#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
ভার্সিটিতে আসতেই আদিরাকে এক প্রকার চে’পে ধরলো মাহি।
“কাল আসিসনি কেন?”
আদিরা কী জবাব দিবে ঠিক ভেবে পেলো না। তাই তৎক্ষণাৎ কথা ঘুরানোর জন্য সে বলল,
“বলেছিলাম তো, কাল সকালের দিকে শরীরটা একটু খারাপ ছিল।”
“তুই বললি আর আমি বিশ্বাস করলাম। তুই যে দাভাইয়ের জন্য আসিসনি তা কি আমি বুঝি না?”
আদিরা ঘাসের উপর বসলো। তারপর বলল,
“তেমন কিছু না, মাহি। শরীর খারাপ লাগছিল বলেই আসিনি।”
আদিরাকে দেখে মাহিও ঘাসের ওপর বসলো। অতঃপর মুখ ভার করে বলল,
“বুঝেছি। তুইও সত্যি কথা বলবি না। সবাই আমার থেকে কথা লুকানো শুরু করে দিয়েছে। একজন ভাবে, আমার কাছে আমারই ভাইয়ের সম্পর্কে বললে আমি রাগ করব। আরেকজন ভাবে, আমার বোন তো ছোটো! তাকে সবকিছু বলা যায় না! ঠিক আছে!”
মাহিকে মুখ ভার করতে দেখে সাবিহা ও রিন্তি মুখ টিপে হাসছে। আদিরা মাহির দিকে অসহায়ের মতো চেয়ে আছে। হুট করে মাহি বসা থেকে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর আদিরার হাত ধরে টান দেয়। আচমকা আদিরা বোকার মতো চেয়ে থাকে। মাহি বলে,
“আজ আমরা চারজনে শাড়ি পরব।”
আদিরা অবাক হয়।
“হ্যাঁ?”
“আরে হ্যাঁ। আজ আমরাও শাড়ি পরব। সামিরা আপুকে শাড়ি পরতে দেখে এখন আমারও ইচ্ছে করছে।”
সাবিহা ও রিন্তিও এতে উৎসাহ দেখাচ্ছে। আদিরা অবাক হয়ে বলে,
“সামিরা আপু পরলে পরুক। আমাদের কেন পরতে হবে? আর আজ তো কোনো ফাংশন না।”
সাবিহা প্রত্যুত্তরে বলে,
“ফাংশন না কিন্তু আজ কোনো ক্লাসও হবে না।”
আদিরা যেন আরও অবাক হয়। সে শুধালো,
“কেন? ক্লাস কেন হবে না?”
মাহি আদিরাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলে,
“পরে জানতে পারবি। এখন আমার সাথে চল।”
এরপর মাহি সাবিহা ও রিন্তি আদিরার একটা কথাও শুনলো না। আদিরাকে নিয়ে মাহিদের ফ্লাটে যায়। সেখানে মাহির রুমে চারটা শাড়ি বিছানার উপর বের করে রাখা। আদিরা তা দেখে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“এখানে আগে থেকে শাড়ি বের করা কেন?”
আদিরার প্রশ্ন শুনে ওরা তিনজন হেসে ফেলে। তারপর রিন্তি বলে,
“কারণ, আমরা কালকে রাতেই শাড়ি পরার প্ল্যান বানিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর আজকে সকালে আমি ও সাবিহায আমাদের শাড়ি এখানে রেখে গিয়েছি।”
“কিন্তু মাহি যে বলল, ওর সামিরা আপুকে দেখে শাড়ি পরতে ইচ্ছে করেছে।”
“আরে না রে বোকা। আজকে দেখবি ক্যাম্পাসে প্রায় অনেকেই শাড়ি পরে এসেছে।”
“কিন্তু কেন?”
“আজকে ভি*পি নির্বাচনের ফল প্রকাশ করা হবে। কয়েকদিন দেরি হয়েছে কিছু কারণে, কিন্তু অবশেষে আজকে। এই উপলক্ষে আজ কোন ক্লাস হবে না, তাই অনেকে মনের সুখে হলেও শাড়ি পরছে। আমরাও সেই দলের।”
আদিরা ফের কিছু জিজ্ঞাসা করতে নিবে তখনই মাহি একটা হালকা আকাশী রঙের শাড়ি আদিরার কাঁধের কাছে ধরলো। শাড়িটাতে শাড়ির রঙের থেকে কিছুটা গাড়ো আকাশী রঙের সুতার কাজ করা। মাহি বলল,
“এই শাড়িটাতে তোকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগবে, আদু। তুই আজকে এই শাড়িটাই পরবি। আর ওই টিয়া রঙের শাড়িটা আমি পরব।”
রিন্তি বলল,
“ঠিক বলেছিস। আদুকে এই শাড়িটাতে দারুণ লাগবে। আর আমাদের চারজনেরই শাড়ির সাথে সাদা রঙের ক্রপ টপ ব্লাউজ। একসাথে চারজনকে কতো কিউট লাগবে। ইশ!”
সাবিহাও তাল মেলালো। কিন্তু আদিরা বেঁকে বসেছে। সে বলে,
“দেখ তোদের শখ লেগেছে তোরা পর। আমার পরতে ইচ্ছে করছে না। আজ সকালে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হলো। রাস্তাঘাটের কাঁদাপানিও আছে। এর মধ্যে শাড়ি পরবো? আর আকাশ এখনো মেঘলা।”
মাহি শাড়িটা রেখে আদিরার দুই গালে হাত দিয়ে বাচ্চাদের বুঝানোর মতো করে বলল,
“শাড়ি তো বৃষ্টির দিনেই পরে বেশি। বর্ষা ঋতুতে কবি বলেছেন, মেয়েদের শাড়ি পরার হিরিক পরে।”
“কোন কবি?”
আদিরার প্রশ্নে মাহি নিজের কপালেই চাঁ*পড়ে বলে,
“কবি মাহি খান! হয়েছে? চুপচাপ শাড়িটা পরে আয়। আর ক্রপটপ ব্লাউজ তুই ফুল স্লিভসটা পরবি নাকি হাফ স্লিভস?”
আদিরা মুখ ফুলিয়ে রাখে। জবাব দেয় না। তাই মাহি নিজেই বেছে আদিরাকে ফুল স্লিভসের ক্রপটপ ব্লাউজটা ধরিয়ে এক প্রকার ধাক্কা দিয়েই ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে পাঠিয়ে দেয়।
_______
নতুন ভিপির নাম ঘোষণা করতে বেশ আয়োজন করা হয়েছে। শিক্ষকরাও উপস্থিত (এই বিষয়ে আমার ভুল হতে পারে)। যদিও সাগররা সেখানে আসেনি। কারণ ইতোমধ্যে তারা জেনে গেছে তারা হেরে গেছে। সামিরা তার বান্ধবীকে ও সুমি, মৌমি, রাত্রিকে নিয়ে দর্শকদের সিটের সামনের সারিতে বসেছে।
এদিকে মাহি, আদিরা, সাবিহা ও রিন্তি তিনজনেই তিন রঙের শাড়ি পরে আস্তে আস্তে আয়োজন করা স্থানের দিকে আসছে। মাহি টিয়া রঙের শাড়িতে, আদিরা আকাশী রঙের শাড়িতে, রিন্তি ল্যাভেন্ডার রঙের শাড়িতে, ও সাবিহা হালকা গোলাপি রঙের শাড়িতে। তিন জনের চুলেই খোঁপা। আর খোঁপায় রজনীগন্ধা। হাতে শাড়ির সাথে ম্যাচিং রেশমি চুড়ি। স্টেজে বসে মারসাদ দর্শক সারিতে আদিরাকে খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎই চোখ পড়ে সেদিকে। সাদা ফুল স্লিভস ব্লাউজের সাথে আকাশী রঙেে শাড়ি। শাড়ির সাথে ম্যাচিং চুড়িও। একহাতে শাড়ির কুঁচি ধরে হাঁটছে তো আরেক হাতে পেছনে খোঁপা করা রাখা চুল থেকে সামনের দিকে কিছু ছোটো চুল খুলে এসে বারবার বিরক্ত করাতে তা সরিয়ে কানের পিঠে গুঁজে দিচ্ছে। দৃশ্যটা বুঝি চোখ ফেরানো দায়? কারণ পূর্বের ভি*পি আশিককে মারসাদের কাঁধে হাত দিয়ে ধ্যান ভাঙাতে হয়েছে। মারসাদকে মাইকের কাছে গিয়ে কিছু বলতে হবে।
অতঃপর মারসাদ উঠে মাইকের কাছে যায়। মারসাদের পেছনে আহনাফ ও মৃদুল। মারসাদ সবার উদ্দেশ্যে সালাম দিয়ে চুপ করে গেছে। প্রায় কয়েক সেকেন্ড পেরোনোর পর পেছন থেকে মৃদুল মারসাদের পিঠে গুঁ*তো দিয়ে ফিসফিস করে বলে,
“কী রে? চুপ করে গেলি কেন?”
তারপর মারসাদ দ্রুত নিজের দৃষ্টি সংযত করে ছোটো করে নিজের বক্তব্য দিয়ে নিজের সিটে এসে বসে পড়ে। মারসাদ এসে বসার পর পেছন থেকে রিহান খানিক টিটকারির সুরে ফিসফিস করে বলে,
“তোমার ধ্যান-জ্ঞান যে এখন কই, সেটা কি আমরা বুঝি না, মামা! তোমার মনের মাঝে যে প্রজাপতি উড়তাছে!”
মারসাদ রিহানকে ইশারায় ধ*মকে আবার সামনে ফিরে।
এদিকে আদিরা মারসাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় সেই হুট করে থমকে যাওয়ার পর থেকে আর মাথা উঠাতে পারছে না। অজানা কারণেই তার ভীষণ লজ্জা করছে। তার মনের অন্দরমহল থেকে একটাই কথা ভেসে আসছে, ‘সে তোকেই দেখছিল!’ কিন্তু আদিরা নিজের মনকে বুঝাতে চাইল যে, ‘মন তো কতো কথাই বলে। সব কি আর সত্যি হয়?’ কিন্তু পরক্ষণেই আবার নিজেই লজ্জায় চোখ খিঁচে নেয়।
মাহি বলে উঠে,
“আজ আমার দাভাইকে কেমন নে*তা নে*তা লাগছে না? সাদা পাঞ্জাবি-পাজামা, চোখে কালো সানগ্লাস, হাতে সিলভার রঙের ঘড়ি।”
সাবিহাও তাল মেলায়,
“ঠিক বলেছিস। ভাইয়াকে আজ অন্যরকম লাগছে। আমাদের ভি*পি বলে কথা।”
মাহি ফের কিছুটা মজার ছলে বলে,
“আজ তো মেয়েরা আমার ভাইকে চো-খ দিয়েই গি*লে খাবে! বেচারা ভাইটা আমার…”
কথাটা বলতে বলতে মাহির নজর যায় আদিরের দিকে। আদিরা মাথা নিচু করে বসে আছে। মাহি আদিরার উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কী রে? তুই এরকম মাথা নিচু করে বসে আছিস কেন?”
চমকে উঠে আদিরা। আমতা আমতা করে দ্রুত বলে উঠে,
“এ..এমনিই!”
“এমনিই মাথা নিচু করে বসে থাকলে হবে? সামনের দিকে দেখ। আমার দাভাইকে আজকে হিরো টাইপ নে*তা লাগছে।”
আদিরা একপলক তাকায়। অতঃপর দ্রুত নজর নিচু করে ফেলে। কারণ মারসাদের অবিচ্ছিন্ন দৃষ্টি যে তার দিকেই নিবদ্ধ।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
অনুষ্ঠানের শেষে মারসাদ ও তার বন্ধুরা স্টেজ থেকে নামছে, তখন সামিরা মারসাদের দিকে এগিয়ে যায় তাকে অভিনন্দন জানাতে। কিন্তু মারসাদ সামিরাকে একপ্রকার ইগনোর করে দেখেও না দেখার ভান করে পাশ কাটিয়ে চলে যায়। এতে সামিরা অবাক হয়। অতঃপর মারসাদের যাওয়ার পানে চেয়ে আদিরাকে মাহিদের সাথে দেখতে পায়। আর মারসাদ সেদিকেই যাচ্ছে! আদিরাকেও আকাশী রঙের শাড়িতে দেখে সামিরার রাগ হতে শুরু করে। তখন পাশ থেকে সামিরার বান্ধবী সামিরাকে বলে,
“আদিরাকে কিন্তু খুব সুন্দর লাগছে। তাই না, সামিরা?”
তা শুনে সামিরার রাগ ক্রমশ বাড়তে থাকে। ফুঁ*সছে সে। তারপর সামিরার বান্ধবী আবার বলে উঠে,
“মারসাদ ভাইয়া তো ওইদিকেই যাচ্ছে। তবে কী ওদের মধ্যে…?”
কথা শেষ করতে পারলো না মেয়েটা। সামিরা চিৎকার করে ধমক দিয়ে উঠে,
“চুপ! আরেকবার মুখ দিয়ে উলটাপালটা কিছু বের হলে দেখিস!”
রাগের মাত্রা অতিক্রম করছে সামিরার। তার মনের ভেতর রাগ যেন উত্তপ্ত লা*ভার ন্যায় ফু*টতে শুরু করেছে। অতঃপর সে গটগটিয়ে স্থান ত্যাগ করে।
____
মারসাদ মাহিদের কাছে গিয়ে মাহিকে বলে,
“তোকে আহনাফ ফ্লাটে পৌঁছে দিবে। ওর সাথে চলে যা।”
হঠাৎ করে নিজের ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয় মাহি। অতঃপর প্রশ্ন করে,
“কেন, দাভাই? আমি এখন যাব না তো।”
মারসাদ এবার রাগান্বিত দৃষ্টিতে মাহির দিকে তাকায়। মাহি তৎক্ষণাৎ ভড়কে যায়। মারসাদ বলে,
“যা বলেছি, তা কর। এখানে এখন সেফ না।”
মাহিও আর কথা বাড়ায় না। মাথা নাড়িয়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ানো আহনাফের দিকে হাঁটা ধরে। মাহির সাথে সাথে আদিরাও যেতে নিলে মারসাদ ওর হাত টেনে ধরে। সঙ্গে সঙ্গে আদিরার হৃৎপিন্ডের গতি যেন তেজ হয়ে গেলো। শিরদাঁড়া বেয়ে যেন শীতল স্রোত বয়ে গেলো তার! মারসাদ আদিরাকে বলে,
“তুমি আমার সাথে এসো। আমি তোমাকে তোমার হোস্টেলে পৌঁছে দেব।”
আদিরা জবাব দিতে চেয়েও পারছে না। তার মনে হচ্ছে কোনো অদৃশ্য শক্তি তার কণ্ঠস্বর রুদ্ধ করে রেখেছে। গলা দিয়ে সামান্য ‘না’ শব্দটাও বেরোচ্ছে না। সাবিহা ও রিন্তি একটু আগেই মারসাদের রাগান্বিত চোখ ও কথা শুনে ভয় পেয়ে গিয়েছিল, এখন দুজনেই মিটিমিটি হাসছে। মাহি আহনাফের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে মারসাদ ও আদিরার দিকে তাকিয়ে আহনাফকে ফিসফিস করে বলে,
“আপনি বলেছিলেন, দুজনকে দিয়ে কনফেস করাতে হবে। দেখুন।”
আহনাফ কিঞ্চিত অবাক হয়। ফের শুধায়,
“মানে?”
“আরে বোকা ছেলে!”
কথাটা বলে মাহি আহনাফের দিকে তাকালে দেখে আহনাফ তার দিকে চোখ ছোটো ছোটো করে চেয়ে আছে। মাহিও একই ভাবে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলে,
“কী?”
“কিছু না। তুমি কনফেসের ব্যাপারে বলছিলে?”
“হু। আপনি তো কালকে রাতে আমাকে কল করে বললেন, দাভাই আদুকে মনে মনে ভালোবাসে। শুধু মুখে স্বিকার করতে চায় না। আর আদিরা দাভাইকে এমন ভাবে ভয় পায় কিন্তু আপনাদের আর কাউকে তেমন ভয় পায় না। তার মানে ওর মনেও কিছু তো আছে।”
“হ্যাঁ বলেছিলাম।”
“এজন্যই আমি সাবিহা ও রিন্তি মিলে আজকের শাড়ি পরার প্ল্যানটা বানিয়েছি। আর দেখুন, বেছে বেছে আদিরাকে আকাশী রঙের শাড়িটাই পরিয়েছি। দাভাইয়ের ফেভারিট রঙ। আর জানেন, আদিরা দাভাইকে দেখে কী লজ্জাই না পাচ্ছিলো!”
মাহি বেশ উৎফুল্ল চিত্তেই কথাগুলো বলল। তারপর আবার মারসাদ ও আদিরার দিকে তাকায়। তখন আহনাফ হুট করে বলে বসলো,
“আর তুমি আমাকে দেখে লজ্জা পাবে দূরে থাক, ঝ*গড়া করেই কূল পাও না!”
মাহি তৎক্ষণাৎ আহনাফের দিকে ফিরলো। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
“কী বললেন?”
“কিছু না। চলো।”
তারপর আহনাফ মাহির হাত ধরে টেনে বাইকের কাছে নিয়ে যাচ্ছে।
আদিরাকে নিরব দেখে মারসাদ বলে,
“আমি বাইক আনতে যাচ্ছি, তুমি এখানেই থাকবে। হু?”
আদিরা তাও চুপ করে আছে। মারসাদ তা দেখে ফের শুধালো,
“কী বললাম? এখানেই থাকবে।”
তারপর আদিরা মাথা হ্যাঁ বোধক নাড়ালে মারসাদ নিজের বাইক আনতে যায়।
মারসাদ যেতেই আদিরা গলার কাছে হাত দিয়ে লম্বা করে নিঃশ্বাস ছাড়লো। যেন মনে হচ্ছিল, প্রায় অনেকক্ষণ যাবৎ সে নিঃশ্বাস আটকে রেখেছিল! অতঃপর মারসাদ আসার আগেই দ্রুত এখান থেকে চলে যেতে চাইলো। সেই চিন্তা মোতাবেক পা বাড়ালে রিন্তি ও সাবিহা এসে আদিরার হাত ধরে বসে। সাবিহা বলে,
“কী রে? কোথায় যাচ্ছিস? মারসাদ ভাইয়া না তোকে এখানে দাঁড়াতে বলল?”
“দেখ সাবু, ছাড় আমাকে। আমার ভালো লাগছে না। শরীর খারাপ করছে। তোরাও আয়।”
রিন্তি বলে,
“না না। আমরা এখন যাব না। আমাদের হোস্টেল তো কাছেই। আর তুইও এখন যাবি না। ভাইয়া কিন্তু রাগ করবেন।”
আদিরা অসহায়ের স্বরে বলে,
“প্লিজ রিন্তু, এমন করিস না। আমার দিকটাও একটু বোঝার চেষ্টা কর। আমি ওনার সাথে বাইকে উঠতে পারব না।”
“কেন পারবি না?”
“জানিনা আমি। পারব না আমি।”
অতঃপর আদিরা ওদের হাত ছাড়িয়ে হাঁটা ধরে। রিন্তি ও সাবিহা ও-কে পেছন থেকে কয়েকবার ডেকেও ব্যর্থ হয়। রিন্তি সাবিহাকে বলে,
“আদু যে চলে গেল, মারসাদ ভাইয়া এসে আমাদের উপর রাগ ঝাড়লে?”
“আমি জানিনা। আমি এখানে আর দাঁড়াব না। চল প্লিজ।”
তারপর সাবিহা রিন্তির হাত ধরে ক্যাম্পাস থেকে যেদিক দিয়ে হোস্টেলে তাড়াতাড়ি হয় সেদিকে হাঁটা ধরে।
—–
মারসাদ বাইক নিয়ে এসে দেখে আদিরা ও তার বান্ধবীরা কেউ সেখানে নেই। তা দেখে মারসাদের রাগ উঠে যায়। সে বাইকে ঘু*ষি দিয়ে নিজে নিজেই বলে,
“ও যে একটা ঘা*ড়ত্যাড়া মেয়ে, সেটা কেন ভুলে যাই?”
তখন মৃদুল, রিহান ও রবিন হাসতে হাসতে মারসাদের কাছে আসে। রিহান বলে,
“এই পাখিরে তুমি খাঁচায় কেমনে ভরবা, মামা!”
কথাটা শুনে মারসাদ ক*টম*ট দৃষ্টিতে রিহানের দিকে তাকায় তারপর বলে,
“তোর এই ধরণের কথা বন্ধ কর। মা*র খাবি কিন্তু।”
“মা*র! অনেকদিন খাই না!”
রবিন হতবাক হয়ে রিহানের দিকে তাকায়। আর মৃদুল রিহানের কাঁধের ভর দিয়ে হাসতে হাসতে প্রায় বসে পড়ছে অবস্থা! মারসাদ যখন বাইক থেকে নেমে রিহানকে ধাওয়া করবে তখনি রিহান ছুটে পালায় আর বলতে থাকে,
“তোর পাখি বেশিদূর যাইতে পারে নাই। বরাবর রাস্তা দিয়ে গেলেই পাবি। নে তোর উপকারও করে দিলাম।”
মারসাদ তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে বরাবর রাস্তা দিয়ে যেতে থাকে। ভার্সিটির গেট দিয়ে বের হতেই দেখা যায় একদল বাহিরে ছেলেরা ভার্সিটির কয়েকটা ছেলের উপর লা*ঠিচার্জ করছে। মেয়ে স্টুডেন্টরা তাড়াহুড়ো করে রিকশা নিয়ে চলে যাচ্ছে। মারসাদ বলে উঠে,
“শিট! এতো দ্রুত এরা শুরু করে দিয়েছে। পু*লিশ এখনও আসছে না কেন?”
বাইক থামিয়ে ফোন বের করে মারসাদ পু*লিশের কাছে কল করতে উদ্ধত হয়। যদিও সে অনুষ্ঠান চলাকালীনই কিছু স্টুডেন্টের হালচাল লক্ষ্য করে মৃদুলকে বলেছিল পু*লিশের কাছে খবর দিতে। বলা বাহুল্য যে, ওসব স্টুডেন্টরা সাগরকে ভি*পি হিসেবে চেয়েছিল। মারসাদ পু*লিশের কাছে কল দিতে দিতেই দেখতে পায়, পু*লিশের গাড়ির শব্দ হচ্ছে। মানে পু*লিশ এসে পড়েছে। তাই মারসাদ আর কল করে না। বাইক স্টার্ট দিয়ে আদিরাকে খুঁজতে যায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ
কাল্পনিক গল্পকে বাস্তবের সাথে মিলাবেন না। ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।