এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-১৫+১৬

0
342

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৫

শারফানকে নিজের ওষ্ঠদ্বয়ের কাছাকাছি দেখে আবেগে চোখজোড়া বন্ধ হয়ে গেলো। হারিয়ে যেতে ইচ্ছুক হলো দুজনার হৃদয়ে। শারফান কিছুটা ঝুঁকল। বউকে মোহনীয় রুপে বসে থাকতে দেখে সে নিজের অনুভূতি দমিয়ে রাখতে পারছিল না। তাইত এই অসাধ্য অবাধ্য কাজ সে আজ হাসিল করেই ছাড়বে বলে পণ করে ফেলেছে। শারফানের কাছ থেকে কোনো রুপ সাড়া না পেয়ে চোখজোড়া ফট করে খুলতেই ওষ্ঠদ্বয় আবদ্ধ হয়ে গেলো। চমকে গেলো হৃদয়ের অনুভূতি। এই কাছে আসা এ প্রথম শারফানের কাছ থেকে প্রথম স্ত্রী সোহাগের প্রতি অনুভূতির সঞ্চার জোরালো হচ্ছে। হাতজোড়া লোকটার চুলে এগিয়ে দিলাম। শারফান ঝুঁকে আমার কোমর পেঁচিয়ে কোলে উঠিয়ে নিলো। আমি চুপটি করে ঘনঘন শ্বাস-প্রশ্বাস ছাড়ছি। বালিশের উপর মাথা শুইয়ে দিয়ে তিনি আমার মুখের উপর ঝুঁকলেন। তার সান্নিধ্যে পাগলাটে অনুভূতি জাগ্রত হতে গিয়েই থেমে গেলো শারফানের ফোনকলে। সে বিরক্ত হয়ে ফোন ঘেঁটে দেখল প্রিন্সিপাল স্যার এ কল দিচ্ছেন। মুখটা বাংলা পেঁচার মত করে বউয়ের উপর থেকে সরে ফোন লাউডে দিলো। প্রিন্সিপাল স্যার শারফানকে জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষার প্রস্তুতিমূলক বিষয়ের দাবিতে মিটিং রেখেছেন বললেন। শারফানকে জানিয়ে দিলেন সকাল আটটায় মিটিং উপস্থিত হতে। সবাইকে উপস্থিত থাকতে হবে এটাই বাধ্যতামূলক। শারফান বাধ্যতার সাথে দাঁতে দাঁত চেপে ‘জ্বি স্যার’ বলে কল কেটে দিলো। মনেমনে শখানেক গা*লি ছুঁড়ল এই প্রিন্সিপালের উপর। তার রোমান্সের মাঝে বাঁধা দেয় কেন সবাই বুঝে না সে। বিড়বিড় করে বলে,

“বউটা এমনিতে ধানিলঙ্কা। তার উপর এই প্রিন্সিপালের বাচ্চা রাতবিরেতে কল দিয়ে রোমান্সের মাঝে বাঁধা দিয়ে দিলো। বউটাকে কত কষ্টে রোমান্সের মাঝে ডুবিয়ে ছিলাম। এখন তো সেই অনুভূতি কি আর থাকবে? দূর মুডটাই নষ্ট করে দিলো। তাও একচান্স মেরে দেখি।”

শারফান বিছানার দিকে তাকাল। আমি চুপচাপ উঠে বসে চুল খোঁপা করছি। সে দেখে দুঃখের মত মুখ করে আমার হাত ধরে বিছানার উপর বসে বলে,

“ওও বউ সরি আসো আবারো আমরা রোমান্সে মন দেয়। আমি কি করছিলাম? হে চুমু দিচ্ছিলাম। এই নাও উমমমম।”

শারফানকে পাগলাটের মত চুমু দিতে কাছে আসতে দেখেই ‘ইয়ু’ করে উঠে পড়লাম। সে অবাক হয়ে বলে,

“কি হলো ইয়ু বললে কেন? আর বিছানা থেকে নামলা কেনো? এই প্লিজ যেয়ো না আসো না কাছে আসো।”

“ছিঃ ছিঃ অসভ্য পুরুষ। ব্রাশ করেন নাই একটু আগে কি চুমু খেলেন। ইয়াক যান ব্রাশ করে আসুন। আমার কাজ আসে আপনার সাথে এখনো আমার বিয়ে হয়নি। পুনরায় বিয়ে হওয়ার পরই চুম্মা*চাটি করতে পারবেন। তার আগে নো নেভার।”

বলেই তড়িঘড়ি বিছানার থেকে নেমে দরজার দিকে ছুটে গেলাম। শারফান পেছন থেকে ‘এ না না’ করেই বিছানায় মুখ থুবড়ে পড়ল। বালিশে মুখ চেপে রাগে রি রি করে কয়েকটা চাপড় মেরে বাচ্চাদের মত বালিশ কামড়ে ‘উফ আল্লাহ’ বলে বিছানার থেকে উঠে পড়ল। সুন্দর করে বিছানা গুছিয়ে আলমারি খুলে পরণের জন্য জামা বের করে রুমেই জামা পরে ফেলল।
রাতে সবাই খেয়ে ধেয়ে যার যার রুমে চলে গেলো। শারফানকে বালিশ জড়িয়ে ধরে ঠোঁট গোল করে ঘুমাতে দেখে আনমনে হাসলাম। আজকে লোকটার কাণ্ড মনে পড়তেই প্রাণখোলা হাসি পেয়ে ছিল। মিটমিটে হেসে ধীরপায়ে বিছানায় গিয়ে বসলাম। শারফানের চুলে বিলি কেটে দিয়ে ভাবছি।

“আপনি আমার। শুধুই আমার নিরামিষ ভীতু বর।”

আবেগ ভরা স্নেহের চুমু দিলাম শারফানের কপালে। ভালোই ধকল গিয়েছে লোকটার উপরে। তাই হয়ত খেয়ে এসে শুয়ে পড়তেই ঘুমিয়ে গিয়েছেন। মৃদু হেসে উঠে পড়লাম। দরজা আটকে রুমের অগোছালো জিনিস গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে উড়না খুলে বিছানার কোণারে রেখে ধীরে ধীরে শারফান এর বুক থেকে কোলবালিশ কে সরিয়ে পায়ের কাছে মা*লা দিলাম। এই কোলবালিশ চরম শক্র হু। স্বামীর বুকের ভেতর মাথা ঠেকিয়ে তার পিঠে হাত চেপে চোখ বুজে নিলাম। শারফান ঘন ঘুমের মাঝেও শব্দহীন ঠোঁটের কোণে হেসে টানল। হাতজোড়া জোরালো করে বউকে আগলে নিলো। তার বুকের মাঝেই ঘুমিয়ে পড়লাম স্বামীর ঘুমন্ত অবস্থায় শক্ত হাতের স্পর্শে।

দিনের বেলা টেবিলের মধ্যে বই খুলে ম্যাথ করছি। শারফান দিনে হোমওয়ার্ক এর লিস্ট লিখে মিটিং এ চলে গিয়ে ছিলো। হঠাৎ রুমে চলে আসল শাহানা। তাকে খেয়ালে পড়ল না। ম্যাথের মাঝে যে ডুবে ছিলাম।
তখনি শাহানার কথায় চোখ ফিরিয়ে তার দিকে তাকালাম।

“ভাবী আপনি কি মিমলি ভাবী কে ক্ষমা করে দিয়েছেন? ভাবী তো এখন আপনার সাথে মিশতে চাই। কিন্তু আপনি মুখ ফিরিয়ে নেন দেখে আমি আর আব্বুও চুপ করে থাকি। কিন্তু গতকাল কে ভাবীকে পানিতে পা পিছলে পড়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করলেন। তার উপর জোরালো শাসনও করলেন। আপনি কি তবে মিমলি ভাবীকে ক্ষমা করেছেন?”

শাহানার কথায় মৃদু হেসে বললাম।

“কোনো ব্যক্তি যদি ভুল করে সেই ভুলের পথ শোধরে সামনে আগানোর পথ দেখানোই এক মুমিনের কর্তব্য। সেখানে মিমলি নিজ মুখেই তার দোষ স্বীকার করে প্রায়শ্চিত্ত করতে লেগে পড়ে ছিল। তুমিই তো আমায় বলেছিলে পুরো ঘটনা। হ্যা আমি প্রথম প্রথম রিয়েক্ট করে ছিলাম। তবে কয়েক দিন নিজের থেকে ভেবে দেখলাম না মিমলি দোষী না সবটা দোষ চাচী শ্বাশুড়ির। এখন তিনিও এই বাড়িতে নেই। তার মেয়েকে শোধরে ভালোবাসা দেওয়া আমাদের পরিবারের দায়িত্ব। দেখো না শেরহাজকেও মাফ করে দিয়েছি। আজ সকালে পায়ের কাছে বসে কতই না আহাজারি করছিল বেচারা। আমি তো কবেই মাফ করে ছিলাম তাকে। সে আমার ছোট ভাইয়ের মতই। ছোট ভাই দোষ করলে যেমন শাস্তি দিয়ে শোধরানো দরকার। ঠিক তেমনি তাকে তোমার ভাই শোধরে দিয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় ব্যাপার কি জানো?
এক মেয়ে যেমন ছেলের জীবন ধ্বংসাত্মক এ পরিণত করতে পারে ঠিক তেমনি শোধরে বদলে দিতেও তার মাসের পর মাসের দরকার পড়ে না। মেয়ে আমরা এমনি। আমাদের সংস্পর্শে ছেলে খারাপ হবে কি ভালো তা একমাত্র মেয়েদের উপরেই নির্ভর করে। তাইত সবখানে তালাক শব্দটা মানাই না। তোমার ভাইয়াকে আমি দূরে গিয়ে নিজের গুরুত্ব বুঝিয়েছি। সেই গুরুত্বের রেশ ধরে সে আমায় চোখে হারাই। আমি যদি অমানুষিক মনে তার কথায় তালাকনামা দিতে প্রস্তুত হতাম। তবে আজ এই সুখের দিন দেখতাম না। জানো তো তালাক হলো একটি অভিশাপ মেয়েদের জীবনে। তাইত হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন,
‘বিয়ে করো কিন্তু তালাক দিও না, কেননা তালাকে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে!’🖤
কবুল বলে বিয়ের মাহাত্ম্য না বুঝে যেমন বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া সহজ। তাতে স্বেচ্ছায় তালাক প্রদান করে শয়তানকে জয়ী করানোও একই কথা। তাই যত মুসিবত সামনে আসুক আমি আমার পদবী ধরে রাখতেই এতটা পথ পেড়িয়েছি। মিমলি আবেগে জড়িয়ে শয়তানের ফাঁদে পড়ে সংসার ভাঙ্গতে চেয়ে ছিল‌। কিন্তু দেখো তার জীবনটাই জুড়ে গেল শেরহাজের সাথে। এজন্য সেও এখন মা হতে চলেছে। এক মাকে আমি পিছলে পড়া থেকে বাঁচিয়েছি। নিশ্চয় আল্লাহ আমায় সহায় হবেন।”

শাহানা চট করে আমায় জড়িয়ে ধরে বলে,

“ভাবী আপনি এত ভালো কেনো? আপনার এই ভালোর নজরবন্দি দেখেই তবে আব্বু ভাইয়ার গলায় ঝুলিয়ে দিয়েছেন তাই না?”

শাহানার কথায় তার মাথায় চাপড় মেরে বললাম।

“আচ্ছা শাহানা চুলায় রান্না গরম করতে দিয়েছি। একটু দেখিও হে। আমাকে তোমার ঐ খারুশ ভাই এতগুলো হোমওয়ার্ক দিয়ে রাখছে। রাতের আটটার ভেতর শেষ না করলে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখবে বললেন। একটু করে ফেলি তুমি একটু ঐদিক নজর রাখিও।”

শাহানাও সরল মনে ‘ওকে ভাবী’ বলে রুম থেকে চলে গেলো। আমি আর অন্যদিক খেয়াল না দিয়ে লিখতে আরম্ভ করলাম।

শেরহাজ শারফান রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিয়ের জন্য কি কি কেনা লাগবে সব জোগাড় করছে। শারফানের মিটিং শেষ হতেই শেরহাজ কে ঘুমাতে দিলো না। দশটায় কল করে তৎক্ষণাৎ শপিং সেন্টারে চলে আসতে বলে। শেরহাজ আর কি করবে? ভাইয়ের কথায় বাধ্য হয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ে। এমুহুর্তে সে চরম বিরক্তির চোটে বলে,

“উফফ ভাই তাড়াতাড়ি করো না। এই কাঠফাঁটা রোদে দাড়িয়ে থেকে কালো হওয়ার শখ জেগেছে নাকি তোমার? সেই কখন থেকে একটা নুপূরের দিকে তাকিয়ে আছো। নিলে নাও নাহলে আসো গাড়িতে বসে এসির বাতাস খাই।”

শারফান চোখ রাঙিয়ে বলে,

“নিজে বিয়েসাদি করে কয়েক মাস পর বাচ্চার বাপ হয়ে যাবি। আর এদিকে তোর ভাই অনাহারে অনাদরে পড়ে আছে সেদিক খেয়াল দিস না। নিজের বেলায় ষোলআনা আর আমার বেলায় এক কানা কুড়িও না। তোর শাস্তি এটাই আমার সাথে কম্পোটিশন দিতে এসেছিলি না। এবার বুঝ।”

“ভাই এত বড় শাস্তি দিও না। তুমি চাইলে বলো এখনি তোমার আর ভাবীর বিয়ে করিয়ে দিচ্ছি। প্লিজ তাও এই গরমে আমার এত ঘার্ম নষ্ট করিও না। এগুলো রাতের বেলা ঝরিয়ে নিতে হয়। দিনের বেলা নয় বুঝছো না কেনো?”

শারফান কিংবদন্তি হয়ে তাকালো তার ছোট ভাইয়ের দিকে। সে কি বলেছে তা বুঝতে পেরেই হাতে থাকা প্যাকেট দিয়ে জোরালো আঘাত করল শেরহাজের পিঠে। তার মুখ ধরে বলে,

“চুপ কর বেশরম কোথাকার। না তোকে চুপ করিয়ে লাভ নেই। স্ট্যাচু করে দিলাম তোরে।”

শেরহাজ যন্ত্রমানবের মত হার্টছে তার বড় ভাইয়ের পিছে। মুখে তার কসটেপ লাগানো। এতক্ষণ ফটর ফটর করার শাস্তি হিসেবেই তার মুখে কসটেপ লাগিয়েছে। শারফান তার মনের মত সব জিনিস নিয়েই ক্ষান্ত হলো। প্রাণমেলে হেসে শেরহাজের কাঁধে মৃদু স্পর্শ করে বলে,

“শেষ ভাই এবার তোর বড় ভাইকে বিয়ে করে বাচ্চার বাপ হওয়ার থেকে আর কেউ থামাতে পারবে না।”

শেরহাজ তো মহাখুশি হয়ে দৌড়ে গাড়িতে গিয়ে বসে গেলো। শারফান ব্যাপারটা হলো কি বুঝেই পাগলাটে হেসে সে নিজেও গাড়ির কাছে এসে বসে গেলো। ড্রাইভার আঙ্কেল কে গাড়ি বাড়ির দিকে নিতে বলল। শেরহাজকে বলে,

“সবকিছু ঠিকঠাক করে রাখি। সামনেই শুক্রবার। সেদিনই ঘরোরা ভাবে বিয়েটা সেরে ফেলব।”

“জ্বি ভাই দোয়া রইল এবার যেনো তুমিও বাপ হওয়ার সংবাদ পাও।”

ড্রাইভার আঙ্কেল এর সামনে বেহায়া ছেলেটা কি হলো দেখে শারফান ঠোঁট কামড়ে চ’ড় লাগল। শেরহাজ এবার ভদ্রভাবে মুখে আঙ্গুল চেপে ধরে বসে রইল।

_____
মিমলির কোমরে খুব ব্যথা হচ্ছে। সে উচ্চ গলায় শাহানা কে ডাকল। কিন্তু শাহানা শুনল না। সে কানে ইয়ারফোন গুঁজে গান শুনছে আর রান্নাঘরের থেকে কিছুটা দূরে ডাইনিং রুমে বসে রইল। মিমলি কষ্টে উঠে দাঁড়িয়ে গেলো। আজ সারাদিন সে শুয়ে ছিলো।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)সকালে কোমরে হঠাৎ করেই ব্যথা অনুভব করে চলেছে। ভুলেও কাউকে বলে চিন্তায় ফেলতে চাইনি। যখন থেকে ফারজানা তাকে মেনে নিয়েছে সকলে তাকে আদর-যত্ন দিয়ে ভরিয়ে রাখছে। কমতি শব্দটা হারিয়ে গিয়েছে। মিমলি গরম পানি করার জন্য রান্নাঘরে এলো।‌ শাহানা কে নিজের মত ব্যস্ত দেখে পুনরায় ডাক দিলো না। সে নিজেই গোলাকার মাঝারি সাইজের পাতিল নিয়ে কলের কাছে এনে রাখল। পানি ভরে ঢের কষ্ট সহে চুলার কাছে রাখল। চুলায় রান্না করা পাতিল দেখে ভাবল চুলা বন্ধ। আর রান্নাগুলো গরম করে রেখে দেওয়া হয়েছে। সে তাই সব পাতিল সরিয়ে ডাইনিং টেবিলের পাশে থাকা ছোট সাইজের ট্রি টেবিলে রাখল। শাহানা তখনো তাকে খেয়াল করেনি। সব পাতিল সাজিয়ে রেখে মিমলি চুলায় তার পানি ভর্তি পাতিলটা রাখল।

হঠাৎ নাকের মধ্যে তীব্র গ্যাসের গন্ধ পেয়ে কলিজা মোচড়ে উঠল। তৎক্ষণাৎ রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে তাকালাম। শাহানাকে গান শুনতে দেখে অঘটনের মাত্রা বুঝে গেলাম। সেখানে ছুটে গিয়ে দেখলাম মিমলি চুলা জ্বালানোর চেষ্টা করছে। আমি জোরে জোরে মিমলিকে ডাক দিলাম। মিমলি শুনে রান্নাঘর থেকে বাহিরে উঁকি দিয়ে দেখল আমাকে। আমি থামিয়ে দিয়ে তার কাছে গেলাম। তাকে ধরে শাহানার পাশে এনে দাঁড় করিয়ে রান্নাঘরের জানালা দরজা খুলে দিলাম। সেখান থেকে রেগেমেগে বেরিয়ে শাহানাকে ধরে বসা থেকে দাঁড় করালাম। তার কানের থেকে ইয়ারফোন খুলে ছিঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলাম। হাতে থাকা ফোনটাও সোফায় ছুঁড়ে দিয়ে জোরে সরে এক চ’ড় বসালাম। চ’ড়ের কারণে সে গিয়ে পড়ল শ্বশুর আব্বুর পায়ে। আমি দেখেই থমথমে চেহারা নিয়ে তাকালাম। সে সময় শাহানার দুভাইও এসে বোনের চ’ড় খাওয়ার দৃশ্য দেখে ফেলেছে। শারফান শেরহাজ দুজন রেগে এগিয়ে আসল। আমি ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। মূলত নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করার প্রয়াস করছি। মিমলি হতবাক চোখে শুধু তাকিয়ে রইল। সেও বুঝছে না ফারজানা ভাবী কেনো তার আদরের ননদীকে চ’ড় মারল? শাহানা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো। সে কান্নার চোটে বলে,

“ভাবী আমি আপনাকে এত ভালোবাসি আর আপনি আমাকে চ’ড় দিলেন। আমি আপনার কাছ থেকে এমনটা আশা করিনি ভাবী।”

শাহানা ফুঁপানো অবস্থায় ছুটে নিজের রুমে চলে গেলো। আমারও খারাপ লাগল। কিন্তু কি করব রেগে গিয়ে অস্বাভাবিক কাজ করে ফেলেছি। আসলেই তেমনটা করা উচিৎ হয়নি। শারফান তার হাতে থাকা প্যাকেট গুলো সোফায় ছুঁড়ে ফেলে বোনের নিকট চলে গেলো‌। শেরহাজও মুখ ফিরিয়ে মিমলিকে ধরে রুমে চলে গেলো। মিমলি তার ভাবীর কাছে থাকার জন্য মুখ খুলতে চাইলে শেরহাজ ধমকে বলে,

“যে আমাদের বোনের গায়ে হাত তুলে নিজের আধিপত্য দেখান তার কাছে গিয়ে তোমার সহানুভূতি দেখাতে হবে না।”

মিমলি স্বামীর ধমকে চুপ করে চলে গেলো সঙ্গেই। আমি অসহায় চোখে শ্বশুর আব্বুর কাছে এগোতে নিলেই তিনিও চোখ ফিরিয়ে ধীরস্থির পায়ে হেঁটে নিজের রুমের দিকে যেতে লাগলেন। পরিস্থিতি প্রতিকূল দেখে আপাতদৃষ্টিতে সবাইকে একা ছেড়ে দিলাম। কিন্তু হৃদয়ের জ্বলন শারফান দেখল না। তার হাতে থাকা প্যাকেটের উপর আমার নজর আঁটকালো। প্যাকেটগুলো ছুঁতে নিয়েও ছুঁয়ে দেখলাম না। চোখ থেকে টপ করে পানি পড়ল। মুছেই কৃত্রিম হেসে নিজের কাজ শেষ করতে চলে গেলাম।
শারফান নিজের বোনকে বুঝিমে সুজিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিলো। তার রাগ লাগছিল বোনকে চ’ড় মেরেছে দেখে। পরক্ষণে ভাবল আজ কি ভেবেছিল আর কি হয়ে গেলো! সত্যি মানুষকে কখনো আশা রাখতে নেই। আশাহীন পথ এগিয়ে যাওয়া উচিৎ। কেননা আশা নিয়ে কাজ করলে দেখা যাবে সেই আশা নিপূরণ হয়ে রইল। তপ্তশ্বাস ফেলে বোনের পাশেই হেলান দিয়ে বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে থাকে সে।

চলবে…..

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১৬

“এ মেয়ে সেই কখন থেকে বলছি রেডি হয়ে নাও। হচ্ছো না কেনো? কথা কি কানে যায় না?”

শারফানের রাগী কণ্ঠে কেঁপে উঠলাম। বাড়ির কেউই আমার কথা শুনতে রাজি নয়। সবাই গম্ভীর গলায় কথা বলছেন। শারফান তো প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলছেন না। আমার কি করা উচিৎ বোঝে উঠতে পারছি না। শাহানাও এখন মুখ ফিরিয়ে থাকে। সবার কাছে একপ্রকার অবহেলার পাত্রী হিসেবে নিজের অবস্থান খেয়াল করে চলেছি। আচমকা শক্তপোক্ত হাতের স্পর্শে চমকে তাকালাম।

“কানে যায় না প্যাকেটে রাখা ড্রেস পরে রেডি হয়ে আসতে বলছি কতক্ষণ হচ্ছে কথাটা বলেছি? নাকি তুমি চাও আমি তোমায় পরিয়ে দিয়ে বাপের বাড়ি রেখে আসি?”

কলিজা মোচড়ে উঠল। কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম।

“কি কি বলছেন? আপআপআপনি কি আমায় দাদুরবাড়ি রেখে আসতে চাইছেন?”

“নাহলে বরযাত্রীর দায়িত্ব পালন করব কেমনে? এত মাস ধরে তোমার ন্যাকামি অনেক সহ্য করেছি। এবার তোমায় সহি নিয়তে রেখে আসতে চাই।”

নিজের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলাম না। শারফানকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলাম। গলায় কথা আঁটকে আসছে। তবুও কষ্টে নাক ফ্যাঁস ফ্যাঁস করে বললাম।

“আর কখনো আপনার সাথে বেয়াদবি করব না। আমি যা করতাম শুধু আপনার কাছাকাছি আসার জন্যে করতাম। তার চেয়ে আর কিছু নয়। আমাকে প্লিজ পাঠিয়ে দিয়েন না। আপনাকে খুব ভালোবাসি আমি শারফান‌। আপনার সাথে জীবনের শেষটুকু কাটাতে চাই। আমার সত্যি বিশ্বাস করেন কোনো ইনটেশন ছিল না শাহানাকে চ’ড় দেওয়ার। সেটা পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় আমি হুট করে বেসামাল হয়ে কাজটি করে ফেলেছি। আপনি চাইলে আমি শাহানার পা ধরে ক্ষমা চাইবো তবুও প্লিজ আমাকে পাঠিয়ে দিয়েন না। আপনাকে ছাড়া এক মুহূর্ত থাকতেও আমার দম আটকে আসে।”

শারফান কে নিশ্চুপ দেখে তার চোখের দিকে তাকালাম। সে নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে বলে,

“এসব কথা তোমার চ’ড় দেওয়ার আগে ভাবা উচিত ছিল।”

কথাটা বলে আমার হাত সরিয়ে প্যাকেট হাতে ধরিয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। উদাসীন মুখখানা নিয়ে অনুভূতি শূন্য হয়ে স্বামীর দেওয়া পোশাক পরে বের হলাম। শাহানা কে রুমে বসা দেখে ফুঁপিয়ে বললাম।

“বোন তুমি আমায় ক্ষমা করে দাও। প্লিজ তোমার ভাইয়াকে বোঝাও না। আমাকে বাপের বাড়ি না রেখে আসার জন্য। আমি তোমাদের খুব ভালোবাসি। তোমাকে আমি ইচ্ছে করে চ’ড় দেয়নি বিশ্বাস করো বোন। ঐ সময় মিমলি গর্ভবতী অবস্থায় গরম পানি চুলায় বসাছিল। তার উপর গরম পাতিল রাখা ছিল চুলার উপর অথচ গ্যাস কবে নিভে গেলো তুমি জানলেই না। এতে মিমলি ঘ্রাণ না পেলেও আমি পেয়েছি। তাইত হতদন্ত হয়ে ছুটে এসে মিমলিকে থামিয়ে দরজা জানালা খুলে ঘ্রাণ দূর করার প্রয়াস করে দেয়। তখনি তোমাকে ফোন নিয়ে ব্যস্ত দেখে রাগে কাজটা করেছি। সত্যি বোন আমার তোমাকে হার্ট করার ইচ্ছে ছিল না।”

শাহানাও শারফানের মত মুখ ফিরিয়ে বলে,

“দেখেন ভাবী আমি এখানে ভাইয়ের কথায় এসেছি। আপনায় নাকি সাজহীন কলিগদের কাছে প্রদর্শন করতে পারছেন না। ভাইয়ার কলিগগণ আপনাকে দেখতে চাইছেন। তাই বাধ্য হয়ে ভাইয়া এত কিছু করছেন। এবার প্লিজ আপনি আয়নার সামনে বসে যান। আপনাকে সাজিয়ে দিয়ে আমার বের হতে হবে।”

উদাসীন হয়ে শাহানার কথায় সাড়া দিয়ে নির্লিপ্ত হয়ে বসে পড়লাম ড্রেসিং টেবিলের সামনে। শাহানা তার ভাবীর অগোচরে মিটমিটে হাসল। সর্তকতার সাথে সে তার ভাবীকে সাজিয়ে দিতে লাগল। দরজার বাহিরে থেকে শারফান সবটা শুনেছে পরখও করেছে। তার পেছনে জয়নাল মিয়া ছেলের মাথায় চাপড় মেরে বললেন।

“দেখলি তো বউমার কোনো ভুল নেই। আর তুই এতটা কষ্ট দিয়ে সাজতে বসাইলি কেন? সোজাসাপ্টা বললেই পারতি। এহন দেখ মাইয়াটা কেমনে উদাস হয়ে আছে।”

“আহ্ আব্বু আম্মুর প্ল্যানিং এটা। দেখবে যখন বাড়ির সবাইকে চোখের সামনে দেখবে তখন তোমার বউমা কতটা হেসে খেলে উঠে। এখনকার জন্যে কষ্ট পাক। আমিও কি কম পেয়েছি নাকি? ব্যস আজকের রাতেই আমাদের স্বপ্ন পূরণ হবে।”

জয়নাল মিয়া শুকনো কাশি দিয়ে চলে গেলেন। শেরহাজ কে ইশারায় সব ঠিক করে নিতে বলে। মিমলিও ব্যস্ত সবকিছুতে তোড়জড় লাগাতে। তার বড় ভাবীর পুনরায় বিয়ে হচ্ছে। এর খুশিতে পুরো বাড়িতে আজ আমেজ বসবে।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)শাহানা সাজিয়ে দিলো প্রায় একঘণ্টা লেগেছে। মনমতো সে তার ভাবীকে সাজাতে পেরে অত্যাধিক খুশি। সময় বিলম্ব না করে ভাবীকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলে,

“নিজেকে দেখে ভাব নিতে হবে না। আমার সাজানোর হাত সুন্দর তাই আপনাকে এতটা সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ। আবার ভাবিয়েন না নজর দিচ্ছি।”

শাহানার দিকে ছলছল নজরে তাকালাম। যা দেখে শাহানা মনেমনে ভয় পেলো। খুব কষ্ট করে সময় নিয়ে সাজিয়েছে সে তার ভাবীকে। এখন যদি তার ভাবী কান্না করে দেয়। তার কষ্টের ফলাফল একেবারে নষ্ট,বৃথা যাবে। তাইত কিছুটা রেগেই বলে ফেলল।

“ভাবীইই আপনি নিজে অলস হতে পারেন আমি নয়। দেখছেন না আমি সাজিয়েছি। সেই সাজানোর মধ্যে কেনো আপনি কান্না করে মুখটা নষ্ট করার চেষ্টা করছেন? ওওওও ভাইয়ার কলিগদের সামনে বলার জন্য আমি ননাস হিসেবে খুব খারাপ। সরি টু সে ভাবী এতে আপনারই দোষ হবে। আমি কষ্ট করে সাজিয়েছি সেটা আমি বললেই ভাইয়ারা বিশ্বাস করবেন। আর আপনি কয়েক মাসের আসা এক মেয়ের কথায় কেউ বিশ্বাস করবে না। সো প্লিজ ডোন্ট ক্রাই। আর শক্তি নেই আপনাকে সময় নিয়ে সাজানোর। যা সাজিয়েছি তাতেই যথেষ্ট।”

শাহানা কথা শেষ করে ধুপধাপ পা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শারফান খেয়াল করেই বোনের কাছে গিয়ে তার পিঠে ধুপধাপ কয়টা লাগিয়ে দিলো। শাহানা ‘উহহহ আহ’ করে পিঠ মালিশ করতে থেকে বড় ভাইয়ের দিকে তাকায়‌।‌ শারফান রাগী কণ্ঠে বলে,

“ঐ আমার বউকে উল্টা পাল্টা কথা শুনালি কেন? তোর কত সাহস আমার বউকে কান্না করাস। তোকে তো সাত তলা থেকে নিচে ফেলে দেবো বেয়াদব। যা এখনি ক্ষমা চেয়ে খাইয়ে দেয়।”

“উফফ ভাইয়া এখন না বকলে ভাবী কান্না করে মুখের সাজ নষ্ট করে ফেলতেন। এতে আবার সাজাতে গিয়ে সময় নষ্ট হতো সাথে তোমার বিয়ের সময়তেও দেরি হতো। এখন ভাবী একেবারে প্রস্তুত। তুমি শেরহাজ ভাইয়াকে গাড়ি দিয়ে পাঠিয়ে দাও। আমিও বেরিয়ে যাচ্ছি। রিসোর্ট এ গিয়েই সেজে নেবো আমি। ওখানে আমার ফ্রেন্ডস আসছে ওরা সাজাই দেবে। আমি আব্বুকে নিয়ে চলে যাচ্ছি টাটা।”

কথা শেষ করে শাহানা দ্রুত পালিয়ে গেলো। কেননা তার বড় ভাই যে রেগে আছে বোম ব্লাস্ট হতে সময় লাগবে না। শারফান তপ্ত শ্বাস ফেলে রুমের দিকে অগ্রসর হলো। আমি আলমারি খুলে সুটকেসে বের করে কাপড় ভরে নিচ্ছি। আর থাকব না এ বাড়িতে। সামান্য ভুলের জন্য সবার কাছ থেকে অপমান সহ্য করা সহজ কি? কান্না করতে পারছি না শাহানার অপমানে। শারফান রুমে এসে নিজের বউকে সুটকেস গুছাতে দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। বিস্মিত গলায় বলে,

“এই এই মেয়ে সুটকেস কেন গুছিয়ে নিচ্ছো? কোথাও যাবে নাকি?”

“হ্যা আপনাকে আর আপনার পরিবার কে ছেড়ে বাপের বাড়ি চলে যাচ্ছি।”

“কেনো কারণটাও বলে দাও?”

রেগে জেদে চিৎকার করে বললাম।

“এই ফাজিল চুপ থাকেন। একে তো কথা পুরো না শুনে আমায় পাত্তা দিচ্ছেন না। তার উপর আমি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে আপনার অভিমান ভাঙাতে চেষ্টা করছি। সেখানে আপনার ভাব দেখি বেড়েই যাচ্ছে। কোথায় ক্ষমা করে পুরো কথা শুনবেন তা না করেই দুনিয়ার সম্মান রক্ষার্থে সাজাতে বললেন শাহানা কে। ঠিকাছে আপনার সম্মানের ব্যাপার যেহেতু সেহেতু সেজে গুজে নিজেকে আপনার কলিগদের কাছে মূর্তির মত পরিচয় দেবো। কিন্তু আমার রগ যদি ফুলে গেছে তবে আপনাদের সবাইকেই ঝাড়ুর বা*রি মেরে একেবারে আলুভর্তা বানিয়ে ফেলল।”

“ব্যস বউ হয়েছে আরেকটু বললে এখন আমার শরীরটা এম্বুলেন্স নিয়ে টানাটানি করতে হবে। আসো যাই। তারপর যেখানে মন চাই সেখানে চলে যেও। আপাতত ভালো স্ত্রীর আবেশে নিজেকে সামলে নাও।”

শারফান ঢোক গিলে কথা শেষ করেই সুরসুর করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে তার পিছু নিয়ে চলে গেলাম। তার গাড়িতে গিয়ে বসলাম। কিন্তু যাওয়ার সময় বাড়িতে কাউকে নজরে পড়েনি। সবাই ব্যস্ত ভেবে ওতটা ঘাঁটলাম না। গাড়িতে নিশ্চুপ শারফানের দিকে নজর দিলাম। লোকটাকে আজ অন্যরকম সুন্দর লাগছে। গালের খোঁচা দাড়ি কিছুটা বেড়েছে। মুখটা একেবারে উজ্জ্বল হয়ে আছে যেনো আজ তার জয়বিলাস। পরণের দিকে তাকাতেই চমকে গেলাম। লোকটার গায়ে শেরওয়ানি কেনো? পরক্ষণে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখি, ‘একি আমার গায়ে লাল শাড়ি শারফানের গায়ে শেরওয়ানি তবে কি আমার যা এখন মনে হচ্ছে সেটাই হতে চলেছে?’ মনের ভাবনা আর প্রকাশ না করে থাকতে পারলাম না। শারফানের কলার ধরে ঠোঁটের কাছে এনে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললাম।

“আপনি কি আমায় আজ বিয়ে করছেন?”

শারফান ভেতরে চমকে গেলেও প্রকাশ্যে আনল না বরং বাঁকা হেসে বলে,

“তোমার শাস্তি দিতে নিয়ে যাচ্ছি। আজ আমার দ্বিতীয় বিয়ে হবে আর তুমি হবে দর্শক। তোমার কাছাকাছি থেকেই আমার বিয়ে হবে। মনে আছে সেদিন তোমার পায়ের চরণ বাড়িতে পরার পর রুমে আবদ্ধ অবস্থায় তুমি কষ্টের তিক্ত বাণী শুনিয়েছিলে। সেই একইভাবে আজ তোমাকে বলছি। তুমিও আজ আমার বিয়ে দেখবে এই নিজ চোখে নিজ হাতেই আমায় বিয়ের স্থানে আসনপ্রাপ্ত করাবে।”

শারফান খুব গম্ভীর ভঙ্গিমায় আমার হাত ছাড়িয়ে কলার ঠিক করে বসল। অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে শব্দহীন জোরালো শ্বাস ছাড়লো। আমি স্তদ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ভাবছি এই আমি কাকে দেখছি? লোকটা সামান্য এক ভুলের উপর জেদ লাগিয়ে আমার জন্য সতীন আনার ব্যবস্থা করবে। রাগের ফুলকি বেড়েই যাচ্ছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ রাখতে আড়চোখে পরপর শারফানকে দেখছি। শারফান স্থীর হয়ে বসে থাকতে পারছে না। সে জানে তার বউয়ের ধারালো চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেই সে ধরা পড়ে কাঠ হয়ে পড়বে। যার কারণে সে যথাসম্ভব নিজেকে ফোনে নাহয় জানালার বাহিরে তাকাচ্ছে। বউয়ের হাতে ঝাড়ুপেটা তার কপালে লিখিত রয়েছে সেটা সে ভালোই বুঝতে পেরেছে। ঢোক গিলে ফোনে সময় দেখছে সে। চোখজোড়া সরু করে বললাম।

“দ্বিতীয় বিয়ে যে করছেন কাকে করছেন একটু শুনি?”

“আআআমার কলেজের এক শিক্ষিকাকে করছি।”

“ওহহ রিয়েলি সো নাম কি তার?”

“নাম নাম ওহ হ্যা ফারজানা।”

“জি আমার নাম না ঐ সতীনের নাম জিজ্ঞেস করতেছি। ভয়ে কি আমার নামই আপনার মুখে আসতেছে নাকি এমনি ফট করে ভুলে বলছেন।”

“আরে ধুর মনের ভুলে বলে ফেলেছি। মেয়েটার নাম মনিকা।”

“কোন গ্রহের মনিকা? কোথার থেকে ডিগ্রি পাস করছে সে? কবে থেকে চলছে আপনাদের রিলেশনশিপ? কবে জয়েন হয়েছিল কলেজে? কবে আপনারা মিট করছেন? হেই কোনো রুমডেটও করছেন নাকি? কবে তার বাপ-মায়ের কাছেও হাত পাতলেন মেয়ের নামে? সবগুলোর উত্তর কি আপনি দেবেন? না আমি আপনার কুণ্ডলী পাকানো কথা পেটের উপর আক্রমণ করে বের করবো?”

শারফান এর ইচ্ছে করছে গাড়ি থেকে লাফ মেরে নিজেকে শেষ করে ফেলতে। মেয়েটা একবিন্দু পরিমাণ ছাড় দিচ্ছে না। ধরেছে কি একেবারে ধরার মত ধরা ধরেছে। না ছাড়ছে, না যেতে দিচ্ছে মাথাটা বোধহয় আজকেই পাগল বানিয়ে ছাড়বে। শারফান ঠোঁট কামড়ে তপ্ত শ্বাস ফেলে বলে,

“দেখো এই শারফান মারুফ কারো কাছে কৈফিয়ত….।”

“আপনি দিতে বাধ্য জানি। তাই বাধ্যতামূলক জিজ্ঞেস করছি মেয়েটার বায়োডাটা দেন। আচ্ছা বায়োডাটা ভালোবাসার দায়ে দিচ্ছেন না বুঝতে পারছি। এক কাজ করেন রাতবিরেতে প্রেম তো নিশ্চয় করছেন দেখি আপনার‌ ফোন দেন। কতটা প্রেমের পিরিতি মারছেন বের করি।”

“ইশ্ মেয়েটাকে যত সারপ্রাইজ দিতে চাইছি তত সারপ্রাইজ নষ্ট করার জন্য উতলা হয়ে যাচ্ছে মেয়েট। পাগলী একটা জুটেছে আমার কপালে। উফফ আল্লাহ প্লিজ হেল্প।”

*আমি আমার ফোন কাউ…।”

শারফানের অর্ধ কথার মাঝেই ফোনটা নিয়ে লক খুলে ফেললাম। ফোন ঘেঁটে ঘেঁটে কোনো সন্দেহজনক বিষয় না পেয়ে সুরু দৃষ্টিতে শারফানের দিকে তাকালাম। লোকটা আমার থেকে কিছু তো লুকাচ্ছে। শারফান কে আর বেশি কিছু বলে বিরক্ত করলাম না। ফোন দিয়ে দিলাম।
শারফান রিসোর্টে যাওয়ার পূর্বে রাস্তায় গাড়ি থামালো। মিষ্টির দোকানে যেয়ে কয়েক প্যাকেট মিষ্টি কিনে এসে গাড়িতে উঁকি দিতেই দেখল তার বউ গাড়িতে নেই। শারফানের বুক কেঁপে উঠল। সে আশপাশে নজর রাখতেই খেয়াল করল তার বউ ফারজানা দৌড়ে কোথাও ছুটছে। উচ্চস্বরে ডেকে পিছু নিলো শারফান। অন্যথায় আমি দৌড়ে এসে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়ানো বাচ্চাকে ধরে রাস্তা পার হতে গিয়েই আটকে পড়লাম। কেননা শাড়ির আঁচল পাথরে আটকে গিয়েছে। পেছন দিক দিয়ে বড় ট্রাক দ্রুতগতিতে ধেয়ে আসছে। পাঁচ/ছয় বছরের ছোট বাচ্চাটি আমার কোলে লাগাতার কান্না করে চলেছে। বিপদে পড়লে মানুষ দিকবিদিক ভুলে যায় বলে না আমার সাথেও তেমনটা হয়েছে। শারফান এসে দেখল তার বউ এক বাচ্চাকে নিয়ে রাস্তায় আটকে পড়েছে। ট্রাককে খেয়াল করতেই উচ্চস্বরে ‘ফারজানা’ বলে ডেকে উঠে। আমি ছলছল চোখে চেয়ে শারফানকে আসতে বারণ করলাম। সে শুনল না ছুটে আমার কাছে এসে পাথর থেকে আঁচল সরিয়ে ধাক্কা দেয়। আমি পড়ে যেতে নিয়েও হাতে তার শেরওয়ানির অংশ ধরে রেখে ছিলাম। কিন্তু যা দেখলাম জোরেসরে ‘শারফান’ বলে ধপ করে বসে পড়লাম।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে