#copyrightalert❌🚫
#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২
ভার্সিটির মেডিকেল সেন্টার থেকে ফার্স্টএইড করে বেরোতেই আচমকা একটা মেয়ে এসে মারসাদকে জড়িয়ে ধরে। মারসাদ হঠাৎ এই কাণ্ডে দুই পা পিছিয়ে যায়। মেয়েটি বলছে,
“বেবি, তোমার অ্যাকসিডেন্ট কীভাবে হলো? তুমি ঠিক আছো?”
মারসাদ ব্যাথায় চোখ খিঁচে নিয়ে বলে উঠে,
“লিভ মি, সামিরা!”
“নো। আই ওয়াজ স্কেয়ার্ড। তোমার অ্যাকসিডেন্টের খবর শোনার পর আমি কতোটা ভয় পেয়ে গেছি। যদি তোমার কিছু হয়ে যেত?”
পাশ থেকে মৃদুল বলে উঠে,
“এখন কি তুমি খাড়ার উপর ম*রা ঘা দিতে এসেছ?”
মৃদুলের কথা শুনে রাহিন, আহনাফ, সুমি, মৌমি হেসে ফেলে। সামিরা তাতে রেগে মারসাদকে ছেড়ে দাঁড়িয়ে বলে,
“তোমাদের প্রবলেম কী? আমি টেনশনে আছি আর তোমরা হাসছো?”
মৃদুল আবার কিছু বলতে উদ্ধত হলে আহনাফ ও-কে থামিয়ে বলে,
“তোমার টেনশনটা বুঝতে পারছি কিন্তু টেনশনের কারণে তোমার বেবিকে আরও কষ্ট দিবে নাকি? দেখো না, ওর হাত ঝুলিয়ে দিয়েছে! এখন কী তুমি চাও, ও হুইল চেয়ারে বসুক?”
সামিরা চিন্তা করলো, তারপর মুখ ভার করে বলল,
“তাই তো। আমিও না! ভয়ে কী করব বুঝতে পারছিলাম না। জান, চলো তোমাকে আমি বাসায় নিয়ে যাই। রেস্ট করো তুমি।”
মারসাদ মনে মনে বিরক্ত হলেও হাসার চেষ্টা করে বলে,
“আমার একটু কাজ আছে। ভেরি ইম্পরট্যান্ট। সো, আমি এখন কোথাও যাব না।”
“কিন্তু…”
“কোনো কিন্তু না। তুমি ক্লাসে যাও। ক্লাস শুরু হয়ে গেছে তো।”
সামিরা হেসে বলে,
“আমার ক্লাস এখন না। পরে। আমি তোমার সাথে থাকতে পারব।”
মারসাদ চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিয়ে ফের চোখ খুলে খুব সুন্দর করে মেকি হেসে বলে,
“কিন্তু আমি তো এখন মিটিংয়ে যাব। ইট সো ইম্পরট্যান্ট। সো তুমি এখন যাও। এই মৌমি, সামিরাকে নিয়ে যা। তোরা ক্যান্টিনে গিয়ে খাওয়া-দাওয়া কর। বিল আমার নামে লিখে দিস।”
তারপর সুমি, মৌমি, রাত্রীরা সামিরাকে নিয়ে চলে গেলো। সামিরা যেতেই মারসাদ বাম হাতে আহনাফকে কয়েকটা ঘু*ষি মা-রে। আর বলে,
“তোকে না করেছি না? আমাকে ওর বেবি বলবি না। বারবার ভুলে যাস কেন? বল!”
আহনাফ হাসতে হাসতে বলে,
“আরে ইয়ার! মজা করছিলাম।”
“তোর মজা তোর কাছে রাখ। আমার সাথে এসব মজা করবি না।”
বলতে বলতে মারসাদ আহনাফকে আরও দুইটা লাগিয়ে দিয়েছে। মারসাদের রাগ দেখে আহনাফ ফের হাসতে হাসতে বলে,
“আচ্ছা সরি। এবার কী তোর আরেকটা হাতও ভা*ঙবি নাকি! তোর রেস্ট দরকার। চল তোকে রবিন তোর ফ্লাটে পৌঁছে দিবে।”
“আমি ওখানে যাব না। হোস্টেলে যাব। বলা তো যায় না, সাগর কখন কী বলে!”
“তোর মর্জি। চল।”
______
“এই আদিরা, তুই নাকি আজ ভাইয়ার বাইকে করে ভার্সিটিতে এসেছিস?”
মাহির প্রশ্নে ঘুরে তাকায় আদিরা। ক্লাস চলছে। আর মাহি তার পেছনে বসে ফিসফিস করে আদিরাকে এসব জিজ্ঞাসা করছে। আদিরা হাতের ইশারায় মাহিকে থামতে বলে সামনের দিকে তাকায়। কিন্তু মাহি কথা শুনলো না। সে আদিরার পিঠে গুঁ*তো দিয়ে বলে,
“বল না? ভাইয়ার অ্যা*কসিডেন্টও হয়েছে শুনলাম। কীভাবে হলো?”
আদিরা পেছনে ঘুরে মাহিকে কিছু বলতে নিলে ক্লাসের টিচার আদিরাকে সাবধান করে। আদিরাও সামনে ফিরে ভদ্র বাচ্চার মতো ক্লাসে মনোযোগ দেয়।
ক্লাসে শেষে বের হওয়ার পর মাহি আদিরাকে চেপে ধরে। তারপর আদিরা পুরো ঘটনা বললে মাহি মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“বড়ো ধরনের অ্যা*কসিডেন্টও হতে পারতো। আমি ভাইয়াকে খুঁজে দেখি। কী অবস্থা কে জানে!”
আদিরা মাহির হাত ধরে ও-কে আটকিয়ে বলে,
“আমি ইচ্ছে করে কিছু করিনি। সত্যি আমি বুঝতেই পারিনি, এসব হবে।”
মাহি মৃদু হেসে বলে,
“রিল্যাক্স। আমি জানি তুই ইচ্ছে করে করিসনি। এতো গিল্টি ফিল করতে হবে না। শুধু একটু সাবধানে রাস্তায় চলাচল করবি। আচ্ছা থাক তুই। আমি গেলাম ভাইয়াকে খুঁজতে।”
মাহি যেতেই আদিরা একটা গাছের নিচে বসে। তারপর খাতা বের করে নোটটা দেখছে। কিছুক্ষণ পর সামিরা সেখানে এসে হঠাৎ করেই আদিরার হাত থেকে খাতাটা ছিনিয়ে নিয়ে দূরে ছুঁড়ে ফেলে। আচমকা এমন হওয়াতে আদিরা চমকে উঠে। সামনে সামিরাকে দাঁড়ানো দেখে নিকট ভবিষ্যতে কী হতে পারে তা কিছুটা আন্দাজ হয় তার। সামিরা রাগত দৃষ্টিতে আদিরার দিকে চেয়ে আছে। সামিরার পেছনে সুমি ও রাত্রীরা। মৌমি বলছে,
“সামিরা, লেট ইট বি। ও তো ইচ্ছে করে করেনি।”
“না, মৌমি আপু। ও এসব ইচ্ছে করেই করেছে। আমার মারসাদ বেবিকে ও ইচ্ছে করে কষ্ট দিতে চায়। যখনি ও মারসাদ বেবির আশেপাশে আসে, ট্রাবল যেন মারসাদ বেবির সাথে চিপকু হয়ে লেগে যায়। সি এজ অ্যা ট্রাবলমেকার।”
আদিরা ভয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তারপর কাঁচুমাচু করে এক কদম পিছিয়ে যায়। দূর থেকে আদিরার দুই ফ্রেন্ড রিন্তি ও সাবিহা এসব দেখে। ওরা ক্যান্টিন থেকে খাবার আনতে গিয়েছিল। এখন ওদের একজন ফোন করে মাহিকে কল করতে করতে খুঁজতে যায়। আরেকজন আদিরার কাছে আসে। সাবিহা এসে বলে,
“আপু, তুমি ভুল বুঝছো। আদিরা জেনেশুনে কিছু করেনি। ও তো মারসাদ ভাইয়ার বাইক দেখেইনি। আর ভাইয়া তো কতো স্পিডে…”
“এই তুমি চুপ করো! তোমাকে কথা বলতে বলেছি?”
সাবিহা চুপ হয়ে যায়। সামিরা ফের বলে,
“তোমাকে যেন আমার মারসাদ বেবির আশেপাশেও না দেখি! তুমি আশেপাশে আসলে আমার মারসাদ বেবির লাইফে ট্রাবল কমবে না। বরং বাড়বে। গট ইট? নাউ গেট লস্ট!”
বলে আদিরাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায় সামিরা। সাবিহা তাড়াতাড়ি করে ধরে ফেলে। অতঃপর সামিরা চলে যায়। আদিরার নেত্রকোণ বেয়ে অশ্রুধারা বইছে। মৌমি এসে আদিরার গালে হাত রেখে বলে,
“তুমি প্লিজ কেঁদো না। সুমি মুখ ফসকে সামিরার সামনে বলে ফেলেছে। আমরা সামিরাকো আটকানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছি। সামিরা আসলে মারসাদের প্রতি খুব কনসার্ন। ভালোবাসে তো। তুমি প্লিজ মনে নিও না। হুম?”
তারপর মৌমিও চলে যায়। আদিরা চোখ মুছে নিজের খাতাটা তুলে এনে ব্যাগ নিয়ে লাইব্রেরির দিকে যাত্রা করলো। সাবিহা ও-কে কিছু বলতে চাইলেও সে শুনলো না। সাবিহা হতাশ হয়ে বলে,
“এই মেয়ে প্রতিবাদ করতে পারে না কেন? যে কেউ এসে একে শুনিয়ে দিয়ে যায়, আর ও চুপচাপ কাঁদতে কাঁদতে দেখে! আমাদের তিন এক্সট্রোভার্টের সাথে এই ইন্ট্রোভার্ট কীভাবে মিলল, আল্লাহই ভালো জানে। এখন যাবে নিরিবিলি কোথাও। তারপর সেখানে গিয়ে নিরিবিলি নিজের দুঃখবিলাস করবে!”
তারপর সাবিহা মুখ ভার করে রিন্তিকে কল লাগাতে লাগাতে রিন্তিকে খুঁজতে গেলো।
_______
লাইব্রেরিতে পিনপতন নীরবতা। আদিরা একদম পেছনের একটা টেবিলে নিরিবিলি বসে আছে। বেশিরভাগ স্টুডেন্টরা লাইব্রেরি এড়িয়ে চলে। কারণ এখানে আসলে আড্ডা চলে না। তাই যারা বই পড়ে বা পড়তে চায় তারাই আসে। আবার তো অনেকে ঘুমাতেও আসে! আদিরা তার সামনে দুই তিনটা বই ও খাতা খুলে ছড়িয়ে রেখে টেবিলে হাত গোল করে মাথা নিচু করে আছে। শুধু মাথা নিচু করে আছে বললে ভুল হবে, সে কাঁদছে। ছোটো থেকেই সে এমন। চুপচাপ থাকতে পছন্দ করে। কারো সাথে ঝামেলায় জড়াতে চায় না। বাবা-মায়ের বড়ো শান্ত মেয়ের পারফেক্ট উদাহারণ।
প্রায় অনেক্ষণ পর আদিরা নিজের পাশের চেয়ারের শব্দ পেলো। কেউ চেয়ার টেনে সেখানে বসেছে। আদিরা পাশে বসা মানুষটিকে দেখতে ও নিজের বই গুলো গুছাতে মাথা উঠায়। অতঃপর মাথা উঠিয়ে পাশে তাকাতেই সে চমকে উঠে।
চলবে ইন শা আল্লাহ,
কপি নিষিদ্ধ। ভুল, ত্রুটি ক্ষমার নজরে দেখবেন।