#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৯
সন্ধ্যার পর মারসাদের বাবা আরশাদ খান ছেলের জন্য উকিল ঠিক করে জামিনের ব্যবস্থা করেন। তারপরই মারসাদকে ছাড়া হয়। পু*লিশ মারসাদকে বলেন,
“দেখুন মিস্টার মারসাদ, আপনি হয়তো একটা মেয়ের সম্মান বাঁচাতে মা*রামা*রি করেছেন। কিন্তু আপনার নামটা আইনের খাতায় উঠে গেছে। তাই বলব এসবে আর জড়াবেন না। মিস আদিরাকে যেন দেলোয়ার আর বিরক্ত করতে না পারে সেটা আমরা দেখব। তাছাড়া দেলোয়ারের নামে ২-৩টা চু*রি, ছি*নতাই এসবের কে-স আছে। সেও জামিনে ছাড়া পাওয়া আবার জে*লও খেটেছে। এবারও যদি দেলোয়ারের বিরুদ্ধে সঠিক প্রুভ পেতাম তবে তাকে জেলে ভরতাম। কিন্তু এবার আমরা কোনো প্রুভ পাইনি। আপনি বুঝতে পারছেন, আমি কী বলছি?”
মারসাদ সব শুনে চুপ করে রইল। কিছু ভাবছে সে। আহনাফ বিষয়টা লক্ষ্য করে পু*লিশকে বলে,
“জি, অফিসার। আমরা বুঝতে পারছি। ধন্যবাদ, অফিসার।”
তারপর আহনাফ মারসাদের হাত ধরে বাকিদের নিয়ে পু*লিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যায়। বাইরে আসতেই মারসাদ আহনাফের হাত ছেড়ে বলে,
“তোরা যা। আমি যেতে পারব।”
মৃদুল বলে উঠে,
“না বাবা না! তোকে একা ছাড়ব? এহ! পা*গ*লা কু** কা*ম*ড়া*ইছে নাকি! যা করছো তুমি! মাফ চাই। আপনেরে আমরা আপনার বাসায় দিয়ে আসমু। আর মাহিরে বলে আসমু যেন তোর রুমের বাহিরে তালা লাগায়!”
রিহানও তাল মেলায় সাথে।
“আমি আর মৃদুল যদি তোকে হুট করে গেইটের বাহিরে দিকে যেতে না দেখতাম, তাহলে? তুই আরও আগেই ছেলেটারে মে*রে ফেলতি! আমরা দেখেও তোরে আটকাতে পারিনি। এতো রাগ কেন তোর?”
রবিন কিছু একটা চিন্তা করে বলে ফেলে,
“তুই কি আদিরাকে পছন্দ করিস?”
কথাটা বলা মাত্রই মারসাদ ধা*রালো দৃষ্টিতে তাকায় রবিনের দিকে। রবিন মৃদুলের পিছনে গিয়ে খানিক আড়ালে দাঁড়িয়ে কাঁচুমাচু করে বলে,
“না মানে এর আগেও তো কয়েকজন মেয়ে তোর কাছে এসে কোনো ছেলে ই*ভটি*জিং করেছে বলে বিচার দিয়েছিল। তুই তো তাদেরও বিচার করেছিস। ছেলেগুলোকে তোর কাছে ডেকে এনে দুই-তিনটা থা*প্প*ড় দিয়ে কা*ন ধরে মাফ চাইয়েছিস। কিন্তু এবারেরটা একটু বেশিই হয়ে গেল বলে বললাম। আর কিছু না।”
রবিনের পুরো কথা শুনে আহনাফ, রিহান, মৃদুল তিনজনই মারসাদের দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। মারসাদ সবার এমন করে তাকানো দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে ফেলে। তারপর বলে,
“তোরা সবসময় দুই কদম বেশি বুঝিস! আর ফা*লতু বকবক করিস। যা এখান থেকে!”
তারপর নিজেই ওদের রেখে হনহনিয়ে বেরিয়ে যায়। মারসাদ যাওয়ার পর রিহান বলে,
“ডাল মে কুচ তো বহত বড়া কালা হে!”
আহনাফও বলে,
“আদিরাও বলছিল, আহনাফ নিজে লাইব্রেরিতে গিয়ে ওর কাছ থেকে জানতে গিয়েছিল। আদিরা বিচার দেয়নি। তারমানে…”
চার বন্ধু এক যোগে হেসে উঠে।
________
আদিরা জানালার ধারে নিজের পড়ার টেবিলের চেয়ারে বসে আছে। পড়ার টেবিলের চেয়ারে বসে থাকলেও সে কিন্তু পড়ছে না! সামনে বই খোলা, দখিনা জানালা দিয়ে মৃদুমন্দ বাতাসে তার খোলা চুল গুলো আপনমনে উড়ছে। আর এদিকে আনমনা আদিরা গালে হাত দিয়ে আঁধারিয়া অম্বরে নির্নিমেষ চেয়ে আছে। তার হৃদয়পটে বারবার আজকের ঘটনা ভেসে উঠছে। একবার মা*রামা*রির ঘটনা, তো আরেকবার লাইব্রেরির ঘটনা, আবার মেডিকেল সেন্টারে মারসাদের সেই তীক্ষ্ণ ধা*রালো দৃষ্টি! আদিরা কিছুতেই এগুলো থেকে নিজের মনকে বের করতে পারছে না। পড়াতেও মন সংযোগ করতে পারছে না। বুক ধড়ফড় করছে তার। মন কেমন অস্থির লাগছে। মারসাদের সেই ধা*রালো দৃষ্টি, লাইব্রেরিতে তার দিকে ঝুঁকে আসা, সব কেমন তার কাছে তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। আকাশ দেখতে দেখতেই গলা শুকিয়ে গেছে তার। তাড়াতাড়ি করে বোতল থেকে তিন ঢোক পানি খেয়ে জানালার দিকে তাকাতেই নিচের রাস্তায় কাউকে দেখতে পায়। প্রথমে ঠিক ভাবে খেয়াল না করে বোতলের মুখ লাগিয়ে বোতল রাখতে নিলে তার মন তাকে সাবধান করে। দ্রুত আবার জানালার দিকে তাকাতেই দেখে নিচে কেউ নেই। একটা রিকশা চলে গেল। আদিরা বুকে হাত দিয়ে লম্বা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে জোড় করে বইয়ের দিকে মনোযোগ দিলো।
এদিকে মারসাদ, মোটা বৈদ্যুতিক খুঁটির পেছনে পাশ হয়ে নিজেকে আড়াল করে রেখেছে। সেখান থেকে আরেকবার উঁকি দিয়ে দেখে আদিরা এখন পড়ছে। মারসাদ বেশ বিরক্ত হলো। নিজে নিজেই বলছে,
“সবগুলো জানালা খুলে রেখে কে পড়তে বসে? রাস্তা থেকে তো রুমের ভেতরে কে ওইখানে বসা সবই দেখা যায়! এই মেয়েটার বুদ্ধি হবে না!”
মারসাদ কিছু একটা ভাবলো। তারপর রাস্তায় এদিক সেদিক তাকিয়ে একটা ঢি*ল উঠিয়ে আদিরার জানালা বরাবর ছুঁ*ড়লো! ঢি*ল ছুঁ*রে তৎক্ষণাৎ মারসাদ কিছুটা দূরে গিয়ে লুকালো। আদিরা হঠাৎ জানালা দিয়ে পড়ার টেবিল ঢি*ল আসা দেখে থতমত খেয়ে ঘাবড়ে যায়। ঢি*ল আসা দেখে আদিরার পাশের বেডের মেয়েটা যে কী-না শুয়ে শুয়ে পড়ছিল, সেও উঠে বসে। সে বলে,
“হঠাৎ কে রুমের ভেতর এভাবে ঢি*ল ছুঁ*ড়লো? আজব মানুষ তো! ঢি*ল ছুঁ*ড়লো কে?”
মেয়েটার কথা শুনেও রুমে থাকা আরও দুই জন মেয়েও আদিরার কাছে এগিয়ে আসে। আদিরা বলে,
“আমি তো জানিনা। আমি তো পড়ছিলাম। হঠাৎই ঢি*লটা আমার টেবিলে এসে পড়লো! (আদিরা সামান্য উঁকিঝুঁকি দিয়ে) রাস্তায় তো এখন কাউকে দেখা যাচ্ছে না।”
“কোনো এক অস*ভ্য ছেলেই হবে! ম্যা*নারলেস! একটা মেয়ের জানালার দিকে কেউ এভাবে ঢি*ল ছুঁ*ড়ে!”
“এই আদিরা, তোকে যে রাস্তায় ফলো করতো, সেই ছেলেটা না-তো আবার?”
আদিরা এবার আরও ভয় পেয়ে যায়। সে বলে,
“এভাবে বলো না, আপু। হয়তো কোনো বাচ্চা এই কাজ করেছে। ”
“আদিরা, তুই নিজেকে স্বান্ত্বনা দিতে বাচ্চার অজুহাত টানিস না। এখন রাত নয়টার মতো বাজে, এখন কোনো বাচ্চা বুঝি রাস্তায় থাকে? কোনো ব*খাটেরই কাজ এগুলা। তুই জানালা বন্ধ করে রাখ। সবগুলো জানালা খুলে রাখিস কেন? একটা খুললেই তো হয়। বন্ধ কর।”
আদিরা ফটাফট সবগুলো জানালা বন্ধ করে পর্দা টেনে দিলো। তারপর ওর রুমমেটরাও নিজেদের জায়গায় চলে গেলো। কিন্তু আদিরার মনে ভয় যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে! সে তো এখন ওই ছেলেটার কাজ ভেবেই বারবার ঘামছে।
এদিকে মারসাদ বাঁকা হেসে নিজে নিজে বলে,
“ভীতু মেয়েকে ঠিক লাইনে আনতে ভ*য়ই যথেষ্ট! এখন থেকে আর সে রাতে সবগুলো জানালা খুলে রাখবে না।”
তারপর মারসাদ একটা রিকশা ডেকে উঠে বসলো।
_____
রাত প্রায় সাড়ে নয়টার দিকে মারসাদ তার বাসায় ফিরলো। বাসায় ফিরেই দেখলো মাহি একা না। মারসাদের মা, বাবা, বড়ো বোন, বোনজামাই সবাই বসা। মিস্টার আরশাদ খানের চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ। মিলি তার বাবার রাগ দেখে ছোটো ভাইকে বাঁচাতে আস্তে আস্তে উঠে এসে মারসাদের কা*ন টেনে ধরলো। তারপর বলল,
“এতো পা*জি কেন তুই? তোর এই মা*রামা*রি করার স্বভাবটা যাবে না নাকি?”
মারসাদ নিজের কান ছাঁড়ানোর প্রয়াসে বলে উঠে,
“আহ্, আপিলি। আমার কা*ন ছাড়। লাগছে।”
“লাগুক! লাগার জন্যই তো তোর কান ধরেছি। জানিস, তোর খবরটা শুনে আমরা কত চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম? মা তো কেঁদে-কেটেই শেষ! দেখ মায়ের মুখটা একবার। কিছুদিন আগেই হাত-পা ভে*ঙে মায়ের কাছে গিয়েছিল, আজকে আরেকজনেরটা ভা*ঙতে উদ্ধত হয়েছিস! তারপর পু*লিশি কান্ডও ঘটিয়েছিস!”
মারসাদ বলে,
“আমার রাগ উঠে গিয়েছিল। আর ওই ছেলেটা একটা মেয়েকে….”
মারসাদ তার কথার শেষ করার আগেই আরশাদ খান ধ*মকে উঠেন,
“চুপ করো তুমি। ওসব বিচার করার জন্য দেশে পু*লিশ আছে। তোমাকে কেন ভার্সিটি ক্যাম্পাসে মা*রামা*রি করে একটা ছেলেকে আধম*রা করতে হবে? ছেলেটা যদি আজকে মা*রা যেত, তাহলে তুমি এখন এই সময়ে এইখানে থাকতে পারতে না! জামিনেও কিচ্ছু হতো না।”
মারসাদ চোখ নামিয়ে ফেলে। আরশাদ খান আবার বলেন,
“তুমি জানো, তোমার এই ঘটনার জন্য আমার কতটা মানহা*নি হয়েছে? আমার পার্টির লোকেরাই আমাকে অন্য নজরে দেখছে। নিজের রাগকে কন্ট্রোলে রাখো। এভাবে সব জায়গায় নিজের এমন উদ্ধত আচরণ প্রকাশ করবে না।”
মারসাদ ছোটো করে সরি বলে নিজের ঘরে চলে যায়। মিসেস মীরা স্বামীকে বলেন,
“ছেলেকে এখন এভাবে না বললেও পারতে। ছেলেটা নিজেও তো মা*র খেয়েছে।”
“তুমি চুপ করো, মীরা! তোমার অন্যায়ের উপর পর্দা ঢালার চেষ্টা করবে না। তাকে আমি সবসময় এপ্রিসিয়েট করি কিন্তু তার এরকম উদ্ধত আচরণকে প্রশ্রয় দিব না। একটা ছোটো ঘটনায় পু*লিশের খাতায় সে নাম লিখিয়ে ফেলেছে! বুঝতে পারছো তুমি?”
মিসেস মীরা চুপ করে গেলেন। মাহি ও মিলি এসে এবার তাদের বাবাকে সামলাচ্ছে। এদিকে মিলির স্বামী রাদিব বসে বসে এই ফ্যামিলির সবকিছু অবজার্ভ করছে!
চলবে ইন শা আল্লাহ