#এক_মুঠো_ভালোবাসা
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৮+১৯
— “সরি,, আমি জানতাম না । আমার ছোঁয়া এতোটা খারাপ ।আমার ছোঁয়ায় তোমার অস্বস্তি বোধ হয়। নাহলে কখনো তোমার এতোটা কাছে যেতাম না।বলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ”।
নিবিড়ের কথায় মন খারাপ হয়ে গেল মেহেরের । নিজের উপর প্রচুর রাগ হচ্ছে ,,কেন নিবিড়কে ওভাবে বললাম। প্রায় সময়ই তো নিবিড় মেহেরকে ছুঁয়ে দেয় ,, ইভেন্ট কোলে তুলে নেয় তখন তো খারাপ লাগে না। নয়ন জোড়া বন্ধ করে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে নিবিড়ের কাঁধ স্পর্শ করলো । নিবিড় খুব যত্নসহকারে মেহেরের হাত নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিল। অতঃপর বালিশে মুখ গুজে দিল। মেহেরের বোধগম্য হতে সময় লাগলো না,, নিবিড় তার উপর অভিমান করে আছে । পূর্ণরায় আবার নিজের কাঁধে স্পর্শ করলে শব্দ করে উঠে বসলো সে। শান্ত কন্ঠে বললো …
— “প্লীজ মেহের,, দেখ ডিস্টার্ব করো না । ঘুমাতে দাও ।আরেকবার যদি ডিস্টার্ব করো ,তাহলে আমি অন্যরুমে চলে যাব”।
মেহের শোয়া থেকে উঠে বসলো।নিবিড়ের হাত শক্ত করে জড়িয়ে ধরে করুন সুরে বলল..
— “আই এম সরি । আমি ওভাবে বলতে চাইনি নিবিড়” ।
প্রথমবার মেহেরের মুখ থেকে নিবিড় ডাক শুনে এক আড় চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ালো । বন্ধ দরজাটা খুলে প্রস্থান করলো সে। যাওয়ার আগে কাঠ কাঠ কন্ঠে বলে গেছে — “বুঝে গেছি আজ তুমি আমাকে শান্তিতে থাকতে দিবে না ।।তাই অফিসে যাওয়াই ভালো”।।
যতক্ষন নিবিড় বাড়িতে ছিল মেহেরের সাথে কোনো প্রকার শব্দ উচ্চারণ করে নি। তবে মেহের নিবিড়ের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছে । সারাদিনটা নিবিড়ের কথা ভাবতে ভাবতে চলে গেছে।মেহেরের ইচ্ছে করছে নিবিড়ের কাছে চলে যেতে । কিন্তু সে এখনো জানে না নিবিড় কি কাজ করে ।
__________________
কোমরে আঁচল গুঁজে রান্না করছে মেহের । সবজি তরকারি আর পোনা মাছের ঝোল । নিবিড় এসেছে মিনিট বিশেক হয়েছে । আজ নিবিড়ের জন্য লাল শাড়ি পড়ে সেজেছে সে। রান্নার কাজ শেষ করে চুলার আঁচ কমিয়ে দিয়ে উপরে চলে এলো মেহের । রুমের ভেতরে ঢুকতেই তাজ্জব বনে গেল। তার চেয়েও সাইজে বড় একটা গিফ্ট প্যাক রেপিং করা । চারপাশে চোখ বুলিয়ে নিবিড় কে খোঁজার চেষ্টা করল । কিন্তু তার দেখা মিললো না ।ওয়াশরুমের ভেতর থেকে পানির আওয়াজ আসছে । এখনও নিশ্চিই শাওয়ার শেষ হয়নি। ততক্ষণ নিজের কৌতুহল দমিয়ে রাখা সম্ভব নয় মেহেরের কাছে । কাবার্ড থেকে একটা কাঁচি বের করে রেপিং করা প্যাকেটটা খুলতে লাগলো । আস্তে ধীরে প্যাকেট খোলার পর তার নজরে এলো কার্টুন বক্স। সেটা খুলার চেষ্টা করতে নিলে ওয়াশরুমের দরজা খুলে বেরিয়ে এলো নিবিড় । সামনের দিকে চোখ যেতেই আটকে গেল কোনো মায়াবী রমনীর প্রতি । কপালের কোণে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু পরিমাণ ঘাম ।তার উপরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট ছোট আবদ্ধ চুলগুলো ।কোমরে শাড়ির আঁচল গোঁজার ফলে পেটের বেশ খানিকটা অংশ উন্মুক্ত হয়ে গেছে। চোখের মাঝে হাজারো কৌতূহল । হাতের বাজে কাঁচি বন্ধ ।প্যাকেটটা খোলার অদম্য ইচ্ছা। নিজের ভেতরে অন্য কিছু একটা করে ফেলার তীব্র হাহাকার বিরাজ করছে ।সাথে সাথে দৃষ্টি সরিয়ে নিল সে। সে চাইছে এমন না, কোনো পরিস্থিতিতে পড়তে। এগিয়ে গিয়ে মেহেরের হাত থেকে কাঁচি টা নিজের হাতে নিয়ে নিলো নিবিড়। প্যাকেটের দিয়ে তাকিয়ে বলল..– “যাও গিয়ে খাবার নিয়ে আসো,, সারাদিন কিছু খায়নি । পেটের ভেতরে ছুঁচো গুলো দৌড়াদৌড়ি করছে” ।
মেহের সময় নষ্ট না করে দ্রুত পায়ে নিচে নেমে এলো । আঁচ বন্ধ করে সুন্দর করে দুই প্লেটে খাবার সাজিয়ে নিল । যেমন চপল পায়ে হেঁটে নিচে এসেছিল,,তেমনি চপল পায়ে রুমে পৌছে গেল। দরজা কাছে কিছুক্ষণ কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সে। নিবিড়ের কোলে একজন সুন্দরী মেয়ে বসে আছে । নিবিড় ল্যাপটপে কিছু একটা দেখাচ্ছে আর হাসছে ।এই হাসির কারণ মেহেরের অজানা। কপালের মাঝে সরু রুদ্র ভাজ পড়লো তার। খাবারের প্লেটটা টেবিলের উপর রাখল। অতঃপর বিকট শব্দে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে গেল সে। মেহেরের পায়ের শব্দ নিবিড়ের কান অবধি ঠিকই পৌঁছালো কিন্তু তার দৃষ্টিশক্তি পরিবর্তন হলো না। মেহের মেয়েটার পড়নের শাড়িটা দেখে ক্রোভে ফেটে পড়লো। দেখতে এক ডিজাইনের । ফোঁস করে দম ছাড়লো সে। নিবিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞাসা করলো…
— “মেয়েটা কে”??
মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে মেয়েটার চুলের বাজে অধর ছুয়ে দিয়ে বলল.. — “আমার বউ”।।
চোখের পলক থেমে গেল মেহেরের । অজান্তেই চোখের কোণে অশ্রু জমে গেল। গড়িয়ে পড়ার আগেই হাতের পিঠ দিয়ে অশ্রু টুকু ফেলে বলল..
— “তাহলে আমি কে”??
হাতটা ল্যাপটপ থেকে তুলে কপালের কোণে কিছুক্ষণ স্লাইড করলো নিবিড়। ভাবার অভিনয় করে বললো..
— ”আমার ডলুর সতীন”।
সাথে সাথে তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলো মেহের। নিবিড়ের কোলে ল্যাপটপ টা কেড়ে নিয়ে এক প্রকার ছুঁয়ে ফেললো মেয়েটাকে । মেয়েটার দিকে আর না তাকিয়ে বিনা দ্বিধায় নিবিড়ের কোলে নিজের জায়গা করে নিল সে । দুহাতে গলা জড়িয়ে বুকে মাথা রাখলো ।মনে মনে তৃপ্তিকর হাসি দিল নিবিড় । নিজেকে সংযত করে মেহের কে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করলো । বেশ কিছুক্ষণের চেষ্টার পর মেহের কে ছেড়ে ডলুর কাছে এগিয়ে গেল। মেঝে থেকে তুলে পূর্ণরায় কোলে নিয়ে ল্যাপটপে মন দিল নিবিড় ।
নিবিড়ের কান্ড দেখে শব্দ করে হাসলো মেহের ।কারন এতোক্ষণ যেটাকে সতীন বলে নিবিড় পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ।যে আসলে একটা টেডি বিয়ার। মেহের ভেংচি কেটে খাবারের প্লেট এগিয়ে দিয়ে বলল..
— “নিন আপনি আর আপনার পেয়ারের ডলু মনের সুখে খেয়ে নিল”।
___________________
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন নিবিড় । কিন্তু মেহেরের চোখে বিন্দু পরিমাণ ঘুম নেই ।ঘুম নেই বললে ভুল হবে ,,ঘুমাতে পারছে না সে। সতীন কথাটা বারবার মেহেরের মস্তিষ্কের মাঝে ঘোড়াফেরা করছে । যদি সত্যিই কখনো নিবিড় দ্বিতীয় বিবাহে আবদ্ধ হয় তখন । এটা অস্বাভাবিক ব্যপার নয়। মেহেরের মতো একজন মেয়ের সাথে আদোও থাকা যায় কিনা,, সেটাই ভাবছে সে। আড় চোখে ঘুমন্ত নিবিড়ের মুখশ্রীর দিকে তাকালো মেহের।একরাশ ভালোলাগা লুকিয়ে আছে এই মুখটার মাঝে ।নিবিড়ের নিচে চোখ যেতেই মুখ ঘুড়িয়ে নিল সে। টেডি বিয়ারের চিবুকে মাথা রেখে গভীর নিদ্রায় তলিয়েছে নিবিড়।যেন মেহের তার কেউ না ,,আর বেয়ার টা নিবিড়ের বউ। ঘুমের মাঝে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে ,, মিনিটে মিনিটে ঠোঁট দুটি ছুঁইয়ে দিচ্ছে। কখনো নিজের বুকের উপর নিয়ে স্বযত্নে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে,,কখনো নিজের পুরো ভর টেডি টার উপর দিচ্ছে। যেদিকে পাশ ফিরছে,, সেদিকে টেডিটাকে নিয়ে যাচ্ছে। সবকিছু আজ বড্ড অসহ্য লাগছে । ইচ্ছে করছে লাথি মেরে টেডিটাকে ফেলে দিতে । কিন্তু সংযত করছে । নিবিড় কে পিঠ দেখিয়ে উল্টো ঘুরে শুয়ে পড়লো মেহের । পাক্কা এক ঘন্টার চেষ্টায় ঘুমের দেশে হারিয়ে গেল সে।
মাঝখানে কেটে গেছে চার দিন । এর মাঝে নওয়াজ সাহেব আর নাজমা দুজনে গ্ৰামে থেকে ফিরে এসেছেন । ভয়ে ভয়ে ছিল , আদোও তারা মেহের কে মেনে নিবে কিনা ।। কিন্তু আশ্চর্য করে তারা মেহেরকে বাড়ির বউয়ের পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছে। এখন বিরক্তিকর বিষয় হচ্ছে টেডি বেয়ার টা । দুদিনে টেডির সাথে নিবিড়ের সম্পর্ক আরো গভীরতম হয়ে উঠেছে । সবকিছু সহ্য সিমা পেরিয়ে গেছে মেহেরের কাছে। এই তো কালকে রাতে ফেরার সময় টেডির জন্য একটা সেল ফোন কিনে এনেছে । যাওয়ার আগে মেহেরকে বারবার বলে গেছে , যখন নিবিড় ফোন দিবে ।সাথে সাথে রিসিভ করে টেডির কানের সামনে ধরে দাড়িয়ে থাকবে ।মেহের মনে করেছিল, নিবিড় শুধু মেহের কে জ্বালাতে এমন করবে ।। কিন্তু না ,,
আজ দুপুর আড়াই টা নাগাদ তুমুল শব্দে ফোনটা বেজে উঠলো। ফোনটা রিসিভ করে কানের কাছে তুলতেই শুনতে পেল নিবিড়ের এক গাদা বচন । রাগে দুঃখে টেডির কানে কাছে ফোন ধরে পুরোটা সময় মন খারাপ করে বসে ছিল । কেঁদে কেটে ভাসিয়ে দিয়েছে মেহের । কান্নার শব্দ ফোন ভেদ করে নিবিড়ের কান অবধি ঠিকই পৌঁছাছে । এখন মেহেরের জীবনের একটাই লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে ,, সেটা হচ্ছে যেভাবেই হোক টেডির থেকে নিবিড় কে সরিয়ে আনা ।
বেড থেকে উঠে এক লাথি দিয়ে টেডিটাকে ফেলে দিল সে ।।টেডিটা পড়তে গিয়েও পড়লো না,, তার আগেই নিবিড় বাহুবলে টেডিটার হাত ধরে নিল । নিভু নিভু চোখে তাকিয়ে সামনে মেহেরের বিরক্তিকর মুখটা দর্শন করল । পূর্ণরায় আবার আঁখি জোড়া বেষ্টিত করে বলল..
— “প্লীজ মেহের একটু ডলু সোনাকে তুলে দিবে ।ওকে ছাড়া আবার সামান্য পরিমাণ ঘুম আসে না। প্লীজ ….
ইচ্ছে করতে নিবিড়ের চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। কিন্তু তা সম্ভব নয়। দাঁতে দাঁত চেপে শক্ত হাতে টেডির গলা চেপে ধরলো ।যদি এটা জীবন্ত মানুষ হতো এতোক্ষণে নির্ঘাত পরপারে চলে যেত। ঘুমন্ত নিবিড়ের হাতের বাজে থেকে ধীরে ধীরে টেডিটাকে ছাড়িয়ে নিল। অতঃপর টেডিটার কানের কাছে গিয়ে রুদ্র কন্ঠে বললো..
— “কিছু বলি না বলে তোর তো খুব সাহস বেড়েছিল তাই না। অন্য স্বামী , অন্যর বিছানা , অন্যর বরের সাথে লুটুরপুটুর করতে লজ্জা করে না । যদি আবার নিবিড়ের কাছে তোকে দেখি তাহলে ,, তুই আর আস্ত থাকবি না।তোর চুল ,, না না তুই তো টাক”।।
এইটুকু বলে হাসিতে ফেটে পড়লো মেহের । ভেসে এলো নিবিড়ের ঘুমন্ত কন্ঠস্বর..
–” মেহের কি হয়েছে । ডলুটাকে দিচ্ছ না কেন ?? ওকে ছাড়া আমি ঘুমাতে পারি না”।
সময় নষ্ট করলো না মেহের । ধীরে ধীরে নিবিড়ের পাশে শুয়ে পড়লো । নিবিড় কে নিজের দিকে ফিরিয়ে ধীরে ধীরে তার মাথাটা নিজের বুকে রাখলো । হাত জোড়া পিঠের মাঝে রাখলো । নিজের হাত জোড়া নিবিড়ের গালে রেখে কিছুক্ষণ খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো স্বযত্নে হাত বুলিয়ে দিল । নিবিড়ের মাথাটা তুলে নিজের কপালে ছুঁয়ে দিল । নিজের কাজে নিজেই লজ্জার্থ হাসলো সে ।নিবিড়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে তন্দ্রায় ব্যস্ত হয়ে উঠলো ।
প্রায় মিনিট দশেক পর মেহেরের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল নিবিড় ।মেহের কে পিঠ দেখিয়ে অন্যপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো । কই যখন টেডিটা নিবিড়ের কাছে থাকে তখনতো নিবিড় পাশ ফিরে ঘুমায় না । বরং ডলু সোনা ,, ডলু সোনা বলে বুকে টেনে নেয়। ধক করে উঠে বসলো মেহের । নিবিড়ের দিকে তৃক্ষ্ম দৃষ্টি আকর্ষণ করে অন্যপাশে গিয়ে নিবিড়কে নিজের বুকে নিয়ে চোখ বন্ধ করে নিলো।
নিজের গলায় ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে চোখ খুলে তাকালো মেহের । নিবিড় ঘুমের ঘোরে ঠোট দিয়ে স্লাইড করছে । নিজের করা কাজে নিজেই ফেঁসে গেছে মেহের । হাত দিয়ে শাড়ির আঁচলটা ভালোভাবে চেপে সহ্য করে রইল । যতই সময় যাচ্ছে স্পর্শ গুলো আগের তুলনায় গভীর হচ্ছে। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিবিড়ের মাথাটা সরানোর চেষ্টা করতে লাগল । হলো তার বিপরীত । মেহেরের উন্মুক্ত পেটের হাত রেখে গলার জোরে কামড় বসিয়ে দিল। সাথে সাথে নিবিড়ের চুলগুলো খামচে ধরলো মেহের । তবুও নিজেকে নিবিড়ের থেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো না । সে ভেবেই নিয়েছে নিবিড়ের দেওয়া সব টর্চার সহ্য করে নিবে । একটা সামান্য টেডি যদি পারে তাহলে সে কেন পারবে না । মেহের তো নিবিড়ের লিগ্যাল ওয়াইফ। মনে মনে নিবিড় কে উদ্দেশ্য করে বলল..
— “ব্যাটা লুচু কোথাকার । বউয়ের সাথে এমন করতে পারে না ।তাই টেডি ভাড়া করে এনেছে” ।
মনে মনে মেহেরের কান্ড দেখে হাসল নিবিড় । সে তো এটাই চেয়েছিল যাতে মেহের তার সবকিছু সহ্য করে নেয় । দুহাতে মেহেরের পিঠে হাত রেখে মেহের কে নিজের বুকে টেনে নিল নিবিড় । বেডের কোণে গুটিয়ে রাখা ব্যাঙ্কেট খানা পা দিয়ে টেনে হাতের কাছে নিয়ে এলো। অতঃপর মেলে মেহের কে ব্যাঙ্কেটের ভেতর পেঁচিয়ে নিল । চুলের বাজে হাত রেখে মৃদু হেসে বলল..
–” সারারাত অনেক দুষ্টুমি হয়েছে ডলু সোনা । এবার ঘুমিয়ে পড় । রাতে আবার হবে” ।
ঘুমের মাঝে নিজের শার্টে ভেজা অনুভব করে মেহেরের দিকে তাকালো নিবিড়। মেয়েটা কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে । মাঝে মাঝে কেঁপে কেঁপে উঠছে। নিজের কাছ থেকে মেহেরকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো । মলিন কন্ঠে বলল..
–” কি হয়েছে মেহের । কাঁদছ কেন”?
মেহের কোনো রকম বাক্য উচ্চারণ করলো না। বালিশে মাথা রেখে পূর্বের মতো কেঁদে চলেছে । বিষয়টা বোধগম্য হতে বেশ বেগ পেতে হলো নিবিড় কে । মাথা নিচু করে অপরাধী কন্ঠে বলল..
— “সরি মেহের ! হয়তো ঘুমের ঘোরে তোমার সাথে অনেক বাজে বিহেবিয়ার করে ফেলেছি । আসলে আমি তোমাকে ডলু সোনা মনে করেছিলাম ।
তোমারও ভুল হয়েছে । প্রথমবার আমি যখন তোমাকে স্পর্শ করেছিলাম ।তখন আমাকে হুসে ফেরানো উচিত ছিল । সমস্যা নেই , আজ থেকে তুমি বেডে আর আমি ,ডলু সোনা নিচু ঘুমাবো” ।
চোখ দুটো সরিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে দিল । ঘড়ির কাঁটা এগারোটা ছুঁই ছুঁই । আজ বন্ধের দিন । তাই একটু বেশি ঘুমিয়েছে । তার সাথে মেহেরও যোগ দিয়েছে।
বেডের উপর ভর দিয়ে নেমে যেতে নিলে নিবিড়ের বাহু চেপে থামিয়ে দিল মেহের । কিছু বোঝার আগেই ঝাঁপিয়ে পড়লো নিবিড়ের বুক মাঝারে । কাঁদতে কাঁদতে বলছে ..
— “আপনি অনেক পঁচা নিবিড় । শুধু আমাকে কাঁদান ।আমি কখন বললাম ,, আপনি আমাকে বাজে ভাবে স্পর্শ করেছেন বলে আমি কাঁদছি । আপনি ঘুমের ঘোরে ডলু সোনা,ডলু সোনা করেন । কই একবারও তো বলেন না ,, মেহুসোনা । তাই কাঁদছি”।
এবার মেহের কান্নার কারণ বুঝতে পারল নিবিড় । সব ক্রেডিট তীব্রের । মেহেরের কান্না থামিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে বেলকেনিতে চলে গেল নিবিড় । তীব্রকে একটা ধন্যবাদ না জানানো পর্যন্ত শান্তি পাবে না সে ।
_________________________
— “আন্টি আপনার চা” ।
অতি সাবধানে চায়ের কাপটা এগিয়ে দিল মেহের । নাজমা চায়ের কাপটা না নিয়ে মেহের কে তার পাশে বসার উপযুক্ত জায়গা করে দিলেন । মেহেরের মুখটা তুলে হেসে বললেন..
–” আন্টি কিসের হে। আমি নিবিড় আর নিশির মা হই ।নিবিড়ের মা আর তোর মা কি আলাদা নাকি ।এখন থেকে সবসময় মা বলে ডাকবি ।
এখন মা ডাক নাহলে চা খাবো না” ।
চোখ ছলছল করে উঠলো মেহেরের । জন্মের পর মা মারা যায় বিধায় কাউকে মা বলে ডাকা হয়না । নাজমার মুখে এমন কথা শুনে বুকটা মুচড় দিয়ে উঠল। ঠোঁট প্রশস্ত করে শব্দময় তিনবার উচ্চারণ করল মা ,মা মা । সময় না নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ল নাজমার বুকে । তিনি যত্ন মেহেরের মাথায় চুমু এঁকে দিলেন।
মেহেরের হাত থেকে চায়ের কাপ নিয়ে চোখ বন্ধ করে এক চুমুক দিলেন। অতি স্বাদে চোখ খুলে বললেন .
— “তোর মুখে মা ডাকটা যতটা মিষ্টি, ঠিক ততটা মিষ্টি তোর চায়ের হাত ।
দুই ছেলে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে এখন শান্তিতে আছি । বাকি রইল নাতি নাতনি । ইনশাআল্লাহ ওটার মুখও খুব তাড়াতাড়ি দেখবো”।
অজান্তেই নাজমার কোলে মাথা রেখে কেঁদে উঠলো মেহের । কাঁদতে কাঁদতে বলল..
–” মা ।। আমি বোধ হয় তোমার ইচ্ছে পূরণ করতে পারবো না । ডলুকে তোমার ছেলে বিয়ে করে এনেছে” ।
তাজ্জব বনে গেল নাজমা । ডলু নামের মেয়েটাকে বিয়ে করে এনেছে? অথচ সেই জানে না । কৌতূহল নিয়ে বললেন..
–” কে এই ডলু আর কবে বিয়ে করে আনলো” ??
— “তোমরা আসার অনেক আগে । আমি যে তার বউ সে মনেই করে না। জানো যতক্ষন বাড়িতে থাকে ডলু সোনা, ডলু সোনা করে ।খাইয়ে দেয় ,কোলে নিয়ে ঘুরে । রাতে ডলু ছাড়া ঘুমাতে পারে না” ।
বলেই কেঁদে উঠলো মেহের । মেহেরের মাঝে নিশির মুখটা ভেসে উঠলো নাজমা কাছে । মেহেরের চোখ মুছিয়ে দিয়ে হাত ধরে টানতে টানতে নিবিড়ের রুমের দিকে নিয়ে গেলেন । সেখানে যা দেখলেন ,, তিনি মাথা হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন ।কারন তার চোখের সামনে নিবিড় সাউন্ড সিস্টেম অন করে ,, একটা শাড়ি পরিধিতা টেডির সাথে কোমড় দুলিয়ে কাঁপল ডান্স করে যাচ্ছে । ছেলেকে এমন অবস্থায় দেখে পড়ে যেতে নিলে হাত বাড়িয়ে সামলে নিল মেহের । নিবিড়ের বয়স আনুমানিক ছাব্বিশ ছাড়িয়েছে । নিশি নিবিড়ের দু বছরে ছোট। পাঁচ বছরের পর তাকে আর পুতুল খেলতে দেখেনি ।তখন বন্দুক নিয়ে ঘুড়তে দেখা যেত । ইভেন্ট নিশিকে পুতুল নিয়ে খেলতে বারণ করতো ।আর এখন প্রাপ্ত বয়সে এসে নিজে পুতুল নিয়ে খেলছে ।
মায়ের উপস্থিতি অনুভব করে নাজমাকে নিয়ে নাচতে শুরু করলো নিবিড় ।হা করে তাকিয়ে রইল মেহের।
চলবে…🎀🎀