#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৬
মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে নিবিড়। নিবিড়ের হাত জরিয়ে ধরে পেছনে লুকিয়ে আছে মেহের। কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি ওঠে গেছে তার। নিবিড় আস্তে আস্তে হাত রাখল মেহেরের মাথায়। আশ্বাসের কন্ঠে বললো…
— “মেহের ডোন্ট ক্রাই ।। এখানে কিচ্ছু হয়নি ।সব ঠিক হয়ে যাবে”।
তবুও শব্দহীন কুপিয়ে কুপিয়ে কেঁদে চলেছে মেহের। অন্য সময় হলে হয়তো নিবিড়ের কথায় আশ্বাস পেত কিন্তু এবার ভয় ছাড়া কিছু পেল না।।
— “এই গ্ৰামে আজ পর্যন্ত এমন কোনো কিছু ঘটে নি । শুধু মাত্র তোদের জন্য ঘটল । তা আবার আমার বাড়িতে ।পুরো গ্ৰামের লোক আমারে ছিঃ ছিঃ করতাছে
।যদি জানতাম তোমাদের চরিত্রে এমন সমস্যা আছে তাহলে জীবনে এখানে থাকার পার্মিশন তো দূরে থাক নিশির লগে তৌফিক দাদু ভাইয়ের বিয়ের দিতাম না”।
তনুর দাদির কথায় উপস্থিত সবাই মাথা নিচু করে নিল। নিবিড় শান্ত হলো না । মেহেরের হাতটা নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো…
— “যদি জানতাম আপনাদের গ্ৰামের মানুষদের শিক্ষায় অভাব আছে ।তাহলে আমি নিবিড় এই গ্ৰামের চৌ-সিমানায় পা রাখতাম না”।
— “গ্ৰামের দোষ না,, দোষ তোমাগো মতো শহরের চাল চলন হীন মাইয়া পোলা গো ।ঝোপ ঝাপে বসে ফস্টি নষ্টি করবা আর আমরা কিছু কইলেই দোষ ।
আইজকা তোমাগো বিয়া দিয়া আমরা থামমু “।।(গ্ৰামের এক সম্মানিত ব্যাক্তি)
আকাশ থেকে পড়লো তনু । নিবিড় কে পাওয়ার জন্য এতো কিছু করলো কিন্তু সব বিফলে গেল। ঢোক গিলে মুখ ফসকে বললো..
–” এটা কিছুতেই হতে পারে না । সব দোষ মেহেরের।বড় লোকের ছেলে দেখে নিজেকে সামলাতে পারে নি ।তার শাস্তি নিবিড় কেন পারে ।
আমি এতো কষ্ট করে দুজনকে ওখানে পাঠা..
জিভে কামড় দিয়ে থেমে গেল তনু।কি বলতে কি বলে ফেলেছে ।
তারপর আর কেউ কোনো কথা বললেন না। বেশ কিছুক্ষণ পর একজন পাঞ্জাবি আর টুপি পড়া লোক উপস্থিত হলো । লোকটাকে চিনতে পাক্কা দশ মিনিট সময় লাগলো নিবিড়ের । তিনি আর কেউ নয় ,,বিয়ের কাজি। একপ্রকার জোর করে মেহের-নিবিড়ের বিয়ে টা হয়ে গেল । মেহের কেঁদে কেটে দশ মিনিট লাগিয়েছে কবুল বলতে । দশ মিনিটেও হতো না ,, নিবিড়ের ধমকের দশ মিনিট লেগেছে।বিয়ের পাট চুকিয়ে উঠে দাঁড়ালো নিবিড়।নিশির মুখের দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় বললো..
— “মেহের নিজের জিনিস পত্র নিয়ে এসো ।।আমরা এখন শহরে উদ্দেশ্য বেরুবো”।
–” ভাইয়া তুই এখন চলে যাবি মানে ।এই রাস্তার মেয়েটার জন্য এতোকিছু হলো আর তুই এখন এই মেয়েটাকে নিয়ে বাড়িতে উঠবি ।।(মেহেরের হাত ধরে নিশি) এই মেয়ে এই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও” ।।
মেহেরের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালে ,, অন্য হাত ধরে আটকে দিল নিবিড় । নিশির থেকে মেহেরের হাত ছাড়িয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললো…..
— “ভালো ভাবে এবং সম্মান দিয়ে কথা বল নিশি। ও রাস্তার মেয়ে না আমার বিয়ে করা বউ।।তাই কারো সম্পর্কে কিছু বলার আগে তার পরিচয় টা জেনে নিবি।
(একটু থেমে আবার) সরি নিশি, ভাই হিসেবে এই বিয়েতে আমি থাকতে পারছি না”।
সময় নষ্ট না করে মেহেরকে নিয়ে গ্ৰাম থেকে বেরিয়ে এলো নিবিড়।
ফ্ল্যাস ব্যাক….
নিবিড় মেহের কে ডাকে নি ।আর মেহের নিবিড়কে ডাকেনি।তাহলে দুজনকে ডাকলো কে?? মেহেরের দিকে চোখ যেতেই দেখল ,,মেহের দুহাতে মুখ ঢেকে কেঁদে চলেছে ।আলতো হাতে মেহেরকে নিজের বুকে জরিয়ে নিল সে।এমন সময় কেউ একজন টর্চের আলো দুজনের উপর ফেললো। সাথে সাথে ঝাঁঝালো আলোয় কুঁচকে এলো দুজনের চোখ। হাত দিয়ে তীর্যক আলো আড়াল করলেই বাঁধলো আরেক বিপত্তি। গ্ৰামের মানুষ জন অন্যকিছু ভেবে বসলো।।
__________________
স্পীডে ড্রাইভ করছে নিবিড়। যতদ্রুত সম্ভব বাড়ি
পৌঁছাতে পারলে শান্ত হবে সে। তার পাশে বসে অনবরত কেঁদে চলেছে মেহের ।তার কান্নার সাথে তাল মিলিয়ে ডাহুক পাখি ডাকছে।গাড়ি যতই সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে ,, পাখির আওয়াজ ততই অস্পষ্ট হয়ে চলেছে । নিবিড় হাত বাড়িয়ে বোতলটা মেহেরের এগিয়ে দিয়ে পূর্ণরায় ড্রাইভে মন দিল।মেহের কাঁচ খুলে বোতলের পানি হাতে নিয়ে মুখে ছিটে দিয়ে নিল।এক ঢোক খেয়ে নিবিড়ের দিকে এগিয়ে দিল। নিবিড় বোতলটা হাতের মুঠোয় নিয়ে পূর্বের স্থানে রেখে দিল।
কান্না থামানোর জন্য পানি দিলো ,, পানি খেয়ে শক্তি বাড়িয়ে আবার কাঁদছে।।চরম বিরক্ত হলো নিবিড়।দ্রুত গাড়ি ব্রেক করে থামিয়ে দিল সে। মেহেরের দুই বাহু চেপে নিজেকে দিকে ফিরিয়ে নিল। একটু ঝুঁকে গাড়ির কাঁচ আঁটকে দিয়ে ,, গালে হাত রেখে কৌতূহলী চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বললো…
— “এবার কাঁদো,, যত ইচ্ছে কাঁদো ।।আমার মত একটা বাজে ছেলে তোমার মতো সরল একটা মেয়েকে ডিজার্ভ করে না।কি করবো বলো ,, আমি যদি একবার বিয়েতে নাকোচ করতাম তাহলে তার ইফেক্ট তোমার উপরে এসে পড়তো ।সবাই তোমাকে চরিত্রহীন মেয়ের উপাধি দিত”।
কান্নার বেগ আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়ে গেল মেহেরের। নিবিড়ের হাতের বাজে নিজের হাত জোড়া বন্দী করে নাক টেনে বললো..
— ”কে বলছে আপনি আমার যোগ্য নয় ।। বরং আমি আপনার যোগ্য নয় ।আমি আপনার জীবনে আসতে না আসতেই এতোবড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেল”।
নিবিড়ের বুঝতে অসুবিধা হলো না মেহের কেন কাঁদছে।সে নিজের জন্য নয় নিবিড়ের জন্য কাঁদছে। নিবিড় মেহেরের চুলের বাজে হাত দিয়ে মুখটা এগিয়ে নিয়ে গেল মেহেরের দিয়ে । গভীরভাবে নিজের ঠোঁট দুটো স্পর্শ করলো মেহেরের ঠোঁট । অতঃপর আবার সরে আয়নার চুল ঠিক করলো ।।
আকস্মিক ঘটা এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলো না মেহের। ঠোঁট যুগল হাফ ইন্ধি ফাঁক হয়ে গেল। ঘটনাটা বোধগম্য হতেই ঠোঁটে হাত রেখে লজ্জায় নুইয়ে গেল সে।
— “বিয়েটা যেহুতু হয়ে গেছে ,, তাই তুমি আমার বউ।যদি আরেকবার চোখের অশ্রু ঝরেছে তাহলে বাসরটা এখানে সেরে ফেলবো কী বলো…
এক মুহুর্তের জন্য হলেও কান্নার কথাটা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সে। খড়ে পড়া ওরনাটা টেনে লজ্জার্থ মুখটা ঢেকে নিল সে।
___________________
সূর্যের আলো পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। দমকা হাওয়ায় পর্দাগুলো উড়ছে। সেই ফাঁকে ফাঁকে সূর্যের আভাগুলো চিকচিক করে মেহেরের মুখে পড়ছে ।বারবার কপাল কুঁচকে আসছে তার। ঘুমের ঘোরে মাথার নিচ থেকে বালিশটা বের করে মুখের উপর ধরলো। বালিশের ভারে নাকের ডগায় খানিকটা ব্যাথা পেল বটে। উপায়হীন হয়ে বালিশ টা ছুঁয়ে ফেললো নীচে । কিন্তু নীচে না পড়ে হালকা উপরে উঠে ঠাস করে মেহেরের মুখের উপর পড়লো।নাকে হাত বুলিয়ে উঠে বসলো সে।তীক্ষ্ম দৃষ্টি দিয়ে এক লাথিতে নিচে ফেলে দিল। আরমোরা ভেঙ্গে সামনে চোখ পড়তেই নিবিড় ভেংচি কাটা ছবিটার দিকে চোখ আটকে গেল তার। চারপাশে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে সিউর হলো এটা নিবিড়ের রুম। কিন্তু আসে পাশে নিবিড়ের উপস্থিতি অনুভব করল না সে। টেবিলের উপর একটা প্লেটের উপর আরেকটা প্লেট উল্টো করে রাখা দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো সে। উপরের প্লেটটা সরাতে চোখ বড় বড় হয়ে এলো তার। মানচিত্রের মতো দুটো রুটি আর ডিম ফ্রাই ।পাশে নিবিড়ের ফোন রাখা। ফোনটা হাতে নিয়ে এপিঠ ওপিঠ করে দেখে নিল। আননোন নাম্বার থেকে দুটো মেসেজ এসেছে। প্রথমটাকে লেখা..
” দুটো রুটি বানিয়ে রেখে এসেছি।খেয়ে নিও ,, যথা সম্ভব আমি চলে আসবো”
দ্বিতীয় টা পৌঁছানোর পরে..
” তুমি কি উঠেছ?? ব্রেকফাস্ট করেছ?? আচ্ছা রুটিগুলো খেতে কেমন হয়েছে?
ব্রেকফাস্ট লেখা দেখে বাইরে তাকালো মেহের ।এখন বিকেল ।ঘড়িতে ৫.১৪ বাজে । হঠাৎ কি মনে করেই চাচীর কথা মনে হলো তার ।ফোনটা নিয়ে বেলকেনিতে দাঁড়িয়ে চাচীর নাম্বারে ফোন করলো ।পরপর দুইবার রিং হওয়ার পর রিসিভ হলো। ওপাশ থেকে ক্রমাগত “হ্যালো ,, কে”?? বলেই চলেছে ।। মেহের নিরবতায় চাচীর কন্ঠস্বর শুনছে। সাহস সঞ্চয় করে বলে উঠলো..
— “চাচী আমি মেহের ।কেমন আছ তোমরা “??
চলবে..🎀🎀
#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৭
— “মুখপুড়ি তুই এখনও মরিস নি?? কেন ??কেন ফোন করেছিস এখানে ?? আমাদের জীবনটাকে শেষ করতে ।তোকে এতো কথা বলি ,তোর কি একটুও গায়ে লাগে না ।তোর চামড়া কি গন্ডারের চামড়া দিয়া তৈরি “।(ওপাশ থেকে চাচী)
চোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।মুছলো না মেহের। এটাই হয়তো তার ভালো মানষিকতার ফলাফল । আজ তার সুখের কথা চাচীকে জানাতে খুব ইচ্ছে করেছিল ,, কিন্তু তা আর হলো না । নিজেকে সংযত করে বললো…
— “চাচী আজ তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছে ,, তাই ফোন করেছি”।।
— “আমাদের কথা মনে পড়েছিল না-কি বাড়িতে আসার জন্য ফোন করেছিস ।কি ভাবিস আমি কিছু বুঝি না ।।
আচ্ছা এখন তুই কোথায় আছিস ?? নিশ্চয়ই কারো বাড়িতে ,, তাদের ক্ষতি করেছিস বলেই লাথি দিয়ে বের করে দিয়েছে ।তাই আবার বাড়ি ফিরতে চাইছিস।
যদি তাই হয় তাহলে শুনে রাখ ,, তোর মতো অপয়া মেয়ে যেখানে যাবে সেখানে অন্যর ধ্বংস নিশ্চিত থাকবে “।
আর শোনার ক্ষমতা নেই মেহেরের। ফোনটা কানে থেকে নামিয়ে কেটে দিল। এলোমেলো পায়ে হেঁটে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবিকে বলছে…
“চাচী তো ঠিকই বলেছে ।।সত্যি আমি অপয়া। নিবিড় আমাকে আশ্রয় দিলো ,, খেতে দিলো ,, স্বাধীনতা দিলো ।তার জীবনটাই নষ্ট করে দিলাম””।
অন্য মনষ্ক হয়ে বেরিয়ে আসার জন্য পা বাড়াতেই পানিতে স্লীপ করে সোজা বেসিনের উপর মাথা গিয়ে ঠেকলো ।হাত বাড়িয়ে পানির টেপ ধরার চেষ্টা করলো ।।হলো তার বিপরীত ।ব্যালেজ করার বদলে ট্যাপ থেকে পানি পড়তে লাগলো।মিনিট পেরুবার আগেই ভিজে একদম কাক ভেজা হয়ে গেল মেহের।দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে। হাতটা আলতো করে মাথায় রাখল। নিজের হাতে রক্ত দেখে ঘাবড়ে গেল সে।রক্তের ধারা পানির সাথে প্রবাহিত হচ্ছে। চোখের সামনে ভেসে উঠল প্রানহীন বাবার দেহ। সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার করে জ্ঞান হারালো সে।।
__________________
ঘড়ির কাঁটা আটটা ছুঁই ছুঁই ।মাত্র বাড়িতে এসে পৌঁছেলো নিবিড়। পড়নের জামাটা খুলে বেডের শুয়ে আছে।আজ শরীরটা ভালো নেই।অনেকক্ষন অতিবাহিত হওয়ার পর উঠে দাঁড়ালো সে। কাবার্ড থেকে ধূসর রঙের সর্ট প্যান্ট আর লাল রঙের টি শার্ট বের করে ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে গেল।হাত বাড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে সরে এলো ।ভেতরে থেকে পানি পরার তীব্র আওয়াজ আসছে। সারাদিনের কাজের চাপে মেহেরের কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলো সে।
দরজার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টি আকর্ষণ করে হনহন করে নিচে চলে এলো সে। অপেক্ষা জিনিস টা তার একদম অপছন্দের। সারাদিন কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ করেছিল ,,যে এখন ওয়াশরুমে যেতে হবে।
প্রায় আধঘন্টা শাওয়ার শেষ করে মাথা মুছতে মুছতে রুমে প্রবেশ করলো নিবিড়। মাথা মুছা শেষ করে টাওয়ালে ঝাড়া দিয়ে বেলকেনিতে মেলে দিল। এখনও মেহের রুমে আসে নি । কৌতূহলী চোখে ওয়াশরুমের দিকে তাকিয়ে বলল…
— “মেহের আর ভিজো না ,,ঠান্ডা লেগে যাবে । তাড়াতাড়ি বেরিয়ে এসো । আমি খাবার নিয়ে আসছি”
বড় বড় পা ফেলে রুম প্রস্থান করলো সে। টেবিলের উপর রাখা কাচ্চি বিরিয়ানির প্যাকেট গুলো সাবধানে বের করলো। সাজিয়ে রাখা প্লেটে তুলে সুন্দর ভাবে সাজিয়ে নিল। প্যাকেটগুলো ডাসবিনে ফেলে ,প্লেট দুটো হাতে তুলে নিল। পূর্ণরায় রুমে এসে টেবিলের উপর রাখল ।পাশে রাখা খাবারের প্লেটটা তুলতেই বিরক্ত হলো সে। যেমন খাবার রেখে গিয়েছিল,,তেমনটাই আছে ।রুটিগুলো শক্ত হয়ে গেছে। অনেক সময় নিয়ে ভালোবেসে খাবারগুলো মেহেরের জন্য বানিয়েছিলো সে।একেই তো খাবারে অবহেলা করেছে আবার ওয়াশরুম থেকে বের হচ্ছে।বিরক্তর উপর চরম বিরক্ত হলো সে।
এগিয়ে গিয়ে ওয়াশরুমের দরজায় নক করার জন্য হাত বাড়ালে থেমে গেল সে। হাতটা শক্তিহীন হয়ে নিচে পড়ে গেল। চোখ দুটো স্তব্ধ হয়ে আছে দরজার ফাঁক দিয়ে রক্তগুলোর দিকে। নিজেকে সামলাতে দরজায় খুলতে নিলে ,, কিছু একটার সাথে বেঁধে আটকে গেল তার হাত। নিবিড় একটু ঝুঁকে দরজার কাছ থেকে মেহেরের হাত সরিয়ে নিল ।হাত সরাতেই বেড়ানো দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে গেল।হাত বাড়িয়ে ট্যাপ বন্ধ করে নিলো নিবিড়।অতি সাবধানে মেহের কে কোলে তুলে বেডের কোণে শুইয়ে দিলো। জামা কাপড় থেকে চুসে চুসে বেডের খানিকটা ভিজে গেছে।অনেকক্ষন ভেজার কারণে পুড়ো শরীর ফ্যাকাশে হয়ে চামড়া কুঁচকে এসেছে। মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে নিবিড়ের ।কাবার্ড খুঁলে জামা বের করতে গেলে জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়লো সে।নিজের চুল টানতে ইচ্ছে করছে ।
দ্রুত পায়ে গেস্ট রুমে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে ফিরে এলো সে। পাল্টে দিতে গিয়ে থেমে থেমে যাচ্ছে।
যদি মেহের জেগে যায় ,,আর তাকে খারাপ মনে করে ।ধ্যাত খারাপ মনে করলে করবে ।আমি মেহেরের লিগ্যাল হাসবেন্ড । শুধু জামা কাপড় চেঞ্জ কেন ওর সব কিছু দেখার রাইট আমার কাছে ।
এইসব ভেবে আস্তে আস্তে ভেজা জামা পাল্টে দিল নিবিড়। সুন্দর করে চুল মুছে দিয়ে একটা ওয়ান টাইম লাগিয়ে দিল। ডাক্তারকে ফোন দেওয়ার জন্য চারপাশে ভালোভাবে ফোনটা খুঁজলো কিন্তু নজরে এলো না। কিছু একটা মনে করে বেলকেনিতে গেল।আবছা আলোয় ফোনটা রেলিং এর উপর দেখে এগিয়ে গেল সে। কল লিস্টে আননোন নাম্বার দেখে ভ্রু যুগল কুঁচকে এলো তার । কৌতূহল দমাতে না পেরে ফোন করলো সে। সাথে সাথে ওপাশ থেকে রিসিভ হলো ।একটা মেইলি গলায় বলছে …
— “তুই আবার ফোন দিয়েছিস মেহের ।তোকে এতো এতো কথা শুনালাম।তারপরেও, বলি হারি তোর মতো বেহায়া মেয়ে আমি বাপের জন্মে দেখি নাই।”।
— “কে আপনি?? কি সব যাতা বলছে” ??(কৌতূহল নিয়ে নিবিড়)
–” তুই মেহের না ,, তখন ফোন দিলি”??
— “আমি মেহের না ।।মেহেরের হাসবেন্ড”!!(আমতা আমতা করে নিবিড়)
— “এর মতো অপয়া মেয়েটা জামাই বানাইয়া লইলো।আচ্ছা তুমি নিজের ইচ্ছেতে বিয়ে করছ??না-কি ফাঁসিয়ে বিয়ে করছে ,, বল তো বাবা ??
সময় থাকতে ওরে ছাইড়া দাও । ওমন অপয়া মেয়ে যার ঘরে যাইবে তার জীবনডা শেষ করে দিবো” !!
একপ্রকার ছুঁয়ে ফেললো ফোনটা । টুং টুং দুইবার আওয়াজ করে থেমে গেল । কিছুক্ষণ শূন্য আকাশের দিকে তাকিয়ে রুমে এলো সে।
বুঝতে অসুবিধা হলো না ,, চাচীর এমন কষ্টদায়ক কথা শুনে অন্যমনষ্ক হয়ে গিয়েছিল মেহের ।তার ফলস্রুতিতে এক্সিডেন্ট হয়েছে। রুমে মেহেরের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে এগিয়ে গেল সে। একটানে কপাল থেকে ওয়ান টাইম খুলে ফেললো। দাঁতে দাঁত চেপে খিঁচে চোখ বন্ধ করে আবার স্বাভাবিক হলো মেহের।রিসেন্টলি খোলার কারণে ব্যাথাটা একটু বেশি পেয়েছে। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে পিঠ দেখিয়ে শুয়ে পড়লো নিবিড়।।বিরবির করে বললো…
— “শুধু পড়ে রক্ত বের হলে কেন? সাতদিন কথা বলতে না পারলেও আমি ডাক্তারকে ফোন করবো না।যা গিয়ে চাচীকে ফোন কর।চাচী এসে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে ,,সোনা মোনা বলে নিজের হাতে খাইয়ে দিবে”।।
__________________
নিভু নিভু চোখ খুলে তাকালো মেহের ।মাথাটা ভারী হয়ে আছে।ক্ষতস্থান টা প্রচন্ড জ্বলছে । উঠে বসতে নিলেই থেমে গেল সে। নিজের পেটের কারো গভীর স্পর্শ অনুভব করলো।সেখান টায় প্রচন্ড জ্বলছে ।জামার ফাক দিয়ে শক্ত হাতে নিবিড় মেহের কে চেপে ধরে আছে । আজ প্রথম নয় অনেকবার নিবিড় মেহের কে স্পর্শ করছে।তবে আজকের ছোয়াটা একদম অন্যরকম। প্রথমবার নিবিড়ের ছোঁয়াতে আঘাত অনুভব করল সে। কাঁপা কাঁপা হাতে নিবিড়ের হাত সরিয়ে দিয়ে গেলে নড়েচড়ে নিবিড় সোজা মেহেরের উপর উঠে গেল ।মুখ ডুবিয়ে দিলো মেহেরের গলায়। চোখ বড় বড় হয়ে গেল মেহেরের। অন্যরকম শিহরিত হলো সে। শক্ত করে বেড শিট চেপে চোখ বন্ধ করে নিলো। বিরবির করে বললো..
— “ছা-ছাড়ুন আমা-কে” !!
ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো । কানের কাছে মুখ এনে স্লো কন্ঠে বলল…
— ”কেন ?? কেন ছাড়বো তোমাকে ?? তুমি তো আমার বিয়ে করা বউ । কতো ঘটনার পর বিয়ে করেছি”!!(ঘুমের ঘোরে নিবিড়)
— “কারণ আপনার স্পর্শে আমার অস্বস্তি বোধ হচ্ছে।প্লীজ ছাড়ুন”!!
চোখ মেলে মেহেরের দিকে তাকালো নিবিড়।মেহেরকে ছেড়ে একদম কর্ণারে সরে এলো ।চোখ বন্ধ করে মলিন সুরে বলল…
–” সরি । আমি জানতাম না ,,আমার ছোঁয়া এতোটা খারাপ । আমার স্পর্শে তোমার অস্বস্তি বোধ হয় ।নাহলে কখনো তোমার এতোটা কাছে যেতাম না। বলে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ”।
চলবে..🎀🎀