#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৭
বৃষ্টির মধ্যে ভার্সিটির মেইন গেটের কাছে বিশাল জটলা লেগেছে। ভার্সিটির ভিপি পদে দাঁড়ানো মারসাদ ইশরাক এক ছেলেকে উদম কেলানি দিচ্ছে। আর মারসাদের বন্ধু মৃদুল ও রিহান মারসাদকে থামাতে গিয়ে নিজেরাও দুয়েকটা খেয়ে মাটিতে পড়ে গেছে! তারপর আবার উঠে ধরতে যাচ্ছে। রবিন ভয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে বারবার আহনাফের নাম্বারে কল লাগাচ্ছে। এদিকে আহনাফ রিকশায় থাকার কারণে পকেট থেকে ফোন বের করতে কিছুটা দেরি হয়। ফোন বের করে দেখে রবিন তাকে চার-পাঁচ বার কল করেছে। আহনাফ তা দেখে চিন্তায় পড়ে গেল। অতঃপর সময় নষ্ট না করে দ্রুত রবিনকে কল করে। রবিন কল রিসিভ করেই বলা শুরু করে,
“জলদি মেইন গেইটের কাছে আয়। এখানে মারসাদ মা*রামা*রি শুরু করে দিয়েছে!”
আহনাফ আঁতকে উঠে। সে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“মা*রামা*রি শুরু করে দিয়েছে মানে? কার সাথে? সাগরের সাথে?”
“আরে না। সাগর না। জানি না কার সাথে! একটা ছেলেকে হঠাৎই মা*রতে শুরু করেছে। মৃদুল, রিহান থামাতে গিয়েও মা*ইর খে*য়ে এসেছে। দোস্ত, তুই তাড়াতাড়ি আয়। তুই ছাড়া মারসাদকে কেউ থামাতে পারবে না। আমার ভয় করতেছে, পুলিশ কেস না হয়ে যায়! প্লিজ তাড়াতাড়ি আয়!”
আহনাফ দ্রুত বলে,
“আসছি আমি।”
তারপর আহনাফ ফোন কেটে রিক্সাওয়ালা মামাকে বলে,
“মামা মেইন গেটের দিকে তাড়াতাড়ি নেন। তাড়াতাড়ি!”
আহনাফকে হঠাৎ এত বিচলিত হতে দেখে মাহি সন্দিহান হয়ে যে শুধায়,
“কী হয়েছে? আপনি এরকম করছেন কেন? ”
“কী হয়েছে সেটা সেখানে গেলেই বুঝতে পারবা! তোমার ভাই কি আমাকে একটু শান্তি দেয়? দুইটা ঘন্টা হয়নি আর সে! উফ্! মামা, তাড়াতাড়ি চালান না?”
আহনাফের অস্থির অবস্থা। রিক্সাওয়ালা মামা জবাবে বলেন,
“মামা, এটা রিকশা! এটা কোন প্লেন না যে আমি উড়াইয়া লইয়া যামু!”(আমি চট্টগ্রামের ভাষা জানিনা। তাই লোকাল রিকশাচালকরা যেভাবে বলে সেভাবে দিলাম।)
আহনাফ সময় গুনছে আর মাহি এদিকে চিন্তিত তার ভাই আবার কী করে বসেছে!
মারসাদের মা*রামা*রির ঘটনার কথা পুরো ভার্সিটিতে ছড়িয়ে পড়েছে। আদিরা ব্যাগ গুছিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরোনোর সময় দুইটা মেয়েকে বলতে শুনেছে,
“মারসাদ ভাইয়া কী করেছে জানিস? মেইন গেইটের কাছে একটা ছেলেকে ইচ্ছে মতো মা*রছে। তার বন্ধুরাও তাকে আটকে রাখতে পারছে না!”
“কিন্তু কেন মা*রছে? হঠাৎ করে কাউকে অযথা মা*রবে কেন?”
“কিজানি! আমার তো ভয় হচ্ছে পু*লিশ না এসে পড়ে! দুয়েকজনকে বলতে শুনলাম যে পু*লিশ কেস হয়ে যেতে পারে যেভাবে মা*রছে!”
“চল তো দেখে আসি। এই বৃষ্টির মধ্যে ভার্সিটিতে এসব ঝামেলা কি ভালো লাগে বল?”
মেয়ে দুটো চলে যায়। আদিরা কথাগুলো শুনে কেমন ঘাবড়ে যায়। তার ভয় হচ্ছে, মারসাদ আবার ওই ছেলেটাকে মা*রছে না তো? কিছুক্ষণ আগেই তো মারসাদ তার কাছে এসে ওই ছেলেটার সম্পর্কে জানতে চাইলো। তারপর রেগে বেরিয়ে গেল। যদি সত্যি সত্যি মারসাদ ওই ছেলেটাকেই মা*রে? তাহলে? ভীষণ ভয় পেয়ে গেল আদিরা। তাড়াতাড়ি করে ছুট লাগালো সেদিকে।
_______
মা*রামা*রি এক পক্ষের বললে ভুল হবে। দুই পক্ষেই চলছে। শুরুটা মারসাদ করেছে। তবে ওই ছেলেটার অবস্থা বেহাল। ছেলেটাকে রাস্তায় ফেলে তাকে ইচ্ছে মতো মারতে মারতে মারসাদ বলছে,
“আর কোনো মেয়েকে ডিস্টার্ব করবি? বল? কথা বলিস না কেনো এখন? অচেনা মেয়েদের ফলো করবি আর?”
ছেলেটা হাত জোগ করে ইশারায় মাথা নাড়াচ্ছে। কিন্তু মারসাদ তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছে না। এরইমধ্যে আহনাফ এসে বৃষ্টির মধ্যে রিকশা থেকে নেমে দৌঁড়ে মারসাদকে ঝাপটে ধরে আটকায়। মৃদুল ও রিহান ছেলেটাকে উঠায়। ছেলেটা উঠে বসে ওদেরকে ঝাড়া দিয়ে ফেলে অকথ্য গা*লাগা*ল ও হু*মকি দিয়ে কোনোমতে পালিয়ে যায়। মারসাদ আবারও তেড়ে যাচ্ছিলো কিন্তু আহনাফ টেনে ধরে রাখে।
আদিরা মানুষের ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে এই অবস্থা দেখে ভয়ে কি করবে না করবে বুঝে উঠতে পারছে না। তারপর কিছুটা দূরে মাহিকে দেখে মাহির কাছে ছুটে যায়। মাহি আদিরাকে দেখে বিচলিত হয়ে বলে উঠে,
“কী যে হচ্ছে, আদু? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। দাভাই কেন ছেলেটাকে এভাবে মারলো? এখনো যেভাবে রেগে আছে, জিজ্ঞাসা করলে কিছু বলবে না। তুই এখানে ছিলি? শুনেছিস কিছু? জানিস কিছু?”
আদিরা উত্তরে কী বলবে ভাবছে। তখন পাশ থেকে একটা মেয়ে বলে উঠে,
“আরে মাহি, এটা একটা মেয়ে ঘটিত বিষয়! তোমার দাভাই একটা মেয়ের জন্য ওই ছেলেটার গায়ে হা*ত তুলেছে। ছেলেটার কী যে বাজে অবস্থা করেছে! ছেলেটা নাকি একটা মেয়েকে ডিস্টার্ব করতো তাই। এখন যদি ছেলেটা গিয়ে পু*লিশ কম*প্লেন করে, তাহলে কি ওই মেয়েটা আসবে তোমার দাভাইকে বাঁচাতে?”
মাহি শুনে চিন্তায় পড়ে গেল। আদিরা ভাবলো, মাহিকে বিষয়টা জানাবে। তাই বলল,
“মাহি, আমার সাথে একটু… একটু আয় না?”
“তোর আবার কী হয়েছে?”
“আয় না। বলছি।”
তারপর আদিরা মাহিকে নিয়ে একটু দূরে গিয়ে লাইব্রেরির ঘটনাটা বলে। ওই ছেলেটা যে কিছুদিন যাবত আদিরাকে বিরক্ত করছে তাও বলে। সব শুনে মাহি মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“এতো বো*কা কেন তুই? আহনাফ আমাকে একটু আগে বলেছিল, তোকে একটা ছেলে কিছুদিন যাবত ফলো করছে। কিন্তু আমার ধারনার বাইরে ছিল যে দাভাই ওই ছেলেটাকেই এভাবে মা*রলো! তারউপর তোকে একটা ছেলে বিরক্ত করছে অথচ আমি জানিনা! হচ্ছেটা কী?”
আদিরা ভীতু স্বরে বলে,
“আমি জানিনা। আমি তো কাউকেই বলিনিম তোর ভাইয়া কিভাবে জেনেছে আমি সেসব জানিনা। উনি আমাকে একটু আগে লাইব্রেরিতে ছেলেটার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। কিন্তু এখন যে উনি এসব ঘটিয়ে বসবে এটা আমি ঘুনাক্ষরেও ধারণা করিনি। যদি ধারণা করতাম তাহলে আমি উনাকে আটকানোর চেষ্টা তো করতাম।”
“এখন আর বলে কি হবে! আর তুই রাস্তাঘাটে চো’খ-কান খোলা রেখে চলবি। সাবধানে থাকবি। বিপদ তো বলে কয়ে আসে না। হয়তো ছেলেটা সুযোগের অপেক্ষা করছিল! সুযোগ পেলেই তোর সাথে খারাপ কিছু করতে পারতো!”
আদিরা বুঝতে পারে, তাকে আরও সতর্ক হয়ে থাকতে হবে। তারউপর আজকের ঘটনার পর না জানি কী হয়?
আহনাফ, রিহানরা মারসাদকে নিয়ে যাচ্ছে মাহি ও আদিরার সামনে দিয়ে। মাহিও আদিরার হাত ধরে টেনে ওদের পিছু পিছু যাচ্ছে। মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার পর মারসাদের ফার্স্টএইড করা হচ্ছে আর মাহি ব্যাকুল হয়ে তার ভাইয়ের কোথায় কোথায় কে*টেছে তা দেখতে ব্যস্ত। আর আদিরা ভয়ে চোরা চোখে মারসাদের দিকে তাকায়। আদিরা মারসাদের দিকে তাকাতেই দেখে মারসাদ তার দিকে ক্রু*দ্ধ দৃষ্টিতে চেয়ে আছে। যেন চোখ দিয়েই সে আদিরাকে ভ*স্ম করে দেবে! শুকনো ঢোক গিলে আদিরা। ফার্স্টএইড করার পর সবাই মেডিকেল সেন্টার থেকে বের হচ্ছে তখনই বাইরে পু*লিশ দেখতে পায়। পুলিশ বলে,
“মিস্টার মারসাদ ইশরাক, আপনাকে ভার্সিটি ক্যাম্পাসে নাশ*কতা ছড়ানোর জন্য আমাদের সাথে যেতে হবে। আপনার নামে কমপ্লেন করা হয়েছে।”
পু*লিশের কথা শুনে মারসাদ ছাড়া বাকি সবাই চমকে উঠে। আহনাফ বলে,
“স্যার, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। মারসাদ শুধু শুধু ছেলেটাকে মা*রেনি। ছেলেটার দোষ ছিল। ছেলেটা একটা মেয়েকে…..”
“সেইসব পু*লিশ স্টেশনে গিয়েই শোনা যাবে। এখন মিস্টার মারসাদ ইসরাককে আমাদের সাথে যেতে হবে। তারপর বোঝা যাবে কী হয়েছে বা হবে। আমাদেরকে আমাদের ডিউটি করতে দিন।”
পু*লিশের কথা শুনে মৃদুল ও রিহান কিছু বলতে নিলে মারসাদ ইশারায় ওদেরকে থামতে বলে। তারপর পু*লিশকে বলে,
“চলুন, অফিসার।”
অতঃপর মারসাদকে পু*লিশ সাথে করে নিয়ে যায়।
চলবে ইন শা আল্লাহ,