ও চোখে বৃষ্টি এলে পর্ব-০৪

0
1555

ও চোখে বৃষ্টি এলে
৪.

পাঁচ মিনিট ধরে জ্যামে আটকে রয়েছে সাম্য। কিন্তু ওর আর এই ভাবে ভালো লাগছে না। ওকে এক্ষুনি পিয়ালের কাছে যেতে হবে। সাম্যের মন এখন কেমন যেনো কিছু একটা অনুভব করছে। ও বুঝতে পারছে ওকে পিয়ালের কাছে যেতে হবে, কিন্তু এক্ষুনি যেতে হবে এই অনুভূতি কেনো ওর হচ্ছে? ও বুঝতেই পারছে না।

ততক্ষনে একটা অ্যাম্বুলেন্স এসে দাঁড়িয়েছে। গাড়িতে ক্রিটিকাল প্রেশেন্ট রয়েছে। তার উপর ট্রাফিক পুলিশ কেউ দেখা যাচ্ছে না। সাম্যের হঠাৎ কি মনে হতে নিজেই গাড়ি থেকে নেমে অ্যাম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে গেল। ওর দেখাদেখি আরও কয়েকজন এগিয়ে এসেছে।

অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভারের সঙ্গে কথা বলে সাম্য এবং আরও কয়েকজন রাস্তাটা ক্লিয়ার করার চেষ্টা করলো, যাতে তাড়াতাড়ি হসপিটালে পৌঁছাতে পারে। ততক্ষণে ট্রাফিক পুলিশ পুরোটা কন্ট্রোলে নিয়ে নিয়েছে। সাম্য আম্বুলেসের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিলো। সাম্য এগিয়ে গেল নিজের গন্তব্যে। কিন্তু এই গন্তব্যটা হয়তো পিয়ালের বাড়িতে স্থির হবে বলে মনে হয় না। আজ সাম্যের গন্তব্য যে অন্যকোনো গন্তব্যে।

সাম্য দশ মিনিটের মধ্যে পিয়ালের বাড়ির কাছে এলো। পিয়ালের বাড়ির সামনে তখন প্রতিবেশীরা কাউকে নিয়ে কথা বলছেন। বাড়ির সামনে এতো লোক দেখে সাম্য যেনো ঘাবড়ে গেল, কী হয়েছে? কিছুই বুঝলো না। তবে মাথায় উল্টো পাল্টা অনেক কিছু ঘুরছে।

সাম্য নিজেকে সামলে পিয়ালের বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল, কিন্তু বাড়ি তো লক করা। কোথায় গেলো,সব? সাম্যের মনে ভয় ঢুকে গেল, তবে কি পিয়াল এখান থেকে চলে গেছে! সাম্য কী তবে, দেরি করে ফেললো!

সাম্যের ভাবনার মাঝে একটি লোক ওকে বললো,
” আপনি কি এই বাড়িতে এসেছেন?

লোকটির কথায় সাম্যের হুশ ফিরল। মাথা ঘুরিয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে বাড়িটার দিকে ইশারা করে বললো, ” পিয়াল!”

সাম্য যেনো কথা বলতে পারছে না। অজানা ভয়ে জিভ যেনো তার অসাড় হয়ে আসছে।

-” কে হয় পিয়াল?”

কিন্তু প্রশ্নের উত্তর তো সাম্য দিতে পারলো না, তার আগেই পাশের দুই মহিলার কথোপকথনে সাম্য শূন্য দৃষ্টিতে ওদের দিকে তাকিয়ে রইল।

প্রথম মহিলা, ” মেয়েটাকে যখন নিয়ে যাচ্ছিল, তখন তো ওর দিকে তাকানোই যাচ্ছিল না। সারা শরীর যেনো সাদা হয়ে গিয়েছে। তার মধ্যে রক্তে রাঙা। ওর মা তো খুব কাঁদছিল। বললো নাকি সারা শরীর ঠাণ্ডা হয়ে গেছে। ”

দ্বিতীয় মহিলা, ” সে কি গো দিদি! ওর মা তো সকালে বললো, মেয়ের আজ বিয়ে ঠিক করবে। কতো খুশিই না ছিল সকালে। আমি তো এসে দেখি কাঁদতে কাঁদতে অ্যাম্বুলেন্সে উঠলো। কী করে হলো? আত্মহত্যা করেছি নাকি?”

প্রথম মহিলা, ” না না আমার মনে হয় না। মেয়েটা এমনিতে ভালো, সাতে প্যাঁচে থাকে না। আত্মহত্যা করবে বলে মনে হয় না। যতটা সম্ভব বেতালে সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে। আত্মহত্যা করলে তো ছাদ থেকে লাফ দিত।”

সাম্যের যেনো নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, কার কথা বলছে ওরা। সাম্য লোকটার দিকে তাকিয়ে ইশারায় ওই মহিলাদের দিকে তাকাতে বললো। লোকটা এতক্ষণ সবই শুনেছেন। তাই নিজেই সাম্য কে বললো, ” আপনি যে পিয়ালকে খুঁজছেন সে আজ সিঁড়ি থেকে পড়ে গেছে, কোনো ভাবে। ওকে নিয়ে ওর বাবা, মা, পিসতুতো দাদা হসপিটালে গিয়েছে।

সাম্য স্থির চোখে লোকটার দিকে তাকালো। তাহলে ও সত্যিই দেরি করে ফেললো। না, এটা হতে পারে না। সাম্যের নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসছে। হাত, পা কাঁপছে। কোনো মতে লোক টিকে বললো,

-” কোন হসপিটাল?”

লোকটার থেকে হসপিটালের নাম জেনে সাম্য বাইক স্টার্ট দিয়ে চলে গেল। বাইকের স্প্রিড বাড়িয়ে দিয়েছে, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওকে যেতেই হবে পিয়ালের কাছে। সাম্য এখনও বিশ্বাস করতে পারছে না, ওর প্রাণায়ণী হসপিটালে।

কিছুক্ষণ আগে,

পিয়াল তখন সিঁড়ি দিয়ে পড়তে গিয়ে বেঁচে গেলেও, ওর ভাবনায় তখন ছিল কেবল সাম্য, সাম্যের প্রতিটা প্রতিশ্রুতি। যা পিয়ালের মাথায় ঝেঁকে বসে ছিল। সেই ভাবনার মাঝেই পিয়াল আবারও নীচের সিঁড়িতে পা দেয়। কিন্তু এইবার আর রক্ষা হয় না। স্লিপ খেয়ে তেরোখানা সিঁড়ির উপর থেকে একেবারে নীচে পড়ে যায় পিয়াল। পড়লো তো পড়লো একেবারে থাই গ্লাসের উপর। কয়দিন ধরেই পিয়ালদের বাড়িতে রেলিঙে থাই গ্লাস লাগানোর কাজ হচ্ছিল। আজকের দিনটা হলে কাজ শেষ হয়ে যেত, কিন্তু আজ পিয়ালকে দেখতে আসার জন্যে ওর বাবা কাজ বন্ধ রেখেছিল। আর তাই পিয়ালের জন্যে বিপদ ডেকে আনলো।

চারিদিকে বৃষ্টির জলের সঙ্গে রক্ত মিশে গিয়েছে। পিয়াল নিভু নিভু চোখে আকাশের বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে ছিল। ওর মুখে ছিল একরাশ হাসি। হয়তো প্রিয়কে মুক্তি দেওয়ার। কিন্তু ভাগ্য কী তাদের আলাদা হতে দেবে! দিলে তো মৈত্রীর জয় হবে, সাম্য ও পিয়ালের বাবার জেদ জয়ী হবে। ভাগ্য তাদের এতো বড়ো ক্ষতি করবে বলে মনে হয় না।

পিয়াল ওই ভাবে কতক্ষন ছিল সেটা কেউ জানে না। পিয়ালের মা, বাবা তখন বাড়ির সদর দরজায় দাঁড়িয়ে অতিথিদের অপেক্ষায়, আর অভি তখন কেবল সাম্যের কাছ থেকে বেরিয়েছে। বাড়ির ভিতরের দুই তলার ছাদে যে তখন অঘটন ঘটে গিয়েছে তা তারা বোঝেই নি। একে তো তারা সদর দরজায় দাঁড়িয়ে, তারউপর প্রবল বর্ষণের সঙ্গে আকাশ ডেকে চলেছে।

মিনিট দশেক পর পিয়ালের বাবার বন্ধু, বন্ধুর স্ত্রী ও ছেলে এসে যায়। ততক্ষণে বৃষ্টি থেমে গিয়েছে। সদর দরজা থেকে বাড়ির ভিতরে যেতে খোলা একটা বড়ো উঠোন রয়েছে, সেখানে যেতেই সবাই থেমে যায়। কারণ নীচটা কেমন যেন লাল বর্ন ধারণ করেছে। উপরের ছাদের পাইপ থেকে জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে পরছে। নিমেষে সকলের মুখ পাংশু বর্ণ ধারণ করে। ততক্ষণে অভি ও এসে গিয়েছে। এসেই এই অবস্থা দেখে ছাদের দিকে ছুট দেয়। কিন্তু গিয়ে যে বোনের এমন করুণ অবস্থা দেখবেন তা তো সে কল্পনাই করেনি। বৃষ্টিতে ভেজা পিয়ালকে দেখে মনে হচ্ছে কোনো সাদা পুতুল শুয়ে রয়েছে। মাথা ফেঁটে এখনও রক্ত পড়ছে, দুই হাত কেটে রক্ত পড়ছে। পিয়ালের মা, বাবা যেনো স্তব্ধ হয়ে গেছে। অভি আর দেরি না করে পিয়ালকে কোলে তুলে নামিয়ে আনে। অ্যাম্বুলেন্স আসতে দ্রুত পিয়ালকে নিয়ে হসপিটালে রওনা দেয়৷

¶¶¶

-” আমরা তবে এখন আসি। কাল তমালের অফিস রয়েছে। অলরেডি দশটা বেজে গেছে, এখন না বেরোলে বাড়ি যেতে দেরি হয়ে যাবে। ”

পিয়ালের বাবা বন্ধুর কথায় একটু অবাক হলেও গা করলো না। তার চিন্তা এখন মেয়েকে নিয়ে। কিন্তু পিয়ালের মা এতক্ষণে হয়তো বুঝলো এই মানুষগুলো কেমন! এখন যদি এখানে ওই সাম্য নামে ছেলেটা থাকতো, তবে সে কি করতো? না চাইতেও তার মন ওই ভাবনায় চলে যাচ্ছে। পাঁচ মিনিট হলো পিয়ালকে ডক্টর দেখছেন। মেয়েটার চিন্তায় তিনি স্বামীর পাশে বসে রইলো, বারবার ঈশ্বরকে ডাকছে।

সেই সময় ছুটতে ছুটতে এসে থামলো সাম্য। হাফাচ্ছে ভীষন। গায়ের সাদা শার্টটা বৃষ্টির জলে প্রায় ভিজেই গিয়েছে। আসার পথে বৃষ্টি এসে তাকে সহ পুরো পৃথিবী নিমেষে ভিজিয়ে চলে গিয়েছে। সাম্য কয়েক মিনিটেই কেমন যেন অগোছালো হয়ে গিয়েছে। কেউ দেখে বলবে না এই ছেলে কিছুক্ষণ আগে বিয়ে করতে গিয়েছিল। যদিওবা সে বাঙালি বিয়ের নিয়ম মেনে ধুতি পাঞ্জাবি পড়েনি, না ছিল তার কপালে চন্দন। সে প্যান্ট, শার্ট পরেই বিয়ে করতে গিয়েছিল। দেখে সেখানে প্রথমে কেউ বোঝেনি, বিয়ের বর কে। যদিও বা সাম্যের মতে ও বিয়ে করতে যায়নি, গিয়েছিল নিজের মাথায় একটা বোঝা আনতে।

সাম্য কে হাঁফাতে দেখে পিয়ালের মা – বাবা অনেকটাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালো। পরক্ষনেই পিয়ালের বাবা রেগে গেল।

-” তুমি! তুমি এখানে কী করছো? তোমার না আজ বিয়ে, যাও এখান থেকে। তোমাকে বলেছি না আমার মেয়ের কাছে আসবে না।”

কিছুক্ষণ আগে হওয়া বোধদয় পিয়ালের মায়ের মনে যেনো গেঁথে গিয়েছে। বারবার তার মন বলছে, এ ছেলে তার মেয়ের হাত ছাড়বে না। অন্য সময় হলে তার মনে এটাই চলতো কী করে এই ছেলেকে নিজের মেয়ের জীবন থেকে সরানো যাবে, কিন্তু আজ কোথাও যেনো সময় অন্য রূপ দেখাচ্ছে।

পিয়ালের বাবার কথায় সাম্য কিছু বললো না, পিয়ালকে কেবিনের বাইরে থেকে দেখলো। নিমেষে বুকটা কেঁপে উঠলো। তাজা রক্ত এখনও পিয়ালের সারা মুখে ছড়িয়ে রয়েছে। গা হাত কেমন যেনো বিছানার সঙ্গে মিশে গিয়েছে। সাম্যের নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে।

পিয়ালের বাবা আবার দু – চারটে কথা বলতে গেলে তার স্ত্রী তাকে আটকে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডক্টর বেরিয়ে আসে।

-” ডক্টর ও.. কেমন আছে? আমার মেয়েটা বেঁচে আছে তো?”

পিয়ালের বাবার কথায় সাম্য হুট করেই রেগে গেল,
” একদম ফালতু বকবেন না, পিয়ালের কিছু হবে না। ডক্টর পিয়াল কেমন আছে? আপনি দয়া করে পিয়ালকে সুস্থ্য করে দিন। ”

সাম্যের কথা শুনে পিয়ালের বাবা চুপ হয়ে যায়।

-” দেখুন পেশেন্টের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল। মাথায় ছোটো ছোটো কাঁচ ঢুকে গেছে, তার উপর অনেকক্ষণ জলে ভিজেছে। কথাটা না বলতে চাইলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, আপনারা অনেকটাই দেরি করে ফেলেছেন। অনেক ব্লাড লসও হয়েছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনারা ‘ ও পজেটিভ ব্লাড গ্রুপের অ্যারেঞ্জ করুন। আমাদের হসপিটালের ব্লাড ব্যাংকে এখন ও পজেটিভ ব্লাড নেই।”

-” ডক্টর আপনি ওকে বাঁচিয়ে দিন। আমি রক্তের জোগাড় করেছি, জাস্ট দশ মিনিট। ”

সাম্যের কথার প্রত্যুত্তরে পিয়ালের মা, বাবা ওর দিকে তাকালো। ডক্টর আবার ভিতরে চলে গেল।

সাম্যের বাবা রিসেপশনে অভির কাছে চলে গেলো। তাড়াতাড়ি ব্লাড জোগাড় করতে হবে। পিয়ালের মা চুপ করে পাশের কেবিনের দেওয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আজ মন বারবার বলছে, কোথায় একটা থেকে মেয়ের এই দশার জন্যে তারাই দায়ী।

সাম্য আর দেরি না করে কাউকে ফোন করলো।
ফোনটা রিসিভ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সাম্যের কানে ভেসে এলো শঙ্খ, উলুধ্বনির শব্দ। কিন্তু সাম্য ওই সব গ্রাহ্য না করে ধরা গলায় বলল,

-” বোন, আমার একটা উপকার করবি? তুই যা বলবি, আমি তাতেই রাজি কিন্তু তুই আমাকে এই উপকারটা কর, প্লিজ।”

– ” কী বলছিস, তোর কি হয়েছে? তোর গলা এই রকম লাগছে কেনো?”

-” আমি তোকে সব বলবো। তুই আগে বল, তুই পিয়ালকে ব্লাড দিবি? তোদের ব্লাড গ্রুপ এক।”

সামান্তা ভয় পেয়ে গেল, পিয়ালকে ব্লাড দেবে মানে! কী হয়েছে তার?

– ” দাদা কি হয়েছে পিয়াল দির?”

-” ও হসপিটালে ভর্তি, সিঁড়ি থেকে পড়ে গিয়েছে। মাথায় কাঁচ ঢুকে গিয়েছে। ডক্টর অপরেশন করবে। ব্লাডের প্রয়োজন, তুই একবার আসবি?”

-” আমি আসছি, এক্ষুনি। তোকে চিন্তা করতে হবে না। তুই ঠিকানাটা দে?”

সাম্যের থেকে ঠিকানা নিয়ে সামান্তা ফোন কেটে সোহেলদের বললো, ” তোমরা এই দিকটা দেখো। কিছু যেনো গন্ডগোল না হয়। ”

নীল আশ্বস্থ করে বললো, ” তুই তাড়াতাড়ি যা, আর লেট করিস না। আমরা এই দিকের কাজ মিটিয়ে চলে যাবো।
¶¶

সাম্য দেওয়ালে হেলান দিয়ে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইলো। মনের মধ্যে খুব বড়ো ঝড় বয়ে যাচ্ছে। পিয়ালের কিছু হলে ও নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে না। সব ওর জন্যেই হয়েছে। ও একটা জঘন্য ছেলে। সাম্য যখন নিজের মনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে ব্যস্ত, তখন হুট করে ওর বাবা এসে গালে একটা চড় বসিয়ে দিল। ছেলেকে ফলো করেই তিনি এখানে এসেছে। সাম্য এতো স্প্রিডে বাইক চালিয়ে এসেছে যে তিনি সাম্যকে চেয়েও ধরতে পারেনি।

-” তুই এখানে কি করছিস? চল, মৈত্রী তোর জন্যে অপেক্ষা করছে। তুই তোর মা কে কথা দিয়েছিলি, তুই আর কখনো পিয়ালকে মেনে নিবি না। চল।

সাম্য হাত শক্ত করে দাঁড়িয়ে রইলো। ও চায় না এখানে কোনো সিনক্রিয়েট করতে। ততক্ষনে পিয়ালের বাবা এসে গিয়েছে।

-” হ্যাঁ, হ্যাঁ নিজের ছেলেকে এখান থেকে নিয়ে যান। ওকে আমি এখানে দেখতে পারছি না। ওর জন্যে আমার মেয়ে এই পরিস্থিতিতে পড়েছে।

-” আমার ছেলে এখানে কি করেছে? আপনার মেয়ের এই পরিস্থিতির কারণে সে দায়ী। খবরদার আমার ছেলের নামে একটা কথাও বলবেন না।

সাম্য আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না। ভিতর থেকে এক নার্স এসে বললো, আপনারা এই ভাবে চিৎকার করছেন কেনো? প্রেশেন্টের অবস্থা খারাপ। আপনারা দয়া করে চুপ করুন।

কথা টুকু বলে নার্স আবার ভিতরে চলে গেল। পিয়ালের বাবা চুপ করে গেল। ততক্ষনে অভি এসে গেছে। সবাই চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সাম্যের বাবা আবারও বলে উঠলো,

-” সাম্য চল এখান থেকে। মৈত্রী, ”

বাকি কথা আর বলতে পারলো না। তার আগেই রেগে গিয়ে সাম্য দেওয়ালে পরপর ঘুষি মারতে লাগলো।

-” বলছিনা, আমি ওই মেয়েকে বিয়ে করবো না। কেনো এক কথা বারবার বলছো। যাও এখান থেকে। শুধু মাত্র তোমাদের জন্যে পিয়ালকে এইসব ফেস করতে হচ্ছে। ”

সাম্যের হাত দিয়ে তখন রক্ত পড়ছে, অভি কোনমতে ওকে থামলো। সাম্য অভিকে জড়িয়ে কেঁদে উঠলো, ” তোমাদের জন্যে আমি পিয়ালকে কষ্ট দিয়েছি। সেই কবে তোমাদের মধ্যে কী ঝামেলা হয়েছিল, তাই নিয়ে তোমরা আমাদের আলাদা করে দিলে, যেই ঝামেলার কিছু তোমাদের মনে পর্যন্ত নেই। আমরা না হয় ছোটো, তোমরাও তো বাচ্চা
না। ”

পিয়ালের বাবা কিছু বললো না, চুপ করে পাশের চেয়ারে বসে রইলো। সাম্যের বাবা ঠাণ্ডা গলায় বলল, ” সেই সব কথা পরে, তুই, ”

সাম্য ওর বাবাকে বলতে দিল না। নিজেই বললো,
-” আপনি এখন থেকে যান। আমি কোথাও যাবো না। আর আপনাকে চিন্তা করতে হবে না পিয়ালকে নিয়ে আপনার বাড়িতে আমি কখনো যাবো না। আসতে পারেন।”

-” এই তোমার শেষ সিদ্ধান্ত?”

-” হ্যাঁ।”

-” বেশ তবে এখানেই থাকো। একটা সামান্য মেয়ের জন্যে যে নিজের বাবা, মা কে কষ্ট দেয় তাকে আর কি বলবো। একবার নিজের মায়ের কথাও ভাবলে না? আর মাকে যে তুমি কথা দিলে!”

সাম্য হাসলো, মলিন হাসি।
-” মায়ের কথাই তো পালন করছি। ”

সাম্যের বাবা রেগে হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গেল। এই ছেলের সঙ্গে আর কোনো যোগাযোগ ও তিনি রাখতে চান না।

-” সাম্য তোমার হাতটা ড্রেসিং করবে চলো, ব্যাথা করছে তো?”

সাম্য নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে বললো, ” এর থেকেও বেশি কষ্ট ও পাচ্ছে। ”

পিয়ালের বাবা, মা একভাবে সাম্যের দিকে তাকিয়ে রইল। তখন ছুটতে ছুটতে সামান্তা এসে দাঁড়ালো। অভি সাম্যকে বসতে বলে সামান্তা কে নিয়ে গেল, ব্লাড দেওয়ার জন্যে।

(চলবে)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে