কখনো কুর্চি পর্ব-১৫ এবং শেষ পর্ব

0
5

কখনো কুর্চি (শেষ পর্ব)

ছাদের দরজায় পৌঁছে আঙুল দিয়ে ছাদ দেখিয়ে দিল রুবেল
— যাও, কথা বল।
বিমুঢ় কুর্চি প্রশ্ন করল
— মানে?
— মানে আন্টির আসল ছেলে ছাদে আছে। তোমার ভয়ে তোমাদের বাড়ি পর্যন্ত যায়নি।
— কে সে? বাড়ি না গিয়ে ছাদে কী করছে? এ আবার কী নতুন ড্রামা?
— গিয়ে জিজ্ঞেস করো। ড্রামা কি তুমি একাই করবে নাকি? যাও কুর্চি, কথা না বাড়িয়ে যাও গিয়ে কথা বলো। আমি এখানে অপেক্ষা করছি। মারামারি লাগলে যাতে তোমাদের ছাড়িয়ে নিতে পারি।

কুর্চি অন্ধকার ছাদে পা রাখল। কাউকেই দেখা গেল না, একটু এদিক ওদিক করতেই একপাশ থেকে জলদগম্ভীর স্বর ভেসে এলো
— আমি এখানে, কুর্চি।
সিঁড়ির অল্প আলোয় আরিয়ানকে দেখে পাথর হয়ে গেল কুর্চি
— আরিয়ান!
— হ্যাঁ, আমি।
— তুমি কেন? আন্টির ছেলে কই?
— আমিই তোমার আন্টির ছেলে!
— তুমি!
— হ্যাঁ, আমি। কেন হতে পারি না?
রেগে গেল কুর্চি
— সবকিছুই হতে পার। কিন্তু কেন এসেছে?
— তুমি কাউকে না বলে রেজিগনেশান দেবে, অফিসে না গিয়ে নীচে ডোরম্যানের কাছে কাপুরুষের মতো রেজিগনেশান লেটার রেখে পালিয়ে যাবে, তারপর আমি প্রশ্ন করলেও উত্তর দেবে না, আমাকে জানতে হবে না এসব কেন করছ? তোমার কোনো প্রবলেম হলে আমাকে এসে বলবে। রেজিগনেশান দেবার মতো ছেলেমানুষি কেন করলে? তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি, কুর্চি।

অন্যায় দোষারোপে কিছুক্ষণ কথাই বলতে পারল না কুর্চি। তারপরেই হিতাহিত জ্ঞান হারাল। আরিয়ানের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর দামী শার্টের কলার চেপে ধরে হ্যাঁচকা টান দিতে থাকল।
— আরে আরে, কর কী!
— কর কী! কর কী! বলতে লজ্জা করল না!
— শোনো, কথা শোনো, কুর্চি। তুমি মনেহয় পুরা ব্যপারটা ভুল বুঝেছ।
— ভুল বুঝেছি! আমি ভুল বুঝেছি! হ্যাঁ, আমিই তো ভুল বুঝেছি। তোমাকে ডিসেন্ট ভেবেছিলাম। কিন্তু তুমি আস্ত একটা শয়তান! তলেতলে সবদিকেই তাল দিতে ওস্তাদ!

রুবেল দৌড়ে এসে আরিয়ানকে কুর্চির হাত থেকে বাঁচাল। তারপর আরিয়ানের সামনে দুই বাহু মেলে দিয়ে একটা দেয়াল খাঁড়া করে বলল
— দেখো, আমার মতে তোমাদের মাঝে সবসময়ের জন্য দুইহাত দূরত্ব থাকা দরকার।
কুর্চি রুবেলের ওপর দিয়েই আরিয়ানকে আক্রমণের চেষ্টা চালাল। রুবেল ওর দুই বাহু চেপে ধরে ওকে থামাল। ছটফট করতে থাকল কুর্চি
— ছাড়ো, ছাড়ো আমাকে, রুবেল। ও আমাকে শুধু ব্যবহারই করে এসেছে। কাজের সময় কাজি, কাজ ফুরালে পাজি। ইডিয়ট, স্টুপিড, ছোটোলোক একটা।
— দেখো, গালি দেবে না কুর্চি।
— আমাকেও নীচে গালি দিয়েছে, আরিয়ান। এর বিচার তুমি করবে। তোমার উপকার করতে গিয়ে শুধুশুধু গালি খেলাম।
হাঁপাতে হাঁপাতে কুর্চি বলল
— না, গালি দেবে না, কুর্চি। বিনা ট্রনিং এ নিজেদের চামড়া বাঁচাতে আমাকে অন এয়ারে বসিয়ে দেবে, দুনিয়ার খাটনি আমাকে দিয়ে করিয়ে নেবে কিন্তু যেই মালিকের মেয়ে ফিরে এল, ওমনি আমাকে আর লাগবে না। তখন দুজনে মিলে আমাকে মিলনের জায়গায় বসিয়ে দেবে। তোমাদের চা কফি আনানেয়া করার জন্য! আমি সবই শুনেছি, আরিয়ান। লুবনা বলেছে কুর্চিকে চলে যেতে হবে। একবারও তোমাকে শুনলাম না এর প্রতিবাদ করতে বা আমার পক্ষ নিয়ে কথা বলতে।
রাগে দুঃখে কেঁদে ফেলল এবারে কুর্চি
— কিভাবে পারলে, আরিয়ান? আমি কম খেটেছি? জান দিয়ে দিয়েছি। এতখানি অবহেলা আমার প্রাপ্য না, আরিয়ান। তুমি কিভাবে পারলে লুবনার সাথে একজোট হয়ে আমার বিশ্বাস নষ্ট করতে?
— আমি তোমার বিশ্বাস নষ্ট করেছি? তোমার সাথে দেখা হবার পর থেকে আমি প্রাণপণে চেষ্টা করছি নিজেকে তোমার যোগ্য করে তুলতে।

কুর্চি কান্না বন্ধ করে হাঁ করে ওরদিকে তাকিয়ে রইল। রুবেল কুর্চিকে ছেড়ে দিয়ে বিব্রতভাবে বলল
— আচ্ছা তোমরা কথা বল। আমি চললাম। আরিয়ান, পরে কথা হবে।
রুবেল দ্রুত সিঁড়ি দিয়ে নেমে উধাও হয়ে গেল।
বিহ্বল গলায় কুর্চি বলল
— কী বললে তুমি?
— সত্যি কথাই বলছি, কুর্চি।
— তুমি…তুমি আমাকে ভালোবাসো?
— মনে হয় তাই।
কাঙালের মতো প্রশ্ন করল কুর্চি
— এজন্য আমাকে কেক খাওয়ালে?
বিস্মিত আরিয়ান জবাব দিল
— এখনো তো খাওয়াইনি। তুমি চাইলে সে ব্যবস্থাও করা যাবে নাহয়।

— কিন্তু…কিন্তু…লুবনা!
— লুবনার কথা আপাতত থাক, কুর্চি। আগে আমার কথা শোনো। আমি তোমাকে শুরু থেকে কিছুই বলিনি। যারজন্য এতখানি ভুল বুঝলে আমাকে।

লুবনার কথা মনে করে কুর্চি আবারও ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে। এগিয়ে এসে আরিয়ান ওর দুইহাত নিজের হাতে নিয়ে বলল
— শোনো, কান্না বন্ধ করো। তোমার সাথে বাসে ঐ ঘটনা ঘটার আগে থেকেই তোমাকে চিনি আমি।
এবারে কান্না বন্ধ করল কুর্চি
— কী বলছ তুমি?
— হ্যাঁ। ঘটনা শুরু হয়েছিল যখন মা তোমাকে দেখে পছন্দ করে তোমার অজান্তে ফটো তুলে নিয়ে এসে আমাকে বাসায় দেখালো। আমি রাগ করলাম। অচেনা মেয়েকে না বলে, তার অনুমতি না নিয়ে ফটো তোলা কোনোমতেই সমর্থন করা যায় না। এজন্য মা’কে আমি খুব করে বকে দিয়েছি!
— আহা! তার মনে তো খারাপ কিছু ছিল না। তারপরে কী হল?
কুর্চি নিজের অজান্তেই এক পা এগিয়ে এল আরিয়ানের দিকে।
— তারপরে যা হল, সেটা নিছক কাকতালীয় বললেই চলে। বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি তুমি দাঁড়িয়ে রয়েছ। সেদিন মোটরসাইকেল খারাপ ছিল বলে বাস নিতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিন্তু শুধু কৌতূহলের বশে আমি এরপর থেকে নিয়মিত বাসে চড়া আরম্ভ করলাম। শুধু তোমার জন্য, কুর্চি। এর আগে জীবনে বাসে চড়িনি, বাসায় গাড়ি, মটরসাইকেল সব রয়েছে! এমনকি সেদিন তোমাকে ভিড়ের মধ্যে যাতে কেউ ডিস্টার্ব না করে সেজন্য তোমার পিছে গিয়ে দাঁড়িয়েছিলাম।
— সত্যি?
— হুম। তারপর তো যা-তা অবস্থা হল। অফিস পর্যন্ত গিয়ে আরেক চমক। তুমি এসেছ আমারি অফিসে ইন্টার্ভিউ দিতে। তারপর একে একে ঘটনা তো ঘটেই চলেছে। লুবনা উধাও হল, আমার মাইক নষ্ট হল, আমরা দুজনে জুটি হিসাবে সফল হলাম, দুজনের কাজ করার কেমিস্ট্রিটাও চমৎকার।
— কিন্তু একবারও বললে না কেন যে তোমার মা আমাকে পছন্দ করেছেন? আমি তো এদিকে যেভাবে পারছি উনার বাড়িতে আসা ঠেকিয়ে রাখছিলাম।
— কারণ মা বলেছিল তুমি তেজি মেয়ে, আমাকে তোমার পছন্দ নাও হতে পারে। তোমার বাবা মারও পছন্দ না হবার যথেষ্ট কারণ থাকার সম্ভবনা ছিল। আমার ইগোতে এটা লেগেছিল।
— কী কারণ? মা বলছিল তুমি ভালো ছেলে, ভালো ফ্যামিলি, ধনী ফ্যামিলি।
— সে তো আমার বাবামা ধনী, কুর্চি। আমি তো তেমনভাবে এখনো স্বাবলম্বী হইনি। কেবলি পাশ করার পর লুবনার সাথে ড্রিমজ রেডিওতে কাজ শুরু করলাম। কিন্তু একেবারে নতুন স্টেশান। রাকীব স্যার খুব ভালো, আমাকে খুব স্নেহ করেন সন্দেহ নাই কিন্তু এ চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি চিন্তিত। অন্তত এ নড়বড়ে চাকরির ওপরে ভরসা করে কখনো তোমাকে বলতে পারব না আমাকে বিয়ে করো।
— একবার জিজ্ঞেস করে দেখতে রাজি হতাম কী না!
— কেন করব? তোমার মান সম্মান আছে, আমার নাই? আমি তখনি তোমার সামনে দাঁড়াব যখন নিজেকে যোগ্য মনে করব। গত একমাসে আমি চারিদিকে চেষ্টা করেছি, বহু জায়গায় এপ্লিকেশান দিয়েছি, অপেক্ষা করছিলাম ডাকের জন্য। দুই এক জায়গায় অফারও পেয়েছি কিন্তু কিছুই মনের মতো পাচ্ছিলাম না। তারমধ্যে লুবনা পালিয়ে গেল, আবার ফিরে এসে নতুন ঝামেলা তৈরি করল। ও মনে করেছে যে জায়গাটা ও ফেলে রেখে গেছিল, সেটা ওরজন্য অপেক্ষা করে রয়েছে। এদিকে রাকীব স্যার এতোদিন ধরে লুবনার উল্টা পাল্টা কাজ মেনে নিচ্ছিলেন। উনি নিজেও বোঝেন লুবনাকে তিনিই প্রশ্রয় দিয়ে এমনটা বানিয়েছেন। কিন্তু তার মানা সত্ত্বেও পালিয়ে বিয়ে করাতে উনি এবারে সত্যি কঠিন হয়েছেন। বুঝেছেন প্রতিবার এভাবে লুবনাকে উদ্ধার করে তিনি ওর ক্ষতিই করছেন। লুবনাকে তিনি সবধরণের সাহায্য করা বন্ধ করেছেন, এমনকি স্টুডিওতে আসতেও মানা করে দিয়েছেন। বলেছেন লুবনা ছাড়াই সবকিছু ভালোভাবে চলছে, কাজেই সে যেন গিয়ে নতুন বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি না করে।

কুন্ঠিতভাবে প্রশ্ন করল কুর্চি
— লুবনার সাথে তোমার সম্পর্ক কী, আরিয়ান? মানে সিঁথি বলছিল তোমরা ক্লাসমেট। কিন্তু আমার তার থেকে বেশিকিছু মনেহয়।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল আরিয়ান
— লুবনা আমার ক্লাসমেট ও বন্ধু। একসময়ে আমরা একই গ্রুপে ঘোরাফেরা করতাম। তারপর লুবনা ধীরেধীরে আমাদের গ্রুপ এভোয়েড করতে লাগল। নতুন নতুন বন্ধু জুটিয়ে নিল। যাদের দেখে আমার মনে সন্দেহ আসা স্বাভাবিক। তারপরেও হুটহাট দেখা হলে আমরা আগের মতোই আড্ডা দিতাম। আমার সবসময় ইচ্ছা ছিল মিডিয়া জগতে আসবার। লুবনা জানত। ও নিজেও খুব ক্রিয়েটিভ। শুধু জানে না মাত্রা কিভাবে রাখতে হয়। যাইহোক, আমাকে বিশ্বাস করত বলেই পাশ করার সাথেসাথে বলল চলো আমরা দুজনে মিলে কিছু শুরু করি। ওর বাবাকে বলে ড্রিমজ রেডিও আরম্ভ করল। এজন্য আমিও ওরপ্রতি একধরণের লয়াল্টি ফিল করি, একটা দায়িত্ববোধ। কিন্তু লুবনা বেশিদিন এক জিনিস নিয়ে পড়ে থাকবার মানুষ না। কোনোকিছুতে লেগে থাকতে জানে না। বাবার জোরে প্রতিবার ও পার পেয়ে যায়। কিন্তু এবারে রাকীব স্যারও হাত তুলে নিয়েছেন।
— তাহলে কী হবে?
— ড্রিমজ রেডিও খুব সম্ভব আর থাকবে না। মিলন চলে গেছে। রুবেল পুরাদমে চাকরি খুঁজছে। ওর আর লুবনার মধ্যে শুরু থেকেই বনেনি।
— তুমি তো রয়েছ।
— আমিও নাই, কুর্চি। বললাম না তোমাকে আমি চারিদিক খোঁজাখুঁজি করতে আরম্ভ করছিলাম। ফাইনালি খুব ভালো একটা অফার পেয়েছি।
— পেয়েছ? কোথায়?
— দোয়েল টিভি তো জানো, তাই না? খুব যে পুরানো বলব না কিন্তু ভালো নাম করেছে। ওরাই সকালের স্লটে দা টুডে শো ধরণের কিছু শুরু করতে চাইছে। একটু খবর, একটু ট্রাফিক, একটু ওয়েদার, একটা স্লটে গেস্টদের এনে রিলাক্সড ওয়েতে আড্ডা দেয়া। লেখক, গায়ক, রাধুনী, ইনফ্লুয়েন্সার, অভিনেতা— যখন যাকে পাওয়া যাবে। মোটমাটকথা একটা পজিটিভ ভাইব রাখতে হবে, সহ হোস্টের সাথে খুনসুটিও চলবে খুব। তারা অফার দিয়েছে। মাইনেও ভালো। আমি রাকীব স্যারকে বলে আজ রেজিগনেশান দিয়ে এলাম। তখন শুনলাম লুবনাও আর দেশে থাকবে না। ও ডিভোর্স নিতে চাইছে, তারপর রাকীব স্যার ওকে বিদেশে পাঠিয়ে দেবেন। কিন্তু ঐ পর্যন্তই। তারপরে নিজের ব্যবস্থা লুবনাকে নিজেই করে নিতে হবে। আশা করছি এবারে লুবনা জীবন নিয়ে সিরিয়াস হবে।

দুটো খবরের কোনটায় যে রিয়াক্ট করবে কুর্চি বুঝে পেল না। শেষে বলল
— কনগ্রাজুলেশান্স, আরিয়ান। আমার সবসময়ই মনে হয়েছে ড্রিমজ রেডিও তোমার জন্য না, তোমাকে আরো বড়ো কোনো জায়গায় মানায়।
— কিন্তু এখানেও তোমাকে আমার দরকার যে, কুর্চি। তুমি সাথে না থাকলে তো কিছু হবার নয়।
— আ…আমি?
কুর্চি আরো এক কদম এগিয়ে গেল, আরিয়ান এবারে দুহাত দিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরল।
— তুমি ছাড়া তো কিছু হবার না, কুর্চি।
ফিসফিস করে প্রশ্ন করল কুর্চি
— কেন?
— কারণ ওরা শুধু আমাকে চায় না, আমাদেরকে চায়। আমাদের অন এয়ার কেমিস্ট্রি ওদের খুব পছন্দ হয়েছে। নতুন প্রোগ্রাম শুরু করবে প্ল্যান করতেই ওরা আশেপাশে কী হচ্ছে খেয়াল করছিল, কোন প্রোগ্রামের রেটিং কেমন এটাও লক্ষ করছিল। এরা নোটিস করেছে যে তুমি আসবার পরে আমাদের রেটিং ক্রমশই বেড়ে যাচ্ছে। আমি তো আগেও ছিলাম লুবনার সাথে। তখনো রেটিং একেবারে খারাপ ছিল না। কিন্তু তুমি আসবার পরে ঝটপট বেড়ে গেছে। তোমাকে ওরা বলেছে “পাটাকা” মানে পটকা।
— মানে…মানে ওরা আমাদের দুজনকে কো-হোস্ট করবার অফার দিয়েছে টিভিতে?
কুর্চি নিজের কানকেও বিশ্বাস করবে কিনা বুঝল না।
— হুম, তাই তো। এজন্যই তোমাকে বলেছিলাম জরুরি কথা আছে। তা তুমি তো উত্তরই দিলে না।
একটু অভিমানী শোনাল আরিয়ানের গলা। কুর্চিও পালটা অভিমান করতে ছাড়ল না
— কেন উত্তর দিব? সেদিনের প্রোগ্রামের সব কাজ আমি করেছিলাম, এদিকে লাস্ট মোমেন্টে লুবনা উড়ে এসে জুড়ে বসল। আমার রাগ হবে না? তারপরে আবার তোমাদের দুজনকে জড়াজড়ি করতে দেখলাম মিটিং রুমে। লুবনার সে কী উথাল পাথাল কান্না!
দৃশ্যটা মনে পড়তেই আবার রাগ ধরল কুর্চির।
আরিয়ান কুর্চিকে ভালোমতো জড়িয়ে ধরে বলল
— নাও, এবার তোমাকেও জড়িয়ে ধরলাম, হোল তো? বাসেও জড়িয়ে ধরেছিলাম আগে। কাজেই তুমি ফার্স্ট, বুঝলে?
কুর্চি হেসে ফেলে আরিয়ানের কাঁধে এক ঘুষি দিল।

— কিন্তু আমি তো বিশ্বাসই করতে পারছি না যে টিভিতে হোস্টিং এর সুযোগ পাচ্ছি। তুমি সত্যি সত্যি বলছ তো, আরিয়ান?
— সত্যি, বাবা। তোমার ধারণাও নাই তুমি কতটুকু ভালো। ওরা ঠিকই চিনেছে। দেখবে, একদিন তুমি অনেক দূরে যাবে।
— সত্যি?
বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কুর্চি গলায় হাত রেখে প্রশ্নটা করতেই হাতে কীযেন ঠেকল। সাথেসাথে বুঝে ফেলল ও। ওর লাকি ফর্গেট মি নট ক্লিপটা। ওর লাকি চার্ম। আজ একসাথে ওকে শুধু এমন অভানীয় সুযোগ দিচ্ছে না, আরিয়ানকেও পাইয়ে দিচ্ছে। কুর্চি এখনো যেন কিছুই বিশ্বাস করতে পারছে না।
— তাহলে, কুর্চি? তুমি রাজি তো?
— কিসে রাজি, আরিয়ান?
— আমার পার্টনার হতে? জীবনের পার্টনার, কাজেরও।
একটু ভাবল কুর্চি
— ৫০/৫০ পার্টনার হলে তো রাজি আছিই।
— তাহলে ডিল ফাইনাল করে ফেলি, কী বল?
পকেট থেকে আংটি বের করল আরিয়ান। কুর্চির হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ওর আঙুলে পরিয়ে দিয়ে বলল
— সিল হয়ে গেল কিন্তু। আর কথার নড়চড় করতে পারবে না।
— কে নড়চড় করতে চেয়েছে?
হাসল আরিয়ান। খোলাসা করে বলল না যে আদিবাই ওকে বুদ্ধি দিয়েছিল আংটি নিয়ে সরাসরি কুর্চির আঙুলে পরিয়ে দিতে। তাতে নাকি কুর্চি না বলতে পারবে না। আংটিটা আদিবার নিজের এঙ্গেজমেন্টের আংটি। আদিবার ধারণা খুব পয়মন্ত আঙটি এটা। পরিয়ে দিলেই কেল্লা ফতে হবে।
এমন “গুহামানব” পদ্ধতি আরিয়ানের ঠিক পছন্দ না হলেও আসবার সময় আংটিটা সে পকেটে করেই নিয়ে এসেছিল। সুদূর কল্পনাতেও ছিল না সে সফল হবে। তারপরেও আশা নিয়েই তো মানুষ বাঁচে। সেজন্য রুবেলকে শেষ মুহূর্তে প্ল্যানে ঢুকিয়ে দিয়েছিল।
— চাও না?
— নাহ!
— তাহলে তো আরেকবার সিল করতে হচ্ছে!
খুব নরমভাবে কুর্চির ঠোঁটে ঠোঁট স্পর্শ করল আরিয়ান।
একটু পরে কুর্চি বলল
— আরিয়ান?
— হু?
— নীচে চল।
— যেতেই হবে?
— হু। আসবার আগে আমি নীচে এক কান্ড করে রেখে এসেছি। ওরা যেকোনো সময়ে ছাদে চলে আসতে পারে।
হাসল আরিয়ান
— মা’কে বলেছিলাম আজ তুমি একটা কান্ড করবে। শুনে মা খুব এক্সাইটেড। বলেছে এমন কান্ডওয়ালা বউয়ের অপেক্ষায়ই সে আছে। যে আমাকে উঠতে বসতে নাচাতে পারবে। মা বেশিরভাগ সময়ে আমার সাথে পেরে ওঠে না। এখন ছেলের বউকে নিজের দলে ভিড়িয়ে নেবার তাল করছে।
— সত্যি? কিন্তু তোমাকে দেখে তো সিরিয়াস মনেহয়। এজন্য আমি এতদিন একটু দূরে দুরেই থাকতাম।
— কারণ আমি এক মিশনে নেমেছিলাম, যেভাবে হোক নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করবার মিশন। যাতে তোমাকে পাই। এখন মিশন কমপ্লিট, আমার দুষ্টু অবতারের দেখা পাবে।
— ওয়াও। এ অবতারের দেখা তো আগে পাইনি।
— এখন দেখবে।
আরিয়ান কুর্চিকে কাছে টেনে নেবার উপক্রম করতেই কুর্চি হাসতে হাসতে সিঁড়ির দরজার দিকে দৌড়াতে আরম্ভ করল
— সিঁড়িতে পায়ের আওয়াজ পাচ্ছি, আরিয়ান। ওরা এলো বোধহয়। জলদি চল।

মনে একরাশ উদ্বেগ নিয়ে ড্রয়িং রুমে আর বসে থাকতে পারছিলেন না ওরা, তাই ছাদে এসে পড়ছিলেন। ছাদে পা দেবার আগে অবশ্য ইমরান সাহেব অর্থপূর্ণভাবে বারকতক কেশে নিয়ে হাঁক দিলেন
— আরিয়ান! আরিয়ান! তোমরা দুজনে ঠিক আছ তো?
— হ্যাঁ বাবা, তোমরা উঠে এলে কেন? এই তো আমরা নীচে নামছিলাম!
(সমাপ্ত)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে