#এক_মুঠো_সুখপ্রণয়
#লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
#পর্ব_০২
“আম্মু জানো তোমার বউমা এক নম্বরের নির্লজ্জ মেয়ে। ওর কারণে নিজের রুমে ঢুকতেই ভয় লাগছে। পা রাখতেই যদি বলে উঠে,’জামাই আপনার কি প্রেম পাচ্ছে?’ এই প্রশ্নের উত্তরের ভয়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে তোমার ছেলের। সামনে পেলেই নাউজুবিল্লাহ্ মার্কা কথা বলা শুরু করে দেয়।”
শারফান রুমের মধ্যে উঁকিঝুঁকি মেরে ফিসফিসিয়ে নিজের সাথে কি যেনো বলছে। সেই সাথে আমাকে চোরা চোখে দেখছে। আমি রুমের ভেতর থেকে তার কান্ড দেখছি। বাসররাতে শক্তপোক্ত সুঠামদেহী লোকের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে ভেবে ছিলাম লোকটা বোধহয় বদ মেজাজী। কিন্তু এতো আমার ভাবনার বিপরীত দিক প্রমাণিত হলো। আজ সকাল থেকে আমার সাথে মেপে মেপে কথা বলছে। যা শুধু রুমের মধ্যে সীমাবদ্ধ হলেও মানা যেতো। তবে লোকটা আমার শ্বশুরের সামনে অব্দি ভয়ভীতি চেহারা বানিয়ে রেখেছিল। দেখতে কি পরিমাণ লজ্জা লাগছিল আমার! ইচ্ছে তো করছে লোকটার গলা টিপে দেয়। নিজের মাত্রাতিরিক্ত রাগকে থামিয়ে বললাম।
“কুল ফারজানা কুল। স্বামী তোর তাকে সামলাতেও হবে তোর। এই নাকি আরো সরকারি কলেজের মাস্টার ভাবা যায়।”
‘আহেম আহেম’ স্বামীর বেক্কলমার্কা কাশির শব্দে নিজেকে ধাতস্থ করে সামনে তাকালাম। তিনি আমার কাছে এসে গম্ভীর গলায় বলেন,
“আপনার পড়ালেখা কি আর করতে হবে না? ঘরের মধ্যে বসে কি ডিম পারার ইচ্ছে আছে?”
“ডিম পারতে না পারলেও বাচ্চা দিতে অবশ্যই পারবো।”
বলেই চোখ মারলাম। লোকটা থতমত খেয়ে উল্টো কাশতে লাগল। আমি বিছানার পাশের টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে স্বামীর মুখের কাছে ধরলাম। তিনি পানি মুখে নিতেই আমি বললাম।
“সোজাসাপ্টা বললেই পারেন আপনার থেকে আমার সাথে শুইতে ইচ্ছে করছে।”
আমার কথা শুনেই শারফান এর মুখ ভর্তি পানি ফসকে বেরিয়ে গেলো। ভাগ্যিস আমি তার সামনে ছিলাম না। নাহলে কতগুলো জীবাণু আমার সুন্দর মুখের সাথে আকর্ষিত হতো কে জানে? সে চোখ বড় বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমার মাথায় খালি এসব বেহুদা চিন্তাই ঘুরে? কখনো পজেটিভলি কথা বললেও তো পারো।”
“শুইতে চাওয়া মানে হলো বিশ্রাম করা এর আবার পজেটিভ নেগেটিভ মিনিং কোথার থেকে উদয় হলো? আপনি নিজেই ডার্টি মাইন্ডেড মাস্টার। জোয়ান মেয়ে দেখলেন কি! ওমনেই নেগেটিভ চিন্তা ভাবনা করছেন ছিঃ।”
লোকটাকে ফাঁসাতে ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম। রান্নাঘরে গিয়ে মন খুলে হাসলাম। পরক্ষণে নিজের নানার কথা মাথায় আসতেই মন খারাপ হয়ে গেলো। আজ পুরো দুদিন পার হয়ে গেলো। অঞ্জলপুর গ্রামে নানার কি হাল হয়েছে কে জানে? আমাকে নিরাপদে শহরে পাঠিয়ে তিনি কি সামাল দিতে পারছেন সব? লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)হঠাৎ সৎ চাচার কথা মাথায় আসতেই নিজের হাতের দিকে তাকালাম। এই হাত দিয়েই ঐ বদ*মা*ই*শ কে র*ক্তা*ক্ত করেছি। ঢোক গিললাম আমার শ্বশুর বাড়ির লোকজন জানেই না আমার দ্বারা কত বড় পাপ হয়েছে। আচ্ছা তারা জানলে কি আমায় ত্যাগ করবেন?
মনের ভাবনার মাঝে কাঁধে কারো স্পর্শে চমকে পিছু তাকালাম। কিশোরী এক মেয়েকে দেখে ভ্রু কুঁচকে এলো। আমার চাহনী দেখে মেয়েটা মিটি হাসি দিয়ে বলে,
“আমি হলাম তোমার ননদীনি। মেজো ভাইয়া কেও দেখোনি তাই না? ভাইয়া আর আমি তোমাদের বিয়েতে ছিলাম না। ভাইয়া সাউদান ভার্সিটিতে পড়াশোনা করে। তাই ওখানকার হোস্টেলে থাকে। এখানে বন্ধেই আসে। গত রাতেই আমরা এসেছি। তুমি আর ভাইয়া ঘুম দেখে আমরা ডিস্টার্ব করিনী। ওহ এতো কথার মাঝে ভুলেই গেলাম বলতে আমি হলাম শাহানা মারুফ। সামনে এসএসসি দেবো আর মেজো ভাইয়ার….।”
“ছোটু আমার নাম আমিই বলবো। সো মিসেস ভাবীজি আমি হলাম তোমার একমাত্র দেবরজী মিস্টার শেরহাজ মারুফ।”
দুই ভাই-বোন কে আসলেই না দেখে ভেবে ছিলাম শারফান একলা সন্তান আমার শ্বশুরের। এখন দেখছি পরিবারে সদস্য মোটামুটি ভালোই আছে । আমি মুচকি হেসে বললাম।
“তোমাদের সাথে পরিচয় হয়ে ভালো লাগল। আমি ফারজানা। এবার এইচএসসি পরীক্ষা দেবো।”
“পরীক্ষা দেবেন আবার এই মহারাণী দেখতে তো চাকরানীর থেকে কম মনে হচ্ছে না।”
পান চিবুতে থেকে বাড়ির ভেতর প্রবেশ করল এক ভদ্রমহিলা। তার কথায় আমি অপমানিত বোধ করলেও জবাব দিলাম না। কেননা অপরিচিত কে না কে তার সাথে লাগতে কেনো যাবো? আগে দেখি এই মহিলা এদের কি হয়? তারপর বুঝতে পারবো। শাহানা রাগী গলায় বলে,
“চাচী এসব কি ধরনের কথাবার্তা ভাইয়া শুনলে অবশ্যই রাগ করবে। আর এই মেয়ে কি? এটা আমাদের ভাবী আর আপনাদের বউমা।”
“হাহ্ ঢং কত।”
“ততই ঢং যত আপনার আছে।”
বলেই আমার চুল নেড়ে দুই দেবর-ননদী কে নিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে এলাম। সেখানে শ্বশুর কে চা-নাস্তা দিচ্ছে কাজের ছেলেটা। এই ছেলে আর তার বউ বাড়ির কাজ কারবার করে যা দেখে বুঝতে পারলাম। চাচী শ্বাশুড়ি এসে ছেলেটাকে ডাক দেয় তাও আবার অভদ্র ভাষায়। শুনেই আমার বিতৃষ্ণা চলে এলো এই মহিলার উপরে। শ্বশুর আব্বু মুখ গম্ভীর করে চাচী শ্বাশুড়ি কে বলেন,
“দেখো জাহানারা কত বার বলব অশ্রাব্য ভাষা মুখ থেকে বের করতে হলে আমার ঘরের ভেতর প্রবেশ করবে না। আজকেই শেষ পরের বার হলে সোজা নিজের বাড়ির রাস্তা ধরবে।”
চাচী শ্বাশুড়ি কে দেখলাম তিনি আমার শ্বশুরের চোখের আড়ালে মুখ বাঁকালেন। আমি তৎক্ষণাৎ টুন মেরে বললাম।
“আরে চাচী আপনি আব্বুর কথা অমান্য করে মুখ ভেংচি দিচ্ছেন কেনো? এটা যে গর্হিত অপরাধ জানেন না? আমার শ্বশুর কত সাদরে নম্র গলায় আপনাকে বুঝালেন আর আপনি মুখ বেঁকিয়ে আমার শ্বশুরের অপমান করছেন?”
আমার চটর ফটর কথায় চাচী শ্বাশুড়ি থতমত খেয়ে মাথা না নেড়ে না না করে বলেন,
“না আমি বলছিলাম আর করব না তুমিও না বউমা খুব মজাদার।”
“আমি কি কোনো খাবার যে মজাদার হবো?”
চাচী শ্বাশুড়ি চোখ গরম করে তাকাচ্ছেন বারংবার। তিনি পারছেন না বসা থেকে উঠে এসে আমাকে চ’ড় মা’রতে। মহিলাকে যে হারে জব্দ করছি। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান) দুই দেবর-ননদী মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। আমার শ্বশুর গম্ভীরতার চাহনী কাটিয়ে ফিচেল হেসে বলে,
“জাহানারা আমার বউমা হলো সেরা ডপবাজ। বেঁচে থেকো তার কাছ থেকে।”
এই বলে শ্বশুর আব্বু চা নাস্তা শেষ করে দাঁড়িয়ে গেলেন। আমার দিকে তাকিয়ে বলেন,
“বউমা রান্নার বাজার শেষ। আমি বের হচ্ছি রুই মাছ আর মুরগির মাংস কেটেকুটে লোক ভাড়া করে পাঠিয়ে দেবো। আজকে আমার রুই খেতে মন চাচ্ছে ভুনা করে রেঁধো কেমন? আমি সোজা দোকান বন্ধ করে আসবো।”
আমি মাথা নেড়ে সায় দিলাম। পড়ে গেলাম মুসিবতে। বাবার ঘরে রান্না করা কখনো শিখা হয়নি। তার উপর নানীর ঘরে নানী লোক দিয়ে রান্না করাতেন। এখন আমি কেমনে রাঁধবো? চিন্তিত মনে রুমে চলে আসলাম। এদিক সেদিক খেয়াল না থাকায় জানি না যে আমার হাদারাম স্বামী গোসল সেরে তোয়ালে পরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি বিছানায় বসে স্বামীর মোবাইল হাতে নিলাম। আমার ফোন নানার কাছে থেকে গেছে। এখন ফোন নিতেও সময় লাগবে। তাই আপাতত স্বামীর মোবাইলকে কাজে লাগাবো। অনেকক্ষণ ধরে পাসওয়ার্ড খুলার চেষ্টা করলাম। খুলতে না পেরে আমার স্বামী অর্থাৎ শারফান এর দিকে তাকালাম। তার পরণে শুধু লুঙ্গি আর হাত কাটা গেঞ্জি। টিশার্ট গায়ে জড়ায়নি তাতেও আমার খেয়াল নেই। যেমনে হোক আজকে শ্বশুর কে খুশি করব এই চিন্তা আমার মাথায়। শারফান এর দিকে তাকিয়ে আদেশ করলাম।
“জলদি ফোনের পাসওয়ার্ড বলেন।”
“একদম না আমার ফোন কেনো তুমি চালাবে? তোমার নিজের ফোন কই?”
“আমার ফোন নানার কাছে দিয়ে চলে এসেছিলাম। বলে ছিলাম আমার জামাই কিনে দেবে। সো আপনি কিনে না দেওয়া অব্দি আপনার ফোনই আমার ফোন। যো তেরা বো মেরা বি হে সোয়ামী জি। এখন ফটাফট পাসওয়ার্ড বলেন।”
“বলব না। আচ্ছা জোরজবরদস্তি করতেছো তুমি?”
“দেখেন আমার সরল রুপের পরীক্ষা নিয়েন না। লুঙ্গি টান দিয়ে খুলে ভিডিও বানিয়ে একে বারে স্যোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে দেবো। এরপর কানের থেকে ধোঁয়া বের হবে আপনার মাস্টার গিরির।”
“আআআমি দেবো না বববললাম তো তো।”
“দেবেন না সত্যি তো?”
“না না দিচ্ছি।”
এই বলে শারফান আমার হাত থেকে ফোনটা চট করে নিয়ে জারিফার নাম লিখলো। দেখেই মেজাজটা গরম হয়ে গেলো। দাঁতে দাঁত চেপে শারফানের দিকে তাকিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে প্রথমেই পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে রাখলাম ‘জামাই আমাকে উম্মাহ দাও’। বাঁকা হেসে পাসওয়ার্ড সেভ করে ইউটিউব ভিডিওতে রুই মাছ ভুনা করার কৌশল দেখছি। শারফান অবশ্য আড়চোখে দেখেছে কিন্তু প্রশ্ন করেনি। আমি প্রায় একঘণ্টা যাবত দেখলাম। যোহরের আযান দেওয়ায় শারফান ফোন রেখেই বেরিয়ে গেলো। আমিও তার ফোন চার্জ দিয়ে নামাজ পড়ার জন্য ওযু করে নিলাম।লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)
ঘণ্টাখানেক পর শারফান রুমে এসে ফোন হাতে নিতেই দেখে পাসওয়ার্ড চেঞ্জ। বেচারার ইচ্ছে করছে দেওয়ালে মাথা ঠেকিয়ে কপাল ফাটাতে। কিন্তু সে অসহায়। নিজেকে সামলে জোরে জোরে ‘হেই মেয়ে’ বলে ডাক দিলো। কিন্তু তাতে ফায়দা হলো না। মেয়েটাকে আসতে না দেখে শাহানা কে সামনে পেলো। তাকে ডেকে বলে,
“এই শাহানা তোর ভাবী কোথায়?”
“ভাবী কে রান্নাঘরে রাঁধতে দেখলাম।”
শারফান মনে মনে বলল,
“দাঁড়াও মেয়ে অনেক জ্বালিয়েছো এবার আমার পালা।”
শাহানা কে যেতে ইশারা করে সে কাপড় চেঞ্জ না করেই রান্নাঘরের সামনে চলে গেল। লেখিকা_তামান্না(আল রাইয়ান)তখনি ভেতরে তাকাতেই থমকে গেলো। ধীরস্থির পায়ে হেটে রমণীর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। পাতিলের ঢাকনা খুলে পরখ করছি মাছের মধ্যে থাকা পানি কমেছে কিনা। লবণ ছেকে আরেক বার লবণ মিশিয়ে ঢাকনা দিয়ে দিলাম। এখন মাছ হতে হতে আমি পুঁইশাক রান্নার কাজে হাত দিলাম। পাশেই কাজের মহিলাটা কেটেকুটে রাখছে সব। তাকে আগেই বলে রেখে ছিলাম আমি।
বড় ফ্রাইপেনে তেল ঢেলে গরম হতে দিলাম। এর মাঝে
রেহানা বুবু বলে ডাক দিলাম।
তিনি শুনেছেন বোধহয় এই ভেবে বললাম।
“বুবু শাক ধুয়া হলে তাড়াতাড়ি দাও। পেঁয়াজ রসুন তেলে দিয়ে ফেলেছি।”
কথার ছলে মসলা দিয়ে খুন্তি নাড়ছি তখনো বুবু শাক না দেওয়ায় তীব্র গলায় পুনরায় চাইলাম। রেহানা বুবু দিচ্ছে না দেখে যেই না পিছু মোড়লাম শক্তপোক্ত এক শরীরের সাথে আমার শরীরের ধাক্কা লাগল। মাটিতে পরতে পরতে বেঁচে গেলাম। চোখ ফিরিয়ে দেখি আমার হাদারাম থুক্কু স্বামী হ্যাবলার মত তাকিয়ে আছেন। তার তাকানো কে ঠোঁট নাড়িয়ে চুমুর ইশারা করলাম। তিনি হুঁশে ফিরলেন। আমায় ঠিকভাবে দাঁড় করিয়ে বলেন,
“আহুম আমি আসছি জানতে আমার মোবাইলের পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করেছো কেনো?”
“ওমা এই কথা জিজ্ঞেস করতে রান্নাঘরে চলে এলেন?”
“দেখো ফাজলামি চাইছি না তাড়াতাড়ি পাসওয়ার্ড বলো।”
“ঠিকাছে বলছি শুনেন আগে আমার কথা।
জামাই আমাকে উম্মাহ দাও।”
“কিই ছিঃ কেমন খারাপ মেয়ে তুমি দিনদুপুরে আসতাগফিরুল্লাহ্ মার্কা কথা বলছো। আসতাগফিরুল্লাহ্ তওবা তওবা।”
বলেই স্বামী তার দু গালে মৃদু থাপ্পর দিলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। নিজের বউকে চুমু খেতে বলা কি গুনাহ নাকি? শাড়ির আঁচল পেঁচিয়ে খুন্তি’টা শারফান এর মুখের কাছাকাছি রেখে বললাম।
“আপনাকে কি দেখে কলেজের শিক্ষক বানিয়েছিল সেখানকার অথোরিটিগণ? তারা কি দেখেনি আপনি যে একটা আহাম্মক নাম্বার ওয়ান। বউকে চুমু দেওয়া আসতাগফিরুল্লাহ্ হলে রাতবিরেতে বউয়ের কোমর চেপে ধরা মাশাআল্লাহ হয়? হুম জবাব দেন?”
“কি না না আআআআমি কখন তোমার কোমর চেপে ধরছি? আমি বালিশ পারিয়ে ওপার শুদ্ধ যাইনি। সকালেই ঘুম থেকে উঠে দেখেছি আমি আমার জায়গায় ঠিকঠাক ভাবে ছিলাম।”
“এ্যাঁ আসছে সাধুবাবা কোনখান। পুরো রাত আমার কোমর চেপে ধরে ঘুম দিয়েছেন তাও পাশবালিশ ভেবে। সকালে আমি জাগনা পেয়ে ছিলাম বলে কিছু বলিনী। ভেবেছি আপনি ঘুমের ঘোরে চেপে ধরে ছিলেন। তাই নিজ হাতে আপনাকে আপনার জায়গায় শুয়ে দিয়ে ছিলাম। যান তো এখন মাথা নষ্ট করিয়েন না আমার।”
কথা শেষ করে পুনরায় খুন্তি নাড়তে লাগলাম। মনেমন হেসে কুটিকুটি অবস্থা আমার। লোকটা কে আচ্ছামত জব্দ করতে পারছি। শারফান ইতস্তত বোধ গলায় পুনরায় বলে,
“হেই মেয়ে দাও না প্লিজ।”
মেজাজ চটে যাচ্ছে লোকটার ‘হেই মেয়ে’ সম্বোধনে। আমি তার বউ। কোথায় আদুরীয় গলায় বউ বউ বলে মুখে ফেনা তুলবে তা না করে অপরিচিত মেয়েদের ডাকছে মত করে ডেকে চলেছে। তার কথায় কান না দিয়ে শাক নিয়ে পাতিলে দিলাম। ছ্যাঁত করে উঠল। দুয়েক ফুটো তেল ছিটকে শারফান এর হাতের উপর পড়ে। ‘আহহ’ করে মৃদু চিৎকার দিয়ে উঠে সে। ভড়কে গেলাম। খেয়াল ছিল না ঢাকনা দেওয়ার কথা। তৎক্ষণাৎ ঠান্ডা পানিতে শারফান এর হাতকে চুবিয়ে দিলাম। পানিতে হাতকে মালিশ করছি আর ফুঁ দিচ্ছি। দাগ এতটা বসেনি তবে জায়গাটা লাল হয়ে গেছে। বার্ন ক্রিম লাগাতে হবে। চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে শারফান কে ধরে রুমে আনলাম। লোকটা পুরো সময় চুপ করে ছিলো। যেনো কেউ তার মুখে তালা দিয়েছে। শারফান কে বসিয়ে আমি আঁচলে হাত মুছে আলমারি খুলে এদিক সেদিক খুঁজলাম। ফাস্ট এইড বক্স কোথায় রাখা আছে জানি না। কেননা নিজের লাগেজের কাপড় এখনো জামাইয়ের আলমারিতে রাখা হয়নি। মৃদু গলায় জিজ্ঞেস করলাম।
“আপনার আলমারিতে ফাস্ট এইড বক্স কোথায় রেখেছেন?”
“থার্ড ড্রয়ারে দেখো। লাল বক্স পাবে সেখানেই হয়ত বার্ন ক্রিম রাখা।”
স্বামীর কথা অনুসরণ করে বার্ন ক্রিম পেয়ে গেলাম। সন্তপর্ণে তার কাছে গিয়ে ফুঁ দিয়ে ক্রিম লাগিয়ে দিলাম।
“তোমার খারাপ লাগে না জারিফাকে আমি ভালোবেসে উম্মাদ হয়েছি জেনে? তার জন্য তোমাকে মানছি না জেনে?”
হঠাৎ স্বামীর শীতল গলায় বলা প্রশ্নটি আমার হৃদয়কে ছন্নছাড়া করার ন্যায় থমকে দিলো। তার হাতের উপর রাখা হাত নিশ্চুপে সরিয়ে নিলাম।
চলবে…..
(ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন)