এক শহর প্রেম_২ পর্ব-১৩+১৪

0
60

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৩
পরেরদিন আদিরা ভার্সিটিতে যায়নি। কোনো কারণ ছাড়াই ইচ্ছে করেই মারসাদ বা সামিরার সম্মুখীন না হতে যায়নি। এদিকে মারসাদও ভার্সিটিতে আজ কিছুটা লেট করে গিয়েছে। রাতে বাড়ি ফিরে তার শরীর খারাপ থাকাতে সকালে ঘুমটা সহজে ভাঙতে চায়নি। আর মাহিও খুব একটা ডাকেনি। মারসাদ বাইক পার্ক করে বন্ধুদের সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘড়িতে সময় দেখে। এখন আদিরা ও মাহিদের একটা ক্লাস শেষ হওয়ার কথা। তাই মারসাদ উঠতে নিলে আহনাফ প্রশ্ন করে,

“কোথায় যাচ্ছিস?”

মারসাদ কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে বলে,
“মাহির কাছে যাচ্ছি। মাহির কাছে আমার কার্ড আছে।”

মারসাদের জবাব শুনে আহনাফ, মৃদুল, রিহান ও রবিন বিভ্রান্তের দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। মারসাদ সেসব পরোয়া না করে প্রতিদির ক্যাম্পাসের যেখানে মাহি, আদিরারা বসে, সেখানে যায়। তার পিছু পিছু আহনাফ, রিহানরাও যায়। মারসাদ সেখানে গিয়ে দেখে মাহি, সাবিহা ও রিন্তি বসে বসে গল্প করছে। আদিরা নেই সেখানে। মারসাদ পিছনে একবার তাকিয়ে তার বন্ধুদের দেখে নেয়। তারপর মাহির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“তোর কাছে আমার ক্রোডিট কার্ডটা আছে?”

মাহি জবাব দেয়,
“না তো, দাভাই। কেন?”

“ওহ। তাহলে মনে হয় বাসায় রেখে এসেছি।”

মাহি প্রত্যুত্তরে কিছু বলে না। তারপর মারসাদ ভাবলো, আদিরা হয়তো লাইব্রেরিতে গেছে। তাই সে লাইব্রেরির দিকে যেতে নিলে মৃদুল মারসাদকে ডাক দেয়,

“কী রে? তুই এখন আবার কই যাচ্ছিস?”

মারসাদ এদিক ওদিক চেয়ে মিথ্যে জবাব দেয়,
“আমার একটা বই দরকার। তার জন্য লাইব্রেরিতে যাচ্ছি।”

মারসাদ চালাকি করে জবাব দিলেও মৃদুল ও রিহানদের বিষয়টা বুঝতে বাকি নেই। রিহান বলে,
“যে এখানে নেই, সে সেখানেও নেই! তাও তোর মনের স্বান্ত্বনার জন্য যাচ্ছিস যা।”

রিহান এর কথা শুনে মারসাদের কপাল আপনা আপনি কুঁচকে আসে। সে মুখে কোন বাক্য ব্যয় না করে চোখের ইশারায় ওদের শা*সিয়ে লাইব্রেরির দিকে যেতে থাকে। মারসাদ যেতেই রিহান ও মৃদুল হাসতে হাসতে আহনাফকে বলে,
“তোর কি এখনো মনে হয় না, মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে?”

আহনাফ বলে,
“ডোন্ট নো, ইয়ার! একবার মনে হয় পছন্দ করে, আবার মনে হয়, সামিরার থেকে ছুটকারা পেতে এসব করছে। ওর মাথায় যে কি চলছে ওই জানে।”

রবিন বলে,
“আমার না আদিরার জন্য ভয় করছে। সামিরা এসব জানতে পারলে আদিরাকে যদি কিছু করে?”

রিহান হাই তুলতে তুলতে বলে,
“ফিকার নট, হোয়েন মারসাদ উইথ হার। আমি তো ভাবছি যদি এই এক্টিংটা এক্টিং পর্যায়ের থেকে রিয়েল পর্যায়ে চলে যায়? আই মিন, যদিও আমাদের মনে হয় মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে। কিন্তু সেটা আমাদের ধারণা মাত্র। কিন্তু সত্যি সত্যি যদি ওদের মাঝে ভালোবাসাটা হয়ে যায়? একদিকে মারসাদের জন্য ভালোই হয়। আদিরা মেয়েটা ভালো।”

রিহানের সাথে মৃদুলও তাল মেলালো। কিন্তু আহনাফ মোটেও এতে খুশি না। সামিরাকে জে*লাস করে নিজের জীবন থেকে সরানোর চক্করে মারসাদ একটা নির্দোষ মেয়েকে ব্যবহার করছে। এটা সে মন থেকে পুরোপুরি মানতে পারছে না। কাল সে মারসাদকে বুঝানোর চেষ্টাও করেছিল। কিন্তু….

______

লাইব্রেরিতে গিয়েও আদিরাকে না পেয়ে মারসাদ লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে এক হাত কোমড়ে তো আরেক হাত মাথার পেছনের চুলে হাত রেখে কিছু একটা ভাবছে। তখনি সামিরা সেখানে হাজির হয়। চোখে-মুখে তার হেয় ও ক্রুর হাসি। সামিরা মারসাদের চারপাশে একবার ঘুরে ফের সামনে এসে বলে,

“কাকে খুঁজছ, মারসাদ বেবি?”

মারসাদ বিরক্তির সাথে বলে,
“এটলিস্ট তোমাকে তো না।”

“উপস! আমি তো তা আশাই করিনি। কিন্তু আমি জানি তুমি কাকে খুঁজছ। লিসেন, মিস্টার মারসাদ ইশরাক খান, তুমি যাকে খুঁজছ সে তোমাকে দু পয়সার দামও দেয় না! তারপরও তুমি ওই মেয়ের জন্য…..”

“দিস নান অফ ইউর বিজনেস। গো টু হে*ল!”

তারপর মারসাদ স্থান ত্যাগ করে। সামিরা সেখানে দাঁড়িয়ে ফুঁসছে। অতঃপর রেগে নিজেও চলে যায়।

মাহি আহনাফের সামনে একটা পুকুরপাড়ে বসে আছে। মাহির মন খারাপ। সে একাধারে ছোট ছোট নুড়ি পাথর, ইটের সুড়কি ধীরে ধীরে পুকুরে ঢিল মা*রছে। আহনাফ কিছুক্ষণ যাবৎ এগুলো দেখে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে মাহিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে,

“কী হয়েছে তোমার? মন খারাপ দেখাচ্ছে।”

মাহি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“দাভাইয়ের এই হুটহাট সিদ্ধান্ত আমার ভালো লাগে না। আপনি তো একটু বুঝাতে পারেন। আমার বান্ধবী কুটিল মস্তিষ্কের না। ও সত্যি সত্যি সরল। এইযে দেখুন, প্রতিদিন ক্লাস করা মেয়েটা আজকে দাভাইয়ের ভয়ে ভার্সিটিতেই আসেনি! আমি দাভাইয়ের সাথে বাবা-মা যাওয়ার পরে কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু সে যে বিকেলের দিকে বেরিয়েছিল, তারপর রাত বারোটার পর ফিরলো। তারপর সোজা রুমে গিয়ে দরজা লাগালো।”

আহনাফ মাহির হাত ধরে বলে,
“বুঝিয়েছিলাম আমি। শোনেনি। সে সামিরাকে শিক্ষা দিতে এসব করছে। কিন্তু জানো, আমার, রবিন, মৃদুল ও রিহানদের কেন যেন মনে হয়, মারসাদ আদিরাকে পছন্দ করে। জানিনা কতোটুকু সত্য।”

“পছন্দ করলে সরাসরি প্রপোজ করুক। আমি নিজে সাপোর্ট করব। কিন্তু থ্রে*ট কেন?”

“দেখি কী হয়। ওর মনে কী চলছে সেটা তো এখন আমাকেও বলে না।”

আহনাফের কথা শুনে মাহি আহনাফের কাঁধে মাথা রেখে উদাস হয়ে সম্মুখে পদ্ম পাতার উপর ডাহুকের চলাচল দেখছে।

________

বিকেলে আদিরা স্টুডেন্ট পড়াতে যাচ্ছে। এই স্টুডেন্টের বাড়িতে যেতে একটা পার্ক পেরিয়ে যেতে হয়। পার্কে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা সকাল-বিকেল হাঁটতে আসে। তাদের সাথে আবার ছোটো ছোটো বাচ্চাদেরও দেখা যায়। আদিরা এই রাস্তাটুকু একটু ধীরে ধীরে হাঁটে। এই পথটুকু তার মনে একপ্রকার প্রশান্তির দোল দিয়ে যায়। আজও সে এই রাস্তাটুকু হাঁটছে। হাঁটার সময় পেছন থেকে কয়েকবার হর্ণের শব্দ আসাতে চেপে চেপে হেঁটেছে কিন্তু বারবার হর্ণ শুনতে পাওয়াতে এবার পেছনে ঘুরে। পেছনে ঘুরেই আদিরা চকিতে ভয় পেয়ে যায়। বড়োসড়ো একটা ঢোক গিলে তার সামনে বাইকে বসা ব্যক্তিটির র*ক্তিম নয়নজোরার দিকে তাকায়। এক পলক চেয়ে দ্রুত মাথা নিচু করে সামনে ফিরে দ্রুত পা চালিয়ে হাঁটতে থাকে।

আদিরা কিছু দূর যেতেই সেই ব্যক্তিটি বাইক নিয়ে আদিরার সামনে এসে দাঁড়ায়। আদিরা মুখে হাত দিয়ে এক কদম পিছিয়ে যায়। এবার বাইকে বসা ব্যক্তিটি তার দিকে তাকাচ্ছে না। আদিরাই সাহস করে বলে,

“দেখুন, ভাইয়া। আপনি এটা ঠিক করছেন না। আপনি বারবার আমার পথ রোধ করতে পারেন না। আমার টিউশন আছে, টিউশন করাতে যেতে হবে।”

ব্যক্তিটি নিচের দিকে চেয়েই নিঃশব্দে খানিক হেসে বলে,
“যাও। না করলো কে? আমি কি তোমার পা বেঁধে রেখেছি?”

আদিরা চোখ ছোটো ছোটো করে চেয়ে তারপর বাইক পাশ কাটিয়ে চলেই যাচ্ছিল তখন তার মাথায় পেঁচিয়ে পেছনের দিকে লম্বা করে ফেলে রাখা ওড়নার অংশে টান পড়ে। সে চকিতে থমকে যায়। মনে মনে ভীত ও হতবাক সে। মারসাদ তবে তার ওড়নায় টান দিলো? রাগও হচ্ছে তার। এমনটা সে কখোনো উনার থেকে কল্পনাও করতে পারে না। চোখ-মুখ শক্ত করে পিছনে ঘুরে কিছু বলতে নিবে তার আগেই দেখতে পায়, মারসাদ বাইক থেকে নেমে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর আদিরার ওড়না লেগে আছে বাইকের পেছনের একটা অংশে। বোকা বনে যায় আদিরা। সে একবার মারসাদের ডোন্টকেয়ার ভাব নিয়ে তার দিকে নিবদ্ধ হয়ে থাকা চোখ জোরার দিকে তাকায় তো আরেকবার বাইকের পেছনের অংশের সাথে লেগে থাকা নিজের ওড়নার দিকে। তারপর চটজলদি এগিয়ে এসে নিজের ওড়নাটা বাইক থেকে ছাড়িয়ে নেয়। অতঃপর ফের চলে যেতে নিলে মারসাদ বলে উঠে,

“কী ভেবেছিলে? তোমার ওড়না আমি টান দিয়েছি? মুভি, সিনেমা খুব বেশি দেখো। তাই না? সেখানে দেখায়, হিরো, ভিলেনরা রাস্তাঘাটে হুট করে হিরোইনের আঁচল, ওড়না টান দিয়ে বসে! তারপর হিরোইন ঘুরে ঠা*স করে একটা… লাগিয়ে বসে!”

আদিরা যত্র দাঁড়িয়ে চোখ-মুখ খিঁচে নেয়। নিজের মা*থা এখন তার সামনের কড়ই গাছের সাথে বা*ড়ি দিতে ইচ্ছে করছে। আদিরার নীরবতাকে পর্যবেক্ষণ করে মারসাদ বাইকে উঠে বাইক স্টার্ট দিতে দিতে বলে,

“বাই দ্যা ওয়ে, রাগলে তোমাকে দারুন সুন্দর লাগে!”

তারপর বাইক স্টার্ট দিয়ে মারসাদ আদিরার সামনে দিয়ে চলে যায়। আদিরা হা হয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে মারসাদের চলে যাওয়া দেখছে আর মারসাদের বলে যাওয়া কথাটা বারবার মনে মনে আউড়াচ্ছে। এই মাঝরাস্তায় এসে তার পথ রোধ করে কী বুঝাতে চেয়েছিল সে? প্রশ্নগুলো তার চেতন মনের মাঝে ঘুরপাক খেলেও অবচেতন মন যে উত্তর জানে। মারসাদ আজ তার ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারণ জানতে এসেছিল। কিন্তু সত্যি কী তাই? নিজের মনেও নিজে বারবার শত সুতোর প্যাঁচে পেঁচিয়ে যাচ্ছে। অতঃপর রিকশার টুংটাং শব্দে নিজের মনের চিন্তা থেকে বাস্তবে ফিরে। নিজেকে শান্ত করার প্রয়াস করে দ্রুত স্টুডেন্টের বাড়ির উদ্দেশ্যে পা চালায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৪
হোস্টেলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আঁধার অম্বর পানে চেয়ে সি*গরেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে মারসাদ। পাশেই আহনাফ বারান্দার রেলিংয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়ানো। তবে তার দৃষ্টি মারসাদের দিকে নিবদ্ধ। দুজনেই নিশ্চুপে, নীরবে দাঁড়ানো। কিছুক্ষণ পেরিয়ে যাওয়ার পর মারসাদ তার অবিচল দৃষ্টি রাতের আকাশের ওই অর্ধ চন্দ্রমার দিকে চেয়ে আহনাফের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“আমার মধ্যে কি নিজের প্রেমিকাকে দেখতে পাচ্ছিস?”

থতমত খেয়ে কেঁশে উঠে আহনাফ। তারপর মারসাদের মা*থায় একটা চা*টা লাগিয়ে বলে,
“তুই কী করতে চাচ্ছিস ক্লিয়ারলি বল।”

“কেন তুই দেখতে পাচ্ছিস না? সি*গরেটের ধোঁয়ায় নিজের ফু*সফুস ঝাঁঝরা করছি। আর কী?”

মারসাদের তেঁড়ামো জবাব আহনাফকে হতাশ করলো। সে ফুঁশ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তুই নিজেও জানিস, আমি তোকে কোন টপিকে জিজ্ঞাসা করছি।”

মারসাদ শুধালো,
“কোন টপিক?”

“কেন করছিস এসব? আদিরা মেয়েটা সত্যি বিপদে পড়বে। আজ তো সে ভয়ে ভার্সিটিতেই আসেনি। তুই ওর নরমাল রুটিনের মধ্যে ভয় নামক শব্দটাকে অকারণেই ঢুকিয়ে দিচ্ছিস।”

“আমি তেমন কিছুই করছি না। ওর জন্যও ভালো। আমার গার্লফ্রেন্ডের অভিনয় করতে করতে যদি এই ভীতু স্বভাবটা যায়। আদিরাকে যে কেউ যা খুশি বলতে পারে, কিন্তু মারসাদ ইশরাকের গার্লফ্রেন্ডের দিকে নজর উঠিয়ে তো দেখাক! সেই চো*খই আমি উ*পরে ফেলব!”

আহনাফ অবাক হয়। মারসাদের কথাতে অধিকার প্রবণতা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে কী সত্যি সত্যি…? আহনাফ তারপর শুধায়,

“তোকে কালকেও বলেছি, আদিরাকে তুই ইনডাইরেক্টলি সামিরার শত্রু বানিয়ে দিচ্ছিস। সামিরা….”

“আরে রাখ তো সামিরাকে! ওই মেয়ে কী ভেবেছে, আমি দুই বছর আগে ও-কে ওই কথাটা এমনি এমনি বলেছি? আজ আবার সে আমার মজা নিতে এসেছিল! হাহ্! সামিরাকে তো বলেই দিয়েছিলাম, আমার পিছনে ঘুরে লাভ নেই। আমার সুশীল মেয়ে পছন্দ। আর সামিরা বলেছিল, যদি আমি কোনোদিন আমার মন মতো মেয়েকে ভালোবেসে ফেলি তবে ও আমাকে আর বিরক্ত করবে না। এজন্যই তো ক্যাম্পাসের কোনো মেয়ে আমার দিকে তাকালেও সে তাে প্রভাব দেখায়। আর আদিরাকে নিয়ে সে বেশি ইনসিকিউরড। হবেই না বা কেন? আদিরা সুশীল, চুপচাপ থাকা মেয়ে। আবার রূপে, গুণেও সামিরাকে ট*ক্কর দেওয়ার মতো। যদিও রূপ আমার কাছে ফ্যাক্ট না। হলে তো সামিরারও রূপ কম না। ক্যাম্পাসে আরও কতো মেয়ে আছে তবে তাদের দিকে তাকাতেও ইচ্ছে করেনি।”

মারসাদের কথাগুলো শুনে আহনাফ ফট করে জিজ্ঞেসা করে বসে,
“তুই কি আদিরাকে ভালোবাসিস? তোর আজকের কথাতে কিন্তু আমার অন্যদিনের চেয়ে ভিন্ন সুরের লাগছে।”

মারসাদ থমকে গেলো। এই প্রশ্নটা আহনাফ তাকে আরও কয়েকবার করেছে। প্রতিবারই মারসাদ ভাবনার অতলে তলিয়ে যায়। তারপর হেসেই প্রশ্নটাকে ভিত্তিহীন প্রমান করে না বলে দেয়। এতোদিন আদিরার ভীত মুখশ্রী তাকে রাগিয়েছে, তার প্রতি আকর্ষিত করেছে। কিন্তু আজ রাগান্বিত মুখটা দেখে নিজেই নিজের বলতে চাওয়া কথাগুলো ভুলে চলে এসেছে। এই লক্ষণকে কী বলে?

মারসাদকে চুপ করে থাকতে দেখে আহনাফ ওর কাঁধে হাত রাখে। তাতে বাস্তবে ফিরে মারসাদ। আহনাফ ফের বলে,

“আমি তোর বেস্টফ্রেন্ড। সেই ছোটোবেলা থেকে। তুই আমার থেকে কিছু লুকাতে পারিস না। আর চেষ্টা করলেও লুকিয়ে রাখতে পারবি না।”

মারসাদও প্রত্যুত্তরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তুই মনে হয় আমার থেকে কিছু লুকাতে পারিস। চেষ্টার তো কমতি রাখিসনি।”

আহনাফ কিছুটা চমকে উঠে। মারসাদ তবে মাহি ও তার ব্যাপারে বুঝে গেছে?
মারসাদ ঘুরে তাকায় আহনাফের দিকে। আহনাফ ফ্লোরের দিকে চেয়ে আছে। মারসাদ আহনাফের কাঁধে হাত রেখে বলে,
“সব বুঝেও চুপ করে আছি মানে, আই ট্রাস্ট ইউ।”

কথাটা বলেই মারসাদ মুচকি হেসে চলে যাচ্ছে। যেতে যেতে বলে,
“তোর প্রশ্নেরও উত্তর দেই, ভালোবাসি কী-না জানিনা। তবে ওর কোনো ক্ষতি আমি হতে দিব না।”

তারপর মারসাদ সিঁড়ি দিয়ে নেমে চলে যায়। আহনাফের মুখেও স্বস্তির হাসি ফুটে। সে বুঝে গেছে, মারসাদ আদিরাকে ভালোবাসে। তাই আহনাফ খুব করে চায়, এবার অন্তত মারসাদের মন না ভাঙুক।

________

পরেরদিন আদিরা সকাল সকাল টিউশন পড়াতে যেতে বের হয়েছে। হোস্টেলের গেইট দিয়ে বের হতেই দেখে একটা বাইক দাঁড়ানো। বাইকে বসা মানুষটা আর কেউ না, মারসাদ। আদিরা দেখেও পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে। সেই সাথে মারসাদও খুবই ধীর গতিতে বাইক নিয়ে আদিরার পিছু পিছু এগুচ্ছে। আদিরা চলতে চলতে সেটা বুঝতে পারছে ঠিক, কিন্তু তার কাছে ব্যাপারটা মোটেও ভালো লাগছে না। রাস্তাতে যে দুই-তিনজন মানুষ জগিং বা সকালে হাঁটার উদ্দেশ্যে বের হয়েছে, তারা তো দেখছে। কী ভাবছে তারা? এসব চিন্তা করে রাগও হচ্ছে তার। অতঃপর আদিরা দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর পিছনে ঘুরে কপাল কুঁচকে মারসাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে,

“আপনি এভাবে আমার পিছু পিছু আসছেন কেন?”

মারসাদ হাই তুলতে তুলতে পালটা প্রশ্ন করে,
“আমি তোমার পিছনে আসছি কে বলল? তুমি তোমার মতো যাও, আমি আমার মতো যাচ্ছি।”

আদিরা আর কোনো তর্কে গেলো না। তখন সামনের দিকে একটা রিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বাধ্য হয়ে রিকশাটা ডেকে উঠে পড়ে। আদিরা রিকশায় উঠতেই মারসাদ মুচকি হেসে বাইকের গতি বাড়িয়ে চলে যায়। আদিরাও তাতে স্বস্তি পায়।

স্টুডেন্টের বাড়ি পৌঁছে আদিরা রিকশা ভাড়া দিতে নিলে রিকশাওয়ালা মামা বলেন,
“ভাড়া দিতে হইব না, আফা।”

আদিরা অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“কেন, মামা? আমি আপনার রিকশায় করে এতোটা পথ আসলাম। আর আপনি বলছেন, ভাড়া দিতে হবে না?”

“ভাড়া তো ওই ভাইজানই দিয়া দিছিলো।”

এই বলে রিকশাওয়ালা মামা চলে যান। আদিরা ভাড়াটা হাতে নিয়ে কয়েক সেকেন্ড নীরব হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে স্টুডেন্টের বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

________

সামিরা আজ ভার্সিটিতে শাড়ি পরে এসেছে। শাড়ির রংটাও মারসাদের প্রিয় রং। আকাশি রঙের। ক্যাম্পাসের যেসব ছেলেরা যারা সামিরাকে মনে মনে পছন্দ করে কিন্তু মুখে বলতে পারে না, তারা হাঁ করে সামিরাকে দেখছে। সামিরা এসব বেশ উপভোগও করছে। সামিরা তার বান্ধবীকে বলে,

“দেখিস, আজ মারসাদ শুধু আমাকেই দেখবে।”

সামিরার বান্ধবীও সামিরার কথার সাথে তাল মেলায়।

কিছুটা দূরে মৃদুল ও রবিন ক্যান্টিনের দিক থেকে ফিরছিল তখন সামিরাকে দেখে মৃদুল বলে,

“ও বাবা! আজ দেখি সামিরা শাড়ি পরে এসেছে!”

রবিন মুখে হাত দিয়ে হেসে বলে,
“তাও আকাশি রঙের!”

“কিন্তু লাভ নাই! মারসাদ আর কখোনো সামিরার দিকে ঘুরেও তাকাবে না।”

রবিন তখন সুমি, মৌমি ও রাত্রিকে সামিরার দিকে যেতে দেখে। রবিন বলে,
“এই সুমি, রাত্রিরা কেন যাচ্ছে ওখানে?”

মৃদুল বলে,
“যাক। আমরা বরং আমাদের হবু ভিপি কোথায় খুঁজে আসি। আজ তো ভিপি নির্বাচন। আজকেই নির্ধারণ হবে ভিপি কে হবে?”

অতঃপর রবিন ও মৃদুল মারসাদের খোঁজে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে