#গল্পঃ_ও_চোখে_বৃষ্টি_এলে
#পর্ব: ষষ্ঠ
৬.
-” আপনি সাইন করবেন কিনা, বলুন!”
-” না আমি সাইন করবো না। ”
-” বলছি কি পিয়ালের বাবা, সাইন টা করেই দাও। সাম্য কতো করে বলছে বলো।”
-” আহ্, তুমি থামো তো। কয়েক দিন আগেও তো মেয়েকে অন্য কোথাও বিয়ে দেবে বলে আনন্দে লাফাচ্ছিলে। আবার তোমার নিজের নাকি পাঁচ খানা নতুন শাড়ির ফিরিস্তি পর্যন্ত দিলে, আর এখন কিনা এই ভাবে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছো। ”
-” উফফ, মামা তোমারই তো ভালো, মামীর শাড়ি কেনার টাকা গুলো বেঁচে গেল।”
-” হ্যাঁ অভি তুই বলতো তোর মামাকে। তার উপর কতো ভালো, সোনার টুকরো জামাই পাচ্ছি। তাও এই হসপিটালে ভাবো একবার।”
-” কেনো তখন তো আমার বন্ধুর ছেলেও সোনার টুকরো ছিল, এখন কি সে কয়লায় টুকরো হয়েছে!”
-” এমা তোমার বন্ধুর ছেলেকে কয়লা বললে কয়লার অপমান হবে, ওটা তো একটা বলদ। যার হাত থেকে মেয়েটা আমার বেঁচে গেছে।”
পিয়ালের মায়ের কথায় পিয়ালের বাবা চুপ করে কেবিনের চেয়ার টায় বসে পড়লো। সেই দিনের পর পাঁচ দিন কেটে গেছে। আজই পিয়ালকে রিলিজ দেবে, কিন্তু সাম্য আর পিয়ালকে ছাড়বে না। ও ঠিক করেছে একে বারে পিয়ালকে ওর সঙ্গে নিয়ে যাবে। তার জন্যে হসপিটালে উকিল সমেত চলে এসেছে। পিয়াল এখনও ঘুমে তাই ততক্ষনে সাম্যের সাক্ষী হিসেবে ওর বোন সামান্তা, সোহেলের সিগনেচার নেওয়া হয়েছে। আর পিয়ালের দিক থেকে পিয়ালের মা সিগনেচার করলেও পিয়ালের বাবা এখনও সিগনেচার করেনি। অভি সিগনেচার করতে চাইলেও সাম্য চায় পিয়ালের বাবা যেনো সাইন টা করে। কিন্তু তিনি জেদ করে বসে রয়েছে। তার মতে এই ভাবে তার মেয়ের বিয়ে তিনি দেবেন না। তাছাড়া সাম্য কেই যে তিনি তার জামাই করবেন তা ভেবে তারপর বলবেন।
কাব্য এবার রেগে গেল, গত একমাসের পরিস্থিতিতে ওর রাগ খুব বেড়ে গেছে। না চাইলেও বারবার রেগে যাচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে পিয়ালের বাবাকে ও বুঝিয়েছে, কিন্তু এই লোক মহা পাজি। এবার খানিক ধমক দিয়ে বলল, ” আপনি সাইন করবেন না তাইনা। ওই নীল যা গাড়ি বের কর আমি পিয়ালকে নিয়ে আসছি।”
সাম্যের ধমকে পিয়ালের বাবা প্রথমে চমকে উঠলেও পড়ে তিনিও ধমকে উঠলেন। এই ছেলে তাকে কাল থেকে ধমক দিয়েই চলেছে।
-” এই ছেলে, আমার মেয়েকে নিয়ে তুমি কোথায় যাবে! মস্তানি হচ্ছে, তুমি কি ভেবেছো আমি তোমাকে ভয় পাই। তুমি জানো কলেজ লাইফে আমি কতো বড়ো বক্সিং চ্যাম্পিয়ান ছিলাম। সবাই আমার ভয়ে থাকতো, না জানলে নিজের বাবাকে জিজ্ঞেস করো।”
-” আপনার এই বড়ো বড়ো বাতেলা অন্য কোথাও দেবেন। উহু, বক্সিং চ্যাম্পিয়ান ছিল না আরও কিছু। আপনার মেয়েকে এখান থেকে নিয়ে গেলে আপনি কি ভেবেছেন আপনি আমাকে আটকে রাখবেন! পারবেন? চুপ করে বসে থাকুন।”
-” দেখো..”
-” কোনো দেখাদেখির সীন নেই। আপনি যদি সাইন না করেন তাহলে আপনার মেয়েকে একবার নিয়ে গেলে, আপনি আর কোনো দিন তার সঙ্গে দেখা তো দূর কথা বলতেও পারবেন না। এবার ডিসিশন আপনার, মাত্র পাঁচ মিনিট সময় আপনার হাতে।
•••••••••••
হালকা হালকা কথা পিয়ালের শ্রুতিগোচর হতেই ও চোখ খুলে আবছা চোখে সামনে তাকালো। গত কয়েক দিন মেডিসিন, ইনজেকশনের প্রভাবে ও প্রায় সময় ঘুমিয়েই কাটিয়েছে। এখনও ওর ঘুম ছাড়েনি, তাও সামনে তাকাতেই দেখলো ওর বাবা কী কিছুতে একটা সাইন করছে। পিয়াল আধো আধো স্বরে বলল,
-” কী করছো বাবা!”
সবাই পিয়ালের দিকে তাকালো। সাম্য এগিয়ে গিয়ে পিয়ালকে আস্তে আস্তে বসিয়ে দিল। তারপর ওর হাতে একটা পেন দিয়ে পেপারে একটা সাইন করতে বলল। কিন্তু পিয়াল সাম্যের জামার হাতাটা মুঠো করে ধরে আবারও আধো স্বরে বলল,
-” সাম্য তুমি এখানে কী করছো? চলে যাও। বাবা দেখে ফেললে খুব মারবে। আমার বাবাকে তো চেনো না, এক নম্বরের রাগী। একটা ধমক দিলেই সবাই কুপোকাত। তবে একটা সিক্রেট কী জানো, বাবা মাঝে মাঝে মা কে ভয় পায়। তুমিও আমাকে ভয় পাবে বিয়ের পর, ঠিকাছে। তার পর তুমি যেদিন লেট করে অফিস থেকে বাড়ি ফিরবে আমি বেলনা নিয়ে তোমাকে ধাই ধাই করে মারবো ঠিক আছে। এখন তুমি যাও।”
ঘুমের ঘোরে বলা পিয়ালের কথায় উপস্থিত সকলে হেসে উঠলো। পিয়ালের বাবা গলা ঝেড়ে বললো,
-” কী বলছো তুমি পিয়াল!”
-” সাম্য তাড়াতাড়ি পালাও, বাবা এসে গেছে।”
সাম্য পিয়ালের কপালের ছোটো চুলগুলো খুব যত্ন করে সরিয়ে দিয়ে বললো,
-” যাবো তো, এক্ষুনি যাবো। তার আগে তুমি এইখানে একটা সাইন করে দাও তো।”
পিয়াল যতটা সম্ভব চোখটা খোলার চেষ্টা করে পেপারে সাইন করে দিল। তারপর সাম্য ও ওতে সাইন করে দিল। সকলে আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো। এতক্ষণে পিয়ালের ঘুমটা ঠিক মতো ছাড়লো। চোখ বড়ো বড়ো করে সকলের দিকে তাকিয়ে রইল। কী হয়েছে বোঝার চেষ্টা করেও পারলো না। সেই মুহূর্তে পিয়ালের মা সাম্যের হাতে একটা ছোটো কৌটো এগিয়ে দিয়ে বললো,
-” আর এই টুকু কাজ বাকি রয়ে গেলো যে বাবা।”
সাম্য মুচকি হেসে কৌটো থেকে সিঁদুর নিয়ে পিয়ালের সিঁথিতে খুব সাবধানে পরিয়ে দিল, যাতে কপালে ও মাথায় কোনোভাবে না লাগে।
পিয়াল হতবাক হয়ে সাম্যের দিকে তাকিয়ে রইল। সাম্য কেনো ওকে সিঁদুর পড়ালো! তাতো ও বুঝতেই পারলো না। পিয়াল দুদিন আগেই জেনেছে, সাম্য মৈত্রী কে বিয়ে করেনি। কিন্তু তাহলে ওকে কেনো বিয়ে করলো, ওর তো মৈত্রী কে বিয়ে করতে হবে। সাম্য তো আর ওকে ভালবাসে না, যে ওকে বিয়ে করলো।
-” এটা কি করলেন আপনি? ”
পিয়ালের মুখে ‘ আপনি ‘ ডাকে সাম্য প্রথমে চমকে গেলেও পড়ে যথেষ্ট কঠিন গলায় বলল,
-” দেখলেনা তোমাকে বিয়ে করলাম।”
-” বিয়ে করলাম মানে কি! কেনো বিয়ে করলেন?”
-” এতো কথা জানিনা, আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই বিয়ে করেছি। তোমার অসুবিধা আছে! থাকলেও বলবে না। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও, তোমাকে রিলিজ দিয়ে দিয়েছে। আমরা বাইরে আছি।
সাম্য সবাইকে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেল, থেকে গেল সামান্তা ও পিয়ালের মা। ওরা দুজনে মিলে পিয়ালকে রেডি করিয়ে বেডে বসিয়ে সাম্য কে ডেকে দিয়ে ওরা হসপিটালের বাইরে চলে গেল।
¶¶¶
কেবিনে প্রবেশ করতেই থমকে দাঁড়ালো সাম্য। লাল শাড়িতে কি অপরূপ লাগছে পিয়ালকে। তার উপর মাথার সিঁদুর যেনো আরও অপরূপ করে তুলছে পিয়ালকে।
সাম্য ধীরে ধীরে পিয়ালের কাছে এগিয়ে গেল। পিয়াল তখন বেডে হেলান দিয়ে বসে রয়েছে। সাম্য গিয়ে পিয়ালের কপালে ভালোবাসার পরশ দিয়ে পিয়ালের দিকে তাকালো। কারোর সংস্পর্শে পিয়াল চোখ খুলে সাম্য কে দেখে সঙ্গে সঙ্গে চোখ সরিয়ে নিলো। ওর মন বারবার বলে চলেছে সাম্য তো ওকে ভালোবাসে না। তবে কেনো ওকে বিয়ে করলো? শুধু কি পিয়ালের অসুস্থতার জন্যে!
পিয়ালের ভাবনার মাঝে সাম্য পিয়ালকে কোলে তুলে সামনে হাঁটা ধরলো। কিন্তু পিয়াল ওর দিকে একবারের জন্যও ফিরে তাকালো না। সাম্য পিয়ালের শুকনো মুখটা একবার দেখে আবারও সামনে তাকালো। আর সাম্যের কিছু লাগবে না। বড়ো পাওনাটা পেয়েই গেছে।
সন্ধ্যে সাতটার দিকে সাম্য পিয়ালকে নিয়ে ওর নতুন কেনা ফ্ল্যাটে নিয়ে গেল। পিয়াল খানিক অবাক হলো, কিন্তু কিছু বললো না। সাম্যের তো উচিত ছিল পিয়ালকে সাম্যের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সাম্য চায়না ওর বাবা পিয়ালকে কিছু আজে বাজে কথা বলুক, তাই এই ফ্ল্যাটে আসা। ওদের সঙ্গে অভিও এসেছে। এখন কয়েকদিন ও এখানেই থাকবে।
-” তুমি এখানে কিছুক্ষণ চুপ করে বসো। আমি তোমার জন্যে খাবার বানিয়ে আনছি।”
-” আমি খাবো না। আমার জন্যে আপনাকে কিছু করতে হবে না সাম্য। ”
-” ধমক খেতে না চাইলে চুপ করে বসো। ”
সাম্যের কথায় পিয়াল চুপ করে বসে রইল। সাম্য ওর সঙ্গে কেনো যে এমন করছে, তা ও বুঝতেই পারছে না।
( চলবে)
{বিঃ : ত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। হ্যাপি রিডিং।। }