#গল্পঃ_ও_চোখে_বৃষ্টি_এলে
#পর্ব: ত্রয়োদশ/সমাপ্ত
# Tuhina pakira
১৩.
চৌধুরী বাড়ির চৌকাঠে অভি যখন বর বেশে প্রবেশ করলো, সাম্যের মা এগিয়ে গেলো নিজের জামাইকে বরণ করতে। অভির পাশেই দাঁড়িয়ে ছিল পিয়াল। বাড়ির বউ হিসাবে পিয়ালের যেখানে হাসিমুখে ওর শাশুড়ি মার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা উচিত ছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে রয়েছে নিজের শাশুড়ি মার সামনে। কিন্তু এটা কি তার শাশুড়ি মেনে নেবে নাকি। অভিকে বরণ শেষে পিয়ালকে চোখের ইশারায় ডেকে নিলো। বরণ ডালাটা ওর হাতে দিয়ে তিনি অভিকে মিষ্টি খাইয়ে ওকে নিয়ে ভিতরে গেলো।
সামান্তাকে দেখার জন্যে পিয়াল ওর ঘরে গেলো। যেতে না চাইলেও একপ্রকার জোর করে পিয়ালের মামাতো বোন নিয়ে গেলো। পিয়াল যতদিন ছিল এই বাড়িতে ততদিনে এই বাড়ির কিছুটা ও চেনে, তার মধ্যে সামান্তার ঘর ও চেনে। পিয়াল বেশ ভয়ে ভয়েই ভিতরে গেল। কিসের এতো ভয়, ও বুঝলো না।
-” এই মেয়ে এইদিকে কোথায় যাচ্ছো?”
থমকে দাঁড়ালো পিয়াল। ওর সামনে স্বয়ং ওর শ্বশুরমশাই।
-” আসলে, আমরা নতুন বউ দেখতে যাচ্ছি।”
রিনির কথা শুনে পিয়াল ওর দিকে তাকালো। ও কী বলবে এতক্ষণ খুঁজে পাচ্ছিল না। ওর তো সেইদিনের পর থেকে একটাই ভয়, অভি, সামান্তার বিয়ে টা হবে তো! যদি দুই বাড়ির কর্তার রোষে ওদের মতো অভি সামান্তার জুটিটা ভেঙে যায়!
-” ঠিক আছে যাও। সোজা গিয়ে বামদিকের ঘরটা। ”
-” আচ্ছা আঙ্কেল। ”
সাম্যের বাবা একবার গম্ভীর চোখে পিয়াল কে দেখে নিয়ে ঐখান থেকে চলে গেল।
বিয়ের মণ্ডপের একপাশে পিয়াল রিনির সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। এসে থেকে একজনকে দেখার জন্যে ওর চোখ দুটি অপেক্ষা করে রয়েছে, কিন্তু তার দেখা পিয়াল এখনও অবদি পাইনি।
পিয়ালের থেকে কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে সাম্য নীলদের সঙ্গে কথা বলার ফাঁকে ফাঁকেই তাকিয়ে রয়েছে পিয়ালের দিকে। হোয়াইট, গোল্ডেনের কম্বিনেশনের শাড়িতে পিয়ালকে চমৎকার লাগছে। তার সঙ্গে হালকা কিছু গহনা, খোঁপা বাধা চুলে বেলি ফুলের মাঝে গোলাপ এর মাধুর্য্য আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলেছে ওর প্রিয়তমাকে। সাম্য চায় একবার পিয়ালের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলতে, ‘এতটাও মোহনীয় রূপে আমার চোখে ধরা না দিলেও পারতে।’ কিন্তু আফসোস বলা হবে না।
অভি, সামান্তা এর বিয়ে হয়েছে কয়েক ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। বরযাত্রীরা এবার ফিরে যাবে। হিসেব মতো পিয়াল ও নিজের বাবার সঙ্গে বাইরে বাগানের দিকে চলে গেল। সামান্তা অনেক করে বলেছিল, ওদের বাসর জাগতে কিন্তু পিয়াল থাকতে চাইনি। ওর এতো মানুষের ভিড়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে, তার উপর মাথা ব্যথা করছে।
ছাদে দাঁড়িয়ে তীক্ষ্ম চোখে পিয়ালের চলে যাওয়াটা হজম করে নিলো সাম্য। মনের মধ্যে তীব্র ইচ্ছা সত্বেও একবার পিয়ালকে থেকে যেতে বলল না। হাত মুঠো করে রেলিঙের উপর একটা ঘুষি মেরে ও নীচে চলে গেল।
সাম্যের মা পিয়ালকে রেস্ট নেবার জন্যে সাম্যের ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। যতই হোক বাড়ির বউকে তিনি অন্য ঘরে যেতে বলতে পারেন না। পিয়াল বেশ সংকোচ নিয়েই ঘরের দিকে গেল। যদিও বা ওকে বলা হয়েছে, সাম্য আজ ওর বন্ধুদের সঙ্গে অন্য ঘরে রয়েছে।
গত একটা মাস পর আবারও যে এই ঘরে আসতে পারবে তা পিয়াল ভাবেনি। মনের মধ্যে অনেক শূন্যতা এসে জমা হচ্ছে যেনো পিয়ালের। খুব করে প্রিয় মানুষটাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু সে যে এখানে আসবে না। কিন্তু মন বলছে আসবে। কিছুক্ষণ থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকার পর আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে নিলো পিয়াল। আসার সময় ওর শাশুড়ি বলে দিয়েছিল, পিয়ালের জিনিস গুলো এখনও ঐরকমই আছে। ও ভাগ্যিস ওর বাবার কথা শুনে থেকে গেল, নাহলে এই ঘরে আশা হতো না।
সাম্য ঘরে এসে লাইট নিভিয়ে চুপচাপ নিজের জায়গায় ঘুমিয়ে পড়লো। এতক্ষণ ও ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আপন মনে পুরোনো কথা ভাবছিল।
মিনিট পাঁচেক পর স্বভাবতই পিছন ফিরে নিজের পাশের জায়গায় হাত রাখতেই চমকে উঠে দাঁড়ালো সাম্য। প্রতিদিনের শূন্য জায়গায় আজ কে? পিয়াল! কথাটা ভেবেই সাম্য ঘরের লাইটটা জ্বালিয়ে দেয়।
ততক্ষনে পিয়াল ও উঠে বসেছে। ঘুমে চোখ বুজে আসলেও, চোখ জোড়া খুলে খুব কষ্ট করে দেখলো ওর সামনে সাম্য। কিন্তু নিজের ভ্রম মনে করে বলে উঠলো,
-” তুমি এসেছো সাম্য! জানো আমি তোমাকে কতো মিস করেছি।”
সাম্যের ইচ্ছে করলো ছুটে গিয়ে পিয়ালকে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নিতে, কিন্তু ওর মনে পড়ে গেল, পিয়ালের সেই দিন চলে যাওয়ার সময়টা। তাই ও ধমকে উঠল,
-” এখানে কি করছো? জানো না এটা আমার রুম, যাও এখান থেকে। চলে যাও। আমি তোমাকে এখানে সহ্য করতে পারছি না।”
ততক্ষণে পিয়াল সম্পূর্ণ হুশে চলে এসেছে। ছলছল চোখে সাম্যকে দেখে ও বিছানা থেকে নেমে গেল। সাম্যের দিকে তাকাতে ও উল্টো দিকে ফিরে বললো,
-” আমাকে না দেখে, এখান থেকে গেলে খুশি হবো।”
পিয়াল আর এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। দরজার কাছে এগিয়ে গেল। কিন্তু ঘরের দরজা খুলতে পারলো না। তখন বাইরে থেকে সাম্যের বাবা বললো,
-” আমি বাড়ির বউয়ের বেশি দিন বাপের বাড়ি থাকা পছন্দ করি না সাম্যের মা। ছেলের বউকে এই কথাটা জানিয়ে দিও। আমি গেলাম।
পিয়াল চমকে উঠলো। পুনরায় দরজায় ধাক্কা দিয়ে বললো, ” অ্যান্টি দরজাটা একটু খুলে দাও না!”
-” শোনো মেয়ে আমি তোমার শাশুড়ি মা, মানে মা হবো তোমার, অ্যান্টি না। আর তোমার শ্বশুর কী বললো শুনলে না! যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। কাল তোমার অনেক কাজ। তোমার ননদ শ্বশুর বাড়ি যাবে, তুমি একমাত্র বৌদি তোমাকে অনেক কিছু করতে হবে। রেস্ট করো, দরজা কাল ঠিক সময়ে খুলবে।
পিয়াল একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেল, কী শুনলো? ঠিক! জানার জন্যে পিছন ফিরে সাম্যের দিকে ইশারায় বোঝালো ও কী ঠিক শুনলো। কিন্তু সাম্য ওর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো। পিয়ালের এবার খুব কান্না পাচ্ছে। কিন্তু ও কাঁদতে পারছে না, চোখ মুখ থমথমে অবস্থা ওর। হঠাৎই সাম্য ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো। পিয়াল আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে, সাম্যের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়লো। সাম্য পিছন দিকে পরে যেতে গেলেও নিজেকে সামলে নিলো। এতক্ষণ পিয়ালের চোখের জল গুলো ঝরে পড়লো। আজ ও খুব করে কাঁদছে। প্রাণয়ণীকে বুকে জড়িয়ে সাম্যের চোখেও জল জমে গেছে। একসময় কাঁদতে কাঁদতে ওরা মেঝেতে বসে পড়েছে।
অনেকক্ষণ হয়ে গেলেও পিয়াল এখনও কেঁদে চলেছে। যা সাম্যের কিছুতেই ভালো লাগছে না। পিয়ালকে নিজের বুক থেকে তুলে ওর মুখটা সাম্য নিজের দুই হাতের ভাঁজে নিয়ে বললো,
-” কখনো সময় করে জেনে নিও, #ও_চোখে_বৃষ্টি_এলে, আমার মনের শহরটা ঝড়ের তান্ডবে এলোমেলো হয়ে যায়। ”
-” আমরা আবার একসঙ্গে সাম্য, আমি,”
-” বিশ্বাস ছিল না তাই না! আমাদের চাওয়াটা যে খুব করে ছিল পিয়াল। তাই তুমি আমার, আমি তোমার। ”
-” ভালোবাসি।”
-” খুব ভালোবাসি”
(সমাপ্ত)
{ বিঃ: ভুল ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন}
পুরোটা গল্পই দারুণ লাগছে