#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_৩
আদিরা তার পাশের চেয়ারে এসে বসা মানুষটিকে দেখে চমকে উঠে। চমকে হঠাৎ করে দাঁড়াতে গিয়ে পায়ে একটু ব্যথাও পেয়েছে। তারপর সে তোঁতলানোর স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“আ..আপনি? আপনি এখানে?”
মারসাদ আদিরাকে চেয়ারে বসতে ইশারা করে নিচু গলায় বলে,
“বসো। আর আস্তে কথা বলো। সবার মনোযোগ কি এদিকে আনবে নাকি?”
আদিরা ফিসফিস করে ফের শুধায়,
“আপনি এখানে কী করছেন?”
মারসাদ বিরক্ত হয়ে নিজেই বাম হাত দিয়ে আদিরার হাত ধরে টান দিয়ে চেয়ারে বসায়। তারপর নিচু স্বরে বলে,
“কেন? আমি এখানে আসতে পারি না? এখানে কি আমার আসা নিষেধ?”
মারসাদ কথা বলতে গিয়ে আদিরার দিকে সামান্য ঝুঁকে গিয়েছিল। আদিরা তাই বিপরীত পাশে কিছুটা হেলে আমতা আমতা করে বলে,
“না, ভাইয়া। আমি আসলে তা বলিনি। মানে আমি…”
মারসাদ কপাল কুঁচকে আদিরার প্রতিক্রিয়া দেখে সোজা হয়ে বসে। তারপর বলে,
“এই তোমাকে না বলেছি, এই মানে! আসলে! এগুলো বলবে না। যা বলার ডিরেক্ট বলো।”
আদিরা মাথা নিচু করে বলে,
“কিছু না।”
“গুড। এখন বলো, সামিরাকে তখন কিছু বলোনি কেন?”
আদিরা নজর উঁচু করে মারসাদের দিকে তাকায়। তারপর আবার দৃষ্টি টেবিলের দিকে রেখে চুপ করে থাকে। মারসাদ জবাবের অপেক্ষা করেও জবাব না পেয়ে ফের শুধায়,
“চুপ করে আছো কেন? বলো?”
“কী বলব?”
মারসাদ চোখ বন্ধ করে নিজের কপালে দুটো চ*ড় মা*রে। আদিরা তা দেখে অবাক হয়ে বলে,
“ভাইয়া, আপনি এমন করবেন না। এমনিতেই আমার কারণে হাতে-পায়ে ব্যথা পেয়েছেন।”
“আমি ব্যথা পেয়েছি, তাই তো? তাহলে তোমাকে কিছু বললে আমি বলব। সামিরা কেন বলবে?”
আদিরা চট করে বলে ফেলে,
“আপনার গার্লফ্রেন্ড তাই!”
“কী!”
মারসাদ বেশ জোরেই বলে ফেলে। আদিরা মুখে হাত দিয়ে দ্রুত চেয়ার ঠেলে দুজনের মাঝে এক হাত দূরত্ব তৈরি করে ফেলে। বুকশেলফের পেছনের দিকে টেবিল হওয়াতে ওদেরকে দেখা যাচ্ছিলো না। কিন্তু এখন কয়েকজন উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে। মারসাদ সবার দিকে রাগান্বিত দৃষ্টি দিলে যে যার যার পড়া ও কাজে মন দেয়। তারপর মারসাদ আদিরার দিকে চেয়ে মাঝের দূরত্ব দেখে ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আদিরা, কথা বলছিলাম। তুমি এতো দূরে গিয়ে বসেছ কেন? আর এটা লাইব্রেরি।”
আদিরা বলে উঠে,
“আই অ্যাম সরি, ভাইয়া!”
এটা বলেই আদিরা নিজের ব্যাগটা কোনোমতে উঠিয়ে ছুটে লাইব্রেরি থেকে বেরিয়ে যায়। মারসাদ ডাকতে গিয়েও থেমে যায়। টেবিলে কয়েকটা বই খোলা আর একটা খাতা। মারসাদ বইগুলো দেখে বুঝলো এসব লাইব্রেরির বই। তাই সে খাতাটা উঠিয়ে লাইব্রেরি থেকে বেরোনোর আগে এক জুনিয়র ছেলেকে বলল বইগুলো যেন শেলফে জায়গা মতো রেখে দেয়।
________
“আহনাফ, মারসাদ যে এলো না?”
ভি*পি আশিকের কথার জবাবে আহনাফ বলে,
“ভাই, আজ সকালে মারসাদের বাইক অ্যা*কসিডেন্ট হয়েছে। এজন্য ওর বদলে আমি এসেছি।”
ভি*পি আশিককে চিন্তিত দেখালো। তিনি বললেন,
“এখন কী অবস্থা ওর?”
“আমি ও-কে রেস্ট করতে পাঠিয়েছি।”
তখন মাঝ থেকে বিরোধীদলের একজন বলে উঠলো,
“একটু আগেই মারসাদকে লাইব্রেরির দিতে যেতে দেখলাম। আসলে মারসাদের ইচ্ছা নাই মিটিংয়ে আসার। তাই বাহানা করছে।”
বিরোধীদলের হয়ে যে ভি*পি পদে দাঁড়িয়েছে সেই সাগর এবার বলে উঠে,
“একটা সামান্য মিটিং জয়েন করতে যার এতো বাহানা সে আবার হবে ভি*পি! ভি*পি হওয়া বাচ্চাদের খেল না। বুঝিয়ে দিস এটা তোর বন্ধুকে।”
আহনাফ মৃদুলের দিকে তাকায়। মারসাদকে এতো করে বলল রেস্ট নিতে, আর সে কী-না লাইব্রেরিতে গেছে! এখন ভি*পি আশিককে কী জবাব দিবে তাই ভাবছে আহনাফ। তখনি মারসাদ সেখানে হাজির হয়। আর ভেতরে ঢুকতে ঢুকতে বলে,
“কোনটা বাচ্চাদের খেল সেটা তুই আমাকে বুঝাতে আসিস না। তুই তোর নিজের চরকায় তেল দে। কাজে আসবে।”
ভি*পি আশিক মারসাদকে দেখে বলেন,
“তুমি রেস্ট নিলেই পারতে। ঠিক আছো? হাতে কী ফ্র্যাকচার হয়েছে?”
“না ভাই। ডাক্তার রেস্টে রাখতে বলাতেই হাতটা এভাবে গলায় ঝুলিয়ে হাঁটতে হচ্ছে। এমনিতে কয়েক জায়গায় কা*ট পড়েছে। কিন্তু সিরিয়াস কিছু না।”
বলতে বলতে মারসাদ ফাঁকা চেয়ারে বসে। এরপর ওরা মিটিং শুরু করে।
_______
আদিরা তার বান্ধবীদের সাথে বসে মাথা চাঁ*পড়ে এখন আফসোস করছে।
“আমার খাতা! লাইব্রেরিতেই ফেলে এসেছিলাম। কিন্তু এখন গিয়ে পেলাম না।”
রিন্তি বলে,
“মারসাদ ভাই কি তোকে খে*য়ে ফেলতো? উনি বা*ঘ না ভা*ল্লুক! এতো ভয় পাওয়ার কী আছে? আজব!”
সাবিহা বলে,
“থাক বসে। খাতায় থাকা সব নোট তোর গেছে! এবার তোর সাথে সাথে আমাদেরও কপাল চাঁ*পড়াতে হবে! এই যুগে এসে মানুষ নাকি এতো ভীতু হয়!”
মাহি বলে উঠে,
“থামতো তোরা। এখন নাতাশার কাছে নোটস চাইতে হবে। কিন্তু ও কি দিবে? এই আদু, আমার দাভাই এতোটাও খারাপ না যে তুই ভয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে এসেছিস! তোর সাথে একটু কথা বলতেই গিয়েছিল।”
চারজনেই মন খারাপ করে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর মাহির ফোন বেজে উঠে। মাহি দেখে তার দাভাই কল করেছে। মাহি বলে,
“দাভাই কল দিচ্ছে।”
আদিরা বলে,
“আমি কিন্তু উনার সাথে কথা বলতে যাব না।”
“তোকে যেতে বলেছে? আগে থেকেই বেশি ভয় পাস!”
তারপর মাহি কল রিসিভ করে। মারসাদ বলে,
“কই তুই?”
“এই তো মিনারের কাছে বসে আছি।”
“আচ্ছা আমি আসছি।”
তারপর মারসাদ কল কেটে তার বন্ধুদের নিয়ে মিনারের কাছে যাচ্ছে।
সাবিহা বলল,
“ভাইয়া, কী বলল?”
“আসছে এখানে।”
আদিরা বলে উঠলো,
“এখানে আসছে কেন? তুই গিয়ে কথা বলে আয়।”
মাহি এবার কটমট দৃষ্টিতে চাইলে আদিরা চুপ হয়ে যায়।
প্রায় কিছুক্ষণ পর মারসাদ ও তার বন্ধুরা সেখানে আসে। ওরা সেখানে এসে দাঁড়াতেই আদিরা রিন্তির দিকে সরে বসে। রিন্তিও রাহিনকে দেখে নিচের দিকে চেয়ে লাজুক হাসছে। মারসাদ এসে আদিরার দিকে এক পলক চেয়ে মাহিকে বলে,
“তোর ফ্রেন্ডকে বলে দিস, আমি রা*ক্ষস নই যে এভাবে ভয়ে থরথর করে কাঁপবে। আর এই নে ধর।”
অতঃপর মাহির হাতে আদিরার খাতাটা তুলে দিয়ে আবার বলে,
“পালানোর চক্করে টেবিলের উপর বইগুলো গুছানোর প্রয়োজন তো মনে করেইনি, সেই সাথে নিজের খাতাটাও ফেলে এসেছে।”
মাহি আদিরার খাতাটা পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। তারপর বলে,
“থ্যাংকিউ, দাভাই। তুই খাতাটা না তুললে আমাদেরকে নোট যে কই থেকে জোগাড় করতে হতো! ওই ভীতু তো সব ভুলে চলে এসেছে।”
“একটা সাধারণ প্রশ্ন করেছিলাম তোমাকে। সেটার জন্য পালিয়ে আসার দরকার ছিল না।”
এরপর মারসাদ উলটো দিকে ঘুরে হাঁটা ধরে। আদিরা মারসাদের কথাগুলো শুনে মন খারাপ করে বসে থাকে। এদিকে যাওয়ার আগে আহনাফ মাহির কাছাকাছি এসে ফিসফিস করে বলে,
“বিকেলে ক্লাসের পর পদ্ম পুকুরের কাছে আসবে।”
তারপর আহনাফও মারসাদের পিছনে যাওয়া ধরে। মাহি মুখ ভেঙ*চি কে*টে বলে,
“বললেই হলো! যাব না আমি। দেখি কী করে! মহারাজ এসে আদেশ দিয়ে গেল! মতামত শোনার দেরিও করলো না। কত্তো বড়ো নবাব!”
সাবিহা, রিন্তি ও আদিরা মাহিকে রাগতে দেখে হেসে ফেলে। সাবিহা বলে,
“তোদের টম এন্ড জেরির মতো ঝ*গ*ড়া দেখলে বুঝাই যায় না, তোরা একে অপরকে পছন্দ করিস।”
“কে পছন্দ করে! আমি ওই লোককে পছন্দ করি না। ওই লোকই সারাক্ষণ আমাকে জ্বা*লাতে আসে। কোনো কাজ না থাকলে যা হয় আরকি! এরে ভালোবাসার থেকে এক বালতি পানিতে ডু*বে ম*রাও উত্তম!”
মাহির কথা শুনে ওরা তিনজন আরেক দফায় হাসলো। আর মাহি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলো।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।