এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৫

0
9

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৫
আদিরা চিৎকার করে উঠতেই কেউ একজন তার মুখ চেপে ধরে দেয়ালের সাথে ঠেকায়। ওদিকে ঠিক একই সময়ে মুভিতে ভূতের আকস্মিক আগমনে মাহি, রিন্তি ও সাবিহাও চিৎকার করে উঠেছে। যার দরুণ আদিরার চিৎকার ফিঁকে পড়ে গেছে। আদিরা নিজেকে ছাড়াতে ছটফট করছে তখন মারসাদ বিরক্ত হয়ে ফিসফিস করে বলে,

“তুমি এখানে কী করছো? আর আমাকে দেখে এভাবে ভূত দেখার মতো চিৎকার করলে কেন?”

মারসাদ জবাবের অপেক্ষা করছে। কিন্তু আদিরার তো মুখ বন্ধ। সে উম উম করছে বলে মারসাদ ফের বলে,
“সমস্যা কী তোমার? বলছো না কেন?”

কথাটা নিজে বলে সাথে সাথে তার নিজেরই বোধ হয়। তারপর আদিরার মুখ থেকে হাত সরিয়ে খানিক পিছিয়ে যায়। দুজনেই নিরব। কিছুক্ষণ পর আবার মাহির ঘর থেকে আর্তচিৎকার ভেসে আসলে আদিরা ভয়ে দৌঁড়ে সেখানে যেতে নিলে মারসাদ আবার ওর হাত ধরে ফেলে। তারপর ফের শুধায়,

“এই চিৎকার কেন করছ ওরা? ওই ঘরে কে কে আছে? কি খিচুড়ি পাকাচ্ছো তোমরা?”

আদিরা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“না মানে ভাইয়া, আসলে আমরা….”

মারসাদ চোখ বন্ধ করে ফের খুলে হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আদিরা…”

আদিরা চোখ-মুখ খিঁচে এক নিঃশ্বাসে বলে উঠে,
“মাহি বলেছিল, আপনি কুমিল্লা যাবেন। তাই মাহি ফ্ল্যাটে একটা কিভাবে থাকবে ভেবে আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি কিন্তু আসতে চাইনি, মাহি বলেছে তাই এসেছি।”

আদিরা রেলগাড়ির গতিতে বলা কথাগুলো শুনে মারসাদ সংক্ষেপে ধীরেসুস্থে বলল,
“ওহ আচ্ছা।”

মারসাদের জবাব শুনে পিটপিট করে চোখ খুলে আদিরা। এত শান্ত জবাব! আদিরা ভেবেছিল তাকে বকবে। যেভাবে প্রথম সাক্ষাতের দিন ভুলে আইসক্রিম পড়ে যাওয়াতে বকেছিল!

ফ্ল্যাশব্যাক,
ভার্সিটিতে আজ চতুর্থয় দিন আদিরার। তার নতুন বান্ধবী রিন্তির সাথে সে হাঁটতে হাঁটতে আইসক্রিম খাচ্ছে। রিন্তিই জোর করে আদিরাকে কিনে দিয়েছে যদিও। আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটার সময় রিন্তি তার কিছু ফানি মেমোরি শেয়ার করছে। যার দরুণ হাসি আটকে রাখতে না পেরে আদিরা টালমাটাল হয়ে গিয়েছিল। তখন পাশ দিয়ে মারসাদ যাচ্ছিলো, ঠিক তখনি মারসাদের সাথে ধা*ক্কা লাগে আদিরার। মারসাদের সাদা জ্যাকেটে আদিরার অরেঞ্জ আইসক্রিম লেগে যায়। সাথে সাথে সাদা জ্যাকেটের বুকের দিকটার একটু নিচে কমলা দাগ পড়ে যায়। তাতে ভীষণ রেগে যায় মারসাদ। চিৎকার করে বলে উঠে,

“এই মেয়ে, কী করলে তুমি এটা?”

সাথে সাথে আদিরা ঘাবড়ে যায়। সেই সাথে রিন্তিও। সে চোখ বড়ো বড়ো করে নিজের আইসক্রিম ও মারসাদের জ্যাকেটে লাগা কমলা দাগটা দেখছে। মারসাদ নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে আরো রেগে যায়। সে ফের ধ*মকে বলে উঠে,

“এখন হ্যা*বলার মতো তাকিয়ে আছো কেন? হাঁটার সময় চো*খ কি হাতে নিয়ে হা*টো? দেখো না, সামনে পিছনে কেউ আসছে কি না?”

আদিরা ভয়ে কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না। সে কোনোমতে মুখ দিয়ে ‘সরি’ উচ্চারণ করে। মারসাদ তা শুনে আবারও ধ*মকে বলে,

“সরি বললেই বুঝি সব শেষ? আমার জ্যাকেটটা যে নষ্ট হলো? সেটা কি তোমার সরির দ্বারা ঠিক হয়ে যাবে?”

রিন্তি এবার ভয়ে ভয়ে বলে,
“সরি ভাইয়া, আসলে ওর কোন দোষ ছিল না। আসলে…”

“কী আমার দোষ? আমি তোমাদের রাস্তায় চলে এসেছি?”

মারসাদের কঠোর কণ্ঠস্বর শুনে রিন্তিও চুপ হয়ে গেছে। পাশ থেকে আহনাফ, রিহান, মৃদুলরা মারসাদকে শান্ত হতে বলছে। আহনাফ বলে,

“সাগরের উপর করা রাগটা ওদের উপর ঝাড়িস না। ওদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে, ওরা ইচ্ছে করে করেনি। ভুলে হয়ে গেছে। তুই চল এখান থেকে।”

“এজন্য রাস্তার মধ্যে মা*তালের মতো হাঁটবে।”

মৃদুল বলে,
“বাদ দে না। তুই চল। ওই আইসক্রিমটা তোর জ্যাকেটে না লেগে মুখে লাগা উচিত ছিল! তোর মাথা ঠান্ডা হওয়া উচিত! এই শীতের মধ্যেও তোর মাথায় ডি*ম ভা*জি করা যাবে!”

মারসাদ এবার চোখ গরম করে মৃদুলের দিকে তাকায়। মৃদুল হাসার চেষ্টা করলে মারসাদ হনহনিয়ে চলে যায়।

তারপর থেকে আদিরা আরও গড়বড় করেছে আর মারসাদের ধ*মক খেয়েছে। সেই থেকে সে মারসাদকে ভয় পায়।

ফ্ল্যাশব্যাক এন্ড

আদিরাকে নিজের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে মারসাদের ভ্রু কুঁচকে আসে। সে আদিরার চোখের সামনে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

“কী?”

আদিরা অপ্রস্তুত হয়ে দৃষ্টি নামিয়ে তাড়াহুড়ো করে বলে,
“কিছু না।”

“কিছু না হলেই ভালো। এখন গিয়ে মাহিকে বলে দাও আমি চলে এসেছি।”

এই বলে মারসাদ তার নিজের রুমে চলে যায়। মারসাদ যেতেই আদিরা হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। তারপর তাড়াহুড়ো করে রুমে গিয়ে লাইট জ্বালায়। হঠাৎ লাইট জ্বালানোতে মাহি, সাবিহা, রিন্তি সবাই বিরক্ত হয়। মাহি বলে,

“লাইট বন্ধ কর। তোর ভয় করছে জানি। মুভি প্রায় শেষের দিকে। তারপর।”

“তোর ভাই এসেছে, মাহি।”

আদিরার কথা শুনে মাহি অবাক হয়ে যায়। তারপর বলে,
“গেলোও না বলে, আসলোও না বলে! কী যে চলতেছে দাভাইয়ের মনে! যাই দেখে আসি।”

মাহি ল্যাপটপ পজ করে তার ভাইয়ের রুমে যায়। মাহি যেতেই আদিরা সাবিহা ও রিন্তিকে বলে,
“এখন তো মাহির ভাইয়াও ফিরে এসেছে। আমাদের কি এখানে থাকা ঠিক হবে?”

সাবিহা বলে,
“কেন ঠিক হবে না কেন? আমরা তো মাহি একা থাকবে এজন্য এসেছি। এখন উনি তো মাহিকে বলেও যায়নি, আর বলেও আসেনি। উনি না আসলে তো মাহিকে একাই থাকতে হতো।”

“তাই তো। তুই একটু বেশি বুঝিস, আদু! আর এত রাতে তোর জন্য হোস্টেলের গেট কি খোলা রাখবে নাকি?”

সাবিহা ও রিন্তির কথা শুনে আদিরা মনঃক্ষুণ্ণ হয়ে বসে রইল।

এদিকে মাহি মারসাদের ঘরে গিয়ে মারসাদকে জিজ্ঞাসা করে,
“তুমি আমাকে না বলে চলে গেলে কেন? আর এখন না বলেই চলে এসেছো! তুমি আজ আসবি না ভেবে আমার ফ্রেন্ডদের ডেকে নিয়েছি। ”

“আমি ফিরে আসবো বলেই তোকে জানাইনি।”

“কোন ঝামেলা হয়েছিল, দাভাই?”

“না। কাজ ছিল। তুই এখন যা। আমি রেস্ট করব। আর চি*ল্লাপা*ল্লা করবি না। আর শোন…”

কিছু একটা বলতে গিয়েও থেমে গেলো মারসাদ। অতঃপর আবার বলল,
“যা এবার।”

মাহি তারপর চলে আসে। রুমে এসে মাহি ল্যাপটপটা অফ করে বলে,
“মুভিটার বাকি অংশ আজকে আর দেখা যাবে না। যদি আরো ভয়ংকর কিছু হয়, আর আমরা চিৎকার করে উঠি? তবে দাভাই খুব রাগ করবে। মনে হয় দাভাইয়ের শরীরটা খারাপ। সকালে অ্যা*ক্সিডেন্ট হলো, তারপরে কুমিল্লা গেল আসলো।”

মাহির কথা শুনে ওরা তিনজনেই মেনে নিল। একটু পর আদিরা বলল,
“আমরা যদি এখানে থাকি তাহলে উনার কোনো প্রবলেম হবে না তো?”

“আরে না। আমার দাভাই এসব বিষয় নিয়ে ঝামেলা করে না। তুই অযথাই আমার দাভাইকে এত ভয় পাস।”

আদিরা চুপ করে রইল।

______

পরদিন ভোর সকালে আদিরা ফজর নামাজ পড়েই আদিরা মাহিকে ডেকে তুলল। মাহি ঘুমঘুম চোখে জিজ্ঞাসা করে,
“কী হয়েছ তোর? এভাবে ডাকছিস কেন?”

“উঠে নামাজ পড়। আর আমি চলে যাচ্ছি।”

আদিরা চলে যাবে শুনে মাহি চোখ ভালো করে মেলে তাকায়। তারপর বলে,
“মাথা ঠিক আছে তোর? বাহিরে মাত্র আলো ফোটা শুরু হয়েছে। মানুষজন রাস্তায় থাকবে এখন? আমাদের সাথে একসাথে ভার্সিটিতে যাবি তা না! এখন সে নাকি চলে যাচ্ছে! চুপ করে বসে থাক।”

আদিরা নাছোড়বান্দা। সে যাবেই।
“না। আমি চলে যাব।”

“মহা ঝামেলা তো তোকে নিয়ে! দাভাই রাতে চলে এসেছে বলেই তো তুই চলে যেতে চাচ্ছিস। তাই তো? এখন বের হলে যদি কোনো বিপদে পরিস তখন দাভাই তোকে আরও বকবে। ঝামেলা বাড়াস না। প্লিজ চুপ করে বসে থাক। নয়তো ঘুমা।”

আদিরা ফের বলে,
“আমাকে টিউশন পড়াতে যেতে হবে। তুই বোঝার চেষ্টা কর।”

“একদিন না পড়ালে কি হবে? সকালেরটা না হয় বিকালে পড়িয়ে দিস। তাও চুপ করে বসে থাক।”

“না। ওদের টাইম মিলবে না। আমার কিছু হবে না। তুই নিশ্চিন্তে থাক। আমি গিয়ে তোকে কল করব।”

তারপর আদিরা মাহির কোন রাখডাক না মেনেই বেরিয়ে গেলো। ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়েই আদিরা লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়লো। পুরোটা রাত সে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। তার বারবার অস্বস্তি হচ্ছিলো। কিন্তু রিন্তি ও সাবিহা ঠিকই ভালোমতো ঘুমাচ্ছিল। ওদের যদি কোন সমস্যা না হয় তাহলে তার সমস্যা কেন হচ্ছে এটাই সে বুঝতে পারছে না!

চলবে ইন শা আল্লাহ,

কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। রিচেক হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে