#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০২ এবং ০৩
চড় দেওয়া গালটার উপর বেশ কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিল নিবিড়। গালটা লাল হয়ে গেছে। চার আঙুলের ছাপ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।।তখন মেহের কে থামাতে চড় মারার দরকার ছিলো । কিন্তু চড়টা এতোটা প্রগাঢ়ে আঘাত করবে ,, বুঝতে পারে নি।। দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে পূর্ণরায় গালে হাত রেখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে রইল।বৃষ্টিতে বেশীক্ষণ ভেজার কারণে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। শরীরে বিয়ের শাড়িটা এলোমেলো হয়ে আছে।আর এই সাজগোজ হীন ফ্যাকাসে মুখটা নিবিড়ের কাছে একদম মায়াবী লাগছে। নিবিড় একটু ঝুঁকে কপালের উপর পড়ে থাকা অগোছালো চুল গুলো সরিয়ে দিল।বেডে ভড় রেখে সরে আসতে নিলে ,, হলো তার বিপরীত।ঘুমের মাঝে মেহের হাই তুলে নিবিড়ের গলা জরিয়ে ধরলো।ঘটনাটা এতোটাই তাড়াতাড়ি হয়ে গেল বুঝে উঠার আগেই দুজনের ঠোট দুটো একত্রে স্পর্শ করলো। নিঃশ্বাসের শব্দ অনুভব করতে পারছে। স্তব্দ হয়ে গেল নিবিড়।।শরীরের শক্তি ক্রমশ হারিয়ে ফেলছে। মৃদু মৃদু কাঁপছে শরীরটা। প্রথমবার কোনো রমনীর স্পর্শে নিজেকে হারিয়ে ফেলছে।।বেশিক্ষণ এভাবে থাকলে নির্ঘাত কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে।।মেহেরের হাতটা সরাতে গিয়েও সরালো না । আজ পর্যন্ত কোনো মেয়েকে ছুঁতে গিয়ে তার অস্বস্তি হয়নি।। অপেক্ষা করলো মেহেরের ঘুম ভাঙ্গার জন্য ।নিবিড়ের কাছে বেশ সুবিধাই হলো ।ঘুম ভাঙ্গার পর মেয়েটা তার নিজের বাড়িতে ফিরে যাবে। দু’জনের আর দেখা হবে না। অন্তত কিছুক্ষন সময় খুব কাছ থেকে মেহেরকে দেখে মন ভরবে।
কেউ একজন বাইরে থেকে নক করছে।। শব্দটা কান পর্যন্ত পৌঁছালে না চাইতেও মেহেরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল।।পড়নের নেভি ব্লু শার্ট টা হালকা ঝেড়ে দরজা খুলে বাইরে এলো ।মহিলা কনস্টেবল দাঁড়িয়ে আছে। কনস্টেবল কে কিছু বলতে না দিয়ে নিবিড় হালকা কেঁপে বললো..
— “তোমার এতোক্ষণে আসার সময় হলো ।।আসতে বলেছি রাত দশটায় আর এসেছো সকাল আটটায়। ধারণা আছে তোমার,, একজন মানুষ সারাদিন ভেজা কাপড়ে থাকলে কি হতে পারে”।(চোখ রাঙিয়ে)
–” সরি স্যার আসলে…!!
— “জাস্ট শাট আপ। এসেছ দেরী করে ,, আবার কথা বলছো । তাড়াতাড়ি গিয়ে ড্রেসটা চেঞ্জ করে ধুয়ে দাও।(কনস্টেবল কে থামিয়ে দিয়ে)
— স্যার ড্রেস আনতে ভুলে গেছি”!!( মাথা নিচু করে কনস্টেবল)
— “তাহলে এসেছ কেন?? আমাকে চেহারা দেখাতে।আগে তো এমন ছিলে না ,, ছয় মাস হলো আমি এই থানা থেকে ট্রান্সফার করেছি ।।আর তাতেই এতো অবহেলা শুরু হয়ে গেছে।।
গিয়ে দেখ,, ড্রয়ারে আমার কয়েকটা পুরোনো জামাকাপড় আছে ।। সেগুলোর মধ্যে ভালোটা ওকে পড়িয়ে দাও”।।
আচ্ছা স্যার বলেই ভেতরে প্রবেশ করল কনস্টেবল। নিবিড়কে সে ভালোভাবে চেনে।একটু এদিকে থেকে ওদিক হলে ,, সবকিছু মাথায় তুলবে।। যতদিন দিন এই থানায় ছিল ততদিন চুরি পর্যন্ত হয়নি।
নিবিড় গত তিন বছর এই এলাকায় ”এস.এ.পি ”র দায়িত্ব পালন করছে।তখন পুলিশ কোয়ার্টারে থাকতো। প্রায় ছয় মাস আগে ট্রান্সফার করে নিজের এলাকায় চলে গেছে। মাঝে মাঝে খুব মিস করত গ্ৰামটাকে । তাই দুই দিনের সফরে এসেছিল ,, কাল রাতে ফিরে যাওয়ার সময় অচেনা একটা শাড়ি পরিধিত মেয়েকে দৌড়ে যেতে দেখে তার মনে সংশয় জন্মে।। মেয়েটার পিছু পিছু গিয়ে তা দেখলো , তা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
__________________
চোখ খুলে তাকালো মেহের।মাথাটা প্রচন্ড ভারী হয়ে আছে তার।দুহাতে মাথা চেপে আস্তে আস্তে উঠে বসলো সে।একটু স্বাভাবিক হতেই চারদিকে চোখ বুলিয়ে নিল।ঘরটা বেশ পুরোনো এবং ছোট। সামান্য একটা চৌকি, কাঠের টেবিল,চেয়ার আর ছোট একটা ভাঙ্গা ওয়াড্রোব ছাড়া কিছু নেই।। টেবিলের উপর একটা ফোন।। ওয়াড্রোবের ভাঙা দরজা দিয়ে বোঝা যাচ্ছে,, ভেতরে কিছু নেই।।রুমটা থেকে কেমন একটা ভাবসা স্মেল আসছে।। অনেকদিন বোধ হয় বন্ধ দিল।।এছাড়া কিছু নজরে এলো না মেহেরের।। কিছু নেই বললে ভুল হবে ।।আর কিছু রাখার মতো জায়গা নেই।। কোথায় আছে ঠিক বুঝতে পারছে না।
— “কেমন লাগছে এখন ??আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন”।
তার ভাবনার মাঝে শোনা গেল এক পুরুষালী কন্ঠস্বর ।চোখ সরিয়ে তাকালো তার দিকে ।।” আমাকে তো ভয় পাইয়ে দিয়েছিলেন” কথাটা ক্রমাগত বাজছে তার কানে ।পরক্ষণেই কালকের দিনটা মনে পড়তেই চোখ থেকে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।। নিঃশব্দে হাঁটুতে মাথা রেখে কুপিয়ে কুপিয়ে কাঁদতে লাগলো মেহের।।মনের মাঝে শুধু একটা কথাই বাজছে,, কেন বাঁচালো আমায়।। মরে গেলে সবাই খুশি হত , এখন কোথায় যাবো আমি।
মেহেরর কান্না সহ্য হচ্ছে না নিবিড়ের । সকলের কান্না নিবিড়ের কাছে প্রচন্ড বিরক্তিকর লাগে।।এই প্রথমবার অপরিচিত মেয়ের কান্নায় বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে সে। নিজের হাতটা মেহেরের কাঁধে রাখলো।অন্যকারো স্পর্শ পেয়ে মাথা তুলে তাকালো মেহের ।।নিবিড়ের শার্টের কলার চেপে চেঁচিয়ে উঠলো সে…– “কেন বাঁচালেন আমায় ।কেন আবার আমাকে অন্যর ধ্বংসের কারণ তৈরি করবেন।আমাকে প্লীজ মরে যেতে দিন”।।
বলতে বলতে নিবিড়ের চিবুকে মাথা রাখল সে।
শার্টের খানিকটা অংশ ইতিমধ্যে ভিজিয়ে ফেলেছে মেহের ।নিবিড় দিধা না করে মেহেরের শীর্ষে হাত রাখলো।সে জানে না ,,মেহেরের কষ্টের কারণ কি?? কিন্তু এইটুকু সে অনুমান করতে পেরেছে ,, অমানবিক আঘাত তাকে সহ্য করতে হয়েছে।।মেহেরকে স্বাভাবিক করার জন্য বলে উঠলো…
–” হয়েছে আর কাঁদতে হবে না।। দেখুন কাঁদতে কাঁদতে আমার পুরো শার্ট সমুদ্র বানিয়ে ফেলেছেন।একটা কাজ করুন,, আমার শার্টের মাঝে ঝাঁপ দিন।আ’ম 100% সিউর।আপনি মরবেন ই মরবেন”।।
সাথে সাথে ছিটকে দূরে সরে গেল মেহের।। লজ্জায় মাথা তুলে তাকাতে পারছে না।। সেন্টি মেন্টাল হয়ে অচেনা একটা ছেলেকে এভাবে জড়িয়ে ধরলো।।তবে এক মুহুর্তের জন্য হলেও মনে হয়েছে,, এটাই তার একমাত্র ভরসার স্থান ।নিবিড় রুমে মেলে রাখা শাড়িটা মেহেরের দিকে এগিয়ে দিয়ে ,, পড়ে নিতে বললো।।শাড়িটা দেখে নিজের দিকে তাকালো মেহের ।।পড়নে ছাই রাঙা টাওজার আর ডিলেডালা টি শার্ট।। এতোক্ষণ নিবিড়ের প্রতি মনে যে,, অপ্রকাশিত বিশ্বাস জন্মে ছিল।।তা এক নিমেষেই দূর হয়ে গেল।।শাড়িটা বুকে জড়িয়ে নিল সে।
— “মেয়েদের প্রতি আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।। তুমি ভেজা ছিলে তাই মহিলা কনস্টেবল এসে তোমার শাড়ি পাল্টে দিয়েছে।।যেটা ভেবেছ, সেটা এখানেই মুছে ফেলতে পারো। শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নাও ,, তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আমাকে ফিরতে হবে”।।
পূর্ণরায় লজ্জায় নুইয়ে পড়লো মেহের।। শুধু শুধু ছেলেটার সম্পর্কে খারাপ ভাবছিল,, কিন্তু পরের কথাটা কানে আসতেই ভেঙ্গে পড়লো সে।।বাড়ি পৌঁছে দিবে ।।কোথায় যাবে।। মিনমিন করে বললো…
— “আপনি যেখানে যাচ্ছেন চলে যান । আমি ঠিক আমার গন্তব্যে পৌঁছে যাবো”।
— “সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না।।তুমি তোমার এড্রেসটা বলো’??
মেহের নিবিড়ের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে চুপচাপ বসে রইল।। কিছুক্ষণ নিরবতার পর একই প্রশ্ন ছুঁড়ল সে। অবশেষে না পেরে নিম্নস্বরে বললো মেহের..
— “আমার কেউ নেই। থাকার জায়গা নেই।বাবা মা নেই।তাই কোনো ঠিকানাও নেই”।
গিল্টি ফিল করলো নিবিড়। অজান্তেই আবার মেয়েটাকে কষ্ট দিয়ে ফেললো ।। আর কথা বাড়ালো না । উঠে যেতে নিলে হাত ধরে থামিয়ে দিল মেহের। অশ্রুসিক্ত নয়নে নিবিড়ের দিয়ে তাকিয়ে বললো..
— “কাল দুপুর থেকে কিচ্ছু খাই নি।।কিছু খাবার হবে । আমার অনেক ক্ষুধা লেগেছে।মনে হচ্ছে পেটে ব্যাথায় মরে যাচ্ছি।”
নিবিড় অসহায় দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মেহেরের দিকে।জ্ঞান ফিরেছে প্রায় ঘন্টা দুয়েক হয়েছে। কিন্তু এখনো মেয়েটাকে খাবারের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়নি।মেহেরের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিচে বেরিয়ে এলো নিবিড়।।কল লিস্ট থেকে একজনকে নাম্বার সিলেক্ট করে খাবার নিয়ে আসতে বললো।।
চলবে..🎀🎀
#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৩
এক লোকমা খাবার মুখে তুলতেই গাল বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।থেমে গেল খাওয়া।।অবাক চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে আছে মেহের।আজ কতো গুলো বছর পর কেউ একজন তাকে খাইয়ে দিচ্ছে।।বাবা মারা যাওয়ার পর কেউ নিজ হাতে খাইয়ে দেওয়া তো দূরে থাক ,, খাবার সাজিয়েও দেয়নি। বেখেয়াল বসত খাবার চিবুতে গিয়ে বাঁধল আরেক বিপত্তি।বিষম খেয়ে গেল।গলা খাঁকারি দিয়ে নিচের গ্লাসটা তুলে নেওয়ার আগেই নিজের আয়ত্বে করে নিল নিবিড়।বাম হাতে গ্লাসটা উঁচু করে এক ঢোকে সবটা শেষ করে ফেললো। গ্লাসটা স্বাভাবিক ভাবে টেবিলের উপর রেখে আরেকটা লোকমা এগিয়ে দিল মেহেরের দিকে। নিবিড়ের তাজ্জব কান্ড দেখে বোকা বনে গেল মেহের।খাবারটা মুখে না তুলে মুখ ঘুরিয়ে নিল।মেহেরের এমন কাজে মুখ চেপে হাসলো নিবিড়। মেয়েটা তার উপর রাগ করেছেন।। শক্ত করে গাল চেপে ধরলো সে। স্বল্প ফাঁকা হওয়া জায়গাটা দিয়ে খাবার পুড়ে দিয়ে আবার চেপে ধরলো।এবার বড্ড অভিমান হলো মেহেরের। করুন চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে খাবার চিবুতে লাগলো। মেহের ভালো ভাবে বুঝে গেছে ,, ছেলেটা তাকে না খাইয়ে ছাড়বে না।মুখের পুরো দানা শেষ হলে হাত নামালো নিবিড়।।বললো,…
— “আর একবার যদি চোখে পানি দেখেছি কিংবা বিষম লাগে ।।তাহলে আমার চেয়ে খারাপ কেউ হবেনা। একবার থামিয়েছি ,, এবার আর থামাবো না। সোজা যেখান থেকে তুলে এনেছি,, সেখানে ফেলে আসবো”।।
অবাক চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল মেহের । এতোক্ষণে তার বোধগম্য হলো ,, একটু আগে সে বিষম খেয়েছিল।মনের ভেতর শিতল একটা অনুভুতি খেয়ে গেল,, এই প্রথমবার কোনো ছেলের প্রতি তার অগাধ বিশ্বাস জন্মে গেছে।।
…
খাবার শেষ করে হাত ধুয়ে নিল প্লেটে নিবিড়। পকেট থেকে প্রিয় রুমালটা বের করে মেহেরের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো…– “চুপচাপ মুখ মুছে নাও ,, নাক নয়”।।হাত বাড়িয়ে রুমালটা নিল না মেহের। পেটের কাছে ডিলেডালা টি শার্টের খানিকটা অংশ তুলে মুখ মুছে নিল মেহের ।।চোখ,,মুখ ,, কান মুছে নিল ।দৃশ্যমান হলো পেটের অনেকটা উন্মুক্ত স্থান। কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিল নিবিড় ।।পূর্ণরায় দরজায় নক পড়লো । খাবারের দিতে এসে কনস্টেবল যায়নি। একসাথে প্লেট নিয়ে যাবে।।এক নজর মেহেরের দিকে তাকালো ,, এখনো নাক পরিষ্কার করে যাচ্ছে।।বিরক্ত হলো নিবিড়।।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে মেহেরের হাত থেকে টি শার্ট টেনে ঠিক করে দিয়ে ,, কনস্টেবল কে ভেতরে আসার পারমিশন দিলো।
কনস্টেবল কে দেখে ভয়ে নেতিয়ে গেল মেহের । হামাগুড়ি দিয়ে ক্রমশ পেছনের দিকে পিছিয়ে গেল। মাথায় দুহাত চেপে চেঁচিয়ে বললো…– ”বাঁচাও,, কে আছ প্লীজ বাঁচাও”।।
— ‘মেহের তুই এখানে কি করছিস?? তোর না কালকে বিয়ের কথা ছিলো”।।
পরিচিত কন্ঠস্বর শুনেও শান্ত হলো না মেহের।।ভয়ে আরো গুটিয়ে গেল। এখন জানতে পারলো নিবিড় ,, তার পাশে থাকা মেয়েটার নাম মেহের।
মেহেরের এমন ব্যবহারে দিশেহারা হয়ে উঠলো সে ।এক লাফ দিয়ে মেহেরের পাশে বসে পড়লো।মাথাটা আলতো উপরে তুলে বললো .
— ‘মেহের শান্ত হও ,,কি হয়েছে তোমার’??
থামলো না মেহের ,, নিজের মতো পাগলামী করে যাচ্ছে সে।হাত উঠিয়ে কনস্টেবল কে উদ্দেশ্য করে বললো…
— বাবা,,রক্ত ,, পুলিশ।।
মেহেরের দৃষ্টি অনুসরণ করে তাকালো কনস্টেবলের দিকে।। এতোক্ষণ বুঝতে না পারলেও ,, এবার অসুবিধা হলো না।।মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললো…
–” তুমি বাইরে একটু অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি আসছি।
মেহের দেখ ওখানে কেউ নেই।।যে ছিল সে চলে গেছে।ভয় পাওয়ার কিছু নেই”।।
মাথা তুলে চারদিকে পরখ করে নিল মেহের । চারদিকে ভয়ের মতো কিছু তার নজরে এলো না। নিবিড় বালিশটা ঠিক করে,, মেহেরকে টেনে শুইয়ে দিল।। পাতলা কাঁথা টা কোমর পর্যন্ত টেনে দিয়ে বেরিয়ে এলেন।
_____________
— “কি হয়েছে বলো তো ?? দেখছি তুমি ওর নাম জানো,, হয়তো পরিচিত।যদি পরিচিতই হও ।। তাহলে মেহের তোমার কাছে না এসে পেছনে গুটিয়ে গেল কেন”??( জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে নিবিড়)
–” স্যার ও আমাকে ভয় পায়নি ।।ভয় পাইছে আমার পরনের এই পুলিশের পোশাক টাকে। আমি যতবার ওর সামনে গিয়েছি ,, যতবার এই পোশাকটা ছাড়া গিয়েছি”।
সন্দিহান চোখে তাকালো নিবিড়।। পুলিশের পোশাককে কি এমন থাকতে পারে ।।যাতে একটা মেয়ে ভয়ে এতোটা আতঙ্কিত হয়ে উঠেছে।আজ পর্যন্ত পুলিককে বিনা শর্তে বিশ্বাস করতে দেখেছে,, কিন্তু ভয় পেতে দেখে নি।। কিছুক্ষণ কপালের কাছে স্লাইড করে বললো…
— “কেন কি লুকিয়ে আছে এই পোশাকে”??
— “স্যার তাহলে আপনাকে প্রথম থেকে বলতে হবে!! মাঝখানে থেকে বললে আপনার বুজতে অসুবিধা হবে”।
সাথে সাথে মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়েছে নিবিড়। দু’জনে কাঠের ভাঙ্গা টুল টার উপর বসে পড়লো ।। তারপর বলতে শুরু করলো…
— ” তা অনেককাল আগের কথা।।এই গ্ৰামে একজন ব্যবসায়ী লোক বাস করতেন।।তার নামটা অবশ্য আমি জানি না।তার একটা রানীর মতো বউ ছিল।। এমন কাজ নেই তা তিনি করতে পারতেন না।। এক কথায়,, যেমন রাধে তেমন চুল বাঁধে।বিয়ের দু বছর পেরুতে না পেরুতেই তিনি একজন কন্যা সন্তানের জন্ম দেয়।কন্যা সন্তানের বাবা হয়ে ব্যবসায়ী লোকটি পুরো গ্ৰামবাসীকে মিষ্টি মুখ করায় ।। কিন্তু আফসোস ,, তিনি পরে জানতে পারে কন্যা সন্তানের জন্মের পরপরই তার স্ত্রী পৃথিবী ছাড়েন। ভেঙ্গে পড়েছিলেন তিনি।তবে মেয়ের কথা ভেবে আবার নিজেকে শক্ত করে ।।সেই মেয়েটা আর কেউ নয় ,, মেহের ছিলো।মেহেরের কষ্ট হবে বলে ,, তিনি আর দ্বিতীয় বিয়ে করলেন না।।ভালোই চলতো তাদের বাবা মেয়ের সংসার।। হঠাৎ একদিন….
বলে থামলেন কনস্টেবল। নিবিড়ের হাত পা ঠান্ডা করে আসছে,, আবার কি হয়েছে ।চিন্তিত কন্ঠে বললো..
— “কি হয়েছে সেদিন..
— “প্রায় দশ বছর আছে ব্যবসার কাজে শহরে যান তিনি।। কিন্তু আর ফিরে এলেন না।। ফেরে এসেছিলো,, তবে জীবিত নয় ,, মৃত।।কার এক্সিডেন্টে মেহেরের বাবা মারা যান।।আট বছর বয়সী মেহের বাবার লাশের পাশে বসে ক্রমাগত বাবাকে ডাকতে থাকে।। কিন্তু তিনি মেয়ের ডাকে সারা দিলেন না।কোথা থেকে পুলিশ এসে লাশটিকে ময়না তদন্তের জন্য নিয়ে যান।।করে ফিরবে বাবা ,, এই ভেবে দরজার সামনে বসে থাকতো ছোট মেহের ।।যেদিন বাবাকে দিয়ে গেল।। সেদিন এক নজর বাবাকে দেখে চিৎকার করে জ্ঞান হারালো মেহের ।জ্ঞান ফেরার পর পাগল পাগল অবস্থা হয়েছিল তার।। বাবাকে আর দেখেনি।।সেই থেকে পুলিশ কে সহ্য করতে পারে না”।।( গড়িয়ে পড়া পানি গুলো হাতের আঙ্গুল দিয়ে মুছে নিল সে)
–” কি এমন ছিলো লাশের মাঝে”??(কৌতূহল নিয়ে নিবিড়)
— “ময়নাতদন্ত করার জন্য সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ সচল রাখার দরকার হয় ।।তাই বিভিন্ন মেডিসিন ব্যবহার করা হয়।।মেহেরের বাবার ক্ষেত্রেও তাই ।জমাটা বাঁধা রক্তগুলো পূর্নরায় তরলে পরিনত করা হয়।।তার উপর সেলাই টাও ভালোভাবে করা হয় নি।।তাই যতবার গোসল করানো হয়েছে ততবারই রক্তে সাদা কাপড় লাল হয়ে গেছে।।এতেই মেহেরের,’।
বুকের ভেতর অদ্ভুত তোলপাড় শুরু হয়ে গেল নিবিড়ের।।একটা মেয়েকে ছোট বেলা থেকে এতোটা কষ্ট সহ্য করতে হয়েছে। তাহলে এতোটা দিন কোথায় ছিল..?? সাথে সাথে প্রশ্ন ছুঁলো সে!?
দিধা না করে আস্তে আস্তে সব খুলে বললো নিবিড়কে। নিবিড় সব শুনে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে।।মনে হাজার প্রশ্ন দানা বেঁধে থাকলেও মুখের আসছে না।।একটা মেয়ের জীবনে এতো কিছু লুকিয়ে থাকতে পারে।।
ভিশন চিন্তায় পড়ে গেল নিবিড়। এই অসহায় মেয়েটাকে একা এখানে রেখে কিভাবে বাড়িতে ফিরবে সে।যদি পূর্ণরায় কালকের ঘটনাটার আবৃত্তি হয় তখন নির্ঘাত মেয়েটা মরে যাবে।। কিন্তু কালকে যে করেই হোক তাকে অফিসে জয়েন করতেই হবে।।আজকের দিন অনেক কষ্টে মেনেজ করেছে।।বললো..
— “বাসের টিকেট আনতে বলেছিলাম এনেছ’??
সাথে সাথে পকেটে হাত রেখে একটা বাসের টিকেট বের করে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো…
— “জি স্যার এনেছি।। অনেক কষ্টে একটা ম্যানেজ করতে পেরেছি ।।(কিছুক্ষণ দিধা বোধ করে )
স্যার একটা কথা বলবো.??
মৃদু আওয়াজ করে হু বললো নিবিড়।। উত্তর পেয়ে বলতে শুরু করলো..
— “স্যার আপনি যদি মেহেরকে সাথে করে নিয়ে যেতেন। আসলে এখানে কার কাছে থাকবে ও। তাছাড়া পুলিশকে ও বেশী ভয় পায়” ।।
কনস্টেবল কে চলে যেতে বলে কিছুক্ষণ ঠোঁট চেপে ভাবতে লাগলো নিবিড়।।প্রায় ঘন্টা খানেক ভেবে ঠিক করলো ,, যাওয়ার সময় মেহেরকে নিয়ে যাবে!!!!?
চলবে…🎀🎀