এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৫

0
1887

এক_পশলা_বৃষ্টি_আর_সে পর্ব_২৫
লেখনিতে: চৈত্র রায়

৪৫
,
,
,
ওনাকে দেখে যেনো আমার কষ্ট আরও বহুগুণে বেড়ে গেছে….. চোখের কোনা বেয়ে উপচে পানি পড়ছে….আমার গায়ে হাত ঠেকিয়ে কিছুটা শিউরে উঠলেন….
,
,
,
——— এএএএই মেয়ে কখন থেকে এতো জ্বর… ডাকলে না কেনোওঅঅ…
,
,
,

ওনার কথা গুলো কেমন যেনো জ্বড়িয়ে যাচ্ছে…..হুড়োহুড়ি করে রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়ে আম্মুকে নিয়ে ফিরে এলেন…. নিজেকে তখন এতো অসহায় লাগছিলো…. আম্মু আমার পাশে বসে গলায় কপালে হাত ঠেকিয়ে কাধ থেকে কাপড় সড়িয়ে কাধে পিঠে পেটে কি যেন দেখতে লাগলেন…..
,
,
,
——— এগুলো তো জল বসন্ত….. কিরে টুকি…. আগে কি তোর কখনো পক্স হয়েছে….??
,
,
,
আমি মাথা নাড়িয়ে মাকে না করলাম….. সারা গায়ের মাংস গুলো জায়গায় জায়গায় যেনো খুচিয়ে খুচিয়ে উঠছে…… চামড়া গুলো যেনো একেবারে জ্বলে উঠছে…….. আম্মু এখনো গায়ে হাত দিয়ে কাপড় সরিয়ে দেখে যাচ্ছে……
,
,
,
——— টুকি একটু ঘুমুতে চেষ্টা কর তো….. দেখবি মাথাটা হাল্কা লাগবে….
,
,
,
আম্মু মাথায় আস্তেধীরে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন….. আরাম পেয়ে কখন যেনো ঘুমিয়ে পড়েছিলাম…….. হুট করেই একপ্রকার ঘুমটা ভেঙে গেলো …. আস্তে আস্তে উঠে বিছানা ছেড়ে দাড়াতেই চোখে আধার দেখছি যেনো….. অনেকক্ষণ বিছানায় বসে থেকে তারপর বাথরুমে ঢুকে পড়লাম…. অমনি আম্মু ডাকতে ডাকতে রুমে ঢুকে পড়লো…..
,
,
,
——— টুকি সাবধানে গামছা নিঙড়ানো করে পরে গা মুছবি গোসল একদম করা যাবে না……..
,
,
,
আম্মুর কথা মতন ই ফ্রেশ হয়ে চলে এলাম কিন্তু কাপড়ের ঘষায় জায়গাগুলো যেনো জ্বলে উঠছে….. বেশিক্ষন হাটতে ও পারি না…. গায়ের প্রতিটা জয়েন্ট এ ছেয়ে গেছে যেনো….. সেদিন বিকালে আম্মু কোথথেকে যেনো একটা রংচটা পাতলা মেক্সি হাতে করে নিয়ে এলেন…..
,
,
,
——— টুকি শাড়ি খুলে এটা পড়ে নে দেখবি আরাম পাবি….মিন্নির যখন বাচ্চা হয় তখন ওকে কয়েকটা বানিয়ে দিয়েছিলাম…… এটা রেখে গিয়েছিলো….. আলমারি ঘেটে তোর মাপ মতন সেলাই করে নিয়ে এসেছি একেবারে…… পুরাতন জিনিস দিয়েছি বলে আবার মন খারাপ করিস না…. পাতলা কাপড়ে তোর আরাম হবে বলেই দিয়েছি….
,
,
,
প্রথমে কিছুটা আমতাআমতা করলেও শারীরিক প্রশান্তির কথা ভেবে পড়ে নিয়েছি……আয়নায় নিজেকে দেখতে গিয়ে যেনো ভূত দেখার মতো চমকে ছিলাম…… সারা গায়ে যেনো অভিশাপ ভর করেছে….. নিজের দিকে নিজের ই তাকাতে কেমন যেনো ঘেন্না লাগছে……আম্মু আমার কান্নাকাটি শুনে ছুটে চলে এলেন…. তারপর বেশ কিছুক্ষণ বুঝিয়ে শুনিয়ে এটা সেটা মুখে তুলে দিলেন……. যম ঠাকুর সেদিন অন্যান্য দিন থেকে বেশ জলদিই ফিরে এলেন…….
,
,
,
কষ্ট হয়তো পাওয়া ঢের বাকি ছিলো…… সেদিন সন্ধ্যায় পিরিয়ড সাইকেল টাও গুনে গুনে সাত দিন পিছিয়ে অন হয়ে গেলো……… পক্স গুলোর জন্য গরম পানির ছেকা ও নিতে পারলাম না…… সারারাত বিছানায় ছটফট করেছি আর দুমড়েমুচড়ে শেষ হয়েছি…… আমার এই অবস্থা দেখে ওনি ঠিক করে ফেললেন এম্বুলেন্স খবর দিয়ে হাসপাতালে এডমিট করাবে কিন্তু আম্মুই সামলে নিলেন……. পরদিন থেকে ওনি তিনগুণ ভিজিট দিয়ে বাড়িতেই ডাক্তার ডাকালেন আমার যাতে হেটে হেটে কোন কষ্ট না পেতে হয়…….. গরমে যেনো কষ্ট না পাই তার জন্য আলাদা করে টেবিল ফ্যান কিনে এনেছেন…. খাবার এর কথা তো বলা বাহুল্য……. যখন যা বলছি সব দু’হাতে ভরে নিয়ে আসতো……. দুধ,ডিম, হরলিক্স,বাটার কিচ্ছু বাদ যায় নি…….. রাতে যখন একসাথে ঘুমুতে যেতাম তখন ওনি কেমন যেনো দূ্রে সরে থাকতেন…… আর আমায় বারবার বলতেন তুমি আরাম করে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে যেভাবে ইচ্ছে ঘুমাও…… কেন যেনো ও কথাখানা শুনে আমার বুকের ভেতর কষ্ট হতো……. খুব অভিমান হতো ইচ্ছে করতো ছুটে গিয়ে ওনাকে ঝাপি দিয়ে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকি…. পরক্ষণেই নিজের মনের কষ্ট মাটি চাপা দিয়ে শুয়ে থাকি…… মাঝে মাঝে ওনি হাতে গলায় এখানে সেখানে পক্স গুলো দেখতেন…… টান ধরেছে কিনা……এই সময় গুলোতে ওনার সামনে বেশি যেতে চাইতাম না….. কেমন যেনো নোংরা মনে হতো নিজেকে….. অনেকে টা লুকিয়ে লুকিয়ে থাকতাম….. কেন যেনো ওনি আমার দিকে তাকালেই অস্বস্তি হতো…… মনে হতো মরে যাই…… কিন্তু এ তো সাক্ষাৎ যমঠাকুর….. ওনার থেকে পালিয়ে বাচা তো আমার সাধ্যে নেই…… ঠিক খুজে বের করে নিতেন…..
,
,
,
——— এতো হাটাহাটি করছো কেনো তুলি…. গরমে তো ঘামিয়ে যাবা….. এখানটাই বসো….নিজের কষ্ট টাও কি বুঝো না…. আসোতো…..
,
,
,
বলেই টেবিল ফ্যানের দিকে বসিয়ে দিতেন…. ফল ফলদি তো বিছানার পাশের টেবিল টার উপর সব সময় থাকতো….. চুল ঠিকঠাক করে রাখতাম না বলে আম্মু আর ফুলি খালা মিলে আস্তে আস্তে চুল আচড়ে পরিপাটি করে দিতো….. গামছা দিয়ে গা মুছে দিতো….. গোসল তো করতে পারতাম না……. তারউপর পিরিয়ড…….. একদিন ভোরে ঘুম ভেঙে দেখি ওনি নামাজে বসে দুহাত তুলে ফুপিয়ে কেঁদে কেঁদে আমার সুস্থতার আহাজারি করে যাচ্ছেন……. ওনার শরীরের প্রতিটা কাপুনি যেন বুকে গিয়ে ঠেকছে আমার…… ইচ্ছে করছে ছুটে গিয়ে ওনার বুকে নিজেকে পিষে ফেলি….. আর জড়িয়ে ধরে বলি
,
,,
,
——— দেখুন আমি একদম সুস্থ হয়ে গেছি….. আপনি দয়া করে কাদবেন না আমার খুব কষ্ট হচ্ছে……. এভাবে কেউ কাদে বলেন…….

,
,
,
চলবে
??????
#এক পশলা বৃষ্টি আর সে
#লেখনিতে:চৈত্র রায়
#পর্ব-২৪

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে