এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-১০+১১

0
315

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১০ (চমক)

আজ শারফান পুরো বাড়ি ডেকোরেশন করেছে। তার বউ রেগে জেদে হলেও শ্বশুরবাড়িতে ফিরে আসছে সেটাই ঢের তার কাছে। শাহানাকে দিয়ে তার নিজের রুমটাকে বাসররুমের মত সাজিয়ে দেওয়ার জন্য নানান রঙিন ফুল সংগ্রহ করে আনিয়েছে। জারিফা(মিমলি)এককোণে ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে। তার একটাই আফসোস সে কেনো অসৎ উদ্দেশ্যে লিপ্ত ছিলো? সে যদি তার পক্ষ থেকে সৎ থাকতো তবে তারও সুন্দর এক সংসার হতো। চোখের কোণে জমে আসা পানি হাত দিয়ে মুছে ছুটে রুমে চলে আসল সে। পেটে হাত চেপে ফুঁপিয়ে উঠলো। তার অনাগত সন্তানের কথা কাকে জানাবে? নববধু হয়েও যেখানে কারো কাছে পাত্তা পেলো না , সেখানে তার অনাগত সন্তানের কথা শুনে যদি এবরশন করতে বলে! ভেবেই জারিফা(মিমলি)ভয়ে গুটিয়ে গেলো। আচমকা দরজায় টোকা পড়ার কারণে চোখমুখ মুছে নিজেকে স্বাভাবিক করেই দরজার দিকে ফিরল। শাহানা কে গম্ভীর মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেও খুশি হলো সে। সম্পর্কে ননদ তাই আপনত্ব পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তারও ঢের। শাহানার নিকট গিয়ে মুখ ফুটে কিছু বলতে চেয়েও থামিয়ে দিলো তাকে। জারিফার(মিমলির)মুখ কালো হয়ে গেলো। চুপটি করে তাকিয়ে রইল। শাহানা খুব বিরক্তের সহিতে হাতে থাকা বড় আকারের রুপার থালি জারিফার(মিমলির)নিকট এগিয়ে দেয়। জারিফা খুশি হয়ে থালিটি গ্রহণ করে বলে,

“আরে শাহানা এসবের…।”

“অশুভ মুখ দিয়ে কোনো কথা বের না করলে খুশি হবো ভাবী। তোমাকে ভাবী ডাকতেও না মুখে আটকে যায়। ঘৃণা করতে মন চাই তবে পারি না। কারণ তুমি এখন সম্পর্কে আমার ছোট ভাবী। না চাইলেও তোমায় সহ্য করা এ বাড়ির লোকদের দায়িত্ব আর কর্তব্য। এইসব আমার প্রিয় ভাবী ফিরে আসার খুশিতে ভাইয়া সবার জন্য আনিয়েছেন। দয়া করে বাড়িতে ভাবী থাকাকালীন কোনো সিনক্রিয়েট না করার অনুরোধ রইল। ভাবী এলে সবাই বরণ করতে চলে যাবে। তুমিও তৈরি হয়ে থেকো।”

শাহানা মুখ ফিরিয়ে জারিফার(মিমলির)রুমের ভেতর না ঢুকেই চলে গেলো। তার চোখ ছলছল করছে। সে হাতে থাকা থালির উপর তাকিয়ে তাচ্ছিল্যের হাসল। সবকিছু কেমন বিতৃষ্ণা লাগছে তার নিকট। কেনো এমন হলো তার সঙ্গে? তার মায়ের পাপ কেনো তার ভোগতে হচ্ছে। ওহ সেও তো কম লোভী ছিল না। তবে সেই লোভ তো #এক_মুঠো_সুখপ্রণয় এর জন্য ছিল। জারিফা(মিমলি)দরজা লাগিয়ে বিছানায় গিয়ে বসল। চোখ বুজে নিলো। অতীতে ডুব দিলো। তার আসল পরিচয়ই হলো মিমলি।

অতীত,

শারফানের পায়ে ধরে হাজার ক্ষমা চাইলেও সে তার ভাই শেরহাজ কে ক্ষমা করল না। শেরহাজ খুব অনুতপ্ত। বাড়ির পরিবেশ গম্ভীর দেখে মিসেস জাহানারা তৎক্ষণাৎ পরিকল্পনা বদলে নিলেন। তিনি চটজলদি শারফান এর রুম পরিষ্কার করে দিলেন। জারিফাকেও স্বাভাবিক রুপে যেতে বললেন। সে গেলেও শারফান অদেখা করে রুমে চলে যায়।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) সেদিন পর থেকে প্রায় কয়েকবার শারফানের সামনে ঘুরঘুর করেও লাভ হতো না। শারফান হয় অফিসে নাহয় রুমে থাকতো। মিমলি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতো শারফানের জন্য। যদি একবার দেখা পায় সেই ভেবে। কিন্তু ফলাফল শূন্য রয়ে যেতো। তার জন্য রাতবিরেতে মিসেস জাহানারার কোল চেপে কান্না করেছে মেয়েটি। এতে বেশ বিরক্ত বোধ করতেন তিনি। কারণ তিনি মেয়ের মত ততটা আবেগি নোন। মেয়ে যে তার ছোট থেকেই আবেগি তা নিয়ে তিনি অবগত। কৃষ্ণকুমারী মেয়ের কপাল বলে কথা! রাজপুত্র দেখে প্রেমে পড়লেও তাকে সহজে হাতানো যায় না দেখেই নিজের মেয়ের সেই কৃষ্ণকুমারী রুপের বদলে সুন্দর চেহারার আদল জোগাড় করে দিলেন। এই রুপসী রুপ আর সুন্দর নামের মালিক সেই মৃত জারিফা হলেও তার পূর্ববর্তী নারীর আদল আর নাম শুনলে লোকজনের চেহারায় মেঘ ছেয়ে যেতো। এমতা তার নিজ স্বামীও। তিনিও মেয়ের কৃষ্ণকুমারী রুপের কারণে তার কাছ থেকে দূরত্ব বজায় রাখতেন। স্বামীর কাছ থেকে নিজেদের মেয়ের প্রতি উদাসীনতা দেখে তিনিও উম্মাদে পরিণত হলেন। মেয়েকে সুন্দরীতমা বানিয়েই ছাড়বেন বলে পণ করে নিলেন। স্বামীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে ঋণ নিয়ে মেয়েকে নতুন রুপ দেন। অতঃপর তার মেয়ে যার নাম ছিল মিমলি। সেই আজ নতুন চরিত্রের বেশে এই বাড়িতে অবস্থান করছে। সেসব ভেবে তিনি পৈশাচিক হেসে মেয়ের মাথায় আলগোছে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেন। থাক কিছু দিনের আবেগ তারপরই সব তার মেয়ের হাতের মুঠোয় থাকবে। মেয়েকে সাড়া দিয়ে ঘুমে পাড়ি দিলেন তিনি।

সকাল ১১টা,
শেরহাজ তার ভাবীর কাছে ফোন দিচ্ছে । তবে কল উঠায়নি দেখে অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছে। শারফানও কম পুড়েনি। রাত হলেই তার বুকের মাঝে খালি খালি লাগতো। মাকে সাথে দেখতে পেলেও তিনি তার সাথে কথা বলতেন না‌। এ নিয়ে হাজার বার প্রশ্ন করে ছিল মাকে। তবে তিনি জবাব দেননি। এর কারণ অবশ্য বাবার কাছে জানতে পারবে ভেবে বাবার কাছে ছুটে যায়। জনাব জয়নাল নিজের স্ত্রীর কবরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছেন। আজ অনেকদিন পর তিনি এসেছেন। এতদিন যাবত বাড়িতে ফারজানা ছিলো বলে মনে হত তার স্ত্রীর গুণ নিয়ে আরেক রুপে যমীনে এসেছিল মেয়েটা। শাহানার মত তাকেও তিনি মেয়ের চোখে স্নেহ করে গেছেন। সে নেই, বাড়িটার মাঝে শান্তিও নেই। হঠাৎ পাশে কারো আহাট পেয়ে তিনি মুচকি হেসে বলেন,

“বাপ এভাবে পায়ে পা না মুচড়ে কি বলতে চাইছিস বলে ফেল!”

“আব্বু তুমি বুঝলে কেমনে এটা আমি?”

জয়নাল মিয়া স্বাভাবিক নয়নে চেয়ে ছেলের কাঁধে হাত বুলিয়ে বলেন,

“তুই আমার রক্ত , পারিবারিক দ্বন্দ্বের মাঝে তোর জন্ম। তোকে ঘিরে তোর মায়ের হাজারো স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের মধ্যে আমি ছিলাম রাজা আর তোর মা রাণী। তুই হলি সর্বপ্রথম রাজপুত্র। তোকে আমরা দুজনেই দূর থেকে অনুভব করতাম।”

শারফান এর শুনে কি হলো কে জানে! সে সোজা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরল। চুপ করে দুজনে দাঁড়িয়ে রইল‌। সে হঠাৎ করেই কাঁপা গলায় বলে,

“আব্বু আম্মু আজকাল মুখ লটকিয়ে রাখছে কেনো? আমার সাথে কথাও বলছে না। আমি ডাকলে মুখ ফিরিয়ে রাখছে। যেনো আমি কোনো বড় অপরাধ করে ফেলেছি।”

জয়নাল মিয়া মনযোগ সহকারে ছেলের কথা শুনলেন। তিনি ছেলেকে বোঝালেন এই বলে,

“তোর মা তোর সাথে রাগ করেছে। কারণ তুই তোর বউকে চলে যেতে দিয়েছিস। এটা তো ঠিক ছিল না। তোর উচিৎ ছিল তাকে মানিয়ে নিয়ে আসা। তুই কি করলি উল্টো পরের কোন এক মেয়েকে ধরে নিজের বউয়ের সাথেই পরের মত ব্যবহার করলি তা কি ঠিক হলো? তোর আম্মু এই কারণেই রেগে আছে।”

বাবার কথায় সে ঠিক ধরলেও মনটা উদাস হয়ে গেলো তার। সে মাথা নেড়ে তৎক্ষণাৎ গাড়িতে গিয়ে বসল। বাড়িতে এখন আর তার মন টিকবে না। কারণ যেখানে প্রণয় ভাগকারী ব্যক্তিটিই নেই সেখানে সুখ প্রণয় কি পাওয়া সম্ভব? সে গাড়ির ভেতর থেকে জানালার বাহিরে তার বাবার দিকে তাকিয়ে রইল। তার বাবার সুখপ্রণয় বুঝি এ স্থান? হুম হয়তবা এ স্থানই। কেননা তার মা যে সেই সামনের কবরে সুখনিদ্রায় শায়িত অবস্থায় আছেন। মনের উদাসীনতা লুকিয়ে সে ড্রাইভার আঙ্কেল কে কলেজের দিকে গাড়ি ঘুরাতে বলল। শাহানার এসএসসি পরীক্ষা সামনে। তার পরের এক মাস পরেই এইচএসসি পরীক্ষা। সব মিলিয়ে তার কাঁধে খুব চাপ। পরীক্ষার হলে কাকে কখন ডিউটি দিতে হবে, কোন কক্ষে কত রোল পর্যন্ত ছাত্র ছাত্রী বসবে এসব নির্ধারণের দায়িত্ব তার উপরে। ড্রাইভার মালিকের ছেলের কথামত গাড়ি কলেজের রাস্তায় নিলো। শারফানের গাড়ির যাওয়ার দিকে নির্লিপ্ত চোখে তাকিয়ে রইল মিমলি। (গল্পের সুবিধার্থে আসল নামটিই ব্যবহার করছি)
উদাসী গলায় গেয়ে উঠে।

“আপনি আমার মোহ বৈকি কিছু নয়।”

হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লাগায় মিমলি পড়তে গিয়েও পড়ল না। রেগে পিছু ফিরতেই শেরহাজকে দেখে চুপ হয়ে গেলো। শেরহাজ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে জারিফা নামক ব্যক্তির আপাতমস্তক পরখ করে। এতে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যায় মিমলি। কোনো রূপ কথা না বলেই শেরহাজ কে পাশ কাটিয়ে দৌড়ে রান্নাঘরে নিজের মায়ের কাছে চলে গেলো‌। রান্নাঘরের ভেতর ঢুকে জোরে জোরে হাঁফাতে লাগল। একটুর জন্য ধরা খেয়ে যেতো সে। মিমলি কে হাঁফাতে দেখে তার মা মিসেস জাহানারা ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করেন।

“কি হলো এভাবে হাঁফিয়ে উঠলি কেন?”

“আম…আম্মু শেরহাজ ভাইয়ের নজর থেকে পালিয়ে এসেছি।”

তিনি চমকে গেলেন। হাতের কাজ রেখে মেয়েকে চেপে ধরে রুমে টেনে নিয়ে গেলেন। আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে আপাতমস্তক চোখ বুলিয়ে তৃপ্তির শ্বাস ফেললেন। ঢোক গিলে বলেন,

“দেখ সাবধানে থাকিস শেরহাজের নজর থেকে। শেরহাজ মোটেও শারফানের মতো নয়। দুই ভাই একেক প্রকৃতির। সে যদি একটুও তোর ব্যাপারে আঁচ করতে পারে। তবে আমাদের পরিকল্পনা কখনো সফল হবে না।”

মিমলির মন পুনরায় খারাপ হয়ে গেলো। সে জানে তার মা কেনো শারফানের প্রতি অধিক আগ্রহ পোষণ করে। সম্পত্তির অর্ধেক ভাগ শেরহাজ আর শাহানা পাবে। বাকি অর্ধেকের সঙ্গে জয়নাল মিয়ার জমিজমার দলিলাদি পাবে শারফান। সেক্ষেত্রে দেখা গেলে শারফানের হক সবগুলোতে বেশি। মিমলি জানে তার মন চাইলেও সে সাড়া দিতে পারবে না। একদিক থেকে তার কাছে মনে হয় সে শারফানকে ভালোবাসে। তবে শেরহাজ কে দেখলে তার অনুভূতির মধ্যে উম্মাদের ন্যায় জোয়ার উঠে। তখন সে দোটানায় ভোগে।শেরহাজ এর ভালোবাসা তখন তার কাছে একতরফা ভালোবাসা মনে হয়। এ কথা ভাবলেও সে বেসামাল হয়ে পড়ে। মিসেস জাহানারা মেয়ের চোখমুখে শেরহাজের প্রতি ভাবান্তর হচ্ছে দেখে তৎক্ষণাৎ মেয়ের গাল চেপে ধরে বলেন,

“দেখ মা তোর মন মাঝারে খালি শারফানের নাম হবে বুঝেছিস কি নাম? শারফান। ভুলে যাহ্ শেরহাজের সাথে তোর কৈশোরকালীন সম্পর্কের কথা। আমিও শারফানের বিয়ের আগে সবাইকে জানিয়েছি তোর সংসার অন্যত্রে পেতেছে। তুই আমার সাথে রাগ করে বিদেশে গিয়ে অন্যত্রে বিয়ে করে সেখানেই স্যাটেল হয়ে গেলি। এতে অবশ্য শেরহাজ তোর প্রতি আগ্রহ হারিয়ে সামনে আগাবে।”

মায়ের কথায় বুকটা ধুকপুক করে উঠল মিমলির। সে কি তবে সহ্য করতে পারবে শেরহাজের সাথে অন্য কারো বন্ধনী! সে আর ভাবতে পারছে না দুদিকের জোয়ারে ফেঁসে গেছে। কথাবার্তা হীন পরণে বাদামী কটি জড়িয়ে বেরিয়ে গেলো বাড়ি হতে। মিসেস জাহানারার শত ডাকেও থামেনি সে। তিনিও অধিকান্তু আগ্রহ দেখালেন না। নিজ কাজে লেগে পড়তে গেলে তার স্বামী কল দিয়ে বসেন। তিনিও ফোন চেপে চোরা গলায় বলেন,

“এই মিমলির বাবা ফোন করছো কেনো? আরো কাপুরুষ নামক শব্দ শুনে গালি খেতে চাও? না খেতে চাইলে চুপচাপ যেখানে পড়ে আছো সেখানে পড়ে থাকো। আমি আমার উদ্দেশ্য হাসিল না করা পর্যন্ত এ বাড়ি থেকে যাচ্ছি না। ভাগ্যিস সেরাতে ফিরে গেলেও ভাইয়া পুনরায় আমায় ডেকে পাঠিয়ে ছিলো। তিনি তো মোটেও আমার পরিকল্পনা ধরতে পারেননি। এতেই আমি বেশ খুশি। ভেবে ছিলেন আমি শারফানের উপর রেগে চলে গিয়ে ছিলাম। বোকা ভাই যে তোমার। কি ভাবে কে জানে? থাক এখন বেশি কথা বলতে পারবো না। আগে মেয়েকে শারফানের কাছে লেলিয়ে দেয় তারপর তোমাকে ডাকবো। তখন তুমিও বলবে আসল কাপুরুষ কে? আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিও ভাইয়া কে আপনার ছেলে হলো বড় কাপুরুষ। বউ থাকতেও অন্য মেয়ের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। হা হাহা।”

মিসেস জাহানারার কথায় তার স্বামী মিয়াজ মিয়া খুশি হলেন বটে। ভাইয়ের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার আকাঙ্ক্ষা তার বহু বছর পূর্বের। বউ-বাচ্চা কে দিয়ে যদি সেই শোধ তোলা যায় তবে ক্ষতি কোথায়? তিনিও হেসে বলেন,

“তাহলে কখন লেলিয়ে দেওয়ার জন্যে পাঠাবে আমার ভাইয়ের ছেলে শারফানের কাছে?”

“আজকেই কিছু একটা করবো।‌ সেরাতে শেরহাজকে হাতেনাতে ধরেছে শারফান। শেরহাজ নাকি হোস্টেলে থেকে খারাপ ছেলেদের সঙ্গে মেশে নেশাপানি খাওয়ায় মত্ত থাকতো। যার কারণে তার নেশাপানিতে আসক্তি জুড়ে বসে। তাইত ভাইয়ের কাছ থেকে দিনকে দিন টাকা চেয়ে বসত। অথচ জানো তাকে দেখলে একেবারে সুস্থ সবল যুবক মনে হয়। দেখো ভেতরে কেমন আসক্তি নিয়ে বসে আছে। গোপন কথা শুনবে? নিজ ভাইকে চ’ড় মেরেছে শারফান। তাও তার বউয়ের জন্য। কারণ শেরহাজ নাকি একরাতে নেশা পানি খেয়ে মাতাল ছিলো। তখন তার সামনে ফারজানা ছিল।”

“ফারজানা কে?”
ভ্রু কুঁচকে মিয়াজ মিয়া জিজ্ঞেস করলেন। মিসেস জাহানারা কপাল চাপড়ে বলেন,

“উফ মিমলির বাবা আর কে হবে? তোমার বড় ভাইয়ের বাড়ির বড় বউমা! শেরহাজ তার উপর নজরবন্দি করায় কোমরে নাকি অশ্লীল ভাবে হাত লাগাইছিল। আরেকবার বলে কোমরে হাত লাগাইতে উদ্যত হয়েও ধরতে পারেনি। কারণ শারফান এসে ফারজানাকে চ’ড় দিয়ে ছিল। সেবার ফারজানা কে চ’ড় দিলেও পরের বার মাইর খেয়েছে শেরহাজ নিজে। নেশা পানি খেলে তার হুঁশ থাকে না। এখন দেখো ছেলে মাতাল অবস্থায় অবশ্য কোনো মেয়ে সামনে থাকলে বদমাইশি করতে চাইবেই। এতে কি? দোষ কার? শারফানের ভাই শেরহাজের। ইশ্ ছেলেটার জন্য খারাপও লাগছে। শারফান তাকে আজ বাদে কাল রিহ্যাবে পাঠিয়ে দেবে। এতে যদি ছেলেটা শোধরে যায়। হাস্যকর ব্যাপার কি জানো? এতে আমার সুবিধাই বেশি শারফানের অতি কাছে মিমলিকে পাঠাতে কোনো বাঁধা ধরা থাকবে না।”

মিয়াজ মিয়া শুনেই পৈশাচিক আনন্দে নিজ বউয়ের কুটিল পরিকল্পনায় ‘বাহ বাহ’ দিলেন। মিসেস জাহানারা এ পর্যায় কথা থামিয়ে বিদায় দিয়ে রেখে দিলেন ফোন। তখনি তিনি অনুভব করলেন রুমের বাহির থেকে কারো আহাট সরে যাওয়ার। তৎক্ষণাৎ সেদিক গিয়ে দেখলেন কেউ নেই। মনের ভ্রম ভেবে ছাড় দিলেন। ছায়াটা তার মাথা চেপে সোজা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।

চলবে…..

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_১১ (অভিমান)

শেরহাজ অনর্গল নেশাপানি খেয়ে মাতাল হয়ে ক্লাবে টলছে। সঙ্গহীন হওয়ায় সেখানে আর বসে রইল না। রাস্তায় একা বেরিয়ে হাঁটছে আর মাতলামি করে উচ্চস্বরে গান গেয়ে যাচ্ছে। নির্জনে সে দুঃখ বিলাস করছে। সেই রাস্তা দিয়ে হাতে কিছু ফলমূল নিয়ে মিমলি বাড়ির দিকে যাচ্ছিল। শেরহাজকে দেখে থমকে দাঁড়ালো। তার চোখমুখ অসহায় হয়ে পড়ল শেরহাজের করুণ অবস্থা দেখে। তৎক্ষণাৎ তার নিকট ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল। শেরহাজ মাতাল হওয়ায় চোখে ঝাপসা দেখছে। তবে জারিফার পরিবর্তে মিমলিকে দেখে চমৎকার হাসি দিয়ে তার কোমর চেপে গালে হাত বুলিয়ে বলতে লাগে।

“আরে মাই মিমলি ডার্লিং তুমি কবে ফিরে আসলে? কেমন কাটলো তোমার সংসার ফরেইনে? আরে বেইমান মেয়ে তুই একটা। শৈশবে তোকে কতই না ভালোবাসা আদর যত্ম দিতাম। সেই তুই আমার ত্যাগ ভালোবাসা ভুলে আমার বড় ভাইয়ের দিকে নজর দিলি ছিঃ। তোর থেকে বে*শ্যা মাইয়া বহুত ভালোরে। তারা অন্তত হৃদয়ে আঘাত করে না। তুই তো সোজা আমার হৃদয়ে ব*ন্দু*ক চালিয়ে দিলি। এবার বল তুই কি কখনো অনুভব করিসনি তোর শেরহাজ ভাই তোকে কতটা ভালোবাসে? তোকে যখন শারফান ভাই বকে ধমকে কাঠফাঁটা রোদ বল, শ্রাবণের বৃষ্টি বল, অন্ধকার রুম বল যেখানে ইচ্ছে দাঁড় করিয়ে চলে যেতো। তখন তোর অঝোরে কান্নার সাক্ষরিত সঙ্গী কে ছিলো? এই আমি শেরহাজ মারুফ ছিলাম। তোকে আদরে গালে চুমু খাওয়ার লোভে কত শত আইসক্রিম চকলেটও দিয়েছি। সেই তুই কিনা ছিঃ ছিঃ কেন রে মিমলি আমায় কেন একটুও ভালোবাসলি না। কারে বোঝাব আমি এসব নেশাপানির আরম্ভের জন্য দায়ী একমাত্র তুই। জানিস কেনো? তুই আমাকে আগলে না নিয়ে বিদেশে সংসার পাতলি। এর চেয়ে কষ্টের কারণ কি হতে পারে আমার জন্য? সেই আবার জানলাম এসব মিথ্যে। তুই তো তোর কালো রুপ বর্জন করে রুপসী রুপ নিয়ে ঘুরে বেড়িয়ে যাচ্ছিস তাও কার কাছে সেই শারফান ভাইয়ের কাছে। লাভ কি হলো? কিছু না হাহাহা।”

শেরহাজের হাসিতে বিস্বাদের রুপ ফুটে উঠেছে। ছেলেটা আসলেই তার বিরহে উম্মাদ হয়েছে। ভেবেই মিমলি কান্না করে দিলো। শেরহাজ সন্তপর্ণে তাকে ছেড়ে খানিক দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। তাচ্ছিল্যের হেসে বলে,

“দেখ সেই তুই আবারো শারফান ভাইয়ের কারণে কাঁদছিস। কিন্তু এই আমি আজ তোর কাছে নয় একপ্রকার দূরত্বে আছি। না পারছি তোকে আগলে নিতে, না পারছি তোকে ভুলতে। এই যাহ্ তো তোর এই রুপ ধাঁধানো রঙ আমার সহ্য হচ্ছে না। আমার কৃষ্ণরাণীর কাছে তোর এ রুপ হলো শূন্য বুঝলি শূন্য! তার ঐ কৃষ্ণরুপের প্রতি আমার খুব লোভ। তার ঐ চোখের মায়ায় আমি ডুবে মরেছি বারংবার। জানিস তোর পাঁচবছর বয়সে তোর প্রথম হাত ছুঁয়ে কি বলে ছিলাম?
বলে ছিলাম এই কৃষ্ণরুপী হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে শোকরিয়া। পরপুরুষের মনে কখনো তোকে নিয়ে আগ্রহ জমানো তো দূর একবিন্দু পরিমাণ ভালোবাসার ফুলও ফুটবে না। কেননা সেই ফুল সেই আগ্রহ যে আমার মনের হৃদয়ের খোড়াক হয়ে গিয়েছিল। খুব অপেক্ষা করছিলাম তোর বড় হওয়ার। তোর বাবা-মা তোকে ছিনিয়ে নিয়ে তো গেলো। ফিরিয়ে আনলো বিধ্বংসী রুপ নিয়ে। যাক গে তুই আমার কেউ না। তুই হলি বহুরুপীইইই।”

বলেই শেরহাজ জ্ঞান হারাতে বসল। মিমলি দেখেই কান্না থামিয়ে তাকে বুকে আগলে নিলো। সে পুরো দিন সঙ্গহীন কাটিয়ে নিজের আসল প্রেম কে খোঁজে পেয়েছে। সে পেয়েছে তার অন্ধকার রুপের আসল আলো ছড়িয়ে দেওয়ার মত প্রেমিক পুরুষ। অথচ সেই আজ তার কাছে অবহেলিত হচ্ছে। ঐ যে একটা কথা আছে না ,
‘অতি বাড় বেড়ো না,ঝরে পড়ে যাবে।’ আজ মিমলি অনুভব করছে তার রুপের বিস্বাদ গ্রস্থের অন্ধত্বে যেমন তার প্রেমিক পুরুষের সান্নিধ্য হারিয়েছে ঠিক তেমনি ভালোবাসাও হারিয়েছে। মিমলি কান্না করল না আর।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)শেরহাজকে বহু কষ্টে ধরে পাশেই এক টিনের ভাঙা ছাউনি আছে সেখানে শুয়ে দিলো। সুঠামদেহী পুরুষকে কি আর এইটুকুন মেয়ের বহন করা সহজ? বিধেয় সে ফোন বের করে ড্রাইভার কে শেরহাজের ব্যাপারে বলে। কারণ সে জানে ঐ বাড়ির কেউই তাকে দেখতে পারেনা। ইশ্ সে যদি জারিফার পরিবর্তে মিমলির রুপে থাকতো তবে সবাই কতই না আদর যত্ন করতো। স্বেচ্ছায় হারিয়েছে তা কি আর ফেরানো সম্ভব? দীর্ঘশ্বাস ফেলে শেরহাজের দিকে তাকিয়ে রইল। আচমকা তার মনে নিষিদ্ধ কাজের ইঙ্গিত দিলো। ধীর পায়ে গিয়ে শেরহাজের কোমরের দিক বসল। তার চেহারার জ্বলকে শৈশবের বাচ্চামি মনে ধরে রেখে মনোমুগ্ধের ন্যায় শেরহাজের গালে চুমু দিলো। এ প্রথমবার সে কোনো কিছুর লোভ বিহীন ছেলেটার গালে চুমু দিয়েছে। মিমলি লাজুক হেসে উঠে পড়ল। কিছুক্ষণ পর ড্রাইভার হাঁক সেরে ডাকল। মিমলি ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে শেরহাজকে ধরে নিয়ে বাড়িতে ফিরল। মিসেস জাহানারা অবশ্য বিরক্ত প্রকাশ করেছেন মেয়ের কাজে। কারণ নেশা পানি খেয়ে মাতাল অবস্থায় মরেটরে গেলে তাদের জন্য সুখবর হতো। মেয়ের বোকামির জন্য ভেজায় বিরক্ত হয়ে রুমে চলে গেলেন। তবে যাওয়ার পূর্বে মেয়েকে ইশারায় রুমে ডেকে গেলেন। মিমলি চুপটি করে বাড়ির কাজের ছেলেকে শেরহাজের কাপড় পাল্টে ফ্রেশ করিয়ে শুয়ে দিতে বলে সে গেলো মায়ের রুমে। সেখানে মায়ের হাতে ফারজানার শাড়ি-জুয়েলারি দেখে ঢোক গিলল। সে মুখ ফুটে বলতেও পারছে না। মায়ের হাতে মাইর খাওয়ার ভয়ে। ছোটবেলায় শেরহাজের অতি কাছাকাছি যাওয়ার কারণে আড়ালে কত যে মাইর খেয়েছে তার হিসেব নেই। মিসেস জাহানারা শক্ত গলায় বলেন,

“আজ শারফান রাত করে আসবে। তুই খেয়ে নেহ্। সে খিদে পেটে আসলেই ফারজানার মত আচরণ করে তাকে খাওয়ার জন্যে ডাকবি। আমি ততক্ষণে শারফানের খাওয়ায় নেশার ওষুধ মিশিয়ে দেবো। এতে অবশ্য ছেলেটা মাতাল হয়ে তোকে দেখে ফারজানা ভাববে। সেই থেকে তোরে কাছে পেতে চাইবে। দেখ আজকের রাতে সুযোগ পাবি পরের বার এই সুবর্ণ সুযোগ পাবি না।”

মায়ের কথায় বাধ্য হয়ে মাথা নাড়ল সে। খেয়েদেয়ে তৈরি হয়ে শারফানের অপেক্ষা করতে লাগল। যা তার মাকে দেখানোর জন্য। তার মন তো পড়ে রয়েছে শেরহাজের কাছে। ছেলেটা যে ঘুমিয়ে ছিল পরে উঠেছে কিনাও জানে না সে। তার মা একপ্রকারে তার উপর নজরদারি চালিয়ে বসেছে।

ঘড়িতে এখন রাত একটা।
শারফান সবেই কলেজের মিটিং শেষ করে এসেছে। খিদে পেটে হওয়ায় একগ্লাস পানি খেয়ে টিভির রুমে বসল। ভাবছে আসার পথে নতুন সিম কিনেছে। সেটা লাগিয়ে বউয়ের কাছে একবার ফোন দিয়ে তার কণ্ঠস্বর শুনবে। এতেও যদি তার মন একটু হলেও হালকা হয়! সিম বের করে ফোনে নতুন সিম লাগিয়ে কল চাপল ফারজানার নাম্বারে। মিমলি এসে শারফানের দিকে তাকিয়ে আছে। তার কার্যকলাপ পরখ করছে। এদিকে ফারজানা মির্জার সাথে হাসিমজায় ব্যস্ত। আচমকা কল আসায় না দেখেই কল রিসিভ করে নিলো। তখন মির্জাও লাজুক স্বরে বলে উঠে।

“এই ফারজানা আমায় তোমার কেমন লাগেরে?”

শারফান এর কান গরম হয়ে গেলো। সে ভুল শুনল নাকি ঠিক বোঝার জন্য রুদ্ধ গলায় জিজ্ঞেস করে।

“এই মেয়ে ছেলেটা কে এখনি বলো!”

থমথমে চেহারা নিয়ে ফোনের স্ক্রিনে নজর দেয়। আননোন নাম্বার দেখেই বাঁকা হাসে। ফোন কানে চেপে রেখেই শারফানকে শুনিয়ে শুনিয়ে ন্যাকামি গলায় মির্জা কে বলে,

“তুই জানিস তোকে দেখলে আমার ক্রাশ খেতে মন চাই, একেবারে শাকিবের মত রসিক ছেলে তুই। তোর বাহুডোরা দেখলে তো মেয়েরা টাস্কি খায় পরেইইইই যাবে। আহ আমার তো ইচ্ছে করছে তোর বুকের উপর ঢলে পড়ি।”

দাঁতে দাঁত চেপে শারফান বলে,

“পরপুরুষের শরীরের উপর পড়তে খুব ইচ্ছে করছে না বউ? কই কখনো আমার উপর তো ঢলে পড়তে চাওনি। ঝগড়া ছাড়া একটু হাসি মুখে কথা বলেছো কিনা সন্দেহ । তার উপর রোমান্সের জন্য লাফাতে। ছিঃ।”

মুখ ফুলিয়ে মির্জাকে বলেই দিলো।

“উফফ তুই রোমান্টিকও বেডা।”

কি বলল সে নিজেই বোকা বনে গেল। মুখ চেপে ধরে জিভ কামড়ে রুমে চলে যায়। শারফান কথাটা শুনেই রেগে বলে,

“ঐ বা*স্টার্ডকে তো আমি জানে মেরে ফেলবো। আমার বউয়ের সাথে রোমান্টিক হবে। না আমি তা হতেই দেবো না। ওর সাহস কত বড় তোমার কাছে রোমান্টিক হয়? এই মেয়ে কথা বলছো না কেনো?”

শারফান অপর পাশ থেকে কোনো রুপ জবাব না পেয়ে ‘হ্যালো হ্যালো বউ লাইনে আসো! এই বউ?’
টুটুটু শব্দ হওয়ায় ভ্রু কুঁচকে দেখল তার কল দিয়েছে মেয়েটা। রেগে গিয়ে ফোনটা পকেটে পুরে রুমে যেতে গেলেই সামনে জারিফা কে দেখে থমকে দাঁড়ালো। মেয়ের পরণে তার বউয়ের শাড়ি দেখে রাগ আকাশচুম্বী হলো তার। তবুও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে উচ্চস্বরে বলে,

“এই মেয়ে আমার বউয়ের শাড়ি পরেছিস কেন? তোর কি মাইর খাওয়ার শখ জেগেছে? আমার বউয়ের শাড়ি খুলে আমার রুমে রেখে আয় যাহ্। নাহলে আজ এই পানির গ্লাস দিয়ে তোর মাথা ফাটিয়ে দেবো।”

মিমলি ভয়ে তৎক্ষণাৎ গিয়ে শাড়ি পাল্টে থ্রিপিচ পরে এলো। শাড়িটি কাঁপা হাতে শারফানের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ছোঁ মেরে শাড়িটি নিয়ে চলে যেতে উদ্যত হতেই মিমলি অসহায় গলায় বলে,

“ভাইয়া ভাত খেয়ে ঘুমাতে যান।”

শারফানের অবশ্য খিদে লেগেছে খুব। তাই ‘হুম’ শব্দ করে রুমে গেলো ফ্রেশ হতে। মিসেস জাহানারা মেয়ের ভয়ার্ত রুপ দেখে ইশারায় ভাত খাওয়ার ইঙ্গিত দিলেন। সেও মায়ের ইশারা বুঝে ভাত খেতে বলেছে। মিসেস জাহানারা শারফানের পাতে নেশার ওষুধ দিয়েও ক্ষান্ত হোননি মেয়ের পাতেও হালকা করে ঢেলে দিলেন। দুজন নেশায় মত্ত হয়ে একরুমে আবদ্ধ হলেই দিনের বেলা তিনি নিজের কাজ আরম্ভ করতে পারবেন। মিমলি ভেবেছে শারফান এর পাতেই শুধু নেশা মিশিয়েছে তার পাতে নয়। সে শারফান কে খাওয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলে মায়ের চোখ ফাঁকি দিয়ে শেরহাজের কাছে চলে যাবে ভেবেই শেরহাজের রুমের দিকে তাকিয়ে রইল। মিসেস জাহানারা পৈশাচিক হেসে মেয়ের মনোভাব বুঝতে পেরেই নেশার ওষুধ মেয়েকেও দিয়েছেন।
তিনি ইশারায় হয়েছে বুঝিয়ে নিজ রুমে চলে গেলেন। শারফান মুখ হাত ধুয়ে মুছে খেতে বসল। খাওয়ায় অন্যরকম স্বাদ পেলেও পাত্তা দিলো খিদার চটে। খাবারে অন্যরকম স্বাদ পেয়ে মিমলিও কিছুটা অবাক হয়েছে। তবুও শারফানকে প্রশ্ন করতে না দেখে ভাবল তার মনের ভুল বিধেয় সেও খেতে থাকল। খাওয়া শেষ হতেই শারফানের নিজের কাছে মাতাল মনে হচ্ছিল। হাত ধুয়ে টলতে টলতে নিজের রুমে গিয়ে দরজা না আটকে শুয়ে পড়ল। মিমলিও হাত ধুয়ে অনুভব করছে তার শরীর টলছে। চোখে ঝাপসা দেখায় তার রুম কোনটা খুঁজে পাচ্ছে না। হাতড়ে হাতড়ে ভুশবশত শারফান এর রুমের দরজা খুলতে নিলেই অন্ধকারে তার হাত অন্য কেউ চেপে ধরে তার রুমে ঢুকিয়ে শারফানের দরজা আটকে দিলো। সেই সঙ্গে মিমলিকে জড়িয়ে ধরে বিছানায় শুয়ে দরজা আটকে নিজের শার্ট খুলে ফেলে দিলো। মিমলি চোখের সামনে শেরহাজকে উদাম বুকে দেখে উত্তেজনা অনুভব করে। সেও তার গলার থেকে উড়না সরিয়ে বিছানায় পায়ে ভর করে বসে শেরহাজের ঘাঁড় ধরে নিজের দিকে টানল। নেশার ওষুধের কারণে দুজনে শরীরে কাম উত্তেজনা ছড়িয়ে গেছে। শেরহাজ আর এক মুহূর্ত অপেক্ষা করল না। মিমলির কামিজের চেন খুলে তার উপর ভর করে শুয়ে গেলো। দুজনের ঠোঁট আবদ্ধ হয়ে গেলো। শেরহাজ এর মাথায় মিমলির কাছ থেকে ভালোবাসা পাওয়ার লোভে উম্মাদ হয়ে উঠেছে। মেয়েটা যতই কষ্ট দিক তার ভাগ সে অন্য কারো সাথে সইতে পারবে না। উহুম পারবে না বলেই শারফান ভাইয়ের রুমে মেয়েটাকে যেতে দেখেই রেগে নিজেই চেপে ধরে নিয়ে আসে। এই মেয়ে শুধু তার মানে তারই।

চলবে…….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে