এমনই শ্রাবণ ছিল সেদিন পর্ব-০৭

0
18

#এমনই_শ্রাবণ_ছিল_সেদিন
#ইসরাত_জাহান_দ্যুতি

৭.
কাজ আর পড়াশোনা সব মিলিয়ে দিনগুলো বেশ ভালোই যায় খেয়ামের। বাবা মাসে একবার করে হলেও আসেন তাকে দেখতে। বাড়িতেও সে মাস শেষে টাকা পাঠাতে পারে। এত কিছুর মাঝে খেয়াম সব কিছু নিয়ে খুশি হলেও কিছু বিষয় নিয়ে সে চিন্তিত থাকে। প্রথম চিন্তা তার, রাত হলে এখনো তাকে কেউ একজন ফলো করে। কিন্তু সে হোস্টেলে ফেরার পর সেই ব্যক্তিটির উপস্থিতি আর পায় না। রাস্তাতে যতবারই সে তাকে দেখার জন্য পিছু ফেরে আর ততবারই সে একগাদা পথচারীদের দেখতে পায়। তাদের মাঝে সেই ব্যক্তিটিকে আর খুঁজে পায় না। দ্বিতীয় চিন্তা, তার যেমন কাজ তাতে নিশ্চয়ই পঁচিশ হাজার টাকার মতো বেতন পাওয়া কাজ নয়। এটা সত্যি, তাকে রোদ, বৃষ্টি সব কিছুর মাঝেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করতে হয়। কিন্তু তারপরও কি এত টাকা তার এই কাজের মূল্য? টাকা পয়সার বিষয় নিয়ে সে কোনো সময়ই কারও সঙ্গে আলোচনা করে না। এমনকি তার কাছের বান্ধবী রাহিকেও জানায় না তার বেতন কত। কিন্তু এই বিষয়ে সে সকল লজ্জা ভেঙে একদিন তারা নামের সহকারীটির কাছে জিজ্ঞেস করেছিল তার বেতন কত। সেও তার মতোই বেতনের বিষয় গোপন রেখেছে বলে তাকে জানায়নি। আর সর্বশেষ চিন্তা তার তরঙ্গকে নিয়ে। এর মাঝে আরও তিনবার তরঙ্গকে সে ছোটো-বড়ো কথা শোনাতে বাধ্য হয়েছে। এ জন্য আবার তাকেও মেহফুজ, আমিন এবং অন্যান্য সহকারীর কাছে বকা খেতে হয়। তবে তার ভয় হয়। কবে যেন এই কারণে তাকে কাজ থেকে বের না করে দেয় মেহফুজ।

একদিনের ঘটনা। সংলাপ অনুযায়ী সেদিন কলাকারদের অঙ্গভঙ্গি ঠিক খাপ খাচ্ছিল না, তাদের অভিনয়ের মধ্যে গড়মিল হচ্ছিল। এমনকি তরঙ্গ নিজেও অভিনয়ের মধ্যে গড়মিল করে ফেলছিল বারবার। স্ক্রিপ্ট সুপারভাইজার আবির এসব ঠিকঠাক করে সামগ্রিক ক্লিপটি মেহফুজকে দেখায়। মেহফুজ ক্লিপটি সম্পূর্ণ দেখার পর আবিরকে বলেছিল, ‘শট আবার নিতে হবে। পরবর্তী পর্বে এটা যাবে না।’

এতে অন্যান্য কলাকার নতুন করে আবার শট দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলেও তরঙ্গ কোনোভাবেই কোনো শিডিউল দেয় না। চলচ্চিত্র প্রযোজক ইমরান কয়েকবার তার কাছে গিয়েও ফিরে ফিরে আসে। কোনো ডেটই দিতে পারে না তরঙ্গ। শেষমেশ মেহফুজ নিজে তাকে ফোন করে। কতক্ষণ তাদের মাঝে বাকবিতণ্ড চলে। তারপর তরঙ্গ শ্যুটিঙের ডেট দেয়। মূলত তরঙ্গ সব সময় চায় মেহফুজ তার কাছে ছোটো হোক। এ কারণেই সে ইচ্ছা করেই সব কিছুতেই বেয়াড়াপনা করে। ব্যক্তিগতভাবে সে মেহফুজকে একদমই সহ্য করতে পারে না। সেদিন স্পটে আসার পর খেয়াম অতি দ্রুতই তার কস্টিউম রেডি করে তার সামনে আনে। কস্টিউমের মাঝে হঠাৎ একটু ময়লা দেখতে পায় খেয়াম। তরঙ্গও দেখতে পায় তা। কিন্তু তরঙ্গের থেকে অভিযোগ আসার আগেই খেয়াম তা পরিষ্কার করে আনে। তরঙ্গ কস্টিউমটা ধরে কয়েকবার এদিক ওদিক দেখে বলে ওঠে, ‘এত সস্তা জিনিস পরে তো আমি শট দিতে পারব না। আমার আলাদা একটা ইমেজ আছে। আর সবার মতো আমাকেও যা খুশি দিয়ে চালিয়ে দিলেই হবে?’
এ নিয়ে সে ঝামেলার সৃষ্টি করে বসে। তখন খেয়াম না চাইতেও তাকে বলে বসে, ‘কিন্তু স্যার আপনার গায়ের সেম ম্যাটেরিয়ালের ফতুয়া আমি ফুটপাতে ওই যে ভ্যানের ওপর বিক্রি করে যারা তাদের কাছে দেখেছি। সেখানে এটার দাম বোধ হয় বলতে শুনেছিলাম দু’শ কি তিন’শ। আপনি নিশ্চয়ই বড়ো কোনো মল থেকে কিনেছেন? এ জন্যই আপনার থেকে দামটা বেশি নিয়েছে।’

এরপর তরঙ্গের ভয়ানক দৃষ্টির চেহারাটা ছিল সত্যিই দেখার মতো। খেয়াম চাইছিল না এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে। কিন্তু সে সত্যিই তরঙ্গের পোশাকের একই মানের পোশাক অনলাইনেও সস্তা দামে দেখেছে আর ছোটখাটো দোকানেও। তরঙ্গের এই অতিরিক্ত দাম্ভিকতা খেয়াম যেন কোনোভাবেই হজম করতে পারে না। এ কারণেই মুখ থেকে তার আপনাআপনিই বেরিয়ে আসে তরঙ্গের উদ্দেশ্যে বলা কথাগুলো। তার বিনিময়ে অবশ্য সেদিনও আবার তরঙ্গ যা তা বলে অপমান করেছিল তাকে। সেদিন অন্যান্য সহকারীও তাকে রাগারাগি করেছিল। যার জন্য খেয়াম পরবর্তীতে আর কোনো উত্তর দেয়নি তরঙ্গকে। এখন অবধি তার কাজটা টিকেই আছে মেহফুজের জন্য।
***

বড় ছাতার নিচে বসে আছে তরঙ্গ। আর তার সামনে বসে আছে তারিন। গরমে তারিনের মুখের মেকআপ বারবার খারাপ হয়ে যাচ্ছে। হৃদয় তখন থেকে তার মেকআপ ঠিক করে যাচ্ছে। সেদিকে যেন তার একেবারেই হুঁশ নেই। সে দেখে চলেছে দূরে দাঁড়িয়ে ব্যস্ত ভঙ্গিতে কথা বলা মেহফুজকে। তরঙ্গ আড়দৃষ্টিতে তারিনের দৃষ্টি লক্ষ করে মেহফুজের দিকে তাকাল। মেহফুজের পরনের ডার্ক ব্লু কালার টি শার্ট ভেদ করে তার ব্যায়ামপুষ্ট শরীরটার গঠন হালকা ভেসে উঠেছে। রোদের মধ্যে তার ফর্সা গালটার লালচে ভাব তরঙ্গের নজরেও পড়ছে স্পষ্টভাবে। তরঙ্গ তাকে সহ্য করতে না পারলেও সে অস্বীকার করতে পারে না, মেহফুজ নিঃসন্দেহে একজন আকর্ষণীয় চেহারার যুবক। টিভির পর্দার হিরোর থেকেও বরং বেশিই। মেয়েদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার মতো ক্ষমতাই শুধু নয়, তার হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতাও আছে তার বাবা আর তার মৃত ভাইয়ের সুবাদে। তরঙ্গ শুনেছে, মেহফুজের বাবা অসুস্থ হওয়ার পর তার পরিবর্তে মেহফুজকে রাজনৈতিক দল থেকে আহ্বান জানিয়েছে এবং এখনও জানায় তাদের সঙ্গে যুক্ত হতে। কিন্তু মেহফুজ সেদিকে একদম আগ্রহী নয়। তার ওপর সে ছিল এক সময় সেনাবাহিনীর একজন কমিশন্ড অফিসার। সব মিলিয়ে তার মতো ছেলের কাছে তরঙ্গ নেহাৎই তুচ্ছ। তবুও যেন সে নিজেকে মেহফুজের পাশে বিশেষ কিছু প্রমাণ করতে চায় বারবার। মনে মনে সে অনেক বেশিই হিংসা করে তাকে। আর তাই তো সে কোনো কারণ ছাড়াই মেহফুজকে সহ্য করতে পারে না। এই যে এখন যেমন তারিন বিশেষ নজরে মেহফুজের দিকে চেয়ে আছে, মেহফুজ তা বারবার লক্ষ করেও তা গুরুত্বহীনভাবে এড়িয়ে নিজের কাজেই মনোনিবেশ করে যাচ্ছে। এমনটা তরঙ্গ আজ নতুন দেখছে না। তারিনের মতো আরও অনেক বড়ো বড়ো অভিনেত্রী, মডেলকেও দেখেছে। তারা নিজেদের ব্যক্তিত্ব খুইয়েও কতবার যেচে পড়ে প্রস্তাব দিয়েছে মেহফুজকে। সেটে আসলেও মেয়ে কর্মীগুলোর মাঝে সে আলোচনা হতে শুনেছে, ‘কীসের হিরো? আমাদের মেহফুজ স্যারকে কোনোদিক থেকেই টেক্কা দেওয়ার মতো ক্ষমতাবান কোনো হিরো এখনো পয়দা হতে দেখলাম না।’

এসব শোনার পর তরঙ্গের ইচ্ছা করে সেই সব মেয়েদের সামনে গিয়ে বলতে, ‘তোদের স্যার আদৌ স্বাভাবিক নাকি ইম্পোটেন্ট আগে তা যাচাই কর।’

এমনটা একদিন সে আরিশা নামের একজন জনপ্রিয় মডেলকে বলেও বসেছিল। আরিশা সেদিন তার এ কথায় রেগে গেলে তরঙ্গের উত্তর ছিল, ‘আজ অবধি শুনেছ আরহাম মেহফুজের বিছানায় কখনো কোনো মেয়ে জায়গা পেয়েছে? আরে ক্ষমতা থাকা লাগে তো!’
তরঙ্গ জানে, তার এই কথাগুলো কেবল নিজেকে নিজে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া কিছুই নয়। মেহফুজ এই চলচ্চিত্রের জগতে বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে তার বড়ো পর্দার আর্টফিল্মগুলোর জন্যই। আর তা খুব স্বল্প সময়েই। তার বয়সের কাছে তরঙ্গ হয়তো সামান্য কিছুটা ছোটো। কিন্তু তার এই জলদি সাফল্য সে কেন যেন কোনোভাবেই মেনে নিতে পারে না। একটা মানুষ পরিপূর্ণ কিংবা খুঁতবিহীন কখনোই নয়। কিন্ত মেহফুজকে দেখলে এই কথাটি তার কাছে একেবারেই ভিত্তিহীন লাগে। তখন নিজের সঙ্গে সে মেহফুজের তুলনা করে ফেলে। আর সেখানেই সে বারবার হেরে যায়। এই হারটাই সে মেনে নিতে পারে না।

ভাবনাতে তার ব্যাঘাত ঘটল টি-টেবিলের মাঝে পানির গ্লাস রাখার শব্দে। মেহফুজের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে সামনে চেয়ে দেখল খেয়ামকে। তার মুখের দিকে তাকিয়ে তরঙ্গের একটা চিন্তা মাথায় এল। এখানে প্রতিটা মেয়ের থেকেই মেহফুজকে নিয়ে কোনো না কোনো প্রশংসামূলক মন্তব্য করতে শুনেছে সে। কিন্তু খেয়ামকে সে লক্ষ করেছে। কখনো মনের ভুলেও মেহফুজের দিকে সে তাকাতে দেখেনি তাকে, আর মেহফুজকে নিয়ে কোনো মন্তব্য তো দূরে থাক। মেয়েটা কি একটু আলাদা? না কি সে-ই ভুল চিনছে? খেয়ামকে নিয়ে এই দুই প্রশ্নের মাঝে তার মন প্রথম প্রশ্নটিকেই প্রাধান্য দিলো। মেয়েটার সঙ্গে বেশ কয়েকবার রাগারাগি হয়েছে তার। কিন্তু আজ-কাল মেয়েটাকে রাগারাগি করলেও কেন যেন তাকে কাজ থেকে বের করে দেওয়ার ইচ্ছাটা তার মাঝে আসে না এখন। মাঝেমাঝে নিজের অজান্তে সে খেয়ামের হাসি মুহূর্তটুকুকে বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখে। আর তারপর সম্বিৎ ফিরে পেয়ে চকিতে সেই দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। উজ্জ্বল শ্যামবর্ণের মেয়েটার চেহারার মাঝে সৌন্দর্যের যেন কমতি নেই। তার মাঝারি আকারের কপাল, আয়ত আকৃতির বড়ো বড়ো দুটো চোখ, সুচালো নাক, পাতলা দুটো ঠোঁট, সামান্য ফোলা ধরনের গালদুটো আর তার হাসি। এই সবটাই তরঙ্গ মাঝে মাঝে খুঁটিয়ে খুটিয়ে দেখে আর মুগ্ধ হয়। মেয়েটার ওপর তার অত্যাধিক ক্রোধ আর ক্ষোভ থাকলেও তা সে যেন কী কারণে উপলব্ধি করতে পারে না কিছু কিছু সময়।

আজ শ্যুটিং চলছে ঢাকার রাস্তার একটি বাইপাসে। খেয়াম আপাতত তারিনের দেখাশোনাই করছে বারবার। মেহফুজ ইশারায় তারিনকে শট দেওয়ার জন্য রেডি হতে বলে একবার খেয়ামের দিকে তাকাল। সে মুহূর্তে খেয়ামেরও দৃষ্টি পড়ে যায় মেহফুজের দৃষ্টিতে। ক্ষণিকের জন্য দুটো চোখের চাউনিই যেন অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে কিছুটা। খেয়াম নিজের এই অপ্রস্তুত হওয়ার কারণটা উপলব্ধি করতে পারে। তবে মেহফুজের দৃষ্টিও যে তারই মতো অপ্রস্তুত ছিল, তা আর সে উপলব্ধি করতে পারল না।

রোদে দাঁড়িয়ে নীল রঙের জর্জেট কাপড়ের ওড়নাটা দিয়ে ঘর্মাক্ত মুখটা মুছতে গিয়ে একটু ব্যথায় লাগল খেয়ামের। মুখের একটা পাশ লালও হয়ে গেছে তার। ঠিক সে সময় মেহফুজ তার পাশ কাটিয়ে এসে গাড়ির মধ্যে থেকে টিস্যু পেপারের বক্স থেকে টিস্যু নিয়ে আবার তার পাশ কাটিয়ে চলে গেল। আর খেয়াম তখন তার থেকে টিস্যুর সন্ধান পেয়ে মনে মনে খানিকটা কৃতজ্ঞবোধ হলো মেহফুজের প্রতি। সে যখন টিস্যুতে মুখটা মুছতে ব্যস্ত তখন তার সামনে দিয়ে তরঙ্গকে হেঁটে যেতে দেখার সময় সে খেয়াল করল, তরঙ্গের প্যান্টের পিছে ফাটা। সেটা দেখে একটু সময়ের জন্য সে বিভ্রান্ত হলো, এটা কি ফ্যাশন না সত্যিই প্যান্টের জায়গাটুকু ছেঁড়া? কিন্তু সেই ফাটা অংশ থেকে তার প্যান্টের নিচের আন্ডারওয়্যার দেখা যাচ্ছিল। আর এটা নিশ্চয়ই কোনো ফ্যাশন হতে পারে না! রাস্তার পাশ ঘেঁষে সাধারণ দর্শকে ভর্তি। তাদের মাঝে এমন একজন জনপ্রিয় হিরোর এই বেহাল অবস্থা দেখে কেউ ছবি তুলে নিলে তা অনলাইন জায়গাগুলোতে ছড়াতে দুমিনিট সময়ও লাগবে না। এমন ভাবনা হতেই খেয়াম তরঙ্গের সঙ্গে হওয়া ঝামেলাগুলোর কথা ভুলে দ্রুত তার দিকে এগিয়ে এল। তরঙ্গ দাঁড়িয়ে স্ক্রিপ্ট দেখছিল তখন। খেয়াম ঠিক তার পিছে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হবে সে তার গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ তরঙ্গ তা বুঝতে পারে পিছু ফিরে তাকে দেখে কপাল কুঁচকায়। ভারী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে, ‘কী ব্যাপার? কী চাই?’ খেয়াম অপ্রস্তুত চেহারায় হাসে। এরপর খানিকটা আমতা আমতা করে বলে, ‘ইয়ে মানে একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল স্যার।’

-‘কী কথা?’ ধমকেই বলল তরঙ্গ।

খেয়ামের মুখে তখনো সেই আগের মতোই হাসি। তরঙ্গ তার দিকে ঘুরে দাঁড়াতে গেলে খেয়াম হইহই করে বলে ওঠে, ‘আরে আমার দিকে ঘুরবেন না। আপনি যেভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেভাবেই দাঁড়িয়ে থাকুন না!’

তরঙ্গ যেন মহাবিরক্ত হলো, ‘মানে?’ বলে সে আবার খেয়ামের দিকে ঘুরে দাঁড়াতেই খেয়াম ঘুরে এসে তার পিছে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, ‘আরে মহা মসিবত তো! বললাম ঘুরে দাঁড়াবেন না। সমস্যা আছে তো।’

– ‘কী সমস্যা?’ বলার সময় রেগে প্রশ্নটা করে সে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় খেয়ামের দিকে। আর খেয়ামও আবার তার পিছে এসে দাঁড়িয়ে একটু কঠিনভাবে বলে, ‘আপনি কি বাংলা কথা বুঝতে পারেন না? বললাম যে আপনি ঘুরে দাঁড়াবেন না আমার দিকে, সমস্যা আছে।’

তরঙ্গের অতি দ্রুত রাগ চড়ে যাওয়ার দোষটা আছে। শট দেওয়ার আগ মুহূর্তে খেয়ামের এই কাণ্ডে তার ভালোই রাগ চড়ে গেল। নাকের দুপাশ ফুলিয়ে গরম চোখে সে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল খেয়ামের দিকে। খেয়াম গলা খাদে নামিয়ে আশপাশে একটু চোরাদৃষ্টিতে তাকিয়ে তারপর তরঙ্গকে বলল, ‘স্যার, আপনার প্যান্টের পিছে ফাটা।’

তার খাদে নামানো মৃদুস্বর তরঙ্গ ঠিকমতো শুনতে পেল না। সে চেঁচিয়ে বলল, ‘কী?’

তরঙ্গের এমন চেঁচানো কণ্ঠস্বর শুনে মেজাজ খেয়ামের একটু খারাপই হলো। চড় মারার জন্য পেছন থেকে সে একটা হাত ওঠাতে গিয়েও দ্রুত নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো। এরপর তরঙ্গের কানের কাছে এসে সে বলল, ‘আপনার নিতম্বদেশের ওপর প্যান্ট ফাটা। বলা যায় কাটা।’ এবার তরঙ্গ ভ্রু, কপাল কুঞ্চিত করে জিজ্ঞেস করল, ‘কোন দেশের ওপর?’ তার এমন প্রশ্নে খেয়ামের মেজাজ খারাপের সীমা পার হয়ে তার ইচ্ছা করল গাড়ির হুডের ওপর তরঙ্গের মাথা বাড়ি দিতে। মেজাজ খারাপের চোটে সে বলেই বসল, ‘আরে ধুর ছাই! আপনার পাছার ওপর প্যান্ট ফাটা। ফ্যাশনের জন্য কেটে রেখে আন্ডারওয়্যার দেখাচ্ছেন নাকি আল্লাহ মালুম।’ এ কথায় তরঙ্গের চেহারা রঙটা নিমিষেই বদলে গেল। অভিব্যক্তি তার এমন হলো যেন কেউ সত্যিই তার নিতম্বদেশ দেখে নিয়েছে। তার মতো একজন সেলেব্রেটির এমন দশা কেউ দেখলে তার ইমেজের জন্য কতটা ক্ষতিকর তা সে ভাবতেই প্রচণ্ড ঘামতে শুরু করল। উপায়হীন হয়ে সে অপ্রতিভভাবে সামনের দিকে তাকিয়ে খেয়ামকে বলল, ‘এই শোনো, একদম আমার পেছন থেকে সরবা না।’

-‘তো আমি কী করব? সারাদিন আপনার পিছে দাঁড়িয়ে থাকব?’

-‘তা কেন? এখন কী করব বলো তো?’

-‘কী আবার করবেন? চেঞ্জ করবেন।’

-‘আরে সেটা করার জন্যও তো এখান থেকে সরতে হবে। তখন যদি কেউ দেখে ফেলে?’

-‘দাঁড়ান, আমি ব্যবস্থা করছি।’

-‘কী ব্যবস্থা করবে?’

-‘ইব্রাহীম ভাইকে ডাকি। উনি আপনার পিছু পিছু যাবে। তারপর আপনি গাড়ির মধ্যে ঢুকে প্যান্ট চেঞ্জ করে নেবেন।’

-‘আরে তুমি পাগল না কি? তুমি জানো, ঠিক আছে। তাই বলে আবার ইব্রাহীমও জানবে? অসম্ভব! এক কাজ করো। তুমিই আমার পিছু পিছু আসো।’
***

-‘আল্লাহ কী বলিস? আমি তো হাসতে হাসতে শেষ!’
হাসির দমকে রাহি খেয়ামের গায়ের ওপর পড়ছে বারবার। হাসিটা কোনোরকমে থামিয়ে সে বলল, ‘শালা উজবুকের চরম শিক্ষা হইছে একটা। আচ্ছা, সত্যিই কি আর কেউ দেখে নাই ওর ফাটা প্যান্টের নিচ থেকে আন্ডারওয়্যার?’

খেয়াম ফোনের স্ক্রিনে নজর ফেলে মৃদু হাসতে হাসতে বলল, ‘কেউ দেখছে কি না দেখছে জানি না। আমি যখন ওর পিছু পিছু হাঁটতেছিলাম তখন অনেকেই তো আমাদের দিকে তাকাইয়া লক্ষ করতেছিল। ওরে গাড়িতে উঠাই দেওয়ার পর হঠাৎ মেহফুজ বুনো ষাঁড়ের চোখে চোখ পড়ে। কপাল কুঁচকায়ে কেমন করে যেন তাকায় ছিল আমার দিকে। পরে কাহিনি খুলে বললাম তারা আপুরে। সে তো আরেক বান্দা। হাসতে হাসতে আমার গায়ের ওপরই পড়ে তোর মতো।’

-‘দোস্ত, তোর মেহফুজ স্যারকে প্লিজ ওই নামে ডাকিস না। কী মাসুম আর কিউট দেখতে উনি! আমার বাপ বড়োলোক হলে আমি সোজা বিয়ের প্রস্তাব পাঠাই দিতাম ওনার বাসায়।’

খেয়াম একটু এক পেশে হেসে বলে উঠল, ‘হ, আর কিছু দোস্ত?’

-‘আচ্ছা দোস্ত, তোর দিকে কোনো সময় তাকায় না উনি? তুইও তো মাশা আল্লাহ দেখতে। ফরিদপুর থাকতে কলেজ টিচারও তোরে লাইন মেরে বসছিল। উনি কি একটু অন্যরকম চোখে তাকায় না তোর দিকে কোনো সময়?’

খেয়াম রাহির এ কথায় ফোনের ওপর থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চোখ দুটো ছোটো ছোটো করে তাকাল ওর দিকে, ‘তুই কি গর্দভই থাইকা যাবি সারা জীবন? তুই-ই একটু আগে বললি তোর বাপ বড়োলোক হইলে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাতি। তো আমার বাপ কি বড়োলোক? আমার কি তার সিনেমা, নাটকের নায়িকাদের মতো গ্ল্যামার লুক? তাহলে কোন আক্কেলে আমার দিকে তাকাবে উনি? তাও আবার অন্যরকম নজরে! হুহ্!’

-‘আরে ধুর! তুই বুঝোস নাই আমার কথা। ওইখানে তো অনেকেই তোরে কতরকম খারাপ, ভালো প্রস্তাব দিছিল। কীসের জন্য দিছিল? তুই সুন্দর দেখতে তাই তাদের নজর পড়ছিল তোর ওপর। তো সেরকম তো ওনার নজরও পড়তে পারে। সেটাই বলতেছি আমি।’

খেয়াম তাচ্ছিল্য প্রকাশে বাঁকা হাসল, ‘তার সাথে আমি যে ক’বার কথা বলছি শুধু সে ক’বার ওনাকে তাকাতে দেখছি আমার দিকে। তাও মনে হয় কী পরিমাণ বিরক্ত উনি আমার সাথে কথা বলতে! এর বাইরে কোনো সময়ও আমি ওনাকে আমার দিকে ভুলক্রমেও তাকাতে দেখি নাই। হ্যাঁ, আজকে একবার ভুলক্রমে আমার ওপর তার নজর পড়ছিল। তাও বোধ হয় সেকেন্ড দশেকের মতো। আর তাছাড়া, ওনার পার্সোনালিটি অনেক হাই বুঝলি।’

-‘কীরকম হাই?’

খেয়াম প্রশ্নটা শুনে একটুখানি ভাবল। ভাবুক মুখ করে বলল, ‘কীরকম হাই? এটা ঠিক বোঝানো যাবে না রে। অনেকটা অন্যরকম উনি। বলা যায়, এক্সট্রাঅর্ডিনারিও। বাপ ভাইয়ের মানি, পলিটিক্যাল পাওয়ার থাকার পরও নিজের যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে সেনাবাহিনীর জব করছে। এরপর সেই জব ছেড়ে যখন চলে এল তখন বাপের বিজনেস না, নিজে কিছু করার চিন্তা করল। আর আজকে নিজে কিছু করে নিজের যোগ্যতাতে এখানে এসে পৌঁছাইছে। চারপাশে ওনার সব সময় সুন্দরী সুন্দরী নায়িকা গিজগিজ করে। কখনো শুনি না কারও সাথে ওনার কোনো অ্যাফেয়ার আছে বা ছিল। একটা ছেলে পার্টনারের সঙ্গে উনি যতটা মিশুক, ততটাই মিশুক কিন্তু উনি কোনো মেয়ের সাথে না। মানে একটু হলেও একটা অদৃশ্য দূরত্ব বজায় রেখে মেয়েদের সাথে উনি হাসিঠাট্টা করেন। বোঝা যায়, একটু হলেও দূরত্ব রাখেন উনি মেয়েদের সাথে মেশার সময়। আবার যেমন এই যে তরঙ্গ, আমি ওনাকে শুধু ওর সাথে ছাড়া আর কারও সাথে কখনোও চড়া হয়ে কথা বলতে দেখি নাই এই তিনটা মাসে। আমি যে ওনাকে দু’বার অপমান করে কথা শুনাইছি, আমার সঙ্গেও এমন আচরণ করেনি। উনি আমাকে খ্বুই অপছন্দ করেন। কিন্তু তরঙ্গ বা অন্যরা যখন আমার কাজের জন্য রাগারাগি করে আমাকে কাজ থেকে বের করে দেওয়ার কথা বলে ওনাকে, তখন উনি কেমন গম্ভীর মুখ করে তাদের বলেন, ”এটা একান্তই আমার ব্যাপার” সে সময় জানিস কী মনে হয়? উনি যথেষ্ট উদারও আমার প্রতি। আমি ঠিক ওনারে নির্দিষ্টভাবে বিচার করতে পারি না। একটা মিস্টিরিয়াস মানুষ লাগে ওনারে আমার।’

খেয়ামের কথা শেষ হতে রাহি কেমন জ্ঞানীদের মতো মুখ করে বলে, ‘আসলেই মিস্টিরিয়াস উনি।’
***

-‘স্যার, ইমরান ভাই নাকি পরের কাজেও তরঙ্গকে অফার করেছে?’

মেহফুজ ফোনের স্ত্রিন থেকে নজর সরিয়ে এক ঝলক নয়নকের দিকে চেয়ে আবার স্ক্রিনে নজর ফেরাল। বলল, ‘কিছু সময় থাকে যখন একটা নতুন মুখ হিট খেয়ে যায় তখন ওই একই মুখ ওই সময়টাতে বারবার ভিন্ন ভিন্ন রোলে আনলে দর্শকদের ভালো লাগে। এক্ষেত্রে ইমরানের সিদ্ধান্তটা ভুল না।’

-‘কিন্তু ওর হামবড়া স্বভাবটার জন্যই মেজাজ খারাপ হয়। ক’দিন মিডিয়াতে এসেই নিজেকে হনু ভেবে নিয়েছে মিডিয়ার। আর এটা তো পরিষ্কার বোঝা যায়, ও অনেক জেলাস আপনার প্রতি। সহ্য করতে পারে না যেন আপনাকে। দামই দিতে চায় না বেয়াদব একটা!’

-‘এই মিডিয়াতে ওর জায়গাটা নির্মাণ হয়েছে আমার সঙ্গেই কাজ করার পর। ও সেটা ভুলে গেলেও দর্শক কখনো সেটা ভুলবে না। আমি ওকে শুধু আকাশে উড়ার সুযোগ দিচ্ছি। আর অপেক্ষায় আছি ওর মুখ থুবড়ে মাটিতে পড়ার।’

-‘স্যার, একটা প্রশংসা আপনার না করে পারি না আমি। আপনি কিন্ত অনেক ধৈর্যশীল আর দয়ালু।’ ঠোঁটে কিঞ্চিৎ মৃদু হাসি টেনে বলল নয়ন। মেহফুজ তেমন ভ্রুক্ষেপ করল না তার কথায়। কারণ, এর পূর্বেও নয়ন অন্তত একশবার এই প্রশংসাটি করেছে তার কাছে। আপাতত সে চিন্তায় আছে নতুন গল্প নিয়ে। গতানুগতিক ধারা থেকে বেরিয়ে এবার ইদে ভিন্ন কিছু গল্প নিয়ে কাজ করতে চায় সে। তার হাতে যে স্ক্রিপ্ট রাইটারগুলো আছে তারা প্রত্যেকেই দারুণ লেখে। কিন্তু তাদের এবারের গল্পগুলো যেন তার মনমতো হচ্ছে না। সেসব চিন্তা নিয়েই বসে বসে ফেসবুকে অলস সময় কাটাচ্ছে সে। নয়ন সে মুহূর্তে বলল, ‘স্যার, এবারও কি ইদের বোনাস দেবেন বেতনের সাথে সবাইকে?’

-‘প্রতিবারই তো দিই। এবার দেবো না কেন?’

-‘না আসলে এরপরের কাজের জন্য তো আপনার বাজেট পড়ে যাবে অনেক। দেশের বাইরে থেকেও শ্যুট করে আসতে হবে। এর জন্যই জিজ্ঞেস করছি আরকি।’

-‘বোনাস প্রতি ইদেই পাবে সবাই।’

নয়ন ট্যাবটা চোখের সামনে ধরে সেটে কর্মরত স্থায়ী সহকারীদের বেতনের তালিকাটা তৈরি করছিল। এর মাঝে সে জিজ্ঞেস করল, ‘স্যার, এই খেয়াম মেয়েটার বেতনের বিষয়টা আমি ঠিক বুঝলাম না। আপনি তো বললেন কোনো স্বজনপ্রীতি থাকবে না কারও বেতনের সময়। কিন্তু আপনি যে খেয়ামের বেতনটা পুরো চারগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এবার তো সে বোনাসসহ ত্রিশহাজার প্লাস পাচ্ছে।’

মেহফুজ ফোনের স্ক্রিন স্ক্রল করার মাঝে গম্ভীরস্বরে তাকে বলল, ‘নয়ন, বাকিদের আরও ইনকাম সোর্স আছে। তাদের পরিবারে উপার্জনক্ষম আরও ব্যক্তি আছে। ওর বিষয়ে আমি কোনো স্বজনপ্রীতি দেখাইনি। সাহায্য করছি শুধু। ছোটো একটা মেয়ে, স্টুডেন্ট। পড়াশোনার ফাঁকে রাত, দিন কাজ করে এসে। পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই বললেই চলে। ওর রোজগার আর ওর বাবার পেনশনের টাকা, এই নিয়ে সংসার টানছে। ওর মতো এমন অন্য কেউ হলেও সহায়তাটুকু করতাম। বুঝেছ?’

নয়ন একটু মুগ্ধতার চোখে তাকিয়ে মেহফুজের কথাগুলো শুনল। প্রসন্নচিত্তে হেসে বলল, ‘জি স্যার, বুঝেছি। আসলে আপনার মতো করে ব্যাপারটা ভেবে দেখিনি। এ জন্যই তো বলি, আপনি অনেক দয়ালু।’

.
রাত দশটার ওপাশে। নয়ন কাজ সেড়ে বিদায় নেয় মেহফুজের বাসা থেকে। রাতের খাবারটা আজ বাদ দিয়ে মেহফুজ গল্প নিয়ে নিজেই ভাবছে কিছু। এর মাঝে ইমরানের সাথে তার কথা হয় নতুন কোনো স্ক্রিপ্ট রাইটারের খোঁজে। ইমরান সময় নিয়ে খোঁজার কথা বলে ফোন রাখলেও মেহফুজ চিন্তামুক্ত হয়ে ঘুমাতে পারে না। গল্পের চরিত্রের প্রেক্ষাপট সে এবার কিছুটা তার মতো বর্ষাপ্রেমিক রাখতে চায়। কিন্তু গল্পের জন্য কোনো অনন্য প্লট সে নির্বাচন করতে পারছে না। অস্থির, নিদ্রাবিহীন রাতটার প্রায় অর্ধেক কেটে যায় তার এসব ভাবনা চিন্তার মাঝেই। ফেসবুক মাধ্যমটা তার কাছে বিরক্তির একটা দিক হলেও আজ সে নিউজ ফিড স্ক্রল করে যাচ্ছে অবিচলিতভাবে। সপ্তাহে একবার কি দু’বার সে সোশ্যাল সাইটের পর্দা তুলে। আজ সেখানে প্রবেশের পর নোটিফিকেশন বক্সে কমেন্টস, লাইক, ফলোয়ারস, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট, এসব দেখতে দেখতে মহাবিরক্ত হলেও এই বিরক্তের মাঝে চলছে তার বহু ভাবনা। মিনিট দুই যেতেই আচমকা ভাবনার জাল কাটে তার, একটি প্রোফাইল পিকচারে নজর পড়ে। কুয়াশা জড়ানো সবুজ অরণ্যের মধ্যখানে ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আবির্ভাব। সবুজ ঘাসগুলোর ডগায় অচেনা সাদা জংলি ফুল। ভীষণ অদ্ভুত সুন্দর লাগল যেন ছবিটা তার। সাধারণত মেহফুজ কখনোই ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট চেক করে না। অজানা কৌতূহল নিয়ে আর নতুন কোনো চিন্তা আবিষ্কারের আশায় সেই ছবির মালিকের প্রোফাইলে ঢুকে সে। প্রোফাইলের মালিকের নামটা দেখে ফেক অ্যাকাউন্ট ছাড়া আর কিছুই মনে হলো না তার। ব্যক্তিটির প্রোফাইল নেম ষষ্ঠ তারা। কিন্তু তার ওয়ালভর্তি বর্ষা প্রকৃতি আর মেঘলা আকাশের ছবি। এই প্রোফাইল দেখে যে কেউ-ই নির্দ্বিধায় বুঝে যাবে, অ্যাকাউন্টটা ফেক হলেও অ্যাকাউন্টের মালিক নিশ্চয়ই বর্ষাপ্রেমিক, ঠিক তারই মতো। এই সাদৃশ্যের জন্যই মেহফুজ সেই ব্যক্তির টাইমলাইন স্ক্রল করে দেখতে থাকে। ব্যক্তিটি আবার কবিতা, গল্পও লেখে। ব্যাপারটা দারুণ লাগল তার। আগ্রহ জন্মাল ব্যক্তিটির প্রতিটা পোস্টে চোখ বুলানোর। লেখার হাত ব্যক্তিটির কাঁচা হলেও মেহফুজের বিরক্তিভাব যেন কোথায় উবে গেল গল্প আর কবিতাগুলো পড়তে পড়তে। ব্যক্তিটির গল্প কবিতাতে দুএকটা লাইক, কমেন্ট ছাড়া তেমন কোনো রেসপন্স নেই। তাতে মেহফুজ বুঝল, ব্যক্তিটি কেবল নিজের ভালো লাগার জন্যই লেখে। প্রতিটি কবিতা তার চার থেকে পাঁচ লাইনের। আর তা শুধু বৃষ্টি নিয়েই লেখা। অ্যাকাউন্টটা নতুন হলেও তাতে গল্প আর কবিতার সংখ্যা অনেক। কিছু কবিতা ডায়েরি পাতায় লেখা। সেই পাতার ছবিগুলো আপলোড করে রেখেছে। কতগুলো ছোটো ছোটো গল্পও পেল ওয়ালে। এবার নিমেষের মধ্যে সবটুকু বিরক্ত উধাও হয়ে গেল মেহফুজের, ওই কাঁচা হাতের লেখা গল্পগুলো পড়তে পড়তে।

ভোর চারটার কাছাকাছি সময়। এই প্রথম মেহফুজ টানা এতগুলো ঘণ্টা ফেসবুকে পার করল। সবগুলো লেখায় সে একটানা পড়ে গেছে। অচেনা ব্যক্তিটির ওয়াল থেকে বের হওয়ার সময় সে আরও একবার তার নামটা দেখল, তবে তার রিকুয়েস্ট কনফার্ম করল না সে। তবে চিন্তামুক্ত তার চেহারার অভিব্যক্তি। যেন যা সে খুঁজছিল তা সে হাতের নাগালে পেয়ে গেছে।

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে