজনে নিজের বেঁচে থাকার ব্যবস্থাটা সে করে ফেলে। সে কথা দিয়েছে, আর কিছুদিন পরে সুযোগমত এখানে থেকে সরিয়ে ফেলবে তাকে। কিন্তু শমসের ভরসা পায় না, সরালে কোথায়ই বা সরাবে! সেখানেও তো আবার সেই পলাতক জীবনই যাপন করতে হবে! এর চাইতে পুলিশের হাতে ধরা দিয়ে সব সত্যি সত্যি বলে দিলেই বুঝি ল্যাঠা চুকে যায়!

একদিন সে তার শুভাকাঙ্ক্ষীকে এই কথা বলেও ফেলেছিল। দুই পলক স্থিরচোখে তাকিয়ে থেকে একটা অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠতে দেখেছিল লোকটার মুখে। ঠোঁটটাকে ঈষৎ বাঁকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলেছিল, ‘পুলিশ তরে এ্যারপরে জামাই আদরে পোলাও মাংস খাওয়াইত। মখমলের বিছানায় আরাম কইরা শুয়াইত!’
‘আপনে জানেন না কী হইছে? ছিলেন না ঐদিন?’
‘হ জানি! বেবাক না দ্যাখলেও যেটুকুন দ্যাখছি তাতে যা বুঝনের বুইঝালাইছি! কিন্তু আমি বুঝলে আর দশজন বুঝলেও কিচ্ছু যাইব আইব না, বুঝলা চান্দু? খামাখা ভাবের কথা না কইয়া য্যামনে কইতাছি ত্যামনে থাক। বেশি তেড়িবেড়ি করলে তুইও মরবি, গেরামের লোকেও মরব!’
আবার শমসেরের মনে প্রশ্ন জাগে, সে মরলে কেন গ্রামের লোকেও মরবে? কিন্তু আর কিচ্ছুই বলে না সে।

অন্য বিপদ ছিল না তেমন একটা। জঙ্গলের অপবাদের কারণেই এখানে গ্রামের লোকজন তেমন একটা আসে টাসে না।
কিন্তু বেশ কিছুদিন ধরে উটকো এক বিপদ এসে হাজির হয়েছে। জঙ্গলে একা একা একটা মেয়ে ঘুরে বেড়ায়। সে এই গাছ সেই গাছের ডাল ধরে ঝাঁকায়, ফলমূল পেড়ে জামার কোঁচড়ে ভরে। পাখির ডাক শুনলে থমকে দাঁড়িয়ে মন দিয়ে সেটা শোনে। মনে হয় জঙ্গলের এই থমথমে পরিবেশ মেয়েটা যেন খুব উপভোগ করছে।
দৃশ্যটা এতটাই অদ্ভুত যে, কয়েক মুহূর্তের জন্য ধন্দে পড়ে গিয়েছিল শমসের। ফাঁকা জঙ্গলে কি সত্যি সত্যিই কিছু থাকে নাকি? এই মেয়ে কি ভাবে বাস্তবের কেউ হবে? দেখেশুনে চৌদ্দ পনের বছরের বেশি মনে হয় না বয়স। এত অল্প বয়সের একটা মেয়ের এত সাহস হয় কেমন করে?

শমসের মেয়েটাকে দেখামাত্রই একটা ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল। যদিও তার বিশ্বাস ছিল, মেয়েটা কিছুতেই মন্দিরের মধ্যে ঢোকার সাহস পাবে না, তবু ঝোপঝাড়কেই বেশি নিরাপদ মনে হয়েছিল তার কাছে। তারপর মেয়েটা যখন তার বিশ্বাসকে ঠ্যাঙা দেখিয়ে মন্দিরের ভেতরে উঁকি দিয়েছিল, বিস্ময়ে বোবা হয়ে গিয়েছে শমসের।
এরপরেও আরো বেশ কয়েকদিন মেয়েটা এসেছে। প্রতিবারই তাকে চটজলদি ঝোপঝাড়ের মধ্যে ঢুকতে হয়েছে। একদিন তো এক ঝোঁপের ভেতরে কী একটা পোকা যেন কামড়ে দিয়েছিল। বিষ ছিল সম্ভবত তার কামড়ে। অনেকক্ষণ ধরে জায়গাটা জ্বলছিল।

দাঁতে দাঁত চেপে সেই জুলুনি হজম করতে করতে শাপশাপান্ত করেছে মেয়েটাকে। বজ্জাত ছুড়ি! ঘোরাঘুরি করার আর জায়গা খুঁজে পায়নি!
একদিন সে সম্ভবত তার বড়বোনকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিল। সেদিনও নিজেকে আড়াল করতে কম ফ্যাসাদে পড়তে হয়নি শমসেরকে। আর আজকে তো সব সাবধানতাই প্রায় ধ্বসে যাচ্ছিল। একবার মনে হচ্ছিল, মেয়েটা বুঝি তাকে দেখেই ফেলেছে। খুব অল্প সময়ের জন্য একবার মনে হয়েছিল, মেয়েটা যেন তার দিকে তাকিয়েছে। যদিও তা খুব সামান্য কয়েক মুহূর্তের ব্যাপার ছিল। এরপরেই শমসের দ্রুত সেখান থেকে কেটে পড়েছিল। মনে মনে ঠিক করেছিল, এর পরেরবার মেয়েটা এলে সে তার মুখোমুখি হবে। একটা বাচ্চা মেয়েকেও যদি ভয় পেতে হয়, তাহলে এই জীবন বাঁচিয়ে রেখেই বা কী হবে? (ক্রমশ)

#উপন্যাস
#কনে_দেখা_আলো
#পর্ব_তের

ওদিকে সুফিয়া তখন বাড়িতে বড়বোনের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হচ্ছে। সুফিয়ার মনটা আজ বেজায় খুশি। জুলেখার হম্বিতম্বি তার কানে ঠিকমত ঢুকছেই না যেন। মনে মনে সে বারবার সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছে, আর বলছে… ‘আল্লাহ্‌ আমার মনের মইধ্যে যেই খোয়াব জাগছে, সেইডাই জানি সত্য হয়! অন্যকিছু জানি না হয় আল্লাহ্‌! তুমি দেইখো! আমার মায়ে জানি কুনো প্যাঁচ লাগাইবার না পারে!’
জুলেখা ওদিকে ভাতের মাড় গালতে গালতে সুফিয়ার ভাবভঙ্গি দেখছিল। এত খুশি হওয়ার মতো কী হয়েছে আজকে, এটা সে মোটেও বুঝতে পারছে না। পুলিশের জিপে উঠতে পেরেই এত খুশি! নাকি পুলিশের সঙ্গে বেশি খাতির হয়ে গেছে? ভাব তো ভালো ঠেকছে না এই মেয়ের! সে আপনমনে গজগজ করতে থাকে।
‘এমুন ডানপিটা স্বভাব হইছে! পুলিশের লগেও খাতির হইয়া গ্যাছে! পুলিশের গাড়িত কইরা পাড়া ঘুইরা বেড়ায়! মাইনষে দ্যাখলে কী কইত? কেউ একটা খারাপ কথা রটাইয়া দিলে তর আর বিয়াশাদী কিছু হইত? গ্যাছশ ইশকুলে! ইশকুল থেইকা সিধা বাড়িত আইবি। তুই কীয়ের মইধ্যে গিয়া সান্ধাইছস?’
সুফিয়া হঠাৎ তার বুবুর গলা ধরে একটা হ্যাঁচকা টান মেরে বলে, ‘আমার বিয়া হইব কী না হইব, সেই চিন্তা কইর না বু! তয় তুমার একটা ব্যবস্থা খুব শিগগিরই হইয়া যাইব!’
জুলেখা সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রুদুটো কুঁচকে বলে, ‘হ! গায়েবি সংবাদ পাইছস তো তুই! এইসব আলগা ফুটানি তর কাছেই থুইয়া আমারে সিধা সিধা ক আইজও কি তুই ঐ অলুক্ষুণা জঙ্গলে গেছিলি? কেডায় আছে ঐখানে তর? ভাতারের খোঁজ পাইছস? আর আইজ না তোরে এট্টু জলদি আইতে কইছিলাম! ফুলিরে একবার দ্যাখবার যাইতে চাইছিলাম ভুইলা গেছস?’

জুলেখা আজ সত্যিই রেগেছে বুঝতে পারল সুফিয়া। অযথা আর বোনের রাগ না বাড়িয়ে সে মিথ্যা কথা বলল। ‘হেইডা আমি ভুলি নাই বু! মনে আছিল। জলদিই ইশকুল থেইকা রওয়ানা দিছিলাম। আর তুমি কী ভাবছ যে আমি রোইজ ঐ জঙ্গল দিয়া ঘুইরা আসি? রাস্তায় দেখি ঐ পুলিশ ব্যাটা গাড়ি লইয়া বাইর হইছে। আমারে কইল, হামিদ মিয়ার বাড়িটা কই হেইডা খুঁইজা দিতে।’
মিথ্যা বলতে বলতে একটু বেশিই বলা হয়ে গেল। তবু সুফিয়ার গলা কাঁপল না। হামিদ মিয়া এই অঞ্চলের একজন বড় জুয়ারি। প্রতিবছর মেলাতে সে জুয়া খেলে অনেক টাকাপয়সা কামাই করে। সেই টাকা দিয়ে মদ তাড়ি মেয়েমানুষ… যাবতীয় নেশার রসদ জোগায় সে। হামিদ মিয়ার অত্যাচারে গাঁয়ের লোকজন অতিষ্ঠ। পড়ালেখা জানা লোকজন তাকে দেখলে রাস্তা ঘুরিয়ে অন্যদিকে চলে যায়। মেয়েরা সহজে তার সামনে পড়তে চায় না।

সুফিয়ার কথা শুনে জুলেখা হাঁ করে তার দিকে তাকিয়ে রইল। সুফিয়া বুঝতে পারল, কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ বেরিয়ে গেছে। ছোটখাট জ্বরকে তাড়াতে গিয়ে টাইফয়েড বেঁধে গেছে। জুলেখা কোনোমতে বলল, ‘তুই ঐ জুয়াড়ি মাইয়াবাজ নেশাখোর হামিদের বাড়ি দেখাইয়া আইছস পুলিশরে? আল্লাহ্‌! কী হইব এই ছেমড়ির! অখন যদি হামিদ মিয়ারে পুলিশ গিয়া ধরে আর একবার যদি সে জানবার পারে যে, তুই হ্যারে ধরাইয়া দিছস, তাইলে ওই ব্যাটা জেল হাজত থেইকা ছুটা পাইয়া তর কী হইব জানশ কিছু?’
সুফিয়া তবুও নির্বিকার। হঠাৎ জুলেখার মতিভ্রম হলো। যা সে কখনো করে না, আজ সেটাই করে বসল। সুফিয়ার কানটা ধরে চেঁচিয়ে উঠল, ‘মায়ে ঠিকই কয়। তরও বিয়া হইব না কুনোদিন। তুই বেবাকেরে জ্বালাইয়া পুড়াইয়া মারোনের লাইগাই পয়দা হইছস!’
সুফিয়ার মা হনুফা বিবি অসময়ে একটু শুয়েছিল। চোখের পাতাটাও ধরে এসেছিল তার। এই চেঁচামেচিতে সে বিছানা থেকেই চেঁচিয়ে উঠল, ‘ঐ জুলেখা কী হইছে তর? সারাদিন খাটাখাটনি কইরা এট্টু বিছানায় কাইত হইছি কী হইনি, তোগো ফূর্তি লাগছে তাই না? তুই চিল্লাস ক্যা? কী হইছে? বাড়িত কি ডাকাইত পড়ছে?’
সুফিয়া হাত জোড় করে মিনতি জানায় মাকে কিছু না বলার জন্য। জুলেখা ফোঁস ফোঁস করতে করতে বলে, ‘আইজকার মতো বাঁইচা গেলি তুই! কিন্তু এ্যারপর জুদি এইটা নিয়ে কিছু হয়, আমি বেবাক কিছু মায়েরে কইয়া দিমু… এই কইলাম!’

যেদিন এসব ঘটনা ঘটল তার দুইদিন পরেই সুফিয়া আবার সেই পশ্চিমের জঙ্গলে পা দিলো।
সেদিন সে যে জিনিস আবিষ্কার করেছে, সেটার ফিরিস্তি উদ্ধার না করে সে কিছুতেই পিছু হঠবে না! তাকে জানতেই হবে, জঙ্গলে মন্দিরের ভেতরে কোন আল্লাহ্‌র বান্দা ঘাপটি মেরে লুকিয়ে আছে! আর কী উদ্দেশ্যেই বা সে সেখানে আশ্রয় নিয়েছে!
জঙ্গলে ঢুকে সুফিয়া আজ একটু সতর্ক হলো। যে ছেলেটিকে সেদিন সে দেখেছে, সে খুব চালাক। নিজেকে অন্যের চোখ থেকে বাঁচিয়ে রাখার কৌশল সে বেশ ভালোভাবেই রপ্ত করে ফেলেছে। সুফিয়া আজকে তাই পা টিপে টিপে মন্দিরের দিকে রওয়ানা দিলো। ভেতরে একটু উঁকি মেরে দেখল কেউ নেই সেখানে। চকিতে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে সে সুড়ুত করে একটা ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে পড়ল। কীসের ঝোঁপ কে জানে! গা টা কেমন কুট কুট করছে। কিন্তু সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ করারও সময় নেই। আজ আর ব্যাটাকে হাতেনাতে না ধরে কিছুতেই ছাড়ছে না সে। বারেবারে ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান? এবারে ধান খাওয়ার মজা দেখাবে সুফিয়া!

‘ঐখান থেইকা উইঠা আসো! ঐটা বিছুটি পাতার গাছ। একটু পরে চুলকানির চোটে মা-বাপের নাম ভুইলা যাইবা!’
চমকে পেছন ফিরে তাকিয়েই একেবারে জমে গেল সুফিয়া। সেদিনের সেই ছেলেটা ঠিক তার পেছনেই দাঁড়িয়ে আছে। আজকে আর তাকে দেখে কেটে পড়ার নামগন্ধ করছে না। এক জায়গাতে দাঁড়িয়ে থেকে স্থিরচোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টিতে একটু যেন বিরক্তি আর একইসাথে কৌতূহল। সুফিয়া চরম অস্বস্তি নিয়ে ঝোঁপের আড়াল থেকে বের হয়ে এলো। শরীরের কুটকুটানি ভীষণ বেড়েছে। নানা অজায়গা কুজায়গায় চুলকাচ্ছে এখন। অথচ সামনে একটা জলজ্যান্ত ছেলে দাঁড়িয়ে। এর সামনে চুলকাবে কীভাবে? কী ভীষণ ঝামেলার মধ্যে পড়া গেল!

‘দুইদিন পরে পরেই জঙ্গলের হাওয়া খাইতে আসো। কামকাইজ নাই? নাকি ঘুইরা বেড়ানিই একমাত্র কাম?’
সুফিয়া এঁকেবেঁকে শরীরের চুলকানি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলে, ‘জঙ্গল কি কারো বাপের সম্পত্তি নাকি? আমি ঘুইরা বেড়াইলে কার কী? আর আপনে এই ভাঙ্গা মন্দিরের মইধ্যে যে পইড়া আছেন, সেইডাতে কুনো অসুবিধা নাই? আমি যদি মাইনষেরে কইয়া দেই? যদি… যদি পুলিশের কাছে কইয়া দেই? আপনে নিশ্চয়ই কুনো কুকীর্তি কইরা জঙ্গলে সান্ধাইয়া আছেন!’
সেদিন জামান শিকদারের সঙ্গে আলাপ হওয়ার পর থেকে সুফিয়া খুব ভাবে আছে। এমনিতেই সে কাউকে বিশেষ একটা পাত্তা ফাত্তা দেয় না, এখন তো কারো এতটুকু তেড়িবেড়ি দেখলেই তাকে পুলিশস্টেশনের হাওয়া খাইয়ে আনতে ইচ্ছে করে। পুলিশের বড় অফিসারের সঙ্গে তার এখন কত খাতির!

শমসের মনে মনে একটু থমকাল। এই মেয়ে দেখা যাচ্ছে মহা সেয়ানা! তাকে পুলিশের হুমকি দেখায়! বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া দেখে অবশ্য মনে হচ্ছে না যে, তাকে চিনতে পেরেছে। তবু শমসের কথার গতি বদলাল। যত যাই হোক, এর কাছে নিজের দুর্বলতাও কিছুতেই প্রকাশ করা যাবে না।
‘পুলিশরে গিয়ে খবর দেওনের ভয় দেখাইতাছ? দিলে দাও গা! আমি কি চোর ডাকাত নাকি যে পুলিশের নাম শুনলেই ভড়কাইয়া যামু? তুমি কী উদ্দেশ্যে দুইদিন পরে পরে এইখানে ঘুইরা যাও আগে সেইটা কও!’
দুজনে এভাবেই বেশ অনেকটা সময় নিজেদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা চালাল। স্বল্পভাষী শমসেরের মুখে আজ যেন কথার খই ফুটেছে। দিনের পর দিন নির্জন জনমানবহীন জঙ্গলে পড়ে থাকতে থাকতে সে একজন সঙ্গীর অভাব বোধ করে, যার সঙ্গে দুই দণ্ড বসে কথা বলা যায়। সুখ দুঃখের অনুভূতি জানানো যায়। যে তাকে এখানে গা ঢাকা দেওয়ার জন্য রেখে গেছে, তার সঙ্গে একটার বেশি দুইটা কথা বললেই আর কিছু বলার থাকে না। সম্ভবত সেই লোকটাও বেশি কথা বলা পছন্দ করে না। কিন্তু এই মেয়ের মধ্যে প্রাণ আছে। এর সঙ্গে ইচ্ছামত কথা বলা যায়।

বেশ কিছুক্ষণ এভাবে তর্কাতর্কি করার পরে দুজনেই বুঝতে পারল, তারা কেউ কারো শত্রু না। বরং ঝগড়া না করে দুজনেই দুজনের কিছুটা কাজে লাগতে পারে।
শমসের বলল, ‘তুমি কি কদমপুরের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফরে চিনো?’
‘হ চিনুম না ক্যা? আমার সই ফুলির তো ওগো বাড়িত বিয়া হইছে। চেয়ারম্যানের শালার লগে। কামকাইজ কিছু করে না। দুলাভাইয়ের ঘাড়ে বইসা বইসা খায়।’ সুফিয়া অল্পসময়ের মধ্যেই খুব সহজ হয়ে গেছে শমসেরের সঙ্গে। মনে হচ্ছে ছেলেটা বদটাইপের কেউ না। যদিও তার এভাবে লুকিয়ে থাকার রহস্য এখনো বোঝা যাচ্ছে না!
শমসের চিনতে পারল ফুলিকে। ফুলির স্বামীকে তো সে ভালোভাবেই চেনে! ছেলেটা শুধু অকর্মা না, একটু ফিচেল স্বভাবেরও বটে। নিজের অকর্মা স্বভাব ঢাকার জন্যই চেয়ারম্যানের তেলবাজি করে বেড়ায় দিনরাত।
‘সেই চেয়ারম্যানের ভাই আব্দুল রফিক সাহেবরে চিনতা?’
‘নাহ তেনারে তো চিনি না! ক্যান তার কী হইছে?’
কথাটা শুনে শমসের একটু আশ্বস্ত হলো। যাক, বোঝা যাচ্ছে মেয়েটা আশেপাশের খবর তেমন একটা রাখে না। শমসের আর বেশি কিছু বলতে গেল না। মেয়েটাকে আরেকটু ভালোমত বোঝা দরকার। প্রথমদিনেই বেশি কথা বলে ফেললে তার বিপদ হতে পারে। এটুকু বলেছে শুনলেই হয়ত তার সেই শুভাকাঙ্ক্ষী লোকটা বিরাট রাগ করবে। এমন কাজ শমসের নিজেও কখনো করে না। তবু কেন জানি মেয়েটাকে তার সবকিছু খুলে বলতে ইচ্ছা করছে।

‘আপনে জঙ্গলে ক্যান থাকতাছেন? তাও আবার এই ভাঙ্গা মন্দিরে? ভূতের ভয় না করলেন, সাপখোপে কামড়াইলে কী করবেন?’
‘কী আর করুম? মরুম। তয় চিন্তা নাই। মন্দিরের চারপাশে কার্বলিক এসিডের বোতল রাখন আছে। সাপ মন্দিরে ঢুকব না।’
‘আপনে ক্যান ঢুকছেন?’ সুফিয়া নাছোড়বান্দা। এই ছেলের উদ্দেশ্য তাকে জানতেই হবে! শমসেরও আর পারল না। বলেই ফেলল মুখচোখ শক্ত করে।
‘আমি পলাইয়া আছি!’
‘ক্যান? কী করছেন আপনে?’
‘সক্কলে কয় খুন করছি। হের লাইগা পলাইয়া আছি!’
‘খুন? ও আল্লাহ্‌! কারে খুন করছেন?’
‘চেয়ারম্যানের ভাই আব্দুল রফিকরে!’
‘কী! ও আল্লাহ্‌!’ সুফিয়ার মুখচোখের রঙ এবারে একটু ফ্যাকাসে দেখাল। শেষমেশ সে কী না খুনির কবলে পড়ল! এখন যদি এখান থেকে পালাতে না পারে? এই ছেলে যদি আজকে তাকেও মেরে ফেলে? আর মেরে ফেলার আগে যদি… সুফিয়া আর ভাবতে পারল না। হঠাৎ এই প্রচণ্ড গরমেও তার কেমন শীত শীত লাগতে লাগল।

সুফিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে শমসের কিছু একটা বুঝতে পারল। বলল, ‘তুমি কি ভয় পাইলা নাকি? এট্টু আগেই না খুব সাহস দ্যাখাইতাছিলা!’
‘আপনে মানুষ খুন করছেন!’
‘আমি কি কইছি আমি খুন করছি?’
‘এট্টু আগেই না কইলেন!’
‘মাইনষে কয় খুন করছি। আমি তো কই নাই আমি খুন করছি! আব্দুল রফিক সাহেবরে আমি খুন করুম ক্যা? তিনি না থাকলে কি আমি এই গ্রামে থাকবার পারতাম? বেবাকে আমারে এত তোয়াজ কইরা চলত? আর আমি বন্দুক পামু কই থেইকা?’
‘তাইলে কে খুন করছে?’
‘সেইটা যদি জানতাম তাইলে কি আমি এইখানে চোরের লাগান বইসা থাকতাম? সেই ব্যাডারে আমি পানির মইধ্যে চুবাইয়া মারতাম না?’
সুফিয়া ধন্দে পড়ে গেল। এই খুনের কথা সে ঝাপসা মতো শুনেছে কোথায় যেন… এবারে মনে পড়ল। আসলে পাশের গ্রামের কথা, তাই খুব বেশি মন দেয়নি খবরটাতে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে অনেক বড় একটা রহস্যে জড়ায়ে গেল! যেন আল্লাহ্‌ ইচ্ছা করেই তাকে এই রহস্যের মধ্যে এনে ঢুকিয়ে দিলো! (ক্রমশ)

#ফাহ্‌মিদা_বারী

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে