এক শহর প্রেম_২ পর্ব-২৬+২৭+২৮

0
6

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৬
মাহির মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি খেলে। সে আহনাফকে কানে কানে কিছু বলে। আহনাফ হ্যাঁ বোধক ইঙ্গিত দিলে মাহি হুট করে বলে উঠে,

“জানিস দাভাই, এই প্ল্যানটা কে করেছিল? আদিরা! আদিরাই তো আমাদের এই প্ল্যানটা দিয়েছিল। আমরা তো চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম যে কিভাবে তোর খবর পাওয়ার যায়।”

মাহির কথা শুনে আদিরা হকচকিয়ে উঠলো। বড়ো বড়ো চোখ করে হতবাক হয়ে মাহির দিকে চেয়ে আছে। মারসাদও অবাক হয়ে আদিরার দিকে তাকায়। আদিরা দৃষ্টি সামান্য ঘুরিয়ে মারসাদের দিকে তাকাতেই মারসাদকে তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে দেখে দ্রুত নজর সরিয়ে অপ্রস্তত কণ্ঠে বলে,

“আমি কোনো প্ল্যা..ন করিনি। শুধু…”

“আমরা বুঝি আদিরা। তুমি খুব চিন্তায় ছিলে। স্বাভাবিক।”

মৃদুলের কথা শুনে আদিরা আরেক দফা অবাক ও সাথে তার এখন কান্না পাচ্ছে। তখনই হঠাৎ আদিরা কিছু বুঝে উঠার আগেই তার হাতে টান পড়লো। হাতে টান দেওয়া ব্যাক্তিটির মুখের দিকে তাকানোর আগের ব্যাক্তিটি তাকে টেনে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে। আদিরা যেতে যেতে নিজের হাতের দিকে একবার দেখছে তো আরেকবার পিছনে ঘুরে তার ফ্রেন্ড ও সিনিয়রদের উচ্ছাসিত মুখ দেখছে। যারা কীনা তাকে আবার টাটাও দিচ্ছে!

কিছুটা দূরে সমুদ্রতটে নিয়ে আদিরার হাত ছাড়লো মারসাদ। তারপর সামনের দিকে তাকিয়ে পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়ালো। দুজনের মাঝে নিরবতা। সমুদ্রে ভাটার সময় চলছে গ*র্জনও শোনা যাচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙে মারসাদ বলে,

“আমি হারিয়ে গেলেই বা তোমার কী?”

আদিরা চট করে মারসাদের দিকে তাকালো। অন্ধকারে মুখ বোঝা না গেলেও এটুকু সে বুঝতে পারলো, মারসাদ এখনও সামনের দিকেই তাকানো। আদিরা মৃদু স্বরে বলল,

“মাহি আপনার জন্য খুব চিন্তা করছিল।”

“মাহি চিন্তা করছিল বলে?”

“হু। আর মাহি বলেছিল, আপনার মাও আপনাকে ফোনে পাচ্ছে না।”

“ওহ আচ্ছা। কিন্তু তাদের নিয়েও তোমার চিন্তা করার কোনো কারণ তো দেখি না। আমার পরিবার, আমি বুঝো নিব।”

মারসাদের কথার বিপরীতে আদিরা কিছু বলতে পারলো না। এক পা দিয়ে বালুতে খুঁ*চাতে খুঁ*চাতে ছোটো গর্ত করছে। আদিরার বিপরীতে এই চুপ করে থাকাটা মারসাদের পছন্দ হলো না। সে আদিরার বাহুতে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে প্রায় অনেকটা ঝুঁকে আসে আদিরার মুখের উপর। অপ্রস্তুত হয় আদিরা। অতঃপর পিছিয়ে যেতে চাইলে মারসাদ তাকে শক্ত করে ধরে রাখে। মারসাদ বলে,

“এতো ছটফট করছ কেন? আমি বা*ঘ না ভা*ল্লুক?”

মাথা নুইয়ে নড়াচড়া বন্ধ করে যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত রাখতে চাইছে সে। মারসাদ আসমানের দিকে তাকিয়ে লম্বা করে শ্বাস নেয়। তারপর প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“তোমার দৃষ্টিতে আমি কেমন ছেলে? খারাপ না ভালো?”

আদিরা আবারও চুপ! মারসাদ বিরক্ত হয়ে ভ্রু কুঁচকে আদিরার বাহুতে মৃদু ঝাঁকুনি দিয়ে বলে,
“বলো!”

তৎক্ষনাৎ আদিরা ফটাফট জবাব দেয়,
“ভালো! ভালো!”

উত্তর শুনেও মারসাদের ভ্রুদ্বয় কুঁচকানোই রইল।
“তাহলে আমাকে এতো ভয় পাও কেন?”

“জানিনা।”

মারসাদ আদিরাকে ছেড়ে আবার সমুদ্রপানে চাইলো। সম্মুখে দুই কদম এগিয়ে গেলো। অতঃপর বলল,
“বাহ! জানোনা কিন্তু ভয় পাও! ইন্টারেস্টিং।”

আদিরাও দৃষ্টি উঁচু করে মারসাদের দিকে তাকালো। অন্ধকারে থাকতে থাকতে এখন চোখে অন্ধকার সয়ে গেছে আদিরার। পেছন থেকে সমুদ্রতটে দাঁড়ানো কালো শার্টে মারসাদকে বেশি ভালো লাগছে। নিজের অজান্তেই মৃদু হাসলো আদিরা। কাউকে তার অগোচরে এভাবে দেখাটা কি অনুচিত? যদি আবার তার সাথে কোনো বন্ধন না থাকে! কিয়ৎ চিন্তায় পড়লো আদিরা। ভার্সিটির সিনিয়র! ফ্রেন্ডের ভাই! এগুলো নিশ্চয়ই কোনো বন্ধন না কারো দিকে তার অগোচরে অপলক চেয়ে থাকতে!

আদিরার এই আকাশকুসুম ভাবনার মাঝে ছেদ ঘটালো মারসাদ। সে বলল,
“ভালোবাসো আমাকে?”

চমকে উঠে আদিরা। হতবাক দৃষ্টিতে মারসাদের দিকে চেয়ে থাকে। প্রায় মিনিট খানেক পেরিয়ে গেলে মারসাদ অধৈর্য হয়ে আবারো জিজ্ঞাসা করে,
“বলো ভালোবাসো আমাকে?”

আদিরার এবারে ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে এক কদম করে পেছোচ্ছে। মারসাদ তা বুঝতে পেরে হেসে উঠে। আদিরা মারসাদের হাসি শুনে থামে। মারসাদ বলে,

“ভালবাসতে হবে না আমাকে! ভালোবাসার ক্ষেত্রে তুমি মুক্ত। জোর করে বা আবদ্ধ করে ভালোবাসা হয় না। সরি ফর বোদার ইউ।”

কথাগুলো বলে মারসাদ মলিন হাসে। যা অন্ধকারে আড়ালে রয়ে যায়। এরপর মারসাদ সমুদ্রের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। ভাটার কারণে অনেক দূর পর্যন্ত শুকনো এখন। চাঁদের আলো দূরের সমুদ্রের পানিতে বেশ মায়াবি ভাবে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর মারসাদকে আর দেখা গেল না। আদিরা বালুর ওপর হাঁটু ভাঁজ করে বসলো। মারসাদের বলা প্রতিটা কথা তার মানসিক শান্তি কেড়ে নিচ্ছে। তাই নিরবতার মাঝে মনের শান্তি খোঁজার চেষ্টায় সে।

প্রায় অনেকটা সময় পর বাঁশির শব্দ শোনা যাচ্ছে। এখন সমুদ্রে জোয়ার আসার সময় হয়ে আসছে। আদিরার ফোন বেজে উঠলো। কাঁধের ছোটো ট্রাভেল ব্যাগ থেকে ফোন বের করে দেখলো সাবিহা কল করেছে। আদিরা কল রিসিভ করে বলে,

“হু”

“কই তোরা?”

“আমি সমুদ্র পাড়ে বসে আছি।”

“আচ্ছা। ওখানে থাক। আমরা আসছি।”

সাবিহা কল কেটে দেওয়ার পর আদিরা ফোনটা আবার ব্যাগে ঢুকিয়ে রাখে। হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে হাঁটুতে মুখ গুঁজে অদূরে চেয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর সাবিহা, মাহি, সুমি, আহনাফরা চলে আসে। মাহি বলে,

“তুই এখানে এভাবে বসে আছিস কেন?”

“এমনি। ভালো লাগছিল।”

“চল তাহলে। তুই যেখানে বসেছিস, এর থেকেও বেশি জোয়ারের পানি আসে। উঠ। আর দাভাই কই?”

আদিরা হাতের ইশারায় সামনের দিকে দেখিয়ে বলল,
“ওদিকে গিয়েছে প্রায় অনেকক্ষণ আগে।”

আদিরার কথা শুনে আহনাফ বলে উঠে,
“সমুদ্রের দিকে?”

তদ্রুপ মৃদুল বলে,
“ভাটার সময় গিয়েছে। এখন জোয়ারের সময় হয়ে আসছে। রাফিন, কল কর তো ও-কে।”

রাফিন মারসাদকে কল করলো। কিন্তু কল রিসিভ হলো না। পরপর আরও দুই বার কল করলো। তাও রিসিভ হলো না। রাফিন চিন্তিত স্বরে বলল,
“ফোন ধরছে না তো। রিং হয়েই যাচ্ছে।”

আশিক বলে,
“হোটেলে ফিরে গিয়েছে কি না? হোটেলে কল করে দেখি।”

এরপর আশিক হোটেলেও কল করে। হোটেল থেকে জানায় মারসাদ ফেরেনি মানে তার রুমের চাবি এখনও রিসিপশনে। আশিক বলে,
“হোটেলেও ফেরেনি!”

সবাই এবার চিন্তা করা শুরু করলো। দুইজন দুইজন করে আশেপাশে খুঁজতে লাগলো। তখনই আদিরার মনে ভয় ঢুকতে শুরু করে। তার আবারও মারসাদের বলা শেষের কথাগুলো মনে পড়তে থাকে। সেই সাথে মারসাদ ভাটার সময় সমুদ্র অভিমুখে গিয়েছিল। তবে কী মারসাদ! আদিরা হুট করে উঠে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের দিকে ছুট লাগালো। আদিরার আশেপাশে রাত্রি ও সুমি ছিল। রাত্রি পিছনে ঘুরে আদিরাকে সমুদ্রের দিকে ছুটে যেতে দেখে চিৎকার করে ডাক দিল,

“এই আদিরা, তুমি ঐদিকে কোথায় যাচ্ছ? আর কয়েক মিনিট পর জোয়ারের সময় চলে আসবে। ওদিকে যাচ্ছ কেন?”

কিন্তু আদিরা রাত্রির ডাক শোনে না। সে ছুটতে লাগলো সমুদ্রের দিকে, যেদিকে সে মারসাদকে যেতে দেখেছে। রাত্রির চিৎকার মাহি ও আহনাফও শুনে। মাহি আহনাফকে বলে,

“কী হলো? রাত্রি আপু আদুকে ডাকলো মনে হলো?”

“আমিও শুনলাম। চলো গিয়ে দেখি।”

ওরা দুজনে দ্রুত রাত্রি ও সুমির কাছে যায়। মাহি ওদেরকে শুধায়,
“আদু, কই?”

রাত্রি ব্যতিব্যস্ত হয়ে উত্তর দিলো,
“সমুদ্রের দিকে দৌড় দিয়েছে ও। ওই দেখো, একটা মেয়ে দৌড়ে যাচ্ছে, ওটাই।”

আহানাফ কিছু না বলেই দ্রুত আদিরা যেদিকে গেছে সেদিকে দৌঁড় দিলো। সাথে মাহিও। সুমি অস্থির হয়ে বলছে,
“আর এক দুই মিনিট আছে। বাঁশি বাজিয়ে তো ওরা সময় বলেছিল। এখন কী হবে?”

“জোয়ার তো আস্তে আস্তে শুরু হবে। এরইমধ্যে ওরা ঠিক দুইজনকে ফিরিয়ে আনবে। দোয়া করতে থাক।”

প্রায় মিনিট খানেক পর আহনাফ দৌঁড়ে প্রায় আদিরাকে ধরেই ফেলেছে। আহনাফ চিৎকার করে বলছে,
“আদিরা, আর দূরে যেও না। জোয়ার শুরু হয়ে গিয়েছে।”

আদিরা পরিচিত স্বর শুনে পেছনে তাকায়। তারপর আহনাফের কাছে এসে চোখ মুছতে মুছতে বলে,
“ভাইয়া, আপনার বন্ধুর কোনো খোঁজ পেলেন? আমি এতদূর এলাম, উনাকে পেলাম না। কোথায় উনি?”

“পেয়ে যাব। তুমি চিন্তা করো না। তুমি আগে ফিরে চলো।”

এই বলে আহনাফ আদিরার হাত ধরে টেনে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে নিলে আদিরা জোরপূর্বক নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে চিৎকার করে বলে,
“না! আমি যাব না। উনি এদিকেই এসেছেন। আমি দেখেছি। উনাকে না নিয়ে আমি ফিরে যাব না।”

“পা*গলামি করো না, আদিরা। মারসাদ যথেষ্ট ম্যাচিওর একটা ছেলে। ও জোয়ারের সময় এখানে থাকবে না। চলো তুমি।”

“না! বললাম তো যাব না। আমি দেখেছি। আমার উপর রাগ করে এখানে এসেছেন উনি।”

ইতোমধ্যে মাহিও ওদের কাছে এসে পৌঁছায়। মাহি আদিরার শেষের বলা কথাগুলো শুনে হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“ফিরে চল, আদু। ওই দেখ পানি বাড়ছে। প্লিজ চল। দাভাই কোন ছোটো বাচ্চা না যে জোয়ারের সময় প্রায় মাঝ সমুদ্রে এসে বসে থাকবে।”

তারপর মাহিও আদিরার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু আদিরা যেতে চাইছে না। তখনই আহনাফের ফোন বেজে উঠে। আহনাফ ফোন বের করে দেখে মৃদুল কল করেছে। আহনাফ কলটা দেখে বলে উঠে,

“মারসাদকে ওরা খুঁজে পেয়েছে। চলো এবার।”

আদিরা চোখেমুখে খুশির ঝিলিক ফুটে উঠলো।
“সত্যি?”

“হ্যাঁ সত্যি। প্লিজ চলো।”

এরপর ওরা তাড়াতাড়ি করে ফিরতে লাগলো। আহনাফ ফোন রিসিভ করতেই মৃদুল বলল,
“ওরে খুঁজে পাইছি। কতদূর দৌঁড়ানি করাইলো। ঝাউবনের দিকে বালুর উপর বসে ছিল।”

“উফ! এতক্ষণ পর শান্তি লাগছে। কা*নের নিচে দুইটা লাগিয়ে তারপর হোটেলে নিয়ে যা।”

“হু।”

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৭
সবাই আবার সৈকতের কাছে একত্রিত হয়। সবার শেষে আদিরা, মাহি ও আহনাফ আসে। মারসাদ ওদেরকে সমুদ্রের দিক থেকে আসতে দেখে ভ্রুকুঞ্চন করে তাকায়। অতঃপর শুধায়,

“তোরা ওইদিকে গিয়েছিলি কেন? জোয়ার তো শুরু হয়ে গেছে।”

মাহি ও আহনাফ কিছু উত্তর আগেই আদিরা বলে ওঠে,
“আমরা জোয়ার শুরু হওয়ার ও ভাটা শেষ হওয়ার সময়টা খুব কাছ থেকে দেখতে চেয়েছিলাম।”

মারসাদ সন্দিহান হয়ে চেয়ে রয়। রাত্রি কিছু বলতে চাইলে মৌমি রাত্রির হাত ধরে কিছু না বলতে ইশারা করে। রবিন তখন কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“কেমন দেখতে?”

রবিনের প্রশ্নের জবাব দিতে আদিরা মারসাদের চোখের দিকে তাকায়। তারপর প্রত্যুত্তরে বলে,
“ভয়ংকর সুন্দর অভিজ্ঞতা। আরে সৌন্দর্য উপভোগ করতে একটু তো রিস্ক নিতেই হয়।”

কথাটা বলেই আদিরা আর দাঁড়ালো না। সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলো। বাকিরাও বিষয়টা তেমন গুরুত্ব না দিয়ে হোটেলের দিকে ফিরতে লাগলো। সৈকতে দাঁড়িয়ে মারসাদ, মাহি ও আহনাফ। মাহি আহনাফের দিকে তাকায়। আহনাফ ইশারা করে মাহিকে আদিরার সাথে যেতে। মাহিও তাই হোটেলের দিকে যায়। সবাই যাওয়ার পর আহনাফ মারসাদের পাশে এসে দাঁড়ায়। দুজনের দৃষ্টি সামনের দিকে ধেয়ে আসা সমুদ্রের ঢেউরাশির দিকে। আহনাফ প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“কক্সবাজার এসে নিজের মৌন অভিমান ও-কে বুঝাতে চেয়েছিলি?”

“হু?”

মারসাদ আহনাফের দিকে তাকায়। অতঃপর আহনাফও। আহনাফ মৃদু হাসে। আর বলে,
“তুই আমার সাথে প্রথমে যোগাযোগ করিসনি কারণ তুই চাসনি মাহি জানুক তুই কোথায় আছিস। আর মাহি জানলে আদিরাও জেনে যাবে। কয়েকদিন সবাইকে টেনশনে রেখে নিজের অভিমান বুঝাতে চেয়েছিলি।”

মারসাদ আবার সামনের দিকে ফিরে নিঃশব্দে হাসলো। আহনাফ তা দেখে বলল,
“হাসছিস?”

“তো হাসব না? অভিমান বুঝাতে চাইলে বুঝি তোদের সাথে যোগাযোগ করতাম? তোদের এটা মনে হওয়ার কারণও আছে, মাহিকে জানাতে না করেছিলাম। মাহিকে জানাতে না করার কারণ হচ্ছে, মাহি আমাকে বাসা, ভার্সিটি সবজায়গাতেই আদিরা রিলেটেড কথা বলা শুরু করে দিয়েছিল। ওর মাথায় এইসবই ঘুরতেছে। একচুয়েলি আমি নিজেকে বুঝতে চাইছিলাম। এর আগেও আমি খনিকের জন্য হলেও আরেকজনের উপর দুর্বল হয়েছিলাম। পরে কী হলো? তখন বাবার অর্থনৈতিক মন্দা চলছিল। স্কুল-কলেজে থাকাকালীন ছেলেদের চেহারায় মধ্যে অনেক সময় তেমন একটা এট্রাকটিভনেস কাজ করে না। কিন্তু আবার ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় তিন-চার বছর আগের ছবির সাথে মেলানোও কষ্টকর হয়ে পড়ে। আমার ক্ষেত্রেও তাই। সামিরা তখন আমাকে আমার লুকস, ফিনান্সিয়াল অবস্থা দেখে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছিল। আর এখন সে আমার পেছনে ঘুরে! ওর মনে হয়, এখনও ওর প্রতি আমার ফিলিংস আছে! কিন্তু ও আমার কিছু সময়ের ভালোলাগা ছিল জাস্ট। ভালোলাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য আছে।”

“পুরোনো কথা বাদ। বর্তমান দেখ।”

“তোদের সবার মনে হয়, আমি আদিরাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আমারও তাই মনে হয়। কিন্তু ওই যে, আমি ভালোলাগা ও ভালোবাসার মধ্যে পার্থক্য খুঁজতে চেয়েছিলাম। একা থাকতে চেয়েছিলাম। যেখানে তোরা সবসময় কানের কাছে এসে বলবি না, ‘তুই আদিরাকে ভালোবাসিস!’ লাভ এট ফার্স্টসাইট হলে বুঝতে কম সময় লাগে। আমার তো আদিরার ক্ষেত্রে লাভ এট ফার্স্টসাইট না।”

“বুঝেছি। চল এবার।”

এরপর ওরা দুজনও হোটেলের দিকে ফিরতে থাকে।

———

“এই আদু, তুই দাভাইকে বলতে মানা করলি কেন?”

“আমি চাই না উনি জানুক।”

“কিন্তু জানলে তো ভালো হতো।”

আদিরা এবার ব্যাগের চেইন খুব জোরে এক টানে লাগিয়ে মাহির দিকে ঘুরে বসে। সাবিহা, রিন্তিও উৎসুক হয়ে চেয়ে আছে। আদিরা বলে,

“সবসময় উনি কেন রাগ দেখাবে? আমি কী এমন করেছি? তোর চিন্তা হচ্ছিলো বলে আমি জাস্ট একটা আইডিয়া দিয়েছি। সেটাকে তোরা উনার সামনে কী বললি? ওকে মানলাম যা বলেছিস। তারপরও উনি আমাকে কী বলল? প্রথমে যখন গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অভিনয় করতে বলেছিল, আমি রাজি হইনি। এমনিতেই সামিরা আপু আমাকে পছন্দ করে না। তারপর যদি…! আমি অভিনয় করে নিজের শত্রু বানাব কেন?”

মাহির মুখটা চুপসে গেলো। সে বলল,
“দাভাই তো তোকে ভালোবাসে।”

“তুই কিভাবে শিউর? উনি তোকে বলেছে?”

“না। তবে…”

“তবে আর কিছু না। উনি আমাকে অভিনয় করার অফার করেছিল। তোদের ভাষ্যমতে, যদি উনি আমাকে ভালোবেসেও থাকে, তাহলে উনার ওই অভিনয় করতে বলার এপ্রোচটা ছিল উনার ভুল। এখনও যা করছে সেসবও যে ওই নাটকে আমাকে রাজি করাতে যে নাটক করছে না, তার কী গ্যারান্টি?”

কথাগুলো বলতে আদিরার বুকের ভেতর ভার লাগছে। চোখেও জ্বালা করছে। সে দ্রুত ব্যাগ উঠিয়ে আলমারিতে রাখতে গেলো। মাহি বিছানার দিকে তাকিয়ে রইল। তার দাভাইকে নিয়ে কথাগুলো তার খুব খারাপ লেগেছে। চোখ থেকে হুট করেই এক ফোঁটা পানি বিছানাতে পড়তেই মাহি দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়। সাবিহা ও রিন্তি অসহায়ের মতো বসে আছে।

——-

সাগরপাড়ে সূর্যদয় দেখতে অনেকে ভীড় জমিয়েছে। ভোরের ঊষা কমলাভাব ছড়িয়ে সমুদ্র গর্ভ থেকে পূর্ব আকাশে উদিত হচ্ছে। সূর্যদয়ের সময়টা যে যার মতো উপভোগ করে এখন একটা দোকানে বসে চা খাচ্ছে। একটু পর এখানেই নাস্তা করবে। তখন আশিক বলে,

“আজকে রাতেই ফিরব আমরা। বিকেল পর্যন্ত যা ঘুরাঘুরি করার করে নাও।”

সুমি মন খারাপ করে বলে,
“কালকেই তো এলাম, ভাইয়া।”

“এখন তো হুটহাট প্ল্যান করে এসেছি। আবার যখন আসব তখন সেন্টমার্টিনও যাব। বুঝোই তো, অফিস!”

“আমারও টিউশনি আছে।”

সবাই গল্প করতে করতে চা খাচ্ছে। এরপর নাস্তার অর্ডারও দিয়েছে। এদিকে মাহি ও আদিরা যে একে অপরের সাথে কথা বলছে না সেটা কয়েকজনের চোখে লেগেছে। মাহি বসেছেও তার ভাইয়ের পাশে অন্য টেবিলে। রাত্রি বলে,

“এই মাহি, তুমি আমাদের সবাইকে রেখে তোমার ভাইয়ের পাশে যে বসলে?”

মাহি চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে হালকা হেসে উত্তর দেয়,
“আশিক ভাইকে মৌমি আপুর পাশে বসার সুযোগ দিলাম।”

তখন মৌমি বলে,
“আশিকের পাশে বসতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। তুমি এখানে বসতে পারতে।”

“সমস্যা নাই, আপু। আমার কোনো প্রবলেম হচ্ছে না। তাছাড়া আমি আমার দাভাইকে খুব মিস করছিলাম। তাই দাভাইয়ের পাশে বসলাম।”

কথাটা বলে মাহি মারসাদের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা এলায়। মারসাদও মৃদু হেসে মাহির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

সাবিহা রাত্রির কানে কানে বলে,
“রাত্রিপু, আসলে কাল রাতে মাহি রাগ করে আদিরার সাথে রুমও শেয়ার করেনি। ওরা দুজন বলেছিল রুম শেয়ার করবে।”

রাত্রি অবাক হয়ে ফিসফিস করে শুধায়,
“ওমা! হঠাৎ কী হলো?”

“ওই আদিরা একটু মারসাদ ভাইয়ের বিরুদ্ধে কথা বলাতে মাহির খারাপ লেগে গেছে।”

“কী বলেছিল?”

“তেমন কিছু না। আদিরার মনে হচ্ছে, মারসাদ ভাই এসব নাটক করছে যাতে আদিরা তার ফেক গার্লফ্রেন্ড হতে রাজি হয়।”

রাত্রি কপাল কুঁচকে কিছুটা জোরেই বলে ফেলে,
“রিয়েলি? এতোকিছু হওয়ার পরও যদি ওর কাছে নাটক লাগে তবে আই হ্যাভ নাথিং টু সে হার।”

সবাই রাত্রির দিকে তাকায়। সাবিহা তাড়াতাড়ি মুখে হাত দিয়ে নিজেকে আড়াল করতে চায়। মৃদুল জিজ্ঞাসা করে,

“কীসের নাটকরে?”

রাত্রিও বোকা বনে যায়। এদিকে সাবিহা টেবিলের নিচ দিয়ে রাত্রির হাতে চি*মটি কা*টছে। রাত্রি আমতা আমতা করে বলে,
“ওই…আসলে…আমি!”

রাত্রিকে আমতা আমতা করতে দেখে মাহি বলে উঠে,
“অহেতুক বিষয় নিয়ে এতো টাইম ওয়েস্ট কেন করছো? মৃদুল ভাইয়া, নাস্তা এখনও দিচ্ছে না কেন দেখোতো। আমাদের আজকে টাইম তো খুব কম।”

মারসাদও মাহির হঠাৎ এমন কথায় ওর দিকে তাকায়। সবাই এবার মাহির দিকে চেয়ে আছে। মাহি তা দেখে বলে,
“কী হলো? সবাই এখন আমার দিকে কেন দেখছো?”

মৃদুল হাসার চেষ্টা করে বলল,
“আমি দেখি নাস্তার কী অবস্থা।”

তারপর মৃদুল উঠে গেলো। এদিকে আদিরা পুরোটা সময় টেবিলের দিকে চেয়ে চুপ করে আছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২৮
কক্সবাজার থেকে ফিরে এসে সবাই যার যার মতো ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফিরে আসার পরেরদিনই পরীক্ষার রুটিন দিয়ে দিয়েছিল, এখন পরীক্ষাও শুরু। পরীক্ষা চলাকালীন সময়টাও পেরিয়ে যাচ্ছে পড়ার ব্যস্ততায়। আজ ওদের শেষ পরীক্ষা। মাহি পরীক্ষা শেষ হতেই সবার আগে হল থেকে বেরিয়েছে। সাবিহা মাহির সাথে কথা বলতে তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে ছুটে গিয়ে ও-কে ধরে। তারপর একসাথে হাঁটতে থাকে। মাহি শুধায়,

“কিছু বলবি? ছুটে এলি যে?”

সাবিহা কিঞ্চিত ভেবে বলে,
“হু।”

“তো বল।”

“তুই আদুর সাথে সব স্বাভাবিক করে নিচ্ছিস না কেন?”

“স্বাভাবিকই তো আছে।”

“না নেই। ও তোকে নোট দিতে চেয়েছিল, তুই তা নেসনি।”

মাহি থেমে সাবিহার দিকে তাকায়। তারপর বলে,
“আমার নোট লাগে না। তাছাড়া নোট ছাড়া যে আমার পরীক্ষা খারাপ হয়েছে তাও না। এখানে এসে আমি একটু অলস হয়ে গিয়েছিলাম। এখন থেকে আর অলসতা করব না।”

তারপর মাহি আবার সামনের দিকে এগুতে থাকে। সাবিহা সেখানেই দাঁড়িয়ে ভাড় স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তার মানে তুই আদুর সাথে সব স্বাভাবিক করবি না?”

মাহি ফের দাঁড়িয়ে যায়। তারপর সাবিহার কাছে ফিরে এসে বলে,
“দেখ, কক্সবাজারে যাওয়া ও তার আগে পর্যন্ত আমাদের মধ্যে আড্ডা বল আর যাই বল, সবেতে টপিক কিন্তু ঘুরেফিরে আমার দাভাই, তার বন্ধুরা আর নয়তো সামিরা আপু। বলতে গেলে অর্ধেকের বেশি কথা আমরা ওদের নিয়েই বলতাম। কিন্তু এখন আমাদের আড্ডাতে ওদের টপিকে কথা উঠাটা আমি ঠিক বলে মনে করছি না। তাই বুঝতে পারছি না কী করব!”

“আমরা উনাদের নিয়ে কথা বলব না। তাহলেই হলো।”

“হলো বললেই হলো না। ফ্লো ফ্লো তেই টপিক উঠবে। আমি যেই চক্রবাকে আবদ্ধ, আমি না চাইতেও সেটাই তুলে ফেলব। আচ্ছা ধরলাম, আমি টপিক তুললাম না। আদুও আড্ডাতে কোনো টপিক কখোনো তুলে না। তুই তুলবি চাইনিজ-কোরিয়ান ড্রামা, রিন্তি তুলবে ইন্ডিয়ান ড্রামা! তোর সাথে আমি কিছুটা তাল মেলাতে পারব। কিন্তু আড্ডা জমবে না। তখন রিন্তি হুট করে রাফিন ভাইয়ের টপিক তুলবে। এটা চলতেই থাকবে।”

“তাহলে তুই কী চাইছিস?”

“জানিনা আমি। আজ পরীক্ষা শেষ, আমি বাড়িতে যাব। মাইন্ড ফ্রেশ করব। আর আপিলিরও ডেলিভারি ডেইট কাছাকাছি। দাভাই জব পেয়েছে। সে যাবে আবার ৩-৪দিন পর চলে আসবে। দেখি ছুটি শেষ হওয়ার পর কী হয়।”

তারপর মাহি সাবিহাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। সাবিহা হতাশ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুটা দূরে আদিরা ও রিন্তি দাঁড়িয়ে ছিল। মাহি যেতেই রিন্তি আদিরার হাত ধরে সাবিহার কাছে আসে। রিন্তি জিজ্ঞাসা করে,

“কী বলল?”

“ও ভাবছে, আমাদের মাঝে আগের মতো আড্ডা জমবে না। কারণ আমাদের ৭০% আড্ডার টপিক মারসাদ ভাইদের গ্রুপদের নিয়ে। যদিও ভুল কিছু বলেনি।”

“কী করব এখন?”

রিন্তি ও সাবিহা চিন্তা করছে তখন আদিরা রিন্তির হাত ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পেছন থেকে রিন্তি ডাকলে আদিরা বলে,
“টিউশন আছে। সেখানে ছুটি নিব। তারপর গ্রামে যাব। সব গোছাতে হবে।”

তারপর আদিরাও চলে যায়।

——-
আদিরা তার ভাইয়ের সাথে বাড়ির সামনের উঠোনে বসে আছে। অন্যমনস্ক সে। আহাদ খেলতে খেলতে আদিরাকে বলল,
“আপু, তুমি আর কয়দিন থাকো না।”

আদিরা আহাদের দিকে চেয়ে মুচকি হাসে। তারপর বলে,
“ছিলাম তো কয়দিন।”

আহাদ আঙুলে গুণে বলে,
“আজ সহ ৫ দিন মাত্র। কালকে সন্ধ্যায় তো চলে যাবে।”

“টিউশনি আছে তো। আবার আসব।”

“সে তো কতোদিন পর। তুমি আমাকে একটুও ভালোবাসো না।”

বলেই আহাদ রাগ করে চলে যায়। আদিরা ডাকলেও সাড়া দেয় না। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আদিরা। তারপর নিজে নিজেই বলে,
“স্টুডেন্টের মা এক সপ্তাহ ছুটি দিয়েছে। কাল তো যেতেই হবে।”

তখন আদিরার মা আদিরাকে ডাকে। আদিরা সাড়া দিয়ে রান্নাঘরে যায়। আদিরার মা বলেন,
“শোন, সন্ধ্যায় ভালো জামাকাপড় পরে তৈরি হয়ে থাকিস।”

“কেন, মা?”

“তোর খালার বাসায় যাব। তোর খালার ননদের ছেলে কালকে সকালে কাতার থেকে আসছে। আজকে তোর খালার বাসায় আসছে।”

“তো এতে আমাদের যাওয়ার কী আছে?”

আদিরার মা আদিরার মাথায় একটা টো*কা দিয়ে বলে,
“আরে বো*কা মেয়ে! তোর খালা তার ননদের কাছে তোর কথা বলছে। এখন এজন্য একটু দেখবে। ওরা তো তোরে দেখে নাই।”

আদিরা এবার বুঝতে পারে তার মা কীসের ইঙ্গিত দিচ্ছে। আদিরা বলে,
“আমাকে দেখার কিছু নাই। আমি যাব না।”

আদিরার মা ধ*ম*ক দিয়ে উঠেন,
“চুপ কর! এতো কথা না বলে তৈরি হইয়া থাকবি। তোর বাপে রাগ করব জানলে।”

“মা, আমি পড়ালেখা করতেছি।”

“কর। তোর খালার বাসায় গেলে তো পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে না।”

আদিরা হতাশ হয়ে হনহনিয়ে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আসে।

——–
সন্ধ্যায় আদিরা ও তার বাবা-মা, ভাই সবাই আদিরার খালার বাসায় যায়। মহিলারা সবাই আদিরার খালার ঘরে বসে নাস্তা খাচ্ছে আর গল্প করছে। আদিরার খালার ননদ ও তার ছোটো মেয়ে যে কী না আদিরার বয়সীই হবে, এই দুইজন আদিরার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে পরখ করে চলেছে। আদিরা বিষয়টা বুঝতে পেরে স্বাভাবিক ভাবে বসে থাকতে পারছে না। আদিরা তার মাকে কানে কানে বলে,

“মা, আমি দেখি আহাদ কোথায়।”

তারপর উঠে যায়। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে বাচ্চাদের কাছে এসে বসে থাকে। আদিরার পিছু পিছু আদিরার খালার ননদের মেয়েও আসে। সে এসে আদিরার সামনে হাসি দিয়ে বলে,

“আমার নাম ডালিয়া। তুমিই আদিরা?”

আদিরা হাসার চেষ্টা করে মাথা নাড়ায়। মেয়েটা আবার বলে,
“শুনলাম তুমি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ো।”

“জি।”

“বাড়ি থেকে এতো দূরে একা থাকো, খারাপ লাগে না?”

“না। প্রথম প্রথম লাগতো এখন লাগে না।”

“ভার্সিটির হোস্টেলেই থাকো?”

“না। এখনও পাইনি। কয়েকদিন পর পাব।”

“তাহলে কোথায় থাকো? ওখানে কি রাতে বের হতে দেয়?”

“মেসে থাকি। ওখানে রাতে বের হওয়া নিয়ে তেমন কোনো প্রবলেম নেই।”

“তুমি বের হও নাকি?”

আদিরা মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকায়। মেয়েটা যে তার সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতেই এতো প্রশ্ন করছে তা সে আগেই বুঝেছিল। আদিরা উত্তর দেয়,
“প্রয়োজন পড়লে বের হই। কেন?”

মেয়েটা হাসার চেষ্টা করে বলে,
“না এমনি জিজ্ঞাসা করলাম। শুনেছি বাড়ি থেকে দূরে পড়তে গিয়ে মেয়েরা রাতে অনেক ঘুরাঘুরি করে। ট্যুর এসবে যায়।”

আদিরার চট করে মনে পড়লো সেও ট্যুরের কথাটা বলুক। অতঃপর বলে ফেলল!
“হ্যাঁ এই পরীক্ষা শুরুর সপ্তাহ দেড়েক আগে আমরা কক্সবাজার ঘুরতে গিয়েছিলাম।”

কথাটা শুনে মেয়েটা অবাক হয়। তারপর তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করে,
“কার সাথে।”

“ফ্রেন্ডদের সাথে।”

“তুমি বাসায় জানিয়ে গিয়েছিলে?”

“না। পড়ালেখা নিয়ে একটু বেশিই হাঁপিয়ে গিয়েছিলাম। তাই সবাই মিলে গিয়েছিলাম। তবে মাকে এখানে এসে জানিয়েছি।”

“ওহ। সেখানে কি ছেলেরাও গিয়েছিল?”

“হ্যাঁ। আমরা বিকেলে রওনা করেছি। আবার পরেরদিন সন্ধ্যায় ফিরে এসেছি।”

মেয়েটা আদিরার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। আদিরা মৃদু হেসে তার ভাইকে ডেকে আবার তার খালার ঘরে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে