এক শহর প্রেম ২ পর্ব-১১+১২

0
59

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১১
অডিটোরিয়ামের ভেতর মারসাদ ও আদিরা একা। পুরো অডিটোরিয়ামে আর একটা মানুষও নেই। আদিরা মাথা নিচু করে মারসাদের থেকে দুই হাত দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। মনের মাঝে তার এক রাশ ভয় তাড়া করছে। মারসাদ টেবিলের সাথে হেলান দিয়ে বুকে হাত গুঁজে দাঁড়ানো। সেই সাথে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি আদিরাতে নিবদ্ধ। একটু আগেই মাহি ও সাবিহারা আদিরাকে নিয়ে এখানে এসেছে। তারপর মারসাদ আদিরা ব্যাতিত সবাইকে চলে যেতে বললে সবাই বেরিয়ে যায়। তখন থেকেই আদিরা ঠায় এভাবে নত মস্তকে দাঁড়িয়ে আছে। মারসাদ হালকা কেঁশে বলে,

“তোমাকে একটা কথা বলব, আদিরা।”

আদিরা এক পলক মারসাদের দিকে চেয়ে আবার দৃষ্টি নামিয়ে ফেলে। মারসাদ ফের বলে,
“এবং কথাটা তোমাকে মানতে হবে। কথাটা শুনে অযথা রিয়াক্ট করতে পারবে না।”

মারসাদের এমন ধরনের কথা শুনে আদিরা কিছুটা ভাবুক হলো। কী এমন বলতে পারে? তখনি মারসাদ টেবিলের উপর থেকে এক বোতল পানি আদিরার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“নাও।”

হঠাৎ মারসাদ তাকে পানির বোতল দিচ্ছে দেখে আদিরা কিছুটা অবাক হয়। সে কৌতুহলী দৃষ্টিতে মারসাদের দিকে চেয়ে থাকে। তখন মারসাদ ইশারা করে, পানি খেতে। আদিরা বোতোলের ছিপ খুলে এক ঢোক পানি খেয়ে আরেক ঢোক মুখে নিয়েছে। এখনও গিলেনি। একটু সময় নিয়ে গিলছে তখনি মারসাদ বলে উঠে,

“তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে।”

মারসাদ কথাটা বলেই সেরেছে, আর আদিরা হতচকিত হয়ে মুখ থেকে পানি গুলো ছিটকে ফেলে দিয়েছে! বোতলটাও ফ্লোরে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আর বেচারি আদিরা কাঁশতে কাঁশতে বুকে ও মাথায় হাত দিয়ে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। মারসাদ হঠাৎ আদিরার অবস্থা দেখে ফ্লোর থেকে বোতল উঠিয়ে আদিরাকে পানি খেতে বলে,

“পানি খাও। আর তুমি পানি এতক্ষণ মুখে রেখে দিয়েছো কেন?”

আদিরা হাত দিয়ে মারসাদের এগিয়ে দেওয়া বোতলটা সরিয়ে একটা বেঞ্চে বসলো। আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে আর দেরি করলো না। দ্রুত রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। মারসাদ তা দেখে বলে উঠলো,

“জবাবটা দিয়ে যাও। তোমাকে কিন্তু আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে।”

আদিরা দাঁড়িয়ে পড়লো। তার হাত-পা রীতিমত কাঁপছে। কিন্তু তাকে এবার জবাব দিতে হবে। কিন্তু বলার জন্য গলার জোড়ও তো প্রয়োজন! তারপরও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে পিছু ফিরে। অতঃপর সে কিছু বলার আগেই মারসাদ আবার বলে,

“সত্যি সত্যি আমার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে না। জাস্ট আমার গার্লফ্রেন্ড হওয়ার এক্টিং করতে হবে। সবাই জানবে তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড। তুমি প্রিটেন্ডও করবে সেরকম। কিন্তু ইন রিয়েল আমরা গার্লফ্রেন্ড বয়ফ্রেন্ড হবো না।”

আদিরার মুখ আপনাআপনি হা হয়ে গেলো! তাকে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার অভিনয় করতে হবে? তাকে? কেন? মনের মধ্যে অনেক প্রশ্নের ভীড়। কিন্তু উত্তরদাতাকে প্রশ্নই তো করতে পারছে না। দুজনের মাঝে এখন নিরবতা। এক জনের চোখে-মুখে বিস্ময় ও প্রশ্ন তো আরেকজনের মুখে লেগে আছে সন্দিহান হাসি। মারসাদ বুঝলো আদিরার মনের প্রশ্ন। তাই সে উত্তর স্বরূপ বলে,

“তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ডের অভিনয় করতে বলছি কারণ, আমি চাই সামিরা আমার লাইফ থেকে সরে যাক। কারণ আমি এইটুকু তো বুঝেছি সামিরা অন্য কাউকে আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে বিশ্বাস তো করবেই না, আবার ব্ল্যা*কমেইল করে পেট থেকে সত্যি বের করে নিবে। আর যদি তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড হিসেবে দেখে তবে ও…..সন্দেহ তো করেই। নাহলে কথায় কথায় তোমাকে এতো শোনাতে আসতো না। আরেকটা প্লাস পয়েন্ট আছে, যদিও সেটা তোমার জন্য নেগেটিভ পয়েন্ট। তোমাে উচিত সেটা বদলানো। তোমার পেটে বো*ম মা*রলেও তুমি সামিরাকে কিছুই বলবে না। খালি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদবে!”

শেষের কথাগুলো শুনে আদিরা মাথা নিচু করে ফেলল। মারসাদ টেবিল থেকে তার বাইকের চাবিসহ রিং নিয়ে আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে রুম থেকে বেড়িয়ে যাচ্ছে। দরজার কাছে ঠিক আদিরার থেকে সামান্য দূরত্বে গিয়ে পিছনের দিকে হেলে স্লো ভয়েজে বলে,

“আমি কিন্তু তোমার থেকে অনুমতি চাইছি না! আমি তোমাকে বলছি। সো ইউ হ্যাভ টু ডু ইট!”

তারপর মারসাদ অডিটোরিয়াম ছেড়ে বেরিয়ে যায়। আর আদিরাকে রেখে যায় অথৈ জলে!

_______

সামিরা জানতে পেরেছে, মারসাদের বাবা-মা এখানে মারসাদদের ফ্ল্যাটে এসে উঠেছে। সে সেখানে যায়। মিসেস মীরা সামিরাকে দেখে ভীষণ খুশি হন। তিনি বলেন,
“কেমন আছো, সামিরা?”

হুট করে সামিরা মিসেস মীরাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করার মতো করে বলে,
“আন্টি, আমি ভালো নেই।”

মিসেস মীরা খানিক ভড়কালেন। তিনি সামিরার মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন,
“কেন? কী হয়েছে তোমার?”

সামিরা মিসেস মীরাকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে টিসু দিয়ে চোখ মুছে বলে,
“তোমার ছেলে, আন্টি। তোমার ছেলে আমাকে ভালো থাকতে দিচ্ছেই না। বলছি আজকে তার ফ্রেন্ডদের, ও মাহির ফ্রেন্ডদের সামনে আমাকে ইনসাল্ট করেছে। আমাকে যা নয় তাই বলেছে।”

মিসেস মীরা অবাক হলেন। তিনি ফের শুধালেন,
“কিন্তু কেন? কী হয়েছে ঠিক করে বলোতো।”

সামিরা আবার টিসু দিয়ে চোখ মুখে ঠোঁ*ট কাম*ড়ে বলে,

“আমার অপরাধ কী ছিল, জানো? আমার অপরাধ এইটাই যে, কালকে যেই মেয়ের জন্য তোমার ছেলে জেলে গিয়েছিল, সেই মেয়েকে আমি দুটো কথা বলেছি। আমি ওই মেয়েকে দুটো কথা বলতে দেরি, কিন্তু তোমার ছেলে ও তোমার মেয়ের ওই মেয়ের হয়ে প্রোটেস্ট করতে দেরি নেই। আমার ছেলে কিভাবে পারলো, সবার সামনে আমাকে এভাবে অপমান করার! আই ফিল সো হার্ট, আন্টি।”

বলেই আবার কাঁদতে লাগলো সামিরা। মিসেস মীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেলেন। গতকাল রাতে মাহি তাকে সম্পূর্ণ ঘটনা বলেছে। এখানে তিনি ওই মেয়েটার দোষও দেখতে পাচ্ছেন না। তার ছেলেই একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে। আজকে আবার তার ছেলে সামিরাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেছে। তার ছেলে যে কি চাইছে সেটা তিনিই বুঝতে পারছেন না। এই কথা যদি মারমাদের বাবা জানতে পারেন তাহলে তিনি খুব রাগ করবেন। মিসেস মীরা সামিরার মন ভালো করতে বলেন,

“তুমি কষ্ট পেয়ো না, সামিরা। মারসাদ এলে আমি ও-কে বলব, ও যেন তোমার সাথে আর এরকম না করে। আর কেঁদো না। তুমি বসো আমি দুপুরের রান্নাটা সেরে ফেলি। তুমিও কিন্তু আজ আমাদের সাথে লাঞ্চ করো।”

সামিরা মুচকি হেসে রাজি হয়ে যায়। তারপর মিসেন মীরা রান্নাঘরে চলে গেলে সামিরা বাঁকা হেসে বলে,
“এবার কি করবে, মারসাদ বেবি? তুমি তো আন্টির কথা ফেলতে পারো না। উফ সামিরা! ইউ আর জিনিয়াস!”

______

অডিটোরিয়ামের দরজার বাহিরে মাহি, সাবিহা, রিন্তিরা ও মারসাদের বন্ধুরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তখনই দরজা খুলে মারসাদ বের হয়। মাহি এগিয়ে গিয়ে হন্তদন্ত হয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“তোরা ভিতরে কি কথা বললি, দাভাই?”

“সেটা তোর ভীতু বান্ধবীর থেকেই জেনে নিস!”

মারসাদ সংক্ষেপে জবাব দিয়েই চলে যায়। মারসাদ যাওয়ার পর ওর বন্ধুরাও চলে যায়। তারপর মাহি, সাবিহা ও রিন্তি অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে দেখে আদিরা চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে আছে।

চলবে ইন শা আল্লাহ

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১২
মাহি, সাবিহা ও রিন্তি অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে দেখে আদিরা চুপচাপ একটা বেঞ্চে বসে আছে। ওরা আদিরার পাশে বসে জিজ্ঞাসা করে,

“কী হয়েছে? কী বলল দাভাই?”

আদিরা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“তোর দাভাইয়ের ঘাড়ে ভূ*ত চেপেছে। ওঝা ডাক আর এই ভূ*ত নামা।”

মাহি সহ রিন্তি, সাবিহাও কৌতুহল যেন বেড়ে গেল। মাহি আদিরার মুখখানা নিজের দিকে ঘুরিয়ে কিঞ্চিত ভ্রুকুটি করে ফের শুধালো,
“পরিষ্কার করে বল কী হয়েছে? দাভাই তোকে কী বলেছে?”

আদিরা দৃষ্টি নিচু করে মিনমিন স্বরে বলল,
“তোর দাভাই আমাকে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে!”

আদিরার জবাব শুনে মাহি, রিন্তি ও সাবিহা তিনজনে একত্রে বেশ জোড়েই বলে উঠলো,
“হোয়াট!”

ওদের এই আচমকা চিৎকারে আদিরা কানে হাত দিয়ে দ্রুত কন্ঠে আবার বলল,
“তবে রিয়েল না ফেক!”

এবার ওরা তিনজন একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে একসাথে ফের শুধালো,
“ফেক মানে?”

“ফেক মানে তো ফেকই। মানে উনি বলেছেন, আমাকে উনার গার্লফ্রেন্ড তো হতে হবে কিন্তু আসলে গার্লফ্রেন্ড হবো না! আসলে সবার সামনে গার্লফ্রেন্ড কিন্তু এমনিতে গার্লফ্রেন্ড না। এক্টিং করতে হবে গার্লফ্রেন্ড হওয়ার। আমি কেমন সবকিছুতে প্যাঁচ লাগিয়ে ফেলছি! আমার মাথা কাজ করছে না! পানি হবে? পানি?”

আদিরা তাড়াহুড়ো করে কীসের মধ্যে কী বলল, এখন মাহি, রিন্তি ও সাবিহা হা করে আদিরার মুখ পানে চেয়ে আছে। আদিরা নিজেই রিন্তির ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি পান করে। তারপর একটু দম নিয়ে মাহিকে বলে,

“দেখ মাহি, তোর ভাইকে বুঝিয়ে বল, আমি এইসব এক্টিং করতে পারব না। ঝুট-ঝামেলা আমার ভালো লাগে না। উনি যদি সামিরা আপুর থেকে পিছু ছাড়াতেই চায় তাহলে অন্য উপায় বের করুক। আমাকে ব্যবহার না করুক। এমনিতেই সামিরা আপু আমাকে অপমান করতে এক বিন্দু পরিমান সুযোগও ছাড়ে না। আমার ভালো লাগে না এসব। অনেক কষ্ট করে, পরিবারের থেকে দূরে থেকে ভার্সিটিতে পড়তে এসেছি। কোনো ঝামেলায় জড়িয়ে যদি আমাকে ভার্সিটি থেকে বের করে দেওয়া হয় তাহলে আমার বাবা আমাকে আর পড়াবেন না। সোজা বিয়ে দিয়ে দিবেন। এখানে চান্স পেয়েছি বলেই পড়াচ্ছেন। প্লিজ মাহি, তোর ভাইকে একটু বুঝা।”

তারপর আদিরা নিজের ব্যাগ উঠিয়ে অডিটোরিয়াম থেকে বেরিয়ে যায়। আদিরার পিছু পিছু সাবিহা ও রিন্তিও যায়। মাহি বসে বসে চিন্তায় মগ্ন। তার ভাই যে এসব কেন করছে, সে ঠিক বুঝে উঠতে পারছে না।

________
দুপুরে লাঞ্চ করতে এসে খাবার টেবিলে সামিরাকে দেখে মেজাজ বিগড়ে যায় মারসাদের। মাহি মারসাদকে পাশ কাটিয়ে খাবার টেবিলের দিকেই যাচ্ছিলো তখন মারসাদ মাহিকে আটকায়। তার জিজ্ঞাসা করে,

“এই সামিরা এখানে কেন?”

মাহি জবাবে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
“আমি কীভাবে জানব? আমাকে বলে এসেছে নাকি?”

মাহি কথাটা বলে আবার হাঁটা ধরলে মারসাদ ফের তাকে আটকায়। তারপর কপাল কুঁচকে শুধায়,
“বেশি ত্যাড়ামি করিস না। ঠিক করে বল, এই সামিরা এখানে কেন এসেছে? মা যে এখানে এসেছে, সেটা সামিরাকে কে বলেছে?”

মাহিও উলটো মারসাদের সাথে রাগ দেখিয়ে বলে,
“আজব! তুমি আমাকে কেন জিজ্ঞাসা করছ, দাভাই? আমি তো আর সামিরা আপুকে মায়ের আসার কথা বলব না। তাই না? সামিরা আপু তার হবু শাশুড়ির খোঁজ-খবর রাখার জন্য ননদের সাহায্য তো নেয় না!”

হবু শাশুড়ি ও ননদ কথাটা বলার কারনে মারসাদ মাহিকে মা*রতে তেড়ে গেলে মাহি চোখ ছোটো ছোটো করে বলে,
“আমাকে পরে মে*রো! সামিরা আপু মায়ের কাছে কি বিচার দিয়েছে সেটা তো দেখো! বাবার কানেও সেই কথাটা তুলেছে কী*না দেখো আবার!”

এই বলে মাহি মুখ ভে*ঙচি দিয়ে চলে যায়। মারসাদ দেয়ালে ঘু*ষি দিয়ে আবার নিজের রুমের দিকে যেতে নিলে মিস্টার আরশাদ খান ছেলেকে ডাক দেন।

“নিজের রাগ কমিয়ে খেতে আসো।”

অঅগ্যতা বাধ্য হয়ে মারসাদ ডাইনিং টেবিলের কাছে যায়। খেতে খেতে সামিরা মিস্টার আরশাদ খানকে বলে,
“আঙ্কেল, আপনারা চট্টগ্রামে আসলেন আমাদের বাড়িতে কিন্তু গেলেন না। মম-ড্যাড অনেক মাইন্ড করবে।”

আরশাদ খান বলেন,
“আমরা তো সময় নিয়ে আসিনি। এসেছি তো আমার সুপুত্রের কল্যানে! আবার যখন সময় নিয়ে আসব তখন যাব।”

মারসাদ তার বাবার দিকে এক পলক চেয়ে মাথা নিচু করে খাচ্ছে। তার বাবার রাগ এখনো পড়েনি। সামিরা মারসাদকে এভাবে দেখে মনে মনে বেশ আনন্দ পায়। সামিরা কন্ঠে দুঃখী ভাব টেনে বলে,

“কী বলব, আঙ্কেল? আপনার ছেলে তো মানুষের জন্য নিজের জা*নটাও দিয়ে দিতে হাজির! কিন্তু কার জন্য জা*ন দিচ্ছে সেটা একটু ভেবে-চিন্তে দেখে না! একটা মেয়ে এসে তাকে অভিযোগ করলো, আর সে সেই অভিযোগের উপর সত্য-মিথ্যা বিচার না করে একটা ছেলেকে ইচ্ছে মতো মা*রলো! দোষটা কিন্তু আপনার ছেলেরই, আঙ্কেল। কাউকে কেউ এতো বিশ্বাস করে নাকি? পুলিশ নাকি বলে দিয়েছে, ওই ছেলের বিরুদ্ধে ওই মেয়েকে বিরক্ত করার কোন প্রমাণ নেই। আসলে আঙ্কেল, সবাই বিশ্বাসের যোগ্য না। মেয়েটাকে আপনার দুই ছেলে-মেয়েই খুব বিশ্বাস করে। ভোলাভালা চেহারা তো!”

সামিরার কথাগুলো আর মাহি ও মারসাদ দুজনেই শুনছে। মাহি ভ্রু কুঁচকে সামিরার দিকে চেয়ে আছে, আর মারসাদ রাগে খাওয়া বন্ধ করে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে টেবিলের দিকে চেয়ে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। মিসেস মীরা ছেলে ও মেয়ে উভয়ের প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করে সামিরাকে বলে,

“সামিরা, খাবার টেবিলে এসব টপিক আর তুলো না। ওই ছেলেটার ক্রি*মিনাল রেকর্ডও কিন্তু আছে। এখন খাবার খেয়ে নাও। ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”

সামিরা আবার কিছু বলতে নিলে মিসেস মীরা সামিরার প্লেটে চিকেনের আরেকটা ফ্রা*ইড পিস তুলে দিতে নেয়। যার দরুণ সামিরাকে থামতে হয়। মারসাদও তৎক্ষণাৎ খাবার টেবিল ছেড়ে উঠে যায়। মিসেস মীরা তা দেখে উৎকণ্ঠিত হয়ে ছেলেকে ডাকেন,

“বাবু, খাবার তো কিছুই খেলি না। না খেয়ে উঠে গেলি কেন, বাবা?”

মারসাদ নিজের রুমে ঢুকতে ঢুকতে জবাব দেয়,
“আর পেট ভরে গেছে, মা। তাছাড়া আমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি। তোমরা পেট ভরে খাও!”

তারপর মারসাদ নিজের রুমের দরজা লাগিয়ে দেয়। এবার মাহি সামিরাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
“আমি তোমার প্রবলেম ঠিকভাবে বুঝতে পারছি না, সামিরা আপু। তুমি সব সময়, সব কিছুতে শুধু আদুর ভুল ধরো! তুমি কি গিয়েছিলে কালকে পুলিশ স্টেশনেম তুমি ঘটনাস্থলে ছিলে? লোকমুখে শোনা কথা শুনে ডিটেলসে ব্যাখ্যা করতে যাচ্ছ কেন? তুমি তো আজকে সকালেও আদুকে যা নয় তাই বলে আসলে! আর আদু ভাইয়াকে বি*চার দেয়নি। ভাইয়া নিজেই ওই ছেলেকে ফলো করতে দেখেছে। আর….”

“আহ্, মাহি! আমি এই টপিক নিয়ে কথা বলতে না করলাম তো। খাবার টেবিলে খেতে বসেছ, চুপচাপ খাও না!”

মিসেস মীরা মাহিকে কথার মাঝে বাধ সাধেন। মাহিও আর কিছু না বলে চুপচাপ খেতে থাকে। আর সামিরা দাঁতে দাঁত পি*ষে বিরক্তি ও রাগ নিয়ে একটু একটু করে খাচ্ছে। এদিকে আরশাদ খানও চুপচাপ খাচ্ছেন। তিনি মাহি বা সামিরা কারো কথারই কোন প্রতিক্রিয়া দেখালেন না। কিন্তু সবার কথাই মন দিয়ে শুনলেন।

চলবে ইন শা আল্লাহ
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে