#এমনই_শ্রাবণ_ছিল_সেদিন
#ইসরাত_জাহান_দ্যুতি
১.
ভরা বর্ষা। শ্রাবণের দ্বিতীয় সপ্তাহ চলছে। নীরদ ঢাকা আকাশে সূর্যের দেখা নেই। যেন মেঘের দাপটে সূর্যের আলো ক্ষীণপ্রভ। বেলা কতখানি তা বোঝার উপায় নেই। খেয়াম বোরখার আস্তিন উঁচু করে হাতঘড়িটা দেখে নেয়, দুপুর তিনটা বাজতে চলেছে। আকাশ পানে তাকিয়ে পাশে বসে থাকা বাবাকে বলে, ‘আকাশের মনটা বেজায় খারাপ বাবা। কখন যেন কেঁদে বসে।’
আরিফ অবসাদগ্রস্ত চোখে তাকান মেয়ের দিকে, সামান্য হাসেন।
-‘আর বেশি সময় নাই রে মা, পৌঁছাই গেছি প্রায় গুলশানে।’
শহরের পথের করুণ দশা দেখে খেয়াম ভারি অবাক হয়। বৃষ্টিতে পথঘাটের অবস্থা যেন হাঁটু অবধি পানি। সামনে কতগুলো চলন্ত রিকশা প্রায় অর্ধেক ডুবুডুবু ভাব। মনে মনে তার ছোট্ট ফরিদপুর শহরটার সঙ্গে ঢাকা শহরের বৈসাদৃশ্য করে বসে সে। তার ছোটো শহরটাও অপরিষ্কার। কিন্তু বর্ষাতে সেখানে পথঘাটের এমন নাজেহাল দশা তো হয় না। ছোটো শহরটার কথা মনে পড়তেই বুক চিরে কষ্টের চাপা নিশ্বাস বেরিয়ে আসে খেয়ামের, মায়ের কথা মনে পড়ে যায় তার। আসার সময় মা বুকের মাঝে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে শুধু বারবার বলছিলেন, ‘আমার বাচ্চাটাকে নিয়া যাইয়ো না! আমি থাকতে পারব না ওরে ছাড়া!’
অশ্রুনীরে ডুবে আসে খেয়ামের চোখ দুটো। যে স্বপ্ন বুকের মাঝে আগলে রেখে এ শহরে আসতে চেয়েছিল সে, সেই স্বপ্ন এখন তার কাছে কেবলই গৌণ, অনাবশ্যক। মুখ্য এবং অত্যাবশ্যক শুধুই রোজগার। দুটো টাকা রোজগারের জন্যই তো বাবা-মায়ের আদরের কোল ছেড়ে আজ সেও পাড়ি জমাল এই ব্যস্তপ‚র্ণ কাজের শহরে।
ভাবনার পর্দায় আচমকা ছেদ পড়ল খেয়ামের। বাবা না ধরলে আর একটু হলেই পড়ে যেত সে। সামনে লাল রঙের মার্সিডিজ বেঞ্চের ২০১৪ মডেলের গাড়ি চালকের ঔদ্ধত্য চকিতেই খেয়ামের মেজাজ তুঙ্গে পৌঁছে দিলো। বাবা তার বাহু ধরে রেখেছিল। হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে রিকশা থেকে প্রায় হাঁটু অবধি পানিতে নেমে এগিয়ে গেল গাড়িটির কাছে। কালো কাচের জানালাটায় ঠকঠক করে গাড়ির চালককে চেঁচিয়ে ডাকল, ‘এই যে, জানালার কাচ নামান। কী হয়েছে? চোখে দেখেন না?’
গাড়ির চালক কাচ নামিয়ে হিজাবে মুখ ঢাকা মেয়েটিকে একবার অসরল দৃষ্টিতে দেখে নিলো। খেয়াম গাড়ির চালককে ঝাঁঝিয়ে উঠে বলল, ‘সামনে থেকে কী করে ধাক্কা দেন? পথের মানুষদের ইচ্ছা করে মারার প্ল্যান করে বেরিয়েছেন না কি?’
রিকশাচালক খেয়ামের সুরে সুর মিলিয়ে বলে, ‘দাম দিবার মন চায় না আমাগো! এর লিগায় তো পিষ্যা থুইয়া যায়।’
এ কথায় গাড়ি চালক জানালা দিয়ে মাথা বের করে রিকশাচালকের উদ্দেশ্যে হাঁক দিয়ে ওঠে, ‘ওই মিয়া! কোন লেনে রিকশা চালাও? রাস্তা রাইখা বেরাস্তায় আইলে ধাক্কা খাবা না তো কী খাবা? গাড়ি নেওয়া লাগব না আমার?’
-‘তাই বলে আপনি এভাবে সামনাসামনি ধাক্কা দিয়ে বসবেন? এই রাস্তায় কোন গাড়িটা সঠিক লেনে চলছে দেখান তো?’ খেয়াম বলে উঠল।
-‘এই আফা! আপনি গলা নামায় কতা কন। কোনো গাড়ি ঠিকঠাক লেনে নাই। তাই বইলা রিকশা ক্যান বড়ো বড়ো গাড়ির লেনে চলব? মরবার শখ তো আপনার রিকশাওয়ালার হইছে।’
খেয়ামের এবার ভীষণ রাগ হলো, ‘আচ্ছা ত্যাঁদর তো আপনি! সঠিক লেনে নেই বলে আপনি সোজা ধাক্কা মেরে দেবেন?’
গাড়ি চালক তর্ক চালিয়ে যেতে উদ্যত হলেই গাড়ির ভেতর থেকে গম্ভীর এক কণ্ঠ বিরক্তের সঙ্গে তাকে বলল, ‘আহ্ সফি! কথা বন্ধ করো আর গাড়ি ছাড়ো।’
এ আদেশ পেয়ে গাড়ি চালক সফি কেমন বক্র নজরে খেয়ামের দিকে একবার চেয়ে তারপর গাড়ি ছেড়ে চলে গেল।
***
-‘কী বলছেন ভাবি! আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না।’
-‘বিশ্বাস হবে না কেন ভাই? হয়তো অনেকদিন পর যোগাযোগ হয়েছে তাই শুনতে সব কিছুই অবিশ্বাস্যকর লাগছে। আপনাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ছিল না প্রায় চব্বিশ বছর। যখন আমরা খুলনা ছেড়ে ঢাকা এসেছি তখন ওরা দু’ভাই ছিল পাঁচ বছরের। এরপর ওখানে আর কারও সঙ্গেই আমাদের তেমন যোগাযোগ হয়নি। একবার গিয়েছিলাম আমরা সবাই ওখানে। তারপর আপনার বন্ধুই একদিন বলল আপনারাও নাকি খুলনা ছেড়ে ফরিদপুর চলে গেছেন।’
আরিফ কতক্ষণ ব্যথিত অভিব্যক্তিতে নীরব রইলেন নীহারের কথাগুলো শুনে। খেয়াম দুজনের কথপোকথন শুধু শুনছেই। কিন্তু দুজনের কথার বিষয়বস্তুর কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তার। নীহার একজন সর্বস্ব খোয়ানো মানুষের মতো নীরস মুখ করে বসে আছেন। এমন পরিস্থিতিতে আরিফ কী করে তার প্রয়োজনের কথা বলবেন তা ভেবে পাচ্ছেন না। তার কলেজ জীবনের বহু পুরোনো বন্ধু আশহাবের ভরসাতেই উনিশ বছর বয়সি ছোটো মেয়েটাকে নিয়ে এখানে এসেছেন। আর আজ সেই বন্ধুটি অথর্ব হয়ে বিছানায় পড়ে আছে। গত চার বছর আগেও আশহাব আর তার বড়ো ছেলে মুহিত দাপিয়ে রাজনীতি করেছেন। টিভিতে নিউজ চ্যানেল খুললেই দুই বাপ ছেলেকে কত দেখেছেন আরিফ।
ঠিক চার বছর আগেই প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক জীবন থেকে অবসরপ্রাপ্ত হওয়ার পর একদিন হঠাৎ করে আরিফের সংসারে দুর্দিন চলে আসে। ঘরের টিভিটাও বিক্রি করে দিতে বাধ্য হন সেসময়। বড়ো ছেলেটা তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স করছে। ছেলেটার পড়াশোনা আর সংসারটাকে টিকিয়ে রাখতে ঘরের সামনেই ছোটো একটা মুদির দোকান দিয়ে বসেন তিনি। তার দুর্দিন আসার পর থেকে আপন অনেক মানুষও তখন তাকে বিনা কারণেই ত্যাগ করেছেন। কারও থেকে এক ফোঁটা সাহায্য পাননি। গুটিয়ে নিয়েছেন আরিফ নিজেকেও সকল আত্মীয় আর বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে। কিন্তু তার থেকেও আজ তার বন্ধুর দুর্দিনের গল্প শুনে নিজের কষ্টকে তার কষ্টের কাছে একেবারেই তুচ্ছ লাগছে। ছেলেকে নৃশংসভাবে হত্যা, ছোটো মেয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বিয়ে, সেই মেয়েটা আজ কোথায় তারও হদিস নেই, সব মিলিয়ে আজ সেই বন্ধুটি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পথে।
-‘আপনার কথা বলেন ভাই। এতদিন পর আপনাকে দেখব ভাবিনি কখনো। আর এটা কি আপনার ছোটো মেয়ে?’
খেয়াম নীহারকে সালাম জানাল। নীহার একবার খেয়ামের আপাদমস্তক দেখে মৃদু হেসে সালামের উত্তর দিলেন।
-‘হ্যাঁ, আমার ছোটো মেয়ে।’
-‘নাম কী তোমার মা?’
খেয়াম মিষ্টি হেসে জবাব দিলো, ‘আরদ্রা খেয়াম।’
-‘অনেক সুন্দর নাম তো। পড়ছ কীসে?’
-‘এইচএসসি দিয়েছি।’
-‘ও আচ্ছা, ভালো তো। কোন ইউনিভার্সিটিতে অ্যাডমিশন নিয়েছ?’
-‘অ্যাডমিশন নিইনি এখনো আন্টি। ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছি, রেজাল্ট পাবলিশড হয়নি। আরও কিছুদিন পর পরীক্ষার রেজাল্ট পাবলিশড হবে।’
নীহার আরিফকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘তো আপনার বড়ো ছেলেটা এখন কী করছে ভাই? সেই দুই বছর বয়সে ওকে দেখেছিলাম বোধ হয় একবার।’
প্রশ্নটা শুনে আরিফের মুখটা হঠাৎ-ই ফ্যাকাসে হয়ে গেল। নীহার খেয়াল করলেন আরিফের অপ্রস্তুত চেহারা। তিনি বললেন, ‘সব ঠিক আছে তো ভাই?’
আরিফ মেয়ের হাতটা নিজের হাতের মাঝে ধরে রেখে বেশ দ্বিধা মিশ্রিত সুরে বললেন, ‘আমার অযোগ্য ছেলেটার কথা মুখে আনতেও কষ্ট হয় ভাবি। পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকরি যোগাড় করে ফেলেছিল সে। এরপর একদিন শুনলাম সে বিয়েও করে নিয়েছে। একদিন বলল চাকরির সুবাদে তাকে সিলেট থাকতে হবে। বিয়ে করে বউ নিয়ে হয়তো সেখানেই আছে। কোনো যোগাযোগ রাখেনি আমাদের সঙ্গে। ওর বউয়ের মুখটাও দর্শন করতে পারিনি আমরা। তাদের কোনো খোঁজ জানি না।’
নীহারের চেহারাটাও মলিন হয়ে উঠল। আক্ষেপের সুরে বললেন, ‘এই সন্তানগুলো কি কোনোদিনও বাবা-মায়ের মূল্য বুঝবে না?’
আরিফ সশব্দে প্রলম্বিত শ্বাস ছাড়লেন। নীহার জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি এখন কী করছেন ভাই? আর ভাবি কেমন আছেন? ভাবির সঙ্গে একবার কি দুবার দেখা হলেও বড্ড আপন লেগেছিল ওনাকে।’
মুখটা খুবই শুকনো আরিফের। নিজের খারাপ সময়গুলোর কথা এভাবে কারও কাছে ব্যাখ্যা করতে প্রচণ্ড অস্বস্তিতে ভুগছেন তিনি। আত্মসম্মান খুইয়ে সাহায্য কামনায়ও এতদিন কারও কাছে যাননি। কিন্তু সব সময়ই কি এই আত্মসম্মান ধরে রাখা সম্ভব? সামান্য মুদির দোকানে বসবার মতো শক্তি সামর্থ্যও আল্লাহ পাক তার থেকে কেড়ে নিচ্ছেন। গত মাসে স্ট্রোক করার পর থেকে তার স্ত্রী আর ছোটো কন্যাটি একেবারেই তাকে সেই দোকানটিতে বসতে দেন না। এদিকে ঘরের বউ আর মেয়েকেও দোকানদারি করতে দিতে রাজি নন তিনি। শুধু পেনশনের টাকা দিয়ে তিনজনের সংসার কোনোরকমে চলে। তার বড়ো ইচ্ছা ছিল মেয়েটা ভালো কোনো ভার্সিটিতে পড়াশোনা করবে। কিন্তু সেই ইচ্ছা থাকলেও ইচ্ছা পূরণ হবে কিনা তা নিয়ে আজ তিনি বেশ সন্দিগ্ধ। এ অবস্থার পর তার সেই ছোটো মেয়েটিই হঠাৎ সেদিন সিদ্ধান্ত নিলো, পড়াশোনা আর করবে না সে। যতটুকু করেছে ততটুকু দ্বারাই কিছু করতে চায় সে। অথচ, এই চিন্তাটুকু তিনি আশা করেছিলেন তার একমাত্র ছেলেটার থেকে। ছেলেটাকে শেষবার দেখেছিলেন বছরখানেক আগে। এক রাতের জন্য বাড়িতে এসে বিপদের কথা বলে তার জমানো টাকাগুলো নিয়ে চলে গেল। এরপর কিছুদিন ছেলেটা বাড়িতে টাকা পাঠালেও হঠাৎ করে তা বন্ধ করে দেয়, আর যোগাযোগও বন্ধ করে দেয় তাদের সঙ্গে। রাগে, কষ্টে তিনি নিজেও ছেলের আর কোনো খোঁজ নেননি। মেয়ের অনুরোধে অনেক ভেবেচিন্তে মেয়েকে কোনো কাজে বা চাকরিতে ঢোকানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কলেজ জীবনের এই বন্ধুটির ঠিকানা অনেক কষ্টে যোগাড় করে সাহায্য চাইতে এসেছেন তার বাড়িতে। কিন্তু সেই সাহায্যের কথা মুখ ফুটে বলতেও যেন সীমাহীন কুণ্ঠাবোধ কাজ করছে তার। আর বলেই বা হবে কী? যার কাছে এই সাহায্য চাইতে এসেছিলেন, তিনি আজ নিজেই শয্যাশায়ী। তাই আর কিছু না বলারই সিদ্ধান্ত নিলেন। মুখে মেকি হাসি ঝুলিয়ে নীহারকে বললেন, ‘এখন অবসরপ্রাপ্ত একজন শিক্ষক। আর আপনার ভাবির শরীরটা তেমন ভালো যায় না আজকাল। বয়স হচ্ছে তো।’
এ কথার পর হঠাৎ করেই নীহারের মনে প্রশ্ন জাগল, এত দিন বাদে আরিফ তাদের খোঁজ নিয়ে বাসায় কেন এলেন? তারপরই মনটা আবারও প্রশ্নবিদ্ধ হলো, কোনো সাহায্যের জন্য কি? তিনি খেয়াল করলেন এত সময় ধরে গল্প করছেন তারা, কিন্তু সামনে রাখা নাশতাগুলোর একবিন্দুও খেয়াম বা আরিফ দুজনের কেউ-ই মুখে পুরেননি। দুজনকেই বেশ ক্লান্ত দেখাচ্ছে। হয়তো ঢাকায় আসার পর সরাসরি তারা এখানেই এসেছেন। তাহলে এটুকুতেই পরিষ্কার, কোনো দরকারেই এতকাল পর এসেছেন আরিফ। নীহার বললেন, ‘দীর্ঘ একটা সময় বাদে দেখা করলেন ভাই। কোনো দরকারে এসে থাকলে বলেন না নিঃসঙ্কোচে!’
আরিফ সেই দ্বিধাজড়িত চেহারা নিয়ে তাকালেন নীহারের দিকে। এত কষ্ট করে এসেছেন যেহেতু, ভাবলেন বলে দেখলে হয়তো কিছু উপকার হলে হতেও পারে। এ ভাবনা হতেই তিনি খেয়ামের জন্য কোনো ছোটোখাটো চাকরির ব্যবস্থা হয় কিনা তা বললেন নীহারকে। মেয়েটার পড়াশোনাটাও যাতে হয় আর পাশাপাশি একটা কাজের সুযোগ থাকলে তার জন্য বড্ড উপকার হবে। এমনটিই নীহারকে খুলে বললেন তিনি। আরিফ তার পরিস্থিতিও বৃত্তান্ত জানালেন নীহারকে। কিন্তু নীহারের এক ছেলের মৃত্যুর পর স্বামীর এমন অবস্থা হয়ে যাওয়াতে তার দ্বিতীয় ছেলেটি কেমন যেন অদ্ভুত মেজাজের হয়ে গেছে। ছোটো থেকেই সেই ছেলেটি তার জমজ ভাই মুহিতের মতো হয়নি। হয়েছে অনেকটাই অন্যরকম। তার চিন্তাভাবনাও খুবই ভিন্ন। যার জন্য বাবা আর ভাইয়ের রাজনৈতিক ক্ষমতা আর পারিবারিক ব্যবসা থাকার পরও নিজের যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে সে সেনাবাহিনীতে নিযুক্ত হয়েছিল। এক সময় সেনাবাহিনীর কমিশন্ড অফিসারও হয় সে। কিন্তু ভাইয়ের মৃত্যুর পর তার জীবনটার তালও যেন কেটে যায়। হঠাৎ করেই চাকরি ছেড়ে দেয় সে। তার চরিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য একজন অন্তর্মুখী, গম্ভীর চরিত্রের মানুষ। ভাইকে হারানোর পর আর বাবার অসুস্থতার পর এই চরিত্রের মানুষটি তার কাজের জায়গাটুকু ছাড়া অন্য সকল জায়গা থেকে নিজেকে গুটিয়ে যেন একটি খোলসে আবদ্ধ রাখে সব সময়। দিন দুনিয়ার অন্য সব ব্যাপার তার কাছে একেবারেই গুরুত্বহীন। বোনটা এভাবে পালিয়ে বিয়ে করার পর তার মেজাজের ভাবও সব সময় রুক্ষ থাকে। সেই মানুষটার কাছে কি কোনোভাবে এই সাহায্যের কথা বলতে পারবেন নীহার? এসব ভাবনার মাঝেই আরিফ সেই ছেলেটির কথায় জিজ্ঞেস করলেন নীহারকে, ‘ভাবি, আপনার আরেকটি ছেলে আছে না? সে কী করে এখন? পরিবারের ব্যবসা সামলাচ্ছে নিশ্চয়ই?’
-‘না ভাই, ওর বাবার ব্যবসার প্রতি শুরু থেকেই ও অনাগ্রহী।’
-‘তাহলে ব্যবসা সামলাচ্ছে কে?’
-‘মুহিতের বউ।’
-‘মুহিত বিয়েও করেছিল?’ বিস্ময় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলেন আরিফ।
-‘হ্যাঁ, ভালোবেসেই বিয়ে করেছিল। মেয়েটার ভাগ্যটাও কত খারাপ! বিয়ের বছরখানিক পরই স্বামী হারাল।’
-‘এত অল্প বয়সি মেয়ে এভাবে স্বামীহারা জীবন পার করছে! সত্যিই এমন মেয়ে পাওয়া যায় এখনো?’
-‘ওর পরিবার ওকে নিয়ে গিয়েছিল বেশ কয়েকবার। সেখানে থাকেনি বেশিদিন। একদিন হঠাৎ করেই চলে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে বলেছিল যেন ওকে তাড়িয়ে না দিই। আর ওকে দেখলে আমারও মনে হয় আমার মুহিতটা সাথে আছে ওর। তারপর আর আমিও যেতে দিইনি। সারাদিন থাকত ঘরটায় একা মনমরা হয়ে। একটা অস্বাভাবিক জীবনযাপন করছিল। শিক্ষিত, সুন্দরী আর ভালো পরিবারের মেয়ে। এভাবে জীবনটা নষ্ট করে দিচ্ছে। এটাও ভাবতাম। কিন্তু ও একেবারেই যেতে রাজি না এখান থেকে। তাই অনেক ভেবেচিন্তে ওকেই অফিসে বসিয়ে দিলাম। প্রথমে তো একদমই যেতে রাজি ছিল না। পরে আমার ছেলে অনেক বুঝিয়ে তারপর ওকে অফিস পাঠায়। আর এখন এই ব্যবসা সামলায়, আমার সংসার সামলায়, হঠাৎ হঠাৎ কখনো বন্ধুদেরকে নিয়ে সময় কাটায়। এমনভাবেই চলছে ওর জীবন। কিন্তু আমি সত্যিই অবাক হই ওকে দেখে। কখনো এমন কথাও শুনিনি যে ও অন্য কারও সাথে কোনো সম্পর্কে জড়িয়েছে। যেখানেই যায় সেখানেই এ বাড়ির বউয়ের পরিচয় দেয়। এত বড়ো ব্যবসা ওর হাতে। একটা সময়ও টাকা পয়সা সামান্য পরিমাণ বাজে খরচ করতে দেখি না।’
-‘সত্যিই অনেক ভালো মেয়ে। কিন্তু আপনার ছেলে তাহলে কী করছে?’
এ প্রশ্নের মাঝেই নীহারের সেই ছেলেটি ঘরে প্রবেশের মূল ফটক পেরিয়ে বসার ঘরে ঢুকল তার অ্যাসিসট্যান্টের সঙ্গে কথা বলতে বলতে। মাকে অতিথিদের সঙ্গে কথা বলতে দেখেও খেয়ালহীনভাবে সিঁড়ির দিকে পা বাড়াল সে। আরিফ তাকে দেখতেই নীহারকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার ছেলে না ভাবি?’
-‘জি ভাই।’
বলেই ছেলেকে ডাকলেন নীহার, ‘মেহফুজ, একটু এখানে আসবি?’
-‘স্যার আপনি আমাকে কল দিয়েন। আমি বাইরেই আছি।’ নীহারের ডাক শুনে অ্যাসিসট্যান্ট নয়ন এ কথা মেহফুজকে বলেই চলে গেল। তারপর সে সিঁড়ি থেকে নেমে এসে আরিফকে না চিনলেও ভদ্রতার খাতিরে তাকে সালাম জানাল।
কেউ একজন এসে দাঁড়িয়েছে দেখেও খেয়াম সামনের টি-টেবিলের দিকে মাথা ঝুঁকিয়ে বসেছিল। কিন্তু হঠাৎ সেই ব্যক্তিটির গম্ভীর কণ্ঠস্বরের এক অদ্ভুত ঝংকার তোলা ধ্বনি কানে বাজতেই কী যেন হলো তার! বড্ড কৌতূহল জাগল একবার সেই ব্যক্তিটির চেহারাটা দেখার। নজর তুলে বলিষ্ঠ আর সুঠাম দেহের বেশ সুন্দর দেখতে সেই ব্যক্তিটির ওপর দৃষ্টিজোড়া নিবদ্ধ হলো তার। ব্যক্তিটির দিকে চেয়ে থাকতে থাকতে যেন বেহায়া হয়ে পড়ছিল খেয়ামের দৃষ্টি। তা বুঝতেই দৃষ্টিজোড়া শীঘ্রই নত করে ফেলল সে। নীহার আরিফের পরিচয় দিয়ে ছেলেকে বললেন, ‘উনি তোর বাবার কলেজ জীবনের বন্ধু। আর এই যে ওনার ছোটো মেয়ে।’
খেয়ামের কথা বলতেই খেয়াম একবার নজর উঁচু করে তাকাল মেহফুজের দিকে, সৌজন্যমূলক কথাবার্তার জন্য।
কিন্তু মেহফুজ এই বসার ঘরটিতে একটি মেয়েকে যেন একদম দৃষ্টি সীমার বাইরেই ফেলে রেখেছে। কিংবা আরও একটি মানুষ এখানে যে আছে তা যেন তার চোখজোড়া একেবারেই দেখছে না। খেয়ামও দেখল, মানুষটি তার দিকে এক মুহূর্তের জন্যও তাকাল না। অথচ বাবার দিকে চেয়ে সে জিজ্ঞেস করল, ‘কেমন আছেন আঙ্কেল?’
-‘আলহামদুলিল্লাহ আব্বু। তুমি কেমন আছ? বসো একটু আমাদের সঙ্গে।’
বাইরে থেকে ফিরে একদমই নারাজ মেহফুজ, এখানে সময় দিতে। দাঁড়িয়েই দায়সারাভাবে কথা শেষ করে চলে যেতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো না। তাই আবশ্যকভাবে সে মায়ের পাশে বসল। টুকটাক কথা চলতে থাকল তাদের মাঝে। খেয়াম বাঁকা নজরে না চাইতেও তাকে বেশ ক’বার আপাদমস্তক দেখে নিলো। মানুষটাকে একটু বেশিই লম্বা মনে হলো খেয়ামের কাছে। এমনকি তার গৌরবর্ণের গায়ের রংটাকেও বেশি সাদা মনে হলো। কালো শার্টের হাতা কনুই অবধি গুটিয়ে রেখেছে মানুষটি। ফর্সা হাতের কালো লোমগুলোও যেন খেয়ামের কাছে বেশি বেশি মনে হলো। এক কথায় মানুষটার মাথার ঢেউ খেলানো চুল, তার খোঁচাখোঁচা দাড়ি, খাঁড়া নাক, চোখদুটোর পিঙ্গলবর্ণ, সব কিছুই খেয়ামের কাছে বেশি বেশি লাগছে। মনে মনে সে আওড়াল, ‘সব কিছু বাড়াবাড়ি পর্যায়ের! একজন ছেলেকে এতটা সুপুরুষ হওয়া মানায় নাকি? সব কিছুই লোকটার বেশি বেশি। ঠোঁটদুটো দেখলেও মনে হয় যেন ঠোঁটদুটোর ফাঁক থেকে কোনোদিনও নিকোটিনের ধোঁয়া বের হয়নি। কোনো কিছুরই মাত্রাতিরিক্ত একেবারেই ভালো না।’ কথাগুলো ভেবে মনে মনেই যেন সে ভেংচি কাটল।
কথার মাঝে নীহার মেহফুজকে খেয়ামের ব্যাপারটা বললেন। তা শুনে মেহফুজ একটু ঝঞ্ঝাটময় মনে করে মাকে বলল, ‘মুনের সঙ্গে কথা বললে বোধ হয় ভালো হবে। আমি এসব ব্যাপারে কী দেখব?’
-‘ওর সঙ্গেই কথা বলতাম। কিন্তু ও তো এখন দেশের বাইরে। ফিরবে তাও তো মাস দেড় পর। এভাবে ফোনে কথা বলে ও-ই বা কী ব্যবস্থা করতে পারবে?’
মেহফুজ মহাবিরক্ত হলো। সে একজন টিভি নাটক ও চলচ্চিত্র পরিচালক নির্মাতা। এই মেয়ের জন্য সে কী চাকরি বা কী কাজ যোগাড় করে দিতে পারবে তা সে বুঝে পাচ্ছে না। আর এসব বিষয় তার একদম ভালোও লাগে না। এদিকে মাও তাদের সামনে এমনভাবে বলছেন যেন তাকেই ব্যবস্থা করে দিতে হবে। তবুও সে এই ঝামেলা থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য বলল, ‘আমি আর কী চাকরি দিতে পারব? আর আমার কাজেও তো তাকে দিয়ে কিছু হবে না। আমার মনে হয় মুনের সাথে কথা বললে আমাদের অফিসে কোনো কাজ দিতে পারবে ও। আর সেটাই বোধ হয় ভালো হবে।’
মেহফুজের চেহারা আর কথার ভাবে স্পষ্ট বিরক্ত প্রকাশ পাচ্ছে। তা বুঝতে পেরে আরিফ আর খেয়াম দুজনেই বেশ লজ্জাজনক অবস্থার মাঝে পড়েছেন। নীহার তাদের মুখের দিকে একবার চেয়ে ছেলেকে বললেন, ‘মুনের সঙ্গে কথা বলা কি ঠিক হবে এখন? পরিবারের সঙ্গে একটু সময় কাটাতে গেছে। সেখানেও মেয়েটাকে অফিসিয়াল কাজে না নক করলেই ভালো হয়। তুই-ই একটু দ্যাখ। তারপর ও ফিরলে ওকে জানাব। তখন না হয় অফিসের কোনো কাজ দেওয়া যাবে।’
মেহফুজ পুরোপুরি বাধ্য হয়ে মাকে জিজ্ঞেস করল, ‘কোন ইয়ারে পড়ছে? না কি অনার্স কমপ্লিট?’
খেয়াম এ কথায় ভীষণরকম বিস্ময় নিয়ে তাকাল মেহফুজের দিকে। অনার্সের ত্রিসীমানাতে পৌঁছনোর আগেই তাকে দেখে মনে হলো তার অনার্স কমপ্লিট!
নীহার বললেন, ‘আরে না। ও এইচএসসি দিয়েছে মাত্র।’
এতক্ষণ বাদে মেহফুজ নজর ফেলল খেয়ামের দিকে। কালো বোরখা আর হিজাব পরে মুখ ঢাকা মেয়েটাকে একবার আগাগোড়া দেখল। বসার ঘরে আসার পর দূর থেকে একজন বয়স্ক লোক আর একজন বোরখা পরা তরুণীকে দেখেছিল সে। তরুণীকে এক ঝলক দেখে সে ভেবেছিল তেইশ বা চব্বিশ বছরের কোনো মেয়ে বসে আছে। মায়ের কথাটা শুনে রা করে উঠল সে, ‘দেখে তো ভেবেছি হয়তো অনার্স পড়ুয়া বা অনার্স শেষ। তার জন্যই আমি কাজের ব্যাপারে কথা বলেছি। এইচএসসি পাস করা মেয়েকে কী কাজ দেওয়া যায়? আর দিলেই বা কী করবে সে?’
আরিফের মুখটা এবার একদমই চুপসে গেল। আর এ কথা শুনে খেয়ামের মাথার মধ্যে জ্বলে উঠল হঠাৎ। পায়ের আঙুল ভাঁজ করে ফ্লোরে খোঁচাচ্ছে সে রাগের চোটে। এই দেশে সামান্য এইট পাস মানুষেরও ছোটোখাটো একটা না একটা কাজ বা চাকরি হয়, যদি ওপর পর্যায়ের মানুষদের সুপারিশ থাকে। রাজনীতি করা পরিবারের মানুষদের কাছ থেকে কাজের জন্য সুপারিশ গেলে এক নিমিষেই একটা চাকরি হয়ে যায়। আর এই ব্যক্তিটি চাকরি দেওয়ার ঝামেলা থেকে মুক্ত হতেই সরাসরি তার কাজ না পারার কথা বলে বসল!
-‘দেওয়া যাবে না কেন? যোগ্যতা অনুযায়ী একটা ব্যবস্থা কর। নিজের কাছে না হলেও অন্য কোথাও কর।’ নীহার একটু জোর দিয়েই বললেন এবার।
-‘আচ্ছা, না হয় দিলাম। কিন্তু সে পারবে কিনা তা তো দেখতে হবে? এত ছোটো একটা মেয়ে। কাজ যা-ই দিই, তাকে তো সেটা পারতে হবে।’
আরিফ ভাবলেন সমস্যা নেই বলে উঠে পড়বেন। আর কথা বাড়াবেন না। এমনিতেই নিজের পরিস্থিতির বর্ণনা করে অনেক লজ্জার মুখে পড়েছেন। তাই আর চাকরির বিষয় নিয়ে আরও বেশি লজ্জার মুখে পড়তে চান না। কিন্তু তার আগেই খেয়াম অচিন্তনীয় একটি কাজ করে বসল। সে মেহফুজকে উদ্দেশ্য করে বলল, ‘স্যরি ভাইয়া। বোরখার ওপরের অবয়ব দেখে যেমন মানুষের সঠিক বয়স পরিমাপ করা যায় না। তেমনই সব সময় শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠিতেও কারও যোগ্যতা পরিমাপ করা যায় না। আর তা উচিতও নয়। অনেক ক্ষেত্রে একজন উচ্চ যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিও কাজে অদক্ষ হয়ে থাকে। আজকাল তো সব যোগ্যতারই কিছু না কিছু কিংবা ছোটোখাটো চাকরি হয়েই যায়। আর আপনার মতো এডুকেটেড, হাই কোয়ালিফাইড ম্যান কাজের ব্যাপারে কাউকে এমনভাবে জাজমেন্ট করতে পারেন ভেবেই অবাক হচ্ছি।’
মেহফুজ বেশ অসন্তুষ্ট হলো খেয়ামের এমন ধারার কথা শুনে। তার মতো এত বড়ো মানুষের সঙ্গে এই বাচ্চা মেয়ের তেজীভাব আর চ্যাটাং চ্যাটাং করে বলা কথাগুলো শুনে একটু রাগও হলো তার। খেয়ামের প্রকাশিত হওয়া ঘন পাপড়ির চোখদুটোর দিকে তির্যক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল সে। নীহারও খেয়ামের কথা শুনে একটু ক্ষণের জন্য থমকে গিয়েছিলেন। তিনি খেয়াল করলেন ছেলের দৃষ্টি। সারাদিন পর কাজ শেষে মাথায় বৃষ্টি নিয়ে আজই সে সন্ধ্যায় এত দ্রুত বাসায় ফিরেছে। আর আসার পর সে যে এখানে বসতে একেবারেই নারাজ ছিল তাও তিনি বুঝতে পেরেছিলেন। তবুও এক প্রকার জোর করেই তাকে বসিয়েছেন। বাইরের মানুষের সাথে এমনিতেই ছেলেটি সেই ছোটো থেকে খুব কম মিশতে পছন্দ করে। তার ওপর সেখানে এমন একটা অনাকাক্সিক্ষত ব্যাপার তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া, আর সেই সাথে খেয়ামের কথাগুলোতে তিনি বেশ চিন্তাতে আছেন ছেলের মেজাজ নিয়ে। যদিও ছেলে তার খুব কমই রাগ প্রকাশ করে। শান্ত চরিত্রের মানুষই তাকে বলা চলে। কিন্তু অহেতুক কারণে বেশি কথাবার্তা সে যে একদমই পছন্দ করে না।
মেহফুজ মিনিটখানিক সময় গম্ভীর থেকে আরিফকে জিজ্ঞেস করল, ‘তো যে-কোনো কাজ করতে পারবে ও?’
আরিফের কথা বলার পূর্বেই নীহার জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘যে-কোনো কাজ বলতে কী কাজ?’
তিনি ছেলের শান্ত চেহারারা অন্তরালে ক্রোধান্বিত ভাবটা বহু আগেই বুঝতে পেরেছেন। আর তাই একটু শঙ্কাতেই আছেন তিনি। হঠাৎ করে ছেলে কেন তার কাজ দিতে রাজি হয়ে গেল তা বাকি দুজন মানুষ না বুঝলেও তিনি ঠিকই বুঝেছেন। মেহফুজ জবাব দিলো, ‘যেহেতু মুন দেশে নেই। ও না আসা অবধি আমার শ্যুটিঙের জায়গাগুলোতেই না হয় নিরাপদ আর ঝামেলামুক্ত কোনো কাজ দেবো। তাছাড়া তো আমার হাতে কোনো চাকরির ব্যবস্থা নেই, অন্তত এইচএসসি পাসে।’
মেহফুজের কথার ধরনে আর আচরণে তার দেওয়া কোনো কাজই করার ইচ্ছা হচ্ছে না খেয়ামের। আর বাবারও যে ইচ্ছা নেই তাও সে বুঝতে পেরেছে। কিন্তু সেই বাবারই ক্লান্ত আর শুকনো মুখটা দেখে আর নিজেদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে মন সায় না দিলেও সে নিজে থেকেই মতামত জানাল বাবাকে, ‘আমার সমস্যা নেই বাবা।’
আরিফ মেয়ের দিকে তাকালেন এ কথায়। খেয়াম চোখের চাউনিতে বাবাকে বোঝালেন, ‘কিচ্ছু হবে না বাবা। তুমি চিন্তা কোরো না।’
খেয়ামের জবাব শুনে মেহফুজ চকিতেই উঠে দাঁড়িয়ে আরিফকে বলল, ‘তাহলে কাল সকাল নয়টার মধ্যেই একবার ওকে নিয়ে আসবেন আঙ্কেল। আমি একটু উঠছি।’ বলেই সে বিনয়ের হাসি হেসে ওপরে চলে গেল।
***
চলবে।