এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০৫

0
350

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৫ (রোমান্টিক পর্ব)

“ইয়া আল্লাহ আমার বউয়ের মাথায় খালি নোংরা কীট ঢুকে বসে থাকে কেন? দেখো কিভাবে নির্লজ্জের মত হাসছে মেয়েটা। ধ্যাত কেনো যে লুঙ্গির জায়গায় বউয়ের শাড়ি হাতে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়েছিলাম। এখন এই শাড়ি পেঁচানো দেখে আমার বউয়ের হাসি থামছেই না।”

বিড়বিড় করে শারফান কে নিজের সাথেই কথা বলতে দেখে দুষ্টুমি মাথায় ছড়ে বসল আমার। নিজের গলার থেকে উড়না সরিয়ে বালিশের উপর রেখে আবেদনময়ী ভঙ্গিতে হেঁটে শারফান এর কাছে গিয়ে দাঁড়ালাম। শারফান এর শ্বাসরোধ হওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেলো। মেয়েটার গলায় জ্বলজ্বল করছে বাদামী রঙের তিল। সেই থেকে মেয়েটা উড়না ছাড়া বিধ্বংসী রুপে দাঁড়িয়েছে। গলার ঢোক গিলতেও ভয় পাচ্ছে শারফান। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম , গলার স্বর কাঁপা দেখে মনে পড়ল লেখকদের গল্পে নায়িকারা এভাবেই কম্পন অনুভব করে। সেই ক্ষেত্রে আমিই হয়ত ইতিহাসের অনন্যরুপী এক মেয়ে। যে কিনা তার স্বামীর অনুভূতিতে চরম আকারে প্রণয় সংযোগের বিস্তার করছে। নিজের আলতো হাতে স্বামীর কাঁধের উপর থেকে আঁচল ফেলে দিলাম। মন্ত্র মুগ্ধের ন্যায় শারফানও আমার কোমরে তার শ্যামরঙা হাত রেখে আলতো চাপ দিলো। আবেশে আমার চোখ বন্ধ হয়ে গেলো। তার উদাম লোমশ বুকের মাঝে নিজের কাঁপা ঠোঁটের স্পর্শ দিয়েই থেমে গেলাম। ইশ লোকটার হার্টবিট চরম আকার ধারণ করেছে। মাত্রাতিরিক্ত হারে লাফিয়ে চলছে। আড়চোখে মুখ তুলে স্বামীর দিকে তাকালাম। এই না কিছুক্ষণ আগেও লোকটা রাগী চেহারা বানিয়ে রেখেছিল। পরমুহূর্তেই ফুঁস হয়ে গেলো। ঠোঁট চেপে আস্তে করে স্বামীর কোমরের কাছে হাত দিতে নিলেই তিনি হাত চেপে ধরেন। আমিও থমকে তার দিকে তাকালাম। শারফান আমার হাতের দিকে তাকিয়ে ছিটকে আলমারির কাছে চলে গেলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। এ কি হলো? লোকটা রোমান্সের রও করতে দিলো না। শারফান গালে থাপ্পর মে*রে মে*রে আলমারি হাতড়ে নিজের জন্য প্যান্ট-গেঞ্জি বের করে আমার দিকে তাকালো। আমিও লোকটার দিকে করুণ চাহনীতে তাকিয়ে আছি। শারফান আমাকে দেখে বলে,

“ডাইনি আসতাগফিরুল্লাহ্ ফুঁ ফুঁ ফুঁ। আমি শুধু আমার জারিফাকে ভালোবাসি। কোনো ডাইনি আমার মন ভুলাতে পারবে না। জারিফা আই লাভ……।”

শারফান কিংবদন্তি হয়ে পিছিয়ে গেল। আমার স্বামীর মুখে অন্য মেয়ের নাম আমি কখনো সহ্য করতে পারব না। এখন সে মেয়ে আমার বান্ধবীও হোক না কেন! ঠোঁট চেপে লোকটার উপর নিজের শরীরের ভারসাম্য ছেড়ে দিলাম। এতে শারফান নিয়ন্ত্রণ করতে আমার কোমর চেপে ধরে দেওয়ালের সঙ্গে ঠেসে দাঁড়াল। উম্মাদের মত শারফান এর ঠোঁটে ক্ষতের আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। শারফান আমাকে জোরপূর্বক দূরে সরালেও আমি উন্মাদের মত তার ঠোঁটের নিজের নাম বসিয়ে দিলাম। দীর্ঘ পাঁচ মিনিট পর যেয়ে লোকটা কে ছেড়ে দিলাম। শারফান তার ঠোঁটে র*ক্ত দেখে বলে,

“এই মেয়ে ত…..।”

আমি আবারো ঠোঁট দুটো দেখিয়ে ইশারা করে বললাম।

“নিজের বউকে এই মেয়ে না ডেকে বউ ডাকতে শিখেন। না হলে এই ঠোঁটের সবেই মাত্র রক্ত ঝরিয়েছি পরের বার লাল টমেটো বানিয়ে ফেলবো। আমার বয়স ভালোই কম হোক না কেনো! স্ত্রী হিসেবে আমি রাসূল (স.) এর বিবি আয়েশার মতই হিংসুটে। তিনি যেখানে তার সতীনদেরও সহ্য করতে পারতেন না। সেখানে আমি সতীন তো দূর পরনারীর স্পর্শ ও আপনার শরীর আর মনজুড়ে সহ্য করব না। ভালো এটাই হবে আপনিও এ কথা আপনার মগজে ঢুকিয়ে নিন।”

শারফান এর কাছ থেকে সরে বিছানার থেকে উড়না নিয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে গেলাম। রান্নাঘরে এসেই হাঁফাতে লাগলাম। আজকে স্বামীর চ’ড় খেয়েও ভয়ডরের পরোয়া না করে এতো কথা শুনিয়ে দিয়েছি। যাক ভালোমত জব্দ করেছি। মনের খুশিতে চুলায় রান্না গরম দিচ্ছি। গুনগুন করে বাসন ডাইনিং টেবিলে সাজিয়ে রাখছি। আচমকা বিদ্যুৎ চলে গেলো।

শারফান এর হুঁশ এলো। সে আজ প্রথম কোনো নারীর সংস্পর্শে এসে পবিত্র ছোঁয়া পেয়েছে। বহু কষ্টে গলায় ঢোক গিলল। তার হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। ইচ্ছে করছে আবারো মেয়েটার ঠোঁটের রসালো মিষ্টি আমলে নিতে। শারফান মাথা ঝেড়ে নিজেকেই ধিক্কার জানালো।

“ছিঃ শারফান তোর এতটা অধঃপতন হলো যে ভালোবাসার মানুষটিকে রেখে বউ নামক প্যারা কে ছুঁয়ে দিতে চাইছিস? তোর আসলে চাই কি বল তো?”

“ভাইয়া তোমার এ ফিসফিসিয়ে কথা বলাটা না জাস্ট বিরক্তিকর। এখানে কারেন্ট চলে গিয়েছে সবাই গরমে ভিজে যাচ্ছি। জলদি যাও কারেন্ট আসছে না কেনো দেখো!”

শাহানা রুমের বাহির থেকে চিল্লিয়ে কথাগুলো বলায় শারফানও চটজলদি কাপড় পরে নিলো। দরজা খুলে শাহানাকে দেখল। সে হারিকেন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)ভাইয়ের কাছে হারিকেন এগিয়ে দিলো। শারফান তা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলো। কেননা কারেন্ট চলে গেলে আইপিএস চালু হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কারেন্ট গিয়ে তিন-চার মিনিট হয়ে যাচ্ছে আইপিএস চালু হলো না কেনো? সেই চিন্তায় রান্নাঘরের দিকে যাচ্ছে।

কোমরে গরম পুরুষেলী হাতের স্পর্শে শরীর শিউরে উঠল। তৎক্ষণাৎ পিছু ঘুরলাম। আমার হাতে ছুড়ি ছিলো। যার কারণে পিছু তাকাতেই যে আমাকে স্পর্শ করেছে তার হাতে ছুড়ির স্পর্শ লেগেছে। মৃদু ‘আহ’ করে উঠে সে। আমি অন্ধকারে দেখতে পাচ্ছি না। তাই চুলায় জ্বলন্ত আগুনের মধ্যে দিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে পিছু তাকাতেই শারফান কে দেখতে পেলাম। সে হারিকেন নিয়ে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। আমি তার হাত ধরে আগপিছ করে দেখছি। না আমার স্বামী ছুড়ির আঘাত পায়নি। তবে কে পেলো ছুড়ির আঘাত? মনের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক ছড়িয়েছে। অন্ধকারে কার সাধ্য হলো আমার শরীর স্পর্শ করার? মাথা নুইয়ে চিন্তায় বিভোর হওয়ায় শারফান কে দেখেও অদেখা করে গরম রান্না টেবিলে সাজাতে চলে গেলাম।
শারফান অবাক হলো মেয়েটা তাকে পাত্তা দিলো না কেন?মাথা চুলকে আপনাআপনি বলে,

“আম্মু মাঝেমধ্যে না তোমার বউমার মাথার পোকাগুলো ঘুমিয়ে যায়। তাই হয়ত কখন কি করা লাগবে বুঝতে পারে না। এ দেখো রুমে তো কাণ্ড ঘটিয়ে এখন অচেনার ভাব করছে। হাহ্‌ আমার তো জারি….।”

“আহুম আপনার তো কি?”

আমাকে দেখে শারফান এর মুখ বন্ধ হয়ে গেলো ভয়ে। সে এখন আর কোনো ভাবেও তার ঠোঁটের উপর নির্যাতন সহ্য করতে পারবে না। বিধেয় সে আমতা আমতা করে বলে,

“কিছু না আমি আইপিএস চালু করতে আসছি।”

“সেটা রান্নাঘরের বাহিরে সাইড টেবিলের পাশে। রান্নাঘরের ভেতর নয়।”

“জানি জানি আমি পরীক্ষা করছিলাম তুমি জানো কিনা দেখতে।”

“এটা আমার সবে হওয়া শ্বশুরবাড়ি‌। মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে আমি জায়গাটা চিনছি। আর আপনি এতবছর যাবত নিজের বাড়ির কোথায় আইপিএস আছে সেটাও জানেন না দেখছি।”

শারফান দাঁতে দাঁত চেপে কিছু বলতে নিলেও বলল না। কারণ শ্বশুর আব্বু ডেকে নিলেন। তিনি মুখ ভেটকিয়ে আমার পাশ কেটে চলে গেলেন। ফিক করে হেসে দিলাম। পরক্ষণে নিজের কোমরে পরপুরুষের হাতের স্পর্শে মন খারাপ হয়ে গেল। কে হতে পারে? শারফান নয় কেননা তার হাতে কোনো রকম আঘাতের চিহ্ন অব্দি নেই। অথচ আমার এখনো মনে আছে ছুড়ির আঘাত জোরালো ভাবেই লেগেছে অচেনা লোকের হাতে। যে কিনা এ অন্ধকারে আমার কাছে এসেছিল অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)নিজের ভাবনা কে বুদ্ধিমত্তার সাথে কাজে লাগাতে হবে। সেই হিসেবে মুখে কৃত্রিম হাসি টেনে সবার মাঝে গিয়ে বসলাম। তখনি চাচী শ্বাশুড়ি টুন মেরে বলে উঠেন।

“আমাদের আমলে বউদের এক টেবিলে খাওয়াই বারণ ছিল। আজকালের মেয়েরা নিজেদের কে স্মার্ট বোঝাতে মুরব্বির সমান ভাবে।”

চাচী শ্বাশুড়ির কথায় ঠোঁট কামড়ে খাবারটা সেভাবে রেখেই উঠে দাঁড়াতে গেলে শারফান আমার হাত চেপে ধরে। সে ভাত মাখানো অবস্থায় তার বাটির অংশ থেকে কিছু টুকরো ভাত তরকারির সাথে মিশিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো। থমকে গেলাম তার আচরণে। সে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বলে,

“হা করো।”

আমি ছলছল চোখে তার হাতের থেকে ভাত মুখে নিলাম। ভাত খাচ্ছি এতো প্রশান্তি বুকের মাঝে হচ্ছে যা বলে বোঝানো দ্বায়। সে আমার বাটির ভাতগুলো তার বাটিতে ঢেলে হাস্যজ্জ্বল মুখে বলে,

“চাচী আগের আমলে পুরুষগণ তার পরিবারের কাছে বাধ্য সন্তানের মত ছিলো। তাই অধিকের চেয়েও নারী মানসিক ভাবে নির্যাতিত হতো। তাদের প্রাপ্য সুখ-সমৃদ্ধি থেকে তারা বিতাড়িত হয়েও মুখ বুজে সহে নিতো। তাও যারা সেই আমল কাটিয়ে বাহিরে এসে সুখের দেখা পেতো তাও বেশিদিন টিকতো না। পৃথিবীর বুক থেকেই হারিয়ে যেতো সেসব নারীগণ।”

আমি শারফান এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছি। সে সন্তপর্ণে আমায় খাওয়ে দিচ্ছে। কিন্তু শেষের কথাগুলো রুক্ষতার সাথে বলে শ্বশুর আব্বুর দিকে কেনো তাকালো সে? তবে কি আমার শ্বাশুড়ি মায়ের সাথেও কিছু? মনের কথা মনে চেপে চাচী শ্বাশুড়ির দিকে তাকালাম। তিনি অপমানে তিক্ত হয়ে বলেন,

“ভাইয়া আপনার বাড়িতে এত অপমান সইতে হবে জানলে কখনো আসতাম না। ওটা আপনার ভাইয়ের আবদারে বউকে দেখতে এসেছিলাম। রাতে ফিরে গেলেও সেই দিনে আবার পাঠিয়ে দিলো। এখন তো দেখছি এ বাড়িতে সম্মানই পাবো না। এসেই যে আপনার ছেলের তিরস্কারের সম্মুখীন হতে হচ্ছে।”

শ্বশুর আব্বু গম্ভীর গলায় চাচী শ্বাশুড়ির দিকে তাকিয়ে বলেন,

“ভুল তোমার জাহানারা। আমার ছোট ভাই কাপুরুষ তাই বলে তোমায় পাঠিয়েছে তাও খালি হাতে। বীরপুরুষ হলে সে সদ্য পরিবারের সঙ্গে বউ দেখতে আসতো। আর তুমি আগের আমলের কথা না তুললেই খুশি হবো জাহানারা। কারণ আগের আমলে তুমি কি ছিলে আর কাকে কি পদে নামিয়ে ছিলে ভালোই জানা আছে আমার।”

আমি পরিবেশ কে ঠান্ডা করতে শ্বশুর আব্বুর দিকে তরকারির বাটি এগিয়ে দিয়ে ভাতের সাথে চিংড়ি মাছের ঝোল পাতে দিলাম। শারফান দেখে বলে,

“হয়ছে সবাইকে আপ্যায়ন করা শেষ হলে নিজের স্বামীকেও খাওয়ে দিলে খুশি হবো।”

স্বামীর কথা শ্রবণে আসতেই আমার মাথায় বাজ পড়ল। তার দিকে তাকাতেই দেখলাম শারফান বাঁকা হেসে চোখের ইঙ্গিতে কাছে আসতে বলছে। বুঝলাম লোকটা আমার চুমুর বদলা হাতের উপর নির্যাতন করে নিতে চাইছে। ঢোক গিলে লাজুক মাথা নেড়ে না বললেও শ্বশুর আব্বু মিটিমিটি হেসে বলেন,

“যাও মা আমার অধম ছেলেটা সেই ছোটই থেকে গেলো। খেয়ে নাও দু’জনে আমার প্রায় শেষ। এই তোরা এখানো না খেয়ে বসে আছিস কেন? ফিল্ম দেখছিস নাকি-রে? তাড়াতাড়ি খেয়ে নেহ্।”

শাহানা আর শেরহাজ খিলখিলিয়ে হেসে খেতে থাকে। আমি শারফান এর দিকে বাঘিনী রুপে তাকিয়ে আছি। সে চোরা চোখে চুমু ইশারা করল। আমি তার প্রতিটা পদক্ষেপে কেঁপে উঠছি। এতদিন আমি দুষ্টুমি করতাম এখন এই লোক করছে।
আমি ভাতের বাটি থেকে ভাত মেখে তার ঠোঁটের কাছে নিতেই সে চমৎকার হাসি দিয়ে দাঁত দিয়ে কামড়ে আমার হাতের আঙ্গুল থেকে ভাত মুখে নিলো। ‘উফফফ’ মৃদু চিৎকার বের হলো মুখ থেকে। শারফান আমার কানের কাছে এসে বলে,

“জাইসি কারনি ওয়াইসি ভরনি।”

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে