#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৮
“আমি বিয়ে করলে তোমাকেই করব। আর নয়তো করব না। এখন তো তুমিও আমাকে ভালোবাসো। এখন যদি তুমি ওই সামিরার কথায় এসে আমাকে ইগনোর করো বা বিয়ে করতে না চাও তবে, এবার আমি এমনভাবে লাপাত্তা হবো যে কেউ খুঁজে পাবে না। মাইন্ড ইট!”
মারসাদ কথাটা বলে সমুদ্রের দিকে কঠোর দৃষ্টিতে দেখছে। আদিরা পেছন থেকে অসহায় দৃষ্টিতে মারসাদকে দেখছে। মারসাদ আবার ঘুরে কঠোর স্বরে বলে উঠে,
“তুমি যখন আমাকে ভালোবাসোনি, তখন আমি তোমাকে সময় দিয়েছি না? দিয়েছি তো? বলো?”
শেষের বাক্যটা মারসাদ ধ*মকের সুরেই বলল। আদিরা দ্রুত উপরনিচে মাথা দুলায়। মারসাদ আরও বলে,
“তবে এবার সবকিছু ঠিক করতে তোমাকে আমার পাশে থাকতে হবে। যে যাই বলুক, তুমি কেয়ার করবে না। মনে থাকবে?”
আদিরা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। মারসাদ চোখ বন্ধ করে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে আদিরাকে নিজের দিকে ঘুরালো। তারপর অনুনয় করে বলল,
“প্লিজ! আমি তোমাকে বলছি, আর কিছু হবে না। সবাইকে পু*লিশ আট*ক করেছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
“আমাকে ভার্সিটিতে দিয়ে আসুন।”
“তুমি আমার কথা আমলে নিচ্ছো না। তাই না?”
“প্লিজ মারসাদ!”
মারসাদ আর কিছু বলল না। আদিরার হাত ছেড়ে বাইকে গিয়ে বসলো। আদিরাও পেছনে উঠে বসলো।
——–
প্রায় কয়েকদিন পেরিয়ে গেলো। মারসাদ অফিস, ভার্সিটি দুই দিকেই ম্যানেজ করে চলছে। আদিরার সাথে তার দেখা হচ্ছে না। অসুস্থতার জন্য সে ৭টা-৪টা অফিস টাইমটাই করে। ওভারটাইম করে না। ফার্মাসিউটিক্যাল কম্পানিতে প্রায় প্রায় ওভারটাইম করতে হয়। আদিরা তার ফোন রিসিভ করে না। মাহির মাধ্যমে যতোটুকু খবর পায়। আদিরা টিউশনের সময় আধঘণ্টা এগিয়ে এনেছে। যার দরুণ মারসাদের অফিস ছুটির আগেই আদিরা টিউশনে চলে যায়। তারপর মারসাদ ভার্সিটিতে গেলে ঠিক সময়ে আর বের হতে পারে না।
পূজার ছুটি ও শুক্রবার সহ তিন দিনের ছুটি পেয়েছে। আর বৃহস্পতিবার একটা ক্লাস। আদিরা ভাবলো গ্রামে গিয়ে বেরিয়ে আসবে। তার খুব মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাতে ইচ্ছে করছে। মাকে বলতে ইচ্ছে করছে, সে আবার এই গ্রামে ফিরে আসতে চায়। ওই শহরে এখন তার জন্য বিষাদের ছাঁয়া ভর করেছে। কাউকে ভালোবেসেও তাকে দূরে ঠেলে দিতে হচ্ছে। আদিরা বাসের টিকেট কে*টে ফেলেছে। বুধবার ক্লাস করেই হোস্টেলে গিয়ে সব গুছিয়ে নিবে। তারপর সন্ধ্যার বাসে রওনা দিবে। পৌঁছাতে পৌঁছাতে সকাল হয়ে যাবে। আদিরা মাহিকে বলল যেন বৃহস্পতিবার ও সোমবারের ক্লাসটার নোট করে।
টিউশন শেষে আদিরা ক্লান্ত বেশে পথের ধার দিয়ে হাঁটছে। তখনি একটা বাইক তার পাশে থামলো। আদিরা ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো। মারসাদকে দেখে সে দাঁড়ালো। কিন্তু তার দৃষ্টি রাস্তার দিকে। মারসাদ বাইক থেকে নেমে বলল,
“তুমি তোমার গ্রামে যাচ্ছো?”
“হু।”
“আমাকে তো বললে না।”
“প্রয়োজন মনে করিনি।”
হাসলো মারসাদ। আদিরা এক বার মাথা উঁচু করে দেখে আবার নিচু করে ফেলল। মারসাদ ও থুতনিতে আলতো স্পর্শ করে মুখটা উঁচু করে শুধালো,
“এসব করে নিজেও তো শান্তি পাচ্ছো না। আমাকেও কষ্ট দিচ্ছো। যদি এমন হতো, তুমি অন্তত শান্তিতে আছো। তবে আমি মেনে নিতাম।”
“আমি ভালো আছি।”
“হু! খুব! দেখতেই পাচ্ছি!”
আদিরা আঁড়চোখে তাকালো। মারসাদ যে তাকে ব্যঙ্গ করে বলছে সেটা সে বেশ বুঝতে পারছে। সে বলে,
“আমি হোস্টেলে যাব।”
“বাইকে উঠো। আমি পৌঁছে দিচ্ছি।”
“না। আমি রিকশা নিয়ে নিব।”
“ওকে! আমি রিকশা ডেকে দিচ্ছি।”
আদিরা কিছুটা অবাক হয়। মারসাদ রিকশা ডেকে দিলে তাতে উঠে পড়ে।
———
আদিরা গ্রামে তার বাড়িতে ঢুকতেই আহাদকে দেখতে পায় উঠানে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করছে। আহাদ তার বোনকে দেখে ছুটে আসে। তারপর চিৎকার করে মাকে ডাকে। আদিরার মা সকালের নাস্তা বানাচ্ছিলেন। তিনি বাহিরে এসে মেয়েকে দেখে খুব খুশি হোন। তিনি প্রথমেই জিজ্ঞাসা করেন,
“কয়দিন থাকবি?”
“দুই-তিন দিন। তারপর চলে যাব।”
“দুই-তিন দিনে কী থাকা পোষায়? আরও কতোদিন সময় নিয়া আসবি তো।”
আদিরা হুট করে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। তার মা আশা বেগম হুট করে মেয়ে এমন জড়িয়ে ধরাতে কিছুটা ঘাবড়ে গেলেন। মেয়ের মুখটাও কেমন শুকনো। তিনি মেয়েকে ছাড়িয়ে চুলার জাল নিভিয়ে মেয়েকে ঘরে নিয়ে দরজা দিলেন। তারপর মেয়েকে জিজ্ঞাসা করলেন,
“তোর কী হইছে, মা? আমারে বল।”
মায়ের আকুল স্বর শুনে আদিরা কেঁদে ফেলল। সে কাঁদতে কাঁদতে বলল,
“আমি আর ওখানে যেতে চাই না। আমার সবকিছু দমবন্ধ লাগে।”
আশা বেগম আরও বিচলিত হয়ে পড়লেন।
“কী হইছে তা বল। যাবি না কেন? তোর তো বড়ো ভার্সিটিতে পড়ার শখ আছিলো। আল্লাহ তোর ইচ্ছাও পূরণ করছে। তো এখন কী হইলো?”
আদিরা বলতে শুরু করলো। দেলোয়ারের কাহিনী। মারসাদ কীভাবে তাকে উদ্ধার করেছে। সব। তারপর আদিরা কাঁদতে কাঁদতে আরও বলে,
“ক্যাম্পাসের অনেকে আমার দিকে কেমন কেমন করে যেন দেখে। আমার সামনে-পিছনে আমারে নিয়া কথা বলে। ওরা বলে, আমারে নাকি দেলোয়ার রে*প করছে! কিন্তু মা, এমন কিছু হয় নাই। তার আগেই মারসাদ ভাইয়া চলে এসেছিল। উনি সময় মতো না আসলে হয়তো…”
আশা বেগম মেয়ের মুখ চেপে ধরেন। তারপর ধরা কণ্ঠে বলে,
“চুপ চুপ। এসব আর মুখে আনবি না। যা হয় নাই, তা হয় নাই। মাইনষে তো কতো কথা কইব। তুই এতো ভালো একটা ভার্সিটিতে পড়তে গেছোস, এখন মাঝপথে ছাইড়া আইলেও মানুষ কম কথা কইতো না। অচেনা শহরে বদনাম নিয়াও থাকা যায়। কিন্তু চেনা শহরে বদনাম লাগলে সেটা নিয়া থাকা যায় না। তোরে শক্ত হইতে হইব।”
আদিরা কাঁদতে কাঁদতে মাকে জড়িয়ে ধরে। তার মা তার থেকে সাহসী। তার মা তাকে অনুপ্রেরণা দিয়ে এতো দূর এনেছেন। ওদের মা-মেয়ের কথাবার্তার মাঝে আহাদ আবার চিৎকার করে উঠলো।
“মা, দেখো। কতোগুলো ভাইয়া, আপু আইছে। ওরা আপুরে খুঁজতাছে।”
আদিরা চোখ মুছে। আশা বেগম বলেন,
“এখন আবার কে আইলো? তোরে খুঁজে কেন?”
“চলো দেখি।”
আদিরা ও আশা বেগম ঘর থেকে বের হলেই দেখতে পায়, মাহি, সাবিহা, রিন্তি ও মারসাদের পুরো বন্ধুমহল! সবাইকে একসাথে দেখে আদিরা হতবাক হয়ে চেয়ে থাকে। মাহি, সাবিহা ও রিন্তি আশা বেগমকে সালাম দেয়। তারপর মাহি বলে,
“আন্টি, আমরা আদিরার ফ্রেন্ড। আর ওই যে আমার ভাই মারসাদ ইশরাক খান (মারসাদকে দেখিয়ে)। আর ওরা সবাই আমার ভাইয়ে ফ্রেন্ড।”
সবাই সালাম দিলে আশা বেগম একসাথে সবার সালামের জবাব দেন। তারপর সবাইকে বসতে বলে তিনি আহাদকে নিয়ে ঘরে যান। তারপর আহাদকে টাকা দিয়ে হোটেল থেকে নাস্তা আনতে পাঠায়।
আদিরা মাহিকে টেনে নিজের ঘরে নিয়ে যায়। তারপর শুধায়,
“তোরা এখানে এসেছিস কেন?”
“কারণ তোর মনের অবস্থা ভালো না। তাই আমার ভাইয়েরও মন খারাপ। সে তার হবু বউকে একা ছাড়তে ভরসা পাচ্ছিলো না।”
আদিরা নজর ঘুরিয়ে রুষ্ট স্বরে বলে,
“কে তোর ভাইয়ের হবু বউ? আমি তো না। সামিরা আপু তোর ভাইয়ের হবু বউ!”
মাহি আয়েশ করে বসে। তারপর বলে,
“সেটা পরে দেখা যাবে। তুই রাজি না হলেও তোর বাবা-মা যদি রাজি হয়ে যায় তাহলে?”
“মাহি! তোরা এখানে বাড়াবাড়ি করিস না প্লিজ। বাবা এমনিই আমাকে এত দূরে রেখে পড়ালেখা করাতে রাজি ছিলেন না।”
“রিল্যাক্স, বে’ব! তুই জাস্ট ফ্লো ফ্লো তে যা। বাকিটা আমরা বুঝে নিব।”
মাহি তাকে কিন্তু নিশ্চিন্ত হতে বললেও আদিরা নিশ্চিন্ত হতে পারছে না। তার বাবা খুব রাগী। কী থেকে কী হয়ে যায়!
চলবে ইন শা আল্লাহ
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।
#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৯
আদিরার বাবা কাশেম আলী দোকান থেকে দুপুরে বাড়িতে খেতে এসে এতো আয়োজন ও মানুষ দেখে অবাক হয়ে যান। সবাই উঠানে পাটি পেতে দুপুরের খাবার খাওয়ার উদ্দেশ্যে বসেছে। কাশেম আলী হাঁক ছেড়ে আহাদকে ডাকেন। আহাদ আসলে আহাদকে জিজ্ঞাসা করেন,
“বাড়িতে এতো মানুষ কেন?”
“আপুর ভার্সিটিরতে আইছে।”
মেয়ের আগমনের কথা শুনে কাসেম আলীর মুখে হাসি ফোটে।
“কই তোর আপায়?”
“মা’র সাথো পাকেরঘর থেকে ভাত-তরকারি আনতেছে। সবাই এখন খাইতে বসবে।”
কথাটা বলে আহাদ আবার ছুটে চলে গেলো। কাশেম আলী দেখলেন। উনার স্ত্রী ও মেয়ে রান্নাঘর থেকে খাবার এনে বড়ো দুইটা পাটির মাঝে রাখছে। উনি হাত-মুখ ধুঁতে কলপাড়ে গেলেন। কাশেম আলী কলপাড়ে গিয়ে কলে একবার চাপ দিয়ে পা ধুঁয়ে, আবার চাপ দিতে নিলে দেখেন আদিরা কলে চাপ দিয়ে দিচ্ছে। কাশেম আলীর মুখে হালকা হাসি ফোটে। তিনি জিজ্ঞাসা করেন,
“হঠাৎ আইলা যে? তোমার মায় তো বলে নাই, তুমি আসবা।”
“তোমাদের দেখতে ইচ্ছে করতেছিল, বাবা।”
আবারও মৃদু হাসেন কাশেম আলী। অজু করে ঘরে গিয়ে নামাজে দাঁড়ান।
এদিকে আশা বেগম সবার পাতে ভাত বাড়তে নিলে মারসাদ বাধা দেয়।
“আন্টি, আঙ্কেল আসুক। তারপর সবাই একসাথে খাই।”
আশা বেগম কথাটা শুনে খুশি হলেও বলেন,
“উনি নামাজ পড়তেছে, বাবা। তোমরা খাওয়া শুরু করো। নামাজ শেষ হলেই উনিও আসবেন।”
মারসাদ হালকা হেসে বলে,
“না, আন্টি। আঙ্কেলল নামাজ শেষ করে আসুক, তারপর আমরা একসাথে খাব।”
আশা বেগম আবার কিছু বলতে চাইলে আদিরা ইশারায় না করে। মৃদুল মারসাদের কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
“হবু শশুরকে ইমপ্রেস করতে চাইছিস?”
মারসাদ কটমট দৃষ্টিতে তাকালে মৃদুল চুপসে যায়। তারপর ওরা আদিরার বাবার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।
কাশেম আলী নামাজ শেষ করে আসতেই দেখে সবাই বসে আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করেন,
“তোমরা সবাই বইসা আছো কেন? খাওয়া শুরু করলা না?”
আশা বেগম প্রত্যুত্তরে বলেন,
“ওরা সবাই আপনার জন্য অপেক্ষা করতে ছিল।”
“আরে কী বলো? আমার জন্য কেন অপেক্ষা করতে ছিল?”
আশা বেগম মারসাদকে দেখিয়ে বললেন,
“ছেলেটা বলল, আপনে আসলেই খাওয়া শুরু করবে। আমি বলছিলাম। শোনে নাই।”
কাশেম আলী মারসাদের দিকে তাকালো। তারপর মৃদু হেসে পাটিতে বসতে বসতে বললেন,
“আচ্ছা। এখন সবাইরে খাবার দাও। ভাত-তরকারি ঠান্ডা না হইয়া গেছে! কী রানছো আজ?”
“লাল মুরগীর গো*শত, তেলাপিয়া মাছ, করলা ভাজি, ডাল।”
আশা বেগম ও আদিরা মিলে সবাইকে খাবার বেড়ে দিচ্ছে। উনাদের সাথে রাত্রি, সুমিও হাত বাটালো।
——-
বিকেলে ওরা গ্রামে হাঁটতে বের হয়েছে। ধান ক্ষেতের আইল দিয়ে হাঁটছে। গতকাল রাতে বৃষ্টির কারণে মাটি ভেজা। সুমি স্বাচ্ছন্দ্যে হাঁটতে পারছে। কারণ তার বাড়িও গ্রামের দিকে। বাকিদেে ঝামেলা হচ্ছে। মারসাদ আদিরার সাথে সবার পেছনে পাশাপাশি হাঁটছে। আদিরাই প্রথমে শুধায়,
“কেন এসেছেন?”
“তোমার জন্য।”
মারসাদের সাবলিল উত্তর। কিন্তু আদিরা তাতে সন্তুষ্ট না। আদিরা বলে,
“আপনি নিজের সময় নষ্ট করছেন। সেই সাথে আপনার বাবার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন। আপনার বাবা তো চাইছেন, সামিরা আপুর সাথে আপনাকে দিয়ে দিতে।”
“বিয়ে করব তো আমি। সেখানে আমার সম্মতিও ইম্পরট্যান্ট। আমি রাজি না থাকলে বাবা চাইলেই কী!”
“আঙ্কেল খুব রাগ করবেন।”
“করুক।”
আদিরা বুঝতে পারছে না, এই ছেলে এতো ঢিট কেন? সে আবার বলে,
“আপনি উনার একমাত্র ছেলে। উনি নিশ্চয়ই আপনার খারাপ চাইবেন না।”
মারসাদ এবার হাঁটা থামায়। সেই সাথে আদিরাও। তারপর আদিরার দুই কাঁধে ধরে নিজের দিকে ঘুরায়। আর বলে,
“আমি জানি, আমার বাবা আমার খারাপ চাইছেন না। কিন্তু ওই যে, আমি যা ফেস করেছি তা আমার বাবা জানেন না। জানেন না বিধায় তিনি সামিরার সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন। তারউপর এখন আমি বললেও তিনি মানবেন না।”
আদিরা চুপ করে রইল। মারসাদ আবার বলল,
“বাবা আমাকে বাধ্য করতে পারবেন না। যাতে কখনো বাধ্য করতে না পারে, এজন্যই আমি উনার সাজেস্ট করা সাবজেক্টে পড়িনি। আমি সবসময় স্বাধীন ভাবে থাকতে চেয়েছি।”
“কিন্তু উনি আপনার বাবা।”
মারসাদের এবার মা*থা খারাপ হচ্ছে। সে বলে,
“এতো ভোলাভালা কেন তুমি? নিজের হ্যাপিনেস নিয়েও ভাবো। মানুষের কথা ভাবতে যাও কেন?”
“কাউকে কষ্ট দিয়ে ভালো থাকা যায় না।”
“আদিরা, তুমি কি জানো আমি এতো ধৈর্যশীল না! কিন্তু তোমার কারনে আমাকে জোরপূর্বক ধৈর্য ধরতে হচ্ছে! তো আমাকে ধৈর্যহারা হতে বাধ্য করো না। প্লিজ!”
কথাটা বলেই মারসাদ আদিরাকে রাখে রেখে সামনে মৃদুল, রাফিনদের কাছে এগিয়ে গেলো। আহনাফ মারসাদকে দেখে জিজ্ঞাসা করে,
“কী হলো আবার? রেগে আছিস মনে হচ্ছে?”
“আমার মা*থায় একটা বা*ড়ি মা-/র! এতো নেইব একটা মেয়েকে কীভাবে ভালোবাসলাম!”
রাফিন ফট করে বলে উঠে,
“তোর কি আফসোস হচ্ছে, দোস্ত?”
“আফসোস না! রাগ হচ্ছে। আমি যা শুনতে চাই না, ও আমাকে সেগুলোই বলে! আর যা শুনতে চাই সেটা বলতেই ওর বছর পেরিয়ে যায়।”
হতাশ নিঃশ্বাস ছাড়লো মারসাদ। ওর বন্ধুরা ও-কে স্বান্ত্বনা দিচ্ছে।
মাহি, সাবিহা, রিন্তি খানিকটা পিছিয়ে আদিরার সাথে হাঁটছে। মাহি শুধায়,
“তুই আবার কী বলেছিস?”
“কিছু না।”
মাহি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকায়। সাবিহা বলে,
“তুইও তো মারসাদ ভাইয়াকে ভালোবাসিস। তাহলে এমন কেন করছিস?”
মাহি মুখের ভাব বি*কৃত করে বলে উঠে,
“ওর কাছে জামাইয়ের থেকে শ্বশুরের চিন্তা বেশি! জামাই ভাড় মে যাক!”
রিন্তু মাহির হাতে একটা থা*প্পড় লাগায়। মাহি ভ্রুঁ কুঁচকে তাকালে রিন্তি ইশারায় চুপ থাকতে বলে। রিন্তি বলে,
“তুই মারসাদ ভাইয়ার বাবা-মাকে নিয়ে একদমই চিন্তা করবি না। তোরা জাস্ট বিয়েটা কর! তারপর উনারা ঠিক মেনে নিবে।”
আদিরা হতবাক হয়ে তাকায়। মুখ দিয়ে আপনাআপনি বের হয়,
“বিয়ে!”
সাবিহাও রিন্তির সাথে সহমত পোষণ করে বলে,
“ঠিক বলেছিস, রিন্তি। কয়েক বছর পর নাতি-নাতনী নিয়ে উনাদের সামনে গেলে উনারা আর রাগ করে থাকতেই পারবে না।”
মাহিও হাসি হাসি কণ্ঠে বলে উঠে,
“ঠিক ঠিক। আর আমি আর মা আছি তো! ইমো*শোনাল ব্ল্যা*কমে-ইল করতে!”
আদিরা এদের কথা শুনে মা*থায় হাত দেয়! এরা সব পা*গল হয়ে গেছে।
——–
রাতের খাবার খেতে সবাই বসেছে। আশা বেগম সবার জন্য চিতই পিঠা বানাচ্ছেন। চিতই পিঠার সাথে হাঁসের গো*শত, শুঁ*টকি ভর্তা ও সরিষা ভর্তা। সবাই একসাথে রান্নাঘরের পাশে পাটি বিছিয়ে বসে খাচ্ছে। কাশেম আলী দোকান বন্ধ করে সবে এসেছেন। তিনি কলপাড়ের দিকে গেলে আদিরা উঠে যেতে চায়। তখন মাহি ও-কে বাধা দিয়ে নিজে যায়। তারপর কাশেম আলীকে বলে,
“আঙ্কেল, আমি কল চেপে দেই? আপনি হাতমু-খ ধুঁয়ে নিন।”
“তুমি পারবা?”
“চেষ্টা করে দেখি।”
কাশেম আলী হেসে সায় দিলেন। মাহি নিজের সর্বস্ব জোর লাগিয়ে কল চাপার চেষ্টা করছে! কল দিয়ে পানি সামান্যই বের হচ্ছে। কাসেম আলী বলেন,
“তুমি পারবা না, মা। আমিই কল চেপে নিতে পারমু।”
মাহি বাধা দেয়।
“না না। আমি পারব।”
তারপর আবার চেষ্টা করে। কল চাপতে চাপতে মাহি নিজের কথাগুলো গুছিয়ে নেয়।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪০
মাহি সাহস করে জিজ্ঞাসা করেই ফেলে,
“আঙ্কেল, একটা কথা জিজ্ঞাসা করি? কিছু মনে করবেন না তো?”
“না। তুমি কও।”
মাহি সামান্য ঢোক গিলে বলতে শুরু করে,
“আদিরা তো শহরে থাকে। ধরেন, ওর শহরেই কাউকে পছন্দ হলো। তাকে বিয়ে করতে চাইলো। তখন?”
কাশেম আলীর কপাল কুঁচকে গেলো। মাহি আগ্রহ নিয়ে উত্তরের অপেক্ষা করছে। কাশেম আলী জবাব দেন,
“পোলা যদি ভালো হয়, তাইলে আমাগো সমস্যা নাই। মাইয়া তো আগেই সাহস কইরা শহরে গেছে গা। এহন কি তার গ্রামের কাউরে পছন্দ হইব!”
কাশেম আলী কথাটা আফসোসের সাথেই বললেন। মাহি ফের প্রশ্ন করে,
“ছেলে কেমন হতে হবে? মানে আপনাদেরও তো কিছু পছন্দ-অপছন্দ আছে।”
“স্বভাব-চরিত্র ভালা হইতে হইব। ভালা পরিবারের হইতে হইব। আমার মাইয়া সুখে থাকব এতটুকুনই।”
মাহি খুশি হয়ে যায়। তারপর বলে,
“চলুন, আঙ্কেল। আন্টি চিতই পিঠা বানাচ্ছেন।”
তারপর কাশেম আলী ও মাহি রান্নাঘরের কাছে যায়। মাহি সাবিহার পাশে বসতেই সাবিহা ওর কানে কানে শুধায়,
“কী বলল, আঙ্কেল?”
“পরে বলব। এখন পিঠা খা।”
আশা বেগম পিঠার শেষ খোলা উঠিয়ে সবাইকে বললেন,
“খাওয়া শেষ কইরা তোমরা ছেলেরা উত্তরের ওই ঘরটাতে চইলা যাইয়ো। আর মাইয়ারা সব আদিরার ঘরেই কষ্ট কইরা কাটাইতে হইব। আমাগো আর রুম তো নাই। উত্তরের ঘরটা মেহমানগো জন্য বানাইছে। ওখানে দুইটা আরও বেশি তোষক আছে। বড়োটা আদিরার রুমে নিয়া আসলেই হইয়া যাইব।”
তারপর তিনি আদিরাকে উদ্দেশ্য করে বলেন,
“উত্তরের ঘরটা আমি ঝা*ড়ু দিয়া রাখছি। তুই দুইটা তোষক বিছায় দিস। আর কয়েল জ্বা*লায় দিস।”
আদিরা হ্যাঁ বোধক মাথা নেড়ে খেতে খেতে মারসাদের দিকে তাকায়। মারসাদ তার দিকেই তাকিয়ে আছে! অতঃপর আদিরা দ্রুত নিজের দৃষ্টি নিচু করে ফেলে। মারসাদও মাথা নিচু করে মৃদু হাসে।
উত্তরের ঘরে তোষক, চাদর বিছানো ও বালিশ ঠিক করছে আদিরা। ঘরের বাহিরে মারসাদ ও তার বন্ধুরা অপেক্ষা করছে। রাফিন মারসাদের কাছে এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আমাদের সাথে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
“তো কী করব?”
ভ্রুঁ কুঁচকে প্রত্যুত্তর করে মারসাদ। রাফিন কপাল চা*পড়ে বলে,
“আদিরা ভেতরে। তুই গিয়ে ওর কাজে হেল্পও তো করতে পারিস!”
মারসাদ ভাবে। রাফিন ভুল কিছু বলছে না। সে রাফিনের এক গা*ল খুব জো*রে টে*নে ঘরের ভেতরে ছুটে যায়। রাফিন চোখমুখ কুঁচকে বলে,
“ভালো একটা আইডিয়া দিলাম, আর ও কী না আমার গা*ল এতো জোরে টে*নে দিলো! শা*লা এক নাম্বারের অকৃতজ্ঞ!”
রাফিনের কথা শুনে মৃদুল, আহনাফ, রবিন ঠোঁ’ট চেপে হাসলো। আহনাফ হালকা কাঁশি দিয়ে হাসি চেপে রেখে বলে,
“ও আমার শা*লা! তোর না!”
আহনাফের কথা শুনে মৃদুল ও রবিন আর নিজেদের হাসি থামিয়ে রাখতে পারলো না। রাফিন রেগে আহনাফকে দু ঘা লাগিয়ে দেয়। আহনাফও হাসতে হাসতে সহ্য করে নেয়।
ঘরের ভেতরে গিয়ে মারসাদ হালকা কাঁশি দিয়ে আদিরার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করলো। আদিরা বিছানার চাদর টান টান করে বালিশ গুলোর জায়গা মতো রাখতে রাখতে পেছনে ঘুরলো। মারসাদ জিজ্ঞাসা করলো,
“তোমার কোনো হেল্প লাগবে?”
মারসাদের কথা শুনে আদিরা মুখ বিকৃত করে ফেলল! সে নিজের আশেপাশে তাকিয়ে জবাব দিলো,
“বাটা মরিচের বটু ফেলতে আসছেন?”
“সরি?”
মারসাদ প্রথমেই বুঝলো না যে আদিরা তাকে ব্যঙ্গ করেছে! আদিরা আবার বলে,
“হেল্প লাগবে যে বললেন! এবার বন্ধুদের ডেকে নিয়ে এসে এখানে ঘুমিয়ে আমার হেল্প করেন!”
তারপর আদিরা ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। মারসাদ কয়েক সেকেন্ড সেখানে দাঁড়িয়ে যখন আদিরার কথাগুলো বুঝতে পারলো, তখন সেও ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। আদিরা উঠোন দিয়ে হেঁটে চলে যাচ্ছে তখন মারসাদ ডাক দিলো।
“আদিরা, আমি হেল্প করতেই গিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি এতো ফার্স্ট যে….”
আদিরা ঘুরে জবাব দিলো,
“বুঝেছি! এবার ঘুমান!”
মারসাদ মা*থা চু*লকে তাকিয়ে রইল। তখন রাফিন মারসাদের কাছে এসে বলল,
“আমার যে এত জো*রে গা*ল টেনে গিয়েছিস, এইটা ছিল প্রতিদান!”
তারপর রাফিন ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়। আহনাফ, মৃদুল, রবিনও হাসতে হাসতে ঘরের ভেতরে যায়।
———
আদিরার ঘরের ভেতর মেয়েরা গোল হয়ে বসেছে। আজ রাতটা তারা ফোনে চারজন চারজন করে লুডো খেলে কাটাবে। আহাদও এসে ওদের সাথে যোগ দিয়েছে। খেলতে খেলতে একটু পর আহাদ ঘুমিয়ে যায়। আদিরা ও-কে বাবা-মায়ের রুমে রেখে আসে। সুমি বলে,
“আমারও খুব ঘুম আসছে। কাল সারারাত জার্নি করেছি। এখন চো’খ খু’লে রাখতে খুব কষ্ট হচ্ছে।”
“তাহলে সবাই ঘুমিয়ে যাই। সকালে এদিককার মেলাতে যাব। পূজোর জন্য এখানে মেলা বসে। খাবার, মেয়েদের চুড়ি, গহনা, শাড়ি এসব বসে।”
আদিরার কথা শুনে মৌমি বলে,
“তাহলে তো ভালোই হয়। সবাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে যাও।”
অতঃপর ওরাও ঘুমানোর উদ্দেশ্যে শুয়ে পড়ে।
সকালবেলা। সূর্য পূর্ব দিগন্তে উঠে গেছে। আদিরা বাদে এখনও বাকিদের ঘুম ভাঙেনি। আদিরা ঘর থেকে বেরিয়ে কলপাড়ে যায়। কাশেম আলী দোকানে যাওয়ার আগে নাস্তা করছেন। তিনি আদিরাকে ডাকেন। আদিরা মুখ ধুঁয়ে বাবার কাছে যায়। কাশেম আলী মেয়েকে বসতে ইশারা করলেন। আদিরা বসলে তিনি শুধালেন,
“তোমার শহরেই কাউরে বিয়া করার ইচ্ছা?”
বাবার মুখে এমন প্রশ্নে আদিরা থতমত খেয়ে যায়। হঠাৎ তাকে এরকম প্রশ্ন কেন করছে, সেটা সে বুঝতে পারছে না। আদিরা আমতা আমতা করে বলে,
“হঠাৎ এগুলো জিজ্ঞাসা করছো কেন?”
“এমনেই। তুমি এখন শহরে গেছো। তোমার এহন গ্রামের দিকে পরান টিকব না, তাও বুঝি৷ তাছাড়া গ্রামের কোনো পোলা শিক্ষিত হইলে শহরেই থাইকা যায়।”
আদিরা বলে,
“আমি তোমাদেরকেও শহরে নিয়ে যাব। আমরা একসাথে থাকব।”
“না, মা। আমি গ্রামেই ভালা আছি। যান্ত্রিক শহরে পরান টিকব না। তোমারে কথাখানা কেন কইলাম, তা তুমি বুঝতে পারছ নিশ্চয়ই? তোমার তো ভার্সিটিতে এক বছর শেষ। আস্তে আস্তে সময়ও পার হইয়া যাইব। মাইয়া মানুষ, বিয়াশাদীরও ব্যাপার আছে। তুমি যেহানে ভালা থাকবা, সেইহানেই তোমারে বিয়া দিমু। তোমার খালার ননদের পোলাডা আসলে ভালা আছিলো না। কয়দিন আগে তোমার খালায় ফোন কইরা কইলো, তার নাকি বিদেশে এক বউ আছে। এইডা প্রথমে কাউরে জানায় নাই। ওই বউয়ের লগে যোগাযোগ বন্ধ করছিল দেইখা বউটায় কয়দিন আগে বাংলাদেশে আইছে। তোমার ভাগ্য ভালা ছিল যে ওই পোলার লগে তোমার বিয়াটা হয় নাই। নাইলে যে কী হইতো!”
বলতে বলতে আফসোস করলেন কাসেম আলী। আদিরা সবটা শুনলো। এবার বুঝলো, তার বাবা কেন এত নরম স্বরে কথাগুলো বলছেন। তার খালার ননদের ছেলের বিদেশে বিয়ের কথা জানতে পেরেই তিনি তার সিদ্ধান্তের ভুল বুঝতে পেরেছেন। আদিরা মুচকি হেসে বলে,
“দোয়া করো, বাবা। যেন সঠিক মানুষটাকে নিজের জীবনে পাই। সবাইকে খুশি করেই যেন পাই।”
কাশেম আলী মেয়ের মাথায় হাত রাখলেন। তারপর খাওয়া শেষ করে দোকানের দিকে চলে গেলেন।
চলবে ইন শা আল্লাহ,