এক শহর প্রেম ২ পর্ব-০৪

0
15

#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৪
আরসাদ খান ভিষণ চিন্তিত হয়ে তার অফিসরুমে বসে আছেন। কিছুক্ষণ আগেই তার বড়ো মেয়ে মিলির কল এসেছিল। তার বড়ো মেয়ে তাকে যা বলেছে তা নিয়ে তিনি খুব চিন্তিত। এখন মারসাদকে তার এখানে খুব দরকার। কিন্তু সকালে মাহি তাকে ফোন করে বলেছিল মারসাদের অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। এখন মারসাদকে এখানে আসতেই বা কীভাবে বলবে! চট্টগ্রাম থেকে কুমিল্লা আসতে যদিও সময় বেশি লাগবে না। ভেবে-চিন্তে আরশাদ খান মারসাদকে কল লাগালো। মারসাদ কল রিসিভ করতেই আরশাদ খান বলেন,

“তুমি কি আজকে একটু কুমিল্লা আসতে পারবে?”

মারসাদ সন্দিহান কণ্ঠে শুধালো,
“কেন? জরুরী দরকার?”

“হু। মিলি কল করেছিল। বলল রুহুল আমিন রাদিবকে এবার কা*উন্সিলর পদে দাঁড়া করাচ্ছে। তুমি তো জানোই…”

মারসাদ তার বাবাকে পুরো কথা বলতে দিলো না। সে বলে উঠলো,
“নিজের ছলচাতুরী থেকে শুধরালো না! আমি আসছি।”

তারপর মারসাদ কল কে*টে আহনাফকে বলে,
“তুইও আমার সাথে যাবি।”

“কোথায়?”

“কুমিল্লা।”

আহনাফ অবাক হয়ে বলে,
“কুমিল্লা কেন?”

“বাবা যেতে বলেছে। আর বাইক তুই চালাবি। এক কাজ কর, তোর বাইকটাই নিয়ে চল।”

তারপর মারসাদ হাঁটা শুরু করে। আহনাফ মাথা চুলকে ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে মাহিকে মেসেজ করে দেয়। তার আজকের বিকেলের সারপ্রাইজ ক্যান্সেল।

______

মাহি মেসেজটা দেখে ভ্রুঁ কুঁচকে নেয়। তারপর বলে,
“হঠাৎ করে দাভাই কুমিল্লা যাচ্ছে কেন? কিছু কি হয়েছে?”

তারপর মাহি বিষয়টা জানতে তার মাকে কল করে। মিসেস মীরা তখন আচার বানাচ্ছিলেন। বড়ো মেয়ের জন্য পাঠাবেন বলে। ফোন বাজতে দেখে তিনি হাত মুছে রিসিভ করেন। তখন মাহি বলে,

“কী করছো, আম্মু?”

“আচার বানাচ্ছি। মিলি খেতে চেয়েছে।”

“খালি আপিলির জন্যই আচার বানাও! আমাকে তো চোখেই দেখো না! হুহ্!”

মিসেস মীরা হেসে ফেললেন। তারপর বললেন,
“তোর জন্যও বানাব। তুই বাড়িতে তো আয়।”

মাহি রাগ করে বলে,
“আপিলিও বাড়িতে থাকে না। আমিও থাকি না। কিন্তু তুমি বেশি ভালোবাসো আপিলিকেই। আমার প্রতিও তো একটু মায়া দয়া করে আচার, কিছু রান্না করে পাঠিয়ে দিতে পারো। দাভাই তো আজকে যাচ্ছে ওখানে।”

মারসাদের আসার কথা শুনে মিসেস মীরা অবাক হলেন। তিনি শুধালেন,
“তোর দাভাই আসছে, আমি তো জানি না। তোকে কখন বলল?”

মাহি থতমত খেয়ে যায়। তারপর একটু ভেবে বলে,
“আমি শুনলাম। রবিন ভাইয়া বলছিল তখন শুনে ফেলেছি। দাভাই তো আমাকেও জানায়নি। আমি যে ফ্ল্যাটে এখন একা থাকবো সেটারও কোনো খবর নেই তোমার ছেলের!”

“দাঁড়া। দেখি। হঠাৎ করে কী হলো যে হুট করে আসছে?”

মাহি বুঝতে পারলো, তাে মাও এই ব্যাপারে জানে না। মাহি বলে,
“আম্মু, কল রাখি। ক্লাস আছে।”

তারপর মাহি কল রেখে তার বান্ধবীদেরকে বলে,
“দাভাই কুমিল্লা যাচ্ছে, আমাকে বলেওনি। মাও নাকি জানে না। আমি এখন অতো বড়ো ফ্ল্যাটে একা কিভাবে থাকব?”

রিন্তি বলে,
“আমার ও সাবিহার সাথে মেসে চলে আয়। একা একা একটা ফ্ল্যাটে থাকা তো ঠিক না।”

মাহি গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে। সাবিহা বলে,
“এতো চিন্তা করছিস কেন? ভাইয়া হয়তো কোনো কাজেই যাচ্ছে।”

মাহি হুট করে বলে উঠে,
“তোরা তিনজনই আজকে আমার সাথে ফ্ল্যাটে থাকবি।”

রিন্তি ও সাবিহা তো রাজি। কিন্তু আদিরা হকচকিয়ে বলে উঠে,
“না না। আমি মেসেই থাকব।”

রিন্তি আদিরকে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“কেন রে? একটা দিন আমাদের সাথে থাকতে কী সমস্যা তোর?”

“আমার জিনিসপাতি সব তো ওখানে। যদি হারিয়ে বা চুরি হয়ে যায়। ওখানের আপুরা বলেছে, তাদের নাকি অনেক কিছু খুঁজে পায় না।”

সাবিহা বলে,
“টাকা-পয়সা নিজের সাথে করে নিয়ে নিবি। তাহলেই তো হলো।”

“টাকা-পয়সা আমার সাথেই থাকে।”

“তাহলে বাহানা করা বন্ধ কর। দুইটা জামা-কাপড় নিয়ে মাহির ফ্ল্যাটে চলে আসবি।”

মাহিও বলে,
“আজ তাহলে বেশ মজা হবে। একটা হরর মুভি অনেকদিন ধরে দেখব ভাবছিলাম। আজ চারজনে মিলে দেখব।”

আদিরা হরর মুভির কথা শুনে আরও ভয়ে কুঁকড়ে গেছে। তা নিয়েও ওদের হাসাহাসি চলতে থাকে।

_______

বিকেলের দিকে মারসাদ ও আহনাফ কুমিল্লায় পৌঁছায়। প্রথমেই যায় রুহুল আমিনের অফিসে। রুহুল আমিন মারসাদকে দেখে অবাক হয়। সে প্রশ্ন ছুঁড়েন,

“মারসাদ, তুমি এখানে?”

মারসাদ জবাবে বলে,
“হ্যাঁ আমি। অবাক হলেন?”

“তা তো কিছুটা হলামই। তুমি এখন চট্টগ্রাম থাকো জানি। হঠাৎ কুমিল্লায়?”

মারসাদ বাঁকা হেসে বলে,
“আপনার চেহারাটা বারবার মনে পড়ছিল। তাই দেখতে এলাম।”

রুহুল আমিন মেকি হাসলো। মারসাদ ফের বলল,
“আমার আপিলি কেমন আছে? আপনার ভাগ্নে তার কোনো অযত্ন করছে না তো?”

রুহুল আমিন ভড়কে গেলেন। তিনি বললেন,
“তুমি এভাবে বলছো কেন? তোমার বোন তো একদম ভালো আছে।”

“থাকলেই ভালো। আপনি রা*জনী*তি করেন সমস্যা নাই। আমার দুলাভাইকে ও আপিলিকে জড়াবেন না। এটা কিন্তু বিয়ের সময় শর্ত ছিল। মনে আছে? নাকি পেপারস দেখাব? পেপারসে আপনারও সাইন আছে।”

রুহুল আমিন হতভম্ব হয়ে গেছে। সে তো তখন উদ্দেশ্য নিয়ে মিলির সাথে রাদিবের বিয়েটা করিয়েছিল। কিন্তু একটা পেপারে মারসাদ তার সাইন নিয়েছিল। তারপর থেকেই মারসাদ তাকে বলতো যেন রাদিবকে রা*জনী*তির প্যাচে না জড়ায়। তবে কি এটাই সেই পেপার? রুহুল আমিন বলেন,

“আমি এসব জানি না। তোমার দুলাভাই চাইছে। আর রা&জনী*তিতে আসলে ক্ষতি কী?”

“ক্ষতি তো কিছু না কিন্তু আপনার সাথে আর যাই হোক, ভদ্রতা যায় না! তাই আগে থেকেই সাবধান করলাম। আমার আপিলি প্রেগন্যান্ট। সো মাইন্ড ইট। হু?”

রুহুল আমিন মেকি হাসলো। মারসাদ আহনাফকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো। মারসাদরা যেতেই রুহুল আমিন কাউকে কল করে বলল,
“এই মারসাদ এসে সব প্ল্যান ঘেটে দিলো। এখন আমাকেই যা করার করতে হবে। নতুন প্ল্যানিং করতে হবে। যেন মারসাদ কিছু না করতে পারে। তার জন্য মিলিকে হাতের মুঠোয় আনতে হবে।”

মারসাদ ও আহনাফ তারপর নিজ নিজ বাড়িতে যায় বাড়ির সবার সাথে দেখা করতে। মিসেস মীরা মারসাদের অ্যাক*সিডেন্টের কথা জানতেন না। তিনি মারসাদের এই অবস্থা দেখে ভীষণ বিচলিত হয়ে পড়লেন।

“বাবু, তোর এই অবস্থা কীভাবে হলো? কোথায় অ্যা*কসিডেন্ট হলো? ঠিক আছিস তুই?”

মায়ের বিচলিত মুখখানা দেখে মারসাদ মৃদু হেসে মাকে জড়িয়ে ধরলো। তারপর বলল,
“সামান্য একটু। কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে।”

“কয়েক দিনের মধ্যে ঠিক হয়ে যাবে তো কী হয়েছে, আমি তোকে বারবার বলি বাইক চালানোর সময় সাবধানে চালাবি। আমার একটা কথাও তুই শুনিস না। তোর বাবাকে বারবার নিষেধ করেছিলাম, ছেলেকে বাইক কিনে দিও না। দিলে গাড়ি দাও। কিন্তু তোর বাবা তো ছেলে যা বলবে সেটাই করবেন। আমার কথা কেন শুনবেন তিনি?”

মারসাদ তার মাকে চেয়ার বসিয়ে নিজেও আরেকটা চেয়ারে বসে বলে,
“তুমি অনেক বেশি চিন্তা করো, মা। কিচ্ছু হবে না আমার। আমার সাথে আহনাফ আছে তো। ও একটু গেছে ওর বাসায় সবার সাথে দেখা করতে।”

মিসেস মীরা মুখ গোমড়া করে বসে রইলেন। মারসাদ বুঝে গেছে তা মা এখন এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করতেই থাকবে। তাই মাকে একটু ব্যস্ত করতে বলে,

“খুব খিদে পেয়েছে, মা। সেই বারোটার দিকে বের হয়েছি। কিছু খাওয়া হয়নি। তুমি তাড়াতাড়ি করে আমায় একটু খাইয়ে দাও তো।”

মিসেস মীরা এবার ব্যতিব্যস্ত হয়ে ছেলের জন্য খাবার আনতে চলে গেলেন।

_______

রাত প্রায় ৯টার বেশি বাজে। চার বান্ধবী পপকর্ন, চানাচুর ও চিপস নিয়ে পুরো ফ্ল্যাটের আলো নিভিয়ে মুভি দেখছে। যখন যখন ভ*য়ংকর সিন গুলো আসছে তখন তখন চিৎকার দিয়ে উঠছে। হঠাৎ আদিরা বলে উঠে,

“পানি খাব। বোতলের পানি তো শেষ।”

মাহি বলে,
“ডাইনিং থেকে নিয়ে আয়।”

আদিরা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে বলে,
“আমি একা যাব না। আমার সাথে কাউকে যেতে হবে।”

“দেখ, এখন কোথাও যেতে পারবো না। মুভিটার ক্লাইম্যাক্স পর্যায়ে আছে। এখন মিস করাই যাবে না। তোর পানি খেতে হলে অপেক্ষা কর। নয়তো নিজে গিয়ে নিয়ে আয়।”

বাধ্য হয়ে আদিরা শুকনো মুখে জড়েসড়ো হয়ে বসে আছে। তার মনোযোগ আর মুভিতে নেই। তার কাছে বারবার মনে হচ্ছে সে কারও পায়ের শব্দ পাচ্ছে। সে শুকনো ঢোক গিলে বলে,

“এই তোরা কারও পায়ের শব্দ পাচ্ছিস?”

রিন্তি জবাবে বলে,
“না! শুধু তোর কানেই পায়ের শব্দ আসছে? আমরা তো মুভিতেই মনোযোগ দিয়ে রেখেছি। তুইও দে। অন্যদিকে মনোযোগ দিচ্ছিস বলেই তোর এরকম ভয় লাগছে।”

সাবিহাও বলে,
“এই নিয়ে তুই এই কথা কয়বার বললি? বলতো। চুপচাপ দেখ না।”

মাহি বলে,
“তোরা চুপ কর। এখুনি ভূ*তটা বের হবে। আস্তে।”

আদিরা নিজের কথায় পাত্তা না পেয়ে বারবার অন্ধকারে আশেপাশে খুঁজছে। তার গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে যাওয়ার দশা! মাহির ফোনের ফ্ল্যাশলাইট জ্বা*লিয়ে মনে খুব সাহস নিয়ে দোয়া, দুরুদ পড়তে পড়তে বিছানা থেকে নেমে ডাইনিংয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মাহির কড়া নিষেধ রুমের লাইট জ্বা*লানো যাবে না। তারপর ডাইনিংয়ের লাইট জ্বা*লিয়ে সামনের দিকে তাকাতেই হঠাৎ চকিতে চোখ-মুখ খিঁচে চিৎকার করে উঠলো সে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন। রিচেক হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে