#এসো_বৃষ্টি_হয়ে (৪) ও (৫)
#writer_sayuri_dilshad
দরজা খোলে সুখনকে দেখতে পেয়ে জড়িয়ে ধরে মায়মুনা। হাসিমুখে বলে,
– তুমি এসেছো নাহলে আমিই তোমাকে কল করতাম।
সুখনের ভালো লাগে না এসব আদিখ্যেতা অথচ একদিন এইগুলোই তাকে টেনেছিলো মায়মুনার দিকে। মায়মুনাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে রুমে ঢুকতেই কপালে কিঞ্চিৎ ভাজ পরে চোখ ছোট ছোট করে বলে,
– কতবার বলেছি সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে থাকবে। পরিষ্কার করতে না পারলে দয়া করে নোংরা করো না কোনোকিছু। এতো নোংরা কেন তুমি?
মায়মুনা মাথা নিচু করে নেয়৷ সে একাই বাসাতে থাকে মাঝে মাঝে সুখন আসে।একটু অলস বলেই কাজ করতে তার ভালো লাগে না। তার মানে এই নয় যে সে নোংরা, সে যথেষ্ট পরিষ্কার করে রাখার চেষ্টা করে। সে বিড়বিড় করে সুখনকে বলে,”শুচিবায়ুগ্রস্ত”।
সুখন বেরিয়ে যেতে লাগলো, এই বাসায় সে আর এক মুহূর্তেও থাকবে না। তার বিরক্ত লাগে মায়মুনার এই অপরিষ্কারচ্ছন্নতা। তাদের সম্পর্কের শুরু থেকে সে এই একটা কথাই বলে আসছে। কিছু করুক না করুক অন্তত যেন বাসাটা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে। কিন্তু কে শোনে কার কথা, মায়মুনা তো মায়মুনায়৷
মায়মুনা সুখনকে বের হতে দেখে বললো,
– বেরুচ্ছ নাকি!
সুখন তার উত্তরে “হু” বলেই বেরিয়ে গেলো। মায়মুনা অবাক চোখে তাকিয়ে রইলো সুখনের যাওয়া পানে। তার চোখ দুটি জলে টইটম্বুর হয়ে গেলো। চোখের পলক ফেলতেই দুইগাল বেয়ে জমে থাকে পানিটা গড়িয়ে পড়লো। দরকারি কথাটাই আজকে বলা হলো না। খুশির খবরটা যতক্ষণ না সুখনকে দিতে পারবে তার শান্তি হবে না। সুখন নিশ্চয়ই অনেক খুশি হবে।খানিকটা অভিমান আর রাগ থেকে বিরবির করে বললো,
“আগে তো এমন ছিলে না। এতোই যখন শুচিবায়ুগ্রস্ত তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন, আমার কাছে এলে কেন? প্রথম বউয়ের কাছেই থাকতে।”
চোখের পানি মুছে মায়মুনা দরজা বন্ধ করলো।মায়মুনা ঠিক করলো আজকে সে পুরো বাসা পরিষ্কার করবে।যত রাতেই হোক।
এলোমেলো পায়ে দরজার সামনে এসে দাঁড়ালো সুখন। এই বাসায় ঢুকতে তার ভালো লাগে না৷ সেদিন বেলির গায়ে হাত তুলার পর থেকেই কেউ তার সাথে কথা বলে না। সে বাসায় যতক্ষণ থাকবে ততক্ষণ কোনো না কোনো কাজের বাহানায় সবাই ব্যস্ত থাকবে। তাকে এড়িয়ে যাবে। বেলি আজকাল তার ছোঁয়া বাচিয়ে চলে। যেন তার স্পর্শ পেলেও পাপ মহাপাপ। কলিং বেল চাপলো সুখন অনেকক্ষণ দাড়িয়ে রইলো। কেউ দরজা খুললো না। আবার কলিংবেলের সুইচটা চাপলো। দরজাটাও খুললো ঠিক একি সময়ে। যেন দাড়িয়েই ছিলে বেলটা টিপার অপেক্ষায়।
দরজাটা খোলে দিয়ে কোনো কথা না বলে সোজা রান্না ঘরে ঢুকে যায় বেলি। সুখন দরজার বাইরেই দাঁড়িয়ে থাকে।বাসার ভিতর ঢুকতে মন চায় না তার। সুখন চোখ বন্ধ করে দম নিয়ে পা বাড়ায়। মনে মনে প্রার্থনা করে যেনো আজকে আর কোনো ঝামেলা না হয়। সোফাতে কুলসুম বেগম নাতি নিয়ে খেলছে। লিখন বাবাকে দেখে হাত বাড়ায় বাবার কোলে উঠার জন্য। সুখন বাজারের ব্যাগটা হাত থেকে নামিয়ে ছেলেকে কোলে নেয়। কুলসুম বেগমের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়ায় না সুখনের চোখ থেকে। রুমে যেতে নিলেই কুলসুম বেগম সুখনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
– তোমার সাথে আমার দরকারি কথা আছে। বসো।
সুখন দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসিমুখে বসে কুলসুম বেগমের সামনের সোফাটায়।
সুখনের মুখে হাসি দেখে কুলসুম বেগমের রাগ হয়। ধমকের স্বরে বলে,
– হাসবা না আমার সামনে। চক্ষুলজ্জা থাকলে আর জীবনেও হাসবা না৷ এইরকম একটা জঘন্য কাজ করার পরেও তোমার হাসি আসে কোত্থেকে! মান সম্মান ডুবিয়ে দিলে এক্কেরে।
সুখন জানে তার মা যখন রেগে যায় তখন মোটামুটি শুদ্ধ ভাবে কথা বলে।তাই ঠোঁটের কোণের ঝুলে থাকা হাসিটা মুছে ফেললো, এই হাসি এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পারবে না। সুতরাং এই অর্থহীন হাসি রেখে লাভ নেই।সুখন ছেলের সাথে খেলতে খেলতে উত্তর দেয়,
– কি বলার জন্য বসতে বলেছো সেটা বলো।
কুলসুম কোনোরকম ভনিতা না করেই বললেন,
– দুপুরে বউমার বাবা আর জেঠা আসছিলো। ওরা জানতে চায় তোমার সিদ্ধান্ত কি! কি ঠিক করছো?
সুখন মাথা তুলে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
– কোন বিষয়ে?
– মশকরা করো আমার সাথে। তুমি জানো না তারা কোন বিষয়ের কথা জানতে চায়। তুমি যে কাজটা করছো তার সমাধান দরকার একটা। তোমার ছেলে আছে, বউ আছে। তাদের রেখে তুমি আরেকটা সংসার পাতিয়েছো।এইভাবে তো চলতে পারে না। তারা বউমা কে নিতে আসছিলো।আমি বউমাকে যাইতে দেই নাই, পায়ে ধরে রাখছি। বলছি আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মিটমাট করে ফেলবো বিষয়টা। তারা রাজি হয়েছে, কিন্তু যদি এতে কাজ না হয় তাহলে তারা আইনের আশ্রয় নিবে স্পষ্ট বলে গেছে।আমি তাদের কথা দিছি যে তুমি ঐ বেডিরে তালাক দিবা। তুমি ঐ বেডিরে তালাক দেও। আমারে আর কত ছোট করবা।
সুখন সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়।
কুলসুম তীক্ষ্ণ স্বরে বলে,
– আমার কথা শেষ হয় নাই। বসো।
সুখন বসলো।
কুলসুম বেগম বললো,
– যদি তুমি ঐ মেয়েকে না ছাড়ো তাহলে আমি তোমার ভাগের সব সম্পত্তি বউমার নামে লিখে দিবো।
সুখন চমকে তাকালো মায়ের দিকে। কিছু বলার জন্য ঠোঁটগুলো নাড়ালেও আওয়াজ বের হলো না গলা দিয়ে।
কুলসুম বেগম বলতে লাগলেন,
– আমার সুমির সাথেও কথা হয়েছে। ও বলেছে ওর কোনো আপত্তি নেই এ ব্যাপারে। তোমার বাবা মারা যাওয়ার আগে আমার নামে যে সব জায়গা লিখে দিয়েছিলো তার সবটাই সুমি আর বউমা পাবে। তুমি কিছুই পাবে না যদি ঐ মেয়েকে না ছাড়ো। এইবার তুমি বিবেচনা করো তুমি কি করবে।
কথাটা শেষ করেই কুলসুম বেগম উঠে রুমে চলে গেলেন। সুখন ও রুমে গেলো।
বেলি রান্নাঘরের দরজার আড়াল থেকে কান পেতে শুনছিলো তাদের কথা। সুখন হ্যা না কিছু বলে নি দেখে কষ্ট হয় বেলির। কষ্ট কমাতে রান্না ঘরের বাসনপত্র গুলো নাড়াচাড়া শুরু করে।
….
মাঝরাতে বেলির ঘুম ভাঙে কারো উষ্ণ স্পর্শে। চোখ খোলে বিষয়টা বুঝতে খানিকটা সময় লাগে। পরক্ষণেই মানুষটাকে ঠেলে দূরে সরাবার চেষ্টা করে। কিন্তু সে দূরে সরবার জায়গায় আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
কানের কাছে মুখ এনে বলে,
— লিখন জেগে যাবে।
বেলি কতক্ষণ সুখনকে সরাবার বৃথা চেষ্টা করার পর বলে,
– দম বন্ধ লাগছে আমার৷ তুমি যাও এখান থেকে।
সুখন আগের থেকেও ফিসফিস করে বললো,
– কোথায় যাবো!
বেলি সুখনকে ধাক্কা দেয় সুখন হালকা একটু সরে। বেলি উঠে বসে বলে,
– তোমার যাওয়ার মতো জায়গার তো অভাব নেই।সেইখানেই যাও।
সুখন উঠে বেলিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আবার বেলি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে। সুখন এবারে আাগের থেকেও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলে,
– মাফ করে দাও, বেলি। ভুল হয়ে গেছে আমার। আমাকে ভুল শোধরাবার সু্যোগ দাও। প্লিজ বেলি। প্লিজ
বেলি সুখনের কথায় একটু ভুলে। তার সংসার সে আগলে রাখবে, আগের মতো ভালোবাসায় ভরপুর থাকবে এইতো সে চায়। এটাই তো তার স্বপ্ন। তাও বেলির পুরো রাগ পরলো না সে সুখনের বাধন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য চেষ্টা করতে করতে বললো,
– আগে ভুল শোধরাবে তারপর কাছে আসবে। আগে ঐ নোংরা মহিলাকে ডিভোর্স দাও তারপর।
সুখন বেলির কাঁধে চুমু দিয়ে বললো,
– তুমি যা বলবে আমি তাই করবো। আমরা কি পারি না আগের মতন হতে। সব আগের মতন হবে। আমি চাই আমরা আবার আগের মতন সুখে থাকি। তুমি, আমি, লিখন, মা আমরা সবাই। আমি সব ভুল শোধরে নিবো।
বেলি আবার স্বপ্ন দেখে সুখনের কথায়। মনে আশা জাগে। রাগ গলে অভিমান হয়, ঠোঁট ফুলিয়ে কেঁদে দেয়।
সুখন বেলিকে তারদিকে ঘুরিয়ে নেয় চোখের পানি মুছতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে৷ ব্যাকুল কন্ঠে বলে,
– কাঁদছ কেন?
কান্না জড়িত কন্ঠে বলে,
– তুমি কেন এই কাজটা করলে বলো? কেন করলে এটা?
সুখন বেলিকে জড়িয়ে ধরে। বেলি বাঁধা দেয় না আর। সুখনের বুকেই অশ্রুবিসর্জন দেয়।
সুখন বেলির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
– আমি ভুল করেছি বেলি। আমাকে মাফ করে দাও। ভুল করে মাফ চাইলে তো আল্লাহ ও মাফ করে দেয়৷
প্লিজ।
বেলি সুখনের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,
– তাহলে তুমি কথা দাও তুমি ঐ মেয়ের সাথে আর কোনো যোগাযোগ রাখবে না। কালকেই উকিলের কাছে যাবে ডিভোর্সের জন্য। লিখনকে ছুয়ে কথা দাও।
সুখন লিখনকে ছুয়ে কথা দিলো। বেলি সব রাগ অভিমান ভুলে সুখনের কাছে গেলো। ভুলে গেলো সব, বেলির গায়ে হাত তুলা, বেলিকে ঠকানো সব। যেন আবার নতুন থেকে শুরু হলো।
তারপর গোটা একটাদিন কেটে যায় আগের স্বাভাবিক দিনের মতোই। কুলসুম বেগম বউমার মুখে সুখন ঐ মেয়েকে ডিভোর্স দিবে শুনে তৎক্ষনাৎ নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর কাছে শোকরানা আদায় করলেন।অবশেষে আল্লাহ তার কথা শুনেছে। বেলি তার পরিবারকেও ফোন দিয়ে বলে এই ঘটনা এবং সাথে বলে সুখনের দিকে নজর রাখতে। বেলির পরিবার সুখনকে নজরে নজরে রাখতে দ্বায়িত্ব দেয় পল্টুকে। পল্টু সারাদিন শেষে বেলি ফোন দিয়ে বলে সব স্বাভাবিক। সে দুলাভাইকে উকিলের সাথে কথা বলতে দেখেছে।
সুখন বাসা এলে বেলি জিজ্ঞেস করে সে উকিলের সাথে কথা বলেছে কিনা। সুখন উত্তরে হ্যা বলে। বেলি আরও আশ্বস্ত হয়। যাক সুখন তাহলে সত্যিই তার ভুল শোধরে ফেলতে চাইছে। তার খুশি খুশি লাগে। অবেশেষে সে ঐ ডাইনীর হাত থেকে তার স্বামীকে আনতে পেরেছে।
আরো দুইদিন কেটে যায়৷ সুখন স্বাভাবিক আচরণ করছে। প্ল্যান করছে সবাই মিলে কোথাও ঘুরতে যাবে।
বেলির পরিবার বেলিকে সাবধান করে সুখনের মিষ্টি কথায় ভুলতে না, চোখে চোখে রাখতে। বেলির অভিমান হয় তার পরিবারের উপর। ওদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করে যে সুখন ঐ মেয়েকে ছেড়ে দেবে এসবের দরকার নেই।
চতুর্থদিনের সন্ধ্যাবেলায় রাতের রান্না বসিয়ে বেলি রুমে আসে লিখন কি করছে দেখতে। দেখে লিখন বিছানার একদম কিনারায় এসে শুয়ে ঘুমাচ্ছে। একটু নড়লেই পড়ে যাবে এমন অবস্থা। বেলির রাগ হয় সুখনের উপর রুমে থেকে করছেটা কি। বেলকনি থেকে কারো ফিসফিসানির আওয়াজ পায় বেলি। লিখনকে বিছানার মাঝ বরাবর শুইয়ে দিয়ে এগিয়ে যায় বেলকনির দিকে।
সুখন খুব মিষ্টি করে কার সাথে যেন কথা বলছে। বেলির ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কার সাথে কথা বলে ও এমন করে। বেলি আরও একটু এগুলো যেন কথাগুলো আরও ভালোভাবে শুনতে পারে।
এবার সে স্পষ্ট শুনলো সুখন বলছে,
– দেখো মায়মুনা বুঝার চেষ্টা করো। আমার পক্ষে এখন আসা সম্ভব না। আমি যদি এখন আসি তাহলে বেলি আমাকে সন্দেহ করবে।
সুখন একটুক্ষণ নিরব থাকে। ওপাশে থাকা মানুষটা কি বলছে বেলি শুনতে পায় না। সে উদগ্রীব হয়ে থাকে সুখন কি বলছে তা শোনার জন্য। বেলির হাত পা কাপছে রাগে থরথর করে।
সুখন আবার বলতে থাকে,
– মায়মুনা তুমি বোঝার চেষ্টা করো। আমি আসবো তোমার কাছে। কয়েকটা দিন সময় দাও। বেলিকে বুঝিয়ে আমি আসবো।
ওপাশ থেকে কি যেন বলে৷ সুখন তার প্রত্ত্যুরে বলে,
– অবশ্যই আমি তোমাকে ভালোবাসি।
বেলি আর সহ্য করতে পারে না। সুখন হাত থেকে মোবাইলটা ছিনিয়ে নেয়। সুখন আকস্মিকতায় হকচকিয়ে যায়। বেলি মোবাইল কানে নিয়ে হ্যালো বলতে বলতেই রুমের দিকে পা বাড়ায়। ওপাশ থেকে কোনো আওয়াজ আসে না।একদম নিরব হয়ে গেছে। বেলি মোবাইল কান থেকে সরিয়ে একবার দেখে নেয় কেটে দিয়েছে কি না। নাহ্ কাটে নি লাইনে আছে।
বেলি আবার ফোন কানের কাছে নিয়ে বলে,
– হ্যালো, কথা বলছিস না কেন?
সুখন বেলির পিছু পিছু আসে বলে,
– বেলি তুমি যা ভাবছো তা নয়।
বেলি রুম থেকে ডাইনিং রুমে আসে যাতে সুখন থাকে বিরক্ত করতে না পারে।
এবার ওপাশ থেকে উত্তর আসে,
– আমি আপনার সাথে কথা বলতে চাই না। আমি আমার স্বামীর সাথে কথা বলতে চাই।
বেলি রাগ যেন সপ্তমে উঠলো এই কথা শুনে। সুখনের দিকে তাকিয়ে বললো,
– স্বামী!তোর স্বামী মানে! বাজারি মেয়েদের আবার স্বামী হয় নাকি। অবশ্য চরিত্রহীনদের জন্য চরিত্রহীনেই জোটে।
ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে দেয়। বেলি ফোনটা ফ্লোরে ছুড়ে মারে।বেলির মাথা ঠিক থাকে না সে সুখনকে বিশ্রী ভাষায় গালি দিতেই সুখন বেলির গালে চড় বসিয়ে দেয়। বেলি ব্যালান্স রাখতে পারে না। লুটিয়ে পরে ফ্লোরে। হাতের কাছে একটা বড় সিলভারের গামলা টা তুলে নেয়। কি যেন একটা কাজের জন্য এনেছিলো। সেটা দিয়েই সুখনকে এলোপাতাড়ি পিটানো শুরু করে। সুখন হতবাক হয়ে যায়, এ কি রূপ বেলির
চলবে,
( ভুলত্রুটি মাফ করে দিবেন)
#এসো_বৃষ্টি_হয়ে (৫)
#writer_sayuri_dilshad
কুলসুম বেগম ওদের চিৎকার চেচামেচিতে বিছানা থেকে উঠে আসেন।ঘটনাটা বুঝতে একটু সময় লাগে। দৌড়ে এসে ছেলে বউমা কে থামানোর চেষ্টা করেন। বেলি হাত থেকে গামলাটা কেড়ে নিয়ে বলেন,
– করো কি তোমরা! কি হইছে? স্বামীরে কেউ এমনে মারে! পাপ হইবো।
বেলির দুঃখের মাঝেও হাসি পায়। আবার রাগও লাগে। বলে,
– চিন্তা করবেন না আম্মা। আপনার ছেলের চাইতে আমার পাপের সংখ্যা কম আছে।
কুলসুম বেগম একবার সুখনের দিকে তাকায় তারপর আবার বেলির দিকে তাকিয়ে বলে,
– কি হইছে? আমারে বলো।
বেলি কান্না পায় ও হাউমাউ করে কেঁদে দিয়ে বলে,
– আপনারা আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলেন। আপনার এই জানোয়ার মিথ্যাবাদী ছেলে আমারে মিথ্যা আশা দিয়ে ঐ বাজারি মেয়েটার সাথেও সম্পর্ক রাখছে। তার সাথে প্রেমালাপ করে। আমার ছেলেটার মাথায় হাত রেখে ও কসম কাটছিলো।
কুলসুম বেগম স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে থাকে। কিছু বলতে পারে না।
বেলি আর দাঁড়িয়ে থাকে না। মেইন দরজা খোলে দৌড়ে বেরিয়ে যায়। আর এই বাসায় থাকবে না সে। আর সুখনের মিথ্যা আশায় ভুলবে না। কুলসুম বেগম বেলির পিছন পিছন দৌড়ে যায়। বলতে থাকে,
– বউমা যাও কই। দাঁড়াও, একলা একলা যাও কই।
বেলির কানে কুলসুম বেগমের গলার আওয়াজ পৌঁছায় না। ফুটপাত দিয়ে খালি পায়ে দ্রুতগতিতে হাঁটতে থাকে। কুলসুম বেগম একমত দৌড়ে গিয়েই বেলিকে ধরে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
– মা, কই যাও এত রাতে। পাগলামি কইরো না৷ বাসায় চলো।
বেলি নিজের হাত কুলসুম বেগমের থেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে,
– না আম্মা আমি আর ঐ বাসায় যাবো না। আপনার ছেলে ঐ নষ্টা মেয়েরে বাসায় এনে রাখুক।
– মা, ঐ মেয়েরে ও বাসায় তুলতে পারবে না। আমি তোমারে কথা দিলাম৷ আমার সব সম্পত্তি সব কিছু আমি তোমার নামে লিখে দিবো। তুমি চলো আমার সাথে।
বেলি চোখ মুছতে মুছতে বলে,
– না, আমি যাবো না। আপনার বিষয় সম্পত্তির আমার কোনো দরকার নাই। আমার সবচেয়ে বড় সম্পত্তিই তো আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমার আর কিছুর দরকার নাই।
বেলি একটা সিএনজি থামিয়ে তাতে উঠে পড়ে। কুলসুম বেগমের কেনো অনুনয় অনুরোধ ঠিকলো না। সিএনজি একটা শব্দ তুলে হারিয়ে গেলো আরও গাড়ির ভিড়ে। কুলসুম বেগম সিএনজিটার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। আশেপাশের মানুষগুলো এতক্ষণ ওদের দিকে তাকিয়ে কি হয়েছে বুঝার চেষ্টা করছিলো। কিছুটা জটলা মতো বেধে গিয়েছিলো। তারা প্রত্যেকেই আবার যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হলো।
কুলসুম বেগম বাসায় ফিরে দেখলেন সুখন সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে। সুখনকে দেখে কুলসুম বেগমের রাগ হয়, ঘৃণা জন্মে। রাগে মুখে অনেকটা থুথু এসে জমা হয়। তিনি থুথু টা নিক্ষেপ করলেন ফ্লোরে। “থু” শব্দটা বেশ জোরেই হলো। সুখন মাথা তুলে তাকালো। বললো,
– বেলি আসে নাই।
কুলসুম বেগম রাগে বলেন,
– বেলি আসার মতো কোনো পথ তুমি রাখো নাই। ও বলেছে ও আর আসবে না। তুমি এখন এই মুহূর্তে আমার বাসা থেকে বেরিয়ে যাবে। যেদিন বউমা এই বাসায় আসবে সেইদিন তুমি এই বাসায় ঢুকতে পারবে এর আগে না। বের হও এখনি।
সুখন বোকা বোকা চোখে বলে,
– আমি তো আপনার ছেলে! আমি আমার সাথে এইরকম করতেছন কেন?
কুলসুম বেগম রেগে বলে,
– দরকার নাই আমার এমন ছেলের। এমন ছেলের থেকে ছেলে না থাকাই ভালো। দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল অনেক ভালো। যাও বের হও। যেদিন বউমা এই বাড়িতে আসবে ঐ দিন আসবে এই বাড়িতে …
কুলসুম বেগমের কথা থেমে যায় বাচ্চার কান্নার আওয়াজে। এতক্ষণ লিখনের কথা মনে ছিলো না কারো। লিখন নিজের কথা জানান দিতেই সুখন আর কুলসুম বেগম দৌড়ে যান লিখনের কাছে। বিছানায় বসে চোখ বন্ধ করে কাঁদছে লিখন। বাবা আর দাদিমাকে দেখেও সে বারবার বলে যাচ্ছে “মা মা”। সুখন দৌড়ে গিয়ে কোলে নেয় লিখনকে। বলে,
– আসতেছে আম্মু। তুমি চুপ করো বাবা।
লিখন চোখ ভর্তি পানি নিয়ে তাকিয়ে থাকে বাবার দিকে। সুখন লিখনকে নিয়ে মেইন দরজার দিকে এগিয়ে যায়। কুলসুম বেগম পিছন থেকে বলে,
– কোথায় যাচ্ছো ওকে নিয়ে।
সুখন থামে না সামনের দিকে পা ফেলতে ফেলতেই বলে,
– তুমিই তো বলেছো বেরিয়ে যেতে বেলি যতদিন না আসে ততদিন আমি থাকতে পারবো না এখানে।
কুলসুম বেগম থতমত খেয়ে বলে,
– হ্যা বলেছি। শুধু তোমাকে বলেছি। লিখনকে নিয়ে যেতে বলি নি। ও থাকবে, আমি কালকে ওকে নিয়ে যাবো ওর মার কাছে।
সুখন একেবারে দরজার সামনে চলে গিয়েছিল। সে বললো,
– না, ও ওর মার কাছে যাবে না। যে মা আড়াই বছরের ছেলে রেখে বেরিয়ে যেতে পারে তার কাছে আমি আমার ছেলে দিবো না৷
কুলসুম বেগম দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,
– ওর মা মনের সুখে বাসা থেকে বেরিয়ে যায় নাই। না তার কোনো প্রেমিকের সাথে পালিয়ে গেছে। সে কেন এবং কি মানসিক অবস্থায় বাসা থেকে বেরিয়েছে সেটা তুমিও জানো।
সুখন মাথা নেড়ে বললো,
– না, আমি জানি না৷ বাসা থেকে বেরিয়ে যাবার মতো তেমন কিছু হয় নি। আর কে জানে হয়তো প্রেমিকের কাছেই গেছে। তোমাকে তো বলে যায় নি কোথায় যাবে। গেছে বলে!
কুলসুম বেগম সুখনের দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয় এমন ছেলে জন্ম দেওয়ার কারণে। নিজের ছেলের মন মানসিকতা চিন্তাধারা যে নিম্ন সেটা তিনি জানতেন।কিন্তু এতটাও যে জঘন্য সেটা তিনি কল্পনাও করতে পারে নি। নিজের দোষ ঢাকার জন্য সে বেলির উপর অপবাদ চাপিয়ে দিতে চাইছে। তিনি এগিয়ে যান লিখনকে রেখে দেওয়ার জন্য। কুলসুম বেগম লিখনকে রেখে দেওয়ার জন্য কাড়াকাড়ির এক পর্যায়ে সুখন লিখনকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। কুলসুম বেগম কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে ঐ জায়গাতেই দাঁড়িয়ে থাকে। তার ছেলে এত খারাপ।
রাত দশটা বাজে। পান্না বেগম খাবার টেবিল সাজাচ্ছেন। সবাই বাজার থেকে ফিরছে একে একে। হাত মুখ ধুয়েই খেতে বসবে। আহমেদ শেখ হাত মুখ ধুয়ে খাবার টেবিলে বসলো। ভাত মাখিয়ে লোকমাটা মুখে দিতেই মোবাইলটা বেজে উঠলো। আহমেদ শেখ বিরক্তিতে মুখ দিয়ে “চ” শব্দ উচ্চারিত হলো। তিনি বিরবির করে বলেন,
– খাইতেও দিবি না শান্তিতে।
মোবাইলটা বের করে নামটা দেখে কপাল কুচকে পান্না বেগমকে উদ্দেশ্য করে বললো,
– বেয়াইন কল দিছে। কি ব্যাপার বলো তো!
পান্না বেগমের মনের ভিতর খচখচানি মাথা নাড়া দিয়ে উঠলো। তিনি বললেন,
– তাড়াতাড়ি কলটা ধরো। দেখো কি বলে!
আহমেদ শেখ মোবাইলটা কানে ধরে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলেন। শুধু কপালের ভাজগুলি আরো গভীর হলো। কুলসুম বেগমের পুরো কথা না শুনেই তিনি কল কেটে দিলেন। প্লেট ভর্তি ভাতেই তিনি হাত ধুয়ে বেরিয়ে গেলেন। পিছন থেকে পান্না বেগম ক্ষীণ গলায় একবার বললেন,
– কই যাও। বলে যাও।
এরপর আর কিছু বলতে পারলেন না তিনি জানেন তার বেলির কিছু হয়েছে। পিছু ছুটলেন তার স্বামীর।
রহমত শেখ আর পল্টু বাজার থেকে সবে বাড়িতে পা রাখলো। দুজনে আলোচনা করছিলো সামনের ভোট নিয়ে। আহমেদ শেখকে বেরুতে দেখে পল্টু জিজ্ঞেস করলো,
– কাকা কই যাও।
আহমেদ শেখ চিন্তিত গলায় বললেন,
– সুখনের সাথে বেলি ঝগড়া করে বাসা থেকে বেরিয়ে এসেছে।ওরা জানে না বেলি কোথায় গেছে। ওর শাশুড়ী ফোন করেছিলো আমাদের এখানে এসেছে কিনা জানতে। বড় চিন্তা করছেন মহিলা। আমি যাই গিয়ে দেখি বেলি কোথায় আছে।
শেষের কথাটা আহমেদ শেখ ক্লান্ত গলায় বলে বেরিয়ে গেলেন। তার মেয়ের জীবনটা এমন কেন হয়ে গেলো। বেলির জন্য চিন্তায় তিনি ঘুমাতে পারেন না আজকাল। একটা মাত্র মেয়ে তার, তার কপালে কেন এতো দুঃখ।
রহমত শেখ আর পল্টু ও গেলো আহমেদ শেখের পিছন পিছন। কিছুদূর এগোতেই দেখতে পেলো কেউ একটা যেন তাদের দিকেই আসছে।
পল্টু একটু এগিয়ে এসে বললো,
– কাকা, বেলি আপা না এটা।
তিনজনেই দৌড়ে গেলেন বেলির কাছে। বেলি তাদেরকে দেখে কান্নায় ভেঙে পড়লো, বললো,
– আব্বা, আমার সব শেষ।
আহমেদ শেখ মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো,
– বাড়ি চল।
রহমত শেখ বেলির দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলেন বেলির পায়ে জুতা নেই।দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের জুতাগুলো খোলে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– পায়ে দে এগুলা।
পল্টু দূর থেকে তাকিয়ে দেখে বেলিকে। সুখনের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে তার। ইচ্ছে করছে রামদা দিয়ে কুপিয়ে ওকে ঠুকরো ঠুকরো করে দেয়। তার বেলি আপাকে কষ্ট দেওয়া। সে মনে মনে ঠিক করে নেয় তার বেলি আপার জন্য কিছু করতে হবে। এখন বেলি আপার ঋণশোধ করার সময়।
বেলিকে নিয়ে বাড়িতে পৌঁছাতেই পান্না বেগম কেঁদে এসে বেলিকে জড়িয়ে ধরেন। কিছুক্ষণ কান্না করার পর। কি যেন খোঁজতে থাকে।
আহমেদ শেখ জিজ্ঞেস করে,
– কি খোঁজো!
পান্না বেগম বেলিকে জিজ্ঞেস করে,
– বেলি লিখন কই?
বেলির যেন হুস ফিরে মায়ের প্রশ্নে। রাগের মাথায় সে তখন বাসা থেকে বেরিয়ে আসে লিখনকে নিয়ে আসতে মনে ছিলো না। সে ব্যস্ত হয়ে উঠে লিখনের জন্য। পল্টু বেলিকে আশ্বস্ত করে সে নিয়ে আসবে লিখনকে, এবং এখনেই রওনা হবে। মনে মনে পল্টু ঠিক করে নেয় আজকে সে সুখনকে শায়েস্তা করবে। গ্রামের আরও একজনকে সাথে নিয়ে মোটরসাইকেলে রওনা হয় শহরের দিকে। মাঝপথে গাড়ি থামাতে হয় রহমত শেখের কল আসাতে। পল্টু মোটরসাইকেল ঘুরিয়ে আবার বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
মায়মুনা বেশ বিরক্ত নিয়ে দেখছে লিখনকে, তার সতীনের ছেলে এখন তার বাসায়। তার রাগ লাগছে খুব। সুখন কেনো তার ছেলেকে নিয়ে এখানে আসবে। খুব কর্কশ গলায় বললো,
– এই বাবু, এই ঘুমাও তো। রাত তো কম হয় নাই। ঘুমাও, নাহলে জুজু বুড়ি আসবে।
লিখন কাঁদে এবারে। মায়মুনা লিখনের কান্না দেখে ভালো লাগে৷ সে লিখনকে চিমটি কাটে। লিখন আরও জোরে কাঁদতে থাকে। মায়মুনার হাসি পায়।
বেলি সারারাত বারান্দায় বসে থাকে। লিখনের জন্য চিন্তা হয় তার। সুখন নাকি লিখনকে নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে। সে তার ছেলেকে নিয়ে কোথায় গেলো! যদি কোনো ক্ষতি করে ফেলে তার। নিজের প্রতি রাগে বেলির মাথা যন্ত্রণা হয়। কেন সে লিখন কে ফেলে এলো তা নিয়ে এখন তার আফসোস হচ্ছে। যদি সুখন লিখনকে না দেয় তাহলে কি করবে সে। লিখনেই তো তার শেষ সম্বল। সুখন লিখনকে নিয়ে কোথায় যেতে পারে। বেলি একবার ভাবে।
পরদিন সকালেই পল্টুকে নিয়ে রওনা হয় বেলি গন্তব্য মায়মুনার বাসা। যদিও বেলির পরিবার বলেছিলো তারাই এনে দিবে লিখনকে কিন্তু বেলির মন মানছিলো না তাই সে নিজেই এলো। বার কয়েক কলিংবেল চাপতেই এসে দরজা খোলে দেয় মায়মুনা। বেলিকে দেখে চমকায় সে।
বেলি ব্যস্তভাবে জিজ্ঞেস করে,
– সুখন এসেছে এখানে।
মায়মুনা তাকে পাল্টা প্রশ্নে জিজ্ঞেস করে,
– তাকে আপনার কি দরকার আপা।
– আমার ছেলেকে নিয়ে সুখন কই যেন চলে গেছে।
মায়মুনা বলে,
– আপনি তো আপনার ছেলেরে রেখে চলে।গিয়েছিলেন।
পল্টু এতক্ষণ অধৈর্য হয়ে শুনছিলো ওদের কথা। এবারে সে মায়মুনাকে বললো,
– এই এই, সরেন তো। আজাইরা প্যাচাল পারার জন্য আসি নাই এখানে।
বলেই মায়মুনাকে একমত ঠেলেই ভিতরে ঢুকে গেলো। মায়মুনার হইচই তে সুখন বেরিয়ে আসলো। পল্টু সুখনে উদ্দেশ্য করে বললো,
– দুলাভাই, লিখনরে নিতে আসছি আমরা।
সুখন বেলি আর পল্টুর দিকে তাকিয়ে বললো,
– আমার ছেলে আমি দিবো না।
পল্টু জিজ্ঞেস করলো,
-কেন দিবেন না?
– কারণ কোনো বাজে মেয়েছেলের কাছে আমার ছেলে দিবো না। তোমার বোনকে আগে জিজ্ঞেস করো সে কালকে রাতে তার কোন প্রেমিকের বাসায় ছিলো।
বেলি একটু চমকালো। পল্টু একবার বেলির দিকে তাকালো বেলি মুখ ঘুরিয়ে নিলো অন্যদিকে। এর অর্থ পল্টু জানে। সে শার্টের হাতা গুটিয়ে সুখনের নাক বরাবর একটা ঘুষি বসিয়ে দেয়। নাক দিয়ে গড়িয়ে রক্ত পড়তে লাগলো সুখনের। মায়মুনা চাপা আর্তনাদ করে উঠলো। পল্টু চোখ বড় বড় করে মায়মুনার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটে আঙুল দিয়ে বললো,
– কেয়ামত করে দিবো একদম আওয়াজ করলে। পাশের রুম থেকে লিখনের কান্নার আওয়াজ আসছে। বেলি ছোটে গেল পাশের রুমে।
চলবে,