এক শহর প্রেম_২ পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

0
59

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩২
মারসাদের আঁকা ছবিটাকে খুটিয়ে খুঁটিয়ে কিছুক্ষণ দেখার পর মুচকি হাসলো আদিরা। ছবিটার নিচের দিকে মারসাদের নামের ইংলিশে সাইন ও তারিখ দেওয়া। আদিরা নামটা দিকে আরও কয়েক সেকেন্ড চেয়ে রইল। পরক্ষণেই রুমমেটের ঘুমে জড়ানো ‘গুড মর্নিং’ শুনে জলদি করে ছবিটা আগের মতো গোল করে মুড়িয়ে যত্ন করে রেখে দেয়।

ছুটির পর আজ ভার্সিটি খুলল। আদিরা ক্লাসরুমে বসে আছে। বসে বসে বারবার দরজার দিকে দেখছে। একটু পর সাবিহা, রিন্তি এসে আদিরার সামনের ও সামনের সিটের পাশেরটাতে বসে। অতঃপর গল্প করা শুরু করে দেয়। আদিরা ওদের সাথে গল্প করছে আর কিছুক্ষণ পরপর দরজার দিকে তাকাচ্ছে। স্যার আসতে বেশি সময় বাকি নেই। নিজের পাশের চেয়ারটা এখনও ফাঁকা। আদিরা আশা করছে মাহি এসে তার পাশের চেয়ারটায় বসবে। কিন্তু মনে মনে আবার ভাবছেও, হয়তো বসবে না। তখনি দরজা দিয়ে মাহির আগমন ঘটে। সাবিহা, রিন্তি একসাথে মাহিকে হাতের ইশারায় ‘হাই’ দেয়। তারপর তাদের কাছে আসতে বলে। মাহিও ওদেরকে হাত নেড়ে ‘হাই’ দিয়ে আদিরার দিকে তাকায়। আদিরা তার দিকেই চেয়ে আছে। কিন্তু চোখ-মুখের ভাবমূর্তি ঠিক বুঝা যাচ্ছে না। মাহি ওদের দিকে আগাতে আগাতে তার মনে পড়লো মারসাদ কাল রাতে তাকে যা বলেছিল,

“শোন বাচ্চা, তোর আর আদিরার মধ্যে মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং সলভ করে নে। আমার জন্য তুই ফ্রেন্ডশিপ নষ্ট করবি কেন? আমিই তো প্রথমে ভুল স্টেপ নিয়েছি। ওই স্টেপের পর যেকেনো মেয়ে, মানে আদিরার মতো মেয়ে আমাকে বিশ্বাস নাই করতে পারে। তুই নিজেও বিশ্বাস করতি না।”

মাহি বলেছিল,
“আমি এজন্য ওর সাথে রাগ করিনি, দাভাই। তোকে বলেছিলাম।”

“হু বলেছিলি। কোনো একটা রিলেশন বা বন্ড নষ্ট হওয়ার পর আমরা কী করি? সেই মানুষটার থেকে দূরে থাকি। কিন্তু প্রতিদিন যদি সেই মানুষটাকে দেখতে হয় তখন এটা মিসারেবল হয়ে যায়। ফ্রেন্ডশিপ তেমনই একটা বন্ড। চোখের সামনে বেস্টফ্রেন্ডকে অন্য কোনো ক্লাসমেট বা ফ্রেন্ডের সাথে হাসতে দেখলে যেমন আমরা এগিয়ে যাই, যে কেন হাসছে? কিন্তু যখন এই বন্ডটা ব্রেক করে তখন ওই এগিয়ে যাওয়াটা হয় না। তাই বলে যে আমাদের থিংকিং সেখানে স্টপ হয়, তাও কিন্তু না। বিয়ে ভাঙার মতো হলে আদালতও তিন মাসের টাইম পিরিয়ড দেয়, নিজেদের মধ্যে সলভ করার। তাতেও না হলে পারমানেন্টলি সেপারেশন। তারপর দুজনের দুনিয়া আলাদা। তারপরও মুভঅন করতে সময় লেগে যায়। কিন্তু ফ্রেন্ডশিপ ভিন্ন। যদি সেটার ব্রেকডাউন ‘আর কখোনো দেখা হবে না’ স্টেজে হয়, তখন হয়তো সেটা তেমন পে*ইন দেয় না। কিন্তু তোদের প্রতিদিন দেখা হবে কিন্তু কথা হবে না। দুজনের মনেই অস্থিরতা থাকবে। তাই বলছি, আমাকে নিয়ে চিন্তা করিস না। আমারটা আমি বুঝে নিব। তোরটা তুই বুঝে নে।”

মাহি মন্ত্রমুগ্ধের মতো তার ভাইয়ের কথাগুলো শুনেছিল। অতঃপর মুচকি হেসে ভাইকে জড়িয়ে ধরেছিল।

মাহি আদিরার পাশের সিটটাতেই বসলো। মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকালো। স্যার এসেছেন। সবাই একসাথে দাঁড়িয়ে সালাম দেয়।

———–

সন্ধ্যাকাল। ঘড়িতে সময় সাতটার কিছু বেশি বাজে। পার্কের ধারের রাস্তার খানেক বাদে স্ট্রিট লাইটে আলোকিত। আকাশে আজ পূর্ণ চন্দ্রমা। আজ পূর্ণিমা কি না আদিরা জানে না। তার চন্দ্রমাসের তারিখ হিসাব করা হয় না। তবে আজ চাঁদটা বিগত কিছু দিনের তুলনায় বেশি উজ্জ্বল ও বড়ো লাগছে। আদিরা চাঁদের দিকে চেয়ে হাঁটতে হাঁটকে হঠাৎ হোঁচট খেলো। তৎক্ষণাৎ এক বলিষ্ঠ হাতের মালিক তাকে তার কাঁধ ধরে পড়ে যাওয়া থেকে আটকালো। আর বলল,

“এখানে মেনহোলের ঢাকনাটা একটু উঁচু। সাবধানে হাঁটো।”

আদিরা লোকটার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে মাথা নাড়লো। লোকটাও বিনিময়ে মৃদু হাসলো। লোকটা বলল,

“তুমি বললে আজকে মাহি তোমার পাশের সিটে বসেছে। তারপর কি হয়েছে তা তো বললে না। কথা শেষ না করেই চাঁদের দিকে লক্ষ্য করে হাঁটতে লাগলে। আর এখন তো পড়েই যাচ্ছিলে।”

“আজকে তো একটাই ক্লাস হয়েছে। পরের ক্লাসটা তো ক্যান্সেল হয়ে গিয়েছে। তাই মাহি বলল, ওর গোছগাছ বাকি আছে। বাসায় চলে গেলো।”

“হু। ওর গোছগাছ বাকি আছে। কারণ ও কালকে বিকেলেই এসেছে। আপিলি মাহিরকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে আছে। আর মাহি মাহিরকে ছেড়ে আসতেই চাচ্ছিলো না।”

আদিরা বলল,
“আমাকে একটু মাহিরের ছবি দেখান না। আপনি শুধু ডেলিভারির দিনের ছবি আমাকে দেখিয়েছেন। তারপর ও কয়েকদিনে কতটুকু বড়ো হল সেটার ছবি দেখান।”

হাসলো মারসাদ। তারপর বলল,
“মাত্র ৯ দিন বয়স ওর। আর তুমি বলছো নয় দিনে কতটুকু বড়ো হলো! তুমি আর মাহি পুরো একই! মাহি তো প্রতিটা মুহূর্তের ছবি তুলে ওর। কালকে এখানে আসার পর আপিলিকে যে ও কতবার কল করেছে! ভিডিওকল, অডিওকল সব। বারবার কল করে মাহিরের দিকেই ক্যামেরা রাখতে বলে আর বাসে আসার সময় অডিও কল দিয়ে নাকি বারবার বলেছিল, ‘আপিলি, আমার মাহির বাচ্চার ছবি তুলে দাও!’ আপিলি পরে বিরক্ত হয়ে আমাকে বলেছে, আমি যেন ওর ফোন ওর থেকে কেড়ে নেই।”

“খালা হওয়ার ফিলিংস আপনি বুঝবেন না। প্রতিটা ছোটো বোনের প্রথম সন্তান তার বড়ো বোনের বাচ্চা। আমার তো আফসোস হয়, আমার কেন বড়ো বোন নেই। আসলে আমার একটা বোন না থাকারই আফসোস। ছোটো বোন থাকলেও হতো। বোন থাকা মানে ‘লাকি’।”

আদিরের কথা শুনে মারসাদ বিড়বিড় করে বলে,
“হুম লাকি! খুব লাকি! দুই বোনের যন্ত্রণায় আমি স্যান্ডুইচ হওয়ার পথে! একজনে বিচার দেয়, তারপর দুজনে মিলে পি*টাই করে! এজন্যই হয়তো বলে, বোনের বেস্টফ্রেন্ডের সাথে প্রেম বা প্রেম করার চেষ্টা না করতে!”

আদিরা মারসাদের কথা শোনার চেষ্টা করলো। কিন্তু ব্যর্থ হলো। রিকশা যাওয়ার টুংটাং শব্দে শোনা গেলো না। আদিরা শুধালো,

“কিছু বলছেন?”

মারসাদ ধাতস্থ হলো। বোকার মতো হেসে জবাব দিলো,
“কই না তো। কিছু বলছি না। তুমি বলছিলে কিছু।”

“হ্যাঁ। আপনি শোনেননি?”

“শুনেছি তো। বোন থাকা লাকি। অনেক লাকি!”

“হু। ভাই থাকাও লাকি।”

মারসাদ আদিরার দিকে আঁড়চোখে দেখলো। আদিরা বলছে,
“বড়ো ভাই হলে তো সবসময় বোনকে প্রটেক্ট করে। আর ছোটো ভাই হলে বোনের কাছে নানান আবদার করে। বড়ো বোনকে মায়ের মতো মনে করে। আমার আহাদ। জানেন, ও কী করে?”

“কী করে?”

“আমি গ্রামে গেলে ও আমাকে আসতেই দিতে চায় না। যাওয়ার দুই দিন আগে থেকে আমার ওড়নার কোণা ধরে আঠার মতো লেগে থাকবে। বারবার বলবে, ‘তুমি সত্যি চলে যাবে?’ হাহ্! আমারও তো ওকে আমার কাছে নিয়ে আসতে ইচ্ছে করে। আমি ভাবছি গ্র্যাজুয়েশনের পর একটা চাকরি নিয়ে বাবা-মা, আহাদ সবাইকে নিয়ে আসব।”

মারসাদ হুট করে প্রশ্ন করে বসে,
“তোমার কী চট্টগ্রামেই থাকার ইচ্ছা?”

আদিরা থেমে মারসাদের দিকে তাকালো। তারপর চিন্তা করে বলল,
“তা জানিনা। মানুষের অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যৎ এর সাথে সাথে স্থান, কালও বদলায়। দেখা যাক ভবিষ্যৎ আমাকে কোথায় পৌঁছায়।”

মারসাদ মুচকি হেসে ফের হাঁটা শুরু করলো। সাথে আদিরাও। কিছুক্ষণ পর ওরা হাঁটতে হাঁটতে আদিরার হোস্টেলের কাছে চলে এসেছে। আদিরাকে বিদায় দেওয়ার সময় মারসাদ বলল,
“প্রায় আধ ঘণ্টার মতো হাঁটলাম কিন্তু মনে হচ্ছে পাঁচ মিনিট।”

আদিরা কথার দ্বারা প্রত্যুত্তর করলো না। লাজুক হাসলো শুধু। তারপর হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে হোস্টেলের ভেতর চলে যায়। আদিরা চলে যাবার পর মারসাদ সেখানে মিনিট দুয়েক দাঁড়িয়ে ছিল। রুমে গিয়ে আদিরা জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই মারসাদ হাত নাড়লো। মারসাদ হাত নাড়তেই আদিরা তৎক্ষণাৎ জানালার পর্দা আবার সোজা করে ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বিছানায় বসে পড়লো। তার হৃৎপিন্ডের গতি অস্থির। মেডিকেল সাইন্সের বাইরে বললে এটাকে লজ্জা, অস্থিরতা, ভালোবাসার অনুভূতি বলে। এদিকে মারসাদ আদিরাকে হুট করে আবার পর্দা সোজা করে ফেলতে দেখে মাথা নুইয়ে নিঃশব্দে হাসলো। অতঃপর রিকশা ডেকে উঠে পড়লো।

———

ছোটো পাহাড়ের মতো ঢিবির উপরের মতো স্খানটায় গিয়ে মাহি তার ছবি আঁকার সরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুত ছবি আঁকতে। জায়গাটা ভার্সিটির ভেতরেই কিন্তু এটাকে পাহাড় না বলে ঢিবি বলাই ভালো। ছবিতে সে আজকে এই জায়গাটাই আঁকবে। প্রথমেই প্রথমেই ভবন আঁকা শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর মাহি ছবি আঁকতে আঁকতে একজন তার সামনে স্ট্রবেরিশেক বাড়িয়ে দিলো। মাহি পাশে না ফিরেই মুচকি হেসে তা নিলো। ক্রমাগত কাগজে তুলি ঘুরাতে ঘুরাতে বলল,

“আপনার বন্ধু তো জব করছে। আপনি করবেন না?”

আহনাফ হালকা হাসলো। তারপর বলল,
“মাস্টার্স শেষ হোক। তারপর।”

“কেন আগে করবেন না কেন?”

“তিনটা টিউশনি করাই। তিনটা টিউশনি মিলিয়ে স্টুডেন্ট যদিও ৬-৭ জন। তাতে ভালোই এমাউন্ট আসে। চাকরি করলে প্রথম স্যালারিও এতো দেয় কী না!”

“এজন্য চাকরি করবেন না? টিউশনি তো দাভাইও একটা করায়।”

“করব। তোমার দাভাইয়েরটা আলাদা। সে টিউশনি নেয়, আবার ছাড়ে। এই পর্যন্ত কতোগুলো ছেড়েছে হিসাব নেই! লাস্টে দুটো করাতো। এখন একটা। তার টিউশনি ছাড়ার কারণ হচ্ছে ফিমেইল স্টুডেন্ট! রিসেন্টলি এডমিশন টেস্ট কয়েকটা ভার্সিটিতে বাকি আছে তাই ওই দুইটা মেয়েকে পড়ানো এতোদিন পর ছাড়লো। অনেক রিকুয়েস্ট করেছিল যাতে না ছাড়ে। তাই চাকরির দোহাই দিয়ে ছাড়লো। এখন দুটো ছেলেকে পড়ায় আর চাকরি করে।”

“তো আপনার কাছে মেয়েরা পড়ে না?”

“পড়ে তো। তিনটা মেয়ে।”

মাহি আঁকা থামিয়ে দিলো। তারপর আহনাফের দিকে চেয়ে একটা লুক দিলো, যা দেখে আহনাফ বোকার মতো হেসে বলে,
“রিল্যাক্স। আমি ওদের বলে দিয়েছি আমার একটা আ*গ্নেয়*গিরির সাথে মন দেওয়া-নেওয়া আছে। ওরা খুব ভয় পেয়েছে।”

মাহি এবার হাতের তুলিটা জোড়ে ওয়াশ কৌটাতে রাখলো। তারপর কোমড়ে হাত গুঁজে আহনাফের দিকে তেড়ে গিয়ে শুধালো,
“আমি কী?”

আহনাফ এক পা পিছিয়ে গিয়ে সামান্য ঢোক গিলে বলল,
“কী?”

“আপনি আমাকে কী বললেন?”

“কী..কী বললাম?”

“তোঁতলাচ্ছেন কেন? কী সম্বোধন করেছেন ওদের কাছে?”

“আ…ইস! আইস কুল লেডি। এটাই বলেছি।”

মাহি বাম চোখের ভ্রঁ উঁচু করে ফের শুধায়,
“এটা বলেছেন?”

আহনাফ মাথা উপর নিচে নাড়তে নাড়তে বলে,
“হু হু। এটাই বলেছি। তুমি যদি ভুল শুনো এটাও কী আমার দোষ?”

“ওহ আমি ভুল শুনেছি।”

আহনাফ আবারও মাথা উপর নিচে নাড়ে। মাহি কয়েক সেকেন্ড আহনাফের চোখের দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। তারপর স্ট্রবেরিশেকের স্ট্রতে শেষবারের মতো টান দিয়ে খালি প্লাস্টিকটা আহনাফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে হনহন করে হাঁটা ধরে। আহনাফ অবাক হয়ে মাহির পিছু যেতে যেতে বলে,

“এই আ.. মাহি! সরি। শোনো না….”

মাহি যেতে যেতে জোড়ে বলে,
“যদি ছবি আঁকার জিনিস গুলো ওখানে ফেলে আমার পিছু এসেছেন, তবে বুঝে নিয়েন কিন্তু!”

থেমে যায় আহনাফ। মুখ ভার করে হতাশ হয়ে একবার মাহির চলে যাওয়া দেখে তো আরেকবার পিছনে ঘুরে অর্ধেক আঁকা ছবিটার দিকে তাকায়। অতঃপর হতাশ হয়ে ছবিটার দিকেই এগিয়ে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৩
সারাদিন বৃষ্টি। একবার মুষলধারা তো আরেকবার ঝিরিঝিরি। সমুদ্রে নিম্নচাপের কারণেই এতো বৃষ্টি হচ্ছে। প্রকৃতিতে শরৎ ঋতু তার রূপে আত্মপ্রকাশ করতে না করতেই গ্রীষ্ম, বর্ষা আবার নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে ব্যস্ত। হোস্টেলে অলস বসে আছে সুমি, মৌমি, রাত্রিরা। সুমি ও মৌমি কিছু ডাউনলোড করা চাইনিজ সিরিজ দেখছে কিন্তু রাত্রি উপুর হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবনায় খোয়ে আছে। সুমি ড্রামা দেখতে দেখতে রাত্রিকে খেয়াল করে। অতঃপর প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কী রে? তুই এভাবে শুয়ে আছিস কেন?”

রাত্রি অনড়ভাবে জবাব দিলো,
“ভালো লাগছে না তাই।”

“বৃষ্টির জন্য?

“না।”

“তবে?”

রাত্রি উঠে বসলো। তারপর হতাশ স্বরে বলল,
“আমি জানলে কখোনোই এসবে জড়াতাম না। আমি তার মিথ্যাকে বিশ্বাস করে ফেলেছিলাম।”

এবার সুমির সাথে সাথে মৌমিও কৌতুহলী হলো। মৌমি ফোন হাত থেকে নামিয়ে রেখে রাত্রিকে উৎসাহী হয়ে শুধালো,
“কাল না তুই তোর অনলাইন বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে জিইসি মোড়ের দিকে গেছিলি? কেমন গেলো তোদের ফার্স্ট ডেট?”

সুমিও বলল,
“হ্যাঁ তাই তো। তারপর সেখান থেকেই টিউশনিতে গেছিলি বলেছিলি। এসে ঘুমিয়ে গেলি। বললি না তো প্রথম দেখা কেমন ছিল?”

রাত্রি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“সে আমাকে মিথ্যা বলেছে। সে চুয়েট থেকে পড়াশোনা করেনি।”

“হ্যাঁ? তবে?”

“সে চবিতেই পড়ে। আমরা তাকে চিনিও।”

সুমি ও মৌমি অবাক হলো। ফের শুধালো,
“আমরা চিনি? কে সে?”

“নিলয়। সাগরদের সাথের নিলয়।”

“কী!”

সুমি ও মৌমি একসাথে চিৎকার করে উঠে। তারপর দুজনেই নিজেদের মুখ চেপে ধরে রাত্রির কাছে এগিয়ে এসে ফিসফিস করে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“নিলয়! ও কি তোর সাথে খারাপ কিছু করেছে? কত্তো বড়ো ফ্র*ড এরা! ছিহ্!”

“না, আমার সাথে খারাপ কিছু করেনি। কিন্তু…”

“কিন্তু কী?”

“সে জানতো আমি রাত্রি। জেনে শুনেই আমাকে এপ্রোচ করেছে।”

সুমি চিন্তিত হয়ে বলে,
“জেনেশুনে যেহেতু এপ্রোচ করেছে, তার মানে কোনো উদ্দেশ্য তো আছেই। ওই গ্রুপের কেউ আমাদের সহ্যই করতে পারে না। সেখানে তোকে এপ্রোচ করা মানে কোনো প্ল্যান তো আছেই।”

মৌমি বলে,
“শোন, তুই ভয় পাবি না। নিলয় তোর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আমরা আহনাফ, মারসাদদের জানাবো ব্যাপারটা।”

রাত্রি মৌমির কথা শুনে তাড়াতাড়ি অনুরোধ করে বলে,
“প্লিজ ওদের জানাস না। আমি নিলয়ের সাথে সম্পর্ক শেষ করে দিয়েছি। কালকেই আমি ও-কে ব্লক করেছি। মারসাদরা জানলে ঝামেলা করবে। সব শান্ত আছে, ভালো আছে। আর ঝামেলা লাগানোর দরকার নেই। আমার জন্য তো আরও আগে দরকার নেই।”

“কিন্তু পরে যদি ওরা ঝামেলা করে?”

“ওরা করলে সেটা পরে দেখা যাবে। আমি এই বিষয় নিয়ে ঘাটাঘাটি চাই না। অনলাইনে পরিচয় ছিল। তাই ব্যাপারটা অনলাইনেই সমাধান করা ভালো। আমাদের মাস্টার্স শেষ হতে আর দেড় বছরেরও কম সময় বাকি। এখান থেকে চলে গেলে নিলয় কখোনো আমাকে খুঁজেও পাবে না।”

সুমি ও মৌমি একে-অপরের দিকে চেয়ে রাত্রিকে এই বিষয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা না করার সিদ্ধান্ত নিলো।

———–
“মুড খারাপ তোর?”

সাবিহা মাহিকে প্রশ্ন করে মাহির দিকে উত্তরের আশায় চেয়ে আছে। সাবিহার সাথে সাথে আদিরা, রিন্তিও। মাহি ও আদিরার মধ্যে সব ঠিক হয়ে গেছে। তবে মাহি এখন সতর্ক থাকে যাতে করে তার ভাইয়ের টপিক না উঠে। মাহি আইসক্রিম খেতে খেতে জবাব দেয়,

“না তো।”

“তাহলে এতো আইসক্রিম খাচ্ছিস কেন?”

“মাত্রই তো তিন কাপ খেলাম। আর এগুলো এখন আর আইসক্রিম নেই। চকলেট শেক হয়ে গেছে!”

রিন্তি সাবিহাকে পূর্ব দিকে তাকাতে ইশারা করে। সাবিহা পূর্ব দিকে তাকায়। দেখে আহনাফ ও রাফিন কিছুটা দূরে অনবরত হাঁটছে। রিন্তি তাকাতেই আহনাফ হাত জোড় করার মতো দেখায়। বিষয়টা রিন্তি ঠিক বুঝতে পারে না। সে জিজ্ঞাসা করে বসে মাহিকে।

“আচ্ছা মাহি, আহনাফ ভাই ও তোর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে?”

“না তো।”

“তাহলে উনি এভাবে উঁকিঝুঁকি করছেন কেন?”

মাহি একবার তাকালো সেদিকে। তারপর বিরক্তি কণ্ঠে বলল,
“সেটা উনাকেই জিজ্ঞাসা কর। আমি কীভাবে জানব, উনি কেন এমন করছেন!”

সাবিহা উঠে আহনাফ ও রাফিনের কাছে গেলো। সাবিহাকে আসতে দেখে রাফিন জিজ্ঞাসা করে,

“মাহির রাগ ভেঙেছে?”

“না মনে হয়। কিন্তু হয়েছে কী? আইসক্রিম যে হারে খাচ্ছে!”

আহনাফ বলে,
“আমার স্টুডেন্ট আজকে চবিতে ঘুরতে এসেছিল। এসে আমাকে দেখেই ছুটে এসে এক প্রকার বায়না করা শুরু করেছে তাকে এবং তার বান্ধবীদের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখাতে হবে। তখন আমার পাশে মাহি ছিল।”

“ওও.. তো আপনি মেয়েটাকে ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখিয়েছেন?”

“হু। কিছুক্ষণ দেখিয়ে বলেছি নিজেরা দেখে নাও। আমার কাজ আছে।”

“মাহি সাথে গিয়েছিল?”

“না। ও তো তখনি চলে এসেছে।”

সাবিহা মিনমিন করে বলে,
“এজন্যই এতো আইসক্রিম খাচ্ছে!”

“কিছু বললে?”

“না না। আমি দেখছি। আপনি চিন্তা করবেন না। ও একটু জেলাস আরকি। ঠিক হয়ে যাবে, ভাইয়া।”

এই বলে সাবিহা আবার তার বান্ধবীদের কাছে চলে আসে। তারপর আদিরা ও রিন্তিকে কানেকানে সবটা বলছে। মাহি আড়িপেতে শুনতে চাইলে ওরা আরেকটু সরে যায়। মাহি তারপর মুখ বাঁকিয়ে নিজের আইসক্রিম খাওয়াতে মন দেয়।

———-

“ওই মারসাদ এবার বেশি করতাছে। আমারে বারবার পু*লিশের দৌঁড়ানি দেওয়াইতাছে। ওই মাইয়ার লইগ্যা তার এতো কীসের পিরিত?”

দেলোয়ারের কথা শুনে সাগর সি*গরে*টে সুখ টান দিতে দিতে কিছু চিন্তা করলো। তারপর ফট করে বলে উঠলো,
“কি*ডন্যা*প করো আদিরাকে!”

“কি*ডন্যা*প?”

“হু। মারসাদ সারাদিন অফিসে থাকে। তাই কি&ডন্যা*প করতে তেমন ঝামেলা হবে না। আদিরা দুপুরের পর যখন ক্যাম্পাস থেকে বের হয়, তখনি উঠিয়ে নিবে। তারপর সুযোগ বুঝে বিয়ে করে ফেলবে!”

সাগরের বুদ্ধিটা দেলোয়ারের মনে ধরলো। সে সহাস্যে বলল,
“ভালা বুদ্ধি দিছেন। এই ফুলকলিরে পাওয়ার লইগ্যা এইডা ছাড়া উপায় নাই। অনেক জ্বা*লা*ইছে ওই মারসাদ। একবার বিয়াটা কইরা ফালাইলে সব তেজ বাইর হইয়া যাইব!”

“তাহলে ব্যবস্থা করে ফেলো। তাড়াতাড়ি কাজটা করো।”

তারপর দেলোয়ার সব ব্যবস্থা করতে চলে যায়। দেলোয়ার যেতেই নিলয় সাগরের কাছে এসে বলে,
“আদিরাকে কিডন্যাপ করলে মারসাদের কী লস? তার থেকে ভালো রুহুল আমিনের দেওয়া কাজটা করার চেষ্টা কর। মারসাদকে কোনোভাবে গা*য়েব করে দিলেই তো হয়! তারপর মারসাদের বাবা তার ব্যবসার দায়িত্ব রাকিবকে বুঝিয়ে দিবে। মারসাদ না থাকলে রাকিব ছাড়া আর তো কোনো অপশন থাকবে না উনার কাছে।”

সাগর শ*য়তা*নি হেসে বলে,
“গায়েব করতেই তো! আদিরার পেছনে মারসাদ যাবেই। এক ঢি*লে দুই পা*খি শি-কার। তুই খালি দেখতে থাক।”

তারপর নতুন আরেকটা সি*গ*রেট ধরালো সাগর। নিলয় ভাবছে, এতে যদি কাজ না হয়? তবে কী হবে!

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।
#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩৪
আদিরা ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে হোস্টেলের উদ্দেশ্যে হাঁটছে। হঠাৎ তার সামনে একটা মাইক্রোবাস থামলো। আদিরা চকিতে থামলো। সে কিছু বুঝে উঠার আগেই গাড়ির ডোর খুলে তাকে কেউ মুখে রুমাল চেপে ধরে এক টানে গাড়ির ভেতরে তুলে নিলো। জ্ঞান হারালো আদিরা। রাস্তায় পড়ে রইল আদিরার ব্যাগ। তার জ্ঞান যখন ফিরলো তখন তার সামনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। হাত-পা নাড়াতে গিয়ে বুঝতে পারলো সে বন্ধি! চেয়ারের সাথে তার হাত-পা মোটা দ*ড়ি দিয়ে বাঁ*ধা। তৎক্ষণাৎ আদিরার মনে পড়লো হঠাৎ যখন তার সামনে মাইক্রোবাসটি এসে থেমেছিল। ঘাবড়ে যায় আদিরা। চিৎকার করে সাহায্যের জন্য ডাকতে থাকে। কয়েকবার চিৎকার করে ডাকার পর হঠাৎই তার মাথার উপরের বাল্বটি জ্ব*লে উঠে। চোখ-মুখ কুঁচকে নেয় আদিরা। আলো সহনশীল হওয়ার আগেই কারও পায়ের শব্দ পায়। পিটপিট করে চোখ খুলে দেখতে চেষ্টা করে সে।

“এতো চিল্লাচিল্লি করো কেন, ফুলকলি? আমাগো বিয়া হইব তো। একটু পরেই কাজি আসবো। তারপর আমাগো বিয়া পড়াইব। এতো অস্থির হইয়ো না।”

আদিরা কণ্ঠস্বর চিনতে পারে। ভয়ে এখন তার হাত-পা কাঁপছে। দেলোয়ার তাকে বিয়ে করতে উঠিয়ে নিয়ে এসেছে? সে কি তবে এখান থেকে বাঁচতে পারবে না? এসব মনে আসতেই সে চিৎকার করে অনুরোধ করে কাঁদতে থাকে,

“প্লিজ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন। আমি কারও কোনো ক্ষতি করিনি। আমাকে যেতে দিন। প্লিজ। আমি কাউকে বলব না কি*ডন্যা*পের কথা। তাও আমাকে ছেড়ে দিন। আমি…আমি চলে যাব এই শহর থেকে। কখোনো আসব না এই শহরে। আমাকে যেতে দিন, ভাই। দয়া করুন।”

আদিরা এতো কাকুতি-মিনতি কিছুতেই মন গ*ললো না দেলোয়ারের। সে বিশ্রি হেসে বলে,
“তুমি যতোই ফড়ফড় করো, আইজকা তোমার ছাড় নাই। অনেক তোমার পিছে ঘুরছি। তোমার ওই মারসাদ আশিকের লইগ্যা দইম্মা আছিলাম। এইবার যহন বাগে পাইছি, কেমনে তোমারে যাইতে দেই? কও তো, ফুলকলি! তোমার ওই পেয়ারের মজনু এইহানে আইতেও পারতো না। হে তো এখন অফিসে কাম করে। অতো সময় নাই হের। আর তোমারে আনার সময় কেউ খেয়ালও করে নাই।”

“আমাকে ছেড়ে দিন। দয়া করে ছেড়ে দিন। আমি আমার গ্রামে চলে যাব। প্লিজ প্লিজ।”

দেলোয়ার এবার ধ*মকে উঠে,
“চুপ! আর এই পিলিজ পিলিজ করবা না। আমার দয়ার শ*রীর! কিন্তু আমি এহন তোমারে দয়া করতে পারতাম না। একটু পর বিয়া হইব আমাগো। তারপর তোমার সব কথা শুনমু। এহন চুপ কইরা থাকো। নাইলে হাত-পায়ের মতো মুখটাও বন্ধ কইরা দিমু। বুঝছো?”

আদিরা মানে না। কাকুতিমিনতি করে কাঁদতেই থাকে। শেষে দেলোয়ার তার মুখে কস্টেপ লাগিয়ে দেয়।

——

আদিরাকে মাইক্রোতে করে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় মারসাদের এক জুনিয়র দেখেছে। যাকে মারসাদই ভার্সিটি খোলার পর আদিরার উপর নজর রাখতে বলেছে। নজর বললে ভুল হবে। আদিরাকে দেলোয়ার বা কেউ কোনো রকম বিরক্ত করলে তুহিন নামের ছেলেটা তা মারসাদকে জানাবে সে। ছেলেটা আদিরার ডিপার্টমেন্টেই আদিরার এক ইয়ার সিনিয়র। সে মাইক্রোটার পিছু করতে করতে নাম্বার প্লেট নোট করেছে। অনেকখানি পর্যন্ত সে বাইকে করে পিছুও করেছে কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাঁকের কারণে আর দেখতে পায়নি।

তুহিন মারসাদ ও তার বন্ধুদেরকে আদিরার কি*ডন্য*পিংয়ের বিষয়ে জানিয়ে দিয়েছে। পুলি*শ এখন মাইক্রোর নাম্বার ট্র্যাক করে দেলোয়ার পর্যন্ত পৌছানোর ট্রাই করছে। পু*লিশ চেকপোস্ট গুলোতেও চেকিং হচ্ছে। মারসাদ ও তার বন্ধুরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যতোটুকু পর্যন্ত তুহিন মাইক্রোটাকে ফলো করতে পেরেছিল, তার পর থেকে খুঁজছে। মারসাদ আহনাফকে কল করে,

“ওদিকে পেয়েছিস?”

“না। এদিকে নেই। তুই পেয়েছিস?”

“এখনও না।”

“পু*লিশ লোকেশন হয়তো এতক্ষণে ট্র্যাক করে ফেলেছে। পু*লিশ বলার পর সামনে আগাবো।”

“আমি কল করে দেখি।”

মারসাদ তারপর পু*লিশকে কল করে। পু*লিশ কিছুক্ষণ পর মারসাদকে একটা লোকেশন দেয়, যেখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল এড়িয়া। মারসাদ যেই রোডে গেছে, সেদিকেই। অতঃপর সবাই সেদিকে খোঁজা শুরু করে।

———

“কন্যার নাম কী?”

কাজি আদিরার নাম জিজ্ঞাসা করলে দেলোয়ার বলে,
“আদিরা।”

“পুরা নাম বলেন। সাথে বাবর নাম, ঠিকানা সব বলেন। আর ভোটার আইডিকার্ড দেন।”

দেলোয়ার এবার আদিরার দিকে ঘুরে তাকায়। আদিরাকে এখনও হাত-পা, মুখ বেঁধে বসিয়ে রাখা হয়েছে। দেলোয়ার এক টান দিয়ে আদিরার মুখ থেকে কস্টেপ খুলে জিজ্ঞাসা করে,

“তোমার পুরা নাম কও, ফুলকলি। আর তোমার বাপ মানে আমার শশুর আব্বার নাম কি? তোমাগো গ্রামের ঠিকানা কও।”

আদিরা চুপ করে খিঁচে বসে থাকে। তার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হয় না। দেলোয়ার আরো একবার আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে। কিন্তু আদিরা এইবারও চুপ। কাজী সাহেব তাড়া দিলে দেলোয়ার ধ*মকে বলে,

“এতক্ষণ তো চিল্লাচিল্লি কইরা আমার কানের পো*কা মা*ইরা ফেলতাছিলা! এখন কি তোমার মুখের মধ্যে বো*বায় ধরছে? কথা কও না কেন? যা জিগাইতাছি তার জবাব দাও না কেন?”

আদিরা ভয় পেয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়। অনবরত কাঁদছে সে। কাজি সাহেব আদিরার অবস্থা দেখে কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,

“আমি আগেই বলেছিলাম, মেয়ে রাজি না থাকলে কিন্তু বিয়ে হবে না। মেয়ের পরিবারও তো…”

“এই কাজি, চুপ! তোর কাম বিয়া পড়ানি, তুই বিয়া পড়াইবি। এত দিকে কথা কইতে যাস কেন? চুপচাপ বিয়া পড়া।”

কাজি ভয়ে ফের কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
“পড়াইতেছি। কিন্তু মেয়ের জন্ম, পরিচয় সব তো লাগবে। আপনি না হয় আমাকে মেয়ের ভোটার আইডি কার্ডটাই দেন।”

দেলোয়ার কিছুটা ভাবে। আদিরার ব্যাগটা তো রাস্তাতেই ফেলে এসেছিল। এখন আদিরা মুখ না খুললে, ভোটার আইডি কার্ডই বা পাবে কোথায়? রাগে এখন মা*থা খারাপ হচ্ছে তার। সে এবার আদিরার গাল খুব শক্ত হাতে চেপে ধরে আদিরাকে নিজের দিকে ঘুরায়। আর বলে,

“তুই তোর নাম পরিচয় কইবি না?”

আদিরা মুখের ব্যাথায় কা*কিয়ে উঠে। কোনোমতে জড়ানো স্বরে উত্তর দেয়,
“না! বলব না।”

“ঠিক আছে! কাজি সাহেব, নাম পরিচয় ছাড়াই বিয়া পড়ান!”

“কিন্তু…নাম পরিচয় ছাড়া তো বিয়া হয় না!”

দেলোয়ার এবার রক্ত চক্ষু নিয়ে কাজির দিকে তাকায়। আর রাগান্বিত স্বরে বলে,
“আপনারে যা করতে কইছি করেন। বেশি কথা কইলে এইখান থেকে বাড়িতে ফি*রতে পারবেন না।”

কাজি ভয়ে কোনো উপায় না পেয়ে দেলোয়ারের কথা মতো কাজ করতে লাগলো। আদিরা অতিরিক্ত নড়চড় করার চেষ্টা করলে দেলওয়ার ওর মুখ থেকে হাত সরিয়ে নেয়। দেলোয়ার হাত সরানো মাত্রই আদিরা দেলোয়ারের দিকে একদলা থুথু ছুঁ*ড়ে মা*রে আর নিজের ভেতরকার রাগ, জেদ, ঘৃণার সহিত বলে,

“তুই কখনোই আমাকে বিয়ে করতে পারবি না! যেমনে তুই বিয়ে পড়াতে বলতেছিস, তেমনে বিয়ে হয় না। তুই খালি আমার অর্ধেক নাম ছাড়া আর কিচ্ছু জানিস না। তুই এখন আমাকে দিয়ে যেখানে খুশি সাইন করিয়ে নিলেও বিয়ে হবে না।”

দেলোয়ার রেগে ঠা*স করে আদিরার গা*লে চ*ড় মা*রে। আদিরার গা-লে পাঁচ আঙু*লের ছাঁপ পড়ে যায় তাতে। দেলোয়ার হিসহিসিয়ে বলে,
“তাইলে তোর সাথে বিয়া ছাড়াই বা-স*র করি? কী বলোস? এইডা একটা ঝা*ক্কাস আইডিয়া। তারপর তোরে দুনিয়ার কোনো পোলা বিয়া করব না। তহন আমার কাছেই আইতে হইব।”

আদিরার মনে ভয়ের তীব্রতা বাড়ছে কিন্তু তার মনে উথলে উঠা ঘৃণার কাছে তা প্রায় হার মেনে নিচ্ছে।
“তোর মত ল*ম্প*ট তো এগুলাই করতে পারে! ম*রে যাব তাও তোরে জিততে দিব না। তোর মুখ দেখলেই ঘেন্না হয়।”

আদিরার চু*লের মু*ঠি খিঁচে ধরে দেলোয়ার। আদিরা তার লা*ভায় নেয় ফুলে ফেঁপে উঠা রাগ ও ঘৃণা সম্বলিত র*ক্তচ*ক্ষু নিয়ে দেলোয়ারের দিকে চেয়ে থাকে। দেলোয়ার তা দেখে বিশ্রি হেসে বলে,

“তোরে বিয়া কইরা সম্মান দিতে চাইছিলাম। কিন্তু তুই সেই সম্মানের যোগ্য না! তাই তোরে আমি মা*রমু না! কিন্তু তুই প্রতিদিন ম*র*বি।”

দেলোয়ারের ইশারা পেয়ে দেলোয়ারের লোকেরা কাজিকে সেখান থেকে নিয়ে যায়। তারপর পরিত্যাক্ত এই গোডাউনের বাইরে বের করে দেয়। আর বলে দেয় যেন কারও কাছে মুখ না খোলে।

——-

শুনশান রাস্তা দিয়ে হঠাৎ এক পাজামা-পাঞ্জাবি ও লাল-সাদা স্কার্ফ পরিহিত মুরব্বীকে আসতে দেখে মারসাদ ও তার বন্ধুরা এগিয়ে যায়। মুরুব্বীকে থামিয়ে মারসাদ তার ফোনে আদিরার ছবি দেখিয়ে মুরুব্বীকে জিজ্ঞাসা করে,

“চাচা, এই মেয়েটিকে এখানে কোথাও দেখেছেন? কেউ এই মেয়েটিকে কি*ডন্যা*প করে নিয়ে এসেছে।”

মুরব্বী আদিরার ছবি দেখে আরও ঘাবড়ে যায়। সে অস্থিরতার সাথে জবাব দেন,
“না বাবা, আমি এই মেয়েরে কোথাও দেখি নাই। আমি কিছু জানিনা। আমারে যাইতে দাও, বাবা!”

মুরুব্বীর চোখে মুখে অস্থিরতা ও ভয় দেখতে পেয়ে মারসাদ ও তার বন্ধুরা কিছুটা আন্দাজ করে। আহনাফ বলে,
“চাচা, আমাদের সাথে পু*লিশও আছে। কিছুক্ষণ পর পু*লিশের গাড়িও এদিকে চলে আসবে। মেয়েটাকে যারা কি*ডন্যা*প করেছে আমরা সেই গাড়ির লোকেশন ট্র্যাক করেই এদিকে এসেছি।”

মুরুব্বীটি এবার মাটিতে বসে পড়ে মারমাদের পা ধরতে চায়। তৎক্ষণাৎ মারসাদ পিছিয়ে যায়। মুরুব্বীটি বলেন,
“আমারে মাফ কইরা দাও, বাবা। আমি তোমাগো কিছু কইলে আমারে ওরা মা*ইরা ফেলবে। আমার দুইটা মেয়ে আছে। বিয়ের উপযোগী হয়ে গেছে। মাফ করো আমারে।”

মারসাদ মুরুব্বীকে উঠায়। তারপর বলে,
“আপনি ভয় পাবেন না। ওদের সবাইকে পু*লিশের স্পেশাল হেফাজতে নেওয়া হবে! ওরা আপনার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। আপনি শুধু বলেন, এই মেয়েটাকে কোথায় দেখেছেন।”

অতঃপর মুরুব্বীটি মারসাদ ও তার বন্ধুদেরকে জায়গাটা দেখিয়ে দেয়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে