#এক_শহর_প্রেম_২
লেখিকা: #নুরুন্নাহার_তিথী
#সূচনা_পর্ব
#copyrightalert❌🚫
বর্ষার দিনে পায়ে হেঁটে ভার্সিটিতে যাচ্ছে আদিরা। রাস্তার কিনারাতে পানি জমে আছে। আদিরা পানি দেখে রিস্ক নিয়ে প্রায় রাস্তার মাঝে চলে যায়! হঠাৎই আদিরা পিঠে ধাক্কা অনুভব করে সেই পানিতেই উপুর হয়ে পড়ে যায়। এই পানি থেকে বাঁচতেই সে রাস্তার মাঝখানে গিয়েছিল। আর এখন সে সেই পানিতেই একদম নাজেহাল অবস্থা। আদিরা কিছু বুঝে উঠার আগেই, কিছুটা সামনে একটা বাইক ধুম করে উলটে যায়! বাইকের লোকটা ছিটকে রাস্তায় পড়েছে। বাইক অ্যাক*সিডেন্ট দেখে আদিরা তার রাগ-দুঃখ ভুলে তাড়াতাড়ি করে উঠে সেই বাইকটার কাছে যায়। গিয়ে দেখে একটা লোক হেলমেট পরা অবস্থায় রাস্তার মধ্যে পড়ে হাত ধরে কাঁতরাচ্ছে। আশেপাশে তিন চার জন লোক বাইক অ্যাকসিডেন্ট যেখানে হয়েছে সেখানে জড়ো হয়েছে। একজন বলছে,
“এই মাইয়া, তুমি রাস্তাঘাটে দেইখা চলতে পারো না? রাস্তার মাঝখানে কেন আইছো? তোমারে বাঁচাইতে গিয়া পোলাটার অ্যা*কসিডেন্ট হইলো!”
আরেকজন বলছে,
“বাইক থাকলে যেন মানুষ আসমানে উড়ে! দিক-বেদিকে তাকায় না! দেয় টান!”
আদিরা দুজনের কথাই শুনে। কিন্তু কোনো প্রত্যুত্তর করে না। এরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘটনার বিশ্লেষণ করছে, কিন্তু কেউ ছেলেটাকে ধরে উঠাচ্ছে না। অগ্যতা আদিরা ছেলেটার হাত ধরে উঠাতে চাইলে ছেলেটা ঝাড়া দিয়ে আদিরার হাত ছাড়িয়ে নেয়। তারপর ধীরে ধীরে উঠে বসে বাম হাত দিয়ে কোনো মতে মাথার হেলমেটটা খুলে আদিরের দিকে রাগত দৃষ্টিতে তাকায়। ছেলেটা হেলমেট খুলতেই আদিরা ছেলেটাকে চিনতে পারে। এই যে তার ভার্সিটির সিনিয়র মারসাদ ইশরাক! যাকে কী-না পুরো ভার্সিটি চিনে। চিনবেই না কেন? সে তো ভিপি পদের পার্থী! আর পুরো ভার্সিটির সবাই মারসাদকেই নতুন ভিপি হিসেবে চায়। তারউপর মেয়েরা তো..! কিন্তু আদিরা উনাকে ভয় পায়। সে এখন ভয়ে দুই পা পিছিয়ে গেলো। মারসাদ আদিরাকে দেখে রাগে কটমটিয়ে বলে উঠে,
“এই তোমার সমস্যা কী? চো*খ কি হাতে নিয়ে হাঁটো?”
আদিরা ভয় পেয়ে মাথা নিচু করে ডান হাতের নখ দিয়ে বাম হাতের নখ খুঁটছে। মারসাদের প্রশ্নে ভয়ে কেঁপে উঠে চুপ করে থাকে। মারসাদের হাঁটুর কাছে জিন্স ছিঁড়ে হাঁটু ছিঁ*লে গেছে। তবে পায়ের থেকে বেশি ব্যাথা পেয়েছে ডান হাতে। আদিরাকে ধাক্কা দিয়ে সরাতে গিয়ে বেকায়দায়! আশেপাশের লোকজন মারসাদের বাইকটা সোজা করে উঠায়। মারসাদ বাইকের উপর হেলমেটটা রেখে খোঁরাতে খোঁড়াতে আদিরার কাছে এলো। আদিরা দৃষ্টি নিচু রেখে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। মারসাদ রুষ্ট স্বরে বলল,
“রাস্তার মধ্যে হাটার সময় চো*খ-কা*ন কি আসমানে তুলে হাঁটো? আমি যে দুইবার হর্ন দিলাম, শুনেছিলে? রাস্তার মাঝখানে কেন এসেছো?”
আদিরা দৃষ্টি এদিক ওদিক ঘোরাতে গিয়ে মারশাদের হাঁটুর দিকে নজর যায়। আদিরা দেখে সেখানে র*ক্ত জমাট বেঁধে আছে। আদিরা সেখানে হাত দিতে নিলে মারসাদ বাম হাতে আদিরার হাত ধরে ফেলে। আর বলে,
“কী হয়েছে? তুমি আমার কথার জবাব দিচ্ছো না কেন? এখন কি চো*খ, কা*নের সাথে সাথে মুখের জবানটাও খুঁইয়ে বসেছ?
আদিরা শুকনো ঢোক গিলে আমতা আমতা করে বলে,
“আসলে..মানে..”
“এই তোমার সমস্যা কী? তোমার মুখে কথা ফুটে না? আসলে, মানে এগুলা কী?”
আদিরা নিচু স্বরে বলল,
“ভাইয়া, রাস্তার ধারে পানি তো। তার জন্য আমি পানির থেকে বাঁচতে মাঝখানে চলে গিয়েছি।”
“রাস্তার কিনারায় পানি, আর রাস্তার মাঝখানে গাড়ি। তো কোনটা তোমার জন্য সেফ মনে হয়? এদিকে তোমার জন্য আমার অবস্থা..!”
মারসাদের কথাগুলো আদিরার খারাপ লাগলো। সে তো ইচ্ছে করে অ্যা*কসিডেন্ট করায়নি। আদিরা ফের বলল,
“সরি, ভাইয়া। আমি বুঝতে পারিনি যে এত কিছু হবে।”
মারসাদ বিরক্তি নিয়ে কিছু বলতে নিবে তখন আদিরার মুখখানা দেখে মায়া লাগে। তাই সে আর কিছু বলে না। আস্তে আস্তে নিজের বাইকের কাছে গিয়ে বাইকে বসে। তারপর হেলমেট পরে আদিরাকে ডাকে।
“বাইকে এসে বসো।”
মারসাদের ডাক শুনে আদিরা নিজের পিছনে একবার তাকায়। তা দেখে মারসাদ বিরক্তি নিয়ে বলে,
“আমি তোমাকেই বলছি। তুমি ছাড়া এখানে কে আছে? যাকে আমি বাইকে উঠতে বলবো!”
আদিরা মেকি হেসে বলে,
“সমস্যা নেই, ভাইয়া। আমি চলে যেতে পারব।”
“আমি কি বলেছি তুমি যেতে পারবে না? আমি জানি তুমি যেতে পারবে। এমনকি তুমি হেঁটে হেঁটেই যাবে! তোমার ক্লাস যেন কখন?”
আদিরার টনক নড়ে। সে তার ফোন সময় দেখতে ব্যাগে ফোন খুঁজে। কিন্তু ব্যাগে তার ফোন নেই। তারপর আশেপাশে তাকিয়ে দেখে পানির মধ্যে ফোনটা পড়ে আছে! আদিরা জলদি করে ফোনটা উঠিয়ে দেখে তা কাজ করছে না। মারসাদ বুঝতে পারলো, আদিরা সময় দেখতে চাইছে। তাই মারসাদ নিজেই বলে দিলো,
“আর দশ মিনিট বাকি! হেঁটে যেতে যেতে ক্লাস শুরু হয়ে যাবে।”
আদিরা তার ফোনটার ব্যাটারি খুলে পানি মুছে, সেটাকে আবার লাগিয়ে চালু করার চেষ্টা করছে। মারসাদ এটা দেখে চোখ বন্ধ করে দুইবার বিরক্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে তাড়া দিয়ে বলে,
“তোমার আইফোন ফিফটিন প্রো ম্যাক্সকে সাইডে রেখে দয়া করে বাইকে উঠো।”
আদিরা ইতস্তত করছে। মারসাদ এবার ফের রেগে যায়। সে বলে,
“দেখো আমার পায়ে ও হাতে ব্যাথা। এখন আমাকে বাধ্য করো না তোমাকে টেনে আনতে। নিজের পায়ে হেঁটে বাইকে এসে বসো!”
আদিরা আর উপায়ন্তর না পেয়ে তাড়াতাড়ি করে বাইকে গিয়ে বসলো। তারপর মারসাদ ও নিজের মাঝে নিজের ব্যাগটা রাখলো। মারসাদ বলল,
“আমার বাম কাঁধে শক্ত ধরে বসো। ডান কাঁধে ধরবে না।”
আদিরা ইতস্তত করে ধিমি স্বরে বলল,
“ভাইয়া, বাইক একটু আস্তে চালিয়েন।”
“হুম।”
অতঃপর মারসাদ বাইক স্টার্ট করে। প্রায় ৫-৭ মিনিট পর ওরা ভার্সিটিতে এসে পৌঁছে। আদিরা বাইক থেকে নেমে মারসাদকে ধন্যবাদ বলে ছুট লাগালো ক্লাসরুমের দিকে। মারসাদ পিছু ডাকতে নিয়েও ডাকলো না। এদিকে মারসাদের ফ্রেন্ড সার্কেল মারসাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তারা মারসাদের বাইক আসতে দেখে খুশিও হয়েছিল। কিন্তু মারসাদের বাইকের পেছনে আদিরাকে দেখে অবাক হয়। তারপর মারসাদের কাছে এসে হাঁটুতে ক্ষ*ত এসব দেখে রিহান, আহনাফরা বিচলিত হয়ে পড়ে। রবিন নিজের হাঁটুতে হাত দিয়ে চোখ মুখ কুঁচকে নিয়েছে। সুমি তা দেখে ওর পিঠে একটা লাগিয়ে বলে,
“গা*ধা! মারসাদের পা কে*টেছে! আর তুই নিজের পা ধরে বসে আছিস!”
রবিন পিঠ ডলতে ডলতে মুখ ছোটো করে নিলো। রিহান প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“তোর হাঁটু ছুঁ*লে গেলো কিভাবে?”
জবাবে মারসাদ চেহারায় বিরক্তি ফুটিয়ে বলে,
“বাইক অ্যাকসিডেন্টে।”
রিহান, মৃদুল, আহনাফরা সবাই ভয় পেয়ে যায়। মৃদুল মারসাদের ডান হাত ধরে বলে,
“আর কোথাও লেগেছে নাকি?”
সাথে সাথে মারসাদ আঁ করে উঠলো। মৃদুল তাতে ভয় পেয়ে তাড়াতাড়ি হাত সরিয়ে নেয়। আহনাফ জিজ্ঞাসা করে,
“হাতেও লেগেছে। দেখি?”
“আরে ইয়ার! দুই হাতেই রাস্তার সাথে ঘষা খেয়েছি। তবে বেকায়দায় পড়ে ডান হাতটা নাড়াতে কষ্ট হচ্ছে।”
“তুই রাস্তায় একটু স্লো বাইক চালাতে পারিস না? আয় এখন। মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে ফার্স্টএইড করিয়ে আনি। একটু পর মিটিংও আছে। তোর বদলে নাহয় আমি এটেন্ড করে নিব।”
“চল।”
এরপর ওরা সবাই মেডিকেল সেন্টারের দিকে যাচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে মৌমি প্রশ্ন করে,
“আচ্ছা মারসাদ, তোর অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। তাহলে আদিরা তোর বাইকের পিছনে কী করছিল?”
“আরে ওর জন্যই তো…”
থেমে যায় মারসাদ। এবার মারসাদের বন্ধুমহল মারসাদকে ঘিরে ধরে। সুমি কপাল কুঁচকে বলে,
“এই পর্যন্ত, এই মেয়ের জন্য তোর কতবার বিপদ হলো! তাও তুই এই মেয়েকে তেমন কিছু বলিস না।”
সুমির সাথে রাত্রীও তাল মেলায়। আহনাফ বলে,
“আহ সুমি! আদিরা কি ইচ্ছে করে করে নাকি? চল এবার। মারসাদ, তুই চলতে চলতে ঘটনা বলতে থাক।”
তারপর মারসাদ ঘটনাটা বলতে থাকে।
চলবে?
এক শহর প্রেম সিজন-০১ পড়তে লেখাটির উপর ক্লিক করুন।