#ওহে প্রেয়সী ভালোবাসি
#মারিয়া মীম (ছদ্মনাম)
পর্ব-৯+১০
প্রকৃতির এক অপরুপ সৌন্দর্যের নাম হলো সমুদ্র। সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জলরাশি যেন মুহূর্তেই মনকে আনন্দিত করে তোলে। সমুদ্রের এপাড় থেকে ওপারে তাকালে দেখা যায় ছবির মতো ছোট ছোট সুন্দর বাড়িঘর। যার প্রায়টাই তৈরী হয়েছে রঙিন টিন দ্বারা। যা দেখতে অপরুপ লাগে। আমাদের বাসা থেকে অনেকটা দূরেই এই সমুদ্র। দূরে হলেও একসময় সপ্তাহে এক দুবার আসাই হতো এখানে।প্রিয়কই নিয়ে আসত আমাকে আর রিক্তা আপুকে। অনেকটা সুখময় সময় কাটাতাম এখানে। সেই ঘটনার পর আর আসা হয়নি এখানে। আজ দুবছর পর আবারও এখানে এসে পুরনো স্মৃতিগুলো মনের ক্যানভাসে ভেসে উঠে। সবগুলোই মধুর স্মৃতি।
“আমি চলে যাচ্ছি, প্রিয়তা। ”
প্রিয়কের এ কথায় চমকে উঠে তাকাই আমি। মানুষটা সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আমার ভাবনা জুরে তখন একটা কথায় ঘুরছিল কোথায় যাবে? প্রিয়ক হয়তো বুঝেছিল আমি তাকিয়ে আছি তার দিকে। সে আমার দিকে ফিরে আবারও বলল,
“বাইরে চলে যাচ্ছি। এবার আর হয়তো ফেরা হবে না। যদি বেঁচে থাকি তাহলে আল্লাহ চাইলে কোন একসময় হয়তো আবাও দেখা হতে পারে।”
আমি প্রিয়কের দিকে নিষ্পলক চোখে চেয়ে আছি। সমুদ্রের উত্তাল ঢেউ যেন আমার অন্তরে আঁচড়ে পড়ছিল। অদ্ভুত এক অনুভূতি শিরায় শিরায় বয়ে চলছিল। এই অনুভূতির সাথে পরিচিত নই আমি। কষ্ট হচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে। জানি না কেন? এর আগেও যখন গিয়েছে তখন তো বিন্দুমাত্র খারাপ লাগেনি। তাহলে এখন কেন? প্রিয়ক আমার অবস্থা বুঝতে পারছিল কিনা জানি না। তবে তাকে অনুভূতিশূন্য মনে হচ্ছিল। কিছু বলবো সেই ভাষা ও যেন হারিয়ে ফেলেছি আমি। ক্ষীন কন্ঠে বললাম,
“আমার জন্য? ”
“না তোর জন্য না। তোর জন্য তো এসেছিলাম।”
“তাহলে কেন যাচ্ছো?”
“এখানে থাকলে মরে যাব রে আমি। নিঃশ্বাস নিতেও কষ্ট হয় আমার। জানিস ওই দিনের পর থেকে মা আমার সাথে কথা বলেনি। যেই মা আমার সাথে একবেলা কথা না বলে থাকত পারতো না। সেই মা আমার সাথে এতদিন হলো কথা বলে না। সবার এত কঠিন রুপ আমি এর আগে দেখিনি রে প্রিয়। দমবন্ধ হয়ে আসে আমার। পারব না রে থাকতে এখানে। পারবো না।”
প্রিয়কের কথাগুলো যেন বিষের মতো আঘাত হানছিল আমার উপর। এত কষ্ট কি সত্যিই পাওয়ার যোগ্য মানুষটা? শাস্তি টা বেশিই হয়ে গেল না তার জন্য? কান্না পাচ্ছিল খুব। প্রিয়ক আবার বলল,
“তবে তুই চিন্তা করিস না। তোর শর্ত ঠিকই মানবো আমি। ”
প্রিয়কের এবারের কথায় স্তব্ধ হয়ে গেলাম আমি। শর্ত মানবে মানে কী? কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললাম,
“মা..মানে?”
” আমাকে ক্ষমা করার শর্ত দিয়েছিলি।তা ভুলে গেলি? সেই শর্ত মেনে নিয়েছি তো আমি।”
এখন বুঝতে পারছি কেন সেদিন সবাই আমাদের ডিভোর্সের কথা বলার পরও চুপ ছিল প্রিয়ক। তার কারন যে আমিই। তাকে দেওয়া দুটি শর্তের একটি হলো সবাইকে সব সত্যিটা জানানো। আর অন্যটি হলো তারা যে শাস্তি দেবে তা মেনে নেওয়া। আর তাদের দেওয়া শাস্তি হলো আমাদের ডিভোর্স। তার মানে প্রিয়ক ডিভোর্স দিতে রাজি? ভীষণ কান্না পাচ্ছিল আমার। হুট করেই জরিয়ে ধরি প্রিয়ককে। খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরি। জানি না কেন করেছি এমন। তবে কিছুটা হলেও ভালো অনুভব করতে পারছিলাম। প্রিয়ক সেভাবেই ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইল। আমাকে জরিয়ে ধরলো ও না, আবার আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে ও নিলো না। আমি কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
“আমি ডিভোর্স চাই না। চাই না আমি।”
“পাগলামী করিস না, প্রিয়তা। এটা পাগলামীর সময় না। বুঝার চেষ্টা কর। সবাই আমাদের ডিভোর্স এর পক্ষে। তোকেও জোর করে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল। রাজি ছিলি না তুই। তোর তো খুশি হওয়ার কথা। তুই কেন কাঁদছিস? ”
“জানিনা আমি। কিচ্ছু জানিনা। বাট আমি খুশি হতে পারছি না। আমার কষ্ট হচ্ছে। ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। ”
“দুদিন পর সব ঠিক হয়ে যাবে। সব ভুলে যাবি।”
আমি প্রিয়ককে ছেড়ে ওর চোখে চোখ রেখে বললাম,
“তুমি চাও আমাদের ডিভোর্স হোক?”
“আমার চাওয়া না চাওয়াই কিছু হবে না। যা হওয়ার তা হবেই। সেটা আমরা চাইলেও হবে। না চাইলেও হবে।”
প্রিয়ক দেখাতে না চাইলেও ওর কষ্টগুলো যেন অনুভব করতে পারছিলাম আমি। কি করে এতোটা শান্ত থাকতে পারছে মানুষটা। সেই সাথে নিজের উপর রাগ হচ্ছিল খুব। কেন খারাপ লাগছে আমার? কেন কষ্ট পাচ্ছি আমি? সত্যিই তো। আমার তো খুশি হওয়ার কথা? তাহলে কেন হচ্ছি না আমি? যেই মানুষটার জন্য এতগুলো দিন মিথ্যা অপবাদের বোঝা বয়ে বেড়ালাম সেই মানুষটার জন্য কেন কষ্ট হচ্ছে আমার? কেন কেন কেন?ভিতর থেকে চিৎকার করলেও তার আওয়াজ বাইরে এলো না। শুধু রেগে গিয়ে প্রিয়ককে বললাম,
“তুমি কি আমাকে এখানে এগুলো বলার জন্য নিয়ে এসেছো?”
“বলতে পারিস।”
“এখন তো বলা শেষ হয়েছে? দিয়ে আসো আমাকে।”
বলেই চলে যেতে নেয়। প্রিয়ক পিছন থেকে হাত ধরে একটানে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। এবার খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে আমাকে। যেন ছেড়ে দিলেই হারিয়ে যাবো আমি। প্রিয়কের হৃৎস্পন্দনের তীব্র আওয়াজ আমার হৃদয়েও যেন আঘাত হানছিল। নিজের হৃৎস্পন্দনের আওয়াজ যেন নিজেই শুনতে পারছিলাম। যত সময় গড়াচ্ছে প্রিয়কের স্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মাঝে প্রিয়কের বলা কিছু কথা আমার হৃদয়ের ঝড় তুললো।
“তোকে ছাড়া থাকতে খুব কষ্ট হবে রে আমার। এভাবে বাঁচার থেকে মরে যাওয়াও বোধহয় ভালো। দোয়া করিস যেন আমার মৃত্যুটা তাড়াতাড়ি হয়। খুব তাড়াতাড়ি। ”
প্রিয়কের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলাম। উল্টো দিকে ফিরে বললাম,
“আর তুমিও দোয়া করো যেন আমার মৃত্যুটা এখনি হয়। ”
“প্রিয়তা। চুপ। এসব কথা যেন আর কখনও না শুনি।”
“শোনার জন্য তুমি থাকছোই বা কোথায়? ”
প্রিয়ক আবার ও আমাকে জরিয়ে নেয়। এবার আর কিছু বলে না। আমিও আর কিছু বলি না। বেশ অনেকটা সময় কেটে যাওয়ার পর প্রিয়ক বলে,
“এই পাগলী।”
“হু।”
“কাল সকালেই চলে যাচ্ছি আমি। যাওয়ার আগে শেষবারের মতো কিছু চাইবো তোর কাছে। দিবি? ”
আমি প্রিয়কের বুক থেকে মাথা তুলে বলি,
“কী?”
“এখন থেকে কাল সকাল পর্যন্ত আমার হয়ে থাকবি? এসময়টা একান্তই আমার হবে। থাকবি আমার বউ হয়ে? শুধু কাল সকাল পর্যন্ত।”
কয়েক মুহুর্ত পার হয়ে যাওয়ার পর ও আমার তরফ থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে প্রিয়ক আবারও বলল,
“থাক এতো ভাবতে হবে না। চল তোকে বাসায় দিয়ে আসি।”
প্রিয়ক আমাকে নিয়ে যেত নিলেই আমি বলে উঠি,
“আ. আমি রাজি।”
“সবকিছু ভেবে বলছিস?”
“হুম।”
মাথা নুইয়ে ফেলি আমি। প্রিয়ক আমাকে জরিয়ে ধরে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। তবে তার ঠোখের কোণে এক চিলতে হাসি আমার চোখ এড়ায় না। প্রিয়ক বলল,
“তাহলে কিন্তু তোকে আমার ফ্লাটে যেতে হবে। যাবি ওখানে?”
আমি মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানাতেই প্রিয়ক মৃদু হেসে আমার হাত ধরে নিয়ে যেয়ে গাড়িত বসায়। গাড়ি চলতে থাকে। গন্তব্য প্রিয়কের নিজস্ব ফ্লাট। এটা সেই ফ্লাট যেখান থেকে আমাদেট কাহিনী শুরু হয়েছিল। যেখান থেকে উলোট পালোট হয়ে গিয়েছিল আমার জীবন। আজ আবারও সেখানে যাচ্ছি। তবুও মনের মাঝে কোনোরুপ ভয় কাজ করছে না। বরং নিজেকে আরো বেশি নিরাপদ মনে হচ্ছে। আজ না আছে মনে বাবা মা কি বলবে তার ভয়। না আছে ডিভোর্সের চিন্তা। আর না আছে কাল কি হবে তার চিম্তা। দুঘন্টা জার্নির পর আমরা সেখানে পৌছায়। গাড়ি থেকে নামার সময় একবার চোখ বুলিয়ে নেয়। সবটা আগের মতোই আছে। ভিতরের পরিবেশটাও আগের মতোই আছে। সবটা আমার পছন্দের জিনিসে সাজানো। তিনটা বেড রুম একটা, ডাইনিং রুম, একটা ড্রয়িংরুম আছে ফ্লাটটিতে। ড্রয়িংরুমের ওয়ালে আমার আর প্রিয়কের একটা ছবি বড় করে ফ্রেমে বাঁধাই করা। ছবিটা আমি যখন ক্লাস সিক্সে পড়ি তখন ওঠানো। সেদিন ছিল পহেলা বৈশাখ। বাড়ির সব মেয়েরাই সেদিন লাল পাড় সাদা শাড়ি পড়েছিল। আমিও পড়েছিলাম। প্রিয়ক ও আমাদের সাথে মিলিয়ে পাঞ্জাবি পড়েছিল। ছোট কাকার ছবি তোলার শখ ছিল। আমরা তখন একে অপরকে কোনো এক কারনে মারামারি করছিলাম। তখন ছোট কাকা ছবিটা তুলেছিল। ছবির ক্যামেরার ফোকাস লাইট আমাদের উপর পড়তেই দুজনে চমকে একে অপরের দিকপ তাকিয়ে ছিলাম। সেই সময়ের ছবিটাই প্রিয়ক বড় করে বাঁধিয়ে এনেছিল। যা সবসময় নিজের কাছে রাখত। হয়তো গত দুবছর ও সাথে ছিল তার।
“প্রিয়তা।”
হঠাৎ ডাকে চমকে উঠি আমি। প্রিয়কের দিকে তাকাতেই সে হাসি মুখে বলল,
“রুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে নে। আমি খাবার রেডি করি। কিছু তো খাস ও নি।”
আমি সম্মতি জানিয়ে চলে আসতে নিলে থমকে যায়। কোন রুমে যাবো আমি? প্রিয়কের বেড রুমে। নাকি যে রুমে দুবছর আগে ছিলাম সেই রুমে। পিছনে ফিরে দেখলাম প্রিয়ক ও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো প্রিয়ক ও দেখতে চাই আমি কি করি। আর কিছু না ভেবেই প্রিয়কের বেড রুমে চলে আসি আমি। কারন এখন আমি এখানে শুধু প্রিয়তা কিংবা প্রিয়কের মামাতো বোন হিসেবে আসি নি আমি। এসেছি প্রিয়কের স্ত্রী হিসেবে। তাই প্রিয়কের রুমটাই আমার হবে। রুমে ডুকে ডোর দিতে গিয়ে প্রিয়কের হাসি মাখা মুখটা দেখতে পেলাম।
সারাদিন নিজের উত্তাপ দেওয়ার পর নিজেকে লুকিয়ে নিয়েছে সূর্যটা। সেই সাথে প্রকৃতিতে নেমে এসেছে নতুন রঙ। চারদিক আলোকিত হয় রঙ বেরঙের রশ্নিতে। সেই আলোকরশ্মির মাঝে প্রিয়কের বেড রুমের সাথে লাগোয়া বারান্দায় বসে আছি আমরা দুজন। দুজনার হাতে প্রিয়কের বানানো কফি। তাতে একটু একটু চুমুক দিচ্ছি আর একে অপরের দিকে তাকাচ্ছি। প্রিয়কের কাছে মুহুর্তেটা কেমন লাগছে জানা নেই আমার। তবে আমার কাছে অদ্ভুত লাগছে। এর মাঝে বাসা থেকে অনেকবার ফোন দেওয়া হয়েছে। তবে তা রিসিভ করিনি আমি। আম্মুর কাছে শুধু “আমি ঠিক আছি। ” লিখে ম্যাসেজ করে দিয়েছিলাম। তারপর পরই ফোন অফ করে রেখেছি। এভাবে পার হয়ে যায় সন্ধ্যার সময়টুকু। তবে সময় যত ঘনিয়ে আসছে মনের মাঝে অস্থিরতা যেন বেড়েই চলেছে। কাল কি হবে তা ভাবতে পারছি না।
ঘড়ির কাটা বলছে এখন রাত নয়টা। প্রিয়ক আমাকে একটা সপিং ব্যাগ হাতে দিয়ে বলে,
“এটা তোর জন্য। আজকের জন্য। ”
আমি ব্যাগটা নিয়ে রুমে চলে আসি। ব্যাগের ভিতর খুব সুন্দর একটা শাড়ি। বেগুনি রঙের একটা জর্জেটের শাড়ি। বুঝতে বাকি থাকেনা এটা আজ রাতের জন্য। তাই শাড়িটা পরে নেই। সেই সাথে শাড়ির সাথে থাকা ম্যাচিং ওরনামেন্টস গুলো পরে তৈরি হয়ে নেয়। সবটা শেষ হলে বারান্দায় প্রিয়কের সামনে যাই। প্রিয়ক এক পলক আমার দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেও আবার ফিরে তাকায়। কতক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে জানা নেই। হুট করেই কোলে তুলে নেয় আমাকে। প্রিয়ক আমাকে ওভাবেই কোলে করে ছাদে নিয়ে আসে। আসার পুরো সময়টা ছিলাম তার বুকে মুখ লুকিয়ে। ছাদে আসার পর চারপাশ দেখতেই থমকে যাই আমি। সবটা খুব সুন্দর করে সাজানো। চারপাশে বিভিন্ন রঙের লাইট, ফুল আর লাভ সেইপের বিভিন্ন রঙের বেলুন দিয়ে সাজানো। এর মাঝে ছোট একটা টেবিলে সাজানে হয়েছে বিভিন্ন রকম খাবার। যার সবটাই আমার পছন্দের। প্রিয়ক আমার হাত ধরে নিয়ে সেই টেবিলের সামনে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কেক রাখা।
হুট করেই কোথা থেকে সফট মিউজিক বেজে উঠে। প্রিয়ক তখন আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে একটা রিং বের করে আমার সামনে এগিয়ে দেয়। আর বলল,
“আই লাভ ইউ, প্রিয়তা। আই লাভ ইউ সো মাচ। ঠিক কতটা ভালোবাসি তোকে তা বুঝাতে পারব না আমি। শুধু জানি ভালোবাসি তোকে। ভালোবাসি ভালোবাসি ভালোবাসি। হবি আমার প্রেয়সী? তোর প্রিয়ক ভাইয়া না তোর জন্য শুধু প্রিয়ক হতে চাই আমি৷ দিবি আমাকে সে সুযোগ? বিশ্বাস কর আর একটুও কষ্ট পেতে দেবো না তোকে। ”
আমি কি বলবো সেসময় সত্যিই বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমার মনে হচ্ছিল কেউ আমার কন্ঠনালি চেপে ধরে রেখেছে। যেন কোন শব্দই বের হচ্ছিল না। চোখ দিয়ে বয়ে চলছিল অবিরাম ধারায় কিছু নোনা তরল। নিজের শরীর যেন তখন বেইমানি করছিল আমার সাথে৷ চিৎকার করে কিছু বলতে গিয়েও পারছিলাম না আমি। শুধু আস্তে করে নিজের হাতটা এগিয়ে দিয়ে মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানাই। প্রিয়ক আমার সম্মতি পেয়ে তার হাতের রিং আমার আঙুলে পরিয়ে দেয়। হাতের উপর তার উষ্ণ ছোয়া পড়ে। উঠে আমার কপালেও নিজের ওষ্ঠদ্বয় ছুইয়ে দেয়। সেই সাথে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরে চিৎকার করে বলে,
“ওহে আমার প্রেয়সী, ভালোবাসি। খুব ভালোবাসি।”
নিজের হাতে খুব যত্ন করে খাইয়ে দেয় আমাকে। খাওয়ার পর্ব শেষ হতেই প্রিয়ক আবারও আমাকে কোলে তুলে নেয়। তার ওষ্ঠদ্বয়ে ফুটে আছে মৃদু হাসি। আগত সময়ের কথা ভাবতেই লজ্জায় কুঁকড়ে যায় আমি। মুখ লুকায় তার বুকে। সে আমার কপালে তার ওষ্ঠদ্বয়ের কোমল ছোয়া দিয়ে নিচে নেমে আসে। নিচে নেমে আমাকে প্রিয়কের বেড রুম কিংবা যে রুমে আমি ছিলাম তার কোনোটাতেই নিয়ে যায় না। বরং তৃতীয় রুমে নিয়ে আসে৷ রুমে ঢু্কতেই আরো বিস্মিত হই আমি৷ মোমবাতির মৃদু আলোয় সারা ঘর আলোকিত হয়ে আছে। ফ্লোর জুড়ে ছড়িয়ে আছে বেলুন। চারপাশ ফুল দিয়ে সাজানো। বেডটাও খুব সুন্দর করে সাজানো৷ বেডের মাঝে গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে লাভ সেইপ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এক রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এসব দেখে নিজেকে আরো গুটিয়ে নেয় আমি৷ প্রিয়কের বুকের মাঝে নিজেকে লুকাতে ব্যস্ত হই আমি। প্রিয়ক মৃদু হেসে বলল,
“পছন্দ হয়েছে? সবটা তোর মনের মত করে সাজিয়েছি আমি। তোর পছন্দের ফুল দিয়ে। হয়েছে পছন্দ। ”
“জানি না আমি। ”
আমার উত্তরে প্রিয়কের হাসিটা আগের থেকেও চওড়া হয়। যা না দেখেও বুঝতে পারছিলাম। আজ কেন যেন মানুষটাকে একটু বেশিই বুঝতে পারছিলাম আমি। প্রিয়ক আমাকে খুব সাবধানে বেডে শুইয়ে দেয়। সময় ত গড়াতে থাকে মনের মাঝের অস্থিরতা যেন বাড়তে থাকে। নিঃশ্বাসের গতি বাড়তে থাকে৷ সারা শরীরের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়ে চলে এক অদ্ভুত অনূভুতি। ভালোলাগা, অস্থিরতা আর এক সহনীয় সুখের রাজ্যের গভীরে তলিয়ে যেতে থাকি আমরা। খুব শক্ত করে জরিয়ে নেই মানুষটাকে। সময় কখন কেটে যায় কারোরই সেই খেয়াল থাকে না৷ শুধু মনে হয় থেমে যাক সময়, স্তব্ধ হয়ে যাক প্রকৃতি।
চলবে…??
(ক্ষমা করবেন। কথা দিয়েও রাখতে ব্যর্থ হচ্ছি আমি। খুব চেষ্ঠা করি তাড়াতাড়ি দেওয়ার। তবুও হয়ে হঠে না। সব কিছুর জন্য দুঃখিত আমি।)
#ওহে_প্রেয়সী_ভালোবাসি
মারিয়া মীম
পর্ব ১০
সকালের প্রকৃতি থাকে শান্ত নির্মল। কর্ম ব্যস্ত মানুষ ছুটে চলে তাদের কর্ম ক্ষেত্রে। বাড়ির গৃহিণী ব্যস্ত হয় সবার জন্য সকালের খাবার বানাতে। ব্যস্ত পায়ে হেটে চলা পথচারীদের দিকে দৃষ্টি আমার। প্রিয়ক পেছন থেকে আমাকে তার বাহুবন্ধনীতে আবদ্ধ করে নেয়। আমার কাঁধে মাথা রেখে বাইরে দৃষ্টি রাখে। কিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর প্রিয়ক বলল,
“রেডি হয়ে নে। বের হতে হবে আমাদের।”
“সত্যিই কি চলে যাবে? যাওয়াটা কি আসলেই জরুরী?”
“হুম, জরুরী। ”
“যদি বাবা মা না মানে?”
“সেটা আমার উপর ছেড়ে দে। শুধু তুই পিছিয়ে যাইস না। তাহলেই হবে। পারবি তো। ”
মৃদু হেসে তার হাতের উপর দুহাত রেখে বললাম “পারব।” প্রিয়ক আর কিছু না বলে শক্ত করে জরিয়ে রাখল।
দুবছর আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে আবারও। যেখান থেকে শুরু হয়েছিল আমাদের গল্প সেখান থেকেই আবার নতুন করে শুরু হবে সবটা। তবে আসলেই শুরু হবে নাকি শেষ তা জানিনা আমি। গাড়ি ছুটে চলেছে তার গন্তব্যের দিকে। আমি প্রিয়কের কাঁধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বুজে রয়েছি। চোখের পাতায় ভেসে উঠে গতরাতের চিত্রটি। পরিনয়ের গভীরে প্রবেশ করার পূর্বেই থেমে যায় প্রিয়ক। সবটা ভুল মনে হয় ওর। মোমের মৃদু আলোয় প্রিয়কের চোখে স্পষ্টই অনুশোচনা দেখতে পাচ্ছিলাম আমি। প্রিয়ক নিজেকে আমার থেকে দূরে সরিয়ে নিজের মাথা চেপে ধরে বসে পড়ে আমার পায়ের কাছে। তাকে এমন করতে দেখে ধড়ফড়িয়ে উঠে বসি আমি।
“এসব কি করছো তুমি? উঠো বলছি।”
“বিশ্বাস কর, প্রিয়তা। আমার এরকম করার কোনো ইচ্ছাই ছিল না। আমি এখানে শুধু শেষ সময়টুকু তোর সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। তোকে কলঙ্কিত করে যেতে চাইনি। আবার ও সেই একই ভুল করতে যাচ্ছিলাম আমি। আমাকে মাফ করে দে প্রিয়তা। না না মাফ করিস না। শাস্তি দে। যে শাস্তি দিতে ইচ্ছা হয় দে।”
“প্লিজ আগে শান্ত হও তুমি। তারপর বলছি।”
প্রিয়কের স্থির হতে বেশ কিছুটা সময় লাগে। প্রিয়ক শান্ত হলেও নিজের অনুশোচনা থেকে বের হতে পারে না। কেমন জানি পাগলের মত করতে থাকে মানুষটা। আর কোন উপায় না পেয়ে তার বুকের মাঝে নিজেকে গুটিয়ে নিই। ধীরে ধীরে শান্ত হয় প্রিয়ক।
“এই পাগলী।”
প্রিয়কের ডাকে মাথা তুলে তাকায় তার দিকে। প্রিয়ক আমার চোখে চোখ রেখে বলে,
“বিয়ে করবি আমাকে? ”
প্রিয়কের কথায় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই আমি। আমাদের বিয়ে তো হয়ে গেছে। তাহলে আবার কিসের বিয়ে! সেভাবেই বললাম,
“আমাদের বিয়ে তো হয়ে গিয়েছে। তাহলে কিসের বিয়ে?”
“হুম হয়েছে। কিন্তু তোর ইচ্ছার বিরুদ্ধে। জোর করে হয়েছিল আমার বিয়েটা। এবারের বিয়েটা তোর সম্মতিতে হবে। আমাদের বিয়ে ভালোবেসে না হলেও ঘৃণা করে হবে না। ”
“কিন্তু তুমিতো বললে সকালেই চলে যাবে তুমি। ”
“হুম যাবো। তবে তোকে ফেলে নয়, তোকে সাথে নিয়ে। যাবি তো আমার সাথে?”
“বাবা মা, চাচ্চুরা..”
“ওনাদের চিন্তা করতে হবে না। শুধু তোর কাছে জানতে চাই কি চাস তুই? তুই কি চাস আমাদের ডিভোর্সটা হোক?”
“না।”
“তাহলে থাকবি আমার সাথে? তোর দেওয়া শর্ত মানতে সেদিন কিছুই বলিনি আমি। কিন্তু তুই যখন নিজেই এই ডিভোর্স চাস না, তখন এই শাস্তি মেনে নেবো না। শাস্তিটা বরং তুই নিজে দিস। ”
প্রিয়কের কথায় মৃদু হেসে সম্মতি দেয়। জানিনা তাকে ভালোবাসি কিনা৷ তবে এই সম্পর্ক ভাঙতে চাই না। সবশেষে ঠিক হলো সকালে আমরা বাসায় ফিরবো। সবাইকে বোঝাবো। তারা যদি না মানে তাহলে শুধু প্রিয়ক নয়, প্রিয়কের সাথে আমিও পাড়ি জমাবো দূর দেশে। সবকিছু আগেই রেডি করে রেখেছে প্রিয়ক। বিয়ের পর মধুচন্দ্রিমায় দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার প্লানিং ছিল প্রিয়কের। তার জন্য আগেই আমার পাসপোর্ট আর ভিসা তৈরি করে রেখেছিল। আর কোনো কথা হয়নি আমাদের মাঝে। প্রিয়কের বুকের মাঝে গুটিশুটি হয়ে থাকতে থাকতেই ডুব দেয় ঘুমের রাজ্যে।
“এই প্রিয়তা।
হঠাৎ ডাকে চমকে উঠি আমি। চোখ মেলে তাকাতেই প্রিয়ক বলল,
“ওঠ। চলে এসেছি আমরা।”
প্রিয়কের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ছিলাম আমি। এর মাঝে কখন ঘুমিয়ে পড়লাম! প্রিয়ক মৃদু হেসে আমার কপালে উষ্ণ পরশ দিয়ে বলল,
“এত ঘুম কাতুরে কবে হলি তুই? নেমে আয়। এসে পড়েছি তো।”
প্রিয়কের কথা শেষ হলে আমাকে গাড়ি নামায়। আমাদেরই বাড়ি এটা। ভিতর দিকে যাওয়ার সময় কেমন একটা ভয় ভয় হচ্ছিল আমার। ভিতরে ঢুকে বুঝতে পারি গাড়ির আওয়াজে বাসার অনেকেই বাইরে চলে এসেছে। আমাকে প্রিয়কের সাথে দেখে সবাই রেগে যায়। আম্মি এসেই আমার গালে একটা চড় বসিয়ে দেয়।
“কোথায় ছিলি সারারাত? ”
“প্রিয়ক ভাইয়ার সাথে ছিলাম।”
দুবছর আগেও এই পরিস্থিতিতে পড়েছিলাম আমি। তখন ও যা বলেছিলাম এখন তাই বলি। আমার কথা শুনে আম্মি আমার গালে আরেকটা থাপ্পর দিয়ে বলল,
“এ জন্য তোকে এত ভালোবেসে বড় করেছিলাম। আমাদের মুখে কালি দেওয়ার জন্য। ”
আম্মির কথা শেষ হতেই বাবা গম্ভীর কণ্ঠে আম্মিকে বলল,
“আয়রা, তুমি ওকে ভিতরে নিয়ে যাও। ”
আম্মি বাবার কথার উপর কখনই কোনো কথা বলেনি৷ এমনকি বাবার কোনো কথার অবাধ্য হয়নি। আজও তার ব্যতিক্রম হলো না। আমাকে জোর করে নিয়ে যাওয়ার সময় হাতে টান পড়ে। পিছনে ফিরে দেখি মানুষটা অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তার হাতের মুঠোয় আমার হাত। আম্মি তা দেখে জোর করে ছাড়িয়ে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। বাবা চাচ্চুরাও সবাই ভিতরে চলে আসে। বাইরে কোন সিনক্রিয়েট করে মানুষকে কথা বলার সুযোগ দিতে রাজি নয় কেউই। আমরা আসার কিছুক্ষণ পরই মামনি আর ফুফাও চলে আসে সেখানে। প্রিয়ক গাড়িতে থাকাকালীন ফোন দিয়ে মামনি আর ফুফাকে আসতে বলেছিল। আবারও বসে বিচার সভা। তবে তা কোনো কোর্টে নয়। আমাদেরই রুমের বারান্দায়। আমি বাদে সেখানে সবাই আছে। কারন আম্মি আমাকে রুমে বন্দি করে রেখে গেছে। তবুও বাইরের সব কথা শুনতে পারছিলাম আমি। বাবা নিজের কন্ঠে গভীরতা বজায় রেখে প্রিয়ককে বলল,
“কি চাস তুই? কেন নিয়ে গিয়েছিলি প্রিয়কে? ”
প্রিয়ক দৃঢ় কন্ঠে বলল,
“আমি বা প্রিয়তা কেউই এই বিয়ে ভাঙতে চাই না, মেজমামা। দুজনের কেউই ডিভোর্স চাই না।”
প্রিয়কের কথায় বড় চাচ্চু প্রিয়কের গালে থাপ্পর বসিয়ে দেয়। থাপ্পরটা জোরেই লেগেছিল। তা বুঝতে অসুবিধা হলো না। আরেকটা থাপ্পর দিতে গেলেই বাবা বলল,
“থাম ভাই। ওকে মেরে কিছুই হবে না। ওমানুষ হয়ে গিয়েছে ও। ”
তারপর প্রিয়ককে উদ্দেশ্য করে বলল,
“তুই ভাবলি কি করে এত কিছু হওয়ার পরও তোদের একসাথে রাখবো? আমার মেয়ে কোন খেলনা নয়, যে ওকে নিয়ে খেলবি তুই। আর রইলো ওর ডিভোর্স না দেওয়ার কথা৷ প্রিয় যদি তোকে ডিভোর্স না দিতে চাইতো তাহলে তোর সত্যিটা আমাদের সামনে আনতো না। আমার মেয়েটা তোর জন্য এতগুলো দিন কষ্ট পেয়েছে। এই বিয়ে না ভাঙলে বাকি দিনগুলো ও কষ্টে কাটবে আমার মেয়েটার। সেটা হতে দিবো না। ”
প্রিয়ক তখন আমার বাবার পায়ের কাছে বসে পড়ে। অনুরোধের সূরে বলল,
“এমনটা হবে না, মামা। বিশ্বাস করো প্রিয়তাকে আর কোনো কষ্ট পেতে দেবো আমি। যা হয়ে গিয়েছে তা বদলাতে না পারলেও ভবিষ্যতে ওর চোখে একফোটা জল আসতে দিবো না আমি। মামা যদি এমনটা হয় তাহলে তখন তোমরা যে শাস্তি দেবে মেনে নেবো। বাট আমাদেরকে আলাদা করো না। ”
বাবা সেভাবেই বলল,
“এখন আর এসব বলে কোনো লাভ হবে না প্রিয়ক। যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে।”
“মামা তোমরা না মানলে আমি আর প্রিয়তা এই দেশ ছেড়ে চলে যাবো। ”
প্রিয়কের কথায় সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে। ছোট চাচ্চু বলল,
“কি বলতে চাইছিস তুই?”
“ঠিকই বলেছি, মামা। তোমরা না মানলে এছাড়া আর কোনো উপায় নেই আমাদের কাছে।”
“প্রিয়তা তোকে বলেছে ও তোর সাথে যাবে?”
বাবা প্রিয়ককে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“প্রিয়তাকে নিয়ে আসো আয়রা। আমি জানতে চাই আমার মেয়েটা কি চাই?”
আম্মি আমাকে নিয়ে আসলে সবার আগে আমার দৃষ্টি যায় প্রিয়কের দিকে। প্রিয়ক ও তাকিয়ে থাকে আমার দিকে। প্রিয়কের দৃষ্টিতে বন্দি হই আমি। মলিন তার সেই দৃষ্টি। আমি আসার পর কোমল কন্ঠে বাবা বলল,
“এদিকে আয় মা। বস এখানে। ”
বাবার পাশে যেয়ে বসতেই বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে আগের মতোই কোমল কন্ঠে বলল,
“দেখ মা। আমরা কেউই তোর খারাপ চাই না। দুবছর আগে যা হয়েছিল তাতে যে শুধু তোর বিয়ে ভেঙে ছিল, তা কিন্তু না। আমার এতবছরের পুরোনো বন্ধুর সাথেও সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়। রায়ান তোকে পছন্দ করেছিল বলেই ওর বাবা আমার কাছে প্রস্তাব রাখে। আমিও রাজি হয়ে যায়। বাসার সবাইও সম্মতি দেয়। আমার বিশ্বাস ছিল আমার বন্ধু তোকে নিজের মেয়ে করেই রাখত। ভালো থাকতি ওখানে। কিন্তু সবটা শেষ হয়ে যায়। আর যার জন্য হয় সে প্রিয়ক। সেটা যদি তোদের বিয়ের আগে জানতে পারতাম তাহলে কখনই তোদের বিয়ে হতে দিতাম না আমরা। প্রিয়ককে ছোট থেকে বড় করেছি। চোখের সামনে ছেলেটাকে হেসে খেলে বড় হতে দেখেছি। দেখেছি তোর প্রতি ওর ভালোবাসা। তাই আর তোদের বিয়েতে অমত করিনি। কিন্তু এখন সবটা জানার পর আমরা কেউই চাই না তোদের একসাথে রাখতে। এমন না যে তোর খারাপ চাই। তাই আমাদের ইচ্ছা তোর উপর চাপিয়ে দেবো না। তুই কি চাস সেটা জানতে চাই। তুই যেটা চাইবি সেটাই হবে। তবে কিছু চাওয়ার আগে সব ভেবে দেখবি। প্রিয়ক বলল তুই ও নাকি বিয়েটা ভাঙতে চাস না। এমনকি আমরা রাজি না হলে নাকি আমাদের ছেড়ে, এই দেশ ছেড়ে ওর সাথে চলে যাবি? এটা কতটা সত্যি তা জানিনা আমি। তবে আমার বিশ্বাস প্রিয়ক তোর জীবনে এতটাও জায়গা করে নিতে পারেনি, যার জন্য তুই আমাদের সবাইকে ছেড়ে ওর সাথে চলে যাবি? হ্যাঁ সেদিন ও বলেছিলি ডিভোর্স চাস না। কিন্তু এতোদিনে আশা করি সবকিছু নিয়ে ভেবেই সিদ্ধান্ত নিবি। থাকতে চাস ওর সাথে যে তোর সাথে হওয়া এতকিছুর জন্য দায়ী? ”
আজকে আমার বাবার মাঝে অন্য এক বাবাকে আবিষ্কার করলাম আমি। এ বাবার মাঝে নেই কোনো কঠোরতা। এই বাবাও আর দশটা বাবার মতো তার আদরের মেয়েকে নিয়ে চিন্তিত। বাবার সব কথা শোনার পর বলার মতো ভাষা খুজে পাচ্ছিলাম না। আসলেই তো। শুধু মাত্র প্রিয়কের জন্য সবকিছু ছেড়ে চলে যেতে চাচ্ছিলাম আমি। প্রিয়কের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। ওর চোখে একরাশ আকুতি। হয়তো সে দৃষ্টি বলতে চাইছে ‘আমার হাত ছাড়িস না প্রিয়তা’। আম্মির দিকে তাকাতেই দেখতে পেলাম আমাকে কথা বলার জন্য ইশারা করছে। বাড়ির সবাই আমার উত্তর জানার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি মাথা নিচু করে বাবাকে বললাম,
“আমি ডিভোর্স চাই, আব্বু। আমি ডিভোর্স চাই। ”
“আমি জানতাম। আমার মেয়েটা ভুল সিদ্ধান্ত নিবে না। ”
বাবা মাথায় হাত রেখে বলল কথাটা৷ নিজের চোখের কোণে জমা জলটুকু গড়িয়ে পড়ার আগেই মুছে নিলাম আমি। প্রিয়কের দিকে তাকানোর সাহস হলো না আমার। তবে ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।
“আমি রুমে যাচ্ছি, আব্বু।”
বলেই একছুটে আমার রুমে চলে আসি। দরজা বন্ধ করে দেই। বাইরে তখন অনেকবেশি কথার আওয়াজ পেতে থাকি। হয়তো প্রিয়ক সবাইকে বোঝাচ্ছে। কিন্তু এখন যে আর কিছুই করার নেই প্রিয়কের৷ বাবা চাচ্চুরা কেউই আর মানবে না ওর কথা৷ সে পথ যে আমিই বন্ধ করে দিয়ে এসেছি।
.
.
চলবে..??