Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এ্যারেঞ্জ ম্যারেজএ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্বঃ ০৩

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্বঃ ০৩

এ্যারেঞ্জ ম্যারেজ পর্বঃ ০৩
– আবির খান

 

নেহাল দরজা দিয়ে বের হতেই হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখে ফোনটা নেই। তাই যেইনা ঘুরে অমনি কারো সাথে ধাক্কা খায়। নেহাল ঠিক থাকলেও সামনের মানুষটা তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নেয়। সে পরার আগেই নেহাল তাকে ধরে ফেলে। নেহাল দেখে এ আর কেউ নয় নিশি।

নিশি নেহালের শক্ত বাহুতে আব্ধ হয়ে আছে। মানে নেহাল নিশির নরম কোমরে এক হাত দিয়ে ওকে ধরে রেখেছে। সে কি একটা রোমান্টিক সিন। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল তো হারিয়েছে সেই কবেই। নিশিও অপলক দৃষ্টিতে নেহালকে দেখছে। সময়টা তখন খুব সুন্দর লাগছিলো ওদের। কিন্তু এতো সুন্দর সময়টা শেষ করতে হঠাৎই নিশির হাতে থাকা নেহালের ফোনটা বেজে উঠে। নেহাল আর নিশি চমকে উঠে। নেহাল নিশিকে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিশি নেহালকে ফোনটা এগিয়ে দেয়। নেহাল ফোনটা নিয়েই সাথে সাথে রিসিভ করে।

নেহালঃ হ্যালো।

 

 

নওশিনঃ কেমন আছো বাবু?? কি আবার বাসর টাসর করলে নাকি?? মজা করে।

নেহালঃ আমি বের হচ্ছি পরে কথা বলবো। গম্ভীর কণ্ঠে।

নওশিনঃ অফিসে গিয়ে আমাকে ফোন দিও বাবু। তোমার সাথে কথা আছে।

নেহালঃ আচ্ছা। নিশির দিকে তাকিয়ে বলল।

নেহাল ফোনটা কেটে পকেটে রাখলো।

নেহালঃ থ্যাংকস ফোনটা আনার জন্য।

নিশি মিষ্টি একটা হাসি দিলো। যা নেহালের মনের ভিতর কেমন এক অজানা অনুভূতি সৃষ্টি করলো।

নেহালঃ আচ্ছা যাই।

নিশিঃ যাই না আসি। আবার সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে।

নেহালঃ আচ্ছা আসি। মৃদু হাসি দিয়ে।

নেহালের কেন জানি আজ যেতেই ইচ্ছা করছে না। কারণ এতো সুন্দরী একটা বউকে রেখে যাকে দেখলে মনে শান্তি অনুভব হয়, যাকে দেখলে চোখজোড়া আরাম পায় তাকে ছেড়ে কিভাবে যেতে ইচ্ছা করে।

নেহালঃ তাহলে আসি হ্যাঁ। নিশির দিকে তাকিয়ে।

নিশিঃ এই যে শুনুন।

নেহাল আবার সিড়ি বেয়ে তাড়াতাড়ি নিশির কাছে আসলো।

নেহালঃ হ্যাঁ হ্যাঁ বলো। উত্তেজিত হয়ে।

নিশিঃ তাড়াতাড়ি আসবেন।

বলেই নিশি লজ্জা পেয়ে ভিতরে চলে যায়। নেহাল অবাক হয়ে শুধু নিশির চলে যাওয়া দেখে।

নেহাল গাড়িতে গিয়ে বসে। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে অফিসের উদ্দেশ্য। এদিকে নেহাল বেশ চিন্তার মধ্যে পরেছে। একদিকে নওশিন, যে নেহালের প্রথম ভালোবাসা। আর অন্যদিকে নিশি যে এখন তার বউ। নওশিন ভালো। তবে কয়েকমাস যাবত ওর আচরণ কেমন কেমন জানি লাগছে নেহালের। কথা কম বলে। সময় দেয় না। তবে নওশিনের মাঝে ভালোবাসাটা খুঁজে পায় নেহাল। অল্প হলেও। কিন্তু মাত্র এক রাত আর এক সকাল নেহালকে অনেক দূর্বল করে দিয়েছে তার বউ নিশির উপর। যা নেহাল মেনে নিতে পারছে না।

কারণ নেহাল নওশিনের কাছে কমিটেড। তাই নিশিকে সুযোগ কিভাবে দিবে নেহাল। কিন্তু নিশিটাও যা সুন্দর আর মায়াবতী। ওর মুখের দিকে তাকালে সব ভুলে যায় নেহাল। এসব ভাবতে ভাবতে মানে মন আর ব্রেনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নেহাল হাঁপিয়ে যায়। তাই গাড়ির জানালাটা খুলে প্রকৃতির আবেশ অনুভব করছে নেহাল। অবশ্য যান্ত্রিক এ শহরে প্রকৃতির বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা খুঁজে পাওয়া যায়না। আছে শুধু খোলা আকাশ। আর দূষিত বাতাস। তাও নেহাল তা দিয়েই নিজেকে ঠিক করছে।

নেহালের চোখে হঠাৎই কিছু একটা আটকালো।

নেহালঃ গাড়ি থামাও।

ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ি সাইড করে থামিয়ে দেয়। নেহাল গাড়ি থেকে নেমে একটু পিছনে যায়।

নেহাল দেখে একজন বয়ষ্ক লোক অঝোর ধারায় কান্না করছে। তার সামনে একটা ঝুড়ি উল্টো করে পরা আছে। আর কি সব যেন পিষে আছে৷

নেহালঃ চাচা কি হয়েছে?? এভাবে কাঁদছেন কেন??

লোকটা কেঁদেই যাচ্ছে।

নেহালঃ চাচা দয়া করে আমাকে বলুন। আমি আপনার ছেলের মতোই।

লোকটা এবার বলতে শুরু করলো।

চাচাঃ কি কমু বাবা। (কান্নার বেগ আরো বেরে গেলো) আমার স্ত্রী অনেক অসুস্থ, বাসায় দুইডা মাইয়া আছে। সবাইরে চালাইতাম এই আমড়া বেইচা। কিন্তু আজকে যেই এই বাড়ির সামনে বইলাম….( অনেক কান্না করছে)

নেহালঃ চাচা বলেন থামবেন না। অনুনয়ের স্বরে।

চাচাঃ এহানে আমড়া নিয়া বসায়, আমার সব আমড়া রাস্তায় ফিক্কা ফালায় দিসে এই বাড়ির দারওয়ান। আমি কেমনে আজকে আমার বউএর লইগা ঔষধ কিনমু বাবা?? কেমনে দুইডা মাইয়ার মুখে খাবার তুইলা দিমু। একটু সময়ও দিলোনা সরানের। অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পরে।

নেহালের অনেক খারাপ লাগছে এই অসহায় বাবা-এই অসহায় মানুষটা কথা শুনে।

নেহালঃ চাচা উঠেন।

লোকটা উঠে দাঁড়ায়।

নেহালঃ আমাকে দারওয়ান এর কাছে নিয়ে চলেন।

চাচাঃ থাক বাবা দরকার নাই।

নেহালঃ চাচা চলেনতো।

লোকটা নেহাল কে নিয়ে সেই দারওয়ানের কাছে গেলো।

চাচাঃ বাবা ও। দারওয়ান কে দেখিয়ে।

নেহালঃ ওনার সাথে এমন করলি কেন?? রাগী কণ্ঠে।

দারওয়ানঃ স্যার উনি বাসার সামনে আমড়া নিয়া বসছে তাই অন্যদের সমস্যা হইবো তাই সরায় দিসি।

নেহালঃ কসায়া একটা চটকানা দিবো। তুই ওনাকে সরায় দিসোছ না?? তুই ওনার সব আমড়া ওনার আজকের রোজগার সব নষ্ট করে দিছোছ। জোরে চিৎকার করে রাগী কণ্ঠে বলল।

দারওয়ান ভয়তে কাঁপছে আর দাঁড়িয়ে আছে।

নেহালঃ তোর চাকরি এখনই আমি খাবো। এটাই তোর শাস্তি। রাগী ভাবে।

দারওয়ানঃ না না স্যার প্লিজ এমন করবেন না। আমার চাকরিটা গেলে বউ বাচ্চা নিয়া পথে বসা লাগবো। স্যার প্লিজ এমন করবেন নাহ। নেহালের পায়ে পরে।

নেহাল দারওয়ানকে উঠিয়ে দাঁড় করায়৷

নেহালঃ দেখ তুই তোর চাকরি হারালে যেমন তোর বউ বাচ্চা নিয়া পথে বসবি। আর তুই যে এই অসহায় বাবার আজকের রোজগারটা নির্মম ভাবে নষ্ট করলি তার কি হবে?? সে আজ কিভাবে তার অসুস্থ বউয়ের জন্য ঔষধ কিনবে??? বল??

দারওয়ান ছুটে গিয়ে লোকটার পায় পরে মাফ চেতে থাকে।

দারওয়ানঃ চাচা আমাকে দয়া করে মাফ করে দেন। আমি বুঝতে পারি নাই। আমার মধ্যে অহংকার এসে পরছেলো তাই আমি এমন কইরা ফালাইছি। চাচা আমারে মাফ কইরা দেন। অসহায় কণ্ঠে।

চাচাঃ হইছে বাবা তোমাকে মাফ করছি।

নেহালঃ দেখলি তো?? তার এতো বড় ক্ষতি করার পরও তোকে মাফ করে দিসে। এই হলো আসল মানুষ। চিনে রাখ।

নেহাল ওর পকেট থেকে চেকবইটা বের করে ৫,০০,০০০ টাকা লিখে দিলো।

নেহালঃ চাচা এই নেন। এখানে ৫,০০,০০০ টাকা আছে। আর এই কার্ডটা সাথে রাখেন। জীবনে কোনো সমস্যা হলে শুধু একটা ফোন দিবেন।

চাচাঃ না বাবা এতো টাকা লাগবে না। তুমি ওকে শিক্ষা দিসো এই বেশি।

নেহালঃ চাচা আল্লাহ আমাকে অনেক দিসে। তাই নিজে সব খেতে পারিনা। তাই আপনাদের মতো মানুষদের সাহায্য করে টাকা কমাই। হা হা। এটা আপনি রাখেন। এটা আপনার হক।

চাচাঃ বাবারে তোমারে যে কি বইলা ধন্যবাদ দিমু। তুমি মানুষনা তুমি একজন আল্লাহর ফেরেস্তা। বাবা তোমাকে দোয়া করি আল্লাহ যেন কোনো দিন তোমাকে কোনো কষ্ট না পেতে দেয়। তোমার সব ইচ্ছা যেন তিনি পূরণ করেন।

নেহালঃ আমিন চাচা। এই যে দারওয়ান ভাই, একটু শিক্ষা দেওয়ার জন্য খারাপ আচরণ করেছি কিছু মনে করোনা কেমন।

দারওয়ানঃ স্যার আপনার মতো এতো বড় ভালো মানুষ যদি আমাকে ১০ টা মাইর ও দেয় আমি কিচ্ছু মনে করবো না। স্যার আমাকে মাফ করে দিয়েন।

নেহালঃ আচ্ছা আচ্ছা হইছে। এই নেও এই টাকাটা রাখো, তোমার বাচ্চাকে কিছু কিনে দিও। নেও।

দারওয়ানঃ না স্যার এটা লাগবে না। আপনি দোয়া কইরেন তাতেই হবে।

নেহালঃ আরে বেটা নে। খুশি হয়ে দিসি। রাখ কাজে দিবে।

দারওয়ান নেহালের জোরাজোরিতে টাকাটা রাখে। আর চাচাকেও বিদায় দিয়ে নেহাল অফিসে চলে আসে।

অফিসে,

জামিলঃ মে আই কামিন স্যার??

নেহালঃ ইয়েস।

জামিলঃ স্যার একটা গুড নিউজ আছে। অনেক বড়।

নেহালঃ কি বলো তো?? অনেক কৌতূহল নিয়ে।

জামিলঃ স্যার আমরা ৫০০ কোটি টাকা মুনাফার যে প্রেজেক্টটা ছিলো সেটা আজ সকালে ফাইলান হয়েছে। মানে আমরা পেয়েছি। সবমিলিয়ে আমাদের কোম্পানি ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা পাবে এই প্রজেক্টে।

নেহালঃ মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ। অফিসে সবাইকে মিষ্টি দেও আর সবাইকে বলো বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

জামিল অনেক খুশি হয়ে গেলো।

জামিলঃ স্যার আপনার মতো বস বা মালিক যতদিন এই কোম্পানিতে আছে আমাদের সফলতা কেউ আটকাতে পারবে না। আপনি অনেক ভালো স্যার৷ কারণ আপনি সবার কথা ভাবেন।

নেহালঃ আবার পাম দিচ্ছো?? আচ্ছা যাও তোমাকে দিগুণ বাড়িয়ে দিবো। হাহা। মজা করে।

জামিলঃ না স্যার সবাই যা পাবে আমিও তাই নিবো।

নেহালঃ হুম। এর জন্যই তুমি আমার পিএস।

জামিলঃ আচ্ছা স্যার তাহলে আমি আসি।

নেহালঃ আচ্ছা। ওয়েট, কাল যে ১০০ জনের কথা বলছিলাম তার কি খবর??

জামিলঃ স্যার আমি আপতত ৭৬ জনকে পেয়েছি। আজ বাকিদের পেয়ে যাবো৷

নেহালঃ আচ্ছা, তাদের যেনো চিকিৎসায় কোনো কমতি না হয়। প্রয়োজনে আরো ১০০ জনকে এই ব্যবস্থা করে দিবে।

জামিলঃ ওকে স্যার।

জামিল চলে গেলে নেহাল মহান আল্লাহর কাছে অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করে।

নেহালের বাসায়,

মাঃ নিশি মা, নেহালকে তোর পছন্দ হয়েছে তো??

নিশিঃ কি যে বলেননা মা। ওনার মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।

মাঃ তাহলে কিন্তু আমার দুইটা নাতি চাই। ওদের নিয়ে সারাদিন খেলা করবো।

নিশি মায়ের কথায় অনেক লজ্জা পায়। লজ্জায় ফরসা মুখটা একদম গোলাপি হয়ে গিয়েছে।

মাঃ ওরে এতো লজ্জা পাস নে। শোন মা, আমার ছেলেটা না অনেক ভালো আর ভদ্র। আর একটু লজ্জাও পায় বেশি। তুই ওকে তোর মতো করে মানিয়ে নিস। ঠিক আছে??

নিশিঃ আচ্ছা মা দোয়া করবেন।

দুপুর ২ টা,

নেহাল নামাজ পড়ে এসে বসে আছে। নিশির কথা খুব মনে পরছে। একদিনেই কেমন এক টান অনুভব করছে। কিন্তু নওশিন?? এতোটা বছর যাকে ভালোবাসলো তাকেও তো ছাড়তে পারবে না। কিন্তু নিশির তো কোনো দোষ নাই। তাহলে ওকেও বা কেন কষ্ট দিবে?? কিন্তু নেহালতো শুধু নওশিনকেই ভালোবাসে। তাহলে নিশি?? ওকে ডিভোর্স দিয়ে না হয় অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো। এসব ভাবছে নেহাল।

নেহালঃ নাহ একটা ফোন দি। একটু কথা বললে তো আর এমন কিছু হবে না। কিন্তু ওর তো ফোন নেই তাহলে?? আমার রুমের টায় দিবো নাকি?? নাহ থাক। ও তো আমার কেউ না। ওকে কেন ফোন দিবো?? উফফফ না একটা ফোন দিই। ধুহ!!

নেহাল আর না পেরে বাসায় ওর রুমের ফোনে কল দেয়। রিং হওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হয়ে গেলো। নেহাল থোতভোত খেয়ে গেলো। তাও নিজেকে সামলে বলল,

নেহালঃ হ্যালো। আস্তে করে।

নিশিঃ হ্যালো কে??

নেহালঃ আমি নেহাল।

নিশিঃ ও আপনি।

নেহালঃ হ্যাঁ। তা আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলে বুঝি??

নিশিঃ আসলে কেনো জানি মনে হলো আপনি হয়তো ফোন দিবেন তাই ফোনের সামনে বসে ছিলাম।

নেহাল নিশির কথা শুনে অনেকটা অবাক আর আবেগি হয়ে যায়।

নেহালঃ দুপুরে খেয়েছো??

নিশিঃ না।

নেহালঃ কেন??

নিশিঃ আপনিওতো হয়তো খাননি তাই আমিও খায়নি।

নেহালঃ কি?? আমি না খেলে তুমি খাবে না??

নিশিঃ না। আপনি খেলে তারপর আমি খাবো।

নেহালঃ এটা কোনো কথা। তুমি খেয়ে নেও। আমি পরে খাবো।

নিশিঃ না না। আগে আপনি খাবেন তারপর আমি। আপনি অসময়ে খেলে অসুস্থ হবেন। তাই এখনি খেতে যান।

নেহালঃ তুমি এমন কেনো?? একদিনেই জোর খাটাচ্ছো।

নিশিঃ আপনার স্ত্রী যে তাই। আর মাও বলেছে আপনার বিশেষ খেয়াল রাখতে। আপনি নাকি খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটু অসচেতন তাই।

নেহালঃ আচ্ছা বাবা খাচ্ছি। তুমিও খেতে যাও।

নিশিঃ সত্যিই খাবেন তো??

নেহালঃ হ্যাঁ ৩ সত্যি। রাখি এখন।

নিশিঃ রাখবেন কেনো??

নেহালঃ ও মা খাবো না।

নিশিঃ আচ্ছা আচ্ছা খান তাহলে।

নেহালঃ হুম রাখি।

নিশিঃ এই যে শুনুন…

নেহালঃ হ্যাঁ বলো।

নিশিঃ উমম.. না কিছু না। রাখি।

বলেই রেখে দেয়।

নেহালঃ কি বলতে চেয়েছিলো মেয়েটা?? বললনা কেন!!!

নেহাল ভাবে, আচ্ছা ও আমার জন্য না খেয়ে আছে?? কিন্তু আজ অব্দি নওশিনতো একবারও আমার খাওয়া দাওয়ার খবরই নিলো না। উফফ বড় ঝামেলায় পরলাম। যাই খেয়ে আসি। বউ বলেছে খেতে। হাহা। ধুহ কি যে বলছি না।

বিকেল ৪.২৬ মিনিট,

নেহালের ফোনটা বেজে উঠে।

নেহালঃ হ্যালো নওশিন।

নওশিনঃ আমার সাথে একটু মিট করবে??

নেহালঃ অবশ্যই। ভালোবাসি তোমাকে। করবো না কেন। বলো কোথায়??

নওশিনঃ ক্যাফে ব্রিটেনে চলে আসো।

নেহালঃ আচ্ছা।

বিকেল ৫ টা,

নওশিনঃ হায় বাবু কেমন আছো?? জড়িয়ে ধরে।

নেহালের হঠাৎ কেমন জানি খারাপ একটা ফিল হলো।

নেহালঃ হুম অনেক ভালো। তুমি? আস্তে করে বলল।

নওশিনঃ কি হলো একদিনের বউএর প্রেমে পরলে নাকি?? হাগটা ঠিক মতো করলে না??

নেহালঃ না মানে ক্লান্ততো তাই।

নওশিনঃ ও তাই। দাঁড়াও।

নওশিন উঠে নেহালের অনেক কাছে গিয়ে বসলো।

নওশিনঃ চলো উপরে যাই। তোমার সব ক্লান্তি দূর করে দিবো।

নেহালঃ তোমাকে না বলছি বিয়ের আগে নো ফিজিক্যাল। তাহলে বার বার কেন এমন করো। রাগী কণ্ঠে আর নওশিনকে ছাড়িয়ে।

নওশিনঃ বাহ নেহাল বাহ। এখন বউ কে পেয়ে আমায় ভুলে গেছো না?? তো যাও না বউয়ের কাছেই যাও। এখনে আসলে কেন!!!

নেহালঃ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। এখানে আসাটা ঠিক হয়নি। তাই বউয়ের কাছেই যাচ্ছি। বাই। অনেক রাগী কণ্ঠে।

নেহাল উঠে চলে যাচ্ছে৷

নওশিনঃ আরে আরে কোথায় যাচ্ছো?? রাগ করো না।

নেহালের কেন জানি এখন নওশিনের সহ্য হচ্ছেনা। আর অনেক রাগ হচ্ছে। তাই কারো কোনো কথা না শুনে সোজা বাসার দিকে রওনা দেয়। অনেক রেগে আছে নেহাল।

সন্ধ্যা ৬.০৭ মিনিট,

নেহাল ওর বাসার দরজার সামনে। বেল দিতেই কেউ একজন দরজা খুলে দিলো। নেহাল যাকে দেখলো তাতে ওর সব রাগ দরজা দিয়েই পালালো। আর নেহালের চোখ যেন…..
চলবে…?

কোনো ভুল হলে জানাবেন।
#এ্যারেঞ্জ_ম্যারেজ
– আবির খান

পর্বঃ ০৩

নেহাল দরজা দিয়ে বের হতেই হঠাৎ পকেটে হাত দিয়ে দেখে ফোনটা নেই। তাই যেইনা ঘুরে অমনি কারো সাথে ধাক্কা খায়। নেহাল ঠিক থাকলেও সামনের মানুষটা তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নেয়। সে পরার আগেই নেহাল তাকে ধরে ফেলে। নেহাল দেখে এ আর কেউ নয় নিশি।

নিশি নেহালের শক্ত বাহুতে আব্ধ হয়ে আছে। মানে নেহাল নিশির নরম কোমরে এক হাত দিয়ে ওকে ধরে রেখেছে। সে কি একটা রোমান্টিক সিন। দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। নেহাল তো হারিয়েছে সেই কবেই। নিশিও অপলক দৃষ্টিতে নেহালকে দেখছে। সময়টা তখন খুব সুন্দর লাগছিলো ওদের। কিন্তু এতো সুন্দর সময়টা শেষ করতে হঠাৎই নিশির হাতে থাকা নেহালের ফোনটা বেজে উঠে। নেহাল আর নিশি চমকে উঠে। নেহাল নিশিকে দাঁড় করিয়ে দেয়। নিশি নেহালকে ফোনটা এগিয়ে দেয়। নেহাল ফোনটা নিয়েই সাথে সাথে রিসিভ করে।

নেহালঃ হ্যালো।

নওশিনঃ কেমন আছো বাবু?? কি আবার বাসর টাসর করলে নাকি?? মজা করে।

নেহালঃ আমি বের হচ্ছি পরে কথা বলবো। গম্ভীর কণ্ঠে।

নওশিনঃ অফিসে গিয়ে আমাকে ফোন দিও বাবু। তোমার সাথে কথা আছে।

নেহালঃ আচ্ছা। নিশির দিকে তাকিয়ে বলল।

নেহাল ফোনটা কেটে পকেটে রাখলো।

নেহালঃ থ্যাংকস ফোনটা আনার জন্য।

নিশি মিষ্টি একটা হাসি দিলো। যা নেহালের মনের ভিতর কেমন এক অজানা অনুভূতি সৃষ্টি করলো।

নেহালঃ আচ্ছা যাই।

নিশিঃ যাই না আসি। আবার সেই মিষ্টি হাসি দিয়ে।

নেহালঃ আচ্ছা আসি। মৃদু হাসি দিয়ে।

নেহালের কেন জানি আজ যেতেই ইচ্ছা করছে না। কারণ এতো সুন্দরী একটা বউকে রেখে যাকে দেখলে মনে শান্তি অনুভব হয়, যাকে দেখলে চোখজোড়া আরাম পায় তাকে ছেড়ে কিভাবে যেতে ইচ্ছা করে।

নেহালঃ তাহলে আসি হ্যাঁ। নিশির দিকে তাকিয়ে।

নিশিঃ এই যে শুনুন।

নেহাল আবার সিড়ি বেয়ে তাড়াতাড়ি নিশির কাছে আসলো।

নেহালঃ হ্যাঁ হ্যাঁ বলো। উত্তেজিত হয়ে।

নিশিঃ তাড়াতাড়ি আসবেন।

বলেই নিশি লজ্জা পেয়ে ভিতরে চলে যায়। নেহাল অবাক হয়ে শুধু নিশির চলে যাওয়া দেখে।

নেহাল গাড়িতে গিয়ে বসে। ড্রাইভার গাড়ি চালাতে শুরু করে অফিসের উদ্দেশ্য। এদিকে নেহাল বেশ চিন্তার মধ্যে পরেছে। একদিকে নওশিন, যে নেহালের প্রথম ভালোবাসা। আর অন্যদিকে নিশি যে এখন তার বউ। নওশিন ভালো। তবে কয়েকমাস যাবত ওর আচরণ কেমন কেমন জানি লাগছে নেহালের। কথা কম বলে। সময় দেয় না। তবে নওশিনের মাঝে ভালোবাসাটা খুঁজে পায় নেহাল। অল্প হলেও। কিন্তু মাত্র এক রাত আর এক সকাল নেহালকে অনেক দূর্বল করে দিয়েছে তার বউ নিশির উপর। যা নেহাল মেনে নিতে পারছে না।

কারণ নেহাল নওশিনের কাছে কমিটেড। তাই নিশিকে সুযোগ কিভাবে দিবে নেহাল। কিন্তু নিশিটাও যা সুন্দর আর মায়াবতী। ওর মুখের দিকে তাকালে সব ভুলে যায় নেহাল। এসব ভাবতে ভাবতে মানে মন আর ব্রেনের সাথে যুদ্ধ করতে করতে নেহাল হাঁপিয়ে যায়। তাই গাড়ির জানালাটা খুলে প্রকৃতির আবেশ অনুভব করছে নেহাল। অবশ্য যান্ত্রিক এ শহরে প্রকৃতির বিন্দুমাত্র ছিটেফোঁটা খুঁজে পাওয়া যায়না। আছে শুধু খোলা আকাশ। আর দূষিত বাতাস। তাও নেহাল তা দিয়েই নিজেকে ঠিক করছে।

নেহালের চোখে হঠাৎই কিছু একটা আটকালো।

নেহালঃ গাড়ি থামাও।

ড্রাইভার সাথে সাথে গাড়ি সাইড করে থামিয়ে দেয়। নেহাল গাড়ি থেকে নেমে একটু পিছনে যায়।

নেহাল দেখে একজন বয়ষ্ক লোক অঝোর ধারায় কান্না করছে। তার সামনে একটা ঝুড়ি উল্টো করে পরা আছে। আর কি সব যেন পিষে আছে৷

নেহালঃ চাচা কি হয়েছে?? এভাবে কাঁদছেন কেন??

লোকটা কেঁদেই যাচ্ছে।

নেহালঃ চাচা দয়া করে আমাকে বলুন। আমি আপনার ছেলের মতোই।

লোকটা এবার বলতে শুরু করলো।

চাচাঃ কি কমু বাবা। (কান্নার বেগ আরো বেরে গেলো) আমার স্ত্রী অনেক অসুস্থ, বাসায় দুইডা মাইয়া আছে। সবাইরে চালাইতাম এই আমড়া বেইচা। কিন্তু আজকে যেই এই বাড়ির সামনে বইলাম….( অনেক কান্না করছে)

নেহালঃ চাচা বলেন থামবেন না। অনুনয়ের স্বরে।

চাচাঃ এহানে আমড়া নিয়া বসায়, আমার সব আমড়া রাস্তায় ফিক্কা ফালায় দিসে এই বাড়ির দারওয়ান। আমি কেমনে আজকে আমার বউএর লইগা ঔষধ কিনমু বাবা?? কেমনে দুইডা মাইয়ার মুখে খাবার তুইলা দিমু। একটু সময়ও দিলোনা সরানের। অঝোর ধারায় কান্নায় ভেঙে পরে।

নেহালের অনেক খারাপ লাগছে এই অসহায় বাবা-এই অসহায় মানুষটা কথা শুনে।

নেহালঃ চাচা উঠেন।

লোকটা উঠে দাঁড়ায়।

নেহালঃ আমাকে দারওয়ান এর কাছে নিয়ে চলেন।

চাচাঃ থাক বাবা দরকার নাই।

নেহালঃ চাচা চলেনতো।

লোকটা নেহাল কে নিয়ে সেই দারওয়ানের কাছে গেলো।

চাচাঃ বাবা ও। দারওয়ান কে দেখিয়ে।

নেহালঃ ওনার সাথে এমন করলি কেন?? রাগী কণ্ঠে।

দারওয়ানঃ স্যার উনি বাসার সামনে আমড়া নিয়া বসছে তাই অন্যদের সমস্যা হইবো তাই সরায় দিসি।

নেহালঃ কসায়া একটা চটকানা দিবো। তুই ওনাকে সরায় দিসোছ না?? তুই ওনার সব আমড়া ওনার আজকের রোজগার সব নষ্ট করে দিছোছ। জোরে চিৎকার করে রাগী কণ্ঠে বলল।

দারওয়ান ভয়তে কাঁপছে আর দাঁড়িয়ে আছে।

নেহালঃ তোর চাকরি এখনই আমি খাবো। এটাই তোর শাস্তি। রাগী ভাবে।

দারওয়ানঃ না না স্যার প্লিজ এমন করবেন না। আমার চাকরিটা গেলে বউ বাচ্চা নিয়া পথে বসা লাগবো। স্যার প্লিজ এমন করবেন নাহ। নেহালের পায়ে পরে।

নেহাল দারওয়ানকে উঠিয়ে দাঁড় করায়৷

নেহালঃ দেখ তুই তোর চাকরি হারালে যেমন তোর বউ বাচ্চা নিয়া পথে বসবি। আর তুই যে এই অসহায় বাবার আজকের রোজগারটা নির্মম ভাবে নষ্ট করলি তার কি হবে?? সে আজ কিভাবে তার অসুস্থ বউয়ের জন্য ঔষধ কিনবে??? বল??

দারওয়ান ছুটে গিয়ে লোকটার পায় পরে মাফ চেতে থাকে।

দারওয়ানঃ চাচা আমাকে দয়া করে মাফ করে দেন। আমি বুঝতে পারি নাই। আমার মধ্যে অহংকার এসে পরছেলো তাই আমি এমন কইরা ফালাইছি। চাচা আমারে মাফ কইরা দেন। অসহায় কণ্ঠে।

চাচাঃ হইছে বাবা তোমাকে মাফ করছি।

নেহালঃ দেখলি তো?? তার এতো বড় ক্ষতি করার পরও তোকে মাফ করে দিসে। এই হলো আসল মানুষ। চিনে রাখ।

নেহাল ওর পকেট থেকে চেকবইটা বের করে ৫,০০,০০০ টাকা লিখে দিলো।

নেহালঃ চাচা এই নেন। এখানে ৫,০০,০০০ টাকা আছে। আর এই কার্ডটা সাথে রাখেন। জীবনে কোনো সমস্যা হলে শুধু একটা ফোন দিবেন।

চাচাঃ না বাবা এতো টাকা লাগবে না। তুমি ওকে শিক্ষা দিসো এই বেশি।

নেহালঃ চাচা আল্লাহ আমাকে অনেক দিসে। তাই নিজে সব খেতে পারিনা। তাই আপনাদের মতো মানুষদের সাহায্য করে টাকা কমাই। হা হা। এটা আপনি রাখেন। এটা আপনার হক।

চাচাঃ বাবারে তোমারে যে কি বইলা ধন্যবাদ দিমু। তুমি মানুষনা তুমি একজন আল্লাহর ফেরেস্তা। বাবা তোমাকে দোয়া করি আল্লাহ যেন কোনো দিন তোমাকে কোনো কষ্ট না পেতে দেয়। তোমার সব ইচ্ছা যেন তিনি পূরণ করেন।

নেহালঃ আমিন চাচা। এই যে দারওয়ান ভাই, একটু শিক্ষা দেওয়ার জন্য খারাপ আচরণ করেছি কিছু মনে করোনা কেমন।

দারওয়ানঃ স্যার আপনার মতো এতো বড় ভালো মানুষ যদি আমাকে ১০ টা মাইর ও দেয় আমি কিচ্ছু মনে করবো না। স্যার আমাকে মাফ করে দিয়েন।

নেহালঃ আচ্ছা আচ্ছা হইছে। এই নেও এই টাকাটা রাখো, তোমার বাচ্চাকে কিছু কিনে দিও। নেও।

দারওয়ানঃ না স্যার এটা লাগবে না। আপনি দোয়া কইরেন তাতেই হবে।

নেহালঃ আরে বেটা নে। খুশি হয়ে দিসি। রাখ কাজে দিবে।

দারওয়ান নেহালের জোরাজোরিতে টাকাটা রাখে। আর চাচাকেও বিদায় দিয়ে নেহাল অফিসে চলে আসে।

অফিসে,

জামিলঃ মে আই কামিন স্যার??

নেহালঃ ইয়েস।

জামিলঃ স্যার একটা গুড নিউজ আছে। অনেক বড়।

নেহালঃ কি বলো তো?? অনেক কৌতূহল নিয়ে।

জামিলঃ স্যার আমরা ৫০০ কোটি টাকা মুনাফার যে প্রেজেক্টটা ছিলো সেটা আজ সকালে ফাইলান হয়েছে। মানে আমরা পেয়েছি। সবমিলিয়ে আমাদের কোম্পানি ৫০০ কোটি টাকা মুনাফা পাবে এই প্রজেক্টে।

নেহালঃ মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ। অফিসে সবাইকে মিষ্টি দেও আর সবাইকে বলো বেতন বাড়িয়ে দেওয়া হবে।

জামিল অনেক খুশি হয়ে গেলো।

জামিলঃ স্যার আপনার মতো বস বা মালিক যতদিন এই কোম্পানিতে আছে আমাদের সফলতা কেউ আটকাতে পারবে না। আপনি অনেক ভালো স্যার৷ কারণ আপনি সবার কথা ভাবেন।

নেহালঃ আবার পাম দিচ্ছো?? আচ্ছা যাও তোমাকে দিগুণ বাড়িয়ে দিবো। হাহা। মজা করে।

জামিলঃ না স্যার সবাই যা পাবে আমিও তাই নিবো।

নেহালঃ হুম। এর জন্যই তুমি আমার পিএস।

জামিলঃ আচ্ছা স্যার তাহলে আমি আসি।

নেহালঃ আচ্ছা। ওয়েট, কাল যে ১০০ জনের কথা বলছিলাম তার কি খবর??

জামিলঃ স্যার আমি আপতত ৭৬ জনকে পেয়েছি। আজ বাকিদের পেয়ে যাবো৷

নেহালঃ আচ্ছা, তাদের যেনো চিকিৎসায় কোনো কমতি না হয়। প্রয়োজনে আরো ১০০ জনকে এই ব্যবস্থা করে দিবে।

জামিলঃ ওকে স্যার।

জামিল চলে গেলে নেহাল মহান আল্লাহর কাছে অসংখ্য শুকরিয়া আদায় করে।

নেহালের বাসায়,

মাঃ নিশি মা, নেহালকে তোর পছন্দ হয়েছে তো??

নিশিঃ কি যে বলেননা মা। ওনার মতো স্বামী পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার।

মাঃ তাহলে কিন্তু আমার দুইটা নাতি চাই। ওদের নিয়ে সারাদিন খেলা করবো।

নিশি মায়ের কথায় অনেক লজ্জা পায়। লজ্জায় ফরসা মুখটা একদম গোলাপি হয়ে গিয়েছে।

মাঃ ওরে এতো লজ্জা পাস নে। শোন মা, আমার ছেলেটা না অনেক ভালো আর ভদ্র। আর একটু লজ্জাও পায় বেশি। তুই ওকে তোর মতো করে মানিয়ে নিস। ঠিক আছে??

নিশিঃ আচ্ছা মা দোয়া করবেন।

দুপুর ২ টা,

নেহাল নামাজ পড়ে এসে বসে আছে। নিশির কথা খুব মনে পরছে। একদিনেই কেমন এক টান অনুভব করছে। কিন্তু নওশিন?? এতোটা বছর যাকে ভালোবাসলো তাকেও তো ছাড়তে পারবে না। কিন্তু নিশির তো কোনো দোষ নাই। তাহলে ওকেও বা কেন কষ্ট দিবে?? কিন্তু নেহালতো শুধু নওশিনকেই ভালোবাসে। তাহলে নিশি?? ওকে ডিভোর্স দিয়ে না হয় অন্য কারো সাথে বিয়ে দিয়ে দিবো। এসব ভাবছে নেহাল।

নেহালঃ নাহ একটা ফোন দি। একটু কথা বললে তো আর এমন কিছু হবে না। কিন্তু ওর তো ফোন নেই তাহলে?? আমার রুমের টায় দিবো নাকি?? নাহ থাক। ও তো আমার কেউ না। ওকে কেন ফোন দিবো?? উফফফ না একটা ফোন দিই। ধুহ!!

নেহাল আর না পেরে বাসায় ওর রুমের ফোনে কল দেয়। রিং হওয়ার সাথে সাথেই ফোন রিসিভ হয়ে গেলো। নেহাল থোতভোত খেয়ে গেলো। তাও নিজেকে সামলে বলল,

নেহালঃ হ্যালো। আস্তে করে।

নিশিঃ হ্যালো কে??

নেহালঃ আমি নেহাল।

নিশিঃ ও আপনি।

নেহালঃ হ্যাঁ। তা আমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলে বুঝি??

নিশিঃ আসলে কেনো জানি মনে হলো আপনি হয়তো ফোন দিবেন তাই ফোনের সামনে বসে ছিলাম।

নেহাল নিশির কথা শুনে অনেকটা অবাক আর আবেগি হয়ে যায়।

নেহালঃ দুপুরে খেয়েছো??

নিশিঃ না।

নেহালঃ কেন??

নিশিঃ আপনিওতো হয়তো খাননি তাই আমিও খায়নি।

নেহালঃ কি?? আমি না খেলে তুমি খাবে না??

নিশিঃ না। আপনি খেলে তারপর আমি খাবো।

নেহালঃ এটা কোনো কথা। তুমি খেয়ে নেও। আমি পরে খাবো।

নিশিঃ না না। আগে আপনি খাবেন তারপর আমি। আপনি অসময়ে খেলে অসুস্থ হবেন। তাই এখনি খেতে যান।

নেহালঃ তুমি এমন কেনো?? একদিনেই জোর খাটাচ্ছো।

নিশিঃ আপনার স্ত্রী যে তাই। আর মাও বলেছে আপনার বিশেষ খেয়াল রাখতে। আপনি নাকি খাওয়া দাওয়া নিয়ে একটু অসচেতন তাই।

নেহালঃ আচ্ছা বাবা খাচ্ছি। তুমিও খেতে যাও।

নিশিঃ সত্যিই খাবেন তো??

নেহালঃ হ্যাঁ ৩ সত্যি। রাখি এখন।

নিশিঃ রাখবেন কেনো??

নেহালঃ ও মা খাবো না।

নিশিঃ আচ্ছা আচ্ছা খান তাহলে।

নেহালঃ হুম রাখি।

নিশিঃ এই যে শুনুন…

নেহালঃ হ্যাঁ বলো।

নিশিঃ উমম.. না কিছু না। রাখি।

বলেই রেখে দেয়।

নেহালঃ কি বলতে চেয়েছিলো মেয়েটা?? বললনা কেন!!!

নেহাল ভাবে, আচ্ছা ও আমার জন্য না খেয়ে আছে?? কিন্তু আজ অব্দি নওশিনতো একবারও আমার খাওয়া দাওয়ার খবরই নিলো না। উফফ বড় ঝামেলায় পরলাম। যাই খেয়ে আসি। বউ বলেছে খেতে। হাহা। ধুহ কি যে বলছি না।

বিকেল ৪.২৬ মিনিট,

নেহালের ফোনটা বেজে উঠে।

নেহালঃ হ্যালো নওশিন।

নওশিনঃ আমার সাথে একটু মিট করবে??

নেহালঃ অবশ্যই। ভালোবাসি তোমাকে। করবো না কেন। বলো কোথায়??

নওশিনঃ ক্যাফে ব্রিটেনে চলে আসো।

নেহালঃ আচ্ছা।

বিকেল ৫ টা,

নওশিনঃ হায় বাবু কেমন আছো?? জড়িয়ে ধরে।

নেহালের হঠাৎ কেমন জানি খারাপ একটা ফিল হলো।

নেহালঃ হুম অনেক ভালো। তুমি? আস্তে করে বলল।

নওশিনঃ কি হলো একদিনের বউএর প্রেমে পরলে নাকি?? হাগটা ঠিক মতো করলে না??

নেহালঃ না মানে ক্লান্ততো তাই।

নওশিনঃ ও তাই। দাঁড়াও।

নওশিন উঠে নেহালের অনেক কাছে গিয়ে বসলো।

নওশিনঃ চলো উপরে যাই। তোমার সব ক্লান্তি দূর করে দিবো।

নেহালঃ তোমাকে না বলছি বিয়ের আগে নো ফিজিক্যাল। তাহলে বার বার কেন এমন করো। রাগী কণ্ঠে আর নওশিনকে ছাড়িয়ে।

নওশিনঃ বাহ নেহাল বাহ। এখন বউ কে পেয়ে আমায় ভুলে গেছো না?? তো যাও না বউয়ের কাছেই যাও। এখনে আসলে কেন!!!

নেহালঃ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো। এখানে আসাটা ঠিক হয়নি। তাই বউয়ের কাছেই যাচ্ছি। বাই। অনেক রাগী কণ্ঠে।

নেহাল উঠে চলে যাচ্ছে৷

নওশিনঃ আরে আরে কোথায় যাচ্ছো?? রাগ করো না।

নেহালের কেন জানি এখন নওশিনের সহ্য হচ্ছেনা। আর অনেক রাগ হচ্ছে। তাই কারো কোনো কথা না শুনে সোজা বাসার দিকে রওনা দেয়। অনেক রেগে আছে নেহাল।

সন্ধ্যা ৬.০৭ মিনিট,

নেহাল ওর বাসার দরজার সামনে। বেল দিতেই কেউ একজন দরজা খুলে দিলো। নেহাল যাকে দেখলো তাতে ওর সব রাগ দরজা দিয়েই পালালো। আর নেহালের চোখ যেন…..
চলবে…?

কোনো ভুল হলে জানাবেন।

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ