#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৪২)
পিউ জানলা ঘেঁষে চেয়ার নিয়ে বসেছে। অন্যান্য সময় থাই গ্লাসে উড়ে আসা এক চিলতে রোদের ক্লান্ত হাওয়া তার হৃদয় ছুঁয়ে দেয়। ভুলিয়ে দেয় সব মন খারা*প। কিন্তু আজকের প্রবল বৃষ্টিতে সেই রোদের দেখা নেই। বরং সামনের রাস্তার চপচপে পথ, নোং*রা হওয়া কাদা পানি জমে জমে ড্রেন চুইয়ে নামছে। ইকবালরা যাওয়ার ঘন্টা খানেকের মাথায় হঠাৎ ঝমঝমে বৃষ্টির ছন্দপতন শুরু হয়। এখনও অল্প স্বল্প ছাট এসে কাচে লাগছে। থেকে থেকে হচ্ছে বিদ্যুৎ স্ফুরণ। ফুটপাতে লেজ গুটিয়ে বসা কুকুরটা ঘেউ ঘেউ করে উঠছে একটু পরপর। পিউ রাস্তার দিক ধ্যানমগ্ন হয়ে চেয়ে রইল। মন দিয়ে দেখল বর্ষা মাথায় নিয়ে, ছুটে চলা ব্যস্ত মানুষ গুলোকে। মাঝে মাঝে দীর্ঘনিশ্বাসে বুক ওঠানামা করল। গ্লাস খুলে তাতে গুঁজে দিলো সরু আঙুল। ঠান্ডা, মোহময় হাওয়া ছুঁয়ে গেল মুখমণ্ডল।
অচপল নেত্রে হাতের দিকে তাকাল সে। কব্জির জায়গাটা লাল হয়ে গিয়েছে। ধূসর ভাই এত জোরে চে*পে ধরতে পারলেন! সে যে ব্য*থা পাবে ভাবলেনও না। ইফতির সাথে কথা বলেছে তো কী? প্রেম তো আর করেনি। প্রেম শব্দ পর্যন্ত ভাবার জন্যেও পিউ ‘আসতাগফিরুল্লাহ’ উচ্চারণ করে ফেলল তৎক্ষনাৎ। ধূসর ভাই ছাড়া আর কারোর পাশে প্রেমের ‘প ‘ও রাখতে চায় না সে।
আচ্ছা,এই দুনিয়ায় সেই কী একা,যে কীনা পনের বছর বয়সে প্রেমে পড়েছে? না কী প্রেমিকটা ধূসর ভাইয়ের মত নিরেট মনের পুরুষ বলেই জীবনটা জগাখিচুরি হয়ে গেল! এই যে সে অভিমানে নীল হয়ে রুমে এসে ঘাপটি মেরে বসল,একটু খোঁজ ও তো নিলেন না! একবার রা*গ ভা*ঙাতে এলেও তো পারেন! কেমন শক্ত প্রেমিক পুরুষ তার! ভাবলে অবাক লাগে,এই মানুষটাই ওকে ভালোবাসে।
ওকে না দেখলে অস্থির হয়। সে না খেয়ে থাকলে খাওয়ানোর জন্য জোরাজোরি করে। আর কোনও ছেলেদের সাথে কথা বললে? তাহলে তো আর রক্ষে থাকেনা। আসলে
ধূসর ভাই জেলাসিতে ভুগছেন। ঠিক যেমন তাকে কোনও মেয়ের পাশে দেখে সেও হিং*সের আ*গুনে জ্ব*লত? তেমনই।
পিউয়ের মনে পড়ল কিছু পুরোনো রঙীন স্মৃতি। বর্ষার বিয়েতে ঘটা একেকটি মধুর ঘটনা। সাদিফের পাঞ্জাবিটা তার পছন্দ হওয়ায় ধূসরেরও সেই একই পাঞ্জাবি কেনা,তার চুড়ি কিনতে মনে না থাকায় নিজে সেই চুড়ি কিনে আনা,শিহাব পেটে চিমটি কা*টায় তাকে বেধরম পে*টানো,সারাটা বিয়েবাড়ি তাকে আগলে দাঁড়িয়ে থাকা,আর সেই দুপুরে? প্রথম বার অল্প একটু কাছে আসা।
পিউয়ের বুক কাঁ*পে লজ্জায়। ওই দৃশ্য যতবার মনে পড়ে ততবার সে কেঁ*পে ওঠে। হাঁস*ফাঁস করে। ম*রে যাওয়ার মত অনুভূতি হয়।
পিউ চোখ নামিয়ে মৃদূ হাসল। বিদ্যুৎ চমকানোর হলদে আলোয়,ল্যাম্পপোস্টের মত স্থির দাঁড়িয়ে থাকা তার ক্ষুদ্র দেহটা কুণ্ঠায় শতভাগ নুইয়েছে। ওই মুহুর্তে ধূসরের ওপর থেকে একটু আগের অভিমানটুকু পরে গেল তার। বরং,সীমা হারানো ভালোবাসার প্রকোপে দ্বায়সারা ভাবে শরীরটা ছেড়ে দিল দেয়ালে।
ধূসর ভাই তার কাছে গোলকধাঁধা, তার কাছে উচ্চতর গণিতের সবথেকে ক*ঠিন আর অমীমাংসিত অংকটা। পুরো খাতা ঘেটেঘুটে ফেললেও শেষে এসে যার ফলাফল জিরো দেখায়। তবু এই মানুষটাকে তার চাই। এর চওড়া বুক,চোখা নাক,মাঝারি দুটো চোখ,আর ধম*ক ছোড়া র*ক্তাভ ওষ্ঠযূগলে হোক তার একচ্ছত্র আধিপত্য। চাইলেও যে মানুষটাকে না ভেবে থাকা যায়না। একই বাড়িতে থাকে,বলতে গেলে চঁব্বিশ ঘন্টা সামনে দ্যাখে। তবুও ওনাকে ভেবেই ভোর আসে,ওনাকে ভেবেই শেষ হয় রজনী। একটুও যে শান্তি নেই কোথাও! রাস্তায় বের হলে,কাউকে দেখলেও মনে হয়, ওইত ওটাই ধূসর ভাই। সেই বিরাট চোখ,ঠোঁট কাম*ড়ে ছোট দৃষ্টিতে তাকানো,কথার মাঝে চুলের ভাঁজে হাত চালানো, এইসবটা গেঁথে থাকে তার হৃদয়ে। মাঝেমধ্যে মনে হয় বুক ফুলিয়ে গিয়ে বক্ষ পেতে বলতে,
‘ নিন, আমার জীবন টা আপনি নিয়ে নিন। শয়ে শয়ে তীর মে*রে ঝা*ঝড়া করে ফেলুন। এটাত আপনারই।’
কে জানত,তিন বছর আগের সেই এক পল তাকানোই হবে তার সর্বস্বা*ন্ত হওয়ার প্রস্তুতি। ওই একবার তাকিয়েই আমৃ*ত্যু অন্তঃস্থল কব্জা করবেন তিনি। জন্ম জন্মান্তরের জন্য হারিয়ে যাবে সে। নিজের স্বকীয়তা ভুলে, জ্ঞান হারাবে ধূসর ভাইয়ের প্রেমের রাজ্য। গা ভেজাতে গিয়ে নাকানি-চুাবানী খাবে তার প্রেম যমুনায়।
পিউ ফোস করে শ্বাস ফেলল। ভ*য়ঙ্কর,মায়া হীন এক লোকের প্রেমে যখন পড়েইছে,তাহলে এসব ভেবে লাভ কী? এই জীবনে ছাড় পাবে বলে মনে হয় না।
তক্ষুনি পুষ্প তার রুম থেকে হাঁক ছু*ড়ল,
‘ পিউ,ঘুমাবি না?’
সে নড়েচড়ে উঠল। উচু স্বরে উত্তর করল,
‘ আসছি।’
‘ কোল বালিশটা নিয়ে আসিস,আমারটা কিন্তু দেব না।’
‘ আচ্ছা।’
একটা কোলবালিশ আর ছোট্টখাট্টো পাতলা কম্বলটা বগলদাবা করে বোনের কামড়ায় রওনা করল পিউ। তারা দুজন আলোচনা করে ঠিক করেছে, যতদিন না পুষ্পর বিয়ে হচ্ছে, একসাথে ঘুমাবে। এরপর বিয়ে হলে ইকবাল ভাই প্রায়ই আসবেন। অবশ্য এই প্রায় আসা নিয়েও পিউয়ের সন্দেহ আছে। ইকবাল ভাই আপুর যা দিওয়ানা আশিক,দেখা গেল দিনের বারো ঘন্টাই এসে বসে থাকলেন এখানে। পিউ হাঁটতে হাঁটতে ফিক করে হাসল। ধূসর ভাইটা যদি তার জন্য এমন পাগল হোতো! ইশ!
‘ কী রে,গাট্টিবস্তা নিয়ে কই যাচ্ছিস?’
পিউ ঘুরে চাইল। সাদিফ তার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে। পড়নে পাতলা কমলা টিশার্ট। হাঁটুর একটু নীচ অবধি প্যান্ট। ফর্সা লোমশ পা দুটো একেবারে চকচক করে তাকিয়ে আছে। পিউ বলল,
‘ আপুর রুমে যাচ্ছি ভাইয়া। ওখানে ঘুমাব।’
সে ভ্রু উঁচায়৷ অবাক হয়ে বলে,
‘ পুষ্প তোকে নেবে ঘুমাতে? ও না বেড শেয়ার করতে পারেনা!’
‘ ওসব তো অজুহাত ছিল। ইকবাল ভাইয়ের সাথে রাত জেগে ফুসুরফুসুর করত কী না! আমি শুনলে বিপদ তো,তাই শুতে নিতো না।’
সাদিফ বোঝার ভঙি করে বলল ‘ ওওও…’
পিউ খেয়াল করল,ইকবাল -পুষ্পর কথা উঠলেও সাদিফের চেহারা একইরকম থাকে। বিন্দুমাত্র পরিবর্তন দেখা যায় না । একটু খা*রাপ অন্তত লাগা উচিত, তাও না। সে বিভ্রান্ত হয়ে দু পাশে মাথা নেড়ে হাঁটা ধরতেই সাদিফ প্রস্তাব রাখল,
‘ দাবা খেলবি?’
পিউ আবার ফিরে তাকায়।
‘ খেলে কী লাভ? আপনিইতো জিতবেন।আমি তো পারিইনা।’
‘ খেলতে খেলতেই না পাঁকা হবি। আমিও কী প্রথম থেকে এত ভালো খেলেছি? খেলবি?’
পিউ একটু ভেবে বলল,
‘ আচ্ছা,এগুলো রেখে আসি তবে।’
সাদিফ এগিয়ে এসে বলল,
‘ একা পারবি না। আমাকে দে।’
‘ না পারব।’
‘ দিতে বলেছি দে।’
পিউ দিয়ে দিলো। সাদিফকে ঢুকতে দেখেই শোয়া থেকে উঠে, ঠিকঠাক হয়ে বসল পুষ্প। কথা বলল না। ওর ওপর থেকে তার রা*গটা এখনও পরেনি। সাদিফই আগ বাড়িয়ে বলল,
‘ ডিস্টার্ব করার জন্য সরি রে পুষ্প! ‘
পুষ্প ছোট করে বলল,
‘ সমস্যা নেই।’
সাদিফ মৃদূ হাসল। বালিশ -কাথা বিছানায় ছু*ড়ে ফেলে, পিউয়ের দিক চেয়ে বলল ‘ আয়।’
পুষ্প বলল ‘ কোথায় যাচ্ছো তোমরা?’
পিউ বলল ‘ দাবা খেলব।’
‘ ওহ।’
‘ তুই খেলবি? তাহলে দাবা বাদ,চল ক্যারাম খেলি!’
সাদিফ আপত্তি জানানোর আগেই পুষ্প বলল,
‘ না খেলব না। তোরাই যা।’
****
দাবার সব গুটি টেবিলের ওপর ঢালল সাদিফ। ওমনি পিউ হুটোপুটি করে ব্যস্ত হলো সাজাতে। এই কাজটা তার বেশ ভালো লাগে। কোনটায় কোন চাল তাও জানে। শুধু জানেনা খেলা জমে উঠলে কী দানে প্রতিপক্ষ কে হারানো যায়! অত বুদ্ধি তার মাথাতেই নেই।
সে গভীর মনোযোগ খাঁটাল গুটি সাজাতে। সেই পুরোটা সময় মুখের দিকে চেয়ে রইল সাদিফ। ঠোঁটের কোনে লেপ্টে থাকা অল্প হাসিটুকু পিউয়ের নয়নাভিরাম মুখশ্রী দেখে ধীরে ধীরে গাঢ় হলো। খেলা তো ছুঁতো। পিউকে কতক্ষণ সামনে বসিয়ে দেখার অমোঘ ইচ্ছে পূরন করার এর চেয়ে উত্তম মাধ্যম তার জানা নেই।
সারাদিন অফিস,পিউয়ের কলেজ,কোচিং,বাড়ির সবার ভিড়ে একটু আকটু তাকানোতে কি মন ভরে? এই যে এত কাছে থেকে গোলগাল মুখটা দেখছে,এর সাথে তুলনা হয় কিছুর?
পিউ তাকানোর আগেই সাদিফ ঠিকঠাক হয়ে বসল। স্বাভাবিক কণ্ঠে বলল,
‘ আগে তুই চাল দে।’
পিউ অনেকদিন খেলেনি। মাথা চুল্কে বলল,
‘ আগে যেন কোনটা দেব? নৌকা চালব না সেনা?’
সাদিফ মুচকি হেসে বলল, ‘ যেটা তোর ইচ্ছে।’
‘ যাহ,তা আবার হয় না কী!’
‘ তুই চাইলে হতে বাধ্য।’
পিউ সন্দেহী চোখে তাকাল।
‘ হঠাৎ আমাকে এত পাম দিচ্ছেন যে? কী চাই!’
সাদিফ হাসিটা ধরে রেখেই বলল,
‘ কী মনে হয়? কী চাইতে পারি?’
পিউ ভেবে বলল,
‘ নিশ্চয়ই এমন কিছু, যেটা আমি ছাড়া হবে না। নাহলে আপনি এত ভালো কথা বলার মানুষ তো নন।’
সাদিফ শব্দ করে হেসে উঠল। ভাবল,
‘ ঠিক বলেছিস,যা চাই,তা তুই ছাড়া পাওয়া অসম্ভব।
পিউ অধৈর্য ভঙিতে ভ্রু নাঁচাল ‘ কী চাই বলুন।’
‘ তোকে চাই পিউ। শুধু তোকে।’
‘ বলবেন? ‘
‘ হু? না, আপাতত কিছু চাইনা। আগে সৈন্য চালতে হয়।’
‘ ও হ্যাঁ হ্যাঁ, মনে পড়েছে।’
সাদা, ছোট সৈন্য টাকে পিউ সামনে এগিয়ে দিলো। পরপর কালো দুটো গুটি আগাল সাদিফ। পিউ ভ্রু কুঁচকে সাদিফকে লক্ষ্য করল কিছুক্ষন । ইদানীং ধূসরের থেকেও একে ওর সেল্ফ সেন্টার মনে হয়। মুখ দেখেও মন বোঝার উপায় নেই। তার প্রেমিকার আজ বিয়ে ঠিক হলো,অথচ চেহারায় বিন্দুমাত্র শোকের ছাঁয়া নেই? পিউয়ের মনে খটকা লাগে,সাদিফ ভাইয়ের প্রেমটা খাঁটি ছিল তো?
তার চেয়ে থাকার মধ্যে চোখাচোখি হলো। পিউয়ের নাক মুখ কোঁচকানো দেখে সাদিফের কপাল বেঁকে এলো।
‘ কী দেখছিস?’
পিউ থতমত খেয়ে দৃষ্টি নামিয়ে বলল,
‘ হু? কই,কিছু না।’
সাদিফ মনে মনে হাসে। সে যেমন সুযোগ পেলেই ওকে দ্যাখে,পিউও কী সেরকম কিছু করল? এটা কী গ্রিন সিগন্যাল?
পিউ উশখুশ করল। পরপর রয়ে সয়ে শুধাল,
‘একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই। আপনি অনুমতি দিলে বলতাম।’
‘ আর না দিলে? ‘
‘ না দিলেও বলব,কারণ জ্বিভ নিশপিশ করা ভীষণ খারা*প।’
সাদিফ হেসে বলল,
‘ আচ্ছা বল।’
পিউ জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজাল। স্পষ্ট কণ্ঠে শুধাল ‘ ‘আপনার খা*রাপ লাগেনা? ক*ষ্ট হয় না?’
সাদিফ চোখ পিটপিট করল,
‘ কেন?’
পিউ আমতা-আমতা করে বলল,
‘ না মানে, ইকবাল ভাইয়ের সাথে আপুর যে বিয়ে ঠিক হলো,তাই। আপনারতো দুঃ*খে শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ভাইয়া। হা-হুতাশ করে বাপ্পারাজের মত গানও গাওয়ার কথা। অথচ আপনি আজ সবার মধ্যে কী বেহায়া বনে দাঁত কেলিয়ে বসেছিলেন। ওনাদের সাথে একই টেবিলে বসে কব্জি ডু*বিয়ে রোস্ট খেলেন। আবার বিকেলে চাও! এসব কীভাবে সম্ভব!’
সাদিফ হতভম্ব হয়ে বলল,
‘ এসব আমি কেন করব? আর এতে অসম্ভবের কী আছে?’
পিউ ধৈর্য হীন ভঙিতে বলল,
‘ আপনি বুঝতেই পারছেন না,আপনি যদি এভাবে মনের ক*ষ্ট লুকিয়ে রাখেন,ভাণ করেন হাসিখুশি থাকার,সেটাত বিপদ। এতে মানুষের বদ্ধ উন্মাদ হওয়ার আশ*ঙ্কা থাকে। আপনি আমার কাছে শেয়ার করুন সাদিফ ভাই। ভুলে যান আমি আপনার ছোট।, ভাবুন আমি আর আপনি এখন বন্ধু। কেমন? তাহলে বলুন দেখি,আপনার কী খুব ক*ষ্ট হচ্ছে? বাঁচব না ম*রে যাব, ওপারে চলে যাব,এরকম টাইপ কিছু মনে হচ্ছে? ‘
সবটা সাদিফের মাথার ওপর দিয়ে যায়। বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে লটকে গেল সে। বিস্মিত কণ্ঠে বলল,
‘ তোর কী তার টার ছি*ড়ে গেছে পিউ? কী যা তা বলছিস? আমার ক*ষ্ট হবে কেন? আমিতো খুশি হয়েছি।’
পিউ চোখ উঁচিয়ে বলল,
‘ খুশি হয়েছেন?’
‘ হ্যাঁ। পুষ্প যাকে ভালোবাসে তাকে পাচ্ছে খুশি হব না?’
পিউয়ের মায়াটা তরতর করে বাড়ল। আহারে! কত ভালো মানুষ! নিজের ভালোবাসাকে কোর*বানি দিয়েও ওপাশের মানুষটার ভালো থাকা নিয়ে ভাবছেন উনি।
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে, কাতর কণ্ঠে বলল,
‘ তাহলে আপনার ভালোবাসার কী হবে ভাইয়া?’
সাদিফ চক্ষু গোঁটায়,
‘ কী হবে বলতে?’
পিউ ‘চ’ সূচক শব্দ করল। এই সাদিফ ভাই এত ধানাই-পানাই করছেন কেন? এমন ভাব, যেন ভাজা মাছ উলটে খেতে হয় তাই জানেন না।
মোটামুটি বিরক্ত হয়ে বলল’ ঢং করছেন কেন? আপনি যে আপুকে ভালোবাসেন আমিতো জানি।’
সাদিফের চোখ উলটে এলো। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে,নিস্তব্ধ কণ্ঠে বলল,
‘ এসব,এসব তোকে কে বলেছে?’
‘ কেন,আমি বুঝি ছোট? কিছু বুঝিনা? আপনি যে আপুর পাশে বসার জন্য কেমন করতেন,হাসতেন ওকে দেখে,আরো অনেক কিছু করতেন সব কী খুলে বলা যায় না কী।’
সাদিফ আহ*ত ভাবে তাকিয়ে থাকল। অসহায় কণ্ঠে বলল,
‘ এর মানে,তুই এতদিন ধরে ভেবে এসেছিস, আমি পুষ্পকে পছন্দ করি?’
পিউ মাথা ঝাঁকাল।
‘ বর্ষার বিয়েতে যখন বলেছিলি, তুই আমার মনের কথা জানিস,সেটা এটা ছিল?’
পিউ বলল, ‘ হ্যাঁ, তা নয়ত কী!’
সাদিফ কিছুক্ষন নিষ্পলক চেয়ে রইল। ভাষাহীন,নির্জীব দৃষ্টি। পিউ ঠোঁট কা*মড়ে, ভ্রুঁ কুঁচকে ঠাওর করতে চাইল আবহাওয়া।
আচমকা দাবার কোর্ট টা উল্টে দিলো সাদিফ। পিউ ভ*য়ে দাঁড়িয়ে গেল। সাদিফ টেবিলের পায়ায় লা*থি মা*রল সবেগে।
পিউয়ের মাথা চক্কর দিলো তা দেখে। ভী*ত কণ্ঠে, মিনমিন করে বলল, ‘ কী হলো ভা…’
সাদিফ কথা কেড়ে নেয়। সজোরে ধম*কে বলে,
‘ তুই এক্ষুনি আমার সামনে থেকে সর। এক্ষুনি।’
‘ আমি কী করলাম?’
‘ তোকে যেতে বলেছি পিউ। ‘
পিউয়ের সাহস হলোনা দাঁড়ানোর। দ্রুত পায়ে বেরিয়ে এলো। চোখ ভিজে উঠেছে ততক্ষণে। সবাই শুধু ওকেই ধ*মকায়,ওকেই মা*রে। সে কী রাস্তার পাড়ে লাগানো সরকারি আমড়া গাছ? যে,যখন যাবে ঢিল ছু*ড়বে!
***
পিউ বিছানায় উলটে পরতেই চটক কা*টল পুষ্পর। বই থেকে মুখ তুলল। পিউ বালিশে মাথা গুঁজে দু পা উচুতে উঠিয়ে উপুড় হয়ে শুয়েছে। পুষ্প জিজ্ঞেস করল,
‘ কী হয়েছে?’
পিউ নিশ্চুপ। পুষ্প বই নামিয়ে রাখল পাশে। একটু এগিয়ে পিঠের ওপর হাত রাখল ওর। নরম গলায় বলল,
‘ কী হয়েছে আমার বোনের?’
পিউ মাথা তুলল। পুষ্প বিস্ময় নিয়ে বলল,
‘ কাঁদছিস কেন?’
পিউ চোখ মুছে, নাক টেনে বলল,
‘ সবাই আমাকেই ব*কে কেন আপু? আমি কী খুব খারা*প? ‘
পুষ্প তটস্থ ভঙিতে ঘুরে বসে বলল,
‘ কে ব*কেছে তোকে? আর তুই খারা*প কেন হবি? আমার বোনতো ওয়ার্ল্ড বেস্ট!’
পিউ বিরস কণ্ঠে বলল,
‘ যখন যার ইচ্ছে হয় সেই ব*কে। ধূসর ভাইতো বকতে বকতে বড় করলেন। দুপুরেও এক গাদা বকুনি খেলাম। সাদিফ ভাই ভালোমতো খেলতে নিয়ে বকেঝকে পাঠিয়ে দিলেন। আম্মুত সারাদিন বকে,মাঝমধ্যে তুইও বকিস। আব্বু কখনও বকেননি,কিন্তু কাল ঠিকই মা*রলেন। ‘
পুষ্পর মায়া হলো খুব। মনটাও হুহু করে উঠল বোনের প্রতি। গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
‘ আহা থাক পাখি,আর কেউ বকবেনা। আমিও প্রমিস করলাম,আর বকবনা।’
পিউ উঠে বসে বলল,
‘ কোনও প্রমিসের দরকার নেই। আমি আর এ বাড়িতে থাকব না। যে বাড়িতে আমার কদর নেই,সেখানে আমিও নেই। সন্ন্যাসী হয়ে যাব।’
পুষ্পর হাসি পেলো এবার।
‘ সন্ন্যাসী হয়ে কোথায় যাবি?’
‘ যেদিকে চোখ যায়, কমলার মতো বন-বাদাড়ে চলে যাব।’
‘ আর খাবি কী?’
‘ অত বড় বনে খাওয়ার মত কিছু তো থাকবে। একেবারেই কিছু না পেলে, গাছের পাতা খাব,তবু এ বাড়িতে আর নয়।’
পুষ্প ঠোঁট টিপে হেসে বলল,
‘ কিন্তু সেখানে তো ধূসর ভাই থাকবেন না। পারবি ওনাকে না দেখে থাকতে?’
পিউয়ের রাগটা টুপ করে নি*ভে গেল। চুপসে এলো এ যাত্রায়৷ মনম*রা হয়ে বলল
‘ এই একটা স্টেশনে এসেই তো আমার রেলগাড়ীটা থেমে যায়।’
পুষ্প শব্দ করে হেসে ওঠে। হাসার তোপে শুয়ে পরে বিছানায়। পিউ গাল ফুলিয়ে বলল,
‘ আমার ক*ষ্টে তুই হাসছিস?’
‘ আচ্ছা,হাসব না। ‘
পিউ ঠোঁট উলটে, দু হাঁটুতে থুত্নী ঠেকিয়ে বলল,
‘ কিচ্ছু ভালো লাগছে না। জীবনটা ঝুলে আছে এই ভালো না লাগার ওপর। ‘
পুষ্প মাথার নীচে এক হাত দিয়ে,চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
‘ কঠিন অসুখ! এর চিকিৎসা ও নেই। কিন্তু তুই ভাবিস না,আয় তোকে আমার আর ইকবালের প্রেমের কাহিনী শোনাই। শুনতে চাইছিলিত কাল থেকে।’
‘ হ্যাঁ হ্যা শুনব। ‘
প্রফুল্ল চিত্ত পিউয়ের।
‘ এখানে শো। ‘
পুষ্প বালিশ পেতে দিতেই পিউ পাশে শোয়। সে তাকাল বোনের দিকে,আর পুষ্পর চোখ ছাদের ওপর। তারপর একটা লম্বা নিঃশ্বাস টেনে বলল,
‘ ইকবালকে তো বহুবার দেখেছি,কিন্তু ওকে ভালো লেগেছিল কখন জানিস?’
‘ কখন?’
‘ ছোট চাচ্চুর বিয়ের সময়। ‘
‘ সেতো অনেক বছর আগের কথা। ‘
‘ হ্যাঁ। তখন ও একেবারে একটা অলবয়সী ছেলে ছিল। ভার্সিটিতে উঠবেন আর কি। আমি বোধ হয় এইটে পড়তাম! মনে নেই ঠিক। তবে তুইত একেবারেই পিচ্চি। ইকবাল তখন এখনকার থেকেও বেশ শুকনা। একটা ঢিলেঢালা শার্ট পরে, ভাইয়ার সাথে হাত লাগিয়ে ফুল টানাচ্ছিল দেয়ালে। এক ফাঁকে ঘেমে যাওয়া মুখটা মুছলো শার্টের হাতায়। আমার কী হলো কে জানে,কিছুক্ষণ হা করে চেয়ে দেখলাম ওকে। এমন তো নয় আগে দেখিনি,কিন্তু ওই দেখাটা আলাদা লাগল,একদম আলাদা। ‘
‘ তারপর? ‘
‘ তারপর, আর দেখা হলো না। ভাইয়া বিদেশ চলে গেলেন,ইকবালও আর আমাদের বাড়ি আসত না। মাঝে-মধ্যে কলেজে যাওয়ার ফাঁকে দেখতাম রিক্সায় যাচ্ছে। তখন এই পার্সোনাল গাড়িটা ছিলনা ওর। সেই একটু দেখলেই আমার বুকের মধ্যে কেমন কেমন করত জানিস। তোলপাড় হয়ে সব ভে*ঙে চূ*ড়ে পড়ত।
পিউ উদাস কণ্ঠে বলল, ‘ মনে হোতো পৃথিবীর সব তান্ডব নিজের হৃদয়ে বইছে। ‘
‘ একদমই তাই। তারপর যখন ভাইয়া ফিরলেন,আর ও আবার এলো,ওই সময় তো ওকে দেখেই ঠিক করে ফেললাম, একেই বিয়ে করব। কী করলাম জানিস?
পিউ আগ্রহভরে তাকায়,
‘ কী?’
‘ সবাইকে এড়িয়ে ওর কাছে গিয়ে বললাম ‘ আপনার ফোন নম্বরটা দিন তো।’
‘ দিলো?’
‘ এক কথায়। হয়ত বন্ধুর বোন,তাই। এরপর আমি সেই রাতেই মেসেজ করলাম, আমি আপনাকে বিয়ে করব ইকবাল ভাই।’
পিউ তড়িৎ বেগে উঠে বসে বলল ‘ তারপর? ‘
‘ ও কোনও রিপ্লাই-ই করল না। আমার তো ভ*য়ে ঘাম ছুটে গেল। মেসেজ ডেলিভারড হয়েছে,রাত বাজে দুটো, অথচ নো রিপ্লাই। ধূসর ভাইকে নালিশ ঠুকে দেবেনা তো? সেই ভ*য়ে সারারাত ঘুমাইনি। অথচ মশাই, পরদিন আমার কলেজের সামনে হাজির। আমিতো বাকরুদ্ধ! সে সি-এন-জি থেকে নেমে এসে আমার দিকে এগিয়ে এলো। ভ*য়ে আমার অবস্থা করূন। সামনে এসেই একেবারে রামধ*মক দিয়ে বলল ,
‘ এই মেয়ে,বয়স কত তোমার? বড় ভাইয়ের বন্ধুকে ওসব মেসেজ পাঠাও লজ্জা করেনা? ফের যেন না দেখি এসব পাঠাতে। তাহলে কিন্তু কপালে দুঃ*খ আছে বলে দিলাম।’
পিউ চোখ বড় করে বলল ‘ কী সাং*ঘাতিক! তুই ভ*য় পেয়েছিলি?’
‘ আরে না। ও যত কঠোর আর গোমড়া মুখে কথাগুলো বলেছিল,ওর চাউনী ছিল ততটাই নরম আর শান্ত। একেবারে আকাশ -পাতাল তফাৎ । যে কোনও মেয়ে বুঝে যাবে ওই দৃষ্টির মানে। তখন তো বড় হয়েছি,কলেজে পড়ছি।
আমার সাহস এতে তরতর করে বেড়ে গেল । রাতে রুমে এসেই অনেকগুলো মেসেজ দিলাম,নো রিপ্লাই। অপেক্ষা করলাম,বুঝলাম ইচ্ছে করে এমন করছে। আমিও কম কীসে, শয়তানী করে একটা কিসিং ইমুজি পাঠালাম। আর সাথে সাথে কল করল ইকবাল। আমি ভাবলাম এবারেও ধম*কাবে। অথচ সে একদম থমথমে কণ্ঠে বলল,
‘ তুমি ভুল কোরছো পুষ্প! ধূসর আমার বন্ধু আর তুমি তার বোন। আমাদের মধ্যে এর বাইরে কোনও সম্পর্ক হওয়া উচিত নয়। এসব হয়ওনা। ধূসর জানলে ক*ষ্ট পাবে।’
পিউ মুগ্ধ কণ্ঠে বলল,
‘ ইশ! ইকবাল ভাই আসলেই একটা জিনিস। আচ্ছা, তারপর? ‘
‘ তারপরও আমি ওকে জ্বা*লানো থামাইনি। অতি ক*ষ্টের পর,টানা ছয় মাস গেলে ভদ্রলোক সাড়া দিলেন। কিন্তু প্রেম শুরু হওয়ার পর জানলাম,ও না কী প্রথম দেখাতেই আমাকে ভালোবেসে ফেলেছিল। আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত। মাঝেমধ্যে ওই যে কলেজের সামনে দেখতাম? সেটাও আমার জন্যে আসতো। শুধু, ভাইয়ার ভ*য়ে বলেনি।’
‘ কী সর্ব*নাশ! এতদিন অকারণে পেছনে ঘোরাল তাহলে ? শুনে রা*গ হয়নি তোর? ‘
‘ হয়েছিল না আবার? কথাই বলিনি একদিন। পরে সরি -টরি বলে ঠান্ডা করল। তাহলে ভাব,নিজেও ভালোবাসতো,অথচ শুধু শুধু আমাকে পেছনে নাকে দড়ি দিয়ে ঘুরিয়েছে। হতচ্ছাড়া লোক! ‘
পিউ গালে হাত দিয়ে ভাবল,
‘ ধূসর ভাই যে কবে রাজী হবেন! কবে যে ওদের প্রেমটাও জমবে!’
পুষ্প হাসি-হাসি মুখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বোনের চুলে আঙুল ডু*বিয়ে বলল,
‘ জানিস পিউ, ভালোবাসা মানে হলো ম*রা। তুই যাকে ভালোবাসবি সেও ম*রবে,আবার তুইও ভালোবেসে ম*রবি। তোকে সে ভালো না বাসলেও আফসোসে ম*রবে। সে ভালো বাসেনা ভেবে ভেবে তুইও ম*রবি। এই গোটা ব্যপারটাই একটা বাজে জিনিস। অথচ এই বাজে, বদ জিনিসেই আমরা আ*সক্ত হয়ে পরি। ‘
পিউ মনে মনে ভাবল,
‘ তার মানে আমিও ম*রতে নেমেছি? কিন্তু এই ম*রায় এত সুখ কেন আল্লাহ! ‘
পুষ্প কাত হয়ে শুয়ে বলল,
‘ মন ভালো হয়েছে?’
‘ অর্ধেক!’
‘ বাকী অর্ধেক কবে হবে? ভাইয়াকে পেলে?’
পিউ লজ্জায় লাল হয়ে গেল প্রথমে। পরে মন খা*রাপ করে বলল,
‘ সে টা যে কবে হবে!’
‘ তুই বড় হ,তাহলেই হবে।’
পিউ বিরক্ত হয়ে বলল ‘ আর কত বড় হতে বলছিস? পাঁচ ফুট তিন আমি।’
পুষ্প হেসে, গাল টেনে দিয়ে বলল,
‘ বোকা,লম্বায় বড় হলেই কী বড় বলে? ধর এমন বড়, যাতে তোর সিদ্ধান্তের ওপর কেউ তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে পারবেনা। কেউ বলবেনা, ও ছোট! ওর কথা ধরতে নেই। বরং এটা বলবে,ও সাবালিকা,ও এখন সব বোঝে। ‘
পিউ উদ্বীগ্ন কণ্ঠে বলল,
‘ আঠের বছর হলেইতো সরকার এমন বলবে। কিন্তু আঠাশ বছর হলেও বাড়ির লোক মেয়েকে ছোটই দেখবেন। কাল শুনিসনি আব্বু কী বলেছিলেন? তুই কিছু বুঝিস না হেনতেন। তাহলে আমার ব্যাপারেও তো এমন হবে। ‘
পুষ্প আবার হেসে বলল,
‘ আগেত সরকারের চোখে বড় হ। কে বলতে পারে, বাকী গুলো হয়ত আপনা- আপনি হয়ে গেল। ‘
‘ কিন্তু কীভাবে হবে?’
‘ সব আমি বলে দেব কেন? তুই ভাব,নে ঘুমো এবার। আমার কাল ক্লাশ আছে। ঘুমাই আমি।’
পুষ্প অন্যপাশ ফিরে শুলো। হাত বাড়িয়ে নিভিয়ে দিলো ল্যাম্পশেড। পিউও চুপচাপ শুয়ে পরে। আর কিছুদিন পরেই তো ওর জন্মদিন। আঠের হতে বাকী নেই। তবে কী বড হওয়ার সাথে সাথে, ধূসর ভাইকে পাওয়ার দিনও আসছে?
****
সাদিফ বরাবর ভদ্র ছেলে। মারিয়ার সঙ্গে ঝগ*ড়ায় জড়ালেও অফিসে ভাণ করে,যেন ওকে চেনেইনা। এই যেমন আজ, সন্ধ্যায় একটা বোর্ড মিটিং ছিল ওদের। সামনে ঈদ যেহেতু, নতুন নতুন প্রোডাক্ট স্যাম্পল দরকার কোম্পানির। সে জন্যেই সমস্ত স্টাফ নিয়ে কর্মকর্তারা মিটিং ডাকলেন।
মারিয়াকে দেখতেই সাদিফ এমন ভাবে চোখ ফেরাল, যেন আগে কোনও দিন দেখেইনি। মারিয়াও কিছু বলেনি। সে এখানে সামান্য কর্মচারী, সাদিফ তার উর্ধ্বতন। সেদিনই প্রতিজ্ঞা করেছিল আর ঝগ*ড়া করবে না। শেষে দেখা যাবে,সিনিয়রকে অসন্মান করার জন্য তাকেই কিক মেরে অফিস থেকে বের করে দিয়েছে।
আর সেই মিটিং শেষ হলো দশটার পরে। মারিয়ার এখন ভীষণ রকম মেজাজ গরম। আগে আগে মিটিং ডাকলে এদের কী পেট খা*রাপ হয়? ওদের আর কী! তারাতো নাঁচতে নাঁচতে গাড়িতে করে যাবে। দূর্ভোগ তো সব ওর মত সাধারণ মানুষের। এখন সে বাস পাবে কী করে? নয়টার পরেই বাস পাওয়া যায় না। মারিয়া অনেকক্ষন ধরে স্টপেজে দাঁড়িয়ে আছে। তার পা ব্য*থা করছে এখন। কা*ন্নাও পাচ্ছে। আশেপাশে লোকজন কমে আসছে। দোকানগুলোও ধীরে ধীরে বন্ধ হচ্ছে। এরপর তো কাকপক্ষীও থাকবে না। সে একা একটা মেয়ে,কোনও বিপদ হলে? ভাবতেই নারী মন আঁ*তকে ওঠে।
আল্লাহ, আল্লাহ করে একটা বাস ভিক্ষা চায়। বাস এলো না,তবে তিনজন ছেলে এসে দাঁড়াল স্টপেজে। ওদের দেখেই গুঁটিয়ে গেল সে। ওড়না টেনেটুনে, মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়িয়ে রইল। সব কটার হাতে সিগারেট। কোমড়ে হাত দিয়ে টানছে একেকজন। মারিয়া আড়চোখে চাইতেই, ওরাও চাইল। চোখাচোখি হলো ওমনি। বখাটে, বখাটে, অস্বাভাবিক দৃষ্টি দেখে ভীতু মন আরো নেতিয়ে আসে। দাঁড়িয়ে থাকবে না কী রিক্সা নিয়ে চলে যাবে? কিন্তু অতদূর যাওয়ার জন্য যথার্থ ভাড়াও কাছে নেই। তার ওপর আজ বৃষ্টি পরেছে সকালে। রিক্সা পেলেও সঠিক ভাড়ায় পাওয়া হ্যারিকেন দিয়ে খুঁজলেও মিলবে না।নিজেকে অসহায় লাগছে খুব। কেন যে মেয়ে হয়ে জন্মাল! ছেলে হলে তো বুক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারত।
তার ভাবনার মধ্যেই একটা ছেলে যেঁচে বলল,
‘ হ্যালো আপু,আপনার কি কোনও হেল্প দরকার? ‘
মারিয়ার কলিজা ছল্কে ওঠে। ভ*য়ে ঘাম ছোটে। সিনেমায়,পত্রিকায় দেখে আসা বা*জে দৃশ্য গুলো মাথাচাড়া দেয়। কাধব্যাগটা বুকে চে*পে ধরে, হুড়মুড়িয়ে ছুট লাগায় সে। ছেলে তিনটে ভ্যাবাচেকা খেয়ে চেয়ে রয় সেদিকে।
মারিয়া উল্টোপথে ছুটে এলো। অর্থাৎ তার অফিসের দিকে। আর যাই হোক,এই জায়গা নিরাপদ। সিসি ক্যামেরা আছে,আবার দারোয়ানও থাকবেন। দরকার পরলে এখানেই রাত কা*টাবে। কিন্তু বিপদ মাথায় নিয়ে কিছুতেই বের হওয়া যাবে না। কিন্তু মা? না ফিরলে চিন্তা করবে তো। অফিসের সামনে পৌঁছে ফোন করে দেবে নাহয়।
সে যখন ছুটে আসছে সাদিফ তখনি অফিস থেকে বের হয়। সব গুছিয়ে বের হতে হতে দেরী হলো আজ। এই দেরীটা প্রায়শই হয় অবশ্য। বাইকে চাবি দিয়ে,উঠে বসার সময়, খেয়াল করলো একটা মেয়ে প্রানপণে দৌড়ে আসছে। থেমে গেল সে। বাইক স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে সচেতন চোখে চাইল। চশমার ফাঁক দিয়ে দেখার সময় চেনা মুখটা কাছে এসে থামল তার। সাদিফের ভ্রু দুটো বেঁকে গেল আরো। এই মেয়ে এভাবে ছুটছে কেন?
বিপদে শত্রুকে দেখলেও আপন মনে হয়। মারিয়ারও তাই হলো। সাদিফকে দেখেই ওর কাছে এসে ব্রেক কষল সে। বুকে হাত দিয়ে হাপাতে হাপাতে তাকাল। সাদিফ ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ কী হয়েছে? এভাবে ছুটে এলেন কেন? কোনও সমস্যা?’
মারিয়া নিশ্চুপ। সাদিফের চকচকে বাইকের দিকে জ্বলজ্বলে দৃষ্টিতে তাকিয়ে সে। ইশ! এই বাইকটা যদি তাকে বাড়িতে দিয়ে আসতো! কিন্তু বাইকের মালিক, সাদিফ বলেই দমে গেল ইচ্ছেটা। পরক্ষণে আবার ভাবল, আগে বাড়ি যেতে হবে। নাহলে এই রাত বিরেতে কিছু ঘটলে সর্বনা*শটা তারই।
মারিয়া ঘাম মুছল কপালের। সাদিফ তীক্ষ্ণ চোখে চেয়ে বলল ‘ আর ইউ ওকে?’
মারিয়া জো*রে নিঃশ্বাস নিলো। কথাটা বলবে, না কী, বলবে না, সময় নিয়ে ভাবল। তারপর ইগোটাকে ঝেড়ে-ঝুড়ে ফেলে দিল সাইডে। রয়ে সয়ে বলল,
‘ আমাকে একটু ড্রপ করে দেবেন বাড়িতে? ‘
সাদিফ আকাশ থেকে পড়ল এমন ভাবে তাকাল। অনিশ্চিত কণ্ঠে বলল, ‘ আমি?’
মারিয়া নিষ্পাপ কণ্ঠে বলে,
‘ জি। আমি না একটাও বাস পাচ্ছিনা।’
সাদিফ কপাল কুঁচকে বলল,
‘ তো আমি কী করব? বাস পাচ্ছেন না সেটা অবশ্যই আপনার সমস্যা। রিক্সা করে যান।’
‘ আমার কাছে ভাড়া নেই। ‘
কথাটা গলার মধ্যেই দলা পাকিয়ে ঘুরল। বিপদে পরেছে বলে,এসব তো বলা যায় না। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে, আস্তে করে বলল’
‘একটু পৌঁছে দিলে কী হয়? ওই রাস্তা দিয়েইতো যাবেন।’
‘ সে যেখান দিয়েই যাই,আপনার মতো রাজাকার কে আমি বাইকে ওঠাব কেন?’
মারিয়া বিহ্বল হয়ে বলল,
‘ আমি,আমি রাজাকার?’
‘ অবশ্যই। ‘
‘ আমি রাজাকার হলাম কোন দিক দিয়ে?’
‘ অনেক দিক দিয়ে। রাজাকার মানে দেশদ্রো*হী। তারা কী করত,যে দেশে থাকে,খায়,ঘুমায়, পাকিস্তানের সাথে হাত মিলিয়ে, সেই দেশের,দেশের মানুষেরই ক্ষ*তি করল? ঠিক যেমন আপনি, যে বাড়িতে পড়াতে যান,সেই বাড়ির ছেলের পাঞ্জাবিতে বিচুটি পাতা দিয়েছেন। মনে মনে চেয়েছেন আমারও ক্ষতি হোক। এই দুটোই বেঈ*মানী। সেই দিক থেকে আপনি একজন পরিষ্কার রাজাকার, সরি রাজাকারী।’
মারিয়া হতবাক হয়ে বলল ‘ দুটো এক হলো?’
‘ নিঃসন্দেহে। ‘
‘ যাব না আপনার গাড়িতে। ‘
‘ নেবোওনা। ‘
কথাটা বলেই বাইকে উঠে বসল সাদিফ। রীতিমতো ধোঁয়া ছুটিয়ে চলেও গেল। মারিয়া নিহ*ত চোখে চেয়ে রইল কিছুক্ষণ । বুক ফে*টে কা*ন্না পেলো তার। রওনাক কে মনে পড়ল খুব। আজ যদি ভাইটা বেঁচে থাকতো, ঠিক নিতে আসতো না? কিংবা ও থাকলে এই চাকরী- বাকরির ও দরকার পরত না।
মারিয়ার দু চোখ ভরে উঠল। কার্নিশটুকু তর্জনী দিয়ে মুছে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে থাকল। আচমকা,ফিরিয়ে এলো সাদিফ। ঠিক তার পায়ের কাছে এসে ব্রেক কষল। ব্যাক সিট দেখিয়ে বলল,
‘ উঠুন।’
মারিয়া আশ্চর্য বনে গেল। সত্যিই কী লোকটা ফেরত এসছেন? তার মূক দৃষ্টি দেখে সাদিফ বিরক্ত কণ্ঠে বলল,
‘ উঠলে উঠুন তো ম্যালেরিয়া। আ’ম বিয়িং লেইট!’
ভীষণ গম্ভীর স্বর। মারিয়ার চেহারা চকচকে হলো। অন্ধকার ছেঁয়ে যাওয়া মুখটা ভরে ওঠে হাসিতে। কৃতজ্ঞ চোখে চেয়ে উঠে বসে সে।
দু পা গুছিয়ে ব্যাগ আর ওড়নার দু মাথা কোলের ওপর রাখতেও পারল না সাদিফ টান বসাল বাইকে। মেয়েটা অপ্রস্তুতিতে হুড়মুড় করে পিঠের ওপর পরল। অস্বস্তিতে মিইয়ে, ধড়ফড়িয়ে সোজা হয়ে বসল আবার।
সাদিফের কিচ্ছু যায় এলো কী না বোঝা গেল না। বরং সহজ -সাবলীল গলায় বলল,
‘ ধরে বসুন,পরে হাত পা ভা*ঙলে হাসপাতালে নিতে পারব না। সরি!’
প্রথম বার মারিয়ার রা*গ হয়নি৷ ক্ষো*ভে ফর্সা নাক ফুলে ওঠেনি৷ বরং তুলতুলে হাতটা সাদিফের কাঁধে রাখল সে। রকেট বেগে থরথর করে ঝাঁকুনি দিলো শরীর৷ যেন হৃদপিন্ডটা তাড়াহুড়ো করে বাম থেকে এক লাফে ডানে চলে এসেছে৷ চারপাশ থেকে শনশন বায়ুতে সাদিফের পারফিউমের কড়া ঘ্রান ছুটে এসে নাকে লাগছে তার। চোরা চোখে, ওমনভাবেই সাদিফের পিঠের দিকে তাকাল মারিয়া। প্রথম বার ছেলেটার এত কাছাকাছি বসে অন্যরকম অদ্ভূত, অনুভূতি হলো। সেই অনুভূতি অদ্বিতীয়, এবং অজানা।
****
চার গৃহিণী লিস্ট করতে বসেছেন। আকদে কারা কারা নিমন্ত্রিত হবেন তার এক বিরাট আর সম্পূর্ন তালিকা। আত্মীয় স্বজন সবার নাম যোগ হচ্ছে তাতে। মৈত্রীরাও জায়গা পেয়েছে। সেবার বর্ষার বিয়েতে মৈত্রীর মায়ের সাথে ওনাদের বেশ সখ্যতা হয়েছিল। হোক ছোটখাটো প্রোগ্রাম,তাতে কী! সিকদার বাড়ির প্রথম বিয়ে,মনে রাখার মতোন না হলে হয়?
পিউ পাশে দাঁড়িয়ে। তার আনন্দের সীমা নেই। সবথেকে ভালো ব্যাপার হলো আর মাত্র একটা পরীক্ষা বাকী ওর। সেটাও পুষ্পর বিয়ের আগে শেষ। তারপর অবশ্য ফাইনাল আছে,কিন্তু দু তিন মাসের গ্যাপ মাঝে। জমিয়ে আনন্দ করতে পারছে এই অনেক।
লিখতে লিখতে সুমনা বেগমের কলমের কালি শেষ হলো। তিনি দু একবার মোটা কলমটা ঝাঁকালেন, না কালি নেই। তারপর ওর দিক চেয়ে বললেন,
‘ আরেকটা কলম নিয়ে আয় তো মা।’
পিউ ছুটল। দুরন্ত পায়ে সিড়ি ডিঙিয়ে ওপরে উঠতেই সামনে পরল ধূসর। শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে আসছিল সে। দুজন দুজন কে দেখেই থমকে দাঁড়াল। পিউ, ধূসরের শ্যামলা খোলা বুক দেখেই চট করে চোখ বুজে ফেলল। টেনেটুনে সরাল দৃষ্টি। না না,বেহায়ার মতো এভাবে তাকানো ঠিক না।
আরেকদিক মুখ ফিরিয়ে পাশ কা*টাতে যেতেই ধূসর খপ করে হাতখানা চে*পে ধরে। পিউ চকিতে ফিরল।সে কী আবার কিছু করেছে?
সেই ক্ষণে ধূসর টান বসায়। পিউ হুমড়ি খেয়ে আছড়ে পরে বুকে। ভ*য় পেয়ে মুঠোয় আকড়ে ধরে শার্ট। বিমুঢ় চোখে তাকাতেই ধূসর ভ্রুঁ নাঁচাল,
‘ কী সমস্যা?’
‘ ককই?’
‘ কাল থেকে এড়িয়ে যাচ্ছিস কেন আমাকে?’
অভিযোগ,অথচ কী ভারী কণ্ঠ! পিউ অবাক হয়ে চেয়ে রয়। ওনাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য আছে ওর? বলল,
‘ এড়িয়ে যাব কেন? কাল থেকে তো আপনিই বাসায় ছিলেন না।’
ধূসর পূর্ন দৃষ্টি বোলাল তার চেহারায়। হঠাৎ করেই কোমল স্বরে শুধাল,
‘ রা*গ করেছিস?’
পিউ আশাতীত ভঙিতে তাকাল।
এরকম একের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্ন শুনে বেহুশ না হলে হয়।
আনমনে দুপাশে মাথা নেড়ে বোঝাল,’ না।’
পরক্ষনেই বিরক্ত হয়, চেঁ*তে যায় নিজের ওপর। ক*ঠোর করতে চায় চোখ-মুখ। সেতো রা*গ করেছে,ভয়া*বহ রা*গ করেছে। তাহলে না বলল কেন?
তার বিভ্রান্ত চেহারা ধূসর মন দিয়ে দেখল। পরপর দেখল পিউয়ের ছোট ছোট সাদাটে দুটো হাত,যা খা*মচে ধরে আছে বুকের কাছটা।
ধূসর আবার চাইল মেয়েটার চোখের দিকে।
কপালে ভাঁজ ফেলে শুধাল,
‘ পিৎজ্জা খাবি?’
পিউ বিস্মিত,স্তব্ধ। কী মুসিবত! কাল থেকে এগুলো কী ঘটছে ওর সাথে? ধূসর ভাই এমন এমন কাজ করছেন,এমন এমন কথা বলছেন সে যে খুশিতে পাগল হয়ে যাবে!
পিৎজ্জার কথা শুনে তার রা*গ-ঢাক শেষ। মোমের ন্যায় গলে যায় ভেতরের ছাই চাপা আ*গুন। স্ফুর্ত চিত্তে বলল,
‘ হ্যাঁ খাব। ‘
ধূসর মুচকি হাসে। পিউয়ের হাতদুটো আলগাভাবে ছাড়িয়ে দেয়। ওকে পেছনে ফেলে সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে,
‘ বিকেলে তৈরী থাকিস, নিয়ে যাব।’
পিউ আনন্দে শিশুর ন্যায় লাফিয়ে ওঠে। সুমনা নীচ থেকে ডাক ছু*ড়লেন,
‘ কী রে পিউ,পেন আনতে গিয়ে শহীদ হয়ে গেলি না কি!’
পিউ ত্রস্ত ঠিকঠাক হয়ে বলল,
‘ আ,আনছি ছোট মা!’
***
পিউ নিজের সবিটুকু উচ্ছাস দিয়ে তৈরী হলো। লাল চুড়িদার, কাঁধের এক পাশে ঝোলানো বেনুনি,চোখ ভরা কাজল , তবে লালের সাথে বেমানান,ধূসরের প্রথম উপহার সেই নীল কাচের চুড়ি গুলো হাতে ভরল। ঝুনঝুন -ঝুনঝুন শব্দ তুলে ঘর থেকে বের হতেই দেখল পুষ্প ওড়না পিন করতে করতে আসছে। রীতিমতো তাকে দেখেই এগিয়ে এসে পিঠ ফিরিয়ে বলল’ পিনটা লাগিয়ে দে তো!’
পিউ কপাল কুঁচকে বলল,
‘ ঘুরতে যাচ্ছিস?’
‘ হ্যাঁ।’
‘ ভাইয়ার সাথে? ‘
‘ হু।’
‘ কাল তো বললিনা আমায়।’
‘ তুই যে ভাইয়ার সাথে যাচ্ছিস,আমাকে বলেছিস?’
পিউ থতমত খেয়ে বলল,
‘ তোকে কে বলল?’
পুষ্প হাসল।
পিউ বলল, ‘ চল না তাহলে সবাই একসাথে যাই।’
পুষ্প নীচে নামতে নামতে বলল,
‘ কোনও দরকার নেই,প্রাইভেসি ফার্স্ট।’
পিউ ভেঙচি কা*টল। বিয়ের আগেই এই,বিয়ের পরে এই মেয়ে তাকে চিনলে হয়।
পার্কিং লটে এসেই ইকবাল কে দেখে পিউ অবাক হলো। ছেলেটা গাড়ির দরজা ঘেঁষে, কনুইয়ে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে। ঠোঁটের কোনায় বরাবরের মত নিষ্পাপ হাসি। পিউ হাসল ওকে দেখে। ছটফটে পায়ে কাছে গিয়ে বলল,
‘ আরে ভাইয়া,কখন এলেন?’
ইকবাল টেনে টেনে বলল,
‘ ওয়েলকাম, ওয়েলকাম। বউ -শালী একসাথে,শালার কী ভাগ্য!’
এলাম কিছুক্ষণ। তোমাকে তো ঝাকানাকা লাগছে পিউপিউ। একেবারে লাল পরী!’
পুষ্প বলল, ‘ আর আমাকে?’
ইকবাল কণ্ঠ নামিয়ে বলল, ‘ ইউ আর অলওয়েজ বিউটিফুল মাই লাভ।’
পুষ্প আই ঢাই করে ওঠে লাজে। পিউ উহুম উহুম করে কেশে উঠল। বলল,
‘ ইকবাল ভাই কিন্তু, ফ্লার্ট খুব ভালো পারেন।’
পুষ্প তাল মেলায়,’ সে আর বলতে,একেবারে ওস্তাদ।’
ইকবাল বলল,
‘ নারীর হোলো আল্লাহর সৌন্দর্য সৃষ্টির অন্যতম নিদর্শন। তাদের একটু প্রসংশা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করলে ক্ষতি কী?’
‘ থাক থাক,অনেক হয়েছে। তা কোথায় যাচ্ছি আমরা?’
ইকবাল গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল ‘ আগেতো ওঠো মাই লাভ। ‘
পুষ্প উঠে বসে। পিউ আশেপাশে তাকায়। ধূসর ভাই কোথায়? কোথায় ওনার বাইক?
ইকবাল মিটিমিটি হেসে বলল ‘ কাউকে খুঁজছো পিউপিউ?’
‘ ইয়ে,ধূসর ভাই?’
ইকবাল গুরুতর কণ্ঠে বলল,
‘ ও তো পার্লামেন্টে গিয়েছে। সন্ধ্যের আগে আসবে না।’
পিউয়ের মুখটা শুকিয়ে গেল ওমনি। গুটিয়ে একটুখানি হয়ে এলো প্রায়। সন্ধ্যের আগে আসবেননা,তবে যে ওকে বলে গেলেন, তৈরি হয়ে থাকতে?’
পিউ মাথা নামিয়ে নিলো। চেহারার পরতে পরতে অন্ধকার।
ইকবাল ঝুঁকে এসে শুধাল,
‘ তুমি কি প্ল্যানটা ক্যান্সেল করে, আমাদের সাথে যেতে চাও পিউ?’
পিউ না চেয়ে,দুদিকে মাথা নাড়ল। তার ক*ষ্ট হচ্ছে খুব। ধূসর ভাই এরকম মজাও করেন আজকাল? নীচু কণ্ঠে
বলল, আপনারা যান।’
‘ শিয়র?’
‘হু।’
বলতে বলতে তাকাল, চমকে গেল ওমনি। পাশে ধূসর এসে দাঁড়িয়েছে। লাইট ব্লু শার্টের সাথে, ম্যাচিং করে আবার সানগ্লাশ পরেছে।
তার এমন ড্যাশিং ভাবমূর্তি দেখেই হার্ট মিস করল পিউ। ইকবালের দিক চাইতেই,সে ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ বোকা হয়ে গেলে তাইনা? হা হা হা।’
পুষ্পও হুহা করে হেসে ফেলল। হাসছে ইকবালও। সবাই মিলে কী দারূন মজাটাই না নিলো ওকে নিয়ে! পিউ ঠোঁট উলটে ঘাড় চুল্কাল। ধূসর স্থূল কণ্ঠে বলল,
‘ গাড়িতে গিয়ে বোস।’
‘ গাড়িতে যাব? আমরা কি সবাই একসাথে যাচ্ছি?’
ইকবাল বলল,
‘ কেন খুশি হওনি? কারো সাথে একটু কোয়ালিটি টাইম কা*টাতে চাইছিলে না কী?’
ধূসর ধম*ক দিলো ‘ শাট আপ ইকবাল।’
পিউ লজ্জা পেয়ে বলল ‘ না না তা না।’
মনে মনে প্রচন্ড খুশি হলো সে। সবাই মিলে ঘুরলে চমৎকার হবে। আজকের বিকেল যে কী অনবদ্য কাটবে তাতে কোনও সন্দেহই নেই।
আপু তাহলে মিছেমিছি ভাব নিলো তখন। পিউ হাসল। গুটিগুটি পায়ে এসে, বোনের পাশে উঠে বসল।
সেই আগের মতো,ধূসর ড্রাইভিং-এ আর ইকবাল পাশে তার।
ছেলেটা সিটবেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলল,
‘ তা পিউ,গতবার তো কুত্তার দৌড়ানি খেলে,আজ কী খাবে?’
পুষ্প আবার হেসে উঠল। পিউ লাজুক কণ্ঠে বলল,
‘ আজকে শুধু পিজ্জা খাব ভাইয়া।’
‘ আইসক্রিম খাবে না কী?’
পুষ্প শুনেই বলল ‘ আমি খাব।’
‘ এই দ্যাখো,কাকে বললাম আর কে লাফিয়ে উঠল।’
‘ তাতে কী,পিউ আর আমি কী আলাদা না কি?’
‘ না না তা কেন। ‘
ধূসর,সামনে আইসক্রিমের ভ্যান দেখলে দাঁড়াস ভাই।’
গাড়ি চলতে চলতে পিউ ভিউ মিররে চোখ বোলায়। সেই আগের মতো ওটা তার দিকে ঘোরানো। পিউ হাসল।
ভাবল, ‘এত লুকিয়ে দেখার কী আছে ধূসর ভাই? আমিতো আপনারই। সরাসরি, ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকলেও কিছু মনে করব না। ‘
পনের মিনিটের মাথায় গাড়ি থামাল ধূসর। আইসক্রিমের ভ্যান দেখেই দাঁড়িয়েছে। ইকবাল বলল,
‘ তোরা বোস,আমি নিয়ে আসছি। কে কয়টা খাবে?’
‘ আমি দুটো।’
পিউ বলল, ‘ আমি একটা, চকলেট ফ্রেভার।’
‘ ওউখে। ‘
ইকবাল বেরিয়ে যায়। দু পা হাঁটতেই পাশে আসে ধূসর। সে বলল’ আরে এলি কেন? আমিতো পারতাম।’
ধূসর কাঁধ উচিয়ে বলল ‘ ইচ্ছে হলো, তাই।’
‘ মারাত্মক ইচ্ছে তোর,শালা সমন্ধি।’
‘ চুপ কর,আ’ম নার্ভাস ইকবাল।’
ইকবাল দাঁড়িয়ে গেল। থেমে থেমে, অবাক কণ্ঠে বলল,
‘ নেতাজী, সিকদার মাহতাব ধূসর নার্ভাস? কেন?’
‘ পিউয়ের বার্থডে ইজ কামিং সুন।’
চলবে।
#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৪৩)
একটা পুরোনো গলির সামনে এসে মারিয়া গাড়ি থামাতে বলল। সাদিফ ব্রেক কষল তৎক্ষনাৎ। মারিয়া নেমে দাঁড়াতেই সে আশেপাশে চেয়ে বলল,
‘ এখানে আপনার বাসা?’
‘ জি।’
‘ কোন বাড়িটা?’
মারিয়া হাত লম্বা করে দেখাল,
‘ এই রাস্তার একটু সামনে। ওদিকে আর গাড়ি যাবেনা। রাস্তার কাজ চলছে তো ‘
‘ ওহ। ওকে, আপনি তাহলে বাড়ি চলে যান,আমিও যাই।’
পুরো কথাটা সে বলল হাসি ছাড়া,এবং রাশভারি গলায়। মারিয়া কাঁধব্যাগ বুকে চে*পে দাঁড়িয়ে রইল। সাদিফ বাইক ঘুরিয়ে ফের স্টার্ট দিতে গেলে ডাকল,
‘ শুনুন।’
সাদিফ ঘাড় কাত করে তাকায়,
‘ কিছু বলবেন?’
শ*ক্তপোক্ত চেহারা দেখে মেয়েটা গুলিয়ে ফ্যালে সব। এই ছেলে এমন কেন? একটু হাসলে কী হয়?
মিহি স্বরে বলল,
‘ ইয়ে,ধন্যবাদ! আপনি লিফট না দিলে আজ যে কী করতাম!’
‘ ইটস ওকে।’
সে আবার স্টার্ট দিতে গেলে মারিয়া আবার ডাকল,
‘ শুনুন। ‘
সাদিফ বিরক্ত হলো৷ তেমন কপাল কুঁচকেই তাকাল। মারিয়া নিভে গিয়ে বলল,
‘সরি!’
‘ বলুন কী বলবেন?’
মারিয়া রয়ে সয়ে বলল,
‘ আসলে বলতে চাইছিলাম যে….’
‘ আসল নকল বাদ দিন ম্যালেরিয়া,আগেই বলেছি আমার দেরী হচ্ছে!’
তার কণ্ঠ অধৈর্য।
মারিয়া ব্যকুল চোখে তাকায়। যেই চোখে অনেক কিছু বলতে চাওয়ার প্রবণতা। সাদিফ হয়ত বুঝে গেল। বাইক ফের স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে বলে,
‘ আচ্ছা,রিল্যাক্সে বলুন। ‘
মারিয়া বুকভরে শ্বাস নিলো এবার। জ্বিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে খুব নরম গলায় বলল,
‘ আমি আসলে দুঃখিত! ‘
সাদিফ ভ্রু কোঁচকায়, ‘ কেন?’
মারিয়া চোখ নামিয়ে বলে,
‘ এমনিই। বলতে পারেন অনুশোচনা। আপনি মানুষটা এত ভালো,আর আমি সেই শুরু থেকে ঝ*গড়া করেছি। যা মুখে এসেছে তাই বলেছি। বয়সে ছোট হয়েও সম্মান দিইনি। বিচুটি পাতা দিয়ে কী অবস্থাটাই না করেছিলাম! আ’ম রেইলি ভেরী সরি ফর এভ্রিথিং! ‘
সাদিফের মুখমণ্ডল সবেগে মসৃন হলো। অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যাপারটায় বিস্মিত সে।
‘ আপনি কি মন থেকে সরি বলছেন? না কি লিফট দিয়েছি, সেই সৌজন্যেতা রক্ষায়?’
মারিয়া উদ্বেগ নিয়ে বলল,
‘ মন থেকে বলছি। গড প্রমিস!’
সাথে গলার কাছটা চি*মটি দিয়ে দেখালো সে। বাচ্চাসুলভ আচরণ দেখে হেসে ফেলল সাদিফ।
‘ বেস। সরি এক্সেপটেড৷ ‘
মারিয়া মুগ্ধ হয়ে সেই হাসি দ্যাখে। নিজেও হাসল ঠোঁট চে*পে।
প্রস্তাব রাখল,’ অন্তত এক কাপ চা খেয়ে যেতেন যদি…’
‘ আজ নয়,অন্য দিন। বলেছেন এতেই হবে।’
‘ অন্যদিন সত্যিই আসবেন?’
‘ কথা দিচ্ছিনা,তবে চেষ্টা করব।’
‘ ঠিক আছে। সাবধানে যাবেন।’
প্রথম বার মেয়েটিকে ভালো লাগল সাদিফের। মনে হলো সে অতটাও অভদ্র নয়৷ একটু আকটু ভদ্রতাও জানে। হেসে বলল,
‘ থ্যাংক্স, এন্ড আম অলসো সরি! ‘
মারিয়া অবাক হয়,জানতে চায়,’ কেন?’
সাদিফ বলল,
‘ ম্যালেরিয়ার ডায়রিয়া বানানোর জন্য।’
তারপর ধোঁয়া ছুটিয়ে চলে গেল৷ মারিয়া প্রথম দফায় হতভম্ব হলেও পরপর হেসে উঠল। শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে হাত ছোঁয়াল বক্ষে। এখনও কাঁ*পছে এখানে। সারা রাস্তা কেঁ*পেছে। ধুকপুক করছে ভীষণ । সাদিফের সাথে কথা বলতে গিয়ে প্রথম বার টের পেয়েছে কন্ঠরোধ হচ্ছে তার। প্রকান্ড জড়তা লাগছে। চোখের দিকে তাকাতে গিয়ে মিইয়ে এসেছে মনে মনে। এমন হওয়ার কারণ? সে কি তবে ছেলেটার প্রেমে পড়েছে?
***
মিরপুরের নামি-দামি,আর পরিচিত মুখ হলো “ইয়েলো নাইফ রেস্টুরেন্ট”। ছাদ ছুঁয়ে টাঙানো অসংখ্য ফুল দিয়ে স্বাজানো এটি। জাকজমক,আর শোধিত ভীষণ। সবথেকে বেশি মনকাড়া লাগে সন্ধ্যের পর। শহরের বুক চিড়ে যখন অন্ধকার নামে,তখন এই রেস্তোরা ঘিরে জ্বালানো কৃত্রিম আলোগুলো দেখলে গেঁথে থাকে চোখে।
ধূসরদের গাড়িটা, রাস্তার এক সাইড ধরে এর সামনে এসে থামল। মূলত এখানকার পিৎজ্জাটা ভালো। ইকবাল আর তার পছন্দের শীর্ষে। পিউ এসেছে প্রথম বার। পুষ্পর চোখ জ্ব*লে উঠল রেস্টুরেন্টের নাম দেখে। এখানে তার বেহিসেবী আগমন। অবশ্যই ইকবাল কে সাথে নিয়ে। আহা,নাগা উইংশটার যা স্বাদ! মুখে লেগে থাকার মতো প্রায়।
পিউ আগে আগে নামল। তিন তলার রেস্টুরেন্ট দেখতে নীচ থেকে চোখ আকাশে তুলতে হচ্ছে তাকে। ইয়েলো নাইফের নীচে ছোট করে লেখা ‘লাভ এ্যাট ফার্স্ট বাইট ‘দেখেই ফিক করে হেসে উঠল। আড়চোখে ধূসরের দিক দেখল একবার। এখানে লেখা লাভ এ্যাট ফার্স্ট বাইট,আর ধূসর ভাই তার লাভ এ্যাট ফার্স্ট সাইট! কী সাংঘাতিক কম্বিনেশন!
ধূসর,ইকবাল, পুষ্প আর সে সিরিয়ালে সিড়ি বেয়ে উঠল।
ধূসর বেছে বেছে একটা টেবিল দেখে ওদের ইশারা করল। পিউ বসতে গেলে চেয়ার টেনে দিলো স্বহস্তে। পুষ্প তা দেখে ঠোঁট ফুলিয়ে বলল,
‘ ভাইয়া,আমাকে তো চেয়ার এগিয়ে দিলেনা। পিউকে দিলে? কেন এই একচোখামি ভালোবাসা?’
বলতে বলতে সে ঠোঁট চে*পে হাসে। ইকবাল বলল,
‘ তুমি আর পিউ কি এক হলে বলো? তুমি হলে আমার বউ,আর পিউ হলো…. ‘
ধূসর চোখ পাকিয়ে তাকাতেই ইকবাল মিটিমিটি হেসে বলল ‘ সরি! সরি!’
পিউ লজ্জা পেলো। নীচু কণ্ঠে শুধাল,
‘ আপনি বসবেন না ধূসর ভাই?’
ইকবাল ওকে অনকরণ করে বলল,
‘ আপনি বসবেন না ধূসর ভাই?’
‘ শাট আপ ইকবাল। ‘
‘ শাট আপ পিউ।’
পিউ বলল,’ আমি কী করলাম?’
‘ তাহলে আমিই বা কী করলাম?’
ধূসর গম্ভীর করল স্বর, ‘ ইকবাল,তোর কি বয়স দিনদিন কমছে না বাড়ছে?’
ইকবাল দুদিকে মাথা নেড়ে বলল,
‘ জানিনা। মনে হচ্ছে একই জায়গায় আটকে। দেখছিস না,দিন দিন কেমন ইয়াং হচ্ছি?’
পুষ্প মুখ ব্যাকায়, ‘ ইয়াং না ছাই। চুল পেঁকে যাচ্ছে তোমার!বুড়ো হচ্ছো।
পিউ বলল,
‘ এই বুড়োর জন্যেইত এত পাগলামি করলি। জানেন ভাইয়া,ওর যখন সাদিফ ভাইয়ার সাথে বিয়ে ঠিক হোলো, কী যে কেঁদেছে ! খালি হেচকি তুলে, কেঁ*দে কেঁদে বলেছে’ আমি ইকবালকে ছাড়া মরেই যাব।’
পুষ্প মৃদূ ধম*কে ওঠে, ‘ চুপ থাকবি তুই?’
ইকবাল ঠোঁট কাম*ড়ে হাসল। পুষ্প লজ্জায় আই-ঢাই করে তাকিয়ে থাকে আরেকদিক। বাঁচার চেষ্টা চালায়, প্রেমিকের মুগ্ধ,ঘায়েল দৃষ্টি থেকে।
ইকবালের হঠাৎ চোখ পড়ল ধূসরের দিকে। আশেপাশে দেখছে সে। চট করে দুষ্টু বুদ্ধি এলো মাথায়। ঠোঁটে হাসি ধরে রেখেই শুধাল,
‘ আচ্ছা পিউ,ধরো পুষ্পর মত তোমারও একটা ছেলের সাথে হুট করে বিয়ে ঠিক হয়েছে। তুমি ও কি কাঁ*দবে?’
পিউ কি দুষ্টু কম? ধূসর পাশে, এই সুযোগে তাকে জ্বালানোই যায়। সে অবাক হওয়ার ভাণ করে বলল,
‘ কাঁ*দব কেন? আমিত খুশি হব।’
ধূসর দৈবাৎ সজাগ চোখে তাকাল।
ইকবাল বলল,
‘ মানে,অন্য কারো সাথে বিয়ে ঠিক হলে তুমি খুশি হবে? কেন?’
‘ অন্য কারো কেন বলছেন? বিয়ে করে বাড়িটা ছাড়তে পারলেই আমি বাঁচি। এই বাড়িতে খালি বকা খাই। বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি গেলে জামাইয়ের আদর খাব।’
ধূসর চড়া কণ্ঠে ধমকে উঠল,,
‘ এক চ*ড় মা*রব।’
পিউ কেঁ*পে ওঠে। হতবাক হয়ে তাকায়। ইকবাল নিষ্পাপ কণ্ঠে বলল,
‘ ওমা কেন? কী এমন বলল ও! ‘
ধূসর ক্ষিপ্ত চোখে তাকিয়ে রইল কিছু সময়। তার ধম*কের জোর শুনে কাছাকাছি টেবিলের অনেকেই চেয়ে আছে। সে নিভল,শ্বাস ফেলে বলল,
‘কিছু না। অর্ডার দিয়ে আসি।’
তারপর দুম দুম করে পা ফেলে চলে গেল। আড়াল হতেই ইকবাল,পুষ্প আর পিউ স্বশব্দে হেসে উঠল। পুষ্প বলল,
‘ ভাইয়া জেলাসও হয়!’
‘ ব্যাটার বুক ফাঁটে তো মুখ ফোঁটেনা, বুঝলে শালিকা!’
পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে, আনমনে বলল ‘ তার মুখ ফোঁটার আশায় আমি বুড়ি হলাম বলে।’
**
ধূসর অর্ডার দিয়ে ফিরে এলো। এখানে খাওয়ার আগে টাকা দাওয়ার নিয়ম। সবটা সেড়ে এসে বসল। ইকবাল সে পাশাপাশি, পিউ -পুষ্প পাশাপাশি।
সে আসতেই ওদের ফিসফিস করা থামে। শশব্যস্ত ভঙিতে বসে থাকে। কিছুক্ষণের মাথায় খাবার এলো। একটা লার্জ সাইজ পিৎজ্জা, তিনটে বার্গার,চারটে কোল্ড কফি আর একটা মোটামুটি সাইজের নাগা উইংশে, ছোট খাটো টেবিলটা ভরে যায়।
পিৎজ্জাটা শুধুমাত্র পিউয়ের, এটা সবার জানা। গাড়িতে বসেই কে কী খাবে সেই আলোচনা শেষ। সেই মোতাবেক খাবার অর্ডার করেছে ধূসর। পুষ্প হামলে পরল নাগা উইংশের প্লেটের ওপর। ব্যস্ত হাতে ওটাকে টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। এই খাবারটা মাত্রাতিরিক্ত ঝাল। অতিরিক্ত হজম ক্ষমতা আর অভ্যাস ছাড়া কার পক্ষেই সম্ভব নয় খাওয়া। সে যতবার এসেছে,খেয়েছে। ঝালে নীল হয়ে বসে থেকেছে আর চোখেমুখে বাতাস করেছে ইকবাল। আজকেও এরকম কিছু হবে,কিন্তু সে নিশ্চিন্ত। আজ বাতাস করার অনেকে আছে। তবুও এটা মিস দেয়া যাবেনা। সবাই যখন খাবারে হাত দেবে,ঠিক সেই সময়, ভেসে এলো,
‘ আরে ভাইয়া,ভাবি,তোমরা এখানে?’
চেনা কণ্ঠস্বর শুনে সকলে এক যোগে তাকাল। খাবারে রাখা হাত থেমে গেল। পুষ্প আর ইকবালের ঠোঁটে হাসি ফুটলেও ধূসরের চিবুক শক্ত হলো ওমনি।
একবার পিউয়ের দিক তাকাল সে। ইফতি হাসি হাসি মুখে এগিয়ে আসে। ইকবাল অবাক কণ্ঠে বলল,
‘ তুই এখানে? বলিসনি তো আসবি?’
‘ হঠাৎ প্ল্যানিং,ফ্রেন্ডদের নিয়ে এলাম। ওই যে ওই টেবিলে!’
সে হাত দিয়ে দূরের টেবিল দেখাল। অনেক গুলো ছেলে গোটা টেবিল ঘিরে বসে। এরপর পুষ্পকে জিজ্ঞেস করল,
‘ কী খবর ভাবি,কেমন আছো?’
সে হেসে জানায়,
‘ আলহামদুলিল্লাহ, তুমি? ‘
‘ ভালোই। পিউও আছে দেখছি,কী অবস্থা পিউ!’
ইফতি ভ্রুঁ নাঁচায়। তার হাসিতে উপচে পরা থোবড়াটা অসহ্য লাগে ধূসরের। একটা শ*ক্ত ঘু*ষিতে থেত*লে দিতে ইচ্ছে হয়।
পিউ গভীর দ্বিধাদ্বন্দে পরে গেল।
সে কি হেসে ভালো বলবে? না কী, না হেসে? গতকালকের কথা মনে পড়ল তখন,সেই হুম*কি,
‘ তোর হাসা বারণ পিউ!’
তারপর হাত মুচ*ড়ে ধরার নি*র্মম দৃশ্যটা মনে করেই ভেতর ভেতর গুটিয়ে গেল ত্রাসে। সিদ্ধান্ত নিলো, কিছুতেই হাসবে না। এমনি ‘ভালো আছে’ জানাবে। কিন্তু সৌজন্যতার বিবেকবোধ তা হতে দিলে তো? হাসিটা ঠোঁট ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে বলল,
‘ ভালো। আপনার? ‘
‘ আমি তো অল টাইম ভালো থাকি। আজকে দেখছি ধূসর ভাইয়াও আছেন। আচ্ছা, তোমরা কি সবাই মিলে ঘুরতে এসেছো ?’
‘ হ্যাঁ,আমাদেরও হঠাৎ প্ল্যানিং। ভাইয়া নিয়ে এলেন। তুমিও জয়েন করোনা ইফতি। ‘
ধূসর কট*মট করে পুষ্পকে দেখল। মেয়েটা খুশির প্রকোপে খেয়ালই করেনি। ইফতিকে বলতে দেরী,পাশের খালি টেবিল থেকে চেয়ার এনে বসতে দেরী করলনা। আর বসলোও একেবারে পিউয়ের পাশে। চেহারা অচিরাৎ চুপসে যায় তার। উঠে যেতে মন চায়৷ সাহস হয়না ধূসরের দিক তাকাতে। তাকালে কী দেখবে? নাক ফুলছে? চোখমুখ লাল? বাবাহ! থাক বরং!
ইফতি গল্প জুড়ে দিলো। ভাই-ভাবির সাথে বিস্তর আলাপ। অথচ শেষ মাথায় পিউয়ের নাম ধরে থামে। যেমন, ‘
তাই না পিউ? কী বলো পিউ? ‘ মেয়েটা ভদ্রতার খাতিরে হু -হা করছে শুধু। ধূসরের রা*গে ব্রক্ষ্মতালু অবধি জ্বলে যায় তখন।
প্রচন্ড ক্রো*ধে হাঁস*ফাঁস করে। এই ছেলে এখানে কেন আসবে? পিউয়ের পাশে কেন বসবে?
বন্ধুর ভাই, এই একটা শব্দই তাকে তার গুণ্ডামি থেকে পিছিয়ে নিচ্ছে। নাহলে এক্ষুনি বুঝিয়ে দিতো ধূসর মাহতাব কী জিনিস! কিন্তু চুপচাপ বসে থেকেও লাভ হচ্ছেনা। হাঁটুর বয়সী ছেলেটাকে শত্রু ভাবতেও সম্মানে লাগছে তার।
কিন্তু রা*গ তো প্রকাশ করা দরকার। এভাবে চুপচাপ বসে থাকা অসম্ভব। তক্ষুনি নজর পড়ল পুষ্পর সামনে রাখা মাংসের টুকরো গুলোর দিকে।
‘ ওটা এদিকে দে।’
কথাটায় আলাপ থামল তাদের। পুষ্প, ধূসরের ইশারা করা প্লেট দেখে বিভ্রান্ত হলো। ভাইয়াতো এত ঝাল খাননা। নিশ্চিত হতে বলল ‘ এটা? ‘
‘ হু।’
‘ এটাত অনেক ঝাল ভাইয়া!’
‘ তোকে দিতে বলেছি।’
কণ্ঠে কী যেন ছিল! পুষ্প দ্রুত এগিয়ে দেয়। কিন্তু চিন্তা হতে শুরু করে। ইকবাল, পিউ সবাই চোখ বড় করে চেয়ে থাকে। ধূসর যে এত ঝাল খায়না,সেটা ওদের সবার জানা।
ইফতি অতশত ভাবলো না।
শোনো পিউ,বলে আবার কথা শুরু করল সে। ধূসর কাটাচামচ টা শক্ত করে চে*পে ধরল মাংসের গায়ে। যেন ইফতির গলায় ধরেছে ওটা। তারপর একসাথে দুটো পিস তুলে মুখে ভরল। চোখ কপালে তুলল পিউ। পাশে বসা, বকবক করতে থাকা ছেলেটাকে ফেলে তার শ*ঙ্কিত দৃষ্টি পরে রইল সামনের উদ্ভ্রান্তের মত খেতে থাকা মানুষ টার ওপর।
ধূসর একটা বার আশেপাশে তাকালো না। একটুখানি সামনে রাখা পানির বোতলের দিকেও দেখল না। সকলের বিস্মিত দৃষ্টিতেও তোয়াক্কা হলো না কোনো। ইফতির কথা থেমে গেছে। সে নিজেও হা করে দেখছে ধূসরের খাওয়া।
ধূসর সবটা শেষ করে থামল। কোটর ঝালের প্রকোপে টলটল করছে।
স্তম্ভিত হয়ে চেয়ে রইল সবাই। সে উঠে দাঁড়াতেই ইকবাল কিছু বলতে যায়,ধূসর শুনলো না।
ওয়াশরুমের দিক হাঁটা ধরল চুপচাপ। তার টলমলে কদম পিউকে যা বোঝার বুঝিয়ে দেয়। হুলস্থূল পায়ে ধূসরের পেছনে ছুটল সে। ইকবাল যেতে নিয়েও থেমে গেল,ওকে যেতে দেখে। জায়গায় বসে পরল আবার।
ওয়াশরুম তখন ফাঁকা। দু একজন হাত ধুঁয়ে চলে গেছে কেবল। ধূসর অন্ধকার দেখছে। দৃষ্টি ঝাপ্সা। চোখ বেয়ে উষ্ণ জল গড়ায়। অক্ষিপট টকটকে লাল। ঠোঁট ভিজে গেছে লালায়। দিশেহারা অবস্থাপ্রায়। ধোঁয়া বের হচ্ছে কান দিয়ে। মাথার রগ দপদপ করে লাফাচ্ছে। সে বেসিনে ঝুঁকে পরল একপ্রকার। মুখে পানি নিয়ে কয়েকবার কুলি করে ফেলল। মাথায় পানি দিলো। কাশি উঠে গেছে। পিউ দৌড়ে আসে। ধূসরের অবস্থা দেখে বুকটা ছি*ড়ে গেল ক*ষ্টে। হুটোপুটি করে কাছে এসে দাঁড়াল। পিঠে হাত রেখে উদ্বীগ্ন হয়ে বলল,
‘ আপনি ঠিক আছেন ধূসর ভাই?’
ধূসর সোজা হয়ে দাঁড়ায়। পিঠ থেকে পিউয়ের হাতখানা ছিটকে সরায়। ফিরে তাকাতেই পিউ আঁ*তকে উঠল তার চেহারা দেখে। আর্তনা*দ করে বলল,
” আল্লাহ,কী অবস্থা হয়েছে আপনার? ‘
ধূসর চেয়ে রইল কিছুক্ষণ। পিউ দুঃশ্চিন্তায় সেই রু*ষ্ট চাউনীর তল পেতে অক্ষম।
‘ ইফতি এখানে কেন এসেছে? তুই ডেকেছিস?’
পিউ থমকে তাকাল।
‘ আমি কেন ডাকব?’
‘ তাহলে এলো কী করে?’
‘ বলল তো বন্ধুদের সাথে,আর
আমি কীভাবে ডাকব? আমার কাছে কি ওনার ফোন নম্বর আছে?’
‘ থাকলে ডাকতিস?’
‘ আল্লাহ, না, তা কখন বলেছি?’
‘ তা হলে ও আসবে কেন? আর বসবে কেন তোর পাশে? ‘
বলতে বলতে পিউয়ের মাথার পাশের দেয়ালে ঘু*ষি বসাল ধূসর। পিউ ভয়ে থরথর করে ওঠে। শরীরের কম্পন তীব্র হয়। প্রতিরোধ ভে*ঙে যায়। আচমকা দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে ফেলল সে।
ধূসরের লালিত চোখমুখ থেকে আড়াল করতে চাইল নিজেকে।
ধূসর হতবুদ্ধি হয়ে গেল এবার। এক মুহুর্তে হুশে এলো যেন। রা*গের মাথায় বলা উল্টোপাল্টা কথায় নিজেই নিজেকে মনে মনে ক*ষে চ*ড় মা*রল । পিউ যে কস্মিনকালেও এরকম করবেনা,তার থেকে ভালো কে জানে! কী বলতে, কী বলে দিলো। ইশ! কীভাবে কাঁদছে! ধূসর করুন চোখে চাইল। হ*তাশ হলো নিজের ওপর। এই মেয়েটাকে ধম*ক,আর রা*গ দেখানো ছাড়া কি আর কিছুই সে পারেনা? কেন সে এমন ?
ধূসর ফোস করে শ্বাস ফেলল। আলতো করে ধরল পিউয়ের হাত দুটো। পাছে ব্য*থা লাগে! মুখ থেকে সরাল আলগোছে। ভেজা স্নিগ্ধ চোখমুখ উন্মুক্ত হলো। এই মুখস্রী দেখে বনবাসে এক যুগ কেন? একশ যুগ কাটানোও সহজ৷ ধূসর হাসল। নমনীয়,দুষ্প্রাপ্য হাসি। চোখের কার্নিশ, দু আঙুলে মুছিয়ে স্বীকারোক্তি দিলো,
‘ মাথা ঠিক ছিল না, সরি!’
পিউ চমকে চেয়ে রইল। ধূসর ভাইয়ের মুখে সরি? চেহারায় অনুতাপ? তার হা হওয়া মুখটা পেছনে ফেলে ধূসর আরেকবার বেসিনের দিক তাকায়। চোখে- মুখে পানি ছেটায়। ঘুরে তাকিয়ে মুছে নেয় পিউয়ের ওড়নায়। তুলতুলে হাত মুঠোতে নিয়ে বলে,
‘ আয়। ‘
পিউ বিহ্বল,বিমূর্ত। ধূসরদের আসতে দেখে তিন জোড়া চোখ তটস্থ ভঙিতে চেয়ে থাকে। পুষ্প যেতে চেয়েছিল,ইকবাল মানা করেছে। ইফতির সামনে না বললেও, পুষ্প বুঝেছে কারণটা। পিউ-ধূসরের একা সময় কা*টাতে দেয়াই আসল উদ্দেশ্য !
ধূসর কী ভেবে থামল। আচমকা তার হাতখানা উঠে, পেঁচিয়ে ধরল পিউয়ের কাঁধ। রীতিমতো ওকে আকড়ে নিলো নিজের সাথে। পিউ আশ্চর্য বনে একবার হাত দ্যাখে,একবার ধূসরকে। দুই ঠোঁট ফাঁকা করে চেয়ে রয়। ওকে অমন সাথে পেচিয়েই হেঁটে আসে বাকীদের কাছে। একবার আড়চোখে তাকায় ইফতির দিকে। যার জন্য এত আয়োজন,সেই ছেলেটাই ভাবলেশহীন বসে। তার দৃষ্টিভঙিতে ওরা তো ভাই-বোন! ভাই বোনকে ধরতেই পারে।
ইকবাল শুধাল ” ঠিক আছিস?”
‘হু। তোরা আয়,আমরা নীচে যাচ্ছি। ‘
‘ খাবিনা? ‘
‘ ইচ্ছে নেই।’
পিউকে নিজের সাথে ধরে রেখেই রেস্তোরাঁ থেকে বেরিয়ে গেল ধূসর। এক মুহুর্তের জন্য হাতটা হটালো অবধি না। ইফতি মন খা*রাপ করে সেই প্রস্থান দেখে গেল।
পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আবার হাসল। ফেলে আসা আস্ত পিৎজ্জাটার জন্য মন কেমন করলেও এই যে ধূসরের সঙ্গে এভাবে মিশে আছে, এই যে কাঁধে রাখা নিরেট হাতটা,এইসবের কাছে যেখানে পৃথিবী তুচ্ছ,সেখানে পিৎজ্জা আর এমন কী!
তারপর চোরা চোখে একবার চেয়ে দেখল একটা শ্যামবর্ণ, মজবুত চো*য়াল। গা থেকে ছুটে আসা চিরচেনা সুবাসে মুঁদে,চোখে বুজে আসতে চায়। উফ! এই রাস্তার মধ্যেই যদি হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে পরা যেত!
‘ঝাল কমেছে ধূসর ভাই?’
‘ হু।’
‘ একটা আইসক্রিম খাবেন?’
‘ লাগবে না।’
‘ মিষ্টি?’
‘ না।’
‘ ডেইরিমিল্ক?’
ধূসর শান্ত চোখে তাকাল এবার। নিরুত্তাপ, বরফ -শীতল সেই চাউনী। যেন এই মানুষটা রা*গ কী জানেইনা। এক ফাঁকে তার চক্ষুদ্বয় ঘুরে এলো পিউয়ের লিপস্টিক পরা ঠোঁট জোড়া থেকে। তারপর আবার চাইল ঠিক চোখ বরাবর। কেমন অদ্ভূত গলায় বলল,
‘ যেই ডেইরিমিল্ক খেতে চাইছি,সেটা দোকানে পাওয়া যায়না।’
পিউ বুঝতে না পেরে বলল ‘ অনলাইনে যায়?’
ধূসর হেসে ফেলল। একদিকে সরে গেল ঠোঁট। বলল,
‘ তুই বুঝবি না।’
ততক্ষণে ইকবালরা নেমে আসে। ধূসররা নেই,তারা থেকে কী করবে? পুষ্পর হাতে তিনটে প্যাকেট দেখে পিউয়ের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। ধূসর তাকে ছেড়ে দিতেই, সে ওমনি তার কাছে গিয়ে বলল,
‘ পিৎজ্জাটা এনেছিস?’
‘ হ্যাঁ। বাড়ি গিয়ে খাস।’
‘ না গাড়িতে খাব। ‘
‘ আচ্ছা। ‘
ইফতিকে সাথে দেখে ধূসরের মেজাজ আবার চটে যায়৷ রা*গ হলেই সরু নাক ফেঁপে ওঠে। ইকবালকে বলল,
‘ রওনা দেব। ‘
‘ আচ্ছা।’
পিউকে বলল, ‘ সামনে বোস।’
মেয়েটা মাথা ঝাঁকায়। বাধ্যের মত উঠে বসে। ইকবাল,ইফতিকে বলল,
‘ যা তাহলে। ‘
‘ তোমরা এখন কোথায় যাবে?’
‘ এই আশেপাশে ঘুরে,ওদের বাসায় নামিয়ে,ফিরে যাব।
‘ চাইলে কিন্তু আমিও…’
ধূসর ওমনি কথা কেড়ে নিলো। শান্ত অথচ কড়া কণ্ঠে বলল,
‘ ,তুমি না তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে এসেছো? ভাইকে পেয়ে,বন্ধুদের ফেলে এলে তাদের খা*রাপ লাগবেনা? মুখে হয়ত বলবে না,কিন্তু এটা এক ধরনের অসামাজিকতা। ভাই -ভাবিকে পরেও পাবে,বাট ফ্রেন্ডস সামটাইমস নট ফর এভার। দিস ইজ টোটালি ব্যাড ম্যানার্স ইফ্তি।
ইকবাল অসহায় ভাবে, দীর্ঘশ্বাস ফেলল। ইফতির মুখ শুকিয়ে গেছে৷ বলার মতো কিছু রইলই না। জোরপূর্বক হেসে বলল,
‘ তাও ঠিক। আচ্ছা আরেকদিন। আসি তাহলে ভাইয়া।’
ইকবাল মাথা নাড়ে, ‘ যা।’
পুষ্প বলল, ‘ ভালো থেকো ভাইয়া।’
ইফতি হাসল। পিউকে হাত নেড়ে বলল, ‘ বাই পিউ।’
পিউ ঢোক গিলল। হুম*ড়ি খেয়ে পড়ে গেল দোটানায়। সেকি হাত নেড়ে বাই বলবে? না, না, দরকার নেই এত সৌজন্যতার। ধূসর ভাই ইফতিকে যে সহ্য করতে পারছেন না,সে নিয়ে সন্দেহ নেই। তার ও আগ বাড়িয়ে এত খাতিরের কী দরকার!
ছোট করে বলল,
‘ বাই।’
ইফতি উঠে গেল সিড়ি বেয়ে। ধূসর রেগে*মেগে ইকবালের দিক ফেরে। সে ভীত কণ্ঠে বলল,
‘ আমি কী করলাম?’
ধূসর দাঁত চিবিয়ে বলল, ‘ তোর ভাই পিউকে লাইন মার*ছে।’
ইকবাল সহায়হীন ভঙিতে তাকায়। এই কাহিনী বুঝতে বাকী নেই ওর। ধূসরকে ঠান্ডা করতে বলল,
‘ ছোট মানুষ তো,বোঝেনি। বাড়ি গিয়ে মানা করে দেব ভাই। ‘
ধূসর হ্যাঁ- না কিছু বলল না। ঘুরে এসে ড্রাইভিং এ বসল।
ইকবাল দুপাশে মাথা নেড়ে নিজেও উঠল গাড়িতে। ইফতির জন্য বন্ধুত্বে বিন্দুমাত্র চি*ড় ধরানো যাবে না। ছেলেটার সাহস কী! এক দিনেই লাইন মা*রে মেয়েদের! সিটে বসেই বিড়বিড় করে গা*লি দিলো , ‘হতচ্ছাড়া একটা। পড়াশোনার নাম নেই, প্রেম ছোটাচ্ছি দাঁড়া।
পিউ কোলে রাখা হাত থেকে চোখ তুলে ধূসরের দিক তাকাল। সে গাড়ি স্টার্ট দেয়। পিউ মিনমিন করে বলল,
‘ আমি কিন্তু শুধু বাই বলেছি। ‘
ধূসর তাকালো না। হুইল ঘুরিয়ে, একদম ঠান্ডা গলায় বলল,
‘ মে*রে ফেলব তোকে।’
পিউ মনে মনে হাসল। সেই হাসির অল্প ছটা ভেসে উঠল ঠোঁটেও। সিটের সাথে মাথা এলিয়ে ভাবল,
‘ মা*রুন না। আপনার হাতে ম*রেও সুখ।’
***
ইফতি ওইমুহুর্তের জন্য থামলেও ক্ষান্ত হলোনা। পরেরদিন সোজা পৌঁছে গেল পিউয়ের কলেজের সামনে। পরীক্ষা শেষে বেরিয়ে, ওকে দেখেই চমকে উঠল মেয়েটা। ছুটে কলেজের ভেতর যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ইফতি ডেকে উঠল,’ এই পিউ।’
পিউ জ্বিভ কা-টল বিরক্ত ভঙিতে৷ ছেলেটার দেখে ফেলতে হলো? অথচ ঘুরে তাকাল হাসি হাসি মুখে। একদম আকাশ থেকে পরার নাটক করে বলল,
‘ আরে আপনি? ‘
ইফতি তার সাইকেলটা দাঁড় করিয়ে এগিয়ে আসে।
‘ দেখেও চলে যাচ্ছিলে কেন?’
পিউ সুবোধ বালিকার ন্যায় বলল,
‘ কই, আমিত দেখিনি।’
‘ আসলেই দেখোনি?’
‘ না।’
‘ আমি ভাবলাম দেখেছো। পরীক্ষা কেমন দিলে?’
‘ ভালো। আপনি এখানে হঠাৎ? ‘
‘ উফ পিউ,আপনি আজ্ঞে কোরোনা। উই আর সেম ব্যাচ।’
‘ তাহলে তুই করেই বলব?’
‘ কেন? মাঝে কিছু নেই?’
পিউ মুখের ওপর বলল,
‘ ওটা বেমানান।’
‘ কেন?’
সে কাঁধ উঁচায়,
‘ এমনি।’
ইফতি কণ্ঠ নামিয়ে শুধাল,
‘ আমাকে দেখে খুশি হওনি?”
‘ হব না কেন?’
‘ মুখ দেখেতো মনে হচ্ছেনা।’
পিউ লম্বা হেসে বলল, ‘ আমার মুখটাই এরকম।’
‘ তাই?’
‘ জি। বললেন না তো,এখানে কেন?’
‘ এমনিই,ভাবলাম শেষ পরীক্ষা, এসে দেখা করি।’
‘ও।’
‘ কফি খাবে?’
পিউ মিথ্যে বলল,
‘ কফি খাইনা আমি।’
‘ কাল যে খেলে!’
‘ ওটাত কোল্ড কফি। ‘
‘ তাহলে আজকেও কোল্ড খাও।’
‘ পরপর খেলে ঠান্ডা লাগবে আমার।’
‘ তাহলে আইসক্রিম?’
‘ একই কথা। ‘
‘ তাহলে কী খাবে?’
‘ কিছু না।’
‘ কেন?’
‘ বাড়ি যাব। পরশু অনুষ্ঠান না? আম্মু তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।’
ইফতি আহ*ত কণ্ঠে বলল,
‘ প্রথম বার তোমার কলেজের সামনে এলাম, সময় দেবেনা আমায়?’
‘ আপনি জানিয়ে এলে দিতে পারতাম। আজতো কিছু করার নেই। অন্য আরেক দিন।’
আমি এখন যাই?
‘ যাবে?’
‘ জি।’
‘ চলো পৌঁছে দিই। সাইকেলে করে গিয়েছো কখনও? ভালো লাগবে। ‘
পিউ ত্রস্ত মাথা নেড়ে বলল,
‘ না না,আমার গাড়ি আসবে। গাড়ি ফাঁকা গেলে আব্বু ব*কবে। আমি যাই।’
পিউ ভদ্রতার ধার-ধারল না আজ। সোজা নাক বরাবর, ছটফটে পায়ে হাঁটা ধরল। ইফতি অবাক হলো ওর আচরণ দেখে। পরমুহূর্তে, ভাবল লজ্জা পাচ্ছে হয়ত। মেয়েটা এমনিই একটু ক্লাসিক। কাঁধ উচিয়ে সে উড়িয়ে দিলো ভাবনা। সাইকেলে চে*পে রওনা হলো বাড়িতে। এদিকে পিউ হাঁটতে হাঁটতে গালা*গালি দিয়ে তার জ্ঞাতিগুষ্টি উদ্ধার করছে। কী এক ঝামেলা এসে কাঁধে পরল! ইয়া আল্লাহ! সে কি এতটাই সুন্দর? যে ইফতি এক দেখায় এভাবে পিছনে লেগেছে! সুন্দর হলে ধূসর ভাই ভালো করে তাকান না কেন? ওনার চোখে কি কিছু পড়েনা? শুধু মনে মনে ভালোবাসলে,আর হিং*সেতে জ্বলেপু*ড়ে ঝাল খেলে হবে? একটু ক্যাবলা বনে তাকিয়ে থাকতে পারেনা? যেমন করে শাহরুখ খান, মাধুরি দিক্সিতের দিক চেয়ে থাকে। সালমান চেয়ে থাকে ঐশ্বরিয়ার দিকে। ইশ! ধূসর ভাইয়া কেন এত নিরামিষ?
আচমকা ভূতের মত হাজির হলো মৃনাল।
আগের মতোই দীর্ঘ হেসে ডাকল,’ ভাবি।’
পিউ চকিতে তাকায়। ছেলেটাকে দেখেই ছোট্ট করে শ্বাস ফেলল। পা থামলো না তার। মৃনাল পাশে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
‘ ভাবির কি মেজাজ খা*রাপ? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ ভাবি কি রে*গে আছেন?’
‘ জি।’
‘ আমি কি বির*ক্ত করলাম?’
‘ জি।’
মৃনাল থতমত খেয়ে বলল,
‘ হেঁটে যাচ্ছেন কেন ভাবি? গাড়ি আসেনি?’
পিউ দাঁড়িয়ে গেল এবার। নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ আচ্ছা আপনার কি আর কাজ নেই? সারাদিন কি আমার কলেজের সামনে থাকেন?’
‘ সারাদিন না,আপনার পরীক্ষার তিন ঘন্টা থাকি।’
পিউ তাজ্জব হয়ে বলল,
‘ কেন? ও, আপনার ভাই বুঝি পাহাড়া দিতে বলেছেন আমায়?’
ছেলেটার সহজ স্বীকারোক্তি,
‘ জি।’
পিউ চেঁতে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। তারপর শান্ত গলায়, গুছিয়ে বলল,
‘ যেদিন আপনার ভাইকে সামনে পাব না? কেরোসিন ছাড়াই জ্বা*লিয়ে দেব।’
মৃনাল মাথা কাত করে বলল, ‘ আচ্ছা।’
পিউ বিরক্ত হয়ে দাঁত খটমট করে এগিয়ে যায়। পেছন থেকে মৃনাল চেঁচিয়ে বলে,
‘ ভাবি রিক্সা ডেকে দেব?’
পিউও পালটা চেঁচাল,
‘ পুলিশ ডেকে দিন,আপনার ভাই সহ আপনাকে জেলে ভরে দিই।’
মৃনালের ওপর বিশেষ প্রভাব পরল না এর। দাঁড়িয়ে, দাঁড়িয়ে দাঁত বার করে হাসল সে।
****
সোমবার ঠিক বিকেল পাঁচটায় একটা ছোটখাটো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ইকবাল -পুষ্পর আংটিবদল শেষ হলো। মুমতাহিনার আগেভাগে দিয়ে যাওয়া স্বর্নের আংটিটার পাশাপাশি একটা হীরের সাদা আংটিও জায়গা পেলো তার অনামিকায়। ইকবালকেও হীরের আংটি দিলেন আমজাদ। বেশ বড় সড় চোখ ধাঁধানো পাথরের আংটিটা নিজে পছন্দ করে কিনেছেন আজমল। বরের সব কেনা-কা*টা তার ওপর। বাকী ভাইদের ফুরসত কই?
আংটি বদলে তেমন কেউ আসেনি। ইকবাল দের চাচা-চাচী এলেও সিকদার পরিবারই শুধু। বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদ,শুক্রবার বিয়ে বলে মেহমানরা আসা শুরু করেননি এখনও।
পুষ্পকে আংটি পরাতে পেরে আনন্দ ধরছেনা ইকবালের। তার খুব ইচ্ছে করছে পুষ্পর চিকন চিকন আঙুল গুলো জড়ো করে টসটসে একটা চুমু খেয়ে ফেলতে। চারপাশের এত এত মুরুব্বিদের ভীড়ে অত নির্লজ্জ হওয়া হলোনা ।
পিউয়ের হাতে ট্রে ধরিয়ে দিয়েছেন মিনা বেগম। বলেছেন ‘অতিথিদের সবাইকে দিয়ে আসতে।
সে ভীষণ সাবধানে,সতর্ক হয়ে পা ফেলে এলো। কখন না পাপোসে উলটে পরে! আছা*ড় খাওয়ার তো কম অভ্যাস নেই।
তারপর ইকবাল,ইকবালের চাচা-চাচী,ওর বাবা-মা নূড়ি সবাইকে একে একে গ্লাস দিতে দিতে ইফতির কাছে গেল। ছেলেটা বসেছিল দূরে। ড্রয়িং রুম থেকে বাড়তি জিনিস পত্র সরিয়ে সমস্তটা সোফা দিয়ে ঘিরে ফেলা হয়েছে আজ। যাতে সবাই বসতে পারেন। পিউ,ইফতির দিকে ট্রে বাড়িয়ে বলল,
‘ নিন।’
ইফতি আগেই চেয়ে ছিল। পিউ খুব কাছে আসায় তার নজর গাঢ় হয়। বিমুগ্ধ হয়ে পরে। এই অল্প একটুখানি সাজসজ্জা তার তনুমন প্রকান্ড নাড়িয়ে দেয়। ওমন আফিমের ন্যায় চেয়ে চেয়েই হাতে গ্লাস তোলে । পিউ অপ্রতিভ হলো। অস্বস্তিতে চটপট সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, ব্যস্ত পায়ে চলে গেল। ধূসর খা*মচে ধরল কুশান। এক খাম*চিতেই কভার ছি*ড়ে তুলো চলে এলো হাতে।
পাশে বসা ইকবালের দিকে মুখ এগোলো সে। শুধাল,
‘ তোর ভাইকে বলেছিলি?’
ইকবাল মেরুদণ্ড সোজা করে ফেলল। হাসিটা মুছে গেল ওমনি। দুদিন ধরে বিয়ের শপিং, পার্লামেন্ট, পুষ্পকে নিয়ে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে নাক ডেকে ঘুমিয়েছে। ইফতির সাথে দেখাই তো হয়নি। ইয়া মা’বূদ! কপালে দুঃ*খ আছে এবার।
সে ভ*য়ে ভ*য়ে পাশ ফেরে। মুখভঙ্গি দেখেই ধূসর যা বোঝার বুঝে গেল। মন চাইছিল ইকবাল কে কাঁধে তুলে আ*ছাড় মারতে। রা*গটুকু অতি ক*ষ্টে গি*লে বসে থাকল।
ইফতি ঢকঢক করে শরবত খেয়ে গ্লাস খালি করল। পিউ রান্নাঘরে ঢোকার আগেই গ্লাস ওর হাতে দেয়ার ছুঁতোয়,কথা বলবে আরেকবার। সে উঠে দাঁড়ায়। ছুটে যাওয়ার মত এগিয়ে যায়। ধূসর সবটা দেখল। উঠে দাঁড়াল নিজেও। ইফতি পেছন থেকে ডাকে,
‘ পিউ।’
পিহ চ সূচক শব্দ করে দাঁড়ায়। ভেতরে ভেতরে ক্রো-ধে ফেঁটে পরে। এই ছেলে কি পিছু ছাড়বেনা? ধূসর ভাই দেখলে তো ওকেই বকবেন। ঘুরে বলল,
‘ জ্বি।’
‘ গ্লাসটা।’
: শেষ? ‘
‘ হ্যাঁ। ‘
‘ টেবিলের ওপর রাখলেই পারতেন।’
‘ ভাবলাম,তোমাকেই দিই।’
পিউ গ্লাস ধরতে গেলে ইফতির আঙুল তার আঙুল ছুঁয়ে দেয়। পিউ কটমট করে ওঠে রাঁগে। বলতে পারেনা কিছু। ট্রেতে গ্লাস রেখে হাঁটা ধরতেই সে আবার ডাকল,
‘ পিউ, আজ অনেক ব্যস্ত তুমি। তাইনা?’
পিউ এবার ঘুরলোনা। বলল,
‘ জি একটু।’
‘ ফ্রি হলে বোলো,তোমাদের ছাদ টা দেখব।’
‘ আপনি চাইলে আপুকে নিয়ে যেতে পারেন। আমার থেকে ওর বর্ননা বেশি সুন্দর।’
বলে দিয়ে ঢুকে গেল রান্নাঘরে। ইফতি মুচকি হাসল। বিড়বিড় করে বলল,
‘ ভাবির দেখানো,আর তোমার দেখানো এক না কি?’
ঠিক তখনি কাঁধের ওপর একটা ভারি হাত পরল। ছেলেটা চমকে তাকায়। ধূসর ভ্রু উচিয়ে বলল,
‘ ছাদ দেখবে?’
ইফতি ঘা*বড়ে গেলো। ধূসরের কণ্ঠ শীতল হলেও চোখে কী যেন মিশে! তার একটু আগের কথাগুলো কি উনি শুনে ফেলেছেন?
ধূসর তার কাঁধ পেচিয়ে বলল, ,
‘ চলো আমি দেখাচ্ছি।’
ইফতি আমতা-আমতা করে বলল,
‘ না মানে আমি আসলে…
ধূসর হাঁটতে থাকে। ইফতি অনিচ্ছায় পা মেলায়। হঠাৎ সিড়িঘরে এসে থামল সে। কাঁধ থেকে হাত নামিয়ে দাঁড়াল। ভনিতা ছাড়াই প্রশ্ন করল,
‘ পিউকে ভালো লেগেছে তোমার?’
ভ্যাবাচেকা খেল ইফতি। ধরে পরে গিয়েছে তার মানে! ধূসর ভাই কে সে জানে। সাংঘাতিক লোক! ওনার বোনকেই লাইন মা*রা? তুঁতলে বলতে গেল,
‘ না না, আমি, আমিত এম এমনি আমি….’
ধূসর চমৎকার হেসে বলল,
‘ চ্যিল! এটাইত বয়স। এই সময়ে একটা মেয়ে দেখবে,তাকে ভালো লাগবে,কদিন পেছনে ঘুরবে, রাজি হলে প্রেম করবে, এমনইত হওয়া চাই।’
ইফতি বিভ্রমে ভুগছে৷ আবহাওয়া কেমন বোঝা দুঃসা*ধ্য।
ধূসরের হাসিটা যেমন হঠাৎ করে এসেছে, তেমন হঠাৎ করে মিলিয়ে গেল। দৃশ্যমান হলো কপালের দুপাশের নীলাভ শিরাগুচ্ছ।
লহু কণ্ঠে বলল,
‘তবে ছোট ভাই, প্রেম করা খা*রাপ নয়, কিন্তু বড় ভাইদের জিনিসের দিকে চোখ দেয়া খা*রাপ।’
ইফতি বুঝলোনা। দৃষ্টিতে প্রশ্ন ছুটছে। কপালে ঘাম। ধূসর আবার তার কাঁধে হাত রাখে। তারপর পিউয়ের যাওয়ার দিক একটা আঙুল তাক করল,তারপর ঘুরিয়ে দেখাল নিজেকে। নীরবে বোঝাল,
‘ ওটা আমার।’
চলবে
আজকে অনেক বানান ভুল হবে। অগোছালোও লাগতে পারে। একটু কষ্ট করে পড়ে নেবেন।