এক সমুদ্র প্রেম পর্ব-৩০+৩১

0
1573

#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৩০)

মারিয়ার মেজাজ গরম। মনটাও খা*রাপ। মাত্র একটা ইন্টারভিউ দিয়ে বের হলো। না, ইন্টারভিউ খা*রাপ হয়নি। ভালোই দিয়েছে। চাকরিটা হলেও হতে পারে। খা*রাপ লাগাটা অন্য কোথাও। পিউয়ের তখনকার আচরণ মনে পড়লেই অন্ধকারে অন্তকরন ছেঁয়ে যাচ্ছে। মেয়েটা ওভাবে কেন বলল? কোন অপরা*ধে? জেনে-বুঝে ওর কোনও ক্ষ*তি আদৌ কি করেছে? আর কেনই বা ওমন ফুটফুটে মেয়েটা আত্মহ*ত্যা করতে যাচ্ছিল? আচ্ছা, ধূসর ভাইয়ের সাথে কিছু হয়েছে কী!
মারিয়া আবার সজাগ হলো। তড়িঘড়ি করে ফোন বের করল ব্যাগ থেকে। পিউ চলে যাওয়ার পর লাগাতার ধূসরকে কল করেছে সে। হিসেব করলেও কূলাবেনা। কিন্তু ফোন তোলেনি। মারিয়া এখন আবার ডায়াল করল। এইবার বন্ধই বলছে। সে ‘চ ‘বর্গীয় শব্দ করল মুখ দিয়ে। পিউ নির্ঘাত ওদের নিয়ে আজে*বাজে ভাবছে। সেই বিয়েবাড়ির ঘটনার জন্যে নয়তো? ধূসর ভাই জানেন এসব? ওনার ফোন তো বন্ধ থাকেনা কখনও। আজ হঠাৎ বন্ধ কেন তাহলে ? উফ! কী যে ঘটছে!

মারিয়া হতাশ হলো ধূসরকে না পেয়ে। পিউ যে অত ভয়ান*ক একটা স্টেপ নিতে যাচ্ছিল ওনাকে যে জানানো দরকার। মেয়েটা আবার উল্টোপাল্টা কিছু না করে বসে। ভালো-মন্দের বুঝ-ই বা কতটুকু!
সে ভাবুক হয়ে কান থেকে ফোন নামায়। অন্যমনস্ক থেকেই ব্যাগের ভেতর ফোন রাখতে যায়। আচমকা কেউ একজন ব্যাগটা ছো মেরে কে*ড়ে নিলো। পিলে চমকে গেল তার। চিকন চাকন ছেলেটা মুহুর্তমধ্যে দৌড়ে পালাল। মারিয়া ভ্যাবাচেকা খেয়ে চেয়ে থাকে,হুশ ফিরতেই পেছনে ছুটল। গলা ফাঁটিয়ে চি*ৎকার করল,
‘ আমার ব্যাগ! আমার ব্যাগ! ‘
ছুটতে ছুটতে কেঁ*দে ফেলল মেয়েটা। ব্যাগের ভেতর তার সব প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। ফোনটা রওনাকের দেয়া। ভাইয়ের স্মৃতি, আবার এখন নতুন স্মার্টফোন কেনার সাধ্যও নেই। সাথে আইডি কার্ড, টুকটাক টাকা-পয়সা। টিউশন করে ঢাকার বাড়িতে একটা বাসা,নিজেদের খরচ,সংসার টানা,সব মিলিয়েই তো করুণ অবস্থা। ইকবাল ওরা মাসে মাসে বাজারটা করে দেয় এখনও। মানা করলেও শোনেনা। ওইটুকু দিচ্ছে ভাগ্যিশ! নাহলে কী করত সে? সামনে থেকে কত লোকজন এলো, গেল, কেউ একটু ছেলেটাকে আটকালও না। মারিয়ার চোখ গড়িয়ে জল পরল। সে বিপর্যস্ত পায়ে ছোটে। একটা পুরুষের দীর্ঘ কদমের সাথে কূলোতে পারবেনা নিশ্চিত। তবুও থামলোনা। আজকের এই দিনটাই অশুভ তার। প্রথমে পিউয়ের থেকে দোষ আরোপ,আর এখন ব্যাগ ছিন*তাই। তার ছোটার ফাঁকেই একটা ক্ষিপ্র*গামী বাইক পাশ কা*টাল। রীতিমতো ছুটে গেল সামনে। ছিন*তাইকারীর দুরন্ত কদম, সেথায় সুবিধে করতে পারল না। বাইক আরোহী নিমিষে ছুঁইছুঁই হয় তার। এক হাতের ওপর বাইকের গতি রেখে,অন্য হাতে খপ করে ছেলেটার ঘাড় চে*পে ধরল। ভড়কে গেল সে। দৃশ্যটা দেখতেই মারিয়া থেমে গেল। অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল। আরোহীর মুখমণ্ডল হেলমেটের আবডালে। ছেলেটি ভী*ত লোঁচনে তাকায়। বাইক থামেনা। উলটে তাকে টেনেটুনে নিয়ে চলে সাথে। ছেলেটির পা দুটো হিমশীম খায় তাল মেলাতে। ছেলেটা হতভম্ব,হতবুদ্ধি। অচিরাৎ আক্র*মনে দিশেহারা। আরোহী হঠাৎ কলার ছেড়ে দেয়। ছেলেটা মুখ থুব*ড়ে পরে গেল ওমনি। থুত্নী ঠেকল রাস্তায়। র*ক্ত বের হলো সাথে সাথে। হাত থেকে ছুটে গেল ব্যাগ। খোলা চেইনের ফাঁক গলে জিনিসপত্র বেরিয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে গেল। বাইকের গতি আস্তে-ধীরে কমে আসে। লোকটা বাইক স্ট্যান্ডে দাঁড় করিয়ে নীচে নামল। হেলমেট খোলার পর, উন্মুক্ত চেহারাটা দেখেই মারিয়ার চোখ বেরিয়ে এলো। কোটর ছড়িয়ে গেল বিস্ময়ে। সাদিফ দাঁত খিঁচে ছেলেটার কলার চে*পে ধরে,টেনে ওঠায়। ভ*য়ে জড়োসড়ো সে। শুকনো ঢোক গি*লল কয়েকবার। সাদিফ পরপর দুটো ঘু*ষি মে*রে বলল,
‘ রাস্তাঘাটে ব্যাগ ছিন*তাই করে বেড়াস?শালা! তোকে পুলিশে দিচ্ছি দাঁড়া।’
সাদিফ পকেট থেকে ফোন বের করতে উদ্যত হয়। হুড়মুড়িয়ে ছেলেটা পা চেপে ধরে বলল,
‘ ভাই আর করতাম না। এইবারের মত ছাইড়া দেন ভাই,কসম লাগে ভালো হই যামু। আর করতাম না ভাই,পুলিশে দিয়েন না আমারে।’
সাদিফ সন্দিহান কণ্ঠে বলল,
‘ ভেবে বলছিস? আর করবি না তো?’
মারিয়া ততক্ষণে দৌড়ে ওদের কাছে এসে দাঁড়াল। ছেলেটা বলল,
‘ না না ভাই না। ‘
তারপর গলায় চিমটি মেরে বলল’
‘ এই কসম খাইলাম। আর জিন্দেগীতে করতাম না।’
সাদিফ বাইকের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়াল। বুকের সাথে হাত ভাঁজ করে বলল,
‘ ঠিক আছে, দশ বার কান ধর।’
ছেলেটা যত্রতত্র কানে হাত দেয়। নিজেই গুনতে গুনতে ওঠবস করে। দশ হলেও দাঁড়ালোনা। মারিয়া গোল গোল চোখে সবটা দেখছে। একবার ছেলেটির দিক তাকাচ্ছে,একবার সাদিফের দিক। বারো -তের পার হলেও থামছেনা দেখে মিনমিন করে বলল,
‘ দশ হয়ে গেছে তো। ‘

ছেলেটা শুনেও থামলোনা। সে সাদিফের দিক শ*ঙ্কিত নেত্রে তাকিয়ে। উঠতে-বসতে অপেক্ষা করে অনুমতির। উনিশ থেকে বিশ আওড়াতেই সাদিফ হাত উঁচু করে বলল
‘ হয়েছে থাম।’
ছেলেটা থামল। কান থেকে হাত সরাল। সাদিফ বলল,
‘ যা।’
সে স্বস্তি সমেত পা বাড়ায়। এবারের মত বেঁচে গেল।
সাদিফ ওমনি ডেকে ওঠে,
‘ দাড়া।’
কলের পুতুলের মত আবার দাঁড়িয়ে গেল ছেলেটা । সাদিফ মানিব্যাগ থেকে দুশো টাকা নিয়ে, বাড়িয়ে দিয়ে বলল’
‘ নে। কা*টা জায়গার ট্রিটমেন্ট করিয়ে নিস। ‘

সে অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল। সাদিফ বলল
‘ কী? ধর!’
ছেলেটি দ্বিধাদ্বন্দ্ব সমেত টাকা ধরল। চট করে হাত উচিয়ে সামাল ঠুকল সাদিফকে। আস্তেধীরে বিদেয় হলো তারপর।

সাদিফ চোখ সরিয়ে মারিয়ার দিক তাকাল। মেয়েটা যে অনেকক্ষন আগেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছে সে ফিরেও তাকায়নি। সাদিফ ভুরু কোঁচকায়। মারিয়া আশ্চর্য বনে তাকিয়ে। মূক তার দৃষ্টি। বিভ্রমে ভুগছে সাদিফের আচরণ দেখে। লোকটা ছিন*তাইকারী কে ধরল,মা*রল,কান ধরাল,আবার টাকাও দিল? এ কেমন অদ্ভূত লোক!

সাদিফ কুঞ্চিত ভ্রুঁ নিয়েই চেয়ে থাকল কিছুক্ষণ। পরপর খ্যাক করে বলল,
‘ ব্যাগ পরে আছে দেখছেন না? তুলুন যান।’
মেয়েটা নড়ে উঠল উচু কণ্ঠে। চমকপ্রদ দৃষ্টি তৎক্ষনাৎ উবে গেল। সাদিফ আরেকদিক মুখ ঘুরিয়ে অনীহ কণ্ঠে বলল,
‘ ছিনতা*ইকারী ধরেছি মানে এই নয়,আপনার ব্যাগটাও তুলে এনে দেব। মিষ্টি করে বলব,এই নিন ম্যাডাম আপনার ব্যাগ।’

মারিয়া মুখ কোঁচকায়। উত্তর না দিয়ে এগিয়ে যায়। পরে থাকা কয়েকটি জিনিস ব্যাগের ভেতর ঢোকায়। ফোনটাও বেরিয়ে গিয়েছিল। প্রটেক্টর ভে*ঙেছে,বাকী সব অক্ষ*ত দেখে প্রান ফিরল তার। ব্যাগ সমেত উঠে দাঁড়িয়ে, হাসিমুখে ফিরে তাকাল। সাদিফের জন্যেই হলো এসব। খুশিমনেই ভাবল একটা ধন্যবাদ জানাবে এখন। অথচ মুখ খুলতেও দিলোনা সাদিফ। যেঁচে, ভাব নিয়ে বলল,
‘ প্লিজ! এখন সিনেমার নায়িকাদের মত গদগদ হয়ে ধন্যবাদ জানাবেন না। বলবেনা, আপনি না থাকলে আমার যে কী হত! ওসব শুনলে আমার মাথা গরম হয়ে যায়। ম্যালেরিয়ার ধন্যবাদের আমার প্রয়োজন নেই। ‘
মারিয়া কট*মট করল। হা করল কিছু বলতে। পরক্ষনে মিইয়ে গেল। উপকার করেছে ভেবে গি*লে নিল অপ*মান। মিহি কণ্ঠে বলল,
‘ আমি অভদ্র নই। ভদ্রতার খাতিরে হলেও বলব ‘ ধন্যবাদ’। আপনার রাখতে হলে রাখুন, নাহলে রাস্তায় ফেলে দিন।’
‘ দেব না আবার? নিশ্চয়ই দেব। ম্যালেরিয়া রোগীদের জিনিসপত্র আমি নিজের কাছে রাখিনা। এনি ওয়ে,এত কথা বলছি কেন? আমারতো সময় নেই।’

সাদিফ উঠে বসল বাইকে। স্টার্ট দেয়ার আগে
মারিয়া বলল ‘ শুনুন।’
সাদিফ ঘাড় ঘোরায় ‘ কী?’
‘ বলছিলাম যে,আপনি কি বাড়িতে যাচ্ছেন?’
সাদিফ শৈলপ্রান্ত বাঁকায়, ‘ কেন?’
মারিয়া জ্বিভে, ঠোঁট ভিজিয়ে জানাল,
‘ না আসলে, যদি বাড়িতে যেতেন তাহলে ধূসর ভাইয়াকে একটু বলবেন, আমায় ফোন করতে? ওনার নম্বরটা সুইচড অফ পাচ্ছিতো।’
মারিয়ার অতিশয় মার্জিত আওয়াজ সাদিফের ওপর একটুও প্রভাব ফেলল না। সম্পূর্ন ধৃষ্ট কণ্ঠে বলল,
‘ এহ, এলেন আমার মহারানী! আপনার কথা আমি বলতে যাব কেন? নিজেরটা নিজে বলুন। আমি পারব না।’
মারিয়া মুখ কালো করে চোখ নামাল। ফেলল ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস। সাদিফ খেয়াল করেছে। এ পর্যায়ে চোখমুখ খানিক শিথিল হলো। একটু ভেবে বলল,
‘ আমি বাড়িতে যাচ্ছিনা। একবারে রাতে ফিরব,যদি ভাইয়াকে পাই বলে দেব আপনার কথা।’
মারিয়া ঝলমলে চেহারায় তাকায়। হেসে জানায় ‘ ‘ধন্যবাদ।’
সাদিফ সৌজন্যে বোধ দেখাল না। কথাও বাড়াল না। ব্যস্ত ভাবে বাইক ছুটিয়ে অদৃশ্য হলো।

****
সরগরম একটি পরিবেশ হঠাৎ করে নিস্তব্ধ হলে যেমন হয়,সিকদার বাড়ির বসার ঘর তেমন একটি মুহুর্তের পাশ কা*টাল মাত্র। ধূসরের অতর্কিত আগমন, ছু*ড়ে দেয়া প্রশ্ন রুবায়দা বেগম কে ভড়কে দিলো। তিনি বিভ্রান্ত নজরে মিনা বেগমের দিক তাকালেন। ভদ্রমহিলা নিজেও কৌতুহল নিয়ে চেয়ে। পিউ বিস্ময়াবহ। ধূসর হঠাৎ আসায়,এই ভাবে জিজ্ঞেস করায়। একইরকম বিস্মিত প্রতিটি মানুষ। জবা আর সুমনা মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। এই ঘটনার কিছুই তারা জানেন না। মারিয়ার সাথে ধূসরের বিয়ে কথাটুকু তাদের মস্তিষ্কের ওপর দিয়ে গেল।

প্রত্যেকে তটস্থ, জিজ্ঞাসু,উদগ্রীব। মিনা বেগম নিশব্দে দুপাশে আলতো মাথা নেড়ে বোঝালেন ‘ সে বলেনি।’
রুবায়দা বেগম ফের তাকালেন ছেলের দিকে। জেনে গিয়েছে, তাতে সমস্যা নেই। ওদেরইত বিয়ে। আজ হোক কাল জানতোই।
তিনি সহজ গলায় বললেন ‘ তোকে কে বলল?’
ধূসর বরফ কণ্ঠে বলল,
‘ হ্যাঁ বা না তে উত্তর দাও মা।’
রুবায়দা বলতে নিলেন,
পথিমধ্যে পিউ কথা কে*ড়ে নেয়। আগ বাড়িয়ে শুধায়,
‘ কেন ধূসর ভাই,মারিয়াপুর সাথে বিয়ে হবে,আপনি খুশি হননি শুনে? ‘
তার কণ্ঠ ভেজা,অথচ ত্যাড়া প্রশ্ন। ধূসরকে ইচ্ছে করে খোঁ*চানোর জন্যে বলেছে। পুষ্প চোখ খিচে জ্বিভ কাঁটল। পিউয়ের বোকা বোকা কথাটার উত্তর কী হবে আন্দাজ আছে তার। ধূসর রাগে আ*গুন সম। পিউয়ের কথাটা তার মধ্যে কেরোসিনের মত কাজ করে। সে রু*ষ্ট চোখে তাকাল । বজ্রকণ্ঠে ধম*কে উঠল,,
‘ চুউপপপপ! বড়দের মধ্যে কথা বলিস! চাপ*কে পিঠের ছাল তুলে নেব বেয়া*দব! ‘

ছ্যাৎ করে উঠল পিউয়ের বক্ষস্থল। অন্তরাত্মা কাঁ*পুনি দিল। ভ*য়ে সুমনাকে খাম*চে ধরল রিক্ত। রাদিফ আড়াল হলো মায়ের পেছনে। উপস্থিত প্রত্যেকেটি সদস্য হতবিহ্বল। তিন বছরে, তিন হাজার ধম*ক ধূসরের খেয়েছে পিউ। গায়ে মখেনি, আমোলে নেয়নি। অথচ প্রথম বারের মত কোটর ছড়িয়ে গেল অশ্রুতে। কান্নার দমকে কণ্ঠনালি বুজে এলো। গত কয়েক দিনের য*ন্ত্রনা হানা দিলো মনে। ধূসরের প্রতি একরাশ অভিমান নিয়ে খাবার ছেড়ে উঠতে গেলেই সে হু*ঙ্কার ছাড়ল
‘ খবরদার পিউ! এক পা-ও সামনে এগোবি না।’
পিউ থমকে গেল। আত*ঙ্কিত নেত্রপল্লব তিরতির করে কাঁ*পছে। পুষ্প সহ সবাই তখন খাবার ছেড়ে দাঁড়িয়ে।
রুবায়দা হতবাক হয়ে বললেন,
‘ এভাবে ধম*কাচ্ছিস কেন ওকে? ও কী করেছে?’
ধূসরের র*ক্তাভ চোখে মায়ের দিকে নিবদ্ধ হয়। ক্রো*ধ সংবরন করে ঠান্ডা গলায় ফের শুধায়,
‘ মারিয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছ?’

রুবায়দা ছেলের চোখমুখ দেখে মিইয়ে এলেন। রয়ে-সয়ে জবাব দিলেন,
‘ ঠিক করেছি সেরকম না। ভাবছিলাম বিয়ের ব্যাপারে।’
‘ কেন ভেবেছো? ‘
চিৎকারের তোপে রুবায়দা বেগমও কেঁ*পে ওঠেন। তীব্র আক্রো*শে ফেটে পরল ধূসর। মায়ের কম্পমান হাত থেকে থালাবাসন সজোরে ছু*ড়ে মা*রল মেঝেতে। হকচকাল সবাই। বুয়া, রান্নাঘর থেকে উঁকি দিয়েও ভ*য়ে মাথা ঢুকিয়ে নিলেন। রুবায়দা বিমুঢ় চোখে তাকালেন। মিনা বেগম সুমনাকে ফিসফিস করে বললেন,
‘ ছেলেদুটোকে নিয়ে যা এখান থেকে।’
ভয়ে জুবুথুবু বাচ্চাদুটোকে সাথে নিয়ে সুমনা ত্রস্ত জায়গা ত্যাগ করলেন।
‘ কী করছিস কী? মাথা খা*রাপ হয়ে গেছে তোর?’
‘ হ্যাঁ খারাপ হয়ে গেছে। তোমরা খা*রাপ করে দিচ্ছ আমার মাথাটাকে। আমার একটু শান্তি কি তোমাদের সহ্য হচ্ছেনা মা?’
মিনা বেগম উদ্বিগ্ন হয়ে বললেন
‘ধূসর! কী আবোল-তাবোল বলছিস! আর এত রে*গেই বা যাচ্ছিস কেন? তুই কি মারিয়াকে বিয়ে করতে চাস না?’

ধূসর বলল ‘ আশ্চর্য বড় মা! মারিয়ার পাশে তোমরা বিয়ে শব্দটা ব্যবহার করছো কোন যুক্তিতে?’

রুবাইদা বেগম বললেন,
‘ মারিয়া কে আমার ভালো লাগে। তোর মুখে শুনলাম মেয়েটা কষ্ট করে অনেক! তোদের মধ্যে ভাবও দেখেছি, তাই জন্যেই তো…. ‘
ধূসর কথা কে*ড়ে নেয়, কড়া কন্ঠে বলে,
‘ ওর সাথে আমার ভালো সম্পর্ক মানেই আমরা প্রেম করছি না। একটা ছেলে একটা মেয়েকে প্রেমিকা হিসেবে নয়, ছোট বোন হিসেবেও দেখতে পারে। তাহলে কেন তোমরা কুৎ*সিত করে ভাবছো আমাদের নিয়ে?’

মিনা বেগম বোঝাতে গেলেন,
‘ শান্ত হ বাবা! রুবা বুঝতে পারেনি। তুই চাস না যখন বিয়ে হবেনা। একটু মাথা ঠান্ডা কর।’
‘ কথাতো সেটা নয় বড় মা,কথাটা মায়ের বোকামির। কেন এমন ইউজলেস একটা কথা মাথায় আনবে সে! একটা বার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন বোধ ও করল না? ‘

‘ কেন? মা হিসেবে ছেলের জন্যে মেয়ে পছন্দ করার অধিকার নেই আমার? তার জীবন নিয়ে আমি সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা?’
ধূসর মুখের ওপর বলল,
‘ না পারো না। যে মা ছেলের মন বোঝেনা,সে কী চায় বোঝেনা, তার অধিকার কীসের? তোমার এই সিদ্ধান্ত আমার জন্যে অভিশাপ হয়ে নেমেছিল। কোনও ধারনা আছে তোমার, এই একটা অযৌক্তিক সিধান্তের জন্যে,গত সাতটা দিন আমার ওপর দিয়ে ঠিক কী কী গিয়েছে? ডু ইউ হ্যাভ এনি আইডিয়া ?’

রুবায়দা বেগম আঘা*ত পেলেন মনে। চোখ ছলছল করে উঠল। ফিচেল কণ্ঠে বললেন,
‘ এভাবে আমাকে বলতে পারলি তুই? আমি তোর মন বুঝিনি?’

‘ মিথ্যেতো বলিনি। আমাকে বুঝলে এইরকম একটা কথা তুমি মাথাতেও আনতেনা। তুমি কি আদৌ বোঝো সন্তান কী? বোঝো মায়ের দায়িত্ব কী? বুঝলে আমাকে দিনের পর দিন বড় মায়ের কাছে রেখে নিজে শান্তিতে ঘুমোতে পারতেনা। তোমার চেয়ে উনিও আমায় ভালো বোঝেন । যখন আমি চাইনি বিদেশ যেতে , কাঁদ*ছিলাম,অনুরোধ করছিলাম,তখনও তুমি আটকাওনি। বলোনি আমাকে যেন না পাঠায়। ছোট থেকে আমাকে দূরে দূরে রেখে বড় হওয়ার পর কেন এত ভালোবাসা দেখাচ্ছো? যখন তোমাকে আমার প্রয়োজন ছিল তখন তো পাইনি। তাহলে এখন কেন আসছো মায়ের অধিকার দেখাতে? আমিতো তোমার মত মাকে চাই না। বলতে বাধ্য হচ্ছি, তোমার মধ্যে সন্তান মানুষ করার কোনও যোগ্যতাই নেই। ‘

ধূসর কথা শেষ করল। অকষাৎ, বিদ্যুৎ বেগে তার বাম গালে চ*ড় মা*রলেন আফতাব। থমকে গেল সবকিছু। নিস্তব্ধ হয়ে পরল সকলে। আঁ*তকে উঠলেন মিনা বেগম। হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরল পিউ। বাকীরা বিস্ময়ে বাকরহিত। রুবায়দা বেগম ত্রস্ত ভঙিতে পাশ ফিরলেন। আফতাব ক্ষুব্ধ কণ্ঠে বললেন,
‘ অভদ্র! অসভ্য! মায়ের সাথে কীভাবে কথা বলতে হয় শেখোনি?’
রুবায়দা বললেন,
‘ কী করলে এটা?’

‘ এত বড় ছেলের গায়ে হাত তুললে ভাই?’
আফতাব সিকদার গরম চোখে তাকালেন,
‘ আপনি চুপ করুন ভাবি। আপনাদের জন্যেই ও এরকম বেয়া*দব তৈরি হয়েছে। বড় -ছোট কাউকে মানেনা। এই চ*ড়টা বহু আগে দেয়া উচিত ছিল আমার। ভুল করে ফেলেছি। আদর দিয়ে একটা বাদড় তৈরি করেছেন সবাই।’
ধূসর একটা বার বাবার দিক তাকালো না। হাত মুঠো করে দড় এক লা*থি বসাল সিড়ির পাশে দাঁড়ানো বিশাল ফুলদানির ওপর। ফ্লোরে আছ*ড়ে পরল সেটা। টুকরো টুকরো হয়ে ভাঙল। আরেক দফা চমকে গেল সকলে। আফতাব ক্ষে*পে গেলেন আরও। রা*গে শরীর থরথর করছে। শান্ত মানুষ বছরে একবার রাগলে ভয়াবহ রুপ ধারন করেন। হলোও তাই। তিনি ছেলের দিকে ফের তেড়ে যেতে নিলেই মিনা বেগম টেনে ধরলেন। অনুরোধ করলেন,
‘ থাক না ভাই। ও ছেলেমানুষ।’
‘ ছেলেমানুষ? কীসের ছেলেমানুষ? মা*রপিট করে বেড়ায়,গুন্ডামি করে সে ছেলেমানুষ? পিউকে বলছো পিঠের ছাল তুলবে? ছাল তোমার তুলে নেয়া উচিত। অমা*নুষ ছেলে একটা! ‘

পরমুহূর্তে আবার বললেন,
‘ বিয়ে করতে চাইছোনা, বেশ, করতে হবেনা তোমাকে। কেউতো জোর করেনি। সামান্য একটা আলোচনা হয়েছে। মেয়েটাকে তোমার মায়ের পছন্দ ছিল। তাই বলে এত রিয়্যাক্ট কেন করতে হবে? বিদেশ পাঠানো ব্যাতীত তোমার ওপর কোনও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেয়া হয়নি। এটাও দিতাম না। কতটুকু মানোই বা তুমি আমাদের সিদ্ধান্তের? তুমি একবার না বললেই হতো। তাই বলে নিজের মাকে যা নয় তাই শোনাবে? তুমি তোমার মাকে কতটুকু চেনো?তোমার জন্মের সময় ওর শরীর কতটা কমপ্লিকেটেড হয়েছিল আমি দেখেছি। ঝুঁকি ছিল তার জীবনের । ব্যাগ ভরে ভরে র*ক্ত দিতে হয়েছে। আনিস দিয়েছে,আজমল দিয়েছে। কত রকম অসুস্থতায় দিন রাত এক করে কাটিয়েছে। তবু সে পিছপা হয়নি তোমাকে দুনিয়া দেখাতে। ভাবির কাছে তোমাকে এইজন্যে রাখা হতো কারণ তোমার মা অসুস্থতায় বিছানা থেকে উঠতে পারতোনা তখন। এখনও কতটা অসুস্থ থাকে তুমি জানো? তোমাকে বিদেশ পাঠানোর সময় তুমি কেঁ*দেছ, আর সে কেঁ*দেছে প্রত্যেকটা রাত। আমাকে অনুরোধ করেছে তোমাকে নিয়ে আসার। আমরা আনিনি। কারণ তুমি বখে যেতে। অবশ্য বখে যাওনি তাও নয়। গিয়েছ! আস্ত একটা গোঁয়ার হয়েছ৷ রা*গলে মানুষ হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেলেও মায়ের যোগ্যতা নিয়ে কেউ কথা তোলে না। তোমার মত অস*ভ্যের পক্ষেই তা সম্ভব। ‘

রুবায়দা বললেন ‘ আহ থাক না, থামো এখন।’
‘ তুমি থামো। আমার চুপ থাকাকে ও দূর্বলতা ধরে নিয়েছে। তুমি আমার সামনে থেকে বের হও ধূসর। তোমাকে দেখলেও আমার গা জ্ব*লছে। বের হও এক্ষুনি।’

ধূসর মায়ের দিকে একবার নরম চোখে তাকাল। নীচে চোখ এনে কোটরে আসা জল আঙুল দিয়ে ছিটকে ফেলল। চোয়াল শ*ক্ত করে ঘুরে হাঁটা ধরল সদর দরজার দিকে। পিউ অভিশ*ঙ্কায় নিস্তেজ হয়ে পরলো। ধূসর ভাই যাওয়া মানে আসবেন না আর। মানুষটার তেজ সে জানে। ধূসর এগিয়ে যায়, রুবায়দা বেগম
ধড়ফড়িয়ে ছুটে গেলেন। পেছন থেকে হাতখানা চে*পে ধরলেন ছেলের। কেঁ*দে বললেন,
‘ যাস না বাবা!আমি বুঝতে পারিনি। মায়ের একটা সামান্য ভুলে বাড়ি ছাড়বি? আর কখনও এসব নিয়ে ভাবব না আমি। তবুও আমাকে ছেড়ে যাসনা। ”

মায়ের অশ্রুজল ধূসরের ভেতরটা নাড়িয়ে দেয়। নিজেকে সংবরন করতে পারেনা। অভঙ্গুর ভীত দুলে ওঠে। ফিরে তাকায় সে। রুবায়দা বোজা গলায় বললেন,
‘ যাস না। ‘
ধূসর দুহাতে মায়ের মুখ তুলল। চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলল,
‘ আ’ম সরি মা! ভুল হয়ে গেছে। রে*গে গেলে তোমার ছেলের মাথা ঠিক থাকেনা জানোইত। এতোটা বাড়াবাড়ি করা উচিত হয়নি আমার।’

রুবায়দা শব্দ করে কেঁ*দে ফেললেন। পরপর ঝাপিয়ে পরলেন ছেলের বক্ষে। ধূসর মায়ের মাথাটা বুকের সঙ্গে চে*পে ধরে। ডান চোখ থেকে গড়িয়ে পরে পানি। পুষ্প যখন জানাল কথাটা,ক্রো*ধে অন্ধ হয়ে গেছিল সে। তার ওপর পিউয়ের খোঁচানো কথা। সব মিলিয়ে নিজের মধ্যেই ছিল না। জ্ঞানশূন্য হয়ে যা মুখে এসেছে বলে বসল। প্রথম বার মাকে এতটা আ*ঘাত দিয়ে, তার বুকটাও দ্বিখ*ণ্ডিত। মিনা বেগম আঁচলে চোখ মুছে হাসলেন। ধূসরের পাশে দাঁড়াতেই ধূসর অন্য হাত বাড়িয়ে জড়িয়ে নিল তাকেও। মিনা বেগম ঠোঁট ভে*ঙে কান্না চাপালেন যেন। মাথা এলিয়ে দিলেন ওর বুকে। জবা বেগম থেমে রইলেন না, চোখে জল নিয়ে ছুটে গেলেন। হাত বাড়িয়ে যতটুকু পারলেন আকড়ে ধরলেন তিনজন কে। পুষ্পও ছুটল একইরকম। তৈরি হলো পরিবারের মিলনায়তনের একটি মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। আফতাব সিকদার ফোস করে এক নিঃশ্বাস ফেললেন । মৃদূ হেসে দুপাশে মাথা নেড়ে ঘরে দিক চললেন।

পিউ নড়ছে না। সে স্থির, অটল। তার চোখ দুটোতে উপচে পরছে সমুদ্র। বক্ষে বইছে উ*ত্তাল ঢেউ। ধূসরকে ভুল বোঝার অনুশোচনায় দ*গ্ধ হচ্ছে হৃদয়। নিজেকেই নিজের কাছে কদা*কার লাগছে। বিয়ের খবর শুনে ধূসর ভাইয়ের এই প্রতিক্রিয়াই তাকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, সে ভুল। বুঝিয়ে দিলো তার অপরাধের গণ্ডি। সে দোটানায় ভোগে। এই মিলনে সামিল হবে কী না!
তার কী যাওয়া উচিত? ধূসরের কাছে যাওয়ার আছে সেই উপায়? না জেনে কত আজেবা*জে কথা বলে দিল সেদিন!
তখনি পুষ্প হাত বাড়ায়,ইশারা করে ‘ আয় পিউ।’
পিউ উজ্জ্বল চোখে তাকায়। চোখ মুছে এগোতে নিতেই ধূসর ভে*ঙে দিল সন্ধিক্ষণ। সরে গেল সবাইকে ছেড়ে। ছোট করে বলল,
‘ যেতে হবে এখন।’
পিউ থেমে যায়। পুষ্প সহায়হীন নেত্রে তাকায়। ধূসর লম্বা পায়ে রওনা করল। রুবায়দা বেগম উদগ্রীব কণ্ঠে বললেন,
‘ আজকে ফিরবি তো বাবা?’
ধূসর যেতে যেতে জানাল ‘ হ্যাঁ।’

সকলে স্বস্তি পেলেও, পিউ আশাহত হয়ে তাকিয়ে থাকে। ধূসর ফিরেও দেখল না একবার।

****
পিউয়ের কাল ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা। গ্রামারে পটু বিধায় সে নিশ্চিন্ত! এই যে, সে সন্ধ্যে থেকে টেবিলের ধারে-কাছে যায়নি। উশখুশ করেছে,করেছে হাঁস*ফাঁস। রুমের এ মাথা, ও মাথা পায়চারি করেছে অ*শান্ত ভঙিতে। পুষ্প দুধের গ্লাস দিতে এসে তাকে দেখে মিটিমিটি হাসল। প্রকাশ করল না। পিউ তাকাতেই স্বাভাবিক করে ফেলল মুখশ্রী। সে অধৈর্য হয়ে বলল,
‘ ধূসর ভাই ফিরেছেন আপু?’
‘ না।’
‘ একটা ফোন করে দেখবি কখন আসবে?’
পুষ্প ভ্রুঁ কুঁচকে, ভাণ করে বলল
‘ কেন? উনি যখন ইচ্ছে তখন আসবে,তাতে তোর কী?’
পিউ মুখ ফুটে দিতে পারল না উত্তর। তার যে প্রান ওষ্ঠাগত, যাচ্ছে আর আসছে। কী করে বোঝাবে? আজ বাড়িতে এই বিশাল ঝামেলার মূলে সে। ধূসর ভাই এক চ*ড় খেলেন। চাচ্চু প্রথম বার গায়ে হাত তুলেছেন ওনার। এই সব তার জন্যে। পিউয়ের অন্তঃপুর আবার ভে*ঙে এলো। কা*ন্না পেল। পুষ্প সামনে থাকায় আটকে রাখল সব। সে শান্ত নজরে বোনকে নিরীক্ষন করে ঠোঁট চেপে হাসে। মাথা নেড়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যায়।

**
ধূসর বাড়ি ফিরল দশটার পর। পার্লামেন্টে যায়নি বলে তাড়াতাড়ি এসেছে। পিউ দাঁড়িয়ে ছিল পুষ্পর বারান্দায়। অক্ষিযূগল ছিল মেইন গেটে। ধূসরের বাইক দেখতেই সোজা হয়ে দাঁড়াল। হৃদসঞ্চালন জোড়াল হলো মুহুর্তে। ধূসর বাইক থেকে নামতে নামতে ফোন বাজল। সে পকেট থেকে এনে সামনে ধরে। রিসিভ করে কানে গোঁজা অবধি পিউ দেখলো। তারপর চঞ্চল পায়ে ছুটে গেল বাইরে। পুষ্প বিছানায় বসেছিল। চোখের সামনে বই। পিউয়ের অবস্থা দেখে হাসল আবার।

পিউ এসে সোজা ধূসরের ঘরে ঢুকল। মনে মনে আরেকবার রিহার্সাল করল ক্ষমা চাওয়ার। সন্ধ্যে থেকে মনের মধ্যে সাজানো শব্দগুলো আরেকবার আওড়াল।
‘ ধূসর ভাই আমি সরি। আমার ভুল হয়েছে। আপনি বললে কানেও ধরব। ‘

পিউ আরো অনেককিছু সাজাল। বেশ কয়েকবার প্র‍্যাকটিস করল কী কী বলবে। ধূসর ভাই কান মলে দিলে দিক,মা*রুক,ছাল ওঠাক পিঠের। সে ক্ষমা নিয়েই যাবে। তক্ষুনি কলিংবেল বাজাল। সবাই জেগে থাকায় দরজার ছিটকিনি তোলা ছিল। ঘুমোতে গেলে লক করা থাকে। দরজা কে খুলেছে পিউ জানেনা। সে স্পষ্ট শুনছে হৃদপিণ্ড লাফ-ঝাঁপের আওয়াজ। সাথে নীচ থেকে ধূসরের গুমোট কণ্ঠ
‘ পিউ কোথায়?’
এরপর সেজো মায়ের গলা ‘ ওর ঘরেইত।’

পিউ দরজার পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। ধূসর ভাই সোজা রুমে এসে ঢুকবেন। দরজা চাপাবেন। তারপর বের হবে সে। ভ*য় লাগুক,নার্ভাস হোক যাই হোক সব বলবে। ভুলের জন্যে মাফ চাইবে। মাফ না করলে সে পা ধরে ঝুলে থাকবে। ক্ষমা নিতেই হবে আজ।
অনেকক্ষন হলো ধূসর এলোনা। পিউয়ের খুশখুশ মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে এদিকে। আচমকা বাইরে জুতোর শব্দ পেলো। পিউয়ের বুক লাফাচ্ছে।
ধুকপুক শব্দ বাড়ছে। ধূসর রুমে ঢুকল। দরজা চাপিয়ে সোজা হেঁটে গেল। আচমকা থেমে দাঁড়াল। কপাল গুছিয়ে পেছনে ঘুরল। দৃশ্যমান হলো পিউ। ওকে দেখতেই তার অভিব্যক্তি পালটায়। দূর্বোধ্য হয়। পিউ সময় নিলোনা। উদ্বিগ্ন পায়ে গিয়ে তার মুখোমুখি হলো। পল্লব ঝাপ্টে, ঢোক গি*লে বলতে গেল
‘ আমার ভু….
কথা সম্পূর্ন হয়না। আকষ্মিক ধূসর ঠাটিয়ে এক চ*ড় বসাল গালে। পিউ চমকে গেল। গালে হাত চেপে তাকাতেও পারল না,ধূসর অন্যগালে আরেকটা থাপ্পড় মা*রে। পিউ কিংকর্তব্যবিমুঢ়! মাথা ভন ভন করে ঘুরে ওঠে তার। হতচেতন সে। কেন মা*রলেন, কী জন্যে মা*রলেন? সেত কিছু বলেইনি এখনও। দু দুটো শ*ক্তপোক্ত চ*ড়ে তার পৃথিবী ঘুর্নায়মান। ধূসর সহসা কনুই চে*পে ধরল। চকিতে তাকাল পিউ। মুচড়ে উঠল ব্য*থায়। ধূসর দাঁত কিড়মি*ড়িয়ে শুধাল,
‘ সুইসা*ইড করার খুব শখ তোর, তাইনা?’

চলবে।

#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(৩১)

পিউয়ের ওষ্ঠযূগল ঠকঠক করে কাঁ*পছে। ভ*য়ার্ত দুটি আঁখি ধূসরের র*ক্তাভ চেহারায়। ফর্সা মানুষ কাঁ*দলে, হাসলে,লাল হতে দেখেছে সে। কিন্তু শ্যামলা বর্নেও ধূসর লালিত হয়, অতিরিক্ত ক্ষো*ভে। নিঃশ্বাসে পায় হিঁসহিঁস শব্দ। দুপাশের চিবুক সহ কপালের শিরা ফোটে। চোখা নাক ওঠানামা করে। এই লক্ষন গুলো তাকে নিশ্চিত করে’ ধূসর ভাইয়ের ভয়া*বহ ক্রো*ধ নিয়ে’
। পিউয়ের মাথা তখনও ঘুরছে। টলছে পা দুটো। বলিষ্ঠ হাতের চ*ড় খেয়ে টাল-মাটাল অবস্থাপ্রায়। শক্ত করে চে*পে রাখা ধূসরের হাত আরও সুদৃঢ় হলো। পিউ বিমুঢ় নেত্রে তাকিয়ে। অবিশ্বাস চোখেমুখে। সে কি আসলেই দুটো থা*প্পড় খেয়েছে? তাও ধূসর ভাইয়ের হাতে? পিউয়ের বুক ভে*ঙে পরে দুঃ*খে। ধূসর ভাই এত জোরে কী করে মা*রতে পারলেন? সে কাঁদো*কাঁদো কণ্ঠে বলতে গেল ‘আপনি আমায় মার*লেন?’
অথচ দুই ঠোঁট নেড়ে’ আপনি’ টুকু উচ্চারণ করার সাথে সাথে আরেকটা চ*ড় পরল গালে। পিউ বিস্ময়াহত, স্তব্ধ। ধূসর ভাই হ্যাট্রিক করে ফেললেন থা*প্পড়ে। তিন তিনটে চ*ড় খেয়ে পিউয়ের স্বচ্ছ নেত্র ঝাপ্সা তখন। শ্বাসনালী শুকিয়ে কাঠ। মনে হচ্ছে মাথার ওপর,পায়ের তলা সব ফাঁকা। মধ্যিখানে ভাসমান সে।

‘ কোন সাহসে ম*রতে যাচ্ছিলি?’
রুষ্ট কণ্ঠে পিউয়ের হুশ ফিরল। কান,মাথা ঝিমঝিম করছে। পর্দাটা ফে*টে গেছে নির্ঘাত। এত ঝুট ঝামেলার মধ্যে, নিজেই ভুলে বসেছিল কথাখানা। দুপুরে বি*ধ্বস্তপ্রায়, সে এগিয়েছিল আত্ম*হননের পথে। মারিয়া সময় মতো না এলে সে যে এতক্ষণে ওপরে থাকত।
নিজে ভুলে গেলেও কী,একজনের কানে কথাটা ঠিকই পৌঁছে গিয়েছে। পিউ ভীত ঢোক গি*লল। মনে মনে বলল,
‘ আপনি আমায় বাঁচিয়েও সিংহের গুহায় ঠেলে দিলেন মারিয়া আপু? কী দরকার ছিল ধূসর ভাইকে জানানোর! আজ যে আমি শেষ!’
ধূসরের মুঠোয় থাকা তার কনুইয়ে চাপ পরে। বাঁধন শক্ত করেছে সে। এই ব্য*থার চেয়েও বাম গালের যন্ত্র*না অধিক। এখানেই যে টসটসে দুটো থা*প্পড় পরেছে।
পিউ অসহায় চোখে তাকাল। যদি ধূসর ভাইয়ের একটু মায়া হয়! কিন্তু লাভ হলোনা।
ধূসর দন্ত চিবিয়ে বলল,
‘ গাড়ির তলায় পরতে যাচ্ছিলি তাইনা? এতই ম*রার ইচ্ছে যখন বাইরে কেন, বাড়িতে বসে ম*র।’
পিউ বলতে চাইল কিছু। চাইল সাফাই গাইবে নিজের। ধূসরের লাল চোখ দেখে সাহসে কূলায়না।
তবে চুপ থাকাটাও কাল হলো। ধূসরের হাত, তার কনুই থেকে উঠে এলো গালে। সদ্য খাওয়া মারের জায়গায় এভাবে চে*পে ধরায় পিউয়ের অবস্থা করুণ হলো।
সে আর্ত কণ্ঠে বলল
‘ আর করব না ধূসর ভাই,আর করবনা।’
কিছু কথা ফুটল, কিছু ফোটেনি। ধূসর একইরকম প্রতাপ সমেত আওড়াল,
‘ তোর দুঃসাহসের জবাব নেই পিউ। ম*রতে চাইছিলি, বাসের নীচে পরতে চাইছিলি। ব্য*থা লাগতো না? তাহলে আজ আমিও দেখি, তুই কত ব্য*থা সহ্য করতে পারিস।’

পিউয়ের চোয়াল ঝুলে পরে। বক্ষস্পন্দন থমকায়। বুঝতে বাকী নেই,আজ রক্ষে নেই তার। ধূসর ভাই মা*রতে মা*রতে বেহুশ না বানিয়ে থামবেন না। গালে চাপ পরতেই সে চোখ খিচে ফেলল। ধূসর হাত সরাতেও পারেনি,আচমকা ঢলে পরতে নেয় পিউ। ধড়ফড়িয়ে ধরে ফেলল ধূসর। পিউয়ের কোমড় গিয়ে ঠেকল তার হাতে। নিমিষেই অজ্ঞান হয় মেয়েটা।

ধূসর আঁ*তকে ওঠে,হতভম্ব হয়।
‘ এই পিউ,কী হলো? পিউ!’
সাড়া শব্দ নেই। ধূসরের বুক ধ্বক করে উঠল। অন্তঃস্থলে তুফান। তাড়াহুড়ো করে পিউকে কোলে তুলল। নরম বিছানায় জায়গা পেলো ওর শুকনো শরীর। ধূসর ঝুঁকে, গাল চাপড়ে,উদগ্রীব হয়ে ডাকল,
‘ পিউ! এই পিউ! পিউ! ‘
শেষ দিকে গলা অস্পষ্ট তার। বক্ষগহ্বর হা হুতাশ করছে। ভেতর থেকে কেউ প্রতিবাদ জানাল,
‘ এতটা উচিত হয়নি ধূসর। তুমি একটু বেশিই স্বৈরাচার করছো।’
সে বোঝাতে চাইল,’ আমার অপরাধ? কেন ও ম*রতে যাবে? কোন সাহসে? ও ছাড়া একটা মানুষের পৃথিবী কতটা শূন্য ও জানে?’
স্বত্তাটা বলল,
‘ তুমি জানিয়েছো? ‘
ধূসর চুপ করে যায়। উত্তর নেই কাছে। অস্থির,অশান্ত হয়ে আবার পিউকে ডাকে। মেয়েটা কথা বলছেনা। চোখ মেলছেনা। ধূসর করুণ নেত্রে তার মুখের দিক তাকিয়ে থাকল। গালে বসে যাওয়া আঙুলের ছাপে হাত বোলাল। চোখ জ্ব*লে ওঠে,চিকচিকে দেখায়। কোনা উত্থলে পরার আগেই,ধূসর আঙুল দিয়ে ছিটকে ফেলল অশ্রু। চকিতে উঠে গেল টি-টেবিলের কাছে। উৎকণ্ঠায় পানি ছেটানোর কথাটাই ভুলে বসেছিল।

পিউ আস্তে করে এক চোখ খুলল। অন্য চোখটা পিটপিট করছে। খুলে যাবে যে কোনও সময়। ধূসরের দিক চক্ষু রেখেই সন্তর্পনে উঠে বসল। নিঃশব্দে বিছানা থেকে নেমেই হুড়মুড়িয়ে ভো দৌড় লাগাল। রীতিমতো ঝড়ের গতিতে ছুটে বেরিয়ে গেল বাইরে।

শব্দ পেয়ে ধূসর চটজলদি ফিরে তাকায়। ভ্যাবাচেকা খায় পিউয়ের ছোটা দেখে। ভ্রুঁ গুছিয়ে ফাঁকা বিছানা দেখল পরপর। এর মানে এই পুঁচকে মেয়ে জ্ঞান হারানোর নাটক করেছে? ধূসরের শান্ত, উদ্বিগ্ন চেহারা থমথমে হলো। ক্ষি*প্ত হলো মুহুর্তে । আওয়াজ করে পানি ভর্তি গ্লাসটা রেখে দিলো টেবিলের ওপর। আশেপাশে জল উপচে পরল রাখার তোপে।

পিউ দরজার দুটো ছিটকিনিই তুলে দিলো। পড়ার টেবিলের সামনে থেকে কাঠের চেয়ারটা টেনে হিচ*ড়ে এনে ঠেস দিলো৷ যাতে কিছুতেই ধূসর ভাই ঢুকতে না পারেন।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিলো। পরপর গালে হাত বোলাল। অবশ সব। মারাত্মক জ্ব*লছে! এত জোরে কেউ মা*রে? পাষণ্ড লোকের,হাতুড়ে হাত!

ধূসরের রা*গ সপ্তম আকাশে চড়ে বসে দোর আটকানো দেখে। সেদিন এই দরজা খোলা নিয়ে বাড়ির লোক জড় হওয়ায় আজ ধা*ক্কা দিতে গিয়েও থেমে গেল। তবে কটমট করে ঘোষণা করল,
‘ আমিও দেখি, তুই কতক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারিস!’

হুমকিতে পিউ ঢোক গি*লল। স্পষ্ট পাচ্ছে ধূসরের পায়ের শব্দ। আস্তে আস্তে শিথিল হচ্ছে তা। এর মানে উনি চলে গেছেন। পিউ হাঁপ ছেড়ে বাঁচল। গাল ব্য*থায় চোয়াল নাড়ানোর জো নেই। সে হতাশ হয়ে চেয়ারটার ওপরেই বসে পরে।
‘ এর থেকে বাসের তলাতে পরাই ভালো ছিল। এখন যে জান হাতে নিয়ে পালাতে হবে!’

*****

ধূসর অফিসে যায়নি আজ। পার্লামেন্টে দরকারি কাজ পরেছে। আগামীকাল থেকে রাস্তায় ওদের দলীয় স্লোগান নামবে। নির্বাচনের কিছুদিন বাকী মাত্র। দৈনন্দিন হিসেব অনুযায়ী, আজ ছয়টার স্থানে নয়টায় খাবার টেবিলে এলো। এসেই হো*চট খেল। টেবিল ভর্তি খাবার আর চেয়ার ভর্তি মানুষের মাঝে পিউ নেই। ধূসর এসে বসল। সেদিনের মত অপেক্ষা করতে করতে সময় যাচ্ছে। পিউ আসছেনা। শেষে ধৈর্য হারিয়ে প্রশ্ন করল,
‘ পিউ ওঠেনি পুষ্প?’
পুষ্প খাওয়া থামিয়ে জবাব দেয়,
‘ আমি জানিনা ভাইয়া। তোমার একটু আগেই এসে বসেছি।’
সুমনা বললেন,
‘ কে পিউ? ওতো সেই কখন বেরিয়েছে!’
ধূসর অবাক হয়ে বলল,
‘ বেরিয়েছে মানে? কোথায় গেছে?’
শেষের দিকে কণ্ঠ মোটা হয় তার। সুমনা বললেন,
‘ কোথায় আবার, পরীক্ষা দিতে। আজকের পরীক্ষা না কি তাড়াতাড়ি শুরু হবে? ওইজন্যেইত নাস্তা না খেয়ে হুটোপুটি করে ছুটল।’

ধূসর জিজ্ঞাসু চোখমুখ শিথিল করল। দৃষ্টি ফিরিয়ে এনে থালায় রাখল। হিসেব মত রা*গ হওয়ার কথা,অথচ ফোস করে শ্বাস ফেলল। আচমকা ঠোঁটের কোনে ফুটল তীর্যক হাসি। মেয়েটা ওর হাত থেকে পালাতে আগেভাগে বেরিয়েছে। ধূসর ঠোঁট কা*মড়ে হাসল,ভাবল,
‘ ঘুরেফিরে তো আমার কাছেই আসবি পিউ। তোর লুকোনোর জায়গা আছে?’

যেমন হঠাৎ করে হেসেছে,ওমন অচিরেই হাসি গায়েব হয়।সে নিজেও বিশেষ কিছু খেলোনা। কোনও মতে একটা পরোটা খেয়ে উঠে গেল। কেউ একজন পাশে না থাকলে গলা দিয়ে খাবার নামেনা যে!

আজকে থেকে নিদারুণ ব্যস্ততা শুরু হবে। ইকবাল তো ইকবাল। সভাপতি হয়েও কোথায় কোথায় ঘুরে বেড়ায়! একটু চিন্তাও নেই তার। কারণ, ধূসর আছেতো!
আজকে আর সময় হবেনা। নাহলে এই পুচকির না খেয়ে আগে আগে বেরিয়ে যাওয়া কলেজে গিয়ে ছোটাত। ধূসর ব্যস্ত পায়ে বাইক ছুটিয়ে বেরিয়ে যায়। বাড়িতে কখন ফিরবে তারও ঠিক নেই।

****
পিউ অনেকক্ষন বসে আছে,তানহার দেখা নেই। সবে বাজে নটা বিশ। পরীক্ষা দশটায়। ধূসরের সামনে পরবেনা বলে একপ্রকার পালিয়ে এলো। হাতের বাটার নানে দুটো কা*মড় বসিয়ে এদিক ওদিক তাকাল। হাতঘড়িতে চোখ বোলাল। ‘ চ’ বর্গীয় শব্দ করে বিড়বিড় করল,
‘ আয় রে মেয়ে,আয়। আর কত পড়বি?’

তানহা এলো আরো পনের মিনিট পার করে। পিউ তখন প্যারেন্টস ছাউনীতে বসে। ওকে দেখেই ছুটে গেল সে। অবাক হয়ে বলল,
‘ তুই এত তাড়াতাড়ি এলি যে? ‘

পিউ তাকাল। তানহাকে দেখতেই ঠোঁট সরে গেল দুদিকে। চঞ্চল কণ্ঠে বলল,
‘ তুই এসছিস?আমি এতক্ষণ বসে বসে এত্ত বোর হচ্ছিলাম!
তারপর হাতের রুটি এগিয়ে দিয়ে শুধাল ‘ খাবি?’
তানহা বিস্ময়াবহ।
তার ভ্রুঁ দুটো বেঁকে গেছে। চিন্তিত কণ্ঠে ভাবল
‘ ও হাসছে কেন? ধূসর ভাইয়ার বিয়ের শোকে পাগল হয়ে যায়নি তো?’
সে জ্বিভে ঠোঁট ভেজায়। কাল অবধি কেঁ*দে ভাসানো মেয়ের দাঁত ক্যালানো হাসি দেখে ভাবনা-চিন্তা অগোছালো ছোটে।
রয়ে সয়ে প্রশ্ন করে,
‘ তুই ঠিক আছিস পিউ?’
‘ হ্যাঁ। কেন, আমাকে দেখে তোর মনে হচ্ছে আমি বেঠিক?’
তানহা ধপ করে পাশে বসল। ঠোঁট কাম*ড়ে ভাবল। ইতস্তত করে বলল,
‘ ধূসর ভাইয়ের বিয়ে…’
‘ আমার সাথে।’
সে চমকে তাকায়। থেমে থেমে বলে,
‘ হ্যাঁ? সত্যি? কবে?’
পিউ হাসল। ঝুলন্ত পা দুটো দুলিয়ে দুলিয়ে বলল,
‘ খুব তাড়াতাড়ি হবে। তারপর একটা ছোট্ট সংসার হবে আমাদের। আমি ধূসর ভাইয়ের বউ হব। ওনাকে ভাই না ডেকে ডাকব ধূসর জামাই। দারুণ লাগবেনা?’

তানহা মুখ কোঁচকায়। কথাটা সে কত সিরিয়াসলি নিলো, আর ফাজিল মেয়ে মজা করছে?
বলল ‘ ধূসর জামাই ডাকবি কেন? লাল -নীল- সবুজ -হলুদ, আরো কত রং আছে, সব বলে ডাকিস!’

পিউ খিলখিল করে হেসে ওঠে। রা*গ, দুঃ*খহীন ঝরঝরে হাসি। তানহার বিস্ময় আরো ছাড়িয়ে যায়। পেটে রাখা প্রশ্ন চেপে রাখতে নিরর্থক হলো। জিজ্ঞেস করেই বসল,
‘ ঝামেলা মিটেছে?’
পিউ পুনরায় রুটিতে কা*মড় বসায়। ভ্রুঁ নাচিয়ে তুষ্ট কণ্ঠে বলে,
‘ মিটে একবারে পানি পানি হয়ে গেছে।

তানহা আগ্রহভরে তাকাল। পিউ গলগল করে বিস্তারিত বলল।
সব শুনে সে আর্ত*নাদ করে বলল,
‘ ধূসর ভাই মা*র খেয়েছেন? ওউ মাই গুডনেস! ‘
পিউ মুখ বে*কিয়ে বলল,
‘ ওটাকে মা*র বলে? মেজো চাচ্চুর মত ঠান্ডা মানুষ মা*রতে পারেন? ওটা পিপড়ার কা*মড় ছিল। মা*রতো খেয়েছি আমি। তিন তিনটে থা*প্পড়, তাও একদিনে! ভাবতে পারিস? ‘
তার কণ্ঠ কাঁদো*কাঁদো। তানহা আহ্লাদ দেখায়,
‘ আহারে! থাক সোনা, কাঁ*দিস না! ‘
পরমুহূর্তে বলল,
‘অবশ্য তুই যা করতে যাচ্ছিলি চ*ড় আমিও দিতাম। ভাইয়া মে*রেছেন বলে কিছু বললামনা। কোন আক্কেলে সুই*সাইড খেতে যাচ্ছিলে বেইবি?’

পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল ‘ মাথা ঠিক ছিল না। পরীক্ষাও ভালো হয়নি। সব মিলিয়ে এতটা পাগল পাগল লাগছিল, ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিলাম।’

তানহা বলল ‘ কাল যদি মারিয়া মেয়েটা বা আসত? কী হতো? ধূসর ভাইয়ার বউ হওয়া থেকে বঞ্চিত হোতিনা?’

‘ হোতাম। বড় আক্ষেপ থেকে যেত। আর ভাবছি মারিয়াপুর কাছেও ক্ষমা চাইব। না বুঝে হাবিজাবি বলে ফেলার অপ*রাধে। ‘

‘ তাই করিস। আজকের প্রিপারেশন কেমন?’
পিউ ভ্রুঁ নাঁচায় ‘ জবরদস্ত!’
‘ সেত হাবভাব দেখেই বুঝতে পারছি। আমি কিন্তু গ্রামার পড়িনি তেমন,দেখাস।’
‘ দেখাব।’
তানহা লম্বা করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল,
‘ কী দিন কাল এলো,কাল যে মেয়ের মুখের দিক তাকানো যাচ্ছিল না,আজ দ্যাখো হাসিই ধরছেনা! ‘

পিউ মুচকি হাসে। অন্যরকম গলায় বলে,
‘ এক সুতনু পুরুষ আমার অন্ত:পাড়ে ঘর বানিয়ে, আমার হাসি- কান্নায় সদর্পে প্রতাপ চালাচ্ছে। তার একটু সঙ্গ-স্রোত আমার গ্লানি,ব্য*থা ভাসিয়ে নেয়। তার একটু দুরুত্ব আমার হৃদয়পটে বইয়ে দেয় ঘূর্নিঝড়। আমি নিজের স্বত্তা হারিয়েছি সেই কবেই। এখন শুধু নিরুদ্দেশ হওয়া বাকী!’
তানহা টেনে টেনে বলল,
‘ বাবাহ! কবি কবি ভাব,
কবিতার অভাব।
তা আর কোনও সন্দেহ আছে,ধূসর ভাইয়ের ভালোবাসা নিয়ে?’
পিউ ভাবুক হয়, উত্তর দেয়
‘ মস্তিস্ক বলছে নেই। যুক্তি ও বলছে নেই। কিন্তু মন বলছে একবার সে সামনে আসুক,বলুক ‘পিউ ভালোবাসি তোকে।’
‘ যদি আসেন, কী করবি?’
পিউ বিলম্ব-ব্যাতীত জবাব দেয় ‘ ম*রে যাব খুশিতে।’
তানহা নিস্পৃহ কণ্ঠে বলল
‘ এই জন্যেই ভাইয়া বলছেন না। উনি চান তুই বেচে থাক। আমিও এখন চাই উনি না বলুক,অকালে বেস্টফ্রেন্ড হারাতে কে চায়?’

পিউ ভ্রুঁ কুঁচকে তাকায়। তানহা চোখ টিপে বলে,
‘ একটা ছেলে প্রপোজ করেছে কাল। এক্সাম শেষে এক্সেপ্ট করব। আমারত তোর মত হ্যান্ডসাম ফিক্সড কাজিন নেই,যা আছে সব কোলে নিয়ে ঘুরতে হয়। তাই বাইরেই দেখি অন্যের কাজিন কে পটিয়ে বিয়ে করা যায় কী না!’
শেষ দিকে তার দুঃ*খিত স্বর। পিউ শুনে শব্দ করে হেসে ফেলল। সে প্রথম দফায় ভেঙচি কা*টলেও পরপর হেসে ওঠে নিজেও।
নরম সকালে,কলেজের আঙিনা ভরে যায় দুটি কিশোরী কন্যার ঝলমলে প্রানবন্ত হাস্যে,উল্লাসে!

তানহা কী মনে করে হঠাৎ সচকিত হলো। লাফ দিয়ে নামল বসা থেকে। উজ্জ্বল চিত্তে বলল,
‘ আজ তোর মন ভালো! কাল এক্সাম নেই,চল না কোথাও থেকে ঘুরে আসি?’
‘ কোথায় যাব?’
‘ উম,বোটানিক্যালে? ‘
পিউ চোখ বড় করে বলল
‘ না না ধূসর ভাই জানলে জিন্দা ক*বর দেবেন। ওটা ভালো জায়গা নয়ত।’
তানহা মাছি তাড়ানোর ভঙি করে বলল,
‘ আরে জানবেইনা। চুপিচুপি যাব। আর শুধু আমরা না,প্রিয়াঙ্কা ওদেরও নিয়ে যাব।’
‘ কিন্তু…. ‘
‘ চল না পাখি,যাব, কটা ছবি তুলব, চলে আসব। আর তাছাড়া তোর যে কানের পাশ দিয়ে একটা গু*লি গেল,এর জন্য একটা ট্রিট কী আমার পাওনা নয়?’

পিউ একটু ভেবে বলল ‘ আচ্ছা ঠিক আছে। আগে এক্সাম তো দেই,তারপর যাব। কিন্তু বেশিক্ষণ থাকব না। ‘
‘ ওকে ওকে ডান। চল হলে গিয়ে বসি।’
পিউ নেমে দাঁড়ায়, ফাইল হাতে তুলে বলে
‘ চল।’

***
পরীক্ষা শেষ হলো। পাক্কা তিন ঘন্টা বসে লিখে লিখে পিউয়ের আঙুল,হাত ব্য*থা। তাও স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে হেলেদুলে বের হয়। বাইরে আসতেই তানহা পাকড়াও করে বলল,
‘ কী লিখেছিস এত? কতক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছি! ‘
‘ আরে ওই…’
তানহা কথা সম্পূর্ন করতে দিল না। ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
‘ আচ্ছা বাদ দে। চল ফুচকা খাব।’
বলতে বলতে হাত ধরে টানল সে। পিউ হোচট খেতে খেতেও সামলে নেয়, পা মেলায়। ওরা দুজন ছাড়াও প্রিয়াঙ্কা,সোনিয়া এসে দলে ভেড়ে।

চারজন মিলে চারপ্লেট ফুচকা অর্ডার
করলো। নম্র কণ্ঠে আবদার করল,
বোম্বাই মরিচ সাথে মিষ্টি টক দেয়ার। সোনিয়া একাই নিলো ঝাল টক। দোকানি চোখের পলকে চারপ্লেট ফুচকা বানিয়ে ফেললেন। কথামতো একেকজনের হাতে দিলেন। পিউ একটা মুখে পুড়তে যাবে, সেই ক্ষনে এসে পাশে দাঁড়াল মৃনাল। টেনে টেনে ডাকল,
‘ ভাবিইই!’
পিউ তাকাল। ওকে দেখতেই ভ্রুঁ কুঁচকে বলল,
‘ আপনি আবার?’
‘ জি।’
‘ কী চাই আজ?’
‘ ওই আগের বিষয়টাই। খাবার দিতে এসেছি। আমি পৌঁছাতে পৌঁছাতে আপনি হলে ঢুকে গেছিলেন বলে দিতে পারিনি। তাই এখন দিতে এলাম।’
তানহা জিজ্ঞেস করল
‘ কে রে পিউ?’
পিউয়ের অনীহ জবাব,
‘ আমার আচমকা আকাশ থেকে টপকে পরা জামাইয়ের ভাই।’

মৃনাল বিনীত কণ্ঠে প্রতিবাদ করল,
‘ না ভাবি,আমার ভাই আচমকা টপকে পরা নয়। থাক গভীরে না যাই। নিন, খাবার নিন।’
সে বাড়িয়ে দিল প্যাকেট। আজও সেই ফুডপান্ডা থেকে আগত। পিউ মহাবি*রক্ত হলো। ধরল না,ছুঁলোও না। মুখের ওপর বলল,
‘ এক্ষুনি খাবার সমেত বিদেয় হন। নাহলে খুব খারা*প হবে।’
মৃনালের হাসি হাসি মুখটা নিভে গেল। অবাক হয়ে বলল
‘ সেকী! কেন? রা*গ করলেন কেন ভাবি?’
পিউ বলল
‘ আশ্চর্য! রা*গ করার কী আছে? ইচ্ছে করছেনা তাই নেব না।’
‘ নিতে যে হবেই। ভাইয়ের কড়া আদেশ। নাহলে রে*গে যাবেন।’
পিউ শব্দ করে বাটিটা ভ্যানের ওপর রাখল। কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,
‘ কোন চুলোর ভাই? আজ বলতেই হবে এই ভাই আপনার উদয় হয়েছে কোত্থেকে? কস্মিনকালেও আমি আপনাকে দেখিনি। আপনার চেহারায় মিল আছে এরকম কাউকেও দেখিনি। তো কীভাবে আপনার ভাইকে বিয়ে করেছি? কোন কাজী অফিসে গিয়ে?কাবিন কত ছিল? ‘

মৃনাল মিটিমিটি হাসল। পিউ তাজ্জব হয়ে বলল, ‘আরেহ, হাসছেন কেন? ‘

‘ ইয়ে এমনি। বলছিলাম যে আমার দেরী হচ্ছে ভাবি,খাবারটা যদি নিতেন….’
তানহা খেকিয়ে বলল
‘ আরে ভাই, রাখুন আপনার খাবার। আমি বেশ বুঝতে পারছি,আসলে এই ভাবি- টাবি ডাকা একটা চাল। উনি ইনিয়ে-বিনিয়ে ফ্লার্ট করছেন তোকে,বুঝলি পিউ।’

পিউ অক্ষিযূগল বিকট করতেই, মৃনাল জ্বিভ কে*টে দুগালে চ*ড় মেরে বলল
‘ আসতাগফিরুল্লাহ! আমি ভাইয়ের ভক্ত,ওনার স্ত্রী আমার বোন।’
পিউ দাঁত চে*পে, কটমট করে তাকাল। প্রিয়াঙ্কা, সোনিয়া হাবলার মত তাকিয়ে আছে।
সে হাসার চেষ্টা করে বলল ‘ ভাবি রা*গ করলেন?’
পিউ ‘চ’ বর্গীয় শব্দ করে। কপালের ওপর টাস করে চড় দিয়ে প্রকাশ করে বির*ক্তি। বেশ বুঝল,যতক্ষন না খাবার নিচ্ছে,নিস্তার নেই। এই ছেলে যাবে না। বাধ্য হয়ে হাত পাতল ‘ দিন।’
মৃনালের চোয়াল ভরল হাসিতে,
‘ নিন।’
তারপর হেসে হেসে সাইকেল চালিয়ে বিদেয় হলো সে। পিউ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তানহার দিক ফিরতেই দেখল সে ভাবুক হয়ে তাকিয়ে। পিউ ভ্রু উঁচায়,
‘ তোর আবার কী হলো?’
‘ ভাবছি।’
‘ কী?’
‘ এসব ধূসর ভাইয়ার কাজ নয়ত?’

পিউ সচকিত হয়। সজাগ হয় মস্তিষ্কের নিউরন। আসলেইত,কাজটা ওনার নয়ত?

****
রাজধানীর ভেতর সবুজের রাজ্য হলো বোটানিক্যাল গার্ডেন। জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যান হিসেবে,৮০০ প্রজাতির বৃক্ষের জন্যে এর পরিচিতি। অথচ বর্তমানে প্রেমিক- প্রেমিকাদের ভীড়ে এখানে পা রাখার জো নেই। পরিবার নিয়ে আসার তো প্রশ্নই ওঠেনা। ঝোপঝাড়ে ব্যাঙের বদলে ঘাটি গাড়ছে শত শত কপোত-কপোতী। পারলে সাপের গর্তে গড়ে ফেলত স্থান। এখানে সেখানে শুধু জোড়া পেতে বসে। তানহা আশপাশ দেখে নাক-মুখ কোঁচকাচ্ছে বারবার। শেষ বার একজোড়া কাপল দেখে, পিউয়ের কানের কাছে মুখ এনে বলল,
‘ দেখেছিস কী বেহায়া! পাব্লিক প্লেসে বয়ফ্রেন্ডের মাথা কোলে নিয়ে বসে আছে।’
চাপাকণ্ঠ, অথচ শুনে নিল বাকীরা।
প্রিয়াঙ্কা ভ্রুঁ গোটায়,
‘ তাতে তোর কোনও সমস্যা? ‘
পিউ বলল
‘ আলবাত সমস্যা, এরা এরকম খুল্লাম খুল্লাম প্রেম করছে কেন? লজ্জ্বা শরম নেই না কী?’

‘ তুই আর মুখ খুলিস না বোন,এতদিনে ধূসর ভাইয়ের সাথে প্রেমটা হয়ে গেলে নিজেই এই জায়গায় থাকতি।’
পিউ চোখ কপালে তুলে বলল,
‘ আমি? কী যা তা বলছিস! ধূসর ভাই সামনে এলেই আমার নিঃশ্বাস আটকে আসে। ভেতর ভেতর দাপা*দাপি করি গলাকা*টা মুরগীর মত। আর তো এইসব। যখন প্রথম বার….’

বলতে বলতে থেমে গেল পিউ। ধূসর ভাই চুমু খেয়েছেন সে কী আর সবাইকে বলা যায়? এসব তো নিজেদের একান্ত মুহুর্ত। ওইদিন তার কী অবস্থা হয়েছিল সেই জানে। অক্কা পেত আরেকটু হলে। নেত্রপটে সেই চিত্র জেগে উঠতেই ভেতরটা লতিয়ে আসে কুন্ঠায়। যে মানুষটার চোখ তুলে তাকানো মানেই তার বিরস পৃথিবী অনিন্দ্য। সেই মানুষের ঠোঁটের ছোঁয়া ঠিক কী নামে সঙ্গায়িত করলে যুতসইই হবে?
তানহা শুধাল,
‘ কী, আটকে গেলি কেন? নেটওয়ার্ক স্লো?’
পিউ প্রসঙ্গ পাল্টাতে বলল
‘ চুপ কর। আয় ছবি তুলি সবাই। ‘
সোনিয়া বলল ‘ তোর ফোন থেকে তুলব। আমার ক্যামেরা ভালো না। তোরটা সুন্দর। ‘
‘ আচ্ছা আয়।’
চারজন গলা ধরে দাঁড়াল। তানহা দলের মধ্যে লম্বা। সে সামনে গিয়ে ফোন উঁচু করে ধরল। পরপর কতগুলো ক্লিক করে নামিয়ে আনতেই সবাই ঝাপিয়ে পরল,কাকে কেমন লাগছে দেখতে!

প্রিয়াঙ্কা বলল
‘ এই আমার সিঙ্গেল কয়েকটা ছবি তুলে দিবি কেউ?’
পিউ বলল, ‘ কলেজ ইউনিফর্ম পরেও তোর এত ছবি তুলতে মন চায়?’
‘ দে না দুটো তুলে,ভালোনা তুই?’

‘ আচ্ছা,কোথায় দাঁড়িয়ে তুলবি? ‘
তানহা হাত ইশারা করে দেখাল,
‘ ওই গাছটার নীচে যা। রোদ পরবে মুখে, দারুণ আসবে।’
প্রিয়াঙ্কা হৈহৈ করে ছুটে গেল। পিউ চলল পেছনে। সে গাছের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়ায়। তাকায় আরেকদিকে। এটাই ছবির পোজ। পিউ ক্যামেরায় ক্লিক করতে করতে বলে
‘ হাস।’

অনেকগুলো ছবি তলার পর ক্ষান্ত হয় মেয়েটা। এগিয়ে এসে বলে ‘ দেখি কেমন হয়েছে?’
পিউ গ্যালারি বের করে দেয়। স্কিপ করে করে একেকটা ছবি টেনে টেনে দেখল প্রিয়াঙ্কা। পিউয়ের চোখও তখন স্ক্রীনেই। আচমকা একটা ছবিতে অক্ষিপট আটকে গেল। প্রিয়াঙ্কা ঠেলে সরাতে গেলেই, ব্যস্ত কণ্ঠে বলল,
‘ দাঁড়া দাঁড়া।’

তারপর নিজেই টেনে আগের ছবিটা আনল। যতটুকু সাধ্য জুম করল। ছবির পেছনে বেঞ্চে বসা এক এক জোড়া কপোত -কপোতি বন্দী হয়েছে ক্যামেরায়। দুজনেরই গালের একাংশ দৃশ্যমান। অথচ পিউয়ের চিনতে অসুবিধে হয়না,এরা কারা! বিষয়টি তারা মস্তক ভেদ করে চলে যায়। থিতিয়ে আসে সব। শুকিয়ে আসা ওষ্ঠযূগল বারবার জ্বিভে ভিজিয়ে ছবিটা দেখতে থাকে। প্রিয়াঙ্কা কৌতুহলে শুধায়,
‘ কিছু হয়েছে? ‘
পিউ কম্পিত চোখ তুলল। তার হাতে ফোনটা ধরিয়ে দিয়ে বলল,
‘ এখানে দাঁড়া,আমি আসছি।’
উত্তরের আশায় না থেকে ত্রস্ত পায়ে এগিয়ে গেল সে। তানহারা কাছে এসে শুধাল
‘ কই গেল ও?’
‘ জানিনা। ‘

**
একটা শান বাঁধানো বেঞ্চে বসা দুটি ছেলেমেয়ে। মাঝখানে কিঞ্চিৎ দুরুত্বও নেই তাদের। ছেলেটার লম্বা হাত ছড়িয়ে রাখা। যা ছুঁয়েছে মেয়েটির কাঁধ।
বাদামের খোসা ছিলে এগিয়ে দেয় সে,মেয়েটি আনন্দ আর তৃপ্তি সমেত মুখে পোড়ে। তার ঠোঁটের আশেপাশে লেগে থাকা অবশিষ্টাংশ ছেলেটি মাঝে মধ্যে মুছিয়ে দেয় স্বযত্নে। দুজনেই ব্যস্ত নিজেদের আলাপে। চারপাশের কোনও দিকেই কান নেই,মন নেই,দৃষ্টি তো বহুদূর!
মেয়েটির অধর জুড়ে বিস্তৃত হাসি,আর তাদের কিছু কথা কানে আসে পিউয়ের। জড়ীভূত সে দাঁড়িয়ে থাকে আড়ালে। এই দৃশ্য,এই কথোপকথন তার স্নায়ু কু*পিয়ে আহ*ত করে। বুঝতে আর এক ফোটাও বাকী নেই কিছু। ইকবাল আর পুষ্পর দুইবছরের সম্পর্ক আজ প্রথমবার প্রকাশ্যে এলো। পিউ এক এক করে সমস্ত কথা মিলিয়ে ফেলল। জানলা দিয়ে পুষ্পর উঁকিঝুঁকি মারার সেই ঘটনা,গভীর রাতে পাচিল টপকানো ছেলেটি,পুষ্পর ইউনিভার্সিটি যাওয়ার দিন ইকবালের হঠাৎ আগমন,তার অগ্যাত ফোন,তারপর গ্রামে পদার্পণ, পিউ আস্তেধীরে সব হিসেব গেঁথে নেয় মাথায়। ওরা দুজন -দুজনকে ভালোবাসে? তাহলে সাদিফ ভাইয়া? সেজো মা যে ওদের বিয়ে ঠিক করলেন,তার কী হবে?

ততক্ষনে তানহারা ওর পাশে এসে দাঁড়ায়। তানহা কাঁধে হাত রাখে,ধ্যান ভাঙায় তার। মেয়েটা কিছু বলতে চাইলে পিউ ঠোঁটে তর্জনী চেপে থামতে বোঝায়। আরেকবার তাকায় পুষ্প আর ইকবালের দিকে। তারপর নিঃশব্দে প্রস্থান নেয়।

পিউ গার্ডেনে আর বসেনি। একটা মুহুর্ত থাকেনি। তার উদাসীন ভাবমূর্তি অন্যদের আনন্দেও জল ঢালে। বুঝিয়ে দেয় কিছু একটা হয়েছে! তানহা পুষ্পকে চেনে,সেও বুঝলো ঘটনাচক্র। কিন্তু বাকীদের সামনে মুখ খোলেনি। নির্লিপ্ত পিউকে প্রশ্নও করেনি। চিন্তান্বিত , বিস্মিত সে নিজেও। সাদিফের সাথে পুষ্পর বিয়ের কথা বলেছিল পিউ। সে সবটাই জানে। কিন্তু পুষ্প আপু অন্য কারো সাথে প্রেমের সম্পর্কে! কী হবে এখন?

পিউ যতটা প্রানোচ্ছল ছিল আজ, সব মাটিতে মিশে গিয়েছে। বাড়িতে ঢুকতেই সকল দুর্ভাবনা একসঙ্গে আছড়ে পরল মাথায়। বসার ঘরে তখন পরিবারের সবাই। তন্মধ্যে একজনকে দেখে চৌকাঠে থমকে রইল সে। আজমল ফিরেছেন রাঙামাটি থেকে। চুমুক দিচ্ছেন লেবুর শরবতে। রান্নাঘর থেকে ভেসে আসছে সুঘ্রাণ। সে যে আসবেন কেউ জানতোনা। চমক দিতে চেয়েছিলেন। সফলও হয়েছেন। উৎসবমুখর পরিবেশ প্রস্তুত। বাবা,চাচারা অফিস ফেলে বাড়িতে হাজির। ছয় মাস পর ভাইয়ের সাক্ষাৎ হুল্লোড় বাধিয়েছে ঘরে। অথচ পিউ অন্ত:পুরে একটু আনন্দের তল পেলোনা। সেজো চাচ্চুর আগমন কিছু পুরোনো কথা মনে করিয়ে দেয়। মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে আসে। সেজো মা কে বলতে শুনেছিল না,
‘ তুমি ফিরলেই বিয়ের কথা তুলব।’
পিউয়ের বুক ছ্যাৎ করে উঠল আশঙ্কায়। সেজো চাচ্চু ফিরেছেন, তাহলে এখন সাদিফ ভাইয়ার সঙ্গে আপুর বিয়ের আলোচনা হবে। অথচ সে আগেই মন দিয়ে বসেছে ইকবাল ভাইকে। নিশ্চয়ই আপু রাজি হবেনা বিয়েতে। আপু রাজি নাহলে সেজো মা ক*ষ্ট পাবেন। মনঃক্ষু*ন্ন হবেন। আর তারপর? তারপর ওদের এই একান্নবর্তী পরিবারে ভা*ঙন ধরবে না তো? পিউয়ের চেহারা শুষ্ক হয়ে আসে। মাথায় ভা*ঙে অন্তরীক্ষ।

‘ পিউ মা যে! ওখানে দাঁড়িয়ে কেন? এদিকে এসো।’
আজমলের স্ফুর্ত আওয়াজ, পিউয়ের সম্বিৎ ফেরায়। ঠেলেঠুলে জোর করে হাসি ফোঁটায় ওষ্ঠে। কাঁ*পা পায়ে এগিয়ে যায়। সালাম দেয় রুদ্ধ কণ্ঠে। আজমল জবাব দিয়ে , স্নেহের হাত বাড়িয়ে কাছে ডাকলেন। পিউ গেল, চাচার গলা জড়িয়ে ধরল। কিন্তু ভেতর থেকে হাতিয়েও উচ্ছলতার খোঁজ পায়না। আজমল কত কিছু কিনেছেন! বাড়ির সবার জন্যে টুকিটাকি এনেছেন। পিউও আছে তালিকায়। অতসব জিনিসপত্রও তার নিষ্প্রভ উত্তেজনা ফেরত আনতে ব্যর্থ । আজমলের পাশে বসে,ঘরভর্তি মানুষ গুলোর মুখ একবার একবার দেখল সে। এই গল্প,এই হাসি,এই আনন্দ সব একইরকম থাকবেত? কোনও ফাটল ধরবে না তো? সেজো মায়ের সাথে এই সুসম্পর্ক বজায় রইবেতো ওদের? তার দুঃ*শ্চিন্তায় হৃদয় কাঁ*পছে। সেত নিজের বাবাকে চেনে। সেজো চাচ্চু একবার ছেলের জন্যে আপুকে চাইলে ফেরাবেন না উনি। ভাইয়ের আবদার মাথা পেতে পূরন করবেন। আপু কেঁ*দে ম*রে গেলেও শুনবেন না বারণ। পিউ আর ভাবতে পারল না। চক্ষু বুজে আসছে ক্লান্তিতে। রাজ্যের সব চিন্তা কেন ওর এই ক্ষুদ্র মস্তিস্কে আসবে? একবার ধূসর ভাই,একবার আপু,সবাই মিলে কেন এরকম করছে? কেন আপু আগে জানালোনা এই সত্যিটা? জানলে সেদিনই সেজো মাকে নিষেধ করত সে। এতটা দিন ধরে বোনা স্বপ্ন একটুত কম হতো। কত নাটক! কতটা লুকোচুরি! ইকবাল ভাইয়াই বা কী করে পারলেন লোকাতে?

অভিমানে কিশোরী মন আবার ছেঁয়ে যায়। তীব্র অনুরাগ হানা দেয় ভেতরে। চটপটে পিউয়ের দুরন্তপনা আশানুরূপ পায়না আজমল। জিজ্ঞেস করেন,
‘ তুমি কি অসুস্থ পিউমা?’
পিউ দুদিকে মাথা নাড়ল। বলল ‘ একটু ক্লান্ত,ফ্রেশ হয়ে আসি চাচ্চু?’
‘ হ্যাঁ হ্যাঁ যাও। পরীক্ষা কেমন দিলে?’
‘ ভালো।’
তারপর মৃদু পায়ে ঘরের দিক এগোয় সে। দোর চাপিয়ে দিতেই চোখ ছাপিয়ে অশ্রু নামল। সাংঘাতিক ঝড়ে পরিবারটা এলোমেলো হয়ে না যায়! জন্ম থেকে পেয়ে আসা মানুষ গুলো, মমতাময়ী সব মায়েদের ছাঁয়া, মেলবন্ধনের এই পরিজন দুভাগ হলে সহ্য করতে পারবেনা সে।
পিউয়ের কান্নার দমকে কণ্ঠনালি বন্ধ। সব খারাপ কেন ওর সাথেই ঘটবে? কেন?

****
মিটিং শেষ। মার্কা সিলেকশন হলো লটারিতে। মেয়র নির্বাচনে ধূসরদের দল দাঁড়াবে ‘ টর্চ মার্কা’ নিয়ে। আর আজই প্রথম রাজপথে নেমেছে ওদের দলীয় স্লোগান। ধূসর আর গেল না সেখানে। মিটিংয়ের আগে আগে হন্তদন্ত হয়ে ইকবাল হাজির হওয়ায়,শা*স্তিস্বরূপ ওকেই পাঠিয়েছে। বেচারা গিয়েছেও হাসিমুখে। ধূসর এতটা সামলায় বলেই সে গায়ে বাতাস লাগিয়ে ঘুরে বেড়াতে সক্ষম। পুষ্পটার সাথেও হয় দৈণিক সাক্ষাৎ। মাঝেমধ্যে হাসি পায়,ভালো মানুষ ছেলেটার থেকে সুযোগ নিয়ে ওরই বোনের সঙ্গে প্রেম করছে বলে। আবার ভ*য় লাগে যেদিন ধূসর জানবে, কটা হাড় যে ভাঙ*বে তার! ভা*ঙলে ভা*ঙুক। ওর অধিকার আছে ভা*ঙার। কিন্তু ভুল না বুঝুক, বন্ধুত্ব ন*ষ্ট না হোক। এই ভ*য়ে মাসের পর মাস পুষ্পর ডাকে সাড়া দিতে পারেনি। ধূসরের মত অনুভূতি আটকে রাখার প্রবল ক্ষমতা তার ছিল না। শেষমেষ অসফল হয়েছে। ভাগ্যিশ হয়েছিল,নাহলে পুষ্পরানি মিস হয়ে যেত কপাল থেকে। একটা পুষ্পর জন্যে ইকবাল শরীরের একশ টা হাড় বিসর্জন দিতেও প্রস্তুত।

***
ধূসর যখন বাড়ি ফেরে তখন মহল নিস্তব্ধ। যে যার ঘরে। কেউ বা ঘুমিয়ে। আজমল বাড়ি ফিরেই তাকে ফোন করেছিলেন। সে চেষ্টাও করেছে তাড়াতাড়ি ফেরার। কোনও ক্রমেই কূলিয়ে উঠতে পারল না। ধূসর ভাবল একবার দেখা করবে এখন,পরে আর গেল না। চাচ্চু জার্নি করে এসেছেন যখন,বিশ্রাম নিক। আগামীকাল তো দেখা হচ্ছে।
নিজের কামড়ায় ঢোকার পূর্বে অভ্যাশবশত আরেকটা ঘরে চোখ বোলাল ধূসর। আলো নেভানো,দরজা খোলা। ওমনি ভ্রুঁ বেকে এলো তার। দু পা এগিয়ে ঘরের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। পিউ রুমে নেই? রাত তো অনেক! পরীক্ষা চললে এই সময়টায় পড়ার টেবিলে থাকে ও। সারা বছর পড়েনা বলে আগের রাতে নিউটন বনে যায়। সেই মেয়ে আজ বাতি নিভিয়ে? কৌতুহলে ধূসর ভেতরে ঢোকে। জানলা গলে আসা আলোয় বেশ বুঝছে,বিছানাটা ফাঁকা। মেয়েটা গেল কোথায়?
ধূসর আবার নিচে নামল দোতলা থেকে। বসার ঘরের দুমাথা, রান্নাঘর সব জায়গা দেখল। সন্দেহে পরীক্ষা করলো নিজের কামড়াও। অথচ কোথাও নেই পিউ।
সবশেষে মাথায় এলো ছাদের কথা। রাত একটা পেরিয়ে,পিউ ভীতু। ছাদে থাকার কথাই নয়। বাড়ির ভেতর নেই যখন হয়ত ওখানে। ধূসর অতশত হিসেব কষতে গেল না। উদ্ভ্রান্ত ভঙিতে পা বাড়াল। ছাদের দরজাটা হা করে খোলা। অন্য সময় লাগানো থাকে ভেতর থেকে। ধূসর ছটফটে কদমে ছাদে এসে দাঁড়ায়। রেলিং ঘেঁষে দাঁড়ানো পিউকে দেখতেই প্রানসঞ্চার ঘটে। বুকে হাত দিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে শ্বাস ফেলল সে। পরপর রুঢ় চোখে তাকাল। বিগড়ে গেছে মেজাজ। জোড়াল পায়ে এগিয়ে গেল। কথাবার্তা ছাড়াই পিউয়ের কনুই চে*পে নিজের দিকে ঘোরাল। ফটাফট ধম*ক ছুড়ল,
‘ সমস্যা কী তোর? এত রাতে ছাদে….’
পিউ চমকে গেল,ঘাবড়াল। ধূসরকে দেখে পরিমান ছাড়াল সেসব। কিন্তু তার মুখস্রী পরিলক্ষিত হতেই ধূসরের কথা থেমে যায়। পিউয়ের ভেজা গাল,নেত্রযূগল সদ্য ওঠা রা*গটুকু মিশিয়ে নেয় হাওয়ায়।
উলটে উদ্বিগ্ন হয়ে তাকাল। পিউয়ের চোখ বেয়ে টপটপ করে গড়িয়ে পরছে অশ্রু। ঠোঁট ফুলছে সেই দমকে। ধূসরের শৈলপ্রান্ত জড়ো হয়ে আসে। সেত সব ঝামেলার ইতি টেনেছে কাল। নতুন করে তো কিছু করেনি। তবে কাঁ*দছে কেন মেয়েটা?

অধীর গলায় বলল ‘ কী হয়েছে?’
বলতে দেরী, অনতিবিলম্বে পিউ বুকের ওপর ঝাঁপ দেয়। প্রথমবার আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে তাকে। মানুষ যখন খুব দুঃ*খ পায়,কাছের কাউকে দেখা,তার সান্নিধ্য, সেই দুঃ*খকে উগলে আনে দ্বিগুন। পিউয়েরও এলো। ধূসর তো ওর কাছের মানুষ নয়,বরং এই বসুন্ধরায় তার সর্বাধিক প্রিয় মানুষ।
ধূসর থমকে গেছে। বিস্ময়াভিভূত সে। তৈরী না থাকায়, সহসা পিছিয়ে গেল এক কদম। পিউ শক্ত হাতে জাপটে ধরে কেঁ*দে ওঠে। হুহু শব্দ হয়। আসঙ্কায় ধূসরের মাথা ফাঁকা হয়ে আসে। ভীতিতে রুদ্ধ হয় শ্বাস।
হাঁস*ফাঁস করে ভেতরটা। পিউ কেঁ*দেছে,বহুবার কেঁ*দেছে। কিন্তু তাতে ভিন্নতা ছিল। এইভাবে তাকে জড়িয়ে কাঁ*দেনি। ধূসর অধৈর্য হাত রাখে পিউয়ের মাথায়। অথচ খুব ধীরস্থির কণ্ঠে জানতে চায়,
‘ কাঁদছিস কেন? কেউ কিছু বলেছে?’
পিউ জবাব দিলোনা। কাঁ*দছে তখনও। ধূসর আবার শুধাল,
‘ পরীক্ষা খা*রাপ হয়েছে?’
পিউ নাক টেনে দুদিকে মাথা নাড়ে। ধূসর বুক থেকে ওর মাথাটা সরিয়ে আনল। তুলতুলে গাল দুটো নিরেট হস্ত তালুতে ধরল। চোখেমুখে প্রশ্রয় ঢেলে, অত্যধিক মোলায়েম স্বরে শুধাল,
‘ তাহলে কাঁ*দছিস কেন? আবার কেউ আমার নাম লিখেছে হাতে? না কি কেউ আমায় জড়িয়ে ধরেছে?’

ধূসর অপ্রকাশ্যে চাইল পিউ সহজ হোক।। কিন্তু হলোনা। উলটে সপ্তদশী মেয়ের কোটরের জল উপচে পরে। গাল থেকে গলায় গড়ায় বিশ্রামহীন।
বোজা স্বরে, শঙ্কা নিয়ে বলল,
‘ খুব বড় ঝড় আসতে চলেছে ধূসর ভাই। সেই ঝড়ে আমাদের পরিবারটা এলোমেলো হয়ে যাবে নাতো?’
ধূসরের সাবলীল অভিপ্রায় চট করে বদলে গেল। ‘পরিবার’ শব্দটায় টনক নড়ল মস্তিষ্কের। গুরুতর কণ্ঠে বলল,
‘ খুলে বল।’
পিউ বুঝতে পারল না কী বলবে! সত্যিটা জানার পর ধূসরের প্রতিক্রিয়া ভেবেইত জমে যাচ্ছে তুষারের ন্যায়। যে দুজন মানুষকে ঘিরে প্রসঙ্গ,একজন ওনার প্রানের বন্ধু,অন্যজন তার বোন। ধূসর ভাইয়ের রা*গ সে জানে। যদি ইকবাল ভাইয়ের সাথে বন্ধুত্বটা নষ্ট হয়? আত*ঙ্কে পিউয়ের সংকুচিত চোখমুখ ধূসরের ওপর প্রভাব ফেলল না। সে উৎকন্ঠিত,অসহিষ্ণু। পুরু কণ্ঠে বলল,
‘ তুই বলবি পিউ?’
পিউয়ের শরীর কাঁ*পছে। বিবশ তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ। বলবে, কী বলবে না, দ্বিধাদ্বন্দে মস্তিষ্ক চৌচির। সময় নিয়ে,ধূসরের চোখের দিকে তাকায়। আরক্ত অক্ষিপট বলতে বাধ্য করে। পিউ বেগ নিয়ে, জ্বিভ ঠেলে জানায়,
‘ ই..ইককবালল ভভাইয়া আ…র আপু দুজন দুজনকে ভভভভালোবাসে।’

চলবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে