কখনো কুর্চি (পর্ব ২)
গন্তব্যে পৌঁছাতেই বাস থেকে নেমে পড়ল কুর্চি। কিছুদূর হেঁটে গেলে অফিসটা পড়বে। গ্লাসের দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে টুলে ঢুলতে থাকা লোকটাকে প্রশ্ন করল
— বাথরুম কোনদিকে?
ওরদিকে সন্দেহের চোখে তাকাল লোকটা। স্বাভাবিক। নিশ্চয় পাগলিনীর মতো দেখাচ্ছে ওকে।
— ম্যাডাম। বাথরুম শুধু এখানকার ম্যাডামদের জন্য। বাইরের লোকদের জন্য না।
ঠিক পেছন থেকে ভরাট গলায় একজন বলল
— অসুবিধা নাই। ম্যাডামকে বাথরুমে নিয়ে দরজা খুলে দাও।
ঘুরে দাঁড়িয়ে কী বলবে ভেবে পেল না কুর্চি। সেই মতলববাজ লোকটা। এখানেও ওর পিছুপিছু এসেছে? নাকি এখানে ওর অফিস? বেশ জোর দিয়ে কথা বলল তো।
কথা শেষ করে ততক্ষণে লিফটে উঠে গেছে আরিয়ান।
ইন্টার্ভিউ শেষে মন খারাপ করে বেরিয়ে এল কুর্চি। ভালো হয়নি ইন্টার্ভিউ। এত ঝামেলা হল বাসে। সামলে নিতে না নিতেই ইন্টার্ভিউয়ের জন্য ডাক পড়ল। গিয়ে দেখে সেই মতলববাজ লোকটা ইন্টার্ভিউ প্যানেলে বসে রয়েছে।
কে জানত বাবা সে রেডিওতে কাজ করে! যদিও মনে সন্দেহ আসা স্বাভাবিক ছিল। যে চুলের বাহার!
প্রশ্ন যা জিজ্ঞেস করল কী উত্তর দিয়েছে এখন আর মনে করতে পারছে না।
একটা স্ক্রিপ্ট পড়তে দিল। কাঁপাকাঁপা গলায় পড়ল। এরচাইতে অনেক সুন্দর করে পড়তে পারে ও।
প্যানেলের সবার মুখ দেখে বুঝল ওদেরও পছন্দ হয়নি। বলল
— আচ্ছা, আমরা জানাব পরে।
পরে জানাবার অর্থ জানা আছে কুর্চির।
ধ্যুস! দিনটাই কুফা!
— শুনুন।
থেমে পড়ে ঘুরে দাঁড়াল কুর্চি। সেই লোকটা। আবার ওর পিছেপিছে চলে এসেছে? ওর দিন মাটি করে শখ মেটেনি?
পকেট হাতড়ে ক্লিপটা বের করল আরিয়ান। এগিয়ে দিয়ে বলল
— আপনার ক্লিপ। আমার চুলে আটকে গেছিল।
বাসের আপত্তিজনক অবস্থার কথা মনে পড়তেই গাল লাল হল কুর্চির। ছিঃ! ছিঃ! কী একটা অবস্থা!
হাত থেকে ক্লিপটা নিল। ধন্যবাদ আর জানালো না। এমন কাণ্ডে ধন্যবাদ দেয়া সম্ভব?
কী বলবে? আপনার বুকে জায়গা দেবার জন্য ধন্যবাদ?
— দেখুন, বুঝতে পারছি সকালের ঘটনায় আপনি স্ট্রেসড আউট ছিলেন। এজন্য ইন্টার্ভিউ ভালো হয়নি। কিন্তু আমি আপনার গলা শুনেছি, উচ্চারণ শুনেছি, কথা বলার স্টাইল খেয়াল করে দেখেছি।
— কখন দেখলেন এসব? সন্দেহের গলায় প্রশ্ন করল কুর্চি।
ব্যাটার মতলবখানা কী? মতলববাজ একটা!
— আপনি যখন বান্ধবীর সাথে বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে আবোল তাবোল বকতেন!
“আবোল তাবোল বকতেন” কথাটা নীরবে হজম করল কুর্চি! তারমানে ও ঠিকই ধরেছিল। লোকটা ওর দিকে আড়ে আড়ে চাইত।
— শুনুন, আজ বাসায় যান। গরম পানিতে লং ফেলে গার্গেল করুন। আদা চা খান। কাল আসুন। আপনার ইন্টার্ভিউ আমি নেব আবার।
— আপনি?
— হ্যাঁ, আমি। আমার সাথেই তো কাজ করবেন। আমিও আর জে। আমার নাম আরিয়ান।
হাঁ করে তাকিয়ে রইল কুর্চি। আর জে আরিয়ান। তাই তো! কখনো ভালোমতো তাকিয়েও দেখেনি লোকটার দিকে। সবসময় মতলববাজ মনে করে মুখ ফিরিয়ে রাখত।
— আপনি… আপনিই আর জে আরিয়ান?
হাসল আরিয়ান
— সেরকমই কিছু হবে। আমার শো যেহেতু, আমার কথার দাম আছে। আপনি কাল আসুন। শর্টলিস্টে আপনার নাম তুলে ফেলেছি আমি।
— সত্যি? আমার বহুদিনের স্বপ্ন…
আর বলতে পারল না কুর্চি। আর জে আরিয়ান খুব জনপ্রিয়। সেই যদি মনে করে ওর মধ্যে সম্ভবনা রয়েছে!
উফ!
মাঝরাস্তায় ধেই ধেই করে নাচতে ইচ্ছা করল ওর। মুখ ফসকে বলে ফেলল
— আপনাকে যে কিভাবে ধন্যবাদ দিব!
মুচকি হাসল আরিয়ান।
— ধন্যবাদ দিতে হবে না। সামনে আমার চুল ছিঁড়বেন না, এই অনুরোধ রইল।
চলে যাচ্ছে আরিয়ান। যেতে যেতে মৃদু হাসল। কুর্চি কেমন বিহ্বল দৃষ্টিতে ওরদিকে তাকিয়েছিল। ভাবতে ভালো লাগছে। এতদিন ধরে ভেবে মরছিল কিভাবে ওরসাথে আলাপ শুরু করবে। আজ এমন এক কান্ড হল যে আলাপ তো আলাপ, যা-তা অবস্থা হল একটা। তারপরে একটার পর একটা চমক!
কুর্চি ওরই অফিসে এল ইন্টার্ভিউ দিতে!
ইন্টার্ভিউ ভালো হল না।
লাভ ওরই হল। তাতে কুর্চিকে আরেকটা সুযোগ দেবার কারণে ওর কৃতজ্ঞ দৃষ্টির গর্বিত মালিক হবার অভানীয় সুযোগ মিলল। সামনে হয়ত আবারো…
থামো তো! থামো! তুমি ওর বস। এভাবে গলে পড়বার কোনো মানেই হয় না!
নিজেকে বকতে বকতে কাজে ফিরে গেল আরিয়ান।
কুর্চির হাতে ধরা লাকি ফর্গেট মি নট ক্লিপটায় রোদ পড়ে ঝকঝক করছে।
আজ সত্যি ওর লাকি ডে।
আর জে আরিয়ানের সাথে ও কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। উফ!
যদি একসাথে কাজ করতে করতে একদিন… যাঃ, কী ভাবছে ও! গাল লাল করে বাসায় ফিরে গেল কুর্চি।
(চলবে)