#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২৮)
যতটা আনন্দ,মজা আর হুল্লোড় করার স্বপ্নে ছিল ইকবাল তার সব মাটি। কিচ্ছুটি হলোনা। বরং সম্পূর্ন রাস্তায় ধূসরের নিস্তব্ধতা চুপসে রাখল তাদের। পুষ্পর সঙ্গে সেই লুকোচুরি, প্রেম -প্রেম চোখাচোখি পর্যন্ত হয়নি। মেয়েটারও যে মন খা*রাপ! সেই যে জানলা দিয়ে বাইরে চেয়েছে,আর ফেরেনি কোনও দিক। ধূসর ভাইয়ের অন্ধকার চেহারা প্রভাব ফেলেছে ওর মনেও। এই একই কারণ, ইকবালের দুষ্টুমি গুলোকেও মাথা তুলতে দিলোনা। যেই মেয়ে ধূসরের পায়ে পায়ে ঘোরে,লেগে থাকে, পারলে ঝুলে থাকে শার্টের কোনায় সেই ছোট্ট পিউয়ের একটা অস্বাভাবিক প্রত্যা*খান তিনটি মানুষকে থমকে রাখল আজ।
ইকবালের গাড়ি থামল মেইন গেটে। সে আর ঢুকবেনা ভেতরে। ধূসর নামল খুব দ্রুত। ছেলেটা সৌজন্যে বোধ দেখিয়েও ইকবালকে বিদায় জানাল না। নামা মাত্র গটগট করে ঢুকে গেল বাড়িতে। পুষ্প ঢোক গি*লে ভী*ত কণ্ঠে বলল,
‘ পিউয়ের যে আজ কী হবে!’
ইকবাল বলল,
‘ ও হঠাৎ এরকম করল কেন?’
‘ জানিনা, আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছেনা। শোনো ইকবাল, তুমি যাও এখন,আমি ভেতরে গিয়ে দেখি কী অবস্থা!’
‘ আচ্ছা জানিও আমায়।’
পুষ্প ব্যস্ত পায়ে গাড়ি থেকে নামতে নামতে বলল ‘ আচ্ছা।’
ধূসরদের গাড়িটা সবার পরে ছাড়ায়,পৌঁছালও সব শেষে। যে যার ঘরে গেলেন বিশ্রামের জন্যে। শুধু মিনা বেগম ঢুকলেন রান্নাঘরে। তাকে দেখে রুবায়দাও হাত মুখ ধুয়ে নেমে এলেন। বাসায় এতদিন না থাকায় প্রচুর কাজ জমেছে। মিনা বেগম এতদিনের নোংরা হওয়া আমজাদ আর তার কাপড় গুলো ঝুড়িতে ফেললেন। কাল বুয়া এসে কেচে দেবে। এর মধ্যে ধূসর বাড়িতে ঢোকে। হাঁটা পথে শুধায়,
‘ পিউ কোথায়?’
তিনি বললেন, ‘ ঘরে। বলল পড়তে বসবে, কেউ যেন বিরক্ত না করে।’
ধূসর ওমনি দাঁড়িয়ে গেল। পেছন ফিরে তাকাতেই মিনা বেগম বললেন,
‘ আমিও অবাক হয়েছি,পড়া চোর মেয়ের এত আগ্রহ দেখে। যেখানে এত পথ জার্নি করে এসে সবাই বিছানায় চিৎপটাং হয়ে গেল সেখানে সে না কি পড়বে এখন। ভাবা যায় বলতো?’
রুবায়দা বেগম বললেন
‘ ওর তো পরীক্ষা আপা,তাই পড়ছে। তুমি যতটা বলো পিউ ততটাও ফাঁকি দেয়না। আর এরকম পড়েও ভালো রেজাল্ট করছে যখন, তখন সমস্যা কোথায়?’
‘ তুই আর ওর হয়ে কথা বলিস না ভাই। সব সময় আগের রাতে পড়ে পরীক্ষা দিতে যায়। তাও কীভাবে অত নম্বর পায় আল্লাহ মালুম। নির্ঘাত স্যার গুলো একটা খাতাও ভালো করে দেখেনা। ‘
রুবায়দা বেগম কথাটায় হেসে ফেললেন। নিজের মত আরো কিছু সাফাই গাইলেন পিউয়ের নামে। কিন্তু শ*ক্ত হয়ে রইলো ধূসর। সিড়ির হাতলে রাখা হাতটা আর দৃঢ় হলো। বুঝতে বাকী নেই, পিউয়ের নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য। ‘কেউ যেন বিরক্ত না করে , এই লাইনটা শুধুই তার জন্যে। তাইতো?
ধূসর যতটা ক্ষি*প্ত ছিল,তার থেকেও অত্যধিক রা*গ মুহুর্তে জাপটে ধরল শরীর। ললাটের শিরা সমূহ ফুঁ*সে ওঠে। র*ক্ত, উত্ত*প্ত জলের ন্যায় টগবগ করল। তারপর শব্দ করে করে সিড়ির একেক ধাপ বেঁয়ে চলল সে।
***
পিউয়ের দরজার সামনে এসে থামল ধূসর। দোর ভেতর থেকে বন্ধ দেখে ক্রো*ধ আরো চড়ে বসে। তামাটে নাকের ডগা ফুলে ওঠে।
পিউ চেয়ারে বসে। মাথাটা টেবিলে। আচমকা দরজার দ্রিমদ্রিম শব্দে কলিজা ছ*লাৎ করে লাফিয়ে ওঠে। চমকে দরজার দিক তাকাল সে। হুলস্থূল কড়া*ঘাতের শব্দ কানে স্পষ্ট। পিউয়ের বড় বড় চোখ নিবদ্ধ সেখানে। পরমুহূর্তে নিভে এলো দৃষ্টি। চোখ ফিরিয়ে আনল সে। আবার আগের মত দুহাত জড়ো করে টেবিলে রেখে, মাথাটা এলিয়ে দিল।
ধূসরের হাতের তালু লালিত। যেন চামড়া ফে*টে র*ক্ত আসবে বাইরে। দাঁত কপাটি একই জায়গায় এসে মিশেছে। পুষ্প গুটিসুটি মেরে পেছনে দাঁড়িয়ে। চেহারায় শঙ্কা,আত*ঙ্ক। দরজা ধা*ক্কানোর শব্দ জোড়াল হলো আরো। একে একে পৌঁছে গেল বাড়ির প্রতিটি কোনায়। উচ্চশব্দে নীচ থেকে ছুটে এসেছেন মিনা, রুবায়দা। বাকীরাও বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। পেছনে ভিড় জমল,অথচ নিরুদ্বেগ ধূসরের এলো- গেলোনা। সে অধৈর্য, বিক্ষি*প্ত,ত্বরান্বিত। কেন দরজা খুলছেনা পিউ,কেন?
আফতাব সিকদার চশমা চোখে দিয়ে বের হলেন। ছেলেকে বললেন,
‘ কী ব্যাপার? এভাবে দরজা ধা*ক্কাচ্ছো কেন? কি হয়েছে?’
ধূসর জবাব দিলোনা। একবার ঘুরেও দেখল না বাবাকে। মিনা বেগম বুঝতে না পেরে বললেন,
‘ ও ধূসর! কী হয়েছে রে বাবা? পিউ কিছু করেছে?’
পুষ্প চো*রের মত চুপটি করে দাঁড়িয়ে। ঘটনার আদ্যপ্রান্ত তার অবগত। তবুও টু শব্দ করছেনা। বাড়ির প্রত্যেকে ধূসরের কান্ডে একে অন্যের মুখ চাওয়া- চাওয়ি করল। ভাবল, হয়ত পিউ কিছু করেছে! নাহলে এত শব্দেও কেউ দরজা কেন খুলবেনা?
অবশেষে ক্ষান্ত হলো ধূসর। থামল সে। পিউ খুলল না তো খুললই না। ধূসর বন্ধ দোরের দিক কিয়ৎক্ষন র*ক্ত চোখে চেয়ে রইল । প্রসস্থ বুকটা লা*ফাচ্ছে ঝ*ড়ের ন্যায় নিঃশ্বাসের গতিতে। সে ক্ষু*ব্ধ নজরে শেষ বার তাকিয়ে হনহন পায়ে নিজের ঘরে গেল। ধ*ড়াম করে দরজা লাগাল। উৎকট শব্দে কেঁ*পে উঠল রিক্ত থেকে রাদিফ। আমজাদ সিকদার ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে চটজলদি বাইরে এলেন। মেয়ের ঘরের সামনে বাড়ির সবাইকে দেখে তব্দা খেয়ে বললেন,
‘ কী হয়েছে এখানে?’
তাজ্জব, কৌতুহলি প্রতিটি সদস্য তার দিকে তাকাল। তবে যুতসই উত্তর কারো কাছে নেই। সকলেই প্রশ্নবিদ্ধ। কেউ ভাবল পিউ হয়ত বেয়া-দবি করেছে,তাই রে*গে গেছে ধূসর। আফতাব সিকদার তিঁতি বিরক্ত। শান্ত মানুষ বলেই ছেলেকে কিছু বলেন না।
মিনা বেগম স্বামীকে দেখেই ব্যাতিব্যস্ত হয়ে বললেন,
‘ কিছু হয়নি। আপনি যান, বিশ্রাম করুন। ‘
‘ তাহলে তোমরা এখানে কেন? পিউ ঠিক আছে?’
‘ আরে হ্যাঁ হ্যাঁ। ওতো মাত্র ঘরে গেল। আমি ডাকছিলাম,জোরে জোরে দরজা ধা*ক্কিয়েছি বলে ওরা সবাই চলে এসছে।’
সাজানো, গোছানো কথাগুলোই মেনে নিলেন আমজাদ। মিনা বেগমের ওপর দিয়ে সত্যিটা আর কেউ বলতে গেল না। এমনিতেও বলতোনা। আমজাদ সিকদার আগে থেকেই ধূসরের ওপর চটে আছেন। গ্রামে গিয়ে ধূসরের মা*রা-মা*রির ঘটনা,আর এক ঘর মানুষের সামনে তার বেপরোয়া ভাবভঙ্গির পর সে মনে মনে ক্ষু*ন্ন ভীষণ। প্রকাশ করছেন না,তবে দরকার ছাড়া ধূসরের সাথে একটা কথাও বলেননি।
আফতাব সিকদার হতাশ চোখে ভাবির দিক চাইলেন। এই নারীটি রুবায়দার থেকেও বেশি অন্ধ ধূসরের প্রতি। একটা কোনও কারণ রাখবেনা, যাতে কেউ একটা কথা শোনাবে ওকে। যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন, এই যে এখনও করলেন। ভদ্রমহিলা মনপ্রাণ দিয়ে মানেন,একটা সুখী পরিবারের মূলমন্ত্রই হলো একে অন্যের দো*ষ ঢেকে রাখা।
আনিস ঘরে ফিরে এলেন। শরীর ক্লান্ত, আপাতত কিছু নিয়ে মাথা ঘামানোর শক্তি নেই। কাল থেকে আবার অফিসে ছোটাছুটি। একে একে সবাই ফিরে গেল কামড়ায়। সাদিফ বাড়িতে ছিল না। মাঝপথেই গাড়ি থেকে নেমে অফিসে গিয়েছে। সেদিনের হারানো ডকুমেন্টসের সমাধানের জন্যে তাকেই দরকার। ছেলেটা সামান্য বিশ্রাম অবধি পায়নি।
মিনা বেগম,রুবায়দা দুজনেই দাঁড়িয়ে থাকলেন। রুবায়দা চিন্তিত কণ্ঠে বললেন,
‘ কী হলো ব্যাপারটা? ছেলেটা এমন করল কেন? ‘
‘ কী আর হবে? হয়ত দেখছিল পিউ সত্যিই পড়তে বসেছে কীনা। আর ওটাও ভ*য়ে দরজা খোলেনি দেখেছিস?ফাঁকিবাজ তো!’
দুজন সরল- সহজ রমনীর আলাপের মাঝে পুষ্প ঘরের দিকে পা বাড়াল। মনে মনে বলল,
‘ আল্লাহ বাঁচিয়েছেন তোমাদের সরল বানিয়ে,নাহলে কী হতো! ধূসর ভাই যা ক্ষে*পেছেন কখন শান্ত হবে আল্লাহ জানে। কেন যে এরকম করছিস পিউ!’
****
পিউয়ের দরজা খোলা হলো তখন,যখন ধূসর বাড়িতে নেই। দুপুরে খেলোনা,কয়েকজন হাজার ডেকেও তাকে পায়নি। ভেতর থেকে উত্তর পাঠাচ্ছিল ‘ পরে খাব, পড়ছি।’
ধূসর আসার আগে আগে খেতে গেল। একেবারেই সামান্য ভাত মুখে দিয়ে আবার রুমে ঢুকে যায়। ফের দরজা লাগাতে গেলেই পুষ্প এসে সামনে দাঁড়াল। থেমে গেল পিউ। সে নরম কণ্ঠে প্রশ্ন করল
‘ কী হয়েছে তোর?’
পিউ অনতিবিলম্বে জবাব দেয়,
‘ কিছুনা।’
‘ কিছু হলে আমাকে বল,আমি সব ঠিক করে দেব।’
পিউ দূর্বোধ্য হেসে বলল ‘ হলেই না ঠিক হতো। যেখানে কিছু হলোইনা,সেখানে আর কী করবি?’
‘ তুই বড়দের মত করে কথা বলছিস কেন?’
‘ বড় হয়ে গেছি বলছিস?’
পুষ্প দরজা ছেড়ে ভেতরে ঢুকল। বোনের গাল ধরে মোলায়েম স্বরে বলল,
‘ তোর কি মন খা*রাপ পিউ?’
পিউয়ের ভেতরটা হুহু করে ওঠে। অথচ চোখ শুকনো। মিহি হেসে মাথা নাড়ল।
পুষ্প বলল, ‘ ধূসর ভাই দুপুরে ডাকলেন বের হলিনা কেন?’
‘ এমনি। পরীক্ষার চারদিন বাকী,একটু পড়ি?’
পুষ্প অবাক হলো। পরক্ষনে স্বাভাবিক হয়ে বলল,
‘ পড় । আমি আজ তোর সাথে ঘুমাব।’
‘ না। আমি শব্দ করে পড়ব,তোর ঘুম হবেনা।’
পুষ্প বিস্ময়টা আর চাপা দিতে পারেনা। চোখ ফে*টে বেরিয়ে আসে তার স্পষ্ট ছাপ।
এই মেয়েটা তার সঙ্গে ঘুমাবে বলে প্রত্যেকটা দিন বায়না করে। সেইত নিতে চায়না। রাত জেগে ইকবালের সাথে ফোনালাপের জন্যেই নেয়না। তবে অজুহাত দেখায়, পিউয়ের ঘুম ভালোনা বলে।’
অথচ আজ সে নিজে যেঁচে এলো,পিউ মানা করছে?
পিউ ঠান্ডা স্বরে বলল ‘ তুই এখন যা আপু। আমার পড়তে বসতে দেরি হয়ে যাবে।’
পুষ্পর মুখটা ছোট হয়ে আসে। এইবার সে শতভাগ নিশ্চিত, পিউয়ের কিছু একটা হয়েছে। নির্ঘাত ক*ষ্ট পেয়েছে কিছু নিয়ে। কিন্তু ওতো দুঃ*খ পেলে চে*পে রাখার মেয়ে নয়। হাত পা ছড়িয়ে কাঁ*দে। বলেও দেয় সরাসরি। অভিযোগ জানায়। তাহলে হঠাৎ কী হলো?’
***
সকাল বেলা নাস্তার টেবিলে এসে ধূসর থমকাল। সবাই আছে, পিউ নেই। সবসময় বসা চেয়ারটাও ফাঁকা। পরপর স্বাভাবিক হলো সে। ভাবল আসবে হয়ত,ওঠেনি এখনও। আজ অবধি তাকে ছাড়া মেয়েটা সকালে খেয়েছে না কি! ধূসর এগিয়ে এসে চেয়ার টেনে বসে। রুবায়দা বেগম প্লেটে নাস্তা বেড়ে দিলেন। গ্লাসে ঢাললেন তাজা ফলের রস। ধূসর চুমুক দিতে দিতে আড়চোখে সিড়ির দিকে তাকাল। পিউয়ের ছাঁয়ারও দেখা নেই। ধূসর শরবত মুখের সামনে ধরলেও খেতে পারল না। রেখে দেয়। পাশে পরে থাকা খালি চেয়ারটা দেখে বি*শ্রী অনুভূতি হয়। স্যান্ডউইচ হাতে তুলেও নামিয়ে রাখে। ওই টুকু সময় কয়েকবার তাকাল সিড়ির দিকে। এই বুঝি পিউ নামছে! কিন্তু না,মেয়েটার খোঁজ নেই। এমন তো কখনও হয়নি। এই বাড়িতে এত ভোরে মিনা,রুবায়দা,আর সুমনার পর পিউই ওঠে। শুধুমাত্র ধূসরের সাথে দিন শুরু করার আশায়। নামাজ শেষে ঘুমোয় না। বসে থাকে,অপেক্ষা করে,চেয়ার টেনে মুছে রাখে,ধূসর ভাই পাশে বসবেন বলে। সারাদিন দেখবেনা , এই একটু সময় কাছে পাবে বিধায় যে মেয়ে এতটা মুখিয়ে থাকে সে আজ এলোনা? এতক্ষণেও না? ধূসর ঢোক গি*লল। খাবার আজ নামবে না গলা দিয়ে। আফতাব লক্ষ্য করলেন ছেলেকে। জিজ্ঞেস করলেন,
‘ খাচ্ছোনা কেন?’
ধূসর বাবার দিকে তাকায়। আরেকবার চোখ বোলায় সিড়ির দিকে। শেষমেষ উঠে দাঁড়ায় বসা থেকে। মিনা বেগম বললেন ‘ কী হলো?’
‘ খাব না।’
‘ ওমা কেন? বসেছিস যখন….’
কথা সম্পূর্ণ করতে দিলোনা ধূসর। লম্বা পায়ে বাড়ি ছাড়ল। বাড়ির লোকের জিজ্ঞাসু চোখমুখ তোয়াক্কা পেলোনা সেখানে।
পিউ চাপানো দরজা ঠেলে ভেতরে উঁকি দিলো। পুষ্প গভীর ঘুমে মগ্ন। সে পা টিপে টিপে ঢুকল ভেতরে। সোজা চলে গেল বারান্দায়। দেয়াল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে উঁকি দিল নীচে। ধূসর বাইক ছুটিয়ে বেরিয়ে গেল কেবল। ওইত পেরিয়ে যাচ্ছে গেইট। পিউ দাঁড়িয়ে রয়,একধ্যানে চেয়ে চেয়ে দ্যাখে তার প্রানপ্রিয় ধূসর ভাইকে।
***
ধূসর আক্রো*শে পরপর চারটে ঘু*ষি বসাল দেয়ালে। আঙুলের চামড়া ছিলে গেল। তবু এক চুল রা*গ কমলোনা। আবার ঘু*ষি দিতে গেলে, ইকবাল হকচকিয়ে হাতখানা টেনে ধরল। আর্ত*নাদ করে বলল,
‘ কী করছিস? পাগল হলি!’
ধূসর হিঁসহিস করল। অথচ শান্ত কণ্ঠে বলল
‘ হাত ছাড়।’
‘ ধূসর,মাথা ঠান্ডা কর। রা*গ কমা,নিজেকে আ*ঘাত করলে লাভ হবে?’
ধূসর তাকাল।
‘ তুই ভাবতে পারছিস ইকবাল, আমি ডাকলাম পিউ এলোনা। আমি দরজা ধা*ক্কালাম,বাড়ির সবাই জড়ো হয়ে গেল কিন্তু ও খুলল না। রাতে পর্যন্ত বের হয়নি। সকালে খেতে আসেনি। কাল থেকে একবার আমার দিকে তাকায়নি, কথা বলা তো দূর!’
কথাগুলোর শুরু অক্রো*ধে হলেও, শেষদিকে গলা বুজে এলো ধূসরের। প্রতিটি বাক্যে মনঃক*ষ্ট, ক্লেশ,দুঃ*খ পরিষ্কার। ইকবাল নিরাশ শ্বাস টেনে বলল,
‘ এইটুকুতে তোর ক*ষ্ট হচ্ছে? তাহলে ভাব,গত তিন বছর ধরে মেয়েটা কতটা ক*ষ্ট পেয়েছে! কতটা ধৈর্য ধরেছে তোর আশায়, তোর অপেক্ষায়!’
ধূসরের রুষ্ট অভিব্যক্তি শিথিল হয়। অক্ষিপটে কোমলতা ছড়ায় নিমিষে। অনেকক্ষণ চুপ করে থেকে বিচলিত, নিস্তব্ধ কণ্ঠে শুধাল,
‘পিউ বদলে যাচ্ছে নাতো ইকবাল? ‘
‘ গেলে যাচ্ছে,সমস্যা কী?’
ধূসর ব্যাকুল চোখে তাকায়। ইকবাল উদ্বেগহীন গলায় বলল ‘ আরো চুপ করে থাক,অপেক্ষা কর সময়ের। আর এদিকে পিউ পালটে যাক,তারপর অন্য কাউকে বিয়ে ক….’
এটুকু শুনতেই ধূসর ধম*কে উঠল ‘ চুপ। চুপ কর। ‘
ইকবাল থামল তবে হাসল। ধূসরের অবস্থায় তার দুঃখ পাওয়ার কথা, অথচ দাঁত মেলে হাসছে সে। ধূসর হাঁস*ফাঁস করে বসে পরল চেয়ারে। হাঁটুতে ঝুঁকে মাথা চে*পে ধরে বলল,
‘ পানি আনা তো।’
ইকবাল ঠোঁট টিপে হাসতে হাসতেই বাইরে গেল। কাউকে একটা হুকুম দিল পানি দিতে। ধূসর মাথা নুইয়ে বসে রইল ওভাবে। হঠাৎ কিছু একটা ভেবে সোজা হলো। তৎক্ষনাৎ পকেট থেকে ফোন বের করে কল দিল কারো নম্বরে। সে রিসিভ করতেই শুধাল,
‘ তোর ভাবি কি কলেজে?’
****
পিউ কলেজে গেল না। শরীর খারাপের ছুঁতো দেখিয়ে বাড়িতেই থেকে গেল । অন্য সময় এমন করলে মিনা বেগম ব*কেন, রাগা*রাগি করেন, জোর করে পাঠাতে চান। আজ মেয়ের শুকনো মুখ দেখে রা করলেন না। ভাবলেন সত্যিই অসু*স্থ!
তখন মাত্র দুপুর। রবির কড়া আলো, শীতের প্রকোপে মিইয়ে আছে। এতটা বেলায়ও কুয়াশা কাটেনি। হলদেটে বিভায় জুড়েছে শহরের বুক।
পিউ বিছানায় শুয়ে। মেঘ ছুটছে তার আদোল ঘিরে।
নিশ্চল আখিজোড়া নিবদ্ধ সিলিং ফ্যানের ওপর। তক্ষুনি ঘরে ঢুকলেন মিনা বেগম। মেয়েকে গভীর চোখে দেখলেন। গত দুই দিন ধরে তার দুরন্ত মেয়ে এমন চুপচাপ কেন? কথা বলছেনা,হাসছেনা,হু হা ছাড়া উত্তর নেই। সারাদিন বসার ঘরে টেলিভিশনের দিক চোখ গেঁথে রাখা মেয়েটা, আসা থেকে একটাবারও নীচে নামেনি। তিনি আস্তে করে ডাকলেন,
‘ পিউ!’
পিউ নড়েচড়ে উঠল। ধ্যানে ছিল যেন। সামনে তাকিয়ে মাকে দেখে উঠে বসল।
‘ তুমি এখন?’
‘ নাস্তা করতে এলিনা যে।’
পিউ চোখ নামিয়ে বলল ‘ পরে খাব।’
‘ কাল থেকে এই এক কথা শুনছি। না খেয়ে থেকে একটা রোগ বাধিয়ে ক্ষান্ত হবি তাইনা?’
‘ কিছু হবে না। খিদে লাগলে নিজেই খেয়ে নেব।”
মিনা বেগম ছোট্ট শ্বাস ফেললেন। এগিয়ে এসে মেয়ের পাশে বসে বললেন
‘ পরীক্ষার জন্যে এত চিন্তা করছিস তাইত? চিন্তা নেই মা। যা হবে ভালো হবে। এসব নিয়ে ভাববিনা, ঠিক আছে? ‘
পিউ উদাস হাসল। নীচের দিক চেয়ে বাধ্যমেয়ের মতো মাথা দোলাল।
মিনা বেগম বললেন ‘ চল খাবি। রুটি খেতে না চাইলে তোকে নুডুলস রেধে দেব আয়।’
পিউ জোরপূর্বক হেসে বলল
‘ মা! এখন খাব না,যখন খাব তোমাকে বলব করে দিতে।’
হার মানলেন তিনি। পরমুহূর্তে পিউয়ের এলোমেলো চুল দেখে বললেন,
‘ চুলের কী অবস্থা করেছিস! ফ্যাকাশে কেন এত? তেল টেল দিসনা?’
পিউ বলল না কিছু। মিনা বেগম অপেক্ষাও করলেন না উত্তরের। এগিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিল থেকে তেল আর চিরুনি তুলে আবার এসে জায়গায় বসলেন। মেঝে ইশারা করে বললেন,
‘ আয় দেখি, এখানে বোস,তেল দিয়ে দেই।’
পিউ মানা করল ‘ না, দেব না এখন।’
‘ চুপচাপ আয়। অত বড় চুল, যত্ন না নিলে থাকবে? আয় বলছি!’
মায়ের চোখ পাকানো দেখে পিউ ব্যর্থ শ্বাস নেয়। বিছানা থেকে নেমে এসে পায়ের কাছে বসে। মিনা বেগম পাঞ্চ ক্লিপ খুলে পাশে রাখলেন। চুলের ভাঁজে হাত দিয়েই, মুখ কুঁচকে বললেন,
‘ ইশ! কত্ত জট বেঁধেছে। আসা থেকে চিরুনি করিসনি?’
পিউ দীর্ঘ শ্বাস নিল। সত্যিই করেনি। সে যে নিজের মধ্যেই নেই। যার অন্তকরনের পুরোটা অম্বুবাহি ছেঁয়ে তার কী সাজসজ্জায় মন বসে?
মিনা বেগম হাতের তালুতে তেল ঢেলে,চুলে ঘষলেন প্রথমে। ভাঁজে ভাঁজে তেল লাগাতে লাগাতে বললেন,
‘ তোর মত বয়সে আমার হাঁটু অবধি চুল ছিল। চিরুনি ঢুকতোনা,সিথি দেখাতোনা। ঠিকঠাক মুছতে পারতাম না বলে প্রায়সই ঠান্ডাও লেগে যেত। তবুও বড় চুল রাখার জন্যে কী না করেছি! আর তোরা? চুলের যত্ন নিসনা,তেল দিসনা। মাসে মাসে কাট*ছাট করে ছোট করে রাখিস। কী লাভ এতে? বড় চুলের মত সৌন্দর্য আর কিছুতে হয়?’
পিউ নিশ্চুপ, নিরুত্তর। মিনা বেগম আরো অনেক কথা বললেন! সব তার কানের পাশ দিয়ে চলে গেল। একটাও না শুনেছে, না ঢুকেছে মাথায়। তার অবিচল চাউনী আটকেছে জানলার পর্দায়। মিনা বেগম যত্ন নিয়ে চুল আচড়ে , হাত খোপা করে দিলেন। হাতে লেগে থাকা অবশিষ্ট তেল পিউয়ের দুগালে মাখলেন। এরপর ওর থুত্নী ধরে নিজের দিক ফিরিয়ে বললেন,
‘ এখন কত সুন্দর লাগছে দ্যাখতো। আর এতক্ষন মনে হচ্ছিল রাস্তার পাড়ের পাগল টা বসে আছে আমার বাড়িতে।’
পিউ ক্ষীন হাসল। তারপর মাথাটা এলিয়ে দিল মায়ের কোলের মধ্যে। মিনা বেগম হাত বোলাতে বোলাতে বললেন
‘ দুপুরে কী খাবি? বিরিয়ানি রাধব একটু?’
‘ উহু। ‘
‘ তাহলে? ‘
পিউ নিস্পৃহ কণ্ঠে জানাল ‘ কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না।’
‘ ওমা কেন? ‘
সেই সময় রুবায়দা বেগম চঞ্চল পায়ে ঘরে ঢুকলেন। উদ্বেগ নিয়ে বললেন,
‘ আপা তুমি এখানে? আর আমি সব জায়গায় খুঁজছি।
আওয়াজ শুনে পিউ মাথা তুলল। তবে মেঝেতেই বসে থাকল। মিনা বেগম বললেন,
‘ কেন রে? কী হলো আবার? তরকারি বসিয়ে এসেছিলাম, পু*ড়ে গেল না কি?’
‘ আরে না না। আমি জাল কমিয়ে রেখেছি। আসলে কথা ছিল একটা। সকাল থেকে বলব বলব করে হচ্ছেনা,তুমিতো জানো, আমার পেট ততক্ষণ অবধি গুড়গুড় করতে থাকবে, যতক্ষন তোমার কাছে না বলছি।’
মিনা বেগম হেসে বললেন,
‘ আয় বোস। শুনি তোর কথা।’
রুবায়দা বেগম দরজা চাপাতেই বললেন
‘ খুব গুরুত্বপূর্ণ কথা না কি রে রুবা?’
‘ হ্যাঁ অনেক! আমি তোমার দেবরের সাথে রাতেই আলাপ -আলোচনা করে রেখেছি বুঝলে?এখন তোমাকে বলব।’
মিনা বেগম একটু নড়েচড়ে বসলেন । পিউও কৌতুহলী নজরে তাকিয়ে। রুবায়দা বেগম চাপা কণ্ঠে বললেন
‘ আমি না একটা কথা ভাবছি। এখন তুমি আর ভাইজান মতামত দিলেই আগাব ভাবছি। তোমরা হ্যাঁ বললে হ্যাঁ, না বললে এখানেই শেষ। ‘
‘ আচ্ছা বাবা সে বুঝলাম। কিন্তু কথাটা কী?’
রুবায়দা বেগম বললেন,
‘ কথাটা তোমার ছেলে কে নিয়ে!’
পিউ আগ্রহভরে তাকাল। মিনা বেগম শুধালেন
‘ধূসর কী করল?’
রুবায়দা বলার পূর্বে পিউয়ের দিক নেত্রপাত করলেন। সচেতন কণ্ঠে বললেন,
‘ পিউ মা, তুই কাউকে বলবিনা তো ?’
পিউ জানাল ‘ না মেজো মা।’
মিনা বেগম অধৈর্য কণ্ঠে বললেন ‘ ধূসর কী করেছে বল! ‘
‘ আরে, না, কিছু করেনি। তবে দেখছো তো কেমন ভবঘুরে! বাড়িতে থাকেনা,রাত করে ফেরে,নিজের দিকে খেয়াল নেই,কারো কথা শোনেনা। চিন্তা হয়না বলো? ‘
‘ হ্যাঁ সেত হবেই। আবার রাজনীতি করছে, কতদিক সামলাতে হয়!’
‘ হ্যাঁ। এইজন্যে চাইছি, ওর বিয়ে দেব। একটা লাল টুকটুকে বউ আনব বাড়িতে। বউয়ের টানে হলেও তো বাড়িমুখো হবে তাইনা?’
মিনা বেগম প্রজ্জ্বলিত হাসলেন। উৎফুল্ল কণ্ঠে বললেন,
‘ হ্যাঁ, হবেইত। আমিও কদিন ধরে ভাবছিলাম, তোকে বলব,যে ধূসরের জন্যে মেয়ে দেখি চল। কিন্তু মনেই থাকেনা। আচ্ছা এখন যখন তুইও চাইছিস, দুবোন মিলে মেয়ে দেখা শুরু করি?’
পিউয়ের শ্বাসরু*দ্ধ হয়ে আসছে। বারবার ঢোক গিলছে।
রুবায়দা বেগম মিনমিন করে বললেন’
‘ আসলে, আপা হয়েছে কী,আমার না ধূসরের জন্যে একটা মেয়েকে ভালো লেগেছে। তবে তোমার পছন্দ নাহলে ক্যান্সেল।’
মিনা কপাল কোঁচকালেন,
‘ পছন্দ করেছিস? কাকে?’
রুবায়দা বেগম ওমনি হাসি হাসি মুখ করে বললেন
‘ মারিয়াকে। ‘
পিউয়ের হৃদপিণ্ড থমকে গেল ওখানেই। গোটা আকাশটা টুক*রো টুক*রো হয়ে ভে*ঙে পরল মাথায়। পায়ের নীচের জমিন কম্প*মান। ঘোলা নেত্রযূগল বিস্ময়াকূল হয়ে চেয়ে রইল তাদের দিকে।
মিনা বেগম অবাক হয়ে বললেন,
‘ মারিয়া? হঠাৎ ওকে পছন্দ করলি যে?’
‘ আগেই পছন্দ হয়েছিল। কিন্তু বলিনি। তারপর আবার ধূসরের মুখে ওসব শুনে এত মায়া হলো! মেয়েটার কত ক*ষ্ট! আমাদের বাড়ি এলে সুখেই থাকবে। ‘
‘ সে থাকবে। কিন্তু ধূসর…?
‘ ওতো রাজি হবেই। দ্যাখো আপা, ছেলে যতই বলুক,আমার মনে হচ্ছে মারিয়ার প্রতি ওর কিছু একটা আছে। নাহলে রাজনীতিতে কত মানুষ আহ*ত হয়, মা*রা যায়, সবার পরিবার রেখে মারিয়াদের পরিবারেরই খেয়াল কেন রাখবে? কেন ওকেই আনবে পিউয়ের টিচার হিসেবে? বলো? আর বিয়ে বাড়িও দেখলাম, অনেকবার লক্ষ্য করেছি আমি, ওদের মধ্যে মিল খুব। হতেই পারে ভেতর ভেতর একজন আরেকজন কে পছন্দ করে। কিন্তু বলছেনা।’
মিনা বেগম বিজ্ঞের মত মাথা দুলিয়ে বললেন,
‘ হ্যা। কথাখানা ঠিক। হতেই পারে। ‘
‘ তাহলে তুমি ভাইজানের সাথে কথা বলবে?”
‘ আচ্ছা বললাম না হয়। মেয়েতো সুন্দর, ভদ্র, সুশীল, ভালোই হবে। পরিবারও ভালো। বাবার সরকারি চাকরী ছিল, খা*রাপ তো নয়।’
রুবায়দা খুশি হয়ে আওড়ালেন,
‘ ঠিক আছে। ‘
আচমকা খেয়াল পরল পিউ কেমন অদ্ভূত চোখে তাকিয়ে। পলক পরছেনা,অক্ষিকূট নড়ছেনা। যেন মূর্তি বসে একটা। তিনি ভ্রুঁ গুটিয়ে বললেন ‘ এভাবে কী দেখছিস?’
পিউয়ের হুশ এলো। চোখ নামিয়ে দুদিকে মাথা নাড়ল। বোঝাল’ কিছু না’।
রুবায়দা বেগম সুদীর্ঘ হেসে বললেন,
‘ মারিয়াকে ভাবি হিসেবে পছন্দ হয় পিউ? তোর ধূসর ভাইয়ের সাথে মানাবেনা?’
পিউ চোখ খিঁচে বুজে ফেলল। বুকের মধ্যে তলোয়ার দিয়ে হৃদয়টা কে*টে আনলেও এতটা ব্য*থা লাগতোনা, এতটা য*ন্ত্রনা হতোনা, যতটা অনুভূত হলো এই এক প্রশ্নে!
মারবেল মেঝেতে চোখ রেখেই সে আবার মাথা দোলাল। বক্ষে বয়ে যাওয়া ঝড়-তু*ফান এড়িয়ে আওড়াল,
‘ খুব ভালো মানাবে!’
চলবে,
#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(২৯)
পুষ্প সুধীর ভঙিতে সিড়ি বেয়ে ছাদে এলো। দরজা আস্তে করে খুলতেই দমকা হাওয়া ঝাপটে এসে ছুঁয়ে গেল। কনকনে ঠান্ডায় হিম হলো শরীর। গায়ের চাদর আরেকটু ভালো করে টেনে জড়িয়ে নিল সাথে। অন্ধকারের মধ্যে আস্তে করে ডাকল,
‘ ইকবাল! ইকবাল!’
আরো একটা ডাকের পর দৃশ্যমান হয় সে। তিঁমিরের মধ্যে তার সাদা দাঁতের হাসি পুষ্পকে নিশ্চিন্ত করে । তবে পড়নের ঢিলেঢালা পাঞ্জাবিটা দেখে বলল,
‘ একি! গরম কাপড় পরোনি যে? শীত করছে না?’
ইকবাল বলল ‘ করছে। এই যে দ্যাখো গায়ের সব লোম দাঁড়িয়ে গেছে। ‘
বলতে বলতে হাত মেলে ধরল সে। পুষ্পর চোখ,মনোযোগ সেদিকে সরতেও পারল না,চট করে ওকে ঘুরিয়ে কাছে টেনে নিল । মেয়েটা চোখ বড় বড় করে তাকায়। শরীর শিহরিত হয় ইকবালের বুকের সঙ্গে মিশে। ইকবাল আরো লেগে এলো পিঠের কাছে। দুহাতে শক্ত করে আগলে ধরল তাকে। থুত্নী ঠেকাল কাঁধে। সরল স্বীকারোক্তি জানাল,
‘ এবার লাগছেনা।’
পুষ্প লজ্জায় নুইয়ে গেল। পুরো শরীর তার কাঁ*পছে। মিহি কণ্ঠে বলল ‘ আমি কিন্তু এইজন্যে ডাকিনি। এটা কথা ছিল না।’
‘ উম জানি। সব হবে, আগে মন ভরে তোমাকে একটু কাছে রাখি। চারটে দিন দেখা হয়নি,ছুঁতে পারিনি মাইলাভ,বোঝো তার ব্যথা?’
পুষ্প দুষ্টুমি করে বলল,
‘ এমন ভাব করছো যেন তোমার বিয়ে করা বউ!’
ইকবাল ভ্রুঁ কোঁচকায়
‘ হতে কতক্ষণ? ভালো যখন বেসেছি, বিয়ে তো তোমাকেই করব মাই লাভ। পালাবে কোথায়?’
পুষ্প মুচকি হাসল। পরমুহূর্তে চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
‘ পিউয়ের যে কী হয়েছে! জন্ম থেকে ওকে এতটা উদাসীন আমি দেখিনি। ‘
এই একটা কথায় ইকবালের হস্ত শিথিল হলো। পুষ্প সরে এলো কাছ থেকে। সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ চলো বসি।’
এই বাড়ির ছাদ বড় যত্ন নিয়ে গড়েছেন আমজাদ। লোহার চেয়ার টেবিল গোল করে বসিয়েছেন এক কোনায়। অবসরে চার ভাই মিলে গল্প করবেন বলে গেথেছেন ঠিক চারটে কেদারাই। ঈদ, কোরবানি এইরকমই কাটায়। আর গরমে ছুটির দিনের বিকেলটাও কাটে এখানে। ইকবাল, পুষ্প বসল সেখানে। শিশিরে লোহার চেয়ার বরফ স্বরুপ ঠান্ডা। ইকবাল টেবিলের ওপর দুহাত মুঠো করে রাখল, বলল
‘ বলো,জরুরি তলব কেন?’
পুষ্প বলল ‘ বলব, বলতেই তো ডাকা। তার আগে তুমি বলো,ভাইয়ার মতিগতি কেমন বুঝছো?’
‘ ওর আচরন কনফিউজিং। পিউয়ের এতটা অবজ্ঞা কখনও পায়নি তো,মানতেই পারছে না। চরম রে*গে গেছে। পারলে বাম হাতটা খেয়াল কোরো,আঙুল দেখলেই বুঝবে। কিন্তু আমার কথা হলো,এই ঘটনার সূত্রপাত কোথা থেকে?’
পুষ্প নিমিষেই কেমন অধৈর্য হয়ে বলল,
‘ জানিনা আমি। আমার ওইটুকু বোন আর কত সহ্য করবে বলতে পারো? শুধুমাত্র ধূসর ভাইয়া….’
পথিমধ্যে আটকে দিল ইকবাল। হাতের ওপর হাত রেখে বলল,
‘ জানি। তোমার দিকটা আমার সব জানা পুষ্প। কিন্তু একটা কথা কি অস্বীকার করতে পারবে, পিউয়ের জন্যে ধূসরের মত বেস্ট কেউ হয়?’
পুষ্প ব্যর্থ, ছোট শ্বাস ফেলে বলল ‘ বেস্ট বলেই এতদিন সাপোর্ট করেছি ইকবাল। কিন্তু আমি যদি দেখি ভাইয়ার কারণে আমার বোন ক*ষ্ট পাচ্ছে আমি চুপ থাকতে পারব না।’
‘ এটাও জানি। কিন্তু আমাদের বলা, কওয়ায় তোমার ভাইয়ের আসবে যাবে না। ও কারো ধার ধারে বলে মনে হয়? এতদিনে এই চিনলে!’
পুষ্প হ*তাশ হয়ে মাথায় হাত দিলো। ভেতরে এই ফ্যাসফ্যাসে অনুভূতিটার জন্যেই রাত দুপুরে,ঝুঁকি জেনেও ইকবালকে টেনে আনলো ছাদে। ছেলেটা পাইপ বেয়ে কত বেগ পুহিয়ে এসেছে সে জানে! কিন্তু কীই বা করবে? ফোনে বলা আর সামনা সামনি আলোচনা করা কী এক? ইকবাল পুষ্পর মাথায় রাখা হাতটা সরিয়ে এনে মুঠোয় ধরে বলল,
‘ এত ভেবোনা। ধূসরের ভাব ভা*ঙছে। পিউয়ের পরীক্ষার তো আর বাকী নেই। তারপর সব ঠিক হবে। ‘
পুষ্প নীচের দিক চেয়ে মাথা নাড়ল।
‘ হলেই ভালো। ‘
‘ আমি এখন যাই?’
‘ ক*ষ্ট দিলাম তাইনা? আসলে…
ইকবাল ঠোঁটে আঙুল চে*পে ধরে বলল ‘ শশশ! ফরমালিটি অন্য কোথাও করবে মাই লাভ, ইকবালের কাছে নয়।’
‘ তুমি ব্যস্ত বলেই…’
ইকবাল এবারেও কথা টেনে নিয়ে বলল,
‘ তোমার জন্যে শত ব্যস্ততায়ও বান্দা হাজির মাই লাভ। এখন ঘরে যাও, ঠান্ডা খুব। অসুস্থ হয়ে যাবে।’
‘ না। আগে তুমি নামো তারপর যাচ্ছি।’
‘ বেশ। কাল দেখা হচ্ছে?’
‘ হ্যাঁ। ‘
প্রতিবারের মতো, ইকবাল যাওয়ার আগে দীর্ঘ চুমু বসাল তার ললাটে। পরপর সাবধানে পাইপ বেয়ে নেমে গেল।
পুষ্প স্বস্তি সমেত ছাদের দরজা আগের মত আটকে রেখে নেমে এলো নীচে। যাওয়ার আগে একবার পিউয়ের ঘরের সামনে এলো। তাদের দুজনের মুখোমুখি ঘর। না,দরজা এখনও বন্ধ। পুষ্প আহ*ত ভারি নিঃশ্বাস নেয়,ফিরে আসে কামড়ায়।
****
পিউ কলেজের কমন রুমের সিড়িতে বসে। রোজকার মত নির্লিপ্ত, নিশ্চুপ। কাল থেকে টেস্ট পরীক্ষা শুরু হবে। প্রবেশ পত্র দিচ্ছে আজ। আর এই কদিনে ধূসরের সামনেও পরেনি সে। সারাটাদিন দোর দিয়ে বসেছিল। বাড়িতে বলেছে পড়ছে। তাই কেউ বিরক্ত ও করতে যায়নি। উলটে মিনা বেগম ভারি খুশি হয়েছেন মেয়ে বইমুখো হওয়াতে। সারাদিন বকে-ঝকেও টিভির সামনে থেকে ওঠানো যায়না,সে যদি চব্বিশটা ঘন্টাই বইয়ের সাথে থাকে খুশি হবেন না? অথচ ভেতরের খবর কে রাখে!
একমাত্র পিউয়ের চার দেয়ালের ঘরটা সাক্ষী,সাক্ষী পিউয়ের ফোলা ফোলা চোখ,চোখের নিচে ছেঁয়ে যাওয়া অসিত রঙ। সাক্ষী আসবাব,তার বারান্দা,তার বিছানা, আজ চারটে দিন ধরে মেয়েটা এক মুহুর্ত থামেনি। কেঁ*দেছে,কাঁদ*তে কাঁদ*তে ঘুমিয়েছে,মাঝরাতে ঘুম ভা*ঙলে তখনও ফেলেছে চোখের জল। প্রতিটা ভোর পুষ্পর বারান্দায় এসে দেখেছে ধূসরের অফিস যাওয়া। ধূসরের জন্যে এখনও রাত জেগে বসে থাকে। শুধু আড়ালে,লুকিয়ে। মানুষটা অন্য কারো হয়ে গেলে যাক। তার ভালোবাসা তো আর বদলাবে না! পাল্টাবে না তার অনুভূতি। আমৃত্যু এই মানুষটা থাকবে তার হৃদয়ে। বুকের মাঝের কোনও এক প্রকোষ্ঠে স্বযত্নে লুকিয়ে রাখবে তার ধূসর ভাইকে ।
পিউয়ের চোখ ভরে ওঠে। ভবিষ্যতের কিছু তিঁ*তকুটে মুহুর্ত কল্পনা করে আ*তঙ্কে গুটিয়ে যায়। চোখের সামনে ধূসর ভাইয়ের সাথে মারিয়ার বিয়ে, তাদের সংসার,কী করে দেখবে সে? না না এ সম্ভব নয়, সে পারবেনা। অতটা শক্তি তার নেই। ম*রে যাবে হয়ত। এই যে এখনো মর*ছে একটু একটু করে। পিউয়ের নেত্রপল্লব বুজে এলো। মানস্পটে হানা দিল ধূসরের সেই প্রথম স্পর্শের ছবি। মানুষটা তাকে না চাইলে কেন ছুঁয়েছিল? কেন? ওই স্পর্শ টুকুই ভাবতে বাধ্য করেছিল ধূসর তাকে ভালোবাসে। ধরে নিয়েছিল,মানুষটা ওর। অথচ সব মিথ্যে!
পিউ হিসেব কষতে ক্লান্ত। বসে থেকে মাথা হেলে দিল দেয়ালে। এদিকে তাকে খুঁজে খুঁজে হয়রান তানহা। রীতিমতো ব্যাডমিন্টন মাঠ থেকে বেরিয়ে এসে ক্লাশ রুমও চেক করেছে। শেষে এলো কমন রুমের এখানে। পিউ এখানেই বসে। তানহা ভ্রুঁ গুটিয়ে গিয়ে সামনে দাঁড়ায়। পিউ তাকালোনা। তার অবিচল অক্ষিকূট, তার মলিন চেহারা তানহা মন দিয়ে দেখল। আজকেও এই মেয়ের মন খা*রাপ? সে মহাবি*রক্ত হয়, কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
‘ তা আজও মহারানীর মন খারা*পের কারণ কি ধূসর ভাই?’
আচমকা শব্দে পিউয়ের সম্বিৎ ফিরল। ধ্যান ছুটে সোজা হয়ে বসল। ধূসর ভাইকে ভালোবাসার পর তার মন কি নিয়ন্ত্রনে ছিল? আজকেও তো নেই। কিন্তু কারণ টা যে ভিন্ন। ভিন্ন কারণটা এতটাই বিশ্রী, এই খা*রাপ মনটা হয়ত আর ভালো হবে না।
পিউয়ের নিরুত্তর ভঙি তানহাকে ভাবিয়ে তোলে। কলেজে আসা থেকে দেখছে কেমন মনম*রা হয়ে আছে। তানহা দুটো সিড়ি উঠে গিয়ে ওর পাশে বসল। কাঁধে হাত রেখে নরম কণ্ঠে বলল,
‘ কিছু হয়েছে পিউ?’
পিউ মুখ তুলল। কোটর ভরা টলটলে জল তানহার মুখভঙ্গি বদলে দেয়। পিউকে ক্লাস সেভেন থেকে চেনে । হাসি খুশি,উৎফুল্ল, লাফানো মেয়ে। হেসে গায়ের ওপর গড়িয়ে পরতে দেখেছে কিন্তু আজ অবধি ওকে কাঁদ*তে দেখেনিত। পিউয়ের চোখ থেকে জলটুকু টুপ করে পরতেই তানহা আঁত*কে বলল,
‘ কাঁ*দছিস কেন? ‘
পিউ মাথা নামিয়ে নেয়। হাটু জড় করে তাতে হাত রেখে মাথা গুজে দেয়। কেঁ*পে কেঁ*পে ফুঁপিয়ে কাঁ*দে। তানহা ব্যস্ত হয়ে পরল। বিভ্রান্ত হয়ে হাত বোলাল পিঠে।
‘ এই পিউ আমাকে বল কী হয়েছে,আমি না তোর বেস্টফ্রেন্ড? ‘
পিউয়ের কা*ন্না থামেনা। শব্দ নেই,কিন্তু ভা*ঙছে শরীর। তানহা বেশ কয়েকবার একই কথা আওড়াল,সান্ত্বনা দিল। মেয়েটা শুনল শেষে। মাথা তুলল ফের। লালিত নাক ফে*টে যেন র*ক্ত আসবে এক্ষুনি। তানহা আবার জিজ্ঞেস করে,
‘ কী হয়েছে পাখি? ধূসর ভাইয়া কিছু বলেছেন?’
‘ ধূসর ‘ নামটা শুনে বুকটা ফে*টে গেল তার। ঢোক গি*লে মাথা নেড়ে ‘না ‘বোঝাল। তানহা বলল ‘ তাহলে এভাবে কাঁ*দছিস কেন?’
‘ ধূসর ভাইয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছে।’
তানহা চমকে গেল। বিস্ময়ে ঠোঁট যুগল আলাদা হয়ে বসে। পিউয়ের অনুভূতির শুরু থেকে কেউ জানলে সেটা সে-ই।
আশ্চর্য বনে বলল,
‘ কী বলছিস? কবে,কার সাথে,কে ঠিক করল?’
পিউ বোজা গলায় জবাব দেয়,
‘ মেজো মা। আমার হোম টিউটর মারিয়া আপুর সাথে।’
‘ ঐ সেই মেয়েটা?’
‘ হু।’
‘ তুই কিছু বলিস নি?’
পিউ উদাস কণ্ঠে বলল ‘ কী বলব আমি? বলার কিছু আছে?’
‘ আছে, অনেক কিছু আছে। গত তিন বছর ধরে তুই তাকে ভালোবাসলি,আর মাঝখান দিয়ে বিয়ে করবে অন্য কেউ? আচ্ছা ধূসর ভাইয়া জানেন এসব?’
‘ জানবেনা কেন?আর না জানলেও বা, উনিতো মারিয়াপুকে পছন্দ করেন। রাজিই হবেন হয়ত। আসলে কী জানিস তানি,উনি আমাকে নিয়ে মজা করলেন। সব সময় ওনার পেছন পেছন ঘুরঘুর করি বলে ভীষণ স্বস্তা ভেবে বসেছিলেন আমাকে। তাইত ওভাবে….. ‘
পিউয়ের কথা আটকে গেল কা*ন্নায়। গুনগুন শব্দ হলো এবার। তানহার মস্তিষ্ক হ্যাং হয়ে যাচ্ছে। বিচলিত হয়ে বলল,
‘ কিন্তু হঠাৎ বিয়ে ঠিক… আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছেনা। আর মারিয়া কে ওনার পছন্দ কেন হবে?’
পিউ চোখ মুছল। মিহিকণ্ঠে বর্ননা দিল সেদিনের ঘটনার। নিঁখুত মনোযোগে শুনল তানহা। আর্ত*নাদ করে বলল,
‘ ধূসর ভাইয়া এরকম করেছেন? আনবিলিভ-এবল।’
পিউ ক্ষীন হেসে বলল ‘ অবিশ্বাসের কিছু নেই। আমিই বোকা! তিনটে বছর নষ্ট করলাম যে পাখির আশায়,সেই পাখি আমার উড়েই গেল। শূন্য খাঁচা আর পুর্নতা পেল না। ‘
‘ তুই ওনাকে কিছু বলিস নি?’
‘ কী বলব আমি? যার সামনে ভালোবাসার ‘ভ ‘ উচ্চারন করতেই জ্বিভ কাঁ*পে তাকে কী বলতে পারি বল?’
তানহা উত্তেজিত হয়ে পরল। তবে প্রকাশ করল না। পিউ বিরতিহীন কাঁ*দছে।
সে একটু ভেবে বলল
‘ তুই বরং একবার ওনার সাথে কথা বলে দ্যাখ পিউ। আরেকটু খোলাসা হ,ভুল বোঝাবুঝিও তো হতে পারে।’
পিউ বিরোধিতা করে বলল ‘
লাভ নেই। যেখানে মেজো মা মারিয়াপুকে পুত্রবধূ ধরেই নিয়েছেন সেখানে আমি আর কী করব? আচ্ছা মেনে নিলাম, ভুল বুঝছি তাকে। কিন্তু যেখানে তার মা মেয়ে পছন্দ করেছেন, আম্মুও রাজি সেখানে আর সুযোগ নেই। ধূসর ভাই ওনাদের যেমন প্রিয়,ওনারাও তার প্রিয় খুব। এক কথায় উনি মেনে নেবেন। রাজী হবেন। আর তাছাড়া, সেজো মা যেভাবে আপুকে সাদিফ ভাইয়ের বউ হিসেবে কল্পনা করলেন মেজো মা তো আমাকে করেননি। ‘
‘ করেননি কারণ, তুই ধূসর ভাইয়ের অনেক ছোট। এটাও হতে পারে তাইনা?’
পিউ শুনল তবে মন মানল না। চোখ মুছে বলল,
‘ বাদ দে। ভাগ্যের ওপর ছেড়ে দিলাম। উনি আমার হলে হবেন না হলে নেই।’
‘ আর মন? মনকে বোঝাতে পারবি এই কথা?’
পিউ দমে গেলো আবার। ওষ্ঠ দুটো তিরতির করে কাঁ*পল। তানহা চিন্তিত কণ্ঠে বলল,
‘ কাল থেকে পরীক্ষা,আর তোর ওপর দিয়ে এসব যাচ্ছে। কীভাবে কী করবি?’
‘ জানিনা।’
‘ পারবিত?’
পিউ কাষ্ঠ হেসে বলল,
‘ গত কয়েক শত ঘন্টা ধরে কত কী সহ্য করতে পারলাম! আর সামান্য পরীক্ষা!’
তানহা চুপ করে যায়। পিউ অন্যমনস্ক হয়ে পরে। কানের কাছে বেজে ওঠে রুবায়দা বেগমের সেই তি*ক্ত প্রশ্ন,
‘ মারিয়াকে ভাবি হিসেবে পছন্দ হয়েছে? তোর ধূসর ভাইয়ের সাথে মানাবেনা?’
****
‘আমার আর সহ্য হচ্ছেনা ইকবাল। পিউকে কিন্তু মেরে*ই ফেলব এবার।’
ডোরা সাপের ন্যায় ফোস*ফোস করল ধূসর। ইকবাল মিটিমিটি হেসে বলল ‘ ফ্যাল। মানা করেছে কে?’
ধূর নাক ফুলিয়ে তাকাল। চেঁচিয়ে বলল,
‘ মজা করছিস আমার সাথে?’
ইকবালকে কিছু বলার সময় অবধি দিলোনা। টেবিলে রাখা গ্লাসটা আছা*ড় মারল ফ্লোরে। দরজার বাইরে থাকা সোহেল গলা নামিয়ে উঁকি দিল ভেতরে। ইকবালের সাথে চোখাচোখি হতেই সে সরে যেতে ইশারা করে। তারপর চোখ ফেরাল ধূসরের দিকে।
শান্ত ভাবে বলল,
‘ আমি বুঝলাম না তোর এত রাগের কারণ! এরকম ইগ্নোর,অবজ্ঞা তুই কি পিউকে করিস নি? তাহলে সেইম জিনিসটা নিয়ে এইভাবে রিয়্যাক্ট কেন করছিস?’
‘ তুই সব জেনেশুনেও এসব বলবি?’
ইকবাল স্পষ্ট কণ্ঠে বলল,
‘ বলব। কারণ পিউ এর এক ভাগও জানেনা। আর আমি শতভাগ নিশ্চিত ও যা করছে তার পেছনে বড় কোনও কারণ আছে। যেখানে তুই হান্ড্রেড পার্সেন্ট অপরা*ধী।’
ধূসর আকাশ থেকে পরে বলল
‘ আমি কী করে…..’
বলতে বলতে থেমে গেল সে। মনে পড়ল বিয়ে বাড়ির সেই শেষ ঘটনা। মারিয়া তাকে জড়িয়ে ধরেছিল,পিউ হাজির হলো তখন। তবে কি সত্যিই ও ভুল ভেবেছে? তাদেরকে নিয়ে কোনও উল্টাপাল্টা ধারনা পুষেছে মনে ?
তার চিন্তিত চেহারা দেখে ইকবাল সন্দিহান কণ্ঠে বলল
‘ কী, ঠিক জায়গায় ঢিল ছু*ড়েছি তাইত?’
ধূসর ভাবিত স্বরে বলল ‘ আই থিংক একটা মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে।’
‘ কী হয়েছে?’
ধূসর ওপরের ঠোঁট দিয়ে নীচের ঠোঁট চে*পে তাকাল। একে একে পুরোটা খুলে বলল। সে থামতেই ইকবাল হাত তালি দিয়ে বলল,
‘ বাহ বাহ বাহ! চমৎকার! হ্যাঁ রে ধূসর, এই তোর বুদ্ধিতে আমি পার্লামেন্ট চালাচ্ছি? ষ্যাহ! নিজের প্রতি রা*গ হচ্ছে এখন। তুইত আস্ত একটা গাধা।’
ধূসর দাঁত চেপে কটমট করে তাকাতেই বলল
‘ একদম তেঁজ দেখাবিনা আমায়। তোর ঘঁটে বুদ্ধি থাকলে আজ এতদিন পর তুই বুঝতে পারলি যে পিউ ভুল বুঝেছে? আগে মনে হলোনা?’
‘ আশ্চর্য! এই সামান্য কারণে ও আজেবাজে ভাববে কেন? ‘
ইকবাল ভ্রুঁ নাঁচায় ‘ সামান্য কারণ? একটা মেয়েকে জড়িয়ে ধরা সামান্য কারণ?’
ধূসর রে*গেমেগে পুরু কণ্ঠে বলল,
‘ আমি জড়িয়ে ধরিনি ইকবাল, মারিয়া ধরেছে। ও আমার ছোট বোনের মত তুই জানিস। পুষ্প আর ওকে আমি আলাদা চোখে দেখিনা।’
‘ সেটা আমি জানি,তুই জানিস, পিউ জানে? মনে নেই মারিয়াকে প্রথম দিন দেখে ও কী করেছিল! কীভাবে কেঁ*দেছিল? তারপর বিয়েতে দেখেও মানতে পারেনি। তুই-ইতো বলেছিলি আমায়। পুষ্পও তো জানিয়েছে। পিউয়ের মাথায় আগে থেকেই নেগেটিভ চিন্তা চলে এসেছিল তোদের দুজনকে নিয়ে। যেই দৃশ্য আমরা মনে মনে কল্পনা করি, সেটাই যদি চোখের সামনে দেখতে পাই তাহলে কেমন লাগবে? ওর জায়গায় যে কেউ থাকলে একিরকম ভাববে ধূসর৷ বয়স কত পিউয়ের? ছোট মানুষ! বাচ্চা একটা মেয়ে! ওর মনে এরকম চিন্তা আসাটাই স্বাভাবিক। এখানে দো*ষের কিছু নেই। ‘
ধূসর হতবাক হয়ে চেয়ে রইল কিছুক্ষন। দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে বলল,
‘ কিন্তু… ‘
ইকবাল এসে সামনের চেয়ারটায় বসল। ঠান্ডা গলায় বলল,
‘ আচ্ছা ওয়েট,আজ যদি পিউ একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরত, আর তুই নিজের চোখে দেখতি,মানতে পারতি তখন? সামান্য কোনও ছেলের সঙ্গে কথা বললেইত তুই….
ইকবাল বিরক্ত হয়ে থেমে গেল। বাকীটুকু না বলে ঘনঘন শ্বাস নিলো।
ধূসরের মুখশ্রী থমথমে। বিমূর্ত সে। গোটানো চোখমুখে শৈথিল্য। একটা কথাও বলল না, হুট করে উঠে বেরিয়ে গেল। ইকবাল সেদিক চেয়ে মুচকি হাসে। সে নিশ্চিত জানে ধূসরের গন্তব্যের কথা।
***
পিউ শ্রান্ত পায়ে কলেজের গেট দিয়ে বের হয়। আজকেও গাড়ি আসেনি। ইদানিং এই রাস্তায় জ্যাম পরছে খুব। ফ্লাইওভার গড়া হচ্ছে নতুন। কাজের জন্যে অর্ধেক জায়গাই আটকে দিয়েছে সরকার। এই জ্যামের কারণই সেটা। সে বিরক্ত পায়ে হাঁটতে থাকে। গাড়ি এলে তো সামনেই পরবে। তখনকার কা*ন্নাকা*টির দরুন অক্ষিকোটর গরম হয়ে আছে। পাতা ফেলতেও কষ্ট হচ্ছে যেন।
আচমকা একটা বাইক এসে পথ আগলে ব্রেক কষল। চমকে সরে গেল সে। ধূসরকে দেখতেই হোচট খেল, অবাক হলো। মানুষটা এখানে কেন?
ধূসর ক্লান্তিহীন তাকিয়ে। নরম চাউনী বিচরন করছে পিউয়ের মুখজুড়ে। আজ টানা কতগুলো দিন পর মেয়েটাকে দেখল৷ ইশ কী অবস্থা চেহারার!
পিউ ধূসরকে দেখে বিস্মিত, অথচ খুব দ্রুত সামলে ফেলল নিজেকে। চোখ ফিরিয়ে নীচের দিকে রাখল। ধূসর বলল,
‘ ওঠ। ‘
সাথে ব্যাকসাইড ইশারা করল সে। পিউ শুনতে পায় স্পষ্ট। কিন্তু পাশ কা*টিয়ে হাঁটা ধরল। ধূসর ভ্যাবাচেকা খেল তার প্রত্যাখানে। পরপর ফুটে উঠল চোয়াল। স্ট্যান্ডের ওপর বাইক দাঁড় করিয়ে নেমে এলো। দ্রুত এগিয়েই পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরে বলল,
‘ তোকে উঠতে বলেছিনা?’
পিউ তাকাল না। সামনে ফিরেই বলল ‘ হাত ছাড়ুন।’
‘ এখন তোর থেকে শিখতে হবে কী করব?’
পিউ আবেগ খাম*চে ধরে আটকায়। চোখে পানি আসবে আসবে করছে। শ*ক্ত কণ্ঠে বলল,
‘ হাত ছাড়ুন ভাইয়া। ‘
এতগুলো দিন যেই ডাকের জন্যে মেয়েটা হাজারটা ধম*ক খেত, তবু শোনেনি, প্রথম বার সেই ডাক শুনল ধূসর। থমকে গেল সে। পরমুহূর্তে রা*গ হলো। ত্যাড়া কণ্ঠে বলল,
‘ না ছাড়লে কী করবি?’
পিউ কাঠ গলায় বলল,
‘ রাস্তার মধ্যে এভাবে একটা মেয়ের হাত টানাটানি করছেন, আপনার লজ্জা না থাকলেও আমার আছে। ‘
ধূসর স্তব্ধ, দৃঢ়ীভূত। বিশ্বাসই করতে পারল না এসব পিউ বলল।
বিহ্বল কণ্ঠে আওড়াল ‘ পিউ!’
পিউয়ের হৃদযন্ত্র দুভাগ হয়ে যায় ধূসরের কণ্ঠে।
বিস্ময়ে বাধন আলগা হতেই পিউ হাতটা টেনে কাছে নিয়ে এলো। ভেজা কণ্ঠ যথাসাধ্য কঠি*ন করে বলল,
‘ পরেরবার যখন তখন আমাকে ছোঁবেন না। রুচিতে লাগে খুব।’
ধূসর পিছিয়ে গেল। স্তম্ভিত সে৷ পিউ ঠোঁট কা*মড়ে কা*ন্না আটকায়। সেই মুহুর্তে বাড়ির গাড়ি এসে থামল। ড্রাইভার জানলা থেকে মাথা বের করে ডাকল। দরজা খুলে দিল সাথে। পিউ এগিয়ে আসে। একবার তাকাল না অবধি ধূসরের দিকে। গাড়িতে উঠে বসে দরজা আটকে দেয়, কাঁচ ওঠায়। ডান হাতে তাকায় নিস্তেজ চোখে। এইত এই জায়গায় ধরেছিল ধূসর ভাই। পিউ বাম হাতটা কোমল ভাবে বোলালো সেখানে। ঠোঁটের কাছে এনে গভীর চুঁমু খেল। পরপর নিরবে কেঁ*দে ফেলল। এইভাবে যে কথাগুলো চায়নি বলতে! বাধ্য হয়েছে,মানুষটাকে দেখে ক্ষো*ভ,দুঃ*খ উগলে এসেছে। খুব ক*ষ্ট পেয়েছে তাইনা? পিউ যত্র ব্যাকুল চোখে ঘুরে তাকাল পেছনে। যতক্ষণ ধূসরকে দেখা যায়,অনিমেষ চেয়ে থাকল।
চোখের সামনে থেকে পিউয়ের গাড়িটা পুরোপুরি অদৃশ্য হয়। ধূসর অক্লিষ্ট ঢোক গি*লে পাথর বনে দাঁড়িয়ে থাকে। বুকটা জ্ব*লছে তার,জ্বল*ছে
চক্ষুদুটোও।
চলবে,
#এক_সমুদ্র_প্রেম!
লেখনীতে: নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
(বোনাস পর্ব)
ধূসর সব সময় রাত করে বাড়ি ফেরে। অফিসে যাওয়ার পর থেকে,মাঝেমধ্যে ফিরতে দেড়টাও গড়ায়। পিউয়ের সঙ্গে আরো একটি মানুষের চোখ ততক্ষণ বন্ধ হয়না,যতক্ষণ না আসছে সে। রুবায়দা বেগম, ঘরে থাকলেও সজাগ থাকেন। নিস্তব্ধ রাতে বাসার নীচে ধূসরের বাইকের শব্দ,সদর দরজার লক খোলার আওয়াজ,আর সিড়িতে তার লম্বা পদচারণ ওনাকে নিশ্চিত করে ছেলেটা ফিরেছে। রুবাইদা যখন বুঝতে পারেন ছেলের আগমন, তখন নিশ্চিন্তে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমান। অথচ আজ ঘড়ির কাটায় দুটো পার হলো,ধূসর আসার নাম নেই। রুবায়দা বেগমের চোখ লেগে আসতে আসতেও ঘুম ছুটে গেল। ছেলেটা যে বাইরে! এমন এমন কাজ করে, বিপদ সর্বদা সঙ্গে নিয়ে ঘোরে। উল্টোপাল্টা কিছু হলো না তো? ছটফটে মন নিয়ে আরো দশ মিনিট অপেক্ষা করলেন তিনি । এর বেশি সইতে পারলেন না। পাশ ফিরে ঘুমন্ত আফতাবকে দেখলেন একবার। একবার ভাবলেন ডাকবেন ওনাকে, পরমুহূর্তে থেমে গেলেন। সারাদিন খাটা-খাটুনি করে একটু ঘুমোচ্ছে,থাক বরং। তিনি নিজেই ফোন উঠিয়ে চললেন বারান্দায়। কল দিলেন ধূসরকে। লাগাতার কয়েকবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। রুবায়দা বেগম হরভড় করে বললেন,
‘ হ্যাঁ রে ধূসর তুই কোথায়? এত রাত হয়ে গেল আ….’
ওপাশ থেকে জবাব এলো,
‘ আন্টি আমি ইকবাল!’
পথিমধ্যে আটকে গেল কথা। রুবায়দা অবাক হয়ে বললেন,
‘ ইকবাল! তোমরা কি এখনও পার্লামেন্টে? ‘
‘ না আন্টি। আমি আমার বাড়িতে।’
‘ তাহলে ধূসর কোথায়?’
‘ ধূসর এখানে, আমার বাড়িতে। ওয়াশরুমে গিয়েছে। ‘
রুবায়দা বিচলিত হয়ে বললেন,
‘ ও ফিরবেনা আজ? কিছু কি হয়েছে বাবা,সত্যি করে বলোতো আমায়!’
‘ না না আন্টি,কিচ্ছু হয়নি। আসলে দু বন্ধু মিলে অনেকদিন আড্ডা দেইনা তো,তাই….’
রুবায়দা মেনে নিলেন,শান্ত হয়ে বললেন,
‘ ও। আচ্ছা ঠিক আছে, খেয়েছে ও?’
‘ জি। ও বের হলে আপনাকে কল করতে বলব।’
‘ না থাক,বিশ্রাম নিক। আমি রাখি বরং। আচ্ছা ইকবাল তুমি বাসায় আসছোনা কেন বাবা? ধূসরের সঙ্গে একদিন চলে এসো।’
‘ জি আন্টি আসব। ‘
‘ আচ্ছা ভালো থেকো,আল্লাহ হাফেজ।’
‘ জি আসসালামু আলাইকুম।
ইকবাল লাইন কে*টে ঠোঁট ফুলিয়ে স্বস্তির শ্বাস ফেলল। ধূসর আজ বাড়ি যাবেনা। গোঁ ধরল এখানেই থাকবে। সেও কিছু বলেনি। এতবার ফোন বাজল ধরলোওনা। শেষমেষ তাকেই রিসিভ করতে হয়েছে। ধূসরের ফোন মুঠোয় নিয়ে কিয়ৎক্ষন চেয়ে রইল ইকবাল। আচমকা একটা দুষ্টু বুদ্ধি উদয় হলো মাথায়। ফোনের প্যাটার্ন তার আয়ত্তে। এই সুযোগে পিউকে একটা মেসেজ পাঠাবে না কী? হ্যাঁ পাঠাক।
লিখবে
‘ আই লাভ ইউ জান। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না। বাঁচতে হলে একসঙ্গে বাঁচব,ম*রতে হলে একসঙ্গে মর*ব। আমাকে ছেড়ে যেওনা, প্লিজ জান।’
ইকবাল এক এক করে বাক্য সাজাল। এখন এটাই টাইপ করে পিউকে পাঠাবে। মেয়েটা বুঝবে ধূসর পাঠিয়েছে। তখন যত রা*গ, সব বরফের ন্যায় গলে যাবে । এই মান অভিমানের পালা দেখতে দেখতে সে ক্লান্ত। ইকবাল সতর্ক চোখে একবার বারান্দার দিক দেখে নেয়। পাছে ধূসর এসে পরে! তারপর প্যাটার্ন টেনে খোলে। হোম স্ক্রীনে, মুহুর্তমধ্যে ভেসে ওঠে পিউয়ের জ্বলজ্বলে একটি ছবি। বহু আগের ছোট্ট পিউ। পড়নে কালো গাউন। ছবিটা গত কয়েক বছরেও বদল হয়নি। ঠিক এই কারণেই ধূসর কাউকে ছুঁতে দেয়না ফোন। পিউয়ের ঠোঁট ভর্তি উচ্ছল হাসিটা ইকবালের ভেতরটা নাড়িয়ে দিল। বিবেক বলল,
” না,এটা করা ঠিক হবেনা ইকবাল। এতে পিউকে ঠকানো হবে। মেয়েটা আবার আশায় বুক বাধবে। তার চেয়ে, যার বলার সেই বলুক।’
ইকবাল আর ইনবক্স অবধি গেল না। ফোন অফ করে বিছানার ওপর ছু*ড়ে মারল। তিঁ*তিবির*ক্ত সে, গিয়ে দাঁড়াল বারান্দার দরজায়। ধূসর মেঝেতে বসে, পিঠ দেয়ালে ঠেকানো। এক পা ছড়ানো,অন্য পা ভাঁজ করা। ঠোঁটের ফাঁকে সিগারেট জ্বলছে। বড় আয়েশ করে টান দিচ্ছে সেখানে। ইকবাল ভ্রুঁ কুঁচকে দেখল কিছুক্ষণ। থমথমে গলায় বলল,
‘ আন্টি ফোন করেছিলেন।’
উত্তর নেই। ইকবাল অপেক্ষা করল ক্ষনকাল। ছেলেটা নিশ্চুপ। শেষে ছোট্ট শ্বাস ফেলে সে নিজেও দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে পরল পাশে। প্যাকেট থেকে সিগারেট তুলে ঠোঁটে ভরল। লাইটার দিয়ে আগু*ন জ্বা*লাতে জ্বা*লাতে বলল,
‘ বাড়ি যাবিনা?’
ধূসরের জবাব ‘ না।’
‘ কদিন দূরে সরে থাকবি?’
ধূসর নিশ্চুপ।
ইকবাল ধোয়া আকাশে উড়িয়ে বলল,
‘ একবার ওকে বোঝানোর চেষ্টাও করলিনা,সবটা পরিষ্কার করে বললিওনা,যে ও যা ভাবছে ভুল,ভ্রান্ত। তাহলে কী করে আশা করছিস, এতকিছুর পরেও ও তোর সাথে লুতুপুতু করবে ?’
ধূসর চোখ রা*ঙিয়ে তাকাল। ইকবাল দাঁত কেলিয়ে বলল,
‘ ভাবছিলাম, তোর ফোন থেকে পিউকে আই লাভ ইউ লিখে মেসেজ পাঠাব।’
ধূসর চকিতে তাকিয়ে বলে,
‘ পাঠিয়েছিস?’
ইকবাল মুখ গোমড়া করে বলল ‘ না।’
পরমুহূর্তে চেতে বলল,
‘ কিন্তু তুই এরকম চুপচাপ থাকলে আমি ঠিকই পাঠিয়ে দেব কিছু একটা। আই লাভ ইউ না হোক,অন্য কিছু দেব। লিখব যে আমি আরেকজনকে ভালো বাসি। তার সাথে আজ আমার বিয়ে। ‘
ধূসরের ওষ্ঠদ্বয় বে*কে এলো এক পাশে। হাসতে দেখে ইকবাল নাক ফুলিয়ে বলল,
‘ তুই হাসছিস ধূসর? এ্যাম আই জোকিং উইথ ইউ?’
ধূসর তার রা-গটুকু পাত্তাই দিলোনা। শান্ত গলায় বলল
‘ কাল পিউয়ের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। ‘
‘ সেটা আমিও জানি। হলে যাবি না একবার?’
ধূসর ভাবনায় মিলিয়ে গেল। জবাব না দেওয়ায় ক্ষে*পে গেল ইকবাল।
‘ ধ্যুস শালা! সিগারেটে আমার রা*গ পরছেনা,যাই মদ নিয়ে আসি। ‘
সে উঠতে গেলে ধূসর থামিয়ে দেয়। পুরু কণ্ঠে নিষেধ জানায়,
‘ না। ‘
ইকবাল দমে গেল। দু এক টান বসানো সিগারেট ফেলে দিয়ে বলল,
‘ শালার আমার কপালটাই খা*রাপ! এত সহজ সরল মানুষের কপালে এমন ঘাড়ত্যা*ড়া বন্ধু জোটালে কেন আল্লাহ? একটা ভালো ছেলে দিতে, মাথায় তুলে রাখতাম।’
আরো নানান কিছু বকবক করল সে। সবটাই ধূসরকে উদ্দেশ্য করে। অথচ এসবে মন নেই ছেলেটার। সে ভাবছে,ভীষণ ভাবছে দুপুরে পিউয়ের আচরণ গুলো। যতবার ভাবছে কো*পিত হচ্ছে,হচ্ছে য*ন্ত্রনা। বুকটা ভে*ঙে আসছে। ধূসর চিবুক শ*ক্ত করল। আধপো*ড়া সিগারেটের মাথাটার দিক চেয়ে থাকল কিছু সময়। আচমকা সেটাকে চে*পে ধরল হাতের তালুতে। ইকবাল চমকে গেল। বিস্মিত তার কান্ডে। উদ্বেগ নিয়ে ছাড়িয়ে নিল হাত।
‘ কী করছিস কী?’
ধূসরের জবাব এলো না। সে অনবহিত নেত্রে তাকাল দূরের দালান- কোঠার দিক। ইকবাল সিগারেট ওরটাও ফেলে দেয়। উঠে গিয়ে ফার্স্টএইড বক্স আনে। পু*ড়ে গেছে জায়গাটা। লাল হয়েছে,ফো*স্কা পরবে হয়ত। ইকবাল ক্ষততে বার্নের মলম লাগাতে লাগাতে বলল,
‘ জীবনটা ছেলেখেলা নয়। তেঁজ নিজের সঙ্গে না দেখিয়ে শান্ত হ,যার জন্যে এসব করছিস তাকে বোঝা। বাচ্চা মেয়ে পালতে গিয়ে নিজেও বাচ্চা হয়ে যাস না। লোকে নির্বোধ বলবে,বলবে বুদ্ধিহীন লোক ভবিষ্যতে নেতা হতে এসছে। হাসবে তোকে নিয়ে,সাথে আমাকেও টানবে। আঙুল দিয়ে দেখিয়ে বলবে ‘ ওই দ্যাখ একটা গাধার বন্ধু যাচ্ছে। তখন আমি মুখ লুকোতে ড্রেনে লাফ দিতে পারব না। সরি! ‘
ধূসর বিদ্বিষ্ট চোখে তাকাল। মৃদু ধমকে বলল,
‘ মুখটা বন্ধ রাখবি? যা ঘুমা গিয়ে।’
‘ আর তুই?’
‘ আমি ঠিক আছি।’
‘ আমিত বলিনি আমি ঠিক নেই! তুই এখানে বসে থাকলে আমিও থাকব। এই যে বসলাম, তুই না উঠলে নড়ছিনা।’
ধূসর হতাশ দম ফেলল। উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
‘ আয়।’
ইকবাল হেসে রওনা করল পেছনে। ধূসর রুমে ঢুকে শুয়ে পরল বিছানায়। সিলিংয়ের দিক চেয়ে আওড়াল,
‘ সাতাশ বছরের এক যুবক, বিধ্ব*স্ত, এক সতের বছরের কিশোরির প্রে…..’
বলতে বলতে থেমে গেল। ইকবাল মিটিমিটি হেসে
বলল ‘ পরেরটুকু আর উচ্চারন করিস না ভাই। তোর মত নিরামিষের মুখে মানাবেনা।’
ধূসর কটমট করে বলল ‘ চুপ কর।’
ইকবাল বলল ‘ উচিত কথার ভাত নেই!’
****
রাতে এক ফোটা ঘুমালো না পিউ। চোখের সামনে বই মেলে রাখলেও সামান্য অক্ষর পড়েনি। ধূসর ফেরেনি সে জানে। রুবায়দা বেগমের মতো ছটফট করলেও,সে ফোন করতে ব্যর্থ। ইকবালের থেকে খোঁজ নিয়েছে অবশ্য। যখন শুনল ধূসর আসবেনা বাড়িতে,মেয়েটা আবার কেঁ*দেছে। দোষা*রোপ করেছে নিজেকে। তার ওসব বলা উচিত হয়নি। ধূসর ভাই ক*ষ্ট পেয়েছেন। সে তো ওভাবে বলতেও চায়নি। জ্বিভ খ*সে বেরিয়ে এসেছে। বেহায়া তো! একা একা সমস্ত ক*ষ্ট বুকের মধ্যে পুষে রাখতে গিয়ে, হাঁপিয়ে গেছিল যে!
প্রথম পরীক্ষার দিন,অথচ পিউয়ের মধ্যে নার্ভাসনেস নেই। না আছে চি*ন্তা। কী লিখবে,কী করবে,প্রশ্ন কেমন হবে,কমন পরবে কী না, স্বল্প দুঃ*শ্চিন্তা অবধি এলো না মাথায়। তার মন যে অন্য কোথাও। যে মানুষের পায়ের নখ থেকে মাথার চুল অবধি ধ্যানমগ্ন ধূসরের নামে, তার ভেতর অন্য কিছুর প্রভাব পরতে পারে?
পিউ কোনও রকম ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পরে ওয়াশরুম থেকে বের হলো। পরীক্ষা দশটা থেকে শুরু। প্রতিটা পরীক্ষায় আগের রাতে ফাইল গুছিয়ে প্রস্তুত থাকতো সে। অথচ আজ কিচ্ছু করেনি। এতটা উদাসীন কেউ হয়না বোধ হয়!
পুষ্প নাস্তা রেখে গেছে টেবিলের ওপর। তার প্রিয় চিকেন স্যান্ডউইচ। অথচ সে ফিরেও দেখল না। খিদে নেই। স্কেল, পেন্সিল,কলম,সব একে একে ফাইলে গোছানোর সময় ঘরে ঢুকল সাদিফ। পিউ শব্দ পেয়ে তাকাল। সাদিফ বলল,
‘ বের হচ্ছিস?’
‘ হু।’
‘ প্রিপারেশন ভালো?’
পিউ মৃদূ কন্ঠে জানাল,
‘ ওই আর কী।’
সাদিফ জ্বিভে ঠোঁট ভেজাল। কয়েক দিন ধরেই পিউয়ের চুপসে যাওয়া লক্ষ্য করেছে। একই গাড়িতে এসেছে সেদিন,অথচ সারা রাস্তায় পিউয়ের কথা ফোটেনি। নাস্তার টেবিলে পায়না,ঘর থেকে বার হয়না। দুষ্টুমি করেনা, ছোটেনা বাড়িময়। পিউকে এতটা নির্জীব তার সহ্য হয়না,একটুওনা। এই চঞ্চলতার জন্যে তার প্রিয় চশমাটা ভে*ঙেছিল। কত কী বলল,ব*কল সেদিন। অথচ এখন, এখন বলতে ইচ্ছে করছে,
‘আমি ওরকম আরো কয়েকশ চশমা তোর পায়ের তলায় বিছিয়ে দেই পিউ,তুই ছোট। ভা*ঙ, ভে*ঙে টুকরো টুকরো করে ফ্যাল। তবুও এমন চুপ করে থাকিস না। ক*ষ্ট হয় আমার।
‘ কিছু বলবেন ভাইয়া?’
সাদিফের ধ্যান ছুটল। নড়েচড়ে বলল,
‘ হু? না। ভাবছিলাম তুই বের হচ্ছিস যখন তোকে এগিয়ে দেই। ‘
পিউ ছোট্ট করে বলল ‘ দরকার হবেনা। পারব যেতে।’
‘ জানি পারবি,আমি এগিয়ে দিলে সমস্যা?’
‘ না। তা কখন বললাম?’
‘ তাহলে চল।’
পিউ হার মানল। ফাইল বুকে চে*পে বের হতে নিলে সাদিফ বলল,
‘ চুল আচড়াবিনা?’
পিউ চুলে হাত বোলাল। অনিশ্চিত কণ্ঠে বলল,
‘ আচড়াইনি?’
সাদিফ মনঃস্তাপ নিয়ে তাকাল। পিউ মলিন হেসে বলল ‘ খেয়াল করিনি আসলে৷ ‘
তারপর আয়নার সামনে দাঁড়াল গিয়ে। আচড়ানো তো দূর, সেই যে মিনা বেগম চুল বেধে দিয়েছিলেন,তারপর আর হাতই দেয়নি। কোনও রকমে খোপা করে রেখেছিল ।
পিউ তাড়াহুড়ো করে ঝুঁটি বাঁধল। পুরোটা সময় চেয়ে থাকল সাদিফ। এমন অগোছালো তো পিউ নয়। বরং দিনের মধ্যে একশ বার আয়না দেখে,সাজগোজ করে।
কী হয়েছে ওর? ওকে এত অচেনা লাগছে কেন?
‘ চলুন।’
সাদিফ ফোস করে এক শ্বাস ফেলে বলল ‘ আয়।’
পুষ্প নাস্তা খেয়ে বসেছে সোফায়। ফোন নিয়ে মেসেঞ্জার অন করতে করতেই দেখল, পিউ নামছে। বোনকে দেখে ফোন রেখে দিলো। উঠে এসে,জিজ্ঞেস করল,
‘ নাস্তা খেয়েছিস পিউ?’
পিউ মাথা ঝাঁকায়,বোঝায় খেয়েছে। মেয়ের উপস্থিতি টের পেয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন মিনা। উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বললেন,
‘ হ্যাঁ রে মা, প্রস্তুতি ভালো তো?’
‘ হু।’
‘ একদম ভাববিনা কেমন! প্রশ্নপত্র পেয়ে আগে তিনবার দুরুদ পড়বি,তারপর বিসমিল্লাহ বলে শুরু করবি লেখা। ‘
‘ হু।’
‘ সব নম্বর একটু একটু টাচ করবি,কিচ্ছু যেন বাদ না পরে। ঠান্ডা মাথায় লিখবি, তাড়াহুড়ার দরকার নেই। আর প্রথম পৃষ্ঠায় কা*টাকা*টি করবিনা একদম। ‘
পিউ মাথা কাত করল। বলল ‘ হু।’
মিনা বেগম অসহায় নেত্রে পুষ্পর দিক চাইলেন। প্রতিটা পরীক্ষায় তিনি এসব বলেন,মেয়েটা রে*গে যায়,ঘ্যানঘ্যান করে আর বলে,
‘ আম্মু আমি এসব জানি। মুখস্থ হয়ে গেছে শুনতে শুনতে, আর বলতে হবেনা। ‘
অথচ আজ হু হা ছাড়া জবাব নেই ! পরিবারের সবাই টুকিটাকি পরামর্শ দিল পিউকে। তার হাস্যহীন মুখ দেখে বলল ঘাবড়ে না যেতে। ভালো হবে সব।
পিউ সবেতে শুধু মাথাই নেড়েছে। রুবায়দা বেগম নীচে নেমে এলেন তখন। হাতে মুঠোফোন। পিউকে দেখে বললেন,
‘ পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিস?’
‘ হু।’
তিনি হেসে এগিয়ে এলেন। মাথায়, পিঠে হাত বুলিয়ে বললেন,
‘ যা, খুব ভালো হবে। দোয়া করি।’
পিউ ম্লান মুখে হাসল। নিশ্চল চোখে চেয়ে দেখল রুবায়দাকে। মনে মনে অভিমানী কণ্ঠে বলল,
‘ ধূসর ভাইয়ের বউ হিসেবে আমায় ভাবলে না কেন মেজো মা? ভাবলে কি খুব ক্ষ*তি হতো?আমি সেরা বউমা হয়ে দেখাতাম তোমায়।’
‘ যা তাহলে, দেরী হয়ে যাবে আবার। ‘
পিউ নিজেকে সামলে হাঁটতে গেল,রুবায়দা বেগম পেছনে পুষ্পকে বললেন,
‘ ও পুষ্প, তোর কাছে মারিয়ার ফোন নম্বর আছে?’
যত্র থেমে গেল সে। পুষ্প বলল,
‘ আছে। হঠাৎ ওর নম্বর দিয়ে কী করবে? ‘
‘ একটা ফোন করতাম,কবে ঢাকা ফিরেছে শুনতাম আর কী।’
‘ হ্যাঁ দিচ্ছি।’
পিউ বেদনার্ত ঢোক গে*লে। খ*ণ্ডবিখ*ণ্ড হয় বক্ষস্থল। রুবায়দা বেগমের মারিয়ার প্রতি গদগদ ভাব শ্বাস প্রশ্বাস ভারি করল ফের। মেনে নিতে পারল না। পারার কথাও তো নয়! মেজো মা কেন মারিয়ার নম্বর খুঁজছে তার আন্দাজ করতে খুব একটা অসুবিধে হয় না। নিশ্চয়ই অতি শীঘ্রই ওনাদের বাড়িতে প্রস্তাব পাঠাবেন বিয়ের। আর তারপর! তারপর ধুমধাম করে ধূসর ভাইয়ের বউ বানিয়ে তুলে আনবেন ঘরে। পিউ এর বেশি ভাবতে পারেনা। এক পৃথিবী যন্ত্র*না গলা চে*পে ধরল। সাদিফ বলল,
‘ কী হলো,চল।’
পিউ খুব ক*ষ্টে পা বাড়ায়। বিব*শ হয়ে আসছে চোখদুটো। একটু বিছানায় শুয়ে কাঁ*দতে পারলে ভালো হতো!
****
সাদিফ তাকে নামিয়ে দিলো গেটের বাইরে। হাসিমুখে “অল দ্যা বেস্ট” জানাল। পিউ কান দিয়ে শুনল তবে খেয়াল করেনি,উত্তর ও দেয়নি। আস্তেধীরে হেঁটে ঢুকে গেল ভেতরে। অন্যমনস্কতায় বাইরে টাঙানো সিট প্ল্যান অবধি দেখেনি। কোন দিকে হাঁটা দিয়েছে নিজেও জানেনা। দুপা এগোতেই একজন পেছন থেকে ডাকল,
‘ ভাবি।’
পিউ ফিরল না। ডাকটা অাবার এলো। আগের মত বলল,
‘ পিউ ভাবি শুনছেন?’
এবারে থামল মেয়েটা। ঘুরে তাকাল। এতদিন বাদে, একটা স্বল্প পরিচিত চেহারা দেখে কপাল কোঁচকাল। সেই ছেলেটি না? কদিন আগে খাবার দিয়ে গিয়েছিল যে ? হ্যাঁ, সেইতো। পল্লব এগিয়ে আসে। হেসে শুধায়,
‘ কেমন আছেন?’
অন্য সময় জবাব তৎপর দিলেও আজকের এই জবাব, পিউয়ের দূর্বোধ্য ঠেকল । সে কি ভালো আছে? এক বিন্দুও ভালো নেই।
অথচ বলল ‘ ভালো। আপনি? ‘
‘ এইত এলাম। আপনি সিট প্ল্যান দেখলেন না,বসবেন কোথায়?’
পিউয়ের হুশ এলো। গোটানো ভ্রুঁ মিলিয়ে গেল। সতর্ক কণ্ঠে বলল ‘ ও হ্যাঁ, ভুলেই গেছি।’
দেখার জন্যে এগোতেই মৃনাল বলল ‘ দেখতে হবেনা। আমি দেখেছি, দোতলায় ক্লাস,জানলার পাশের ছয় নম্বর বেঞ্চে। ‘
পিউ অবাক হয়ে তাকাল। মৃনাল নম্র কণ্ঠে বলল,
‘আপনার যাতে ক*ষ্ট করতে না হয় তাই আর কী!’
‘ কে বলেছে আপনাকে এসব করতে?’
‘ ভাই বলেছে। ‘
পিউ আশাহত শ্বাস টানে। জানে,অজ্ঞাত ভাইয়ের পরিচয় জিজ্ঞেস করলেও ছেলেটা বলবেনা। তার যে মুখ খোলা বারণ। ওদিকে পরীক্ষার দেরী হচ্ছে। মনটাও বিষাদে ভরা। সে ছোট করে বলল,
‘ ধন্যবাদ ভাইয়া,আসি।’
ঘুরে হাঁটতে গেলেই মৃনাল উচু কণ্ঠে বলল,
‘ কোনও সমস্যা হলে জানাবেন ভাবি। আপনার পরীক্ষা শেষ না হওয়া অবধি ভাই আমাকে নড়তেও বারণ করেছেন।’
পিউ মহাবির*ক্ত হলো। তবে হ্যাঁ -না কিচ্ছু বলল না। কোন চূলোর ভাই,আবার তার চামচা! সে ম*রছে নিজের জ্বা*লায়!
****
তানহা আর পিউয়ের রোল নম্বর আগে পরে। তাই বেঞ্চও সামনে পেছনে পরে। পিউ এসে বসতেই সে বই বন্ধ করে ঘুরে তাকাল। একটু হেসে বলল,
‘ কেমন আছিস?’
পিউ ক্লান্ত চোখে তাকাতেই মুখ কালো করে বলল,
‘ সরি! পড়েছিস সব?’
পিউ দুদিকে মাথা নাড়ে। বলে,
‘ যা আগে পড়েছিলাম সেই ভরসায় এসছি। জানিনা কী করব!’
‘ কিছু না পারলে আমিত আছি। ভাবিস না।’
পিউ নিরুত্তর । তানহা ভাবল একবার কালকের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করবে। ধূসরের সাথে কথা -টথা হয়েছে কী না। পরক্ষনে থেমে গেল৷ ঠিক করল একবারে পরীক্ষা শেষেই শুনবে না হয়। তক্ষুনি দুজন ইনভিজিলেটর কক্ষে ঢুকলেন। শিক্ষার্থীরা তটস্থ হয়ে বসল। একজন বই -পত্র জমা করতে বললেন টেবিলের ওপর। সবাই একে একে উঠে বইখাতা নোট, রেখে এলো। পিউয়ের যেতে হয়নি। বই-তো আনেনি সাথে । তারপর ঘন্টা বাজল। আস্তেধীরে পরীক্ষা শুরু হলো।
হলে পড়ল কড়া গার্ড । ঘাড় অবধি ঘোরানো গেল না। পিউ প্রথম দিকে ভালোই লিখছিল, হঠাৎ মাথা এলোমেলো হয়ে পরে। গত সাতটা দিনের কথা একে একে ভেসে ওঠে চোখে। মন নেতিয়ে গেল,হৃদয়ে বইল সুনামি। ধূসর ভাই! মারিয়া! তার ধূসরকে আগলে,পেঁচিয়ে ধরা সেই দৃশ্য। রুবায়দা বেগমের প্রতিটি কথা, তীক্ষ্ণ ভাবে কানে বাজে,চোখে লাগে। পিউয়ের হাত থমকায়। অধর কেঁ*পে ওঠে। মাথা চক্কর দেয়। কা*ন্না পায়। যা পড়েছিল,যা পারত তাও ভুলে বসে। প্রথম দুটো পৃষ্ঠা ভর্তি করে লিখলেও আর পারছেনা। চলছেনা হাত। বাকী সব পাতা সাদা পরে থাকে। ঝিমিয়ে যায় মস্তিষ্ক, থিতিয়ে আসে স্মৃতিশক্তি। কারো থেকে সাহায্য নেওয়ারও উপায় নেই।
পিউ অসহায় হয়ে বসে থাকে। দুহাতে মাথা চে*পে ধরে। চেষ্টা করে,খুব চেষ্টা। স্নায়ুর প্রতিটি কোষ যেন বিশ্রামে। সাড়া দেয়না তারা।
‘ ধূসর ভাই আমায় ভালোবাসেন না,তিনি মারিয়ার,আমার নয়। এমন শতশত স্লোগানে ভরিয়ে ফেলে উলটে । সবটা গরমিল হয়ে যায়। আশাহত হয়ে ভ*গ্নহৃদয়ে বসে থাকে সে । দুটো ঘন্টা পার হয়,অথচ পিউ লিখেছে কেবল দুই পাতায়।
পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগেই সে উঠে খাতা জমা করে দিলো। তানহা লেখা থামিয়ে তাকিয়ে থাকল। স্যার প্রশ্ন করলেন ‘ লেখা শেষ? ‘
তার ছোট জবাব ‘ অসুস্থ লাগছে।’
তারপর বেরিয়ে গেল। বলতে গেলে সাদা খাতা জমা করেছে । ফেল আসবে নিশ্চিত । আর এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ না হলে ফাইনালেও বসতে পারবেনা। পিউয়ের বুক তোলপাড় করে কা*ন্না পায়। কোথাও আর দাঁড়াল না। মুখ চে*পে ধরে কাঁদ*তে কাঁ*দতে গেট থেকে বার হলো।
সূর্যের কড়া আলো মাথার ওপর নিয়ে পিউ হাঁটতে থাকে। চোখ ফে*টে উপচে আসে বিশ্রামহীন জল। আগেভাগে বেরিয়ে আসায় বাড়ির গাড়ি পৌঁছায়নি। সে ঠোঁট ভে*ঙে নিশব্দে কাঁ*দছে। আশেপাশের অনেকেই কৌতুহল নিয়ে চেয়ে চেয়ে দ্যাখে। কোথায় যাচ্ছে, কোনদিকে যাচ্ছে, কিচ্ছু জানেনা পিউ। আগের য*ন্ত্রনা গুলোই কি যথেষ্ট ছিলোনা? আজ যে সাথে যোগ হয়েছে আরো। এখন পরীক্ষায় খা*রাপ করলে বাড়িতে কি জবাব দেবে?
পিউ দিক বিদিক খুইয়ে ফেলল। উল্টোদিক থেকে ধেঁয়ে আসা গাড়িগুলোকে হঠাৎ মনোযোগ দিয়ে দেখল। জীবনের এই অল্পদিনের নিপীড়ন মনে করে, তৎক্ষনাৎ ক*ঠিন এক সিদ্ধান্ত নিলো। বেচে থাকলে ধূসর ভাইয়ের সংসার দেখতে হবে। মুখোমুখি হতে হবে আরো অনেক কুৎ*সিত পরিস্থিতির। সে পারবেনা। সে যে শক্তিহীন, দূর্বল। তার চেয়ে আজ ম*রে যাবে। চাকায় পি*ষ্ট হয়ে রাস্তায় পরে থাকবে। তার ছোট্ট মস্তিষ্ক সেই ক্ষনে ভরে গেল উদ্ভট চিন্তায়। পিউ চোখ মুছল। ফাইলটা পরল পায়ের কাছে। মুখ শক্ত করে ফুটপাত থেকে ব্যস্ত রাস্তায় নামল। একেকটা গাড়ি প্রবল বেগে যাচ্ছে। পাশ কা*টালেও উড়ে উঠছে চুল,স্কার্ফ।
ক্ষানিকপর অপর দিক থেকে ছুটে আসে বাস। কী মারাত্মক গতি তার! পিউ দাঁড়িয়ে থাকল। চোখ বুজে, দাঁত খি*চে। বাস কাছাকাছি আসা মাত্র লাফ দেবে সামনে। ড্রাইভার ব্রেক কষার সময় পাবেন না,ওপর দিয়ে চলে যাবে তার। বাচার ও সম্ভাবনা থাকবে না তাহলে।
বাস কাছাকাছি এলো,পিউ উদ্ভ্রান্তের মতো ঝাঁপও দিলো। কিন্তু পরার আগেই পেছন থেকে হাতটা টেনে ধরল একজন।
চমকে তাকাল সে। মারিয়া আঁতকে বলল,
‘ কী করতে যাচ্ছিলে পিউ?’
পিউয়ের অচল মস্তিষ্ক সময় নেয় বুঝতে। যখন সম্বিৎ ফিরল,মারিয়াকে দেখতেই দাউদাউ করে জ্ব*লে উঠল। মনে হল,এই মেয়ের জন্যেই ধূসর ভাই তার হয়নি। মারিয়া বড় বড় চোখে তাকিয়ে। উতলা হয়ে তাকে টেনে আনল কাছে। উৎকন্ঠিত হয়ে বলল,
‘ এই পিউ,তোমার কি হয়েছে? আরেকটু হলেইত…
‘ ম*রে যেতাম। মুক্তি দিতাম তোমাদের, তাইত?’
মারিয়া বুঝতে না পেরে বলল ‘ কী বলছো? কীসের মুক্তি?’
পিউ হাতটা ঝাড়া মারল ওমনি। ক্ষু*ব্ধ কণ্ঠে বলল,
‘ নাটক কোরো না মারিয়াপু। তোমার জন্যে আজ আমার এই অবস্থা! কেন এরকম করলে আমার সাথে? এর থেকে গলা টি*পে মে*রে ফেলতে,তাও ভালো হতো। ‘
শেষ দিকে কন্ঠে ভে*ঙে এল তার। মারিয়া হতবাক হয়ে বলল,
‘ মানে! আমি কী করেছি পিউ? জেনে-বুঝে তোমার কোনও ক্ষ*তি আমি করতে পারি?’
‘ পারো। অবশ্যই পারো। পারো বলেইত ওসব করলে। আমার জীবন থেকে আমার খুশিটুকু ছি*নিয়ে নিলে তুমি।
মারিয়া কিছু বলতে ধরে,পিউ আগেই হাত জোড় করে বলল,
‘ দয়া করো মারিয়াপু! তুমি বা ধূসর ভাই কেউই আমার ধারেকাছে এসোনা। একটু রেহাই দাও, শান্তি দাও আমায়।’
ধূলোর ওপর পরে থাকা ফাইল তুলে,কদম ফেলল সে। মারিয়া মূর্তি বনে থাকল। মেয়েটা কী বলল,কেন বলল, আদোতেই কিচ্ছু বোঝেনি।
***
পিউ শ্রান্ত ভীষণ। শরীর চলছেনা। বাড়িতেই ঢুকে কাউকে চোখে পরেনি। রান্নাঘর থেকে টুকটাক শব্দ আসছে। এছাড়া সব নিরিবিলি। ভালোই হলো! এত আগে চলে আসায় কত রকম জবাব দিহি করতে হতো নাহলে! বেচে গেল তার থেকে।
পিউ সোজা রওনা করল কামড়ায়। কা*ন্না পাচ্ছা খুব। হাঁস*ফাঁস করে কেঁ*দেও ফেলল। টেবিল থেকে খাতা কলম নিয়ে বসল বিছানায়। আধশোয়া হয়ে এক হাতের ওপর খাতা রেখে লিখতে শুরু করল,
‘ ধূসর ভাই! আপনি এই পৃথিবীর সবচেয়ে নি*ষ্ঠুর ব্যক্তি। আমি কেন আপনার প্রেমেই পড়তে গেলাম বলুনতো! মাদকেও মানুষ এতটা আসক্ত হয়নি, যতটা আপনার প্রতি হয়েছি আমি। ফেলে আসা তিনটে বছর সাক্ষী,প্রতিটা মুহুর্তে বড় যত্নে বুকের মধ্যে আপনাকে পুষেছি। নিজে বড় হওয়ার সাথে বৃহৎ করেছি আপনার প্রতি আমার অনুভূতিদের। আর সেই আপনি আমায় পায়ে ঠেলে মারিয়াপুকে বিয়ে করবেন। ওনার সাথে ঘর বাঁধবেন। মেজো মাও তো আমাকে ভালোবাসল না। সারাক্ষণ মা মা বলে, আম্মুর ব*কার থেকে আমাকে বাচায়,অথচ আপনার মত একটা মূল্যবান জিনিসের পাশে আমাকে ভাবলেন না উনি। ভাবলেন মারিয়াপুকে। কেন? আমি কি খুব খা*রাপ বউ হতাম? না। আপনাদের কাছে উজাড় করে দিতাম নিজেকে। তাহলে কেন উনি আপনার সাথে মারিয়াপুর বিয়ে ঠিক করলেন ধূসর ভাই? সত্যিই কি আপনিও ওনাকে পছন্দ করেন? আমাকে নয়! মেজো মা জিজ্ঞেস করেছিলেন আমাকে ‘ আপনার পাশে মারিয়াকে মানাবে কী না!
আমি চিৎকার করে বলতে চেয়েছিলাম ‘না, মানাবে না। আমার ধূসর ভাইকে আমার পাশে ছাড়া কারোর পাশে মানাবেনা। কিন্তু পারিনি। আমার এই না পারার পেছনে আপনি দ্বায়ী। কেন আমায় ভালোবাসলেন না ধূসর ভাই? আমাকে কি ভালোবাসা যায়না?
পিউয়ের আঙুল গুলো কাঁ*পছে। আর লিখতে পারল না। বুক চি*ড়ে যাচ্ছে। সকাল থেকে না খেয়েদেয়ে সে অসুস্থপ্রায়। তার ওপর গোটা রাত নির্ঘুম। বিছানার স্পর্শে সমস্ত অবিসন্নতা যেন জেঁকে বসে। চোখ ছাপিয়ে নেমে অাসে ঘুম। খাতাটা বুকে চে*পে ওভাবেই ঘুমিয়ে পরল সে।
**
পুষ্প ভার্সিটি শেষে কেবল ফিরেছে। ঘড়িতে তখন আড়াইটা। পিউয়ের পরীক্ষা ছিল একটা অবধি। এতক্ষণে ফিরেছে নিশ্চয়ই! সে ফ্রেশ হলোনা। রুমে ব্যাগ রেখেই চলল বোনের ঘরে দিক। ইদানীং ওর চিন্তায় নিজেরও ঘুম হচ্ছেনা। দরজা চাপানো। পুষ্প হাত দিয়ে ঠেলে ভেতরে তাকাল। পিউ আধশোয়া হয়ে ঘুমোচ্ছে। মাথায় বালিশটাও নেই। পুষ্প আস্তে আস্তে ঢুকল কামড়ায়। ইউনিফর্মও পাল্টায়নি মেয়েটা। পুষ্প মৃদূ হেসে দুপাশে মাথা নাড়ে। বোনের মাথায় হাত বোলায়। কপালে চুমু দেয় আলগোছে। তার ভাইয়ের অভাব নেই, কিন্তু বোন এই একটাই। বক*লেও,খেইখেই করলেও পিউটা যে তার কলিজার টুক*রো।
পুষ্প একটা বালিশ নিয়ে পিউয়ের মাথায় গুঁজে দিতে গেল। ওর বুকের সাথে চেঁপে রাখা খাতার ওপর নজর পরল তখন। পুনরায় হাসল সে। ভাবল, পড়তে পড়তেই ঘুমিয়েছে। পিউয়ের হাত ছুটিয়ে খাতাটা সরাল৷ সে। টেবিলে রাখতে গিয়ে লেখাগুলোতে চোখ আটকাল। শুরুর সম্বোধন দেখতেই সদাজাগ্রত হয়ে তাকাল পুষ্প। শশব্যস্ত হয়ে পড়া শুরু করল। পড়তে পড়তে মাঝপথে এসে মাথা চক্কর কা*টল। হতচেতন হয়ে, বড় বড় চোখে পিউকে দেখল একবার। পুরোটা এক নিঃশ্বাসে পড়ল। ওষ্ঠযূগল নিজ শক্তিতে আলগা হয়ে বসে। সে খাতাটাকে ফেলে রেখেই হুড়মুড়িয়ে ছুট্টে বেরিয়ে গেল। পিউকে ঠিকঠাক করে শুইয়ে দেয়ার কথাটাও ভুলে বসল নিমিষে।
****
বিছানার বোর্ড থেকে মাথাটা হেলে পরতেই পিউয়ের ঘুম ছুটে গেল। উঠে বসল তৎক্ষনাৎ। ইউনিফর্ম এখনও পরে? নিজেই নিজের ওপর বির*ক্ত হলো। চোখ ডলে নেমে দাঁড়াল বিছানা থেকে। খাতাটা পরে আছে মেঝেতে। ভাবল, ঘুমের মধ্যে নড়াচড়ায় পরেছে। হাতে তুলে লেখা গুলোর দিক তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। পরপর পৃষ্ঠাটা ছি*ড়ে কু*চিকু*চি করে ফেলে দিল ঝুড়িতে। লোকে ডায়েরী লিখে ভরে ফেলে,আর সে লেখে রাফ খাতায়। লিখলে ক*ষ্ট হাল্কা হয়। তারপর ব্যস্ত হাতে পাতাটা ছি*ড়ে ঝুড়িতে ফেলে দেয়,ঠিক এইরকম। কখনও পানিতে ভেজায়। এই অভ্যেস তো আজ নতুন নয়!
পিউ জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকল। শীতের ভেতর ঠান্ডা পানিতে লম্বা শাওয়ার নিলো। বের হতেই দেখল রাদিফ রুমে এসছে। খেতে ডাকছে সবাই। এতক্ষণ নিচে বসে ডেকে ডেকে শেষমেষ ওকে পাঠিয়েছে।
পিউ দ্বিরুক্তি না করে রওনা করল। গিয়ে বসল টেবিলে। আফতাব ব্যাতীত বাড়িতে পুরুষ কেউ নেই। গ্রাম থেকে আসার পরপরই সাংঘাতিক ঠান্ডা লেগেছে তার। শুকনো কাশি,ফ্যাচফ্যাচে সর্দি। আমজাদ সিকদার অফিসমুখী হতে ক*ড়া কণ্ঠে মানা করেছেন। ভাইকে অমান্য করে তিনিও রয়ে গেলেন বাড়িতে।
মিনা বেগম শুধালেন,
‘পরীক্ষা কেমন হলো?’
মুখের সামনে ভাত ধরেও পিউ থেমে গেল। ব্য*থিত নয়নে তাকাল মায়ের দিকে। কী করে বলবে এখন! আজ যে জীবনের সবচেয়ে বা*জে পরীক্ষাটা দিয়েছে। জ্বিভ ঠেলে
মিথ্যে বলল,
‘ ভালো।’
পুষ্প এলো মাত্র। চেয়ারে বসতে বসতে পিউয়ের দিকে তাকাল কয়েকবার।
আফতাবের খাবার ঘরে দিয়ে এসেছিলেন রুবায়দা। এঁটো থালাবাসন সমেত রান্নাঘরের দিক যাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই বাড়িতে ঢুকল ধূসর। তার পায়ের আওয়াজ উপস্থিত সকলের কানে পৌঁছায়। মনোযোগ ঘোরায়। একদিন পর বাড়িতে ঢোকায় মিনা বেগমের চোখমুখ চকচকায়। রুবায়দা ছেলেকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেলেন। ধূসর ডানে বামে না তাকিয়েই, গটগটিয়ে এসে মায়ের মুখোমুখি দাঁড়াল। চোখমুখ টকটকে লাল। তিনি হেসে বলতে গেলেন কিছু, সম্পূর্ণ হলোনা। ধূসর সোজাসাপটা, ভণিতা হীন প্রশ্ন ছু*ড়ল,
‘ তুমি মারিয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছো?’
চলবে।