#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
আদিরা একটা মোটা গাছের আড়ালে কোনোরকম লুকিয়ে আছে। সে মেই*ন গেইটের কাছে আসার পরেই এই মা*রামা*রি লেগেছে। তাই মেইন গেইট থেকে বেরোতে পারেনি। মারসাদ বাইক স্টার্ট দিয়ে ভার্সিটির গেইট ছাড়িয়ে যেতে নিয়ে বেখেয়ালিতে আশেপাশে নজরদারি রাখার সময় তার হুট করে মনে হয় সে কিছু দেখেছে! তারপর বাইক থামিয়ে পিছনে ঘুরে সেদিকে চেয়ে দেখে শাড়ির আঁচলের অংশ দেখা যাচ্ছে। মারসাদের সন্দেহ হয়। হয়তো আদিরা এখানে। কারণ আদিরার শাড়ির রঙের সাথে এই আঁচলের রঙটাও মিলে গেছে। অতঃপর মারসাদ বাইক সাইড করে বাইক থেকে নেমে অবস্থা বুঝে ওই গাছটার কাছে যায়।
পু*লিশ এসে লা*ঠিচার্জ করে বহিরাগতদের তাড়ানোর প্রচেষ্টা করছে। মারসাদ দ্রুত সেই গাছটার কাছে গিয়ে দেখতে পায়, আদিরা ভয়ে জবুথবু হয়ে বসে আছে। মারসাদ আদিরার পেছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপর মারসাদ আদিরার মাথায় হাত রাখতেই থমকে যায় আদিরা। এতক্ষণ যাবত সে ভয়ে, আতঙ্কে নিজেকে শক্ত করে বসে ছিল। কিন্তু এখন? মাথা ঘুরছে তার! ধীরে ধীরে মাথা ঘুরানোর আগেই একটা বিকট শব্দ হয়। এবার আর নিজের সাহস ধরে রাখতে পারলো না সে। চিৎকার করে উঠতেই একটা হাত তার মুখ চেপে ধরে টান দিয়ে গাছের অন্যপাশের আড়ালে নিয়ে যায়। এদিকে হঠাৎ আকস্মিক কাণ্ডে আদিরা আরও বেশি ভয় পেয়ে ঘাবড়ে যায়। আদিরা এখনও তার মুখ চেপে ধরা ব্যক্তিটির চেহারা দেখেনি। ইতোমধ্যে তার শরীরে আর বল নেই, সে লোকটির হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে নিবে। শ*রীরের পাশাপাশি মস্তিষ্কও কেমন কাজ করছে না! চোখ নিভু নিভু হয়ে আসছে। ঠিক তখনি একটা কণ্ঠস্বর কানে আসে তার।
“তুমি এখানে কী করছো? তোমাকে বলেছিলাম, ওখানে দাঁড়াও। আমি বাইক নিয়ে আসছি। তবে আমার কথার মূল্য না দিয়ে চলে এলে কেন?”
কণ্ঠস্বরটা কিছুটা পরিচিত লাগাতে আদিরার মস্তিষ্ক থেকে চাপা আতঙ্ক কমতে শুরু করে। কিন্তু সে প্রত্যুত্তর করার মতো অবস্থায় নেই। তার এই ক্ষুদ্র জীবনের এই প্রথমবার এরকম মা*রামা*রি নিজের চোখের সামনে দেখছে। কতোটা আতঙ্ক ও ভয়ে সে আছে তা সে মুখে বলেও প্রকাশ করতে পারবে না। তার ফোনটাও এখানে এসে লুকানোর সময় হড়বড়িতে কোথাও পড়ে গেছে।
আদিরার থেকে কোনো জবাব না পেয়ে মারসাদ আদিরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে তাকে নিজের দিকে ঘুরায়। তারপর ফের প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আমার কথা অমান্য করে এখানে কেন এসেছ? বলেছিলাম না, ওখানে দাঁড়াও? তাহলে দাঁড়ালে না কেন? কী হলো? জবাব দাও?”
তৎক্ষণাৎ আদিরা নিজের শ*রীরের ভার বইতে অসমর্থ হয়ে পড়লো। নিভু নিভু আঁখি জোড়াও আর নিজের অক্ষিপল্লবের ভার নিতে পারছে না। আচমকা হেলে পড়লো আদিরা! আদিরার অবস্থা দেখে মারসাদ চকিতে ও-কে ধরে ফেলে। তারপর আদিরার গালে আলতো থা*প্প*ড় দিয়ে ডাকতে থাকে,
“আদিরা! এই আদিরা? কী হলো তোমার?”
আদিরার কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে ও-কে আস্তে ধীরে গাছের গুড়ির কাছে বসায়। তারপর আশেপাশের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছে। কীভাবে আদিরাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে সেই চিন্তা তার।
______
আহনাফ মাহিকে নিয়ে মাহিদের ফ্ল্যাটের বিল্ডিংয়ের কাছে এসে বাইক থামায়। তারপর একটু আগে আসা ফোনের নোটিফিকেশন দেখতে ফোনটা পকেট থেকে বের করে। মাহি বাইক থেকে নেমে জিজ্ঞাসা করে,
“আপনি এখন কই যাবেন?”
আহনাফ জবাব দেয় না। সে খুব মনোযোগ দিয়ে ফোনে দেখছে। তা দেখে মাহিও কৌতুহল হলে আহনাফের ফোনের দিকে ঝুঁকে। আহনাফ তৎক্ষণাৎ ফোনেে স্ক্রিণ অফ করে তাড়াহুড়ো করে মাহিকে বলে,
“তুমি বাসার ভেতরে চলে যায়, আমাকে এখনি যেতে হবে।”
মাহির কিছুটা সন্দেহ হয়। মাহি পালটা প্রশ্ন করে,
“কী হয়েছে? আর ভার্সিটিতে কী হয়েছে? কার মেসেজ ছিল? কী বলছিল?”
আহনাফ মাহিকে জানাতে চাইলো না। সে বলল,
“কিছু হয়নি। তুমি বাসার ভেতরে যাও। আমার একটা কাজ আছে।”
আহনাফ বাইক স্টার্ট দিতে নিলে মাহি ঝটপট বাইকের চাবি খুলে নেয়। বোকা বনে যায় আহনাফ। মাহি বলে,
“আপনি আমাকে না বলে যেতে পারবেন না। কী হয়েছে বলুন।”
আহনাফ শান্ত স্বরে বলে,
“প্লিজ, মাহি। চাবিটা দাও। আমার আর্জেন্ট যেতে হবে।”
“হ্যাঁ যাবেন তো। কিন্তু আমাকে বলে যাবেন। আপনারা দুই বন্ধু আমাকে শুধু টেনশনে রাখেন। দাঁড়ান, আমি দাভাইকেও কল করি।”
মাহি নিজের ব্যাগ থেকে ফোন বের করার সময় আহনাফ মাহির হাত থেকে চাবিটা ছিনিয়ে নিয়ে নেয়। মাহি চমকে আহনাফের দিকে তাকালে আহনাফ বাইক স্টার্ট দিয়ে বলে,
“তোমাকে বলব। কিন্তু এখন না। এখন সব ব্যাখ্যা করার সময় না।”
অতঃপর আহনাফ বাইক নিয়ে চলে গেলো। মাহি কিছু বলতেও পারে না।
______
মারসাদ দেখে ভার্সিটির ভেতর থেকে সাগরের বন্ধুরা হাতে লম্বা লম্বা ধা*রালো অ*স্ত্র নিয়ে আসছে। এমতাবস্থায় অবস্খা আরও ভ*য়াবহ হওয়ার পথে। কীভাব সে আদিরাকে এখান থেকে সরিয়ে নিবে তা চিন্তা করছে। মারসাদ মৃদুলকে কল করলো।
“মোটা লা*ঠি কতোগুলো নিয়ে আয়। আর সোহান, হৃদয়দেরও নিয়ে আয়। সাগরের দল ধা*রালো অ*স্ত্র নিয়ে নামছে।”
অবস্থা বেশ বেগতিক। সুমি, মৌমিদের যে আসতে বলবে, এসে আদিরাকে নিয়ে যেতে বলবে, সেটাও সম্ভব না। হোস্টেল এখান থেকে বেশ দূরে। তাই ওদেরকে বিপদে ফেলতে ইচ্ছে করলো না মারসাদের। এখন আদিরার জ্ঞান ফেরাতে হবে। উপায়ন্তর না পেয়ে মারসাদ আদিরার ব্যাগ চেক করলো। সেখানে পানির বোতল তো পেলো কিন্তু তাতে অল্প পানি আছে। মারসাদ দ্রুত বোতল খুলে হাতে সামান্য পানি নিয়ে আদিরা মুখমণ্ডলে ছিঁটা দেয়। তারপর কয়েকবার আলতো থা*প্প*ড় দিয়ে আদিরার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করে। এতে সে সফলও হয়। পিটপিট করে নয়নজোরা খুলতে শুরু করে আদিরা। তা দেখে মারসাদের মুখে খানিক স্বস্তির হাসি ফুটে উঠে। মারসাদ আদিরাকে বলে,
“ভয় পেয়ো না। আমি আছি। বোতলে আর খুব সামান্য পরিমাণ পানি আছে। এটুকু পানি খেয়ে রিল্যাক্স হও।”
আদিরা মারসাদের কথাগুলো শুনলো। কিন্তু তার খুব দুর্বল লাগছে। ঠিক ভাবে বসেও থাকতে পারছে না। এদিকে ঝামেলা স্থান থেকে আর্তচিৎকারের শব্দ ধেয়ে আসছে। ভয়ে সত্যি তার গলা শুকিয়ে গেছে। আদিরা খুব ধীরে ধীরে হাত বাড়িয়ে পানির বোতলটা ধরতে চাইলে মারসাদ আদিরার অবস্থা বুঝে নিজেই আদিরার মুখের কাছে পানির বোতল ধরে। মাত্র এক ঢোক পানিই পান করতে পারে আদিরা। আর পানি নেই। তারপরও পানি পান করার পর কিছুটা ভালো লাগছে তার। আদিরা মৃদু, দুর্বল কণ্ঠে বলে,
“আমি এখানে আর থাকব না। হোস্টেলে যাব। আমার খুব খারাপ লাগছে।”
“হ্যাঁ যাবে। তবে এখন তুমি বের হতে পারবে না। ঝামেলা আরও বাড়বে। তোমাকে আমি এখান দিয়ে যথাসম্ভব আড়াল করে মেয়েদের হোস্টেলের কাছে দিয়ে আসব। তারপর ঝামেলা মিটলে বের হবে।”
আদিরা একদিকে মাথা নাড়ে। মারসাদ আদিরাকে কোলে তুলে নিতে চাইলে আদিরা নড়ে বসে। সে ফের দুর্বল স্বরে বলে,
“আমি হেঁটেই যাব, প্লিজ।”
মারসাদও মেনে নিলো। এখন কোলে তুলে নেওয়াটাও রিস্কি। আড়াল করেই নিয়ে যেতে হবে। তারপর মারসাদ আদিরাকে নিয়ে ছাত্রী হোস্টেলের দিকে পা বাড়ায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
আদিরাকে ভার্সিটির ছাত্রী হোস্টেলের কাছে দিয়ে এসেছে মারসাদ। এরপর প্রায় ঘণ্টা দেড়েক পর ভার্সিটির পরিবেশ স্বাভাবিক হয়েছে। পু*লিশ সাগর সহ আরও কয়েকজনকে গ্রে*ফতার করে নিয়ে গেছে। আহনাফ, মৃদুল ও রবিন হাতে-পায়ে চোট পেয়েছে। রবিন মা*থাতেও বা*ড়ি খেয়েছে। রবিন কাতর স্বরে বলছে,
“আমার মা*থা কী ফে*টে গেছে, দোস্ত? আমি কি ম*রে যাব?”
রাফিন সেখানে র*ক্ত জমাট হয়ে থাকা স্থানটা দেখছে আর চিন্তা করছে, ‘যদি এখন রবিনকে বলে, মা*থা একটু ফে*টেছে তাহলে বেচারা আরও ভয় পাবে।’ নার্সরা অন্যান্য ছাত্রদের ফার্স্টএইড করাতে ব্যস্ত থাকায় রাফিন রবিনরে ক্ষত স্থান দেখছে। তাছাড়া ছু*ড়ির আঘা*তে হা*তও কে*টেছে তবে সেটা তেমন গভীর না। আহনাফ ও মৃদুলেরও হাত কে*টেছে। পায়ে বা*ড়িও খেয়েছে। মারসাদ ও রাফিন পিঠে ও পায়ে বা*ড়ি খেয়েছে, তাই দুজনে বাকি তিনজনের তুলনায় ভালো আছে। একটু পর দুইজন নার্স এসে ওদেরকে ড্রেসিং করাতে নিয়ে যায়। রাফিন মারসাদের কাছে খোঁ*ড়াতে খোঁ*ড়াতে এসে বলে,
“দোস্ত, আমার মনে হয় পিঠে এক্সরে করতে হবে।”
“কেন?”
“কেন মানে? নিলয়ের বাচ্চায় কি আমারে আস্তে বা*ড়ি দিছে? আমি তো রবিনের মা*থায় ই*টের বা*ড়ি লাগার পর ওরে ধরতে নিজের লা*ঠি ফা-লায় দৌঁড় দিছিলাম। তখন শা*লায় আমারে পেছন থেকে এতো জোড়ে ঘার ও পিঠের কাছে বা*ড়ি দিছে! আর একটু জন্য মা*থায় লাগে নাই। তুই যদি ওই সময় না আসতি তাইলে আমার মা*থায়ও ওই নিলয়ের বা-*চ্চায় বা*ড়ি দিতো।”
“আচ্ছা করিস। ওদের ড্রেসিং করিয়ে ঠিকমতো হোস্টেলে দিয়ে এসে তোকে হসপিটালে নিয়ে যাব।”
রাফিন হালকাভাবে মাথা নাড়ে। তারপর হুট করে তার কিছু মনে পড়াতে সে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“এই, তুই আদিরার কোনো খোঁজ নিছিস?”
মারসাদেরও এবার মনে পড়ে। সে পকেট থেকে ফোন বের করে দেখে ফোন অফ! বিরক্তিতে বলে উঠে,
“শিট! চার্জ যে কম ছিল মা*থাতেই নেই। এই তোর ফোনটা দে।”
রাফিন তার প্যান্টের পকেটে ফোন দেখালো। মারসাদ সেখান থেকে ফোন বের করে তারপর রাফিন লক খুলে দিলে সুমিকে কল করে। সুমিও যেন ফোনের অপেক্ষায় ছিল। সে রিসিভ করেই বলে উঠলো,
“তোরা ঠিক আছিস, রাফিন? কই এখন তোরা?”
সুমির উৎকণ্ঠিত কণ্ঠস্বরে মৃদু হাসলো মারসাদ। তারপর বলল,
“আমি মারসাদ। আমরা ঠিক আছি। সবার কিছুটা চো*ট লেগেছে, এখন মেডিকেল সেন্টারে আছি। রবিনের বোধহয় মা*থা সামান্য ফে*টেছে।”
সুমি আঁতকে উঠে।
“কী বলিস? এখন কী অবস্থা ওর? ছেলেটা এমনিই ভীতু।”
সুমির কথা শুনে পাশ থেকে মৌমি, রাত্রিও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে। মারসাদ জবাব দেয়,
“দোয়া কর, বেশি লাগেনি। তবে ও অনেক ভয় পেয়েছে।”
মৌমি বলে উঠে,
“আমরা আসি ওখানে?”
“না। দরকার নেই। পরে ঝামেলায় পড়লে? তোরা বরং আজ হোস্টেল থেকে বের হোস না।”
“আচ্ছা। তোরাও সাবধানে থাকিস। আর নিজের খেয়াল রাখিস।”
“হু।”
তারপর মারসাদের দৃষ্টি রাফিনের দিকে যেতেই দেখে রাফিন হা করে তার মুখের দিকে চেয়ে আছে। অতঃপর মারসাদ খানিক ইতস্তত করে সুমিকে জিজ্ঞেসা করে,
“আচ্ছা শোন না।”
“হ্যাঁ বল।”
“আদিরাকে বল, আমি একটু পর এসে ওকে ওর হোস্টেলে পৌঁছে দিব।”
মারসাদের কথা শুনে রাত্রি বলে উঠে,
“কিন্তু ও তো চলে গেছে!”
মারসাদ কিছুটা অবাক হলেও প্রকাশ করলো না। সে মেয়েটাকে বারবার বলে এসেছিল, ও যেন মারসাদকে না জানিয়ে হোস্টেল থেকে বের না হয়। মারসাদ এসেই ওকে নিয়ে যাবে। কিন্তু কে শোনে কার কথা! ছোটো করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মারসাদ বলল,
“ওহ। কখন গেলো?”
“এই তো মিনিট বিশেক হলো। আমরা বলেছিলাম, তোর জন্য অপেক্ষা করতে। তুই এসে নিয়ে যাবি। কিন্তু শুনলো না। বলল, রাস্তায় যেতে যেতে তোকে ফোন করে বলে দিবে। তোকে বলেনি তাই না?”
মারসাদ আর প্রশ্নের জবাব দিলো না। কথা শেষ করতে বলে,
“হয়তো কল করেছে। আমার ফোনের চার্জ শেষ। আচ্ছা তোরা সাবধানে থাক। রাখি এখন।”
তারপর মারসাদ কল কেটে রাফিনের ফোন ফিরিয়ে দিলো। তারপর চুপ করে রাফিনের পাশে বসে পড়লো। রাফিন মারসাদের নিরবতার কারণ বুঝলো। তাই বিষয়টাকে হালকা করতে বলল,
“নিজেই তো বললি ফোনের চার্জ শেষ। তাহলে আবার এমন গুমোট ভাব নিয়ে বসে রইলি কেন?”
মারসাদ জবাব দেয়,
“কিছু না। বাদ দে। ওদের ড্রেসিং হলে তোকে নিয়েও তো এ*ক্সরে করাতে যেতে হবে।
রাফিন আর ও-কে ঘাটাতে চাইলো না। কিছুক্ষণ পর আহনাফ, মৃদুল ও রবিন আসে। তারপর মারসাদ ও রাফিন ওদেরকে হোস্টেলে নিয়ে যায়। ওদেরকে হোস্টেলে রেখে মারসাদ রাফিনকে নিয়ে হসপিটালে যায়।
——–
আদিরা ভার্সিটির পরিবেশ খানিক স্বাভাবিক হতেই তার স্টুডেন্টকে পড়াতে যেতে হবে বলে বের হয়ে গেছিল। কাল তার স্টুডেন্টের পরীক্ষা বলে আজকে দ্বিতীয়বারের মতো পড়াতে যাচ্ছে। শাড়ি পরার কারণে সে রিকশায় উঠেছে। হুট করে রাস্তায় রিকশার সামনে একটা বাইক এসে থামে। রিকশাচালক তড়িঘড়ি করে রিকশা থামাতে গিয়ে বেশ বেগ পেতে হয়েছে তাকে। আদিরা তো রিকশা থেকে পড়েই যেতে নিয়েছিল! কিন্তু নিজেকে সামলে সামনে বাইক নিয়ে দাঁড়ানো ব্যক্তিটির দিকে তাকায়। হেলমেটের কারণে মুখ দেখা যাচ্ছে না। পরনে সাদা-কালো চেক চেক টিশার্ট ও টাইট জিন্স! লোকটি বাইক থেকে নেমে এসে রিকশার সামনে দাঁড়ায়। রিকশাচালক লোকটির সাথে তর্ক করতে চাইলে লোকটি বলে,
“তোর লগে আমার কোনো সমস্যা নাই। আমি তো এই ফুলকলিরে দেখতে আইছি।”
কথাটা শুনে আদিরা ঘাবড়ে যায়। কে এই লোকটি তা সে বুঝতে পারছে না। ভয়ে রিকশার হুড শক্ত করে ধরে বসে আছে। লোকটি আদিরার কাছে এগিয়ে এসে রিকশার হুডে হাত রেখে কালো হেলমেটের সামনের গ্লাসটা উঠায়। তৎক্ষণাৎ লোকটির চেহারা দেখে আদিরা আরও ঘাবড়ে যায়। ঘামতে শুরু করে সে। লোকটা তার হলুদ দাঁত গুলো কে*লিয়ে বলে উঠে,
“কেমন আছো, ফুলকলি? কতোদিন পর তোমারে দেখলাম! আর দেখলাম তাও পরীর বেশে! আহা! চ*ক্ষু আমার জুড়ায় গেলো!”
আদিরা দেলোয়ারকে দেখে ও তার কথা শুনে কী করবে না করবে ভেবে পাচ্ছে না। তার মস্তিষ্ক ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। ঠিক দুপুর সময় হওয়ায় রাস্তাটা নির্জন। এই রোডটা যদিও সবসময় নির্জনই থাকে। আদিরা সবসময় সকালেই এই দিকে আসে। আদিরা রাস্তার আশেপাশে অস্থির হয়ে তাকাচ্ছে। তা দেখে দেলোয়ার বলে,
“আমারে তুমি এতো ডরাও কেন? তোমার ওই আশিকরে দিয়া হুদাই আমারে মা*ইর খাওয়াইছিলা। কামডা কি ভালা করছিলা? তোমার আশিকে আমারে তো চিনে না। তোমারে আমার খুউউব মনে ধরছে বইলাই তোমার লগে খারাপ কিছু করতাছি না! নাইলে…..! থাক আর ডরাইয়ো না। কই যাইতাছিলা যাও। তয় তোমার ওই আশিকের লগে যেন তোমারে আমি ঘোরাঘুরি করতে না দেখি। হ্যাঁ?”
আদিরা শুকনো ঢোক গিলে। তার গলা শুকিয়ে আসছে। দেলোয়ার আদিরার জবাব চেয়ে আবার কিছুটা ধ*মকের সুরে বলে উঠে,
“কী? উত্তর দাও না কেন?”
আদিরা চমকে কেঁপে উঠে। দ্রুত হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে। তারপর দেলোয়ার খুশি হয়ে আদিরার দিকে হাত বাড়াতে চাইলে আদিরা সিটকে অপরপাশের হুডের সাথে লেপটে যাওয়াে চেষ্টা করে। দেলোয়ার তা দেখে বিশ্রি হেসে বলে,
“যাও এহন। আবার দেখা হইব।”
তারপর দেলোয়ার তার বাইকের কাছে গিয়ে বাইক স্টার্ট করে উলটো দিকে ঘুরিয়ে চলে যেতে যেতে আদিরার উদ্দেশ্যে ফ্লাইং কি*স ছুঁ*ড়ে বিশ্রিভাবে হেসে চলে যায়। দেলোয়ার যাওয়ার পর রিকশাচালক এসে বলে,
“আফা, আপনে ডরাইয়েন না। এইগুলারে আমি চিনি। মা*স্তান এগুলা! রাতে নে*শাপানি খাইয়া টাল হইয়া থাকে। আবার কোনো কোনো রাইতে চু*রিও করে। পু*লিশের গু*তা*নিও কম খায় নাই! তাও সরম হয় না।”
রিকশাচালকটি যতো যাই বলুক, আদিরা ভিষণ আতঙ্কে আছে। সামনে তার জন্য কী অপেক্ষা করছে, তা ভাবতেও তার দ*মবন্ধকর লাগছে।
চলবে ইন শা আল্লাহ
#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
মারসাদ রাফিনকে হসপিটালে এক্সরে করাতে নিয়ে যাওয়ার সময় রাফিনের থেকে ফোন চার্জের জন্য পাওয়ার ব্যাংকটাও নিয়ে নিয়েছিল। এরপর রাফিনকে এক্সরে করিয়ে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে মারসাদ আদিরার নাম্বারে কল করে। কিন্তু আদিরা কল তুলে না। তারপর সে ফের দ্বিতীয়বারও কল করে। এবারে আদিরা কল কেটে দেয়। এখন এই মূহুর্তে মারসাদের রাগ হচ্ছে আদিরার উপর। কিন্তু রাগ করে থাকলে তো খবর জানতে পারবে না। তাই সে মাহিকে কল করে। কল রিসিভ করেই মাহি উৎকণ্ঠিত হয়ে জিজ্ঞাসা করা শুরু করে,
“তুই ঠিক আছিস তো, দাভাই? কোথায় তুই? তোকে কতবার কল করলাম। তোর ফোন বন্ধ বলছিল। তারপর আহনাফ ভাইকে কল করলাম। সেও কল তুলছে না।”
“আমি ঠিক আছি, মাহি। তুই চিন্তা করিস না। টুকটাক লেগেছে আমাদের। তবে সেড়ে যাবে। শোন, তোকে যে কারণে কল করেছি। তুই তোর বান্ধবীকে কল করে জিজ্ঞাসা কর, সে সেফলি হোস্টেলে পৌঁছেছে কি না?”
মাহি স্বস্থির নিঃশ্বাস ছেড়ে প্রত্যুত্তরে বলে,
“কেন তুই কল কর? আর তুই না ও-কে হোস্টেলে পৌঁছে দিবি বলেছিলি?”
মারসাদ ছোটো করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“বলেছিলাম তো! কিন্তু তোর বান্ধবী কি আমার কথা শোনে? আমি আসতে আসতেই সে বেরিয়ে যাওয়ার চিন্তা করেছিল। তারপর পথে গ*ন্ডগো-ল দেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। আমি দেখেছিলাম সেটা। তারপর তাকে সুমি, মৌমিদের কাছে রেখে এসেছিলাম যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ও-কে হোস্টেলে পৌঁছে দেব। কিন্তু তোর বান্ধবী সেখান থেকে চলে গেছে। এখন আমি কল করছি কল ধরছে না।”
মারসাদের বলা কথাগুলো শুনে মাহির কিছুটা হাসিও পায়। কিন্তু এখন যদি শব্দ করে হাসে তবে ভাইয়ের থেকে মা*র একটাও মাটিতে পড়বে না। কোনোমতে হাসি চেপে রেখে মাহি বলে,
“আচ্ছা দাভাই, আমি ও*কে কল করে জিজ্ঞাসা করছি। তারপর তোকে জানাচ্ছি। তুই চিন্তা করিস না তো। এরকম হয়! মেয়েরা সবাইকে পাত্তা দিতে চায় না!”
“মানে?”
মারসাদের তীক্ষ্ণ কণ্ঠ! মাহি মুখ চেপে ফের হাসি সংযত রেখে বলে,
“মানেটা হচ্ছে, বা*ঘকেও বি*ড়া-ল হতে হয়, দাভাই!”
মারসাদ বিরক্ত হয়। সে বলে,
“বেশি বেড়ে যাচ্ছিস তুই!”
“আচ্ছা আচ্ছা ফোন রাখি। আদুকে জিজ্ঞাসা করে তারপর তোকে জানাচ্ছি।”
এরপর মাহি কল কে*টে কিছুক্ষণ হেসে আদিরাকে কল করে। মাহির প্রথম কলেই আদিরা কল রিসিভ করে। মাহি শুধায়,
“কী রে, আদু? তুই হোস্টেলে পৌঁছেছিস? ভার্সিটিতে নাকি অনেক ঝামেলা হয়েছিল। ঠিকভাবে পৌঁছেছিস তো?”
আদিরা জবাবে বলে,
“আমি এখনো হোস্টেলে যাইনি। স্টুডেন্টের বাসায় এসেছি। স্টুডেন্টের কাল থেকে পরীক্ষা তো, তাই ও-কে আজকেই আবার পড়িয়ে দিচ্ছি।”
“ওহ আচ্ছা। কখন যাবি?”
“এই তো, আর আধাঘণ্টা পড়াব। তারপর বের হবো।”
“আচ্ছা সাবধানে যাস।”
মাহি আদিরার সাথে কথা বলা শেষ করে আবার তার দাভাইকে কল করে। কল রিসিভ করেই মারসাদ তাড়াতাড়ি জিজ্ঞাসা করে,
“কী বলল তোর বান্ধবী?”
“বলল এই যে, সে এখনো হোস্টেলে যায়নি। সে….”
মারসাদ মাহিকে তার বাক্য সম্পূর্ণ করতে দিল না। মারসাদ সন্দিহান প্রশ্ন ছুঁড়লো,
“এখনও হোস্টেলে যায়নি মানে? সে কোথায় এখন?”
“রিল্যাক্স, দাভাই। আদু ঠিক আছে। কালকে ওর স্টুডেন্টের পরীক্ষা তাই আজকে ও আবারও তাকে পড়াতে গিয়েছে। পড়ানো শেষ হলে তারপর হোস্টেলে যাবে।”
“কোন স্টুডেন্টের বাসায় গিয়েছে?”
“মনে তো হয়, যাকে সকালে পড়ায় তার বাসায়। কারণ আজকে সকালেই ওই বাচ্চাটাকে পড়িয়েছে। আবার গিয়েছে মানে সেখানেই গিয়েছে হয়তো।”
“ঠিক আছে। রাখছি এখন।”
মারসাদ কল কে*টে দিতে চাইলে মাহি তাড়াতাড়ি করে বলে উঠে,
“এই দাভাই শোন না, তুই তো মনে হয় আদুর স্টুডেন্টের বাসায় যাবি। আদুর সাথে দেখা হলে ওর ব্যাগে আমার ফোনের চার্জারের ক্যাবলটা আছে। সাথে পাওয়ার ব্যাংকও আছে। আসলে ফোন চার্জ দিতে ওর ব্যাগেই রেখেছিলাম। কিন্তু ওগুলো ওর কাছেই রয়ে গেছে। এখন চার্জার ক্যাবলটা আমার লাগবে। নিয়ে আসিস।”
“ঠিক আছে।”
এরপর মারসাদ কল কে*টে বাইকে বসে। অতঃপর বাইক স্টার্ট করে আদিরার স্টুডেন্টের বাসার দিকে রওনা দেয়।
———–
স্টুডেন্টকে পড়ানো শেষে একটু ওয়াশরুমে গিয়েছে আদিরা। ওয়াশরুম থেকে এসে দেখে তার স্টুডেন্ট তার ফোন কানে নিয়ে বসে আছে! আদিরা কপাল কুঁচকে তার স্টুডেন্ট রাইসাকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তুমি আমার ফোন কানে নিয়ে বসে আছো কেন, রাইসা?”
রাইসা জবাবে বলে,
“মিস, আপনার ফোন খুব বাজছিল! কল এসেছে। তাই আমি রিসিভ করলাম।”
আদিরা কিঞ্চিত বিরক্ত হলো। সে বলল,
“দাও। ফোনটা আমাকে দাও। কে কল করেছে? এভাবে কারো ফোন রিসিভ করবে না। এটা ব্যাড ম্যানার্স।”
রাইসা মাথা নাড়ে। আদিরা ফোনটা নিয়ে দেখে এটা মারসাদের নাম্বার। আর এসে এখনও কলে আছে। আদিরা ফোন কানে নিলো। তারপর বলল,
“আমি আপনার সাথে পড়ে কথা বলব, ভাইয়া। আমি এখন স্টুডেন্টের বাসায়।”
মারসাদ খুব শান্ত স্বরে বলল,
“তুমি নিচে নেমে এসো। আমি দাঁড়িয়ে আছি।”
আদিরা বেশ অবাক হয়। সে যে এখানে তা মারসাদ কীভাবে জানলো? তবে কি মাহির মাধ্যমে? ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়লো আদিরা। তারপর ছোটো করে উত্তরে বলল,
“হু!”
আদিরা স্টুডেন্টকে ভালো করে পড়তে ও পরীক্ষা দিতে বলে আজকের মতো বেরিয়ে আসে। স্টুডেন্টের বাসা থেকে নিচে নেমেই দেখে মারসাদ বাইকে হেলান দিয়ে বুকে হাত আড়াআড়ি ভাঁজ করে দাঁড়িয়ে আছে। আদিরা লম্বা করে শ্বাস নিয়ে এগিয়ে যায়। আদিরাকে দেখে মারসাদ সোজা হয়ে দাঁড়ায়। তারপর আদিরাকে বলে,
“বাইকে বসো।”
আদিরা চাইছে না বাইকে উঠতে। তাই সে নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মারসাদ বাইকে বসে বাইক স্টার্ট দিয়ে আদিরাকে এখনও চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চোখ বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নেয়। অতঃপর বেশ শীতল কণ্ঠে বলে,
“আমি তোমাকে বাইকে উঠতে বললাম, আদিরা। এই নিয়ে ঝামেলা করো না প্লিজ।”
আদিরা সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। তার মন চাইছে না বাইকে উঠতে কিন্তু পরক্ষণেই এখানে আসার পথের ঘটনাটা মনে পড়লে ভয় কাজ করছে। কী করবে না করবে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না সে।
আদিরাকে এমন নিরব দেখে মারসাদ ফের ডাকে,
“আদিরা, প্লিজ!”
এবার আদিরা মারসাদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি ফের নামিয়ে ফেলে। ধীর পায়ে বাইকের দিকে এগিয়ে যায়। তা দেখে মারসাদের ওষ্ঠকোণে মৃদু হাসির ঝিলিক ফুটে উঠে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।