এক মুঠো সুখপ্রণয় পর্ব-০৩

0
371

#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০৩

“মাস্টার জান আপনি যত জারিফার নাম মুখে জপবেন, আমি তত আপনার মুখের পানি থেকে শুরু করে যে খাবারই মুখে নেবেন সেসব মুখ ফসকে বের করার দায়িত্ব নিলাম। যেই মুখে আমার নেই সেই মুখে খাবার গেলার হকও নেই। আরেকবার জারিফার নাম যদি আপনার ঠোঁট পেরিয়ে বের হয়েছে। সেই ঠোঁটের উপর চরম লজ্জাজনক নির্যাতন চালাবো মনে রাখিয়েন হুহ্।”

স্বামীর মুখে জারিফার প্রতি প্রেমের প্রলেপ আমাকে হিংসুটে বানিয়ে দেয়। তার চেয়ে অধিকারটা আমারই বেশি। কেননা তার প্রেমিকের নামের সাথে আমার নাম জুড়ে গিয়েছে। বউ নামক পবিত্র সাহেবা আমি শারফান এর। তাইত প্রশ্নটায় চুপ করে থাকতে পারিনী। বার্ন ক্রিম লাগিয়ে তা জায়গা মত রেখে রুম থেকে বের হতে গিয়েও থেমে গিয়ে ছিলাম। লোকটা আমার পিট পিছে চোরা হাসি দিচ্ছিল। কারণ তার মনে যে জারিফা নামক ভূত ঘুর ঘুর করছিল। আমি ছেড়ে চলে যাবো সেই আশায় পড়ে আছে এই জনাব। তাকে আড়চোখে খেয়াল করে দাঁতে দাঁত চেপে কথা শুনিয়ে নিজের হৃদয়কে শান্ত করলাম।
শারফান ক্যাবলাকান্তের মত আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমার কথাটা হজম করতে পারছে না তা ঢের বোঝা যাচ্ছে। শয়তানি হাসি দিয়ে চোখ মারলাম। স্বামীকে তার নিজ বাড়িতে ইভটিজিং করে চলেছি। এর চেয়ে মজাদার ব্যাপার এক স্ত্রীর জন্য আর কি হতে পারে?
রান্নাঘরে এসে দুপুরের খাবার সব সাজিয়ে টেবিলে পরিবেশন করে সকলকে উচ্চস্বরে হাঁক সেরে ডাকলাম।

“বাহ্! মামুনি রুই মাছের ভুনাটা মুখরোচক হয়েছে। জানো তোমার শ্বাশুড়ি মায়ের হাতের রান্না আমার বেশ পছন্দের ছিল। আজ প্রায় তিন বছর পর সেই রকম ঘরণীর রান্নার স্বাদ পেয়েছি।”

টেবিলে বসা শাহানা আর শেরহাজ এর চোখজোড়া ভিজে ভিজে গিয়েছে। অন্যদিকে, নির্লিপ্ত রূপে খেয়ে চলেছে শারফান। তার চোখজোড়া লাল হয়ে গিয়েছে। বোঝা যাচ্ছে মায়ের কথা স্মরণে আসতেই বোধ হয় লোকটার এরুপ দেখা যাচ্ছে। সবার নিস্তদ্ধ রুপ পরিবেশ কে কঠোর বানিয়ে তুলছে। তাই পরিবেশ ঠান্ডা হাস্যকর বানাতে শ্বশুর আব্বুর পাতে ভাত তুলে দিলাম।

“এই না না মা আর ভাত দিও না। ডায়বেটিসের রোগী বেশি খেলে শরীর সইবে না।”

“আরে আব্বু কি যে বলছেন? আমার আব্বা বলতেন খাবার মজাদার হলে মোটেও শরীরের কথা ভাবতে নেই। খেয়ে পেট ভরলেই শান্তি।”

“আচ্ছা মা দাও দাও আমার ওমনেও লোভ জাগছে শাক দেখে। প্রথমে মাছ ভুনা দেখে জ্বিভে জল এসে গিয়ে ছিল। তাই প্রথমেই সেই স্বাদ নিতে খেয়ে নিলাম।”

আমি হেসে শারফান এর পাতেও দিলাম। শাহানা আমায় ধরে শারফান এর কাছে বসালো। তার দিকে একপলক তাকালাম। কিন্তু সাড়া নেই। তাই জোরপূর্বক হেসে শাহানা কেও ভাত বেড়ে দিলাম। আমার দেবর কে তো বলতেই হচ্ছে না। সে মনের সুখে খেয়ে চলেছে। হাতের আঙ্গুল চেটেপুটে খেতে খেতে বলে,

“মাশাআল্লাহ ভাবী আপনার হাতে জাদু আছে। প্রতিদিন আপনিই রান্না করিয়েন ভাবী।”

“ইন শা আল্লাহ্ দেবরজী।”

চেয়ার টানার শব্দে চোখ ফিরিয়ে দেখি শারফান উঠে পড়েছে। হাত ধুয়ে দরজার দিকে এগোতে নিলেই আমার শ্বশুর থামিয়ে দিলেন। সেও থেমে গেলো। তবে পিছু মোড়ে দেখলো না। শ্বশুর আব্বু গম্ভীর গলায় জিজ্ঞেস করলেন।

“এখন দুপুর দুটা বাজছে। তীব্র তাপদাহে আজ কলেজও বন্ধ। তবে কোথায় যাচ্ছো এ সময়?”

“আব্বু কলেজ থেকে আমার কলিগ কল করেছেন। আজ থেকে ছাত্রদের সিটি মার্কস জমা দিতে হবে। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। আমি আবার এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের এই ব্যাচের শ্রেণী শিক্ষক। দায়িত্ব আমার উপরে একটু বেশি।”

শ্বশুর আব্বু আর কিছু বললেন না। শুধু সাবধানে যেতে বললেন। শারফান চলে গেলো। ইশ আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? লোকটা আমার রান্না নিয়ে কোনো রুপ মন্তব্য করেননি বলে? ধ্যাঁত আমিও না কি যে ভাবছি। শাহানা আর শেরহাজ নিজ নিজ রুমে চলে গেল। কাজের ছেলেটা বাসন কোসন গুছিয়ে নিজ হাতে তার স্ত্রীর কাছে দিয়ে আসছে। সন্ধ্যার পর তারা নিজ গৃহে ফিরে যায় ভোর হলেই কাজের সূত্রে চলে আসে। এই নাকি নিয়ম তাদের এই বাড়িতে। নিজের অভ্যন্তরীণ গৃহস্থের দশা নিয়ে সন্দিহান হলেও সামনে প্রেমময় দম্পতি দেখতেও ভালো লাগে। থাক না আমার আর আমার স্বামীর মধ্যকার দূরত্ব। কোনো একদিন মিটবে সেই ক্ষুন্ন আশা মনে পুষে রুমে চলে এলাম। শারফান তার ফোন বিছানায় রেখেই চলে গিয়েছে। হয়ত পাসওয়ার্ড খুলতে না পারার দুঃখে। ভেবেই হাসি পেলো আমার। ফিক করে হেসে দিলাম। ফোন হাতে নিয়ে পাসওয়ার্ড খুলতেই স্ক্রিনে জারিফার সুশ্রী মুখ ভেসে উঠল। বুকটা ছ্যাঁত করে উঠল। জারিফা এই পৃথিবীর মাঝে নেই। তবুও কারো অন্তরে নির্দ্বিধায় বসবাস করে চলেছে। আমি থেকেও যেনো নেই। জারিফার ছবিটাকে সরিয়ে দিলাম না। যেহেতু ফোনের মালিক শারফান সেহেতু অপেক্ষায় থাকব তার নিজ ইচ্ছায় সরানোর দিনের। নিজের মোবাইল নাম্বার মুখস্ত ছিল। কল দিলাম রিং হচ্ছে। যত রিং হচ্ছে বুকের ভেতর তত অস্থিরতা অনুভব করছি। নানা ঠিক আছেন কিনা তা নিয়ে আশংকা হচ্ছে। হঠাৎ কল রিসিভ হলো। কাজের যে মহিলাটি আসতেন। সেই মহিলা কল রিসিভ করেছেন। ফোন চেপে দৃঢ় গলায় নানার ব্যাপারে জানতে চাইলাম। মহিলাটি হতাশাময় কণ্ঠে বলেন,

“আপা-রে তোমার নানাকে পুলিশ জেলের মাঝে পুরে দিয়াছে। পুরো একদিন হয়ে গেলো তোমার খবর কেউ পাইলো না দেখে। সবাই তোমার নানা-রে তাচ্ছিল্য করতে লাগল। নানা বিধ্বস্ত হইয়া জেলের মাঝে সময় কাটান। আপনে চাইলে কথা বলাতে পারুম আপা।”

মহিলাটির কথা শুনে চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে। চোখ মুছে কাঁপা গলায় সুধালাম।

“ও কুসমা আপা আমাকে কোনো ভাবে নানার সাথে কথা বলিয়ে দিন না।”

“ঠিক আছে আপা আপনাকে আমি বিশ মিনিট পর যাইয়া কল দিতাছি।”

“ঠিক আছে আপা আমি অপেক্ষা করছি।”

কট করে কল কেটে দিলো অপরপাশে হতে। নানা কে জেলে নেওয়া হলো আর আমি অভাগী সংসারে পরে নানাকে ভুলে গেলাম। যিনি আমাকে বাঁচাতে অন্য জায়গায় পাঠিয়ে দিলেন। না আমি গুটিয়ে বসে থাকবো না। তখনি শাহানা হেলেদুলে রুমে চলে এলো। আমি তাকে দেখে সর্তকতার সাথে চোখ মুছে স্বাভাবিক হয়ে পিছু ঘুরলাম। শাহানা মুখ ফুলিয়ে বলে,

“ভাবী একা একা কেনো বসে আছেন? আমি আরো ভেবেছি আপনি আমার রুমে এসে গল্প করবেন। আপনাকে না আসতে দেখে নিজেই চলে এলাম। তবে এ কি আপনার চোখ টকটকে লাল হয়ে আছে কেনো? কিছু পড়েছে চোখে না কান্না করছেন? ভাইয়া কিছু বলেছে ভাবী জারিয়ার জন্য?”

শক্ত কণ্ঠে নামটা উচ্চারণ করল শাহানা। তা খেয়াল করে আমি মাথা না-সূচক দুলিয়ে নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করলাম। এতে শাহানা উৎফুল্ল হয়ে মিটি কণ্ঠে বলে,

“তাহলে আসুন ক্যারম খেলি।”

“আব শাহানা বোন আমার এখন কাপড় ধুঁয়া বাকি আছে।পরে এসে খেলি?”

কথার মাঝে শারফান এর ফোন ভাইব্রেট হতে লাগল। আমি ফোন চেপে রাখলাম। কোনো ভাবেও শাহানার সামনে সত্য প্রকাশিত করতে ইচ্ছুক নয়। শাহানা ঠোঁট কামড়ে বলে,

“আচ্ছা ভাবী তাহলে আমি এখানে বসে অপেক্ষা করি। আপনি আসলে না হয় খেলবো।”

“আবব না শাহানা তার দরকার নেই। আমি তোমার কাছে আসবো তো।”

“ঠিকাছে ভাবী তবে আপনি তোতলাচ্ছেন কেনো?”

“আআরে না আমার গলায় কাঁটা আটকে গেছিল। সেটা বের করার পর থেকে গলায় একটু ব্যথা করছে। তুমি যাও আমি আসছি ওকে?”

শাহানা ওত না ভেবে ‘ওকে’ বলে চলে গেলো। ফোনের ভাইব্রেশন অফ করে কল রিসিভ করলাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) অপরপাশ থেকে
ভাঙ্গা নিপীড়িত নানার কণ্ঠ শুনে ডুকরে কেঁদে উঠলাম। ফোন চেপে ধরে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলাম।

“নানানানুভাই আপনি কেনো আমাকে পাঠিয়ে দিলেন? আপনার থেকে ঐ জেলে থাকতে কষ্ট হচ্ছে তাই না? আপনি আর চিন্তা করিয়েন না। আমি আজ বাদে কাল কোনো না কোনো ব্যবস্থা করতেছি।”

“না-রে নাতীন শুন সংসারে মন দেহ্। তোর নানুভাই তোর নানীরে কবর দিতে পারল এই যথেষ্ট। তোরেও ভালো ঘরের মাঝে পাঠিয়ে আমি উদ্ধার। নইলে মরে গিয়ে তোর বাবা-মায়ের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে হতো। আচ্ছা নাতীধ তোর জামাই কেমন-রে? তোকে ভালোবাসে তো?”

চোখের পানি গণহারে ঝরছে। নানার কথায় মুখ চেপে কান্না আটকে বললাম।

“জি নানুভাই তোমার নাতজামাই অনেক ভালা। আমারে অনেক ভালোবাসে। প্রতিদিন চোখে হারায়। আজকে প্রথম রান্না করেছি নানুভাই। উনি খেয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জয়নাল আঙ্কেলও খুব পছন্দ করেন আমায়। আমার চেয়ে ছোট-বড় দুই ননদ-দেবর ও আছে। ওরাও খুব পছন্দ করে আমাকে।”

“যাক আল্লাহর লাখ লাখ শোকরিয়া।‌ তোর নানুভাই এবার শান্তিতে মরতে পারবো।”

“নানুভাই প্লিজ এমনটা বলো না। আমি আসব নেহ্। আপনি একা সামলে উঠতে পারবেন না।”

“ও চাচা কয়েদিদের এতক্ষণ ফোনালাপ করার নিয়ম নেই। আপনারা একঘণ্টা যাবত কথা বলছেন। আপনি মুরব্বি দেখে কথা বলতে দিছি। এখন আর নয়।”

কল কেটে গেলো। অপরপাশে বোধহয় থানার অফিসারই ফোন নিয়ে ফেলেছে। হঠাৎ ফোন পুনরায় বেজে উঠায় কল রিসিভ করতেই কুসমা আপার কণ্ঠ শুনা গেলো। তিনি হতাশার কণ্ঠে বলেন,

“আপা ফোন দিয়া দিছে। আপনার নানা শেষে কইলো আপনাকে বলতে জেলে না আইতে।”

“ঠিকাছে আপা আপনি একটু বাড়ি গিয়ে সাফসুতরো করে রাখেন। আমি আপনার ভাইরে নিয়া ঘুরতে আসবো আজ বাদে কাল।”

“ওমা সত্যি আপা? তাইলে আজই আমি যাইয়া সাফসুতরো করে মুছে দিয়া আসি।”

“জি আপা যান।”

কল কেটে ফোন চার্জে লাগিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। যেহেতু শাহানার সাথে খেলার শর্ত ছিল সেহেতু ঠান্ডা তরমুজের শরবত বানিয়ে তার রুমে গেলাম। রুমে শেরহাজ কে দেখে তার হাতেও শরবত এগিয়ে দিলাম। মৃদু স্পর্শ লাগলেও বড় ভাইয়ের নজরে দেখে হেসে স্পর্শ হওয়াকে পাত্তা দিলাম না। শাহানা ক্যারমের গুটি খুলে সাজিয়ে নিচ্ছে। শেরহাজ আমার পাশে গাঁ ঘেঁষে বসল। আমি হেসে শাহানার সাথে খেলায় মনোযোগ দিলাম।
খেলার মধ্যে আমার পরবর্তী নিশানা হলো লাল গুটি। কারণ আমার কালো গুটি সব গর্তে ঢুকিয়েছি। শাহানার এখনো তিনটি সাদা গুটি বাকি। কিন্তু সমস্যা হলো লাল গুটিটা কোণারে ঠেসে লেগে আছে। তার জন্যে আমি কোমর বাঁকা করে হেলে লাল গুটিকে সরাতে নিলেই কেউ আমার হাত চেপে দাঁড় করিয়ে চ*ড় লাগায়। হতভম্ব হয়ে হাতের মালিকের দিকে তাকালাম। শারফান কে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে চোখ নামিয়ে ফেললাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)লোকটা এতো রেগে আছে কেনো? পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছি বলে? ঢোক গিলে গালের থেকে হাত সরিয়ে আশপাশ না দেখে ছুটে অন্য রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলাম। রুমটা শারফান এর রুমের বিপরীত পাশেই। আয়নার সামনে গিয়ে নিজের প্রতিবিম্বে নজর পড়ল। গালে শক্ত চড়ের দাগ বসেছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না থামাতে চেয়েও পারলাম না বিছানায় গুটিসুটি হয়ে কাঁদতে লাগলাম। কতক্ষণ কেঁদেছি তার ঠিক নেই। চোখ খুলতেই খেয়াল হলো আমি এখনো সেই রুমেই। তার মানে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বুঝেই চুপটি করে বালিশে মাথা রেখে শুয়ে রইলাম। ঘড়ির কাঁটায় এখন মাগরিবের আযানের সময় হয়েছে। শারফান এসে চ*ড় লাগিয়ে ভুলের ক্ষমা অব্দি চাইলেন না। একটু এসে খবর নিলেও পারতেন আপনি শারফান! মনে মনে কথাটি আওড়ে নিলাম। ওয়াশরুমে গিয়ে ওযু করে শাড়ির আঁচল মাথায় দিয়ে দরজা খুলতেই সামনে শাহানা কে নজরে পড়ল। সে নিজেও ভয় পেলো। আমি হঠাৎ দরজা খুলব এ ধারণা করেনি সে। কৃত্রিম হাসি ঠোঁটের কোণায় টেনে আমার হাত ধরে বলে,

“সরি ভাবী আর কখনো আমি আপনাকে ফোর্স করিয়ে ছেলেদের মাঝে খেলতে আনবো না। ভাইয়া আজকে শেরহাজ কে কেনো যেনো খুব বকেছে! আমি জিজ্ঞেস করলেও বলেনি। উল্টো শেরহাজকে তার রুমে টেনে নিয়ে কথা শুনিয়ে বেরিয়ে গিয়ে ছিল শারফান ভাইয়া। এখনো অব্দি বাসায় আসিনী।”

“ভাবী আইম সরি টু।”

শেরহাজ কে দেখে আমার মায়া হলো। দু’ভাই-বোন কে শারফান কেনো বকলো বুঝে উঠতে পারলাম না। দুজনের মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম।

“আচ্ছা বলো নামাজের পর নাস্তা বানাতে হবে। কি খাবে তোমরা? আমি ওতো নাস্তা না বানাতে পারলেও চীজ পাস্তা আর চীজ পটেটো বল বানাতে পারবো।”

“চীজ পটেটো বল কি ভাবী?”

“তা তো এখন বলছি না। সন্ধ্যার নাস্তায় দেখতে পাবে। এখনো যাও দুজনে নামাজের জন্য ওযু করে নাও। শেরহাজ ভাই আপনি মসজিদে চলে যান। ছেলেদের জন্য উত্তম হলো মসজিদে গিয়ে নামাজ আদায় করা।”

“ওকে ভাবী যাচ্ছি।”

বলেই শেরহাজ আর শাহানা চলে গেলো। শারফান নেই শুনে ভালো লাগছে কারণ সামনে থাকলে রাগ লাগতো বিনা কারণে চড় মেরেছে এ ভেবে। তার রুমে গিয়ে নিজের লাগেজ খুলেই অবাক। লাগেজের ভেতরখান শূন্য। থমকে আলমারি খুলে দেখি আমার জামা শারফান এর আলমারিতে সাজিয়ে রাখা। তব্দা খেলাম লোকটা কি আমি রাগ করেছি ভেবে অভিমান ভাঙ্গানোর প্রয়াস চালিয়েছেন? তাতে কি আমি গলে যাবো ভেবেছেন তিনি? মোটেও না। নিজের প্রয়োজনীয় কাপড় নিয়ে সেই বিপরীত রুমে চলে এলাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)শাড়ির পরিবর্তে আজ থেকে থ্রিপিচ পরব বলে ভেবে নিলাম। যে গরম পড়ছে শাড়ি সামলানো খুব মুশকিল। ভাগ্যিস ছোট থেকে সুতি কাপড়ের প্রতি জোঁক বেশি ছিল আমার। তাই মা আর নানী সুতির থ্রিপিচ কিনে জমিয়ে রাখতো। আজ কাজেও দিচ্ছে। শাড়ি বিশেষ দিনে পড়বো বলে শারফানের রুমের আলমারিতে রেখে আসলাম।
কানে আযানের শব্দ আসতেই চোখ বুজে দোয়া পড়ছি। খুতবা শেষে নামাজ আরম্ভ হতেই আমিও জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায়ে মগ্ন হলাম।

সন্ধ্যা ৬:৪০ বাজে,
গরম তাজা চীজ পাস্তা আর চীজ পটেটো বল বাটি করে টেবিলে এনে সবার পাতে সাজিয়ে দিলাম। তারা এখনো আসেনি। তবুও নিজের যে দায়িত্ব তা মিটিয়ে নিচ্ছি। পাশেই এক জগ ভর্তি তরমুজের শরবত বানিয়েছি। শ্বশুর আব্বু নামাজ পড়তে যাওয়ার পূর্বে খুব আবদারের সহিতে শরবত বানাতে বলেছিলেন। সেই আবদার পূরণেই ঘন-তরল তরমুজের তরতাজা শরবত বানিয়ে গ্লাস ভর্তি করে সবাইকে ডাক দিলাম।
এর মাঝে মোটেও ফুপি শ্বাশুড়ি কে খেয়াল করলাম না। দুপুরেও খেতে আসেননি তিনি। শাহানা ডেকেছিল কিন্তু তিনি মাথা ব্যথা করছে বলে ওষুধ খেয়েই ঘুমে কাঁদা হয়ে ছিলেন। সন্ধ্যায় আসবে কিনা জানি না। তবুও কটু কথা শুনার ভয়ে ফুপি শ্বাশুড়ির জন্যেও সাজিয়ে রাখলাম। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
হঠাৎ কারো কাশির শব্দে আমি চোখ তুলে তাকালাম। শারফান কে এখন স্বাভাবিক লাগছে। সে সময় মুখটাও লাল হয়ে গিয়ে ছিল। এখন কি ডপ মারতে এসেছেন তিনি?

“গরু মে*রে জু*তা দান করতে এসেছেন আপনি?”

“হ্যা আসলে তোমার নাকি একজোড়া জুতা আছে খালি। তাই মার্কেট থেকে চার জোড়া জুতা এনেছি। ভেবে নাও ঐ চ*ড়ের কারণে সরির বিনিময়ে উপহার দিচ্ছি।”

জুতা দেখে ভালোও লাগছে উল্টো রাগও লাগছে। লোকটা ইচ্ছেকৃত সুন্দর কালেকশনের জুতা এনেছেন। যাতে আমি গলে যায়। কিন্তু আমি মোটেও গলবো না। আজকে এ লোককে জব্দ করবো। এমন জব্দ করব না নিজের দাদীর নাম মনে ভুলে যাবে হাহ্। মুখ ঝামটা মে*রে শারফান এর সামনে থেকে রান্নাঘরে এসে নোংরা পাতিল এক পাশে রেখে দিলাম। সবার খাওয়া শেষ হলেই বাটি গ্লাস ধুয়ে পড়তে বসব। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা মাথার উপর মাছির ভনভন করে ঘুরছে। না পড়লে কিছুই পারবো না। তার চেয়ে বড় কথা আমার পরীক্ষার হল সেই গ্রামেই পড়েছে। যেখান থেকে চলে এলেও প্রবেশপত্র চলে আসায় কলেজ পরিবর্তন করার উপায় নেই। সেসব ভাবনার মাঝে কাঁধে হাত রাখল কেউ। শারফান এর কথা মাথায় আসতেই রেগে পিছু মোড়ে শেরহাজ কে দেখে হকচকিয়ে গেলাম। গলার উড়না ঠিক করে মাথায় উড়না টেনে আমতা আমতা করে বললাম।

“আরে শেরহাজ ভাই আপনি আমাকে ডাকলেই পারতেন।”

“ভাবী অস্থির হয়েন না। আব্বু ডাকছে সবাই টেবিলে এসে বসেছেন। নোট্যাংকি ফুপিও এসে বসেছেন মাত্র।”

“ওহ আচ্ছা আসেন যাই।”

শেরহাজ কে রেখে আমিই তড়িঘড়ি রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে