#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৬
হোস্টেলে ফিরে আদিরা ব্যাগপত্র গুছিয়ে টিউশন পড়াতে যাবে বলে বের হয়েছে। স্টুডেন্টের বাড়ির পথটুকু সে হেঁটেই যায়। আজও যাচ্ছে, তখন হঠাৎ তার মনে হতে লাগলো কেউ তাকে অনুসরণ করছে। প্রথমে বিষয়টাকে মনের ভুল ধরে নিলেও কিছুক্ষণ পর তার মন ঘাবড়ানো শুরু করে। হাঁটতে হাঁটতে এই পর্যন্ত তিন বার পিছু ফিরে একই ব্যাক্তিতে কখোনো রাস্তার ধারে বসে থাকতে দেখেছে, আবার চায়ের দোকানে চিপসের প্যাকেট ধরে নাড়াচাড়া করতে দেখেছে তো আবার অন্যদিকে ফিরে আকাশে আঙুল তাক করে কিছু করতে দেখেছে। বিষয়টা কি এতোটাই কাকতালীয়? আদিরা নিজের পায়ের গতি বাড়িয়ে দিলো। গলির মুখে ঢুকে স্টুডেন্টের বাড়ির গেইটে ঢুকে যায়। তারপর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে পানি পান করে।
সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে মারসাদ জানতে পারে আদিরা খুব ভোরে এখান থেকে চলে গেছে। ডাইনিং টেবিলে বসে নাস্তা করার সময় সাবিহা ও রিন্তি এই বিষয়েই কথা বলে চলেছে। খাওয়ার মাঝে মারসাদ তাতে বিরক্ত হয়ে বলে উঠে,
“চুপচাপ খেতে পারো না? যে চলে গেছে তাকে নিয়ে এতো কথা বলার কী আছে?
রিন্তি ও সাবিহা চুপ হয়ে যায়। মাহি ইশারায় ওদের শান্ত হতে বলে। তারপর মাহি পরিস্থিতি ঠিক করতে তার ভাইকে বলে,
“দাভাই, তোমার ডান হাতের ব্যথা কমেছে?”
মারসাদ নিজের ডান হাত দেখিয়ে মাহিকে বলে,
“না হলে খাচ্ছি কিভাবে?”
মাহি দমে গেল। তারপর ফের বলে,
“না মানে আমি ভাবলাম হাতে তো ব্যথা পেয়েছিলে। একদিনে ঠিক হয়ে গেল?”
“হু। চুপচাপ খা। তারপর ভার্সিটিতে যা।”
মাহি কিছুটা রেগে গেল। তারপর বলল,
“তোর জন্য আমি আর চিন্তা করব না দেখিস! ভালো কথা জিজ্ঞাসা করলেও খিটখিট করে! তোর বউ যে তোকে কিভাবে সহ্য করবে আমি এটাই ভেবে পাই না!”
মাহির রাগ দেখে মারসাদের হাসি পাচ্ছে। কিন্তু সে হাসলো না। খাবারের শেষ অংশটুকু মুখে পুরে নেয়। তারপর খাওয়া শেষ করে পানি খেয়ে টেবিল ছেড়ে উঠতে উঠতে বলে,
“সেটা তোর চিন্তা করতে হবে না। আমারটা আমি বুঝে নিবো। তুই নিজের চরকায় তেল দে।”
তারপর মারসাদ বেরিয়ে যায়। মাহি চোখ ছোটো ছোটো করে কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থাকে। তারপর রিন্তি ও সাবিহাকে বলে,
“দেখলি? কেমন মেজাজ তার! এইসব ওই আহনাফের সাথে চলার ফল! আমার দাভাই রাগী আমি জানি। কিন্তু সে আমাকে রাগাতো না। আহনাফের সাথে চলতে চলতে এখন সে আমাকেও রাগায়! উফ!”
সাবিহা ও রিন্তি মাহির রাগ দেখে হেসে ফেলে। রিন্তি বলে,
“তুই রাগিস বলেই রাগায়। তাছাড়া আহনাফ ভাইয়া শুধু তোকেই একটু রাগায়। এমনিতে সে তোর ভাইয়ের রাগ কমানোর দায়িত্বই পালন করে। তুই অযথাই ভুল বুঝিস।”
“এই চুপ! ওই লোকের হয়ে সাফাই গাইবি না। চুপচাপ খা। তারপর ভার্সিটিতে যা।”
“যেমন ভাই তার তেমন বোন!”
সাবিহা এটা বলতেই মাহি চোখ কটমট করে তাকায়। তারপর সাবিহা ভয় পাওয়ার ভান করে তাড়াতাড়ি খেতে থাকে।
________
কিছুদিন পর,
আদিরা লাইব্রেরিতে বসে নিরিবিলি পড়ছে। বাহিরে মেঘের গুড়গুড় ডাক ও মুষলধারা বৃষ্টি। একটা মুগ্ধ করা পরিবেশ। লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা বললেই চলে। কয়েকজন আছে যারা কেউ টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে ঘুমাচ্ছে তো কেউ কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছে। রিন্তি ও সাবিহা আজ বৃষ্টির কারণে আলসেমি করে ভার্সিটিতে আসেনি। আর মাহি এসেও আহনাফের সাথে চলে গিয়েছে। তাই আদিরা লাইব্রেরিতে চলে এসেছে। আজকে মানুষজনও কম ভার্সিটিতে। আদিরা সকালে টিউশনে চলে গিয়েছিল, তারপর ভার্সিটিতে চলে এসেছে। হঠাৎ কেউ একজন এসে আদিরার হাত থেকে বইটা হুট করে নিয়ে নিলো। তৎক্ষণাৎ আদিরা চমকে উঠলো। চমকে উঠে পিছনে তাকাতেই দেখে মারসাদ এক হাত পকেটে গুঁজে আরেক হাতে বইটা নিয়ে দেখছে। চেহারাতে কাঠিন্য ফুটে আছে তার। আদিরা তা দেখে ভয় তো পেলোই, সেই সাথে এটা বুঝতে পারছে না, যে সে আবার কী করেছে? সে তো কয়েকদিন যাবত মারসাদের গণ্ডির ভেতরেও যায়নি। তাহলে? নিজের মনের প্রশ্নে এতোটাই খোয়ে ছিল যে মারসাদ যে তার পাশের চেয়ারে বসে তার দিকে নিগূঢ় দৃষ্টিতে চেয়ে আছে! সেটাও সে বুঝতে পারেনি। অতঃপর মারসাদ আদিরার চোখের সামনে তুড়ি বাজালে আদিরা সতর্ক হয়। মারসাদ আর কালক্ষেপণ না করে নিজের মনের প্রশ্ন, যার জন্য এখানে আসা! সেটা করেই বসে!
“ওই ছেলেটা কে?”
প্রশ্ন শুনে আদিরা খানিক বিভ্রান্ত হয়। সে জবাবের বদলে প্রশ্ন করে,
“কোন ছেলেটা, ভাইয়া?”
মারসাদ ভ্রুকুঞ্চন করে ফেলে। তারপর ফের শুধায়,
“যেই ছেলেটা কয়েকদিন যাবত তোমার পিছু পিছু ভার্সিটি পর্যন্ত আসছে।”
আদিরা এবার বুঝতে পারে। সে নড়েচড়ে বসে মৃদু স্বরে বলে,
“আমি চিনি না, ভাইয়া।”
“তুমি যদি তাকে না চেনো, তাহলে সে তোমার পিছু পিছু এতদিন যাবত আসছে কেন? আর তুমিও তাকে কিছু বলছো না কেন?”
মারসাদের কণ্ঠে যেন রাগের আভাস। আদিরা এক পলক মারসাদের চোখের দিকে চেয়ে আবার দৃষ্টি নিচু করে ফেলে। তারপর ভীতু স্বরে বলে,
“আমি জানিনা উনি আমার পিছু পিছু কেন আসছে।”
“জানবে না কেন? একটা ছেলে তোমাকে কন্টিনিউয়াসলি প্রতিদিন ফলো করছে, আর তুমি জানো না সে তোমার পিছু পিছু কেন আসছে? এই বুদ্ধি নিয়ে তুমি চলাফেরা করো?”
কথাগুলো মারসাদ ধমকের সুরেই বলেছে। আজকের লাইব্রেরি প্রায় ফাঁকা ও বাহিরে বৃষ্টির ছন্দে হয়তো যে কয়েকজন আছে তারা শুনতে পায়নি। আদিরা মাথা নিচু করে চুপ করে আছে। বলার মতো কিছু তো পাচ্ছে না। মারসাদ আবার জিজ্ঞাসা করে,
“চুপ করে আছো কেন? বলো?”
আদিরা তোঁতলানো স্বরে বলল,
“ঐ লোকটা তো আমাকে রাস্তাঘাটে কোনো রকম বিরক্ত করেনি। তাই আমি আগবাড়িয়ে কিছু বলিনি। যদি আগবাড়িয়ে কিছু বলতে যাই আর সে আমার কোন ক্ষতি করতে চায়? এজন্য কিছু বলিনি।”
মারসাদ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে আদিরার মাথায় আলতো টো*কা মে*রে সতর্ক করে বলে,
“তুমি কি তোমাকে বিরক্ত করার অপেক্ষায় বসে থাকবে? তারপর তুমি কিছু বলবে? এত বোকা কেন তুমি? চেনো না জানোনা একটা ছেলে তোমাকে ফলো করছে, কোনো ভালো উদ্দেশ্য তো ফলো করছে না নিশ্চয়ই?”
আদিরা না বোধক মাথা নাড়ায়। মারসাদ তারপর আর কিছু না বলে উঠে চলে যায়। আদিরা সেদিকে তাকিয়ে বুকে হাত দিয়ে লম্বা শ্বাস নেয়। যেন এতক্ষণ যাবত সে দম আটকে রেখেছিল!
______
খোলা মাঠের শেষ প্রান্তে বৃষ্টির মধ্যে ভীষণ আনন্দে ভিজছে মাহি। মাহির থেকে একটু দূরে গাছের নিচে ছাতা মাথায় দাঁড়ানো আহনাফ। আহনাফ মোবাইলের ক্যামেরায় মাহির বৃষ্টিস্নাত হাস্যজ্জ্বল কয়েকটা ছবি তুলে নিয়েছে। বৃষ্টির তেজ ক্রমাগত বাড়ছে। মাহি প্রায় পনেরো-বিশ মিনিট যাবত ভিজছে। এবার আহনাফের মনে হলো মাহিকে ডাকা দরকার।
“মাহি, চলে এসো। আর ভিজো না।”
“না। মাত্রই তো বৃষ্টি ঠিকভাবে পড়ছে। আপনিও আসুন না।”
“তুমি অনেক্ষণ যাবত ভিজছো। চলে আসো এবার। পরে ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“লাগবে না। আপনার ঠান্ডা লাগবে বলেই তো আপনি ছাতার নিচে দাঁড়িয়ে আছেন! আমার ঠান্ডা লাগবে না। বাসায় গিয়ে দুইটা প্যা*রাসিটে*মল খেয়ে নিব। আর কিছু হবে না।”
আহনাফ মোবাইলে সময় দেখলো। তারা ঘুরতে বেরিয়েছে প্রায় দুই ঘন্টার মতো হয়ে গিয়েছে। মারসাদকে বলেছে একটু দরকারে যাচ্ছে। কিন্তু দরকারটা কী তাও বলেনি আর মারসাদও জানতে চায়নি। মারসাদের মুখের অবস্থাও আজ তেমন ভালো ছিল না। আহনাফের মন বলছে তার এবার যেতে হবে। তাই আচমকা মাহির হাত ধরে টেনে হাঁটতে শুরু করে। মাহি তাতে ক্ষে*পে গিয়ে আহনাফের হাতে আ*ঘা*ত করতে করতে বলছে,
“আরে! ছাড়ুন আমার হাত। আমি আরেকটু ভিজবো। ছাড়ুন।”
“চুপচাপ চলো। তোমার ভাই যেন কী করছে!”
“দাভাই যা খুশি করুক, আপনি আমার হাত ছাড়ুন! আমি যাব না এখন।”
আহনাফ থামে। তারপর মাহিকে বলে,
“তুমি বুঝতে পারছো না, মাহি। আমরা এসেছি দুই ঘন্টার মতো হয়েছে। কিন্তু তোমার ভাই একটা কলও করলো না আমাকে।”
“কেন? দাভাই কি সারাদিন আপনাকে চোখে হারায় নাকি?”
“তোমার দাভাই একটা ছেলেকে টার্গেট করে রেখেছে! আমাদেরকে মুখে না বললেও ওই ছেলেটার দিকে যেভাবে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি সে দিচ্ছিলো! আমি জানিনা কী হয়!”
মাহি সন্দিহান হয়ে শুধায়,
“ছেলেটা কে? আর কী করেছে?”
“ছেলেটার নাম তো জানিনা। তবে ছেলেটা আদিরাকে কয়েকদিন যাবত ফলো করছে।”
মাহি ভাবনায় পড়ে গেলো! আদিরাকে একটা ছেলে ফলো করছে, কিন্তু সে জানে না! অথচ তার ভাই জানে! এই চিন্তা করতে করতে সে আহনাফ রিকশা ডাকলে রিকশাতেও উঠে পড়ে!
চলবে ইন শা আল্লাহ,
কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। রিচেক হয়নি।