#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১০
সকাল সকাল স্টুডেন্টকে পড়ানোর জন্য রওনা করেছে আদিরা। রাস্তায় পথ চলতে চলতে মনের মাঝে ভয় ও শঙ্কা কাজ করছে তার। বিড়ালের শব্দ পেয়েও কয়েকবার শিউরে উঠেছে সে। যার দরুণ বেশ কয়েকবার পিছনে ফিরেও কাউকে এরকম দেখতে পায়নি তারপর আবার পথ চলতে শুরু করে। এবারেও আদিরা পেছনে ফিরে দেখে নিয়ে আবার সামনে ফিরেই ভীষণ ভাবে চমকে উঠে। সেই সাথে চিৎকার করে উঠে নিজেই নিজের মুখ চেপে ধরে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটিও নিজের কান চেপে ধরেছে। সামনে দাঁড়ানো মানুষটি হচ্ছে মারসাদ! মারসাদ আদিরার এভাবে চিৎকার করে উঠাতে ধ*মকে বলে,
“চিৎকার করে উঠলে কেন? আমি বা*ঘ না ভা*ল্লুক?”
আদিরা নিজের মুখ চেপে ধরা অবস্থাতেই তাড়াতাড়ি মাথা নাড়ে। মারসাদ তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে এদিক-সেদিক একবার চেয়ে জিজ্ঞাসা করে,
“কোথায় যাচ্ছো?”
মারসাদ প্রশ্নটা করে দেখে আদিরা তার দিকে নিষ্পলক চেয়ে আছে। মারসাদ তা দেখে আদিরার চোখের সামনে তুড়ি বাজালে আদিরা থতমত খেয়ে নজর নিচু করে নেয়। মারসাদ ফের বলে,
“এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে না থেকে যেটা জিজ্ঞাসা করছি সেটার উত্তর দাও।”
“স্টুডেন্টের বাসায়।”
“ওহ। চলো।”
বলেই মারসাদ হাঁটা ধরলো। আদিরা মারসাদের নিঃসঙ্কোচ সাথে চলতে চাওয়াতে যেন আরেক দফা ঝটকা খেলো। ঠায় সেইখানেই দাঁড়িয়ে রইল। মারসাদ কিছুদূর গিয়ে পিছনে ঘুরে দেখলো আদিরা আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে আছে। মারসাদ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে পিছনে ফিরে গেল আদিরার কাছে। তারপর বলল,
“এভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকলে কী তোমার স্টুডেন্টকে পড়ানো হবে? দেরি হচ্ছে না?”
আদিরার হুঁশ ফিরে সে তাড়াতাড়ি করে হাঁটা শুরু করে। মারসাদও আদিরার স্টুডেন্টের বাড়ি পর্যন্ত যায়।
________
ভার্সিটির ক্যাম্পাসে আদিরা উদাসীন হয়ে বসে আছে। আর ওর পাশেই ওর তিন বান্ধবী কোনো একটা বিষয় নিয়ে কথা বলছে। রিন্তি এবার আদিরাকে জিজ্ঞাসা করে,
“আদু, আজ আবার ওই ছেলে বা কেউ তোকে রাস্তায় ডিস্টার্ব করেনি তো?”
আদিরা অন্যমনস্ক ছিল। সে আনমনেই বলে ফেলে,
“হ্যাঁ!”
সাবিহা, মাহি ও রিন্তি অবাক হয়। কাল এতো মা*র খাওয়ার পরও ওই ছেলে আবার আদিরার পিছু নিয়েছে? মাহি প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আজ কিছু বলেছে? অস*ভ্যতামি করেছে? দাভাইকে বলতে হবে। ওই ছেলে একে তো বেহায়া আবার অতিরিক্ত সাহস দেখাচ্ছে।”
মাহির কথা শুনে আদিরা মনোযোগী হয়। সে পাল্টা প্রশ্ন করে বসে,
“কে? কার কথা বলছিস?”
আদিরার এহেন প্রশ্ন শুনে রিন্তি, মাহি ও সাবিহা একে-অপরের দিকে তাকিয়ে ফের আদিরার দিকে সন্দিহান হয়ে তাকায়। সাবিহা জিজ্ঞাসা করে,
“কার কথা বলছি মানে? তুই কি আমাদের কোনো কথা শুনছিস?”
আদিরা দেখে তার তিন বান্ধবী তার দিকে কেমন করে চেয়ে আছে। সে হাসার চেষ্টা করে বলে,
“আসলে কালকের ঘটনাটা এখনো মাথা থেকে বের করতে পারিনি। তাই একটু অন্যমনস্ক হয়ে গিয়েছিলাম। তোরা কি বিষয়ে কথা বলছিলি?”
মাহি প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তুই আগে এটা বল, কালকের মা*র খাওয়া ছেলেটা কি তোকে আজ কোনো রকম বিরক্ত করেছে?”
আদিরা না বোধক মাথা নাড়ে। তারপর বলে,
“বিরক্ত তো করেনি কিন্তু আমার মন থেকে ভয় কমছে না। আমি কোনো রকম ঝামেলা চাইনি বলে বিষয়টা কাউকে জানাতে চাইনি। এখন প্রতিনিয়ত ভয় করছে ছেলেটা যদি প্রতিশো*ধ নিতে আমার সাথে খারাপ কিছু করতে চায়? কারণ আমার কারণেই তো সে মা*র খেয়েছে।”
আদিরা কথাটা বলে শেষ করতেই একটা মেয়েলি কন্ঠস্বর ভেসে আসে।
“ঠিকই বলেছ! তোমার জন্য একটা ছেলে কালকে অযথা মা*র খেয়েছে এবং আরেকটা ছেলে অযথা জেলে গিয়েছে। পু*লিশের খাতায় নাম লিখিয়ে এসেছে।”
আদিরা, মাহি, সাবিহা ও রিন্তি একযোগে পিছনে তাকিয়ে দেখে সামিরা দাঁড়ানো। সামিরা সাথে সামিরার আরেক বান্ধবীও। মাহি বিপরীতে কিছু বলতে নিলে সামিরা হাতের ইশারায় মাহিকে চুপ করতে বলে। তারপর সে বলে,
“নিজেকে খুব বোকা, ডা*ম্ব ভাবে সবার সামনে প্রেজেন্ট করো! কিন্তু তুমি মোটেও ডাম্ব নও। ইউ আর সো ক্লেভার, ইউ নো!”
তারপর দুটো তালি দিলো সামিরা। সামিরার এই তালি যে ব্যাঙ্গাত্নক তা বুঝতে দেরি নেই কারোই। মাহি এবার বলে উঠে,
“তুমি ওকে এভাবে বলতে পারো না, সামিরা আপু।”
“প্লিজ মাহি, আমার ও আদিরের কথার মাঝখানে তুমি কথা বলো না। তুমি শুধু তোমার বান্ধবীর উপরের ভোলাভালা রূপটাই দেখেছ। সে যে ভেতরে ভেতরে কতটা চালাক ও চতুর সেটা তুমি জানো না। তোমাদেরকে দেখায় সে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে জানে না! কিন্তু মাছটাও সেই ভাজছে!”
রিন্তি ফিসফিস করে সাবিহাকে বলে,
“এই সামিরা আপু আদিরাকে কেন এত অপছন্দ করে? যখন তখন যেখানে সেখানে সে আদিরাকে কথা শোনাতে চলে আসে!”
সাবিহাও কন্ঠস্বর নিচু করে বলে,
“আমার মনে হয় সে মনে করে, আদিরা তার কাছ থেকে মারসাদ ভাইয়াকে ছিনিয়ে নেবে! অথচ মারসাদ ভাইয়া কখনো তার ছিলই না!”
“তুইও, সাবিহা! আদিরা মারসাদ ভাইয়াকে য*মের মত ভয় পায়! আর তুই কী-না বলছিস, আদিরা সামিরা আপুর থেকে উনাকে ছিনিয়ে নেবে? আগে আদিরা মারসাদ ভাইয়াকে ভয় পাওয়াটা কমাক। তারপর না হয় দেখা যাবে।”
বলেই মিটিমিটি হাসলো রিন্তি। ওদিকে সামিরা আদিরার হাত ধরে টেনে তুলেছে। তারপর শা*সানোর স্বরে বলে,
“তোমাকে বারবার বলেছি মারসাদের থেকে দূরে থাকবে। তুমি কেন ওর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করো? তোমাকে একই কথা বারবার কেন আমাকে বলতে হয়? এতো বেহায়া কেন তুমি? লজ্জা করে না?”
আদিরার দৃষ্টি নত। তার চোখ ভর্তি অশ্রু জমে উঠেছে। যেকোনো সময় তা মাটিতে টুপ করে পড়বে। মাহি সামিরার এহেন আচরণে খুবই বিরক্ত। সে আদিরার হাত সামিরার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে কন্ঠে বিরক্তি নিয়ে বলে উঠে,
“তোমার সমস্যা কী, সামিরা আপু? তুমি কেন আদিরার পিছনে পড়ে আছো? আদিরা কার থেকে দূরে থাকবে, আর কার কাছে থাকবে সেটা কি তোমাকে বলতে হবে? একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেলছো না তুমি?
আর আদিরা যদি আমার দাভাইয়ের কাছে থাকেও তাতে তোমার সমস্যা কী? সত্যি করে বলোতো, দাভাই কে হয় তোমার? আমার জানা মতে, তুমি দাভাইকে পছন্দ করো। কিন্তু দাভাই তোমাকে পছন্দ করে না। তাই দাভাইয়ের সাথে, কাছে, পেছনে কে থাকবে না থাকবে সেটা তোমার দেখার বিষয় না।”
আদিরা সাবিহাকে জড়িয়ে কাঁদছে আর সামিরা ফুঁসছে। অতঃপর চিৎকার করে উঠে। আর বলে,
“ওই থার্ড ক্লাস মেয়ের জন্য তুমি আমাকে ইনসাল্ট করছো? তুমি জানো না আমি কে?”
“তুমি তো জানো, তুমি কে? মাহির না জানলেও চলবে।”
কথাটা শুনে উপস্থিত সকলে পাশে ফিরে তাকায়। দেখে মারসাদ ও তার বন্ধুরা আসছে। মারসাদ ওদের কাছে এসে বলে,
“জানো তো তুমি কে? নাকি তোমার পরিচয়টা আমায় দিতে হবে?”
সামিরা ভ্রুকুটি করে কিছু বলতে আঙুল তুলে মুখ খুলবে, তার আগেই মারসাদ বলে,
“তুমি বাবার বিজনেস পার্টনারের মেয়ে। তবে আরেকটা পরিচয় হচ্ছে, তুমি আমার মায়ের দূর সম্পর্কের বোনের মেয়ে। এটাই তো তোমার পরিচয়। আর কাকে যেন থার্ড ক্লাস বললে? কামঅন সামিরা! কথায় কথায় সবার ক্লাস বিচার করতে কেন যাও? তোমার নিজের ক্লাস তুমি জানো তো? তোমার নিজের ক্লাস জানলেই হবে। অন্য কেউ ফার্স্ট ক্লাস, সেকেন্ড ক্লাস নাকি থার্ড ক্লাস সেটা তোমার জানতে হবে না।”
সামিরা হতবাক হয়ে মারসাদের দিকে চেয়ে আছে। মারসাদ তাকে এভাবে বলবে তা সে কল্পনাও করেনি। এভাবে অপমান করলো তাকে? রাগে তার চোখ জ্বা*লা করছে। আদিরার দিকে তাকিয়ে তার রাগ আরও বাড়ছে। সে রাগান্বিত কণ্ঠে বলে উঠে,
“কাজটা তোমরা ভালো করলে না। আমাকে এভাবে অপমান তোমরা করতে পারো না। তোমাকে ভালোবাসি বলেই আমি…..”
“হোল্ড অন! তুমি আমাকে ভালবাসতেই পারো। এতে আমার তো কিছু যায় আসে না। কিন্তু তুমি আমার কারনে আরেকটা নিরপরাধ মেয়েকে মুখে যা আসবে, মনে যা আসবে তাই বলে বসবে! এইটা করার রাইটও তোমার নেই। কেউ চুপ করে আছে বলে তাকে সব সময় কথা শোনাবে এই ধরনের মানসিকতা রাখতে পারে এমন মেয়ে যে কাউকে ভালবাসতে পারে, সেটাই তো বিশ্বাস হয় না আমার! প্লিজ সামিরা, তোমার এই ভালোবাসা তুমি তোমার কাছেই রাখো, তোমার মধ্যে রাখো। এগুলো মানুষের সামনে প্রকাশ করতে যেও না। নয়তো কিছুদিন পর লোক তোমাকেই বেহায়া বলবে!”
কথাগুলো শুনে সামিরার চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। সে কাঁদতে কাঁদতে ছুটে সেখান থেকে চলে যায়। সামিরার পিছু পিছু সামিরার বান্ধবীও চলে যায়। মারসাদ এবার এগিয়ে গিয়ে মাহিকে বলে,
“তোর বান্ধবীকে নিয়ে অডিটোরিয়ামে আয়। জলদি আসবি।”
তারপর মারসাদও সেখান থেকে চলে যায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ