#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪৮
নতুন বউ নিয়ে কুমিল্লায় পৌঁছাতেই রাত প্রায় এগারোটা! সবাই খুব ক্লান্ত। মারসাদের ফুফি-মামিরা আদিরাকে দেখার পর মিসেস মীরা আর দেরি না করে মারসাদ ও আদিরাকে ওদের রুমে পাঠিয়ে দেন। তারপর মাহিকে দিয়ে ওদের জন্য খাবার ঘরেই পাঠিয়ে দেন। মারসাদের রুমটা ফুলে ফুলে সজ্জিত। গোলাপ ও রজনীগন্ধার ঘ্রাণে মৌ মৌ করছে পুরো রুম জুড়ে। মারসাদ প্রথমে ফ্রেশ হয়ে আসে। তারপর আদিরাকে ফ্রেশ হতে পাঠায়। আদিরা ভারি শাড়ি বদলে একটা সুতি লাল রঙের থ্রিপিস পরে আসে। মারসাদ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“এসো, খেয়ে নাও।”
“আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।”
“একটু খাও। এতোটা পথ জার্নি করে এসেছ। না খেয়ে ঘুমালে এখন তোমার শরীর খারাপ করবে। আমি খাইয়ে দিচ্ছি।”
মারসাদ ও-কে খাইয়ে দিবে কথাটা শুনে আদিরা অবাক হয়। ঠায় দাঁড়িয়ে থাকলে মারসাদ ওর হাত ধরে এনে সোফায় বসায়। তারপর খাবারের লোকমা তুলে খাইয়ে দেয় সাথে নিজেও খায়। মারসাদ বলে,
“আমি এর আগে মাহি ছাড়া আর কাউকে খাইয়ে দেইনি। মাহি ছোটো থাকতে আমার হাতে খাবে বলে বায়না করতো। ও কলেজে যাওয়া অবধি হাতে গোনা হয়তো কয়েকবার শুধু নিজের হাতে খেয়েছে। আর বাকি সবদিন দাদি, মা-বাবা, আপিলি ও আমি খাইয়ে দিতাম। তারপর আমি চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার পর আর সেই সুযোগ হয়নি। আজ এত বছর পর আমি কাউকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছি।”
আদিরা মৃদু হাসে। অতঃপর ওরা খাওয়াদাওয়া শেষ করে ব্যালকনির দোলনায় গিয়ে বসে। দুজনে একসাথে আঁধার আকাশে শুভ্র চাঁদটাকে দেখছে। মারসাদ মোবাইলে সময় দেখে। বারোটা বাজতে আর ছয় মিনিট বাকি। মারসাদ বলে,
“একটু বসো। আসছি আমি।”
তারপর মারসাদ উঠে রুমে চলে গেলো। আদিরা আকাশের দিকে চেয়ে মুচকি হাসছে। আজ তার ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছে। মারসাদ তার কাছে চাঁদের মতো। ছোটোবেলায় শুনেছে, সবাই চাঁদ ছোঁয়ার ক্ষমতা রাখে না। চাঁদ দূর আকাশেই সুন্দর। সৌভাগ্যবানেরাই চাঁদের সান্নিধ্য পায়। কিন্তু আদিরার এখন মনে হচ্ছে, সে সেই সৌভাগ্যবতীদের মধ্যেই একজন।
মিনিট খানেক পর মারসাদ এসে হাজির। তার হাত পেছনে আড়াল করা। হুট করে সে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। আদিরা অবাক হয়ে যায়। মারসাদ হাতটা সামনে এনে বক্সটা খুলে। সেখানে একটা পাতলা চেইনের গোল্ড ফ্লোরাল ব্রেসলেট। মারসাদ বলে,
“ভালোবাসা দিবস ও বসন্তের শুভেচ্ছা, মিসেস আদিরা। আমার জীবনে অনাগত সব বসন্তে আমি শুধু তোমাকেই চাই। তোমার সাথে আমি বৃদ্ধ হতে চাই। ভালোবাসি।”
আদিরা লাজুক হেসে মারসাদের সামনে দুই হাঁটু গেড়ে বসলো। তারপর মারসাদকে অবাক করে দিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। কানের কাছে রিনরিন স্বরে বলল,
“আমিও ভালোবাসি।”
মারসাদের ঠোঁটের কোণে প্রশান্তির হাসি৷ সে আদিরার কপালে ওষ্ঠ ছুঁইয়ে ও-কে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। তারপর চট করে আদিরাকে কোলে তুলে রুমের দিকে হাঁটা ধরে। আদিরার নাকে নাক ছুঁইয়ে বলে,
“সুন্দর রাতটাকে আরও সুন্দর করি?”
আদিরা লজ্জায় মারসাদের বুকে মুখ লুকায়। অতঃপর বসন্তের প্রথম রাজন ভালোবাসায় আচ্ছন্ন।
——-
ছয় বছর পর,
আদিরা এখন একটা কলেজে ক্যামিস্ট্রির লেকচারার হিসেবে জয়েন করেছে। সবে এক মাস হলো সে জয়েন করেছে। অনার্সের পরপরই বিসিএস দিয়েছে। দুইবার বিসিএস দিয়ে দ্বিতীয়বার সে শিক্ষা ক্যাডারে বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। এরইমধ্যে সে মাস্টার্সও শেষ করেছে। সবকিছুতে মারসাদ ও তার দুই পরিবারের সাপোর্ট ছিল। সবার সাপোর্টে ও নিজ যোগ্যতায় সে এতো দূর আসতে পেরেছে। কলেজে জয়েন করার পর আদিরা তার বাবা-মা, ভাইকে কুমিল্লায় নিয়ে এসেছে। একটা ফ্লাট ভাড়া করে সে নিজের খরচে নিজের বাবা-মা ও ভাইকে রাখছে।
আজ মারসাদ ও আদিরার ষষ্ঠী বিবাহবার্ষিকী। বছরের প্রথম বসন্তের বিকেল। বাড়ির লনে আদিরা, মিসেস মীরা, মিলি ও মাহি, বসে চা খেতে খেতে গল্প করছে। আদিরার দৃষ্টি বারবার গেইটের দিকে। মারসাদ আসছে কী না তা দেখছে। আদিরার এই অস্থিরতা কারও নজরকে ফাঁকি দিতে পারেনি। মাহি বলে,
“আদু, তুই যেভাবে দাভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছিস, দেখে মনে হচ্ছে তোদের নতুন বিয়ে হয়েছে। নতুন বউ তার স্বামীর জন্য অধীর আগ্রহে পথ চেয়ে আছে!”
আদিরা হাসে। মিলি মাহির মাথায় একটা টো*কা দিয়ে বলে,
“অথচ তোর উচিত আহনাফের জন্য এভাবে অপেক্ষা করা! মাত্র দেড় মাস হলো তোদের বিয়ের।”
মাহি মাথা ড*লতে ড*লতে বলে,
“উনার সাথে আমি রাগ করেছি। আমাকে আইসক্রিম খেতে দিচ্ছে না। বিয়ের আগেই এই লোক ভালো ছিল। এখন আমার পছন্দের খাবারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে।”
মাহির কথা শুনে সবাই হেসে উঠে। তখন গেইট দিয়ে মারসাদের গাড়ি ঢোকে। মাহি বলে,
“এই নাও। বলতে বলতে দুই বন্ধু চলে এসেছে।”
গাড়ি থেকে মারসাদ ও আহনাফ নামতেই দুটো বাচ্চা দৌঁড়ে যায় ওদের দিকে। মিলির সাত বছরের ছেলে মাহির ও মারসাদ-আদিরার তিন বছরের মেয়ে মাদিহা। মাদিহা ছুটে সবার আগে তার বাবার কোলে উঠে। মারসাদও মেয়েকে পরম আদরে আগলে নেয়। মাদিহা আধো স্বরে বলে,
“বাবা, চক্কেত(চকলেট)?”
মারসাদ মেয়ের গালে আদুরে চু’মু এঁকে হাতে থাকা প্যাকেট থেকে চকলেট বের করে মেয়েকে ও মাহিরকে দেয়। আহনাফও ওদের দুজনকে চকলেট দেয়। তারপর মারসাদ মাদিহাকে কোলে নিয়ে ও আহনাফ মাহিরের হাত ধরে মাহি, আদিরাদের দিকে যায়। আহনাফকে দেখে মাহি মুখ ভে*ঙচি দিয়ে অন্যদিকে ফিরে। আহনাফ তা দেখে হেসে পকেট থেকে ডেইরিমিল্ক সিল্কের সবচেয়ে বড়ো সাইজের চকলেটটা বের করে মাহির সামনে রাখে। চকলেট দেখে মাহি মনে মনে বেশ খুশি হলেও রাগ করে থাকার ভান করে চকলেটটা নিয়ে চুপ করে থাকে। মিসেস মীরা মেয়েকে বলেন,
“আহনাফ তোর জন্য চকলেট আনলো, তারপরও এভাবে আছিস? যা ও-কে নিয়ে রুমে যা। ওর কী লাগবে দেখ।”
“তুমি মেয়ের থেকে জামাইয়ের বেশি কেয়ার করো! ভাল্লাগে না!”
বলেই মাহি উঠে গেলো। সবাই ওর কথা শুনে আবারও হেসে উঠলো। আহনাফ শাশুড়িকে সালাম দিয়ে বউয়ের পেছন পেছন গেলো।
এদিকে মারসাদ রুমে গিয়ে ঘড়ি, বেল্ট খুলে শার্টের বোতাম খুলছে তখন আদিরা ফ্লাস্ত থেকে গরমপানি নিয়ে চটপট কফি বানিয়ে মারসাদকে নিয়ে দেয়। মারসাদ কফির মগ রেখে আদিরার হাত ধরে নিজের বুকের সাথে আগলে নেয়। তারপর বিছানার উপর রাখা প্যাকেটটা থেকে একটা গোলাপ বের করে বলে,
“হ্যাপি এনিভার্সেরি, মিসেস।”
বলতে বলতে কানের পিঠে ফুলটা গুঁজে দেয়। আদিরা শক্ত করে মারসাদকে জড়িয়ে ধরে প্রত্যুত্তরে বলে,
“হ্যাপি এনিভার্সেরি, মিস্টার হাজবেন্ড। আাপনি আমার মনের শহরেে প্রথম প্রেম, প্রথম ভালোবাসা। আপনিই আমার পূর্ণতা।”
তখনি রুমে মাদিহার আগমন ঘটে। বাবা-মাকে একসাথে দেখে মাদিহা মুখে হাত দিয়ে হাসছে। মারসাদ মেয়েকে কোলে তুলে নেয়। মাদিহার খিলখিল হাসিতে মারসাদ আদিরাও হাসে। অতঃপর দুজনে মেয়েকে দুই পাশ থেকে একসাথে চু’মু খা’য়।
সবার মনের শহরে এক শহর প্রেম পূর্ণতা পাক। ভালো থাকুক সবাই।
সমাপ্ত
আসসালামু আলাইকুম। অবশেষে গল্পটা শেষ করতে পেরেছি। আগের সিজনে মারসাদ-আদিরার বেবির সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাদের জন্য মাদিহা।🥹
যারা গল্পটা ধৈর্য নিয়ে পড়েছেন, সবার জন্য ভালোবাসা।
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ।