এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-১৭

0
300

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৭

চোখমুখে পানি ছিটানোর মাঝে ধরফড়িয়ে জেগে উঠলাম। চোখের সামনে শারফান কে সুস্থ রুপে দেখে চট করে জড়িয়ে ধরলাম। তার চেহারা পরখ করে কাঁপা গলায় বললাম।

“আআপনি ঠিক আছেন? আপনার লাগেনি তো? ঐ ঐ ট্রাক আপনাকে…।”

“এই জান হুশশশ আর কথা বলো না নিজেকে সামলে নাও। আমি একেবারে সুস্থ শরীরে তোমার পাশে বসে আছি গো। যেখানে বউ নিজেই আমার শেরওয়ানি ধরে টান মেরে নিচে পড়ে গেলো। সেখানে আমি কেমনে ট্রাকের নিচে চাপা প…।”

শারফানের মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলাম। তখনকার দৃশ্য মাথায় আসতেই কোলে থাকা বাচ্চাটির কথা ধ্যানে আসল। শারফানের দিকে প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে ঠোঁট নেড়ে নম্র গলায় প্রশ্ন করলাম।

“ঐ বাচ্চাটা?”

“তাকে তার বাবা এসে নিয়ে গেছে। সেই সাথে তার মাকে উচিৎ শিক্ষাও দেওয়া হয়েছে। বাচ্চাটির মা নিজের রুপের ফটোশুট এ ব্যস্ত ছিল। যখন তার স্বামী কল দিয়ে বাচ্চার কথা জিজ্ঞেস করে। তখনি মহিলাটি আশপাশ খোঁজা শুরু করে। তোমাকে দেখে তো বাচ্চাচোর ভেবেছিল। পরক্ষণে আমি তাকে কড়া জবাবে কিছু কথা শুনিয়ে তার আইফোন কেড়ে নিয়ে স্বামী কে কল করে তার আইফোনই আছাড় মে*রে ভেঙ্গে দিলাম। কি দরকার ঐসব যন্ত্রের যেগুলো সামান্য এক বাচ্চাকে দেখে রাখতে দেয় না। তার স্বামী এসে স্ত্রীকে চড় মেরে আমার কাছ থেকে বাচ্চা নিয়ে শোকরিয়া আদায় করে চলে যায়। তারপর আমার অজ্ঞান বউরে নিয়ে চলে এলাম রিসোর্ট এ। উফ কি শোকনাকাঠি তুমি। মনে হয় বছরখানেক হবে তোমার শরীরে দানাপানি পড়েনি। এই মেয়ে তুমি কিছু খাও না নাকি? চিন্তা করবে না আজকের পর থেকে সব দায়িত্ব আমার। দেখবে আজ রাতের পর তিনমাস গেলেই তুমি বমি করা শুরু করবে।”

বলেই চোখ মারল শারফান। আমি চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছি। তার কথা বোধ্যগম্য হতেই চারপাশ খেয়াল করলাম। রুমের ভেতর আমার শ্বশুর,দেবর দেবরের বউ আর শাহানা দাঁড়িয়ে মিটমিটে হাসছে। লজ্জায় মাথা নামিয়ে ঘোমটা দিয়ে দিলাম মাথায়। ইশ্ লোকটাও না নিজের লাজ লজ্জা খেয়ে ধেয়ে বসে আছে। চোখ রাঙানি দিয়ে সবাইকে সামলাতে ইঙ্গিত দিলাম। শাহানা না পারতে হাহা করে হেসে ফেলল। লজ্জায় আষ্টেপৃষ্ঠে গেলাম। তখনি লাঠির ঠকঠক আওয়াজে দরজার দিকে তাকালাম। স্বয়ং নানুকে সামনে দেখে চোখজোড়া কান্নাময় করে জড়িয়ে ধরলাম। তিনিও হেসে মাথায় হাত বুলিয়ে বলতে লাগলেন।

“আরে নাতনী আমার আজ খুশির দিনে তুমি এভাবে কুটকুট করে কাঁদলে তো লোকে পাগল বউ আসছে বলবে। আসো আসো বরের পাশে সুন্দর করে বসে যাও।”

মৃদু হেসে নানুর হাত ধরে বসে পড়লাম। শারফান সকলের অগোচরে কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিসিয়ে বলে,

“এবার তো ক্ষমা পেয়েছি জনাবা তাই না?”

শুনে লজ্জা পেলেও ঠোঁট কামড়ে মৃদু গলায় বললাম।

“উহুম যতক্ষণ না কবুল বলে গ্রহণ করছেন ততক্ষণ ক্ষমা শব্দকে আমি ধরছি না।”

শারফান বুকের মাঝে হাত রেখে সাইরির নজরে তাকিয়ে বলে,

“ইস্ক আমার তোমার নামে করে দিলাম,
কবুল বলতে কতক্ষণ আর?”

ফিক করে হেসে ফেললাম। লোকটাকে গাড়িতে কত জিজ্ঞেস করলাম জবাব না পেয়ে ভাবলাম সত্যিতে বোধ হয় তিনি বিয়ের পীড়িতে বসবেন।‌ তবে ধারণা আমার সত্যি হলো সে আমায় পুনরায় বিয়ে করছে। তবে এক কথা মনে পড়তেই তেজি চোখে তাকিয়ে বললাম।

“এই তাহলে আপনি আর আপনার পরিবার এই একসপ্তাহ ঢং মেরে কথা বলেননি শুধু আমায় চেতিয়ে রাখার জন্য? জানেন কত কষ্ট পেয়েছি সবাই যখন আমায় ইগনোর করছিল মনে হচ্ছিল সেখানে আমি মরে যাচ্ছি।”

“এই চুপ মরার কথা আসছে কেনো হুম? আমরা জাস্ট তোমাকে এই বড় সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য ছোটখাটো নাটক রচনা করছিলাম ব্যস।”

শারফান এর দিকে ঝুঁকে চোখ রাঙিয়ে বললাম।

“এর মাশুল না বাসরে পাবেন। ভেবে ছিলাম ক্ষমা করে দেবো। তবে এই দোষের বোঝা দ্বিগুণ বেড়েছে আপনার। ক্ষমা শব্দটা আজ কপাল থেকে দূরেই রেখে দেন। পাচ্ছেন না কোনো ক্ষমা আর হবেও না কোনো বাসর রাত্রি অথবা মধুর রাত্রি।”

শারফান ব্যবলাকান্তের মত তাকিয়ে আচমকা ঠোঁট কামড়ে কান্নার সুরে বুক চেপে ধরল। তাজ্জব বনে গেলাম। শেরহাজ ভাইয়ের অবস্থা দেখে রীতিমত ঘাবড়ে বলে,

“কি হলো ভাই বাসরের আগেই মরেটরে যাচ্ছো নাকি?”

জয়নাল মিয়া শেরহাজের পিঠে চাপড় মেরে তাকে সরিয়ে নিজে শারফানকে ধরে বলেন,

“হ্যারে বাপ কি হয়ছে বল? কাঁদছিস কেন আজকে তো তোর জন্য বড় দিন। তবুও কেন মেয়েদের মত কেঁদেকেটে নাক লাল করছিস?”

“আব্বু তুমিও শুরু করলে শেরহাজের মত ফাজলামি। এখানে আমার কপাল ফুটো হয়ে যাচ্ছে। আমাকে নাকি ক্ষমা করবে না এই ডাইনি মেয়ে।”

সকলের নজর হামলে পড়ে আমার উপর। অস্বস্তিতে মাথা নেড়ে না ইঙ্গিত করলাম। শারফান তবুও নাক মুছতে থেকে বলে,

“দেখছো আব্বু তুমি তাকিয়েছো বলে না বলছে। অথচ এতক্ষণ আমাকে ক্ষমা না করার বড় বড় বাণী শুনিয়ে হার্ট অ্যাটাক দিতে যাচ্ছিল মেয়েটা। ওওওও আম্মু শুনছো তোমার বউমার কথা।”

ন্যাকামি মার্কা কথা বলে শারফান অবলা মহিলাদের মত বুক চাপড়াতে লাগল। যা দেখে আমার অস্বস্তির চেয়েও রাগ লাগছে। সকলের দৃষ্টিজোড়া থেকে বাঁচতে স্বামীর হাত ধরে টান দিলাম। শারফান টানের ধারে আমার পাশে ঘেঁষে বসে। তার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বললাম।

“থেমে যান না হয় বাসররাতে আপনার জন্য বড় মুসিবত অপেক্ষা করছে বলে দিলাম।”

শারফান পুনরায় কান্নার ভান ধরতে লাগলে না পারতে তার হাত চেপে ধরে করুণ গলায় বললাম।

“এই প্লিজ চুপ চুপ করেন আল্লাহর ওয়াস্তে। আমি ক্ষমা করে দিচ্ছি আপনাকে। আমাদের মাঝে সব হবে ওকে একেবারে সব ফাইন নাউ?”

কথাগুলো শুনেই শারফান প্রাণখোলা হেসে আমায় জড়িয়ে ধরল। সকলের সামনে স্বামীর আলিঙ্গনে লজ্জায় তাকে মৃদু ধাক্কা দিলাম। সে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“পরিশেষে আমার বউ পটানোর মিশন সাকসেসফুল আলহামদুলিল্লাহ। এবার ভালোই ভালোই বিয়েটা সারলে বাঁচি।”

জয়নাল মিয়া চমৎকার হেসে কাজীকে সামনে ডাকলেন। তিনিও কাবিননামা এনে আমাদের সামনে রেখে রাখলেন। আমি তাকিয়ে আছি নতুন কাবিননামার দিকে। এইতো মনে পড়ছে সেদিনের কথা আচমকা এক ঝড়ো হাওয়া এসে শারফান নামক মানুষটার সঙ্গে আমার জীবন জুড়ে গিয়ে ছিল। তবে তখন না ছিল আপন করে পাওয়ার সুখ , না ছিল আকাঙ্ক্ষা একে অপরের হাত ধরে বাঁচার। আজ শারফান আমার হাত ধরে বসে আছে এক মুহূর্তের জন্য ছাড়ছে না। তার চোখমুখে হারিয়ে পাওয়ার মত খুশির ঝলক তীব্র হতে তীব্র ভাবে প্রকাশ পাচ্ছে। শারফান খেয়াল করল তার বউয়ের দিকে। কাবিননামায় তাকিয়ে থাকার বিষয়টা বুঝতে হাতজোড়া স্নেহের মায়ায় চেপে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,

“আজ থেকে আপনাকে হৃদয়ের রাজ্যের রাণী করে নিলাম বেগম সাহেবা।”

ঘোমটার ভেতর চোখজোড়া থেকে টপ করে একফুটো পানি ঝরল। যা শারফানের হাতেই পড়ল। সে দেখে সন্তপর্ণে সকলের চোখের অগোচরে চুষে নেয়। আমার হাতটা ধরে কাজীকে বলেন,

“আঙ্কেল বিয়ে পড়ানো শুরু করুন।”

সকল নিয়মনীতি মেনে আমাদের দ্বিতীয় পূর্ণ বিবাহ সম্পন্ন হলো। তার হাতে আমার হাত বন্দী। ছাড়ার নামমাত্র নেই। মিমলি খুশিতে সকলকে মিষ্টি মুখ করাচ্ছে। এর মাঝে হঠাৎ তার মাথা ঘুরতে লাগে। পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিলো। নিজের শরীরের অবস্থা সম্পর্কে সে অবগত। তবুও এমন ঘনঘন মাথা ঘূর্ণন, কোমরে ব্যথা কিসের ইঙ্গিত হতে পারে? মিমলি আপাতত খুশির মহলে ব্যাপারটা ঘাঁটল না। শেরহাজ ভাইয়ের খুশিতে দু’পাউন্ড এর বড় কেক অর্ডার করেছে শেরহাজ। টাকা সে নিজ হাতে জমানো টাকা থেকে খরচ করেছে।‌ শারফান অবাক হয়ে বলে,

“তোর টাকা তোর বিপদের সময়ে লাগবে। ধর এগুলো রাখ।”

শারফান তার দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিলো শেরহাজের হাতে। শেরহাজ অস্বীকৃতি দিলেও বড় ভাইয়ের জেদের কাছে হার মেনে গ্রহণ করে নিলো। আমি আর শারফান কেক কেটে বাটির মধ্যে সবার জন্য পরিবেশন করছি। মিমলিও এসে হাতে হাত লাগিয়ে পরিবেশন করছে। যা বেঁচে যাবে তার থেকে অর্ধেক ফ্রিজে রেখে বাকি অর্ধেক কাজের লোক, ড্রাইভারদের দিয়ে বাকিটা মসজিদের ইমান আর মসজিদের বাহিরে বসা ফকিরদের দেওয়ার কথা ভেবে রেখেছে শেরহাজ। মিমলি নিজের কেকের বাটি নিয়ে সোফায় বসে হালকা মুখে নিলো। আচমকা তার বমির উদ্রেক পেয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ সকলের অগোচরে ওয়াশরুমে চলে যায়। বেসিনের কাছে আসতেই গলগলিয়ে র*ক্তা*ক্ত বমি হলো তার। বেসিনের মধ্যে বমির সাথে রক্ত দেখে চমকে গেলো। পানির ট্যাপ ছেড়ে দিলো। র*ক্ত ধুয়ে গেলেও তার মনের সন্দেহ কমলো না। নিজের পেটে হাত রেখে ঠোঁট কামড়ে ভাবল।

“সবাই এখন বিয়ের আমেজে ব্যস্ত। এটাই সুবর্ণ সুযোগ। হাসপাতালে চলে যায় কেউ জানতেও পারবে না।”

মিমলি তার ভাবনাময় কাজ করল। শেরহাজকে শুধু জানালো সে ওয়াশরুমে যাচ্ছে। সে আসতে চাইলেও মিমলি বারণ করে বিয়েতে থাকতে বলল। গাড়ি ভাড়া করে হাসপাতালের উদ্দেশ্য রওনা দিলো। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)একঘণ্টার মধ্যে হাসপাতাল পৌঁছে যায়। এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে সিরিয়ালে বসে গেলো। ঠিক তিন লোকের পর তার সিরিয়াল আসল। নিজেকে শান্ত্বনা দিতে থেকে কেবিনে ঢুকে পড়ে। ডক্টর তার চেকাপের জন্য বেডে শুয়ে যেতে বলেন।
সব চেকাপ করার পর ডক্টর রিপোর্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে বললেন। তিনি কিছুটা সন্দেহের বশেই বলে উঠলেন।

“আপনার পুরো চামড়ার প্লাস্টিক সার্জারি হয়েছে?”

মিমলি উদাসীন মুখখানা নিয়ে মাথা নাড়ল। ডক্টর কপাল চুলকে ইতস্তত গলায় বললেন।

“আপনার বেবি পেটে এসেছে কখন?”

“এক/দেড় মাস চলছে।”

“আপনি সিউর আপনি প্রেগন্যান্ট?”

ডক্টরের কথায় বুক কেঁপে উঠল মিমলির। চোখজোড়া বিস্ফোরিত হয়ে যায় তার। ডক্টরের দিকে তাকিয়ে ঢোক গিলে বলে,

“জজজ্বি আমি জানি আমি প্রেগন্যান্ট কিন্তু আপনি এমন প্রশ্ন কেনো করছেন? প্লিজ আমার বাচ্চা ঠিকাছে তো?”

ডক্টর নিজেও দোটানায় ভোগছেন। রোগীকে কান্না করানোর কোনো ইচ্ছেই তার নেই। তবুও তিনি ডক্টর রোগীর শরীরের অবস্থার উপর ভিত্তিতে সংবাদ দুঃখ হলেও বলতে হবে সুখময় হলেও জানাতে হবে। তিনি তপ্ত শ্বাস ফেলে বললেন।

“নো নো মিসেস শেরহাজ মারুফ। আমার প্রশ্নের সেই অর্থ ছিল না। বাচ্চা নরমাল আছে। আমি কিছুটা দোটানায় পড়ে প্রশ্নটি করেছি। বাকিটা রিপোর্ট আসলে বোঝা যাবে।”

রিপোর্ট আসলো দুঘণ্টা পর। তার মাঝে শেরহাজ কতবার যে কল করেছে তার ঠিক নেই। চিন্তায় মিমলি বেডে মাথা রেখে নির্লিপ্ত হয়ে শুয়ে আছে। ডক্টর রিপোর্ট চেক করেই ধপ করে চেয়ারে বসে গেলেন। ডক্টরের ভাবভঙ্গি তার মনে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করছে। সে ধীরপায়ে চেয়ার টেনে বসে বলে,

“ডডডক্টর রিপোর্ট কি বলছে? আমার বাচ্চা ঠিকাছে তো? আমার কিছু হয়নি তাই না?”

ডক্টর চোখের চশমা খুলে চোখ চুলকে ঢোক গিলে বললেন।

“দেখেন মিসেস শেরহাজ মারুফ। আপনাকে শক্ত হতে হবে। আপনার এ কথা আমি আপনাকে নয় বরং আপনার স্বামী কে জানাতে চাই। প্লিজ তাকে কল দিন।”

“না না ডক্টর আজ তিনি খুশির মহলে আছেন। তাকে কল দিয়ে চিন্তায় ফেলতে চাইনা প্লিজ বলুন না কি হয়েছে আমার?”

“আসলে মিসেস শেরহাজ মারুফ আপনার স্কিন ক্যানসার হয়েছে। আপনার যে রুপের রং পূর্বে ছিল সেটা হঠাৎ চেঞ্জ করে মাত্রাতিরিক্ত রং ধারা আপনার চেহারা আর চামড়ায় অধিক পরিবর্তন আনা হয়েছে। যার কারণে আপনার শরীর সেই মাত্রার পিএইচ সহ্য করতে পারেনি। স্বাভাবিক চামড়ার চেয়েও ভারী কেমিক্যাল এই নতুন রুপ আপনার। এতে আপনার অজান্তেই আপনার শরীরে ইনফেকশন হয়ে গিয়েছিল। আপনি হয়ত খেয়াল করেছেন তবে পাত্তা দেননি হতে পারে। আপনার শরীরের কিছু কিছু অংশে অবশ্যই লাল বর্ণের ডট অথবা মেজতার চাপ পড়েছে নিশ্চয়?”

ডক্টরের কথায় মিমলি ভাবনায় পড়ে গেল। হ্যাঁ সে দেখেছিল গোসলের সময় তার কোমর, বগলের নিচে, বুকের মাঝে এমন চাপ বসেছে। মিমলি তৎক্ষণাৎ মাথা নাড়ল। ডক্টর দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বললেন।

“এইতো কারণে আপনার ইনফেকশন স্বাভাবিক থেকে দিনের পর দিন শরীরে গেঁথে থাকায় ক্যানসারে রুপ নিয়েছে। বড়জোর আপনার শরীর একবছর বা দুবছর সহ্য করতে পারবে। তারপর হয়ত!”

ডক্টরের কথা আটকে গেলো। মিমলি কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে।

“তারপর কি ডক্টর সব সত্যি জানিয়ে দিন প্লিজ!”

“হয়ত আপনার শরীর সহ্য না করতে পেরে আপনার মৃত্যু অব্দি হতে পারে। এখন এর উত্তম চিকিৎসা কানাডায় আছে। আপনি চাইলে করাতে পারেন। তবে একটা শর্ত আছে এতে। আপনি নিজেকে সুস্থ করে পূর্বের রুপ ধারণ করতে চাইলে বেবি ক্যারি করতে পারবেন না। কারণ কেমিক্যাল দূর করতে কেমোথেরাপি ইউজ করা হবে। এতে আপনার সদ্য জন্মানো ভ্রুণর মৃত্যু হতে পারে। আপনার শরীরের অবস্থা দেখে বলা হচ্ছে আপনি চিকিৎসা করতে চাইলে এ বছরের মধ্যে করিয়ে নিতে হবে। তবেই আপনি জীবিত থাকবেন। নাহলে আপনার বাঁচা মুশকিল। আপনার বেবি ক্যারি করতেই নয়মাস অপেক্ষা করা লাগবে। এবার আপনিই জানেন আপনি কি করবেন? বেবি নাকি রুপ! বেবি চাইলে আপনার শরীর অন্তত দুবছর তার চেয়ে বেশি আছে কিনা তা এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ জানেন না। পরিশেষে আরেকটি কথা আপনার ক্যানসার অথবা ইনফেকশন জেনিটিক্যালি আপনার বেবির উপর প্রভাব করবে কিনা এখনো বলতে পারছি না। আপনি প্লিজ সামনের সপ্তাহে আবার আসবেন। বেবি অর্থাৎ ভ্রুণর কন্ডিশন চেকাপ করে বিষয়টি নির্ধারণ করতে হবে।”

মিমলি হতবাক। ডক্টরের সাথে কথা শেষ করে উঠে দাঁড়ায়। বাহিরে গিয়ে সিটের মধ্যে বসে পড়ে। না পারতে সে কেঁদে ফেলল। মুখ টিপে কাঁদতে লাগল। তার শেরহাজ তার পরিবার তার আগমনী বাচ্চা কে ছাড়া সে চলে যাবে! কেমনে থাকবে তিন হাত পরিমাণ মাটির নিচে! মিমলি গাড়ি ভাড়া তার মায়ের বাড়িতে যেতে উদ্যত হলো। আজ তার মাকে এর কঠিনতম কথা শুনাবে সে। তার মায়ের বদ পরিকল্পনায় তার জীবন মৃত্যুর পথ অব্দি গিয়ে ঠেকেছে।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে