এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ সিজন ২ পর্বঃ ০৩
– আবির খান
পরের দিন সকালে,
আজ প্রথমে নিশির ঘুমটা ভাঙলো। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাঁকালো। সকালের ঝলমলে রোদ্দুর্র এসে তার আদুরে জামাই এর মুখের উপর এসে পরেছে। কি সুন্দরই না লাগছে তাকে। নিশি চেয়ে চেয়ে তার ভালোবাসার মানুষটাকে দেখছে।
গত রাতে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। নিশির আর কোনো ভয় নেই। আর কেউ তাকে নেহাল হতে আলাদা করতে পারবে না। নিশি ভাবছে নেহালের দিকে তাকিয়ে, এই লোকটা ওকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই কখনো তাকে হারাতে চায় না নিশি। এই লোকটার মুখ দেখেই নিশি প্রতিদিন তার দিন শুরু করতে চায়। আর এই লোকটার মুখ দেখেই দিনের শেষটা করতে চায়। নিশি নেহালকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর খালি বুকের সাথে মাথা একদম মিশিয়ে দেয়। আর ভাবে, ঠিক এভাবেই সারাটা জীবন তার বুকে মাথা রেখে থাকতে চাই। হে আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগটা দিও। আমার এই সীমাহীন ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে আমাকে কখনো আলাদা করো না। আমি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। নিশির নয়নজোড়া থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে তার নেহালকে মানে তার স্বামীকে।
নেহালের ও ঘুমটা ভেঙে যায়। নেহাল ফিল করে নিশি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওকে কেউ ওর কাছ থেকে নিয়ে যাবে। তাই এভাবে ধরে রেখেছে।
নেহালঃ আমার পরী বউটার কি হয়েছে?? এতো শক্ত করে জড়িয়ে আছো যে?? হুম??
নিশিঃ কিছু হয়নি। অস্ফুটস্বরে।
নেহালঃ নাহ কিছুতো হয়েছে। কই দেখি দেখি আমার পরী বউটার মায়াবী মুখটা একটু দেখি।
নেহাল নিশির মুখটা ওর দিকে তুললো।
নেহালঃ একি আমার পরী বউ তুমি কাঁদছো কেন?? তোমার চোখে অশ্রু কেন?? মুছতে মুছতে বলল।
নিশিঃ আপনাকে হারানোর ভয়ে। বলেন না কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না। প্লিজ বলেন।
নেহাল নিশির কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে বলল,
নেহালঃ এই যে ছুয়ে বলছি যাবো না। তুমিও আমাকে ছুয়ে বলো আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
নিশি নেহালের কপালের দিকে যেতে নিলে,
নেহালঃ কপালে না এখানে ছুয়ে বলো। ঠোঁট দেখিয়ে।
নিশিঃ যাহ আপনি অনেক দুষ্ট। লজ্জা পেয়ে।
নেহালঃ হ্যাঁ শুধু তোমার জন্য। এখন তাড়াতাড়ি ছুয়ে বলো।
নিশি লজ্জামাখা মুখ নিয়ে নেহালকে তার মিষ্টি পরশ ছুয়ে দেয়।
নিশিঃ আমিও আপনাকে ছেড়ে কোনোদিন যাবো না। অনেক ভালোবাসি আপনাকে।
নেহালঃ নাহ তুমি আমাকে ভালোবাসো না। অভিমানী কণ্ঠে।
নিশিঃ মানে?? কি বলছেন?? আশ্চর্য হয়ে।
নেহালঃ আমাকে সত্যিই ভালোবাসলে এখনো আপনি আপনি করতে না। তুমি করে বলতে।
নিশিঃ আচ্ছা সরি.. এই যে কান ধরছি আর আপনি করে বলবো না। আজ থেকে আপনা সরি সরি আজ থেকে তোমাকে তুমি করে বলবো।
নেহালঃ এই না হলো আমার পরী বউ।
নিশিঃ আচ্ছা আপনি ওহ সরি তুমিইইই আমাকে পরী বউ কেনো বলো??
নেহালঃ কারণ আমার এই বউটা একদম পরীদের মতো সুন্দরী। যাকে দেখলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। যাকে দেখলে দিনটা ভালো হয়ে যায়।
নিশিঃ ও তাই বুঝি??
নেহালঃ হুম আমার পরী বউ।
নিশিঃ কিন্তু তুমি পরী দেখলে কিভাবে?? মজা করে।
নেহালঃ এই রে একি প্রশ্ন করলো। আসলেইতো আমি কখনো পরী দেখেনি। এখন কি বলবো ওকে?? মনে মনে।
নিশিঃ কি হলো বলো। মজা করে।
নেহালঃ না মানে… আসলে আমি পরী দেখেনি তবে হ্যাঁ শুনেছি অবশ্যই, যে পরীরা অনেক সুন্দরী, রূপবতী আর মায়াবতী হয়। ঠিক তোমার মতো। তাই তোমাকে পরী বউ বলি।
নিশিঃ বাবাহ!!
নেহালঃ মজা করছিলে তাই না?? আমি জানি।
নিশিঃ আমাকে এভাবে সবসময় ভালোবাসবেতো??
নেহালঃ ইনশাআল্লাহ শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমায় অফুরন্ত ভালোবেসে যাবো।
নিশিঃ আমিও।
হঠাৎই….
মাঃ নেহাল… ও নেহাল উঠ তোরা নাস্তা করবি না??
নেহালঃ আসছি মা আমরা।
নিশিঃ হায় আল্লাহ ৯ টা বেজে গিয়েছে। আর আমি এখনো শুয়ে আছি। ছি ছি। মা কি মনে করছেন। আল্লাহ। দেখি দেখি ছাড়ো। ব্যস্ত হয়ে।
নেহালঃ আরে এতো ব্যস্ত হয়ও না।
নিশিঃ না না। মা ডেকে গিয়েছে। আর একমুহূর্ত ও শুয়ে থাকা যাবেনা। উঠো। তাড়াতাড়ি উঠো প্লিজ।
নেহালঃ আচ্ছা আচ্ছা উঠছি। তবে এক শর্তে।
নিশিঃ কি???
নেহালঃ একসাথে ফ্রেশ হবো।
নিশিঃ কিহহ!! তুমিও না অনেক দুষ্ট। আমার লজ্জা করে না বুঝি??
নেহালঃ সব লজ্জা কাল রাতে শেষ। দেখি উঠো।
বলেই নিশিকে কোলে করে তুলে ওরা একসাথে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
নিচে চা হাতে নেহালের বাবা নেহালের মাকে বলছে,
বাবাঃ আমি চিন্তা করছি ওদের হানিমুনে পাঠাবো। তুমি কি বলো??
মাঃ হ্যাঁ ভালো হয়। তা কোথায় পাঠাবে??
বাবাঃ দেখি ওরা কই যেতে চায়।
মাঃ হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। ওদের মতামত জানা ভালো।
বাবাঃ হুম।
এরমধ্যেই নেহাল আর নিশি একসাথে নেমে আসছে। দুজনেকেই আজ অনেক সুন্দর আর মিলমিল লাগছে। আর নিশির মুখে কেমন এক লজ্জার ছাপ।
নিশি নিচে নেমেই বাবা-মাকে সালাম করলো।
মাঃ সুখী হও মা৷
নিশিঃ মা মাফ করবেন আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলো।
মাঃ আমি জানি আজ তোর আসতে দেরি হবে। তাই আমিই নাস্তা বানিয়ে আনছি। নিশির কানে কানে বলল।
নিশি অনেক লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় মুখটা একদম গোলাপি হয়ে উঠছে।
সবাই একসাথে নাস্তা খেতে বসলো। নাস্তার মাঝে,
বাবাঃ নেহাল তোদের উপর দিয়ে তো কত কিছুই গেলো। তাই আমি ভাবছি তোরা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আস। মনটা ভালো হবে। আর ঘুরাঘুরিও হলো সাথে হানিমুন ও। হা হা।
নিশি বাবার কথা শুনে লজ্জায় যায় যায় অবস্থা।
নেহালঃ কিন্তু বাবা অফিস দেখবে কে তাহলে??
মাঃ কেন তোর বাবা আছে কি করতে। সারাদিন তো বাসায়ই থাকে। কিছুদিন না হয় অফিসে গেলো।
বাবাঃ হ্যাঁ আমিও তাই বলতে চাচ্ছিলাম। বাসায় তোর মায়ের বকবকানি শুনতে শুনতে আমার কান ধরে গিয়েছে তাই অফিসে গিয়ে একটু কানটা শান্ত করবো। হা হা। মজা করে।
মাঃ কি বললে তুমি!!! রাগী কণ্ঠে।
সবাই হাঁসছে।
বাবাঃ আরে মজা করেছি। তোমার বকবকানি না শুনলে আমার দিনই কাঁটে না।
মাঃ দেখেছো নিশি মা, এই বুড়ো বয়সেও তার প্রেম কমে না।
নেহাল আর নিশি হাঁসছে।
বাবাঃ আহম আহম…হইছে হইছে আর মজা করতে হবে না। তা নেহাল বল কোথায় যাবি??
নেহালঃ বাবা, আপুতো আমাদের বিয়েতে আসে নি। তাই ভাবছি অস্ট্রেলিয়াতে আপুর কাছ থেকে ঘুরে আসি। আপুকেও দেখা হলো সাথে ঘুরাও হলো।
মাঃ আহ খুব ভালো বলেছিস বাবা। সত্যিই তোকে নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব হয়।
বাবাঃ হুম হতেই হবে। আমার ছেলে বলে কথা।
মাঃ শুধু তোমার একার নাকি?? আমারও।
নেহালঃ হ্যাঁ আমি সবার।
বাবাঃ তাহলে তোরা কালই রওনা দে। আমি কাল সকালের ফ্লাইট বুকিং করে দিচ্ছি।
নেহালঃ আচ্ছা।
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। নেহাল খেয়াল করে নিশির মুখে কেমন এক ভয় আর চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।
নেহালঃ নিশি কি হয়েছে?? তোমার ফেইসটা এমন লাগছে কেন?? কি হয়েছে বলোতো??
নিশিঃ আমি না জীবনেও প্লেনে উঠি নি। আমার খুব ভয় করছে। যদি কিছু হয়ে যায়। ভীতু কণ্ঠে।
নেহালঃ আরে বোকা মেয়ে কিচ্ছু হবে না। দেখবে আকাশটা উপর থেকে কত্তো সুন্দর লাগে। তোমার মনে হবে তুমি পাখি। আকাশে উঁড়ে বেঁড়াচ্ছো।
নিশিঃ সত্যি তো??
নেহালঃ তিন সত্যিই। এখন চলো তাড়াতাড়ি প্যাকিং শুরু করি। হানিমুনে যাচ্ছি। অনেক মজা হবে। ইয়েএএএ। মজা করে।
নিশিঃ যাহ তুমিও না অনেক দুষ্ট। খালি আমাকে লিজ্জা দেও।
নেহালঃ কি আমি খালি তোমাকে লজ্জা দেই না দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি।
নিশিঃ আহ ছাড়ো কেউ এসে পরবেতো। ছাড়….
নিশি আর কিছু বলতে পারেনা। কারণ নেহাল নিশির মুখ বন্ধ করে দেয় ওর ঠোঁট দিয়ে।
রাত ১০ টা,
বাবাঃ নেহাল….নেহাল….বাবা ডাকছে।
নেহাল তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে।
নেহালঃ জ্বি বাবা??
বাবাঃ এই নে তোদের টিকিট। DS Bangla Airlines Bm 0024 নং এই ফ্লাইটে কাল তোরা যাচ্ছিস।
নেহালঃ আচ্ছা বাবা। কিন্তু বাবা আপনি সবটা সামলাতে পারবেন তো??
বাবাঃ তুই ভুলে যাচ্ছিস তোর আগে আমিই সব দেখতাম।
নেহালঃ আচ্ছা বাবা। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
বাবাঃ আরে না না। তোরা যে কাজে যাচ্ছিস তার দিকে খেয়াল দে। এখানে আমি আছি। টেনশন নাই।
নেহালঃ আচ্চা বাবা। ধন্যবাদ আপনাকে। দোয়া করবেন।
বাবাঃ আমার দোয়া সবসময়ই তোর সাথে আছে। শোন, বউমা যেন আমার কোনো কষ্ট না পায় খেয়াল রাখবি।
নেহালঃ ইনশাআল্লাহ বাবা। ওর কোনো বিন্দুমাত্র ক্ষতি আমি হতে দিবো না।
বাবাঃ আচ্ছা যা তাহলে ঘুমা, কাল সকাল ৬ টায় তোদের ফ্লাইট।
নেহালঃ আচ্ছা।
উপরে,
নেহাল আর নিশি একসাথে শুয়ে আছে। নিশি নেহালের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
নেহালঃ এখনো কি ভয় করছে??
নিশিঃ একটু একটু।
নেহালঃ আরে ভয় নেই আমি আছি না।
নিশিঃ আমাকে ছেড়ে কখনো তুমি যাবা না ঠিক আছে?? আহ্লাদী কণ্ঠে।
নেহাল নিশির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
নেহালঃ আচ্ছা আমার পরী বউ।
নিশিঃ ভালোবাসি।
নেহালঃ তোমাকেও।
এরপর নেহাল আর নিশি অনেক দুষ্ট মিষ্টি কথা বলে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।
সকাল ৪ টা,
নেহালঃ নিশি ও নিশি উঠো। আমাদের তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। ৬ টায় ফ্লাইট।
নিশি চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসে।
নেহালঃ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও। নিচে বাবা-মা ওয়েট করছে।
নিশিঃ আচ্ছা।
এরপর নিশি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে।
বাবাঃ সাবধানে যাস। আর আমাকে পৌছে ফোন দিস।
মাঃ মা আমার ছেলেটার খেয়াল রেখো। নিশিকে উদ্দেশ্য করে।
নিশিঃ আচ্ছা মা। দোয়া করবেন।
নেহালঃ বাবা-মা মা দোয়া কইরো।
নেহাল আর নিশি বাবা-মাকে সালাম করে রওনা দেয় এয়ারপোর্টের দিকে।
গাড়িতে,
নেহালঃ কি হয়েছে নিশি?? তোমাকে এরকম লাগছে কেন?? ভয় বেশি করছে??
নিশিঃ কেনো জানি মন চাচ্ছে না যেতে। আর কেমন এক অজানা ভয় ভয় লাগছে ভিতরে। আমাদের কিছু হবে নাতো??
নেহালঃ বোকা মেয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। তিনি আমাদের সাহায্য করবেন।
নিশিঃ ইনশাআল্লাহ।
কিছুক্ষন পরই ওরা এয়ারপোর্টে পৌঁছতে যায়।
নিশিঃ ওমা কি বিশাল বড় বড় প্লেন। অথচ নিচ থেকে কত্তো ছোট লাগে দেখতে।
নেহালঃ হ্যাঁ। এখন চলো না হলে লেট হয়ে যাবে।
নিশিঃ আচ্ছা।
প্লেনে,
নিশি নেহালের হাত শক্ত করে ধরে আছে। প্লেন টেক অফ করছে।
নেহালঃ নিশি চোখ খুলো। দেখো আমরা কই??
নিশি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাঁকায়।
নেহালঃ জানালা বাইরে দেখো।
নিশি জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকায়। দেখে, ঘন সাদা মেঘমালায় বিস্তৃত পুরো আকাশ পথ। তার মাঝে সূর্যিমামাকে দেখা যাচ্ছে। নিশির যে কি ভালো লাগছে তা লিখে বুঝাতে পারবো না। নিশি অপলক দৃষ্টিতে মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখছে।
সন্ধ্যা ৭.৪৭ মিনিট,
নেহালের বাসায়,
মাঃ উফফফ নেহালের ফোনটা এখনো বন্ধ আসছে কেন?? রূপাকে ফোন দিয়ে ছিলাম ওতো বলল এখনো পৌঁছায় নি। চিন্তিত কণ্ঠে।
বাবাঃ আরে টেনশন করো না। হয়তো লেট হয়েছে।
মাঃ কেমন জানি লাগছে। মনটা কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। ভীতু কণ্ঠে।
বাবাঃ আরে শান্ত হও। এখানে বসো।
নেহালের বাবা টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ চ্যানেল বদলাতেই খবরের চ্যানেল আসে। সেখানে
সংবাদ পড়ছে-
আজ বাংলাদেশ সময়ে দুপুর ২ টা থেকে অস্ট্রেলিয়া গামী DS Bangla Airlines Bm 0024 নং প্লেনটি ১৩০ জন যাত্রী সহ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লেনটি যাওয়ার পথে সমুদ্রে পরে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নেহালের বাবার হাত থেকে ঠাস করে রিমুটটা পরে যায়। তিনি একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন। তার চোখের কোনা হতে পানি বেয়ে বেয়ে পরছে।
মাঃ কি হয়েছে?? এই কি হয়েছে?? এমন করছো কেন?? বলো?? আমার কিন্তু ভয় করছে। অনেক চিন্তিত কণ্ঠে।
বাবাঃ নেহাল আর নিশি আজ এই প্লেনেই অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে।
মাঃ নেহালের বাবা…আমার নেহাল কই????? আল্লাহ আমার নেহাল আমার বউমা?? নেহাল?????? কান্না করতে করতে।
চলবে…?
কোনো ভুল হলে জানাবেন।
গল্পের চলমান অবস্থা অনুযায়ী গল্প ছোট বড় হয়ে থাকে।
#এ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
#সিজন_২
– আবির খান
পর্বঃ ০৩
পরের দিন সকালে,
আজ প্রথমে নিশির ঘুমটা ভাঙলো। আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাঁকালো। সকালের ঝলমলে রোদ্দুর্র এসে তার আদুরে জামাই এর মুখের উপর এসে পরেছে। কি সুন্দরই না লাগছে তাকে। নিশি চেয়ে চেয়ে তার ভালোবাসার মানুষটাকে দেখছে।
গত রাতে তাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। নিশির আর কোনো ভয় নেই। আর কেউ তাকে নেহাল হতে আলাদা করতে পারবে না। নিশি ভাবছে নেহালের দিকে তাকিয়ে, এই লোকটা ওকে অনেক বেশি ভালোবাসে তাই কখনো তাকে হারাতে চায় না নিশি। এই লোকটার মুখ দেখেই নিশি প্রতিদিন তার দিন শুরু করতে চায়। আর এই লোকটার মুখ দেখেই দিনের শেষটা করতে চায়। নিশি নেহালকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ওর খালি বুকের সাথে মাথা একদম মিশিয়ে দেয়। আর ভাবে, ঠিক এভাবেই সারাটা জীবন তার বুকে মাথা রেখে থাকতে চাই। হে আল্লাহ আমাকে সেই সুযোগটা দিও। আমার এই সীমাহীন ভালোবাসার মানুষটার কাছ থেকে আমাকে কখনো আলাদা করো না। আমি তাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। নিশির নয়নজোড়া থেকে টপটপ করে অশ্রু ঝরছে। বড্ড বেশি ভালোবেসে ফেলেছে তার নেহালকে মানে তার স্বামীকে।
নেহালের ও ঘুমটা ভেঙে যায়। নেহাল ফিল করে নিশি ওকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে ওকে কেউ ওর কাছ থেকে নিয়ে যাবে। তাই এভাবে ধরে রেখেছে।
নেহালঃ আমার পরী বউটার কি হয়েছে?? এতো শক্ত করে জড়িয়ে আছো যে?? হুম??
নিশিঃ কিছু হয়নি। অস্ফুটস্বরে।
নেহালঃ নাহ কিছুতো হয়েছে। কই দেখি দেখি আমার পরী বউটার মায়াবী মুখটা একটু দেখি।
নেহাল নিশির মুখটা ওর দিকে তুললো।
নেহালঃ একি আমার পরী বউ তুমি কাঁদছো কেন?? তোমার চোখে অশ্রু কেন?? মুছতে মুছতে বলল।
নিশিঃ আপনাকে হারানোর ভয়ে। বলেন না কখনো আমাকে ছেড়ে যাবেন না। প্লিজ বলেন।
নেহাল নিশির কপালে একটা গভীর চুমু দিয়ে বলল,
নেহালঃ এই যে ছুয়ে বলছি যাবো না। তুমিও আমাকে ছুয়ে বলো আমাকে ছেড়ে কোথাও যাবে না।
নিশি নেহালের কপালের দিকে যেতে নিলে,
নেহালঃ কপালে না এখানে ছুয়ে বলো। ঠোঁট দেখিয়ে।
নিশিঃ যাহ আপনি অনেক দুষ্ট। লজ্জা পেয়ে।
নেহালঃ হ্যাঁ শুধু তোমার জন্য। এখন তাড়াতাড়ি ছুয়ে বলো।
নিশি লজ্জামাখা মুখ নিয়ে নেহালকে তার মিষ্টি পরশ ছুয়ে দেয়।
নিশিঃ আমিও আপনাকে ছেড়ে কোনোদিন যাবো না। অনেক ভালোবাসি আপনাকে।
নেহালঃ নাহ তুমি আমাকে ভালোবাসো না। অভিমানী কণ্ঠে।
নিশিঃ মানে?? কি বলছেন?? আশ্চর্য হয়ে।
নেহালঃ আমাকে সত্যিই ভালোবাসলে এখনো আপনি আপনি করতে না। তুমি করে বলতে।
নিশিঃ আচ্ছা সরি.. এই যে কান ধরছি আর আপনি করে বলবো না। আজ থেকে আপনা সরি সরি আজ থেকে তোমাকে তুমি করে বলবো।
নেহালঃ এই না হলো আমার পরী বউ।
নিশিঃ আচ্ছা আপনি ওহ সরি তুমিইইই আমাকে পরী বউ কেনো বলো??
নেহালঃ কারণ আমার এই বউটা একদম পরীদের মতো সুন্দরী। যাকে দেখলে মনে শান্তি পাওয়া যায়। যাকে দেখলে দিনটা ভালো হয়ে যায়।
নিশিঃ ও তাই বুঝি??
নেহালঃ হুম আমার পরী বউ।
নিশিঃ কিন্তু তুমি পরী দেখলে কিভাবে?? মজা করে।
নেহালঃ এই রে একি প্রশ্ন করলো। আসলেইতো আমি কখনো পরী দেখেনি। এখন কি বলবো ওকে?? মনে মনে।
নিশিঃ কি হলো বলো। মজা করে।
নেহালঃ না মানে… আসলে আমি পরী দেখেনি তবে হ্যাঁ শুনেছি অবশ্যই, যে পরীরা অনেক সুন্দরী, রূপবতী আর মায়াবতী হয়। ঠিক তোমার মতো। তাই তোমাকে পরী বউ বলি।
নিশিঃ বাবাহ!!
নেহালঃ মজা করছিলে তাই না?? আমি জানি।
নিশিঃ আমাকে এভাবে সবসময় ভালোবাসবেতো??
নেহালঃ ইনশাআল্লাহ শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তোমায় অফুরন্ত ভালোবেসে যাবো।
নিশিঃ আমিও।
হঠাৎই….
মাঃ নেহাল… ও নেহাল উঠ তোরা নাস্তা করবি না??
নেহালঃ আসছি মা আমরা।
নিশিঃ হায় আল্লাহ ৯ টা বেজে গিয়েছে। আর আমি এখনো শুয়ে আছি। ছি ছি। মা কি মনে করছেন। আল্লাহ। দেখি দেখি ছাড়ো। ব্যস্ত হয়ে।
নেহালঃ আরে এতো ব্যস্ত হয়ও না।
নিশিঃ না না। মা ডেকে গিয়েছে। আর একমুহূর্ত ও শুয়ে থাকা যাবেনা। উঠো। তাড়াতাড়ি উঠো প্লিজ।
নেহালঃ আচ্ছা আচ্ছা উঠছি। তবে এক শর্তে।
নিশিঃ কি???
নেহালঃ একসাথে ফ্রেশ হবো।
নিশিঃ কিহহ!! তুমিও না অনেক দুষ্ট। আমার লজ্জা করে না বুঝি??
নেহালঃ সব লজ্জা কাল রাতে শেষ। দেখি উঠো।
বলেই নিশিকে কোলে করে তুলে ওরা একসাথে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
নিচে চা হাতে নেহালের বাবা নেহালের মাকে বলছে,
বাবাঃ আমি চিন্তা করছি ওদের হানিমুনে পাঠাবো। তুমি কি বলো??
মাঃ হ্যাঁ ভালো হয়। তা কোথায় পাঠাবে??
বাবাঃ দেখি ওরা কই যেতে চায়।
মাঃ হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে। ওদের মতামত জানা ভালো।
বাবাঃ হুম।
এরমধ্যেই নেহাল আর নিশি একসাথে নেমে আসছে। দুজনেকেই আজ অনেক সুন্দর আর মিলমিল লাগছে। আর নিশির মুখে কেমন এক লজ্জার ছাপ।
নিশি নিচে নেমেই বাবা-মাকে সালাম করলো।
মাঃ সুখী হও মা৷
নিশিঃ মা মাফ করবেন আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হলো।
মাঃ আমি জানি আজ তোর আসতে দেরি হবে। তাই আমিই নাস্তা বানিয়ে আনছি। নিশির কানে কানে বলল।
নিশি অনেক লজ্জা পাচ্ছে। লজ্জায় মুখটা একদম গোলাপি হয়ে উঠছে।
সবাই একসাথে নাস্তা খেতে বসলো। নাস্তার মাঝে,
বাবাঃ নেহাল তোদের উপর দিয়ে তো কত কিছুই গেলো। তাই আমি ভাবছি তোরা একটু বাইরে থেকে ঘুরে আস। মনটা ভালো হবে। আর ঘুরাঘুরিও হলো সাথে হানিমুন ও। হা হা।
নিশি বাবার কথা শুনে লজ্জায় যায় যায় অবস্থা।
নেহালঃ কিন্তু বাবা অফিস দেখবে কে তাহলে??
মাঃ কেন তোর বাবা আছে কি করতে। সারাদিন তো বাসায়ই থাকে। কিছুদিন না হয় অফিসে গেলো।
বাবাঃ হ্যাঁ আমিও তাই বলতে চাচ্ছিলাম। বাসায় তোর মায়ের বকবকানি শুনতে শুনতে আমার কান ধরে গিয়েছে তাই অফিসে গিয়ে একটু কানটা শান্ত করবো। হা হা। মজা করে।
মাঃ কি বললে তুমি!!! রাগী কণ্ঠে।
সবাই হাঁসছে।
বাবাঃ আরে মজা করেছি। তোমার বকবকানি না শুনলে আমার দিনই কাঁটে না।
মাঃ দেখেছো নিশি মা, এই বুড়ো বয়সেও তার প্রেম কমে না।
নেহাল আর নিশি হাঁসছে।
বাবাঃ আহম আহম…হইছে হইছে আর মজা করতে হবে না। তা নেহাল বল কোথায় যাবি??
নেহালঃ বাবা, আপুতো আমাদের বিয়েতে আসে নি। তাই ভাবছি অস্ট্রেলিয়াতে আপুর কাছ থেকে ঘুরে আসি। আপুকেও দেখা হলো সাথে ঘুরাও হলো।
মাঃ আহ খুব ভালো বলেছিস বাবা। সত্যিই তোকে নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব হয়।
বাবাঃ হুম হতেই হবে। আমার ছেলে বলে কথা।
মাঃ শুধু তোমার একার নাকি?? আমারও।
নেহালঃ হ্যাঁ আমি সবার।
বাবাঃ তাহলে তোরা কালই রওনা দে। আমি কাল সকালের ফ্লাইট বুকিং করে দিচ্ছি।
নেহালঃ আচ্ছা।
সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। নেহাল খেয়াল করে নিশির মুখে কেমন এক ভয় আর চিন্তার ছাপ ফুটে উঠেছে।
নেহালঃ নিশি কি হয়েছে?? তোমার ফেইসটা এমন লাগছে কেন?? কি হয়েছে বলোতো??
নিশিঃ আমি না জীবনেও প্লেনে উঠি নি। আমার খুব ভয় করছে। যদি কিছু হয়ে যায়। ভীতু কণ্ঠে।
নেহালঃ আরে বোকা মেয়ে কিচ্ছু হবে না। দেখবে আকাশটা উপর থেকে কত্তো সুন্দর লাগে। তোমার মনে হবে তুমি পাখি। আকাশে উঁড়ে বেঁড়াচ্ছো।
নিশিঃ সত্যি তো??
নেহালঃ তিন সত্যিই। এখন চলো তাড়াতাড়ি প্যাকিং শুরু করি। হানিমুনে যাচ্ছি। অনেক মজা হবে। ইয়েএএএ। মজা করে।
নিশিঃ যাহ তুমিও না অনেক দুষ্ট। খালি আমাকে লিজ্জা দেও।
নেহালঃ কি আমি খালি তোমাকে লজ্জা দেই না দাঁড়াও মজা দেখাচ্ছি।
নিশিঃ আহ ছাড়ো কেউ এসে পরবেতো। ছাড়….
নিশি আর কিছু বলতে পারেনা। কারণ নেহাল নিশির মুখ বন্ধ করে দেয় ওর ঠোঁট দিয়ে।
রাত ১০ টা,
বাবাঃ নেহাল….নেহাল….বাবা ডাকছে।
নেহাল তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসে।
নেহালঃ জ্বি বাবা??
বাবাঃ এই নে তোদের টিকিট। DS Bangla Airlines Bm 0024 নং এই ফ্লাইটে কাল তোরা যাচ্ছিস।
নেহালঃ আচ্ছা বাবা। কিন্তু বাবা আপনি সবটা সামলাতে পারবেন তো??
বাবাঃ তুই ভুলে যাচ্ছিস তোর আগে আমিই সব দেখতাম।
নেহালঃ আচ্ছা বাবা। কোনো সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
বাবাঃ আরে না না। তোরা যে কাজে যাচ্ছিস তার দিকে খেয়াল দে। এখানে আমি আছি। টেনশন নাই।
নেহালঃ আচ্চা বাবা। ধন্যবাদ আপনাকে। দোয়া করবেন।
বাবাঃ আমার দোয়া সবসময়ই তোর সাথে আছে। শোন, বউমা যেন আমার কোনো কষ্ট না পায় খেয়াল রাখবি।
নেহালঃ ইনশাআল্লাহ বাবা। ওর কোনো বিন্দুমাত্র ক্ষতি আমি হতে দিবো না।
বাবাঃ আচ্ছা যা তাহলে ঘুমা, কাল সকাল ৬ টায় তোদের ফ্লাইট।
নেহালঃ আচ্ছা।
উপরে,
নেহাল আর নিশি একসাথে শুয়ে আছে। নিশি নেহালের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছে।
নেহালঃ এখনো কি ভয় করছে??
নিশিঃ একটু একটু।
নেহালঃ আরে ভয় নেই আমি আছি না।
নিশিঃ আমাকে ছেড়ে কখনো তুমি যাবা না ঠিক আছে?? আহ্লাদী কণ্ঠে।
নেহাল নিশির কপালে চুমু দিয়ে বলে,
নেহালঃ আচ্ছা আমার পরী বউ।
নিশিঃ ভালোবাসি।
নেহালঃ তোমাকেও।
এরপর নেহাল আর নিশি অনেক দুষ্ট মিষ্টি কথা বলে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।
সকাল ৪ টা,
নেহালঃ নিশি ও নিশি উঠো। আমাদের তাড়াতাড়ি বের হতে হবে। ৬ টায় ফ্লাইট।
নিশি চোখ ঢলতে ঢলতে উঠে বসে।
নেহালঃ তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নেও। নিচে বাবা-মা ওয়েট করছে।
নিশিঃ আচ্ছা।
এরপর নিশি ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে।
বাবাঃ সাবধানে যাস। আর আমাকে পৌছে ফোন দিস।
মাঃ মা আমার ছেলেটার খেয়াল রেখো। নিশিকে উদ্দেশ্য করে।
নিশিঃ আচ্ছা মা। দোয়া করবেন।
নেহালঃ বাবা-মা মা দোয়া কইরো।
নেহাল আর নিশি বাবা-মাকে সালাম করে রওনা দেয় এয়ারপোর্টের দিকে।
গাড়িতে,
নেহালঃ কি হয়েছে নিশি?? তোমাকে এরকম লাগছে কেন?? ভয় বেশি করছে??
নিশিঃ কেনো জানি মন চাচ্ছে না যেতে। আর কেমন এক অজানা ভয় ভয় লাগছে ভিতরে। আমাদের কিছু হবে নাতো??
নেহালঃ বোকা মেয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রাখো। তিনি আমাদের সাহায্য করবেন।
নিশিঃ ইনশাআল্লাহ।
কিছুক্ষন পরই ওরা এয়ারপোর্টে পৌঁছতে যায়।
নিশিঃ ওমা কি বিশাল বড় বড় প্লেন। অথচ নিচ থেকে কত্তো ছোট লাগে দেখতে।
নেহালঃ হ্যাঁ। এখন চলো না হলে লেট হয়ে যাবে।
নিশিঃ আচ্ছা।
প্লেনে,
নিশি নেহালের হাত শক্ত করে ধরে আছে। প্লেন টেক অফ করছে।
নেহালঃ নিশি চোখ খুলো। দেখো আমরা কই??
নিশি আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাঁকায়।
নেহালঃ জানালা বাইরে দেখো।
নিশি জানালা দিয়ে বাইরে তাঁকায়। দেখে, ঘন সাদা মেঘমালায় বিস্তৃত পুরো আকাশ পথ। তার মাঝে সূর্যিমামাকে দেখা যাচ্ছে। নিশির যে কি ভালো লাগছে তা লিখে বুঝাতে পারবো না। নিশি অপলক দৃষ্টিতে মহান আল্লাহ তায়ালার সৃষ্টির সৌন্দর্য দেখছে।
সন্ধ্যা ৭.৪৭ মিনিট,
নেহালের বাসায়,
মাঃ উফফফ নেহালের ফোনটা এখনো বন্ধ আসছে কেন?? রূপাকে ফোন দিয়ে ছিলাম ওতো বলল এখনো পৌঁছায় নি। চিন্তিত কণ্ঠে।
বাবাঃ আরে টেনশন করো না। হয়তো লেট হয়েছে।
মাঃ কেমন জানি লাগছে। মনটা কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। ভীতু কণ্ঠে।
বাবাঃ আরে শান্ত হও। এখানে বসো।
নেহালের বাবা টিভি দেখছিলেন। হঠাৎ চ্যানেল বদলাতেই খবরের চ্যানেল আসে। সেখানে
সংবাদ পড়ছে-
আজ বাংলাদেশ সময়ে দুপুর ২ টা থেকে অস্ট্রেলিয়া গামী DS Bangla Airlines Bm 0024 নং প্লেনটি ১৩০ জন যাত্রী সহ নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্লেনটি যাওয়ার পথে সমুদ্রে পরে গিয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
নেহালের বাবার হাত থেকে ঠাস করে রিমুটটা পরে যায়। তিনি একদম স্তব্ধ হয়ে গিয়েছেন। তার চোখের কোনা হতে পানি বেয়ে বেয়ে পরছে।
মাঃ কি হয়েছে?? এই কি হয়েছে?? এমন করছো কেন?? বলো?? আমার কিন্তু ভয় করছে। অনেক চিন্তিত কণ্ঠে।
বাবাঃ নেহাল আর নিশি আজ এই প্লেনেই অস্ট্রেলিয়া গিয়েছে।
মাঃ নেহালের বাবা…আমার নেহাল কই????? আল্লাহ আমার নেহাল আমার বউমা?? নেহাল?????? কান্না করতে করতে।
চলবে…?