কখনো কুর্চি পর্ব-১১

0
45

কখনো কুর্চি (পর্ব ১১)

রাত্রে আরিয়ানের মেসেজ এল
— কুর্চি, নেক্সট কাকে গেস্ট হিসাবে আনা যায়, সেনিয়ে আলোচনা করা দরকার।
মেসেজ পেয়ে কুর্চি খুবি আশ্চর্য হয়েছিল। ওর ধারণা করে নিয়েছিল লুবনা আর আরিয়ানই হয়ত এখন থেকে ইন্টার্ভিউ এর কাজ করবে। রাকীব স্যারের রুম থেকে আরিয়ানের গনগনে মুখে বের হবার পর এমন ধারণা করা খুবি স্বাভাবিক। রুবেলও তো সেরকম আভাস দিয়েছিল সেদিন। উপরন্ত সিঁথির সাথে কথা বলে আরেক দিক শুনল। সিঁথি বলেছিল
— লুবনা কিন্তু খুব পজেসিভ। সেটা পছন্দের মানুষ হোক বা নিজের জায়গা হোক। তোমাকে তো মিলনের রিপ্লেসমেন্ট হিসাবে আনার কথা হচ্ছিল। সেখানে তুমি লুবনারই জায়গা দখল করে নিলে। লুবনা তোমাকে ছাড়বে না, কুর্চি।
— সে কি! মিলন কেন? তাহলে মিলন কী করবে?
— জানো না বুঝি? মিলন তো বিদেশে পড়বার জন্য ট্রাই করছে। কিছুদিনের মধ্যে চলেও যাবে। ও রেজিগনেশান দিতে সে জায়গা পূরণ করবার জন্য তুমি ইন্টার্ভিউ দিতে এসেছিলে।
— কিন্তু আমাকে তো স্ক্রিপ্ট পড়তেও দিয়েছিল। ভেবেছিলাম…
— কিজানি। হয়ত সামনে কখনো অন এয়ারে দিত। কিন্তু তোমার মেইন কাজ হত মিলনকে রিপ্লেস করা। তো লুবনা যখন উধাও হল, তখন আরিয়ান মিলনকে রিকোয়েস্ট করে আরো কিছুদিন থেকে যাবার জন্য বলেছিল।
একটু চুপ করে রইল সিঁথি। তারপরে চুপিচুপি বলল
— কাউকে বোলো না কিন্তু রুবেলও লুবনা ফিরে আসাতে বেশি খুশি না। সেও অন্য কোথাও কাজ খুঁজছে।

এর উত্তরে কিছু বলল না কুর্চি। সেদিন লুবনার ব্যবহারে রুবেলের প্রতি তাচ্ছিল্য প্রকাশ পেয়েছিল কয়েকবার। লুবনা যেন ওকে কীট পতঙ্গের সমান মনে করছে, এমন ভাব। রুবেল যদি জব চেঞ্জ করতে চায় তো আশ্চর্য হবার কিছু নাই। কাজের ক্ষেত্রে সম্মান সবাই ডিজার্ভ করে। কাজের সময় রুবেল নিজেই আরিয়ানের চাইতে কোনো অংশে কম সিরিয়াস না।

যাই হোক, এসব বিবেচনা করে ও ভেবে নিয়েছিল যেকোনো সময় আরিয়ান বা রাকীব স্যার ওকে ডেকে নিয়ে পিঠ চাপড়ে বলবে
— এতোদিন তুমি খুব ভালো কাজ দেখিয়েছ। এজন্য তোমাকে কেয়া কসমেটিক্সের পক্ষ থেকে গিফট দেয়া হবে। আর হ্যাঁ শোনো, আজ থেকে মিলন আর আসবে না। তুমি ওর কাজগুলি একটু দেখে দিও।
এভাবেই ওকে ইন্টার্ভিউ থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। তারপর লুবনা সেখানে একাই রাজত্ব করবে।
সেরকম যখন হবে, তখন কুর্চি কী করবে এখন পর্যন্ত ভেবে উঠতে পারেনি। এমন না যে মিলনের কাজ করতে ওর আপত্তি আছে। সত্যি বলতে কী, শুরু থেকে সে মিলনের ওপরে নির্ভর না করে নিজেই ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্ক যথাসম্ভব করে এসেছে। কিন্তু লুবনা যদি আশা করে যে ও ব্যাকগ্রাউন্ড ওয়ার্কের সাথেসাথে ওদের চা কফিও পরিবেশন করবে তাহলে সেখানে আপত্তি রয়েছে কুর্চির। অফিসের প্রত্যেকের নিজস্ব হাত পা রয়েছে, তারা নিজেদের চা নিজেরাই বানিয়ে নিতে পারবে। কিচেন রয়েছে, সেখানে নিজের জন্য চা কফি বানিয়ে নেয়া এমন কঠিন কাজ কিছু না। যেখানে কুর্চি নিজের বাসায় নিজেরি চা ঢেলে খায় না, সেখানে অন্যদের বানিয়ে খাওয়াবে, এ আশা করা একটু বেশিবেশি হয়ে যাবে লুবনার পক্ষে।

বাকি থাকল ইন্টার্ভিউ এর ব্যপারটা। এনিয়ে ভেবে দেখেছে কুর্চি, কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। প্রথম দিন থেকে যদি মিলনের রিপ্লেসমেন্ট হত ও, তাহলে হয়ত ওরদিক থেকে আপত্তি হত না। কিন্তু এখন? একবার ইন্টার্ভিউ নিতে আরম্ভ করে ও এত মজা পেয়ে গেছে যে পুরা প্রসেসটাই ও অসম্ভব উপভোগ করে। গেস্ট নির্বাচন থেকে তাদের সাথে কথা বলে তাদেরকে রাজি করানো, তাদের সম্বন্ধে ব্যাকগ্রাউন্ড ইনফো ঘাটা, তাদের কম্ফর্টেবল করা— সবকিছুই সে এঞ্জয় করে। এবং কাজটা সে ভালোমতোই পারে। লিসেনার্সরাও ওকে পছন্দ করে। এতটুকু কনফিডেন্স ওর হয়েছে। এখন হুট করে ইন্টার্ভিউ থেকে ওকে বাদ দিলে ওর মনের অবস্থা কেমন হবে? লুবনা পালিয়ে বিয়ে করেছে ভালো কথা, কিন্তু এতে ওর দোষ কি? ও লুবনাকে পালিয়ে যেতে বলেছিল?

সাত পাঁচ ভেবে আরিয়ানের মেসেজে সাবধানে উত্তর দিয়েছিল তাই
— আমার মতামত চাইছ?
— মানে? আগামী সপ্তাহে গেস্ট কে আসবে, এনিয়ে আলোচনা করতে হবে না?
একটু ভাবল কুর্চি। তারপর সরাসরিই লিখল
— আমি ভেবেছিলাম লুবনা ফিরে আসাতে এসব আলোচনা এখন থেকে ওরসাথেই করবে।
ওপাশ থেকে নিশ্চুপ রইল আরিয়ান। কুর্চি ভালোমতো টের পাচ্ছে আরিয়ান রাগে টমেটোর মতো লাল হয়ে গেছে।
হোক গে! ওর কী!
— অপ্রয়োজনীয় কাজে মাথাটা ব্যবহার না করে ভাবো কাকে আনা যায়। অলরেডি আজ রবিবার এসে গেছে। হাতে মাত্র কয়দিন আছে!
বারুদের মতো জ্বলে উঠতে গিয়েও নিজেকে থামালো কুর্চি। যাক, আরিয়ান অন্তত লুবনার মতো ওকে মশা মাছির মতো তাড়িয়ে দিতে চাইছে না। চক্ষুলজ্জা আছে তাহলে। হুহ! লিখল

— গায়ক, ইনফ্লুয়েন্সার সবই তো হল। এখন একজন লেখককে আনলে কেমন হয়?
— লেখক? মানে নিরালা আকাশ? আবার?
— না না, নিরালা আকাশ না। আমার ইউনিতে একটা মেয়ে ইদানিং লিখে খুব নাম করেছে। ইয়াং ক্রাউডের মধ্যে ক্রেজ যাকে বলে। ওরসাথে কথা বলে দেখতে পারি।
— দেখো তাহলে। নতুন কিছু করলে মন্দ হয় না। কাল ক্লাস আছে? কথা বলে আমাকে আপডেট দিতে পারবে? এদিকেও তো কাজ এগিয়ে নিতে হবে। পোস্টার তৈরী করা, ফেসবুকে পোস্ট করা। মিলন তো আগামী সপ্তাহ থেকে আর থাকবে না।
— আমি জানতাম না এটা মিলনের শেষ সপ্তাহ। জানলে ওর বিদায় উপলক্ষে কিছু করা যেত।
— কী করা যেত?
— ছোটখাট গিফট, একসাথে বাইরে কোথাও খাওয়া। এত ছোট অফিস, আমরা সবাই কাছাকাছি বয়সের, করাই যায়।
— হুম, যাব যাব করছিল মিলন। আমিই ওকে ধরে রেখেছিলাম। এইমাত্র আমাকে জানালো আর আসবে না সে। বাইরে পড়তে যাচ্ছে।

হাঁ হয়ে গেল কুর্চী। মিলন চলে যাচ্ছে, রুবেলও তাই ভাবছে, কুর্চী কী করবে ভেবে পাচ্ছে না, হয়ত সেও এমনকিছু ভাবতে বাধ্য হতে পারে। লুবনা দেখি এসেই চারিদিক পরিষ্কার করে ফেলল! তখন রেডিও চালাবে কারা? মনের এককোণ যে সন্তস্টিতে ফুলে উঠল না, হলফ করে বলতে পারবে না ও। বেশ হয়েছে, উচিৎ শিক্ষা হয়েছে। আরো খানিক পালাও!
তাড়াতাড়ি নিজের ভাবনা বন্ধ করল। মিন মাইন্ডেড হওয়াটা ঠিক না।
— আচ্ছা, আমি তাহলে দেখি কাল ওকে পাওয়া যায় কিনা। তারপরে আপডেট জানাচ্ছি।
— ওকে, বাই।

মনটা কেমন খুশিখুশি হয়ে গেল। সারা সন্ধ্যার মন খারাপটা এক নিমেষে টুনটুনি পাখির মতো এক ফুঁয়ে উড়ে গেল। একথা সত্য, ও আর আরিয়ান একসাথে চমৎকার কাজ করতে পারে। আরিয়ানের অভিজ্ঞতা বেশি কিন্তু কুর্চিরও এসবে সহজাত একটা দক্ষতা রয়েছে। যারজন্য দুজনে সমানে সমানে কাজ করতে পারে।

কিন্তু তাই বলে কেক খাওয়াখাওয়ি?
সত্যি?
কুর্চি যে কী ভাববে বুঝে পেল না।
(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে