এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-১২

0
314

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১২ (আগমন)

রুমের বাহির থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে শেরহাজ এর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তৎক্ষণাৎ উঠে বসে সে। বিছানায় তাকিয়ে দেখল মিমলি বাচ্চাদের মত তার হাত আঁকড়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। বিয়ে ছাড়া যা না হওয়ার কথা তা হয়েই গেলো শেষমেশ। সে পারেনি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। তবে পরিস্থিতি হাতের নাগালে রাখতে সে চটজলদি উঠে পড়ে। মিমলির ঘুম তখনো কাঁচা হয়ে থাকায় ঘুম ভেঙ্গে উঠতে পারেনি। একলা শেরহাজ গোসল সেরে জামা পরে রুম থেকে বের হতেই চাচীর ক্রন্দররত মুখশ্রী দেখতে পেল। যা একেবারে ন্যাকামি বৈকি আর কিছু নয়। সে ধীরপায়ে হেঁটে সোফার রুমে চলে এলো। যেখানে খুট খুট করে কাঁদছেন মিসেস জাহানারা। জয়নাল মিয়া মাথায় হাত ঠেকিয়ে বসে আছেন। শাহানা শারফান এর কাছে বসে কাঁধে হাত রেখে কি যেনো বলছে। শেরহাজ পরিস্থিতি কি হতে পারে বুঝে ফেলেছে। তাই তপ্তশ্বাস ফেলে নিজের ভুল স্বীকার করতে সকলের দৃষ্টিকার্ষণে গলা ঝাড়ে। এতে সবাই তার দিকে স্বাভাবিক চোখে তাকিয়ে পুনরায় চোখ ফিরিয়ে নেয়। শেরহাজ এর গলা কাঁপছে তবুও সে সত্য বলবে। মিমলিকে সে প্রাণে ভালোবাসে। তার সংসার পাতানোর খবর শুনে নেশাকে সঙ্গি করে ছিল। এখন আসল সময় ভেবেই সে বলে,

“জারিফা ওরফে মিমলি আমার রুমে ছিল পুরো রাত শায়িত অবস্থায় একত্রিত ছিলাম আমরা।”

সকলের মাঝে বিস্ফোরণ ঘটল মত অবস্থা। শাহানা শুনেই দৌড়ে শেরহাজ ভাইয়ের রুমে ছুটে। দরজা খুলে একপলক তাকিয়ে চট করে দরজা বন্ধ করে দিল। স্তদ্ধ হয়ে সে সোফার রুমে এসে মাথা নাড়ল। মিসেস জাহানারার কান্না থেমে গেলো। তার পরিকল্পনা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেল বিধেয় তিনি থমকে মাটিতে কপাল চাপড়ে বসে পড়লেন। শারফান রাগে গিয়ে শেরহাজ এর গালে চ’ড় লাগায়। মিমলি ভয়ে কাঁদছে। সে তখনি জেগে গিয়ে ছিল যখন শাহানা রুমে দেখতে এসেছিল। এমুহুর্তে শেরহাজ চ’ড় খেয়েছে যার শব্দে সে আর বসে রইল না। কোনোমতে ফ্রেশ হয়ে থ্রিপিচ পরে রুমের বাহিরে ছুটে এসে দেখল শারফান শেরহাজকে বে*ল্ট দিয়ে আঘাত করছে। শেরহাজ নির্লিপ্ত রুপে আঘাত সহে নিচ্ছে। মিমলি কাঁদতে কাঁদতে গিয়ে শেরহাজকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠে। শারফান এর হাত থেমে যায়। মিমলি কাঁপা গলায় বলে,

“শেরহাজ ভাইয়া আমি মিমলি আপনার ছোট চাচাতো বোন। আমি কোনো জারিফা বা আপনার প্রাক্তন প্রেমিকা নয়। আমার মায়ের কুবুদ্ধির শিকার হয়েই আমার কালো রুপের বদলে এই রুপ ধারণ করেছি। আমি সত্যিতেই জারিফা নয়‌ এমনকি জারিফা কে জানতামও না। মা আমাকে জারিফার বেশভূষা শিখিয়ে পড়িয়ে আপনার সংসারে ফাটল ধরাতে নিয়ে এসেছিল। যাতে সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ আমার দ্বারা হাতাতে পারেন। বিশ্বাস করেন ভাইয়া আপনাকে আমি একতরফা আবেগে মোহ ভেবে ভালোলাগার দায়ে এসব করেছি। কিন্তু আমার আসল ভালোবাসা হলো শেরহাজ। সে ছাড়া আর কেউ নয়। সেই ছোট থেকে আমি শেরহাজ এর সাথে খেলেছি,পরেছি। তার পরিবর্তে আপনাকে আমি শুধুই মোহ ভেবেছি বৈকি আর কিছু নয়। আর গতরাতে মা আপনার খাবারে নেশার ওষুধ মিশিয়ে আমার সাথে এক রুমে বন্দি করে দিনে কুৎসিত ঘটনা রটাতে চেয়েছিল। তাই কৌশলে আমার খাবারেও মিশিয়ে দেয়। যাতে আমি অস্বীকার না করতে পারি। তবে ভাগ্যের পরিহাসে আমি আপনার সাথে নয় শেরহাজের কাছে ছিলাম‌। তাকে আর আঘাত করিয়েন না ভাইয়া প্লিজ। আমার আর আমার মায়ের দোষের শাস্তি শেরহাজকে দিয়েন না। সে কোনো নেশায় আসক্ত নয় সে তো আমার কারণে নেশাকে নিজের জীবনে জড়িয়ে ছিল। মায়ের বুদ্ধি ছিল আপনাদের সবাইকে আমার মিথ্যা সংসার পাতানোর কথা বলে জারিফা নামক এই আমি কে এই বাড়িতে আনা। সেই সবের ভিত্তিতে দেখলে মা আর আমি দোষী ভাইয়া। শেরহাজ নয়। তাকে রিহ্যাবেও পাঠিয়েন না প্লিজ।”

শারফান ধপ করে বসে গেলো। তার দ্বারা কত বড় ভুল যে ঘটে গেল সে ঠিক উপলদ্ধি করতে পারছে। তার বউ তার ফারজানা কোনো রুপ দোষ না করেও দোষের সাব্যস্ত হয়ে বাড়ি ছাড়ল। সেও বোকামি করে তাকে ফেরাইনি। তবে কি তার আম্মু সে কারণেই নারাজ হয়ে তার সঙ্গে দেখা দিচ্ছে না? হ্যা এটাই কারণ বোধ হয়। সে উত্তেজিত হয়ে গেলো। তৎক্ষণাৎ শাহানা কে বলে,

“এখনি শেরহাজের রুম সাজিয়ে নেয়। তোর ছোট ভাবী কে বরণ করার জন্য প্রস্ততি নেহ্। ঠিক সন্ধ্যা সাতটায় বিয়ের কার্য সম্পন্ন করা হবে।”

শেরহাজ উৎফুল্ল হলেও ভেতরে মিমলির জন্য চেপে রাখা রাগ কে নিয়ন্ত্রন করে নিলো। কারণ বিয়ের পরই সে চরম শাস্তি দিতে পারবে মিমলিকে। নাহলে অনাধিকার বলে গণ্য হবে ব্যাপারটা। মিমলির খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলো। মায়ের কাছে যেতে নিলেই তার গালে বড়জোর চ’ড় পরে। তিনি হিংস্র হয়ে পুনরায় আঘাত করতে চাইলে শেরহাজ ধরে তাকে জড়িয়ে নেয়। মিসেস জাহানারা রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চুপ করে তাকিয়ে রইল। জয়নাল মিয়া মনযোগ দিয়ে সব পর্যবেক্ষণ করে বলে,

“জাহানারা তোমাকে এই বাড়ি থেকে ত্যাজ্য করা হলো। এই বংশের যে বউয়ের অধিকার নিয়ে আমার ছোট ভাইয়ের হাত ধরে এসেছিলে। সেই বংশের অঙ্গীকার করে বলছি তোমার অধিকার আজ থেকে ছিন্ন করা হলো।”

মিসেস জাহানারার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ল মত অবস্থা। তিনি তৎক্ষণাৎ বড় ভাইয়ের সমান জায়ের পা ধরে ক্ষমা চেয়ে কাঁদতে লাগলেন। কারণ আজ যদি তিনি অধিকার থেকে ত্যাজ্য হয়ে স্বামীর বাড়ি ফেরে তবে তার স্বামীও তাকে তালাক দেবে। সে তার স্বামীকে ভালোই চেনে। তাই কেঁদেকেটে হলেও বড় ভাইকে মানানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তিনি সবাইকে আদেশ করলেন।

“জাহানারা আর মিমলির দোষ দেখে দুজনকে শাস্তি স্বরুপ পর করা হচ্ছে। তোমরা এ বাড়িতে থাকলেও প্রাপ্য সম্মান আর মর্যাদা ছাড়াই থাকবে। তবে দেখতে গেলে মিমলি এ বাড়ির ছোট বউ হবে তাই তাকে বউরুপে বরণ করা হলেও তার পদবী হবে পরের মেয়ের মত। কারণ সে দোষী।”

জয়নাল মিয়ার কথায় শারফানরা অমত করল না। শেরহাজ কে মিমলি ধরতে চাইলেও সে স্বেচ্ছায় উঠে দাঁড়ায়। তার নিকট এসে ফিসফিসিয়ে বলে,

“আমার ভালোবাসায় লা*থি মে*রে আবেগের কাছে ছুটে ছিলি না। এবার বুঝবি ভালোবাসা পেয়েও অবহেলিত হওয়ার পরিণতি কেমন? হারিয়ে পাওয়া ভালোবাসার চেয়েও কষ্টকর পেয়ে হারানোর। তুইও এই কষ্টে ভোগে যাবি প্রতিদিন। বউ হলেও তুই নামেমাত্র বউ রইবি মিমলি। নামেমাত্র বউ। এই শাহানা বোন আমায় একটু ব্যান্ডেজ করতে আয়।”

মিমলি ফুঁপাচ্ছে তার কিছু যায় আসে না সবাই কি বলেছে না বলেছে তাতে। তার কষ্ট হচ্ছে শেরহাজের আঘাত দেখে। সে চেয়েও পারছে না তাকে স্পর্শ করতে। অধিকার পেয়েও হারিয়ে ফেলল। সেই থেকে বিয়ের দিনকার সময়ে সবাই কৃত্রিম হাসি দিলেও তার মায়ের মন কিছুটা হলেও নরম হয়ে ছিল। নিজের মেয়েকে জায়ের বড় ছেলের সাথে না হোক অন্তত ছোট ছেলের সাথে তো বিয়ে করাতে পারলেন। মিমলি উদাস হয়ে অপলক তাকিয়ে থাকে তার আপন পুরুষের দিকে। শেরহাজ বিয়ের শেরওয়ানি পরে তার পাশে বরবেশে বসে আছে। এর চেয়ে খুশির দৃশ্য আর কি হতে পারে তার জন্য? লোকটা ভালোবেসে হোক বা ঘৃণা করে হোক। একরাতের বিনিময়ে আজম্মের সুখ তার পায়ের নিচে এগিয়ে দিচ্ছে। থাক না তার কাছ থেকে ভালোবাসা পেতে বিলম্ব হোক। তবুও সে কাছে থাকুক আজম্ম। মিমলি তার চোখের কোণে জমা পানি মুছে নিলো। শাহানা আড়চোখে খেয়াল করেছে। তারও মনে হয় ছোট ভাবীকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। কিন্তু কোথাও একটা ‘রা’ থেকে যায়। তপ্ত শ্বাস ফেলে ফোন হাতে নিয়ে সময় দেখে নিলো। বিয়ের সময় আরম্ভ হতেই শারফান ভাইকে ইঙ্গিত দিলো। শারফানও অতি চালাকের সহিতে শাহানার কানে কানে ফিসফিসিয়ে বলে,

“শোন মিমলির সাথে শেরহাজের সাথে আমারও ছবি উঠবে। সবগুলোতে আলাদা করে ক্রোপ করে আমাকে দিস। তোর ভাবীকে ও একটু জ্বালাবো। কম কষ্ট পায়নি তার থেকে। এমনিতে বাঘিনী আমার তার উপর সেরা সেয়ানা। আমায় ডোজ লাগাতে চেয়েছিল। একবার কাছে পায় দুমড়ে মুচড়ে ধরে ফেলব।”

“আহুম আহুম ভাই আমি তোর বোন।”

শারফান থতমত খেলো। আবেগের চটে বোনকে কি সব বলে ফেলল। বিব্রতবোধ লুকিয়ে বলে,

“এই কথা কম কাজে মন দেয়।”

তাদের কথা শুনে মিমলির মনে একরাশ আশার সঞ্চার হলো। তার ধারণা ফারজানা অর্থাৎ তার বড় ভাবী এলেই হয়ত সেও সুখের দিন দেখতে পাবে। শারফানকে হাসতে দেখে শেরহাজের মনে একটু হলেও অনুশোচনা বোধ কমেছে। ছোট ভাইকে নিজের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেসে বলে,

“এবারের মত মাফ করলাম। যদি তোর নেশা না ছাড়িস তবে রিহ্যাবে তোর জন্য সিট বুকিং দেবো।”

“না ভাই না প্লিজ বিয়ে হচ্ছে আমার। আর নেশাপানির দরকার ফরকার নাই। সব নেশাপানি দূর করার দায়িত্ব এখন থেকে এই মেয়ের।”

কিছুটা উঁচু গলায় বলে ফেলে শেরহাজ। যা শুনে লজ্জায় মিইয়ে গেল মিমলি। শাহানা সিটি বাজিয়ে তাল দিলো। মিসেস জাহানারা দেখে রইলেন। কাজী বিয়ে পড়ানো আরম্ভ করেন।‌ এই ফাঁকে ইতিমধ্যে শাহানার কাছ থেকে পাওয়া ছবিগুলো চটজলদি নিজের বউয়ের নাম্বারে পাঠিয়ে দেয়। শয়তানি হেসে বলে,

“আপ আইয়ে গা মাজা।”

বিয়ের পর থেকে বাসররাত্রিতেই শেরহাজ মিমলিকে পর করে দিলো। স্বামী সোহাগ বেচারির কপালে টিকল না। সে রাতে একই ছাদের নিচে দুজন শুয়ে ছিল আলাদা ঘরে। দিনকাল পেড়িয়ে যেতে লাগল। শেরহাজ সহ বাড়ির সবার কাছ থেকে হেয়ো পেয়ে মিমলি হাঁফিয়ে উঠতে লাগে। মাসের শেষ দিকে হঠাৎ তার বমি হতে লাগল। এতে মিমলি ওত ধ্যান দেয়নি। কিন্তু নতুন মাস আরম্ভ হতেই খেয়াল করে তার পিরিয়ড মিস গিয়েছে। ঢোক গিলল সে। তার কাজের মাঝে হাঁফিয়ে উঠা, অনাকাঙ্ক্ষিত সময়ে বমির ভাব আসা, পিরিয়ডের দিন মিস যাওয়া সবটা এখন আয়ত্তে নিয়ে তার ধারণা একদিকে ইঙ্গিত করছে। মিমলি সময় ব্যয় করল না। তৎক্ষণাৎ সকলের অগোচরে বাহিরে গিয়ে ফার্মেসি থেকে প্রেগন্যান্সি কিট নিয়ে এলো।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)নিজেকে ধাতস্থ করে পরীক্ষা করে দেখে। মিনিট দুয়েক পর যা দেখল তার চোখজোড়া বড় হয়ে গেলো। কিটে দুদাগ ভেসে উঠেছে। তার হাত কাঁপছে। এবার মিমলির মনে হলো সে’রাতে পিল খাওয়া হয়নি তার। তবেই কি সে’রাতের বিনিময়ে তার গর্ভে? ফুঁপিয়ে উঠে মিমলি। কাকে বলবে এ কথা? নিজের স্বামীও তাকে অবহেলার চোখে দেখে, ননদী,জা আর শ্বশুরও তাকে তার মায়ের কারণে দূর দূর করে ঠেলে দেয়। মিমলি কিছুটা সময় কান্না করে ফ্রেশ হয়ে নিলো। ভেবে রাখল আজ রাতে সে শেরহাজ কে জানাবে। যাতে তাকে আর অবহেলার চোখে না দেখুক।
হঠাৎ ওয়াশরুমের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে চমকে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো মিমলি। দরজা খুলতেই শেরহাজ রাগে ধমকে দিলো।

“এই মেয়ে সময়ের কোনো চিন্তে নেই? আমার ভার্সিটির ক্লাস আছে বুঝছো তোমার মত এখানে বসে বসে চক্রান্ত করি না। ক্লাসের সাথে টিউশনিও করাতে হয় আমার। রাতবিরেতে জবের এপ্লাই করে জবের খোঁজ লাগাতে হয়।”

মিমলি ঠোঁট কামড়ে ‘সরি’ বলে শেরহাজ কে জায়গা করে দিলো। মিমলির পাশ কেটে শেরহাজ বাহিরের পোশাক নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ল। মিমলির তখনি মনে পড়ল প্রেগন্যান্সি কিটটা বেসিনের উপর রেখে এসেছে সে। মাথায় হাত চেপে ভয়ে ভীতি হয়ে গেলো। কোনো ভাবে শেরহাজ জানতে পেরে ক্ষতি করতে চাইলে অথবা মেনে না নিলে? মিমলি জড়োসড়ো হয়ে বিছানায় বসে গেলো।
বিশ মিনিট পর শেরহাজ মুখ মুছতে মুছতে বের হলো। মিমলি অধীর আগ্রহে তাকিয়ে রইল। এই বুঝি লোকটা তাকে খুশিতে জড়িয়ে ধরবে। না তা হলো না শেরহাজ ধমকে বলে,

“এই মেয়ে স্বামীর সেবা করতেও জানিস না দেখছি। বাহিরে যাবো মিষ্টি নিয়ে আয়।”

মিমলি মুখ কালো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পরই রসমোল্লাই বাটি করে এনে এগিয়ে দিলো শেরহাজের নিকট। সে বিরক্তকর গলায় বলে,

“মেয়েটার মাথায় বুদ্ধিসুদ্ধি নেই দেখছি। আমার হাতে কত কাজ চোখে পড়ছে না তোর? নিজ হাতে খাওয়ালে কি ফোস্কা পড়বে বেয়াদব কোনখানা।”

মিমলি অবাক চোখে তাকালো। শেরহাজ তার মনমতো কাজ করে যাচ্ছে। মিমলির ভয়ের চেয়েও বেশি অনুভূতির জোয়ারে দুল খাচ্ছে। তার স্বামী তার হাত থেকে খেতে চাইছে। কাজের বিনিময়ে হোক লোকটা খাবে সেই খুশিতে বিনা দ্বিধায় মুখের দিকে এগিয়ে দিলো। শেরহাজ খেয়ে বাটি থেকে দু-তিন চামচ করে মিমলিকেও খাওয়ে দিলো। সে শুধু অবাক চোখে দেখে গেলো। শেরহাজ গম্ভীর গলায় বলে,

“খাওয়ে দিছি বলে ভেবো না ভালোবেসে মাফ করেছি। তুমি আমার উপরে কর্তব্যরত তাই স্বামী হিসেবে খাওয়ে দিলাম।”

মিমলির খুশিতে ভাটা পড়ল কথাগুলো শুনে। মাথা নুয়ে নিলো। বাটি নিয়ে সরে যেতে গেলেই আচমকা তার পা কিছু একটার মাঝে লেগে হোঁচট খেতে গেলো। শেরহাজ তৎক্ষণাৎ তাকে ধরে ফেলে। রাগে তাকে দাঁড় করিয়ে বলে,

“এ মেয়ে ধ্যান কোথায় তাকে হ্যা? চোখ কি কপালে উঠিয়ে রেখেছিস? যা বিছানায় গিয়ে ঘুমা। সারাদিন ঢেং ঢেং করা ছাড়া কাজ নাই আর।”

মিমলি মুখ চেপে কাঁদতে লাগল। চুপটি করে বিছানায় গিয়ে কাঁথা মোড়ে শুয়ে পড়ল। আড়চোখে দেখে শেরহাজ বেরিয়ে গিয়েছে। তেমনি দিন যেতে লাগল।

বর্তমান,

“শারফানের বাচ্চা এই শারফানের বাচ্চা কোথায় রে তুই? হে এই শারফানের বাচ্চা কোথায় লুকিয়ে আছিস আজ তুই বাহিরে আসবি না হয় আজ তোকে খুঁজে পেলে জ্যান্ত চিবিয়ে ফেলব বেয়াদব।”

জয়নাল মিয়া দেখেই সুর সুর করে এককোণে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমার রাগে শরীর কাঁপছে। যেই থেকে ছবিগুলো দেখেছি সেই থেকে মাথার রগে টান পড়েছে। দাঁত কিড়মিড়িয়ে বললাম।

“ঐ স্বামীর ঘরে স্বামী বাহিরে আসবি না আমি আসবো?”

শারফান ভাবছে যাবে কেমনে? বউ যে বাঘিনী রুপে এসেছে সামনে পেলে সত্যিতে চর্বণ করে ফেলবে। ফোন বের করে তৎক্ষণাৎ শাহানা কে মেসেজ করে। শাহানাও ভয়ে গুটিয়ে আছে। ভাইয়ের মেসেজ দেখে ঢোক গিলে বলে,

“ভাভাভাবী ভাইয়া কলেজে গেছে। এখন আসবে না।”

কথাটা শুনে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলাম। ইশ সামনে শ্বশুর আব্বু দাঁড়ানো আছে খেয়ালই করিনি। তৎক্ষণাৎ শ্বশুরআব্বুকে সালাম করলাম। শাহানা কে জড়িয়ে ধরে কুশল আদায় করতেই নজর গিয়ে পড়ল জারিফার উপর। তার পরণে মেরুন রঙের শাড়ি, গলায়,কানে,হাতে সোনার সেট পুরোদমে বাঙালি বউয়ের সাজে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরের রাগ পুনরায় বেসামাল হতে লাগল। শাহানা খেয়াল করতেই তৎক্ষণাৎ আমায় জড়িয়ে বলে,

“ভাবী এটা তোমার ছোট দেবরানী।”

কথাটা আমার কানে যেতেই বিস্ময় নজরে জারিফার দিকে তাকালাম‌। আচমকা ‘কি’ উঁচু গলায় বলে তাকালাম শাহানার দিকে।

চলবে…….
(অতীত শেষ বর্তমান শুরু)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে