#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৪
মেহের এক ধ্যানে তাকিয়ে তাকিয়ে আছে বকুল ফুলের গাছটার দিকে । গাছটায় ফুলে ফুলে ভর্তি। কিন্তু নিচে একটাও ফুল নেই।যেগুলো আছে মাটির ফাঁকে অর্ধেক অংশ ঢোকা। উপায় না পেয়ে এগিয়ে গেল গাছটার নিচে। অর্ধ বকুল ফুল গুলো কুড়িয়ে নিজের ওরনার ফাঁকে নিয়ে নিলো। অতঃপর পুকুরের দিকে এগিয়ে গেল। সিঁড়িতে পা রেখে দুহাতে ফুলগুলো থেকে ভালোভাবে মাটি ছাড়িয়ে নিল । হাতের মাঝে বন্দী করে উঠে আসতে নিলে শক্তপোক্ত পুরুষের সাথে ধাক্কা লেগে পড়ে যেত নিল । হাত দিয়ে তার শার্টের চেপে ধরলো ।ভয়ে ভয়ে উপরের দিকে তাকাতে নিবিড়ের হাসৌজ্জ্বল মুখটা ভেসে উঠলো। এক মুহুর্তের মধ্যেই সবটা রাগ উধাও হয়ে গেল । বেশ কিছুক্ষন পর নিবিড়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিল। ফুলের কথা মাথায় আসতেই পানির দিকে তাকালো । ফুলগুলো পানিতে ভাসছে। কত কষ্ট করে ফুলগুলো ধুলো দূর করলো।সব কষ্ট যেন বিফলে গেল । মুখ কালো করে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে রইল।
নিবিড় বাহুতে হাত রেখে মেহেরকে পুকুরের দিকে ঘুড়িয়ে নিল।কানের কাছে মুখ নিয়ে স্লো কন্ঠে বলল…
— “একবার ভালোভাবে পুকুরের পানির দিকে তাকাও ।দেখ বকুল ফুল গুলো কতো সুন্দর লাগছে”।।
গভীর দৃষ্টি দিয়ে ফুলগুলোর দিকে তাকাতেই মন ভালো হয়ে গেল তার।আকাশের চাঁদের প্রতিচ্ছবি পানির ভেতরে ফুটে উঠেছে।একদম বকুল ফুলের মাঝ বরাবর। পানির ভেতরে কমলা রং দেখা যাচ্ছে।তার উপর সাদা রং বেশ মানিয়েছে।মুখ ফুটে নিজের অজান্তেই বলে উঠলো..– “খুব সুন্দর”!!
— “হ্যা খুব সুন্দর” !!
–” কিন্তু আমার বকুল ফুলগুলো তো হারিয়ে গেল”।।(মন খারাপ করে মেহের)
বাহু থেকে হাত সরিয়ে নিল নিবিড় ।পকেটে রাখা সতেজ ফুলগুলো তুলে মেহেরের হাতের ভাজে বন্দী করে দিল । নিজের হাতে ফুলের অস্তিত্ব পেয়ে মুখের কোণে হাসি ফুটে উঠল মেহেরের।খুশীতে পায়ের পাতা উঁচু করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল নিবিড়ের গালে । নিবিড় নিজের গালে স্পর্শ করে আঙুলের ডগায় নিজের ঠোঁট ছুয়ালো।।
— “তাহলে আমার ধারণাই ঠিক ।মাঝরাতে নিজেদের চাহিদা মেটাতে পুকুর পাড়ে এসেছ?? যাতে কেউ তোমাদের না দেখে।।বাট ইউস আইডিয়া ইস এভসুলেটলি রং। সেই তো আমি জেগেই গেলাম”।।
তনুর ঝাঁঝালো কষ্ঠস্বর শুনে ফিরে তাকালো মেহের নিবিড়। তনুকে দেখে চরম বিরক্ত হলো নিবিড়।ভয়ে নেতিয়ে গেল মেহের।গ্ৰামের মানুষগুলোকে খুব ভালো করে চেনে সে। তীল করে তাল করা এদের অভ্যাস । কিন্তু নিবিড়ের তাতে কিছু যায় আসে না ।সে তৃক্ষ্ম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল…
— “যখন জানোই আমরা নিজেদের চাহিদা মেটাতে এতো রাতে এখানে এসেছি ,, তাহলে তুমি এসেছ কেন?? আমাদের সঙ্গি হতে “??
— “হা হা হা !! আমি কেন তোমাদের সঙ্গি হতে আসবো ? আমি কি মেহেরের মতো নষ্টা মেয়ে নাকি? যে নিজের শরীর দিয়ে অন্যকে হাত করবো” ?
ধর্যের বাঁধ ভেঙে গেল নিবিড়ের । এতোক্ষণ নিবিড়কে খারাপ বলেছে ,,সেটা সে বিনা শর্তে মেনে নিয়েছে। কিন্তু মেহের কে দেওয়া উপাধি সে মেনে নিতে পারলো । অজান্তেই নিজের গায়ের সব শক্তি দিয়ে তনুর গালে চড় বসিয়ে দিল।দাঁতে দাঁত চেপে বলল…
— “মেহের নষ্টা মেয়ে নয় ? নষ্টা মেয়ে তুমি ! যে যেমন বাকিদের তেমনই ভাবে”!
চলো মেহের !!
হাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল নিবিড়। গালে হাত দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সংযত করছে তনু!
–“খুব ভালো করেছ ,আমাকে মেরে ।এইসবের মূল্য দিতে হবে তোমার প্রাণের মেহেরকে ।জাস্ট ওয়েট এন্ড ওয়াচ”!
_______________________
— “এই মেয়ে তোর কোনো শিক্ষা দিক্ষা নেই নাকি ?? আমাদের বাড়িতে আগে ছেলেরা খাবে তারপর মেয়েরা ।আর তুই ছেলেদের খাওয়ার আগেই খেতে বসে গেলি”??( রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে তনুর দাদী )
তনুর দাদীকে দেখে মাথা নিচু করে উঠে দাড়ালো মেহের ।সবে ১.০৫ বাজে ।দুপুরের রান্না চলছে । তনুর কথায় মন খারাপ করে ঘরে বসে ছিল। কাল সারাদিন + সকালে ব্রেক ফাস্ট না করাতে শরীরটা বড্ড খারাপ লাগছিল মেহেরের।তাই সবার আগে খেতে বসেছে ।যদি বুঝতে এই বাড়ির কোনো নিয়ম আছে তাহলে ভুলেও তা লঙ্গন করতো না।
নিম্ন স্বরে বলল..
— “খুব ক্ষুধা লেগেছিল দাদি । সকালে কিছু খাইনি তো তাই”।
তিনি কিছুক্ষণ মেহেরের খাবারের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বললেন..
— “এই সামান্য খাবার খেলে তোর পেট ভরে যাবে। ভরবে না। তুই ইচ্ছে করে আমাদের বাড়ির নিয়ম ভেঙ্গেছিস। বাড়ির মেয়ের বিয়েতে কাজের লোক নিয়ে এসেছে ??যদি এই বাড়িতে বিয়ে না হতো।তাহলে ধাক্কা মেরে তোকে এই বাড়ি থেকে বের করে দিতাম। এই বাড়িতে তোদের মতো মানুষের জায়গা হয়না।।যে বাড়ির লোকরা এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন ।সেই বাড়ির মেয়ে কেমন আল্লাহ মালুক। আমি তো বিয়ে দিতেই বারণ করেছিলাম”।
ছলছল করে উঠলো মেহেরের চোখ । জীবনের অনেক কথা শুনেছে ।এমন কথা কখনো শুনেনি।প্রতি মুহূর্ত অপমানিত হতে হচ্ছে। নিবিড় বড়দের সাথে বিয়ের হিসেবে বসেছে।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে নিজেদের গন্তব্যে ফিরে যেতে চাইছে তার পরিবার।। কথাগুলো শুনে পেট ভরে গেছে মেহেরের ।হাত ধুয়ে উঠে যেতে নিলে আটকে দিলেন তিনি।।কাঠ কাঠ গলায় বললেন…
— “এই বাড়িতে কেউ অন্ন নষ্ট করে না ।তাই তুইও তার দুর্সাহস দেখাস না ।চুপচাপ খাবারগুলো শেষ করে তবেই উঠবি ।নাহলে এই বাড়িতে আমি তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ছাড়ব “।।
কথাগুলো বলে হনহন করে চলে গেলেন তিনি। করুন চোখে খাবারের দিকে তাকিয়ে তুচ্ছ হাসলো মেহের ।আজ এই দিনটাও তার দেখতে হলো ।সেদিন জীবনের ইতি টানলে আজ এমন দিন তাকে দেখতে হতো না।
…….
প্লেটে পানি পড়তেই চোখ তুলে তাকালো মেহের ।তনু ইনোসেন্স ফেইস করে তার পাশে বসে আছে। তবুও কিছু বললো না ।নত সুরে খেতে লাগল।
মেহেরের ডোন্ট কেয়ার ভাব দেখে গা জ্বলে যাচ্ছে তনু। পেস্ট করে রাখা গোল মরিচ গুঁড়ো মেহেরের প্লেটে ঢেলে দিল। তবুও প্রতিবাদ করলো না মেহের। কথা বাড়ালে তনু হয়তো আরো অনেক কিছু করবে। তাছাড়া এই খাবারগুলো যে করেই হোক তাকে শেষ করতেই হবে।
— “এইয়া কিতা করতাসেন আপামনি ?? এতোগুলান ঝাল তো মাইয়াডা খাইতে পারবো না”। (টেবিল সাজাতে সাজাতে ফুলি)
— “ও একবারো তোরে বলছে ,,খেতে পারবে না ।তাহলে তুই এতো পাকনামি করছিস কেন??
কাজের লোকের প্রতি কাজের লোকের প্রতি দয়া । যা নিজের কাজ কর”!!
ফুলি ভেংচি কেটে জগ নিয়ে বেরিয়ে গেল। বেরিয়ে যেতেই মুখ খুললো তনু..
— “সকালে আমাকে অপমান করেছিলিস ,, নিবিড় কে দিয়ে চড় মারিয়েছিস ।।এটা হচ্ছে তার ট্রাইলার ।এখনো পুরো সিনেমা দেখানো বাকি আছে।
যদি নিজের ভালো চাস ,, এখান থেকে চলে যা।আমি আবারো বলছি,,চলে যা।”।
মেহের তনুর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পূর্ণরায় খাবারে মন দিল।খাবারের শেষ লোকমা মুখে পুড়ে গ্লাসের পানি ঢেলে হাত ধুয়ে নিল।প্লেটটাকে একটু দূরে সরিয়ে হাত বাজ করে টেবিলের উপর রাখলো।হাতের উপর মাথা ঠেকিয়ে শ্বাস নিচ্ছে । ঝালে হাত পা কাঁপছে।কান দিয়ে যেন ধোঁয়া উঠছে । চোখ ঠোঁট লাল হয়ে গেছে।
কাঁধে হাত রাখলে মাথা তুলে তাকালো মেহের ।নিশি এসেছে। প্রীজে থাকা সাদা মিষ্টি টা নিঃশব্দে মেহেরের মুখে পুড়ে দিয়ে পাশে বসলো সে। করুন সুরে বলল..
— “যা হওয়ার তা হয়ে গেছে।ভুলে যাও।ভাইয়াকে কিছু জানিও না।তাহলে সমস্যা বাড়বে বৈ কমবে না।(কিছুক্ষণ পর আবার)
যদি পারো তনুর কথা মেনে নিও” ।।
মলিন হাসলো মেহের ।চোখে অশ্রু আর মুখে লোক দেখানো হাসি । রুমের দিকে পা বাড়ালো সে। যাওয়ার আগে মৃদু কন্ঠে বলে গেল…
–” আমি ওতোটা স্বার্থপর নই যে ,, নিজে সুখী হতে পারি নি বলে অন্যকে সুখী হতে দিবো না।ডোন্ট ওয়ারি,, শুধু তোমার ভাই কেন?? কেউ জানবে না”।।
চলবে…🎀🎀
#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৫
চারদিকে ভোরের আলো ফুটেছে । সূর্যের দেখা এখনো মেলেনি। মাঝে মাঝে পাখির কলকল ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এই সুন্দর পরিবেশ একমাত্র গ্ৰামীন জীবনেই সম্ভব।আরমোরা ভেঙ্গে উঠে বসলো মেহের ।এমন পরিবেশ সে অনেকদিন আগে নিত্তদিনই উপভোগ করতো।এখন আর করা হয়না।।
শরীর ঢাকা কাঁথাটা একটানে খুলে ফেললো সে। তার পাশে আরামসে ঘুমিয়ে আছে ফুলি নামক কাজের মেয়েটি। এখন সে এই মেয়েটির সাথেই ঘুমায়। এগিয়ে গিয়ে শুকনো বকুল ফুলের উপর হাত ছুয়ালো। ফুলগুলো অনেকটা শুকিয়ে এসেছে। কাল রাতে সে ভেবে নিয়েছে এই বাড়িতে আর থাকবে না।ফিরে যাবে নিজের গ্ৰামে ।এখানে থেকে অপরিচিত মানুষের কথা শুনার চেয়ে চাচী অত্যচার সহ্য করা অনেক ভালো।।
ফুলগুলোকে ওরনাটায় পেঁচিয়ে শব্দহীন পায়ে বেরিয়ে এলো সে। দরজার কাছে এসে চারদিকে ভালোভাবে দেখে নিল সে। দারোয়ান চাচা নেই ,,হয়তো ভোর হওয়াতে নিজের বাড়িতে চলে গেছে ।শান্তির নিঃশ্বাস নিয়ে বেরিয়ে এলো সে।
গ্ৰামীন মাটির রাস্তার ভেতর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে সে। আসে পাশে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।তবে মিনিট দশেক পরেই দেখা মিলবে সবার ।কারণ গ্ৰামের মানুষরা যেমন সবার আগে ঘুম থেকে উঠে।। তেমনি সবার আগে ঘুমের অতলে তলিয়ে যায়।
কিছুক্ষণ ক্লান্ত মনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতেই রাস্তা আগলে দাঁড়ালো কেউ।জুতো বিহীন ফর্সা পা দুটো তার নজরে এলো। মুখের দিকে তাকালো না মেহের । নিজের মতো পাশ কাটিয়ে যাওয়ার জন্য উদ্দেগ হলে হঠাৎ হাত টেনে দাঁড়া করিয়ে দিলো তাকে ।ঘাড় বাঁকিয়ে অচেনা মানুষটার দিকে তাকালো মেহের। ভয়ে আতকে উঠলো সে।তার সামনে নিবিড় দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দুটো রক্তিম বর্ণ ধারণ করেছে। যে চোখে চোখ রাখার মত সাহস খুঁজে পাচ্ছেনা।স্তব্ধ হয়ে চোখ সরিয়ে নিল সে। বেশ কিছুক্ষণের নীরবতা বিরাজ করলো।কেউ কারো সাথে কথা বললো না। দুহাত বুকে গুজে ভ্রু কুঁচকে বলল…
— “কি হলো যাচ্ছ না কেন?? আমিও তোমার সাথে যাবো নিয়ে চলো”!!
নিবিড়ের শান্ত কন্ঠে ঘাবড়ে গেল মেহের । বুঝতে অসুবিধা হলো না ,কোনো ঝড় আসতে চলেছে।জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল..
— “আসলে আমি …
বাক্য সে করতে পারল না মেহের । ধমকে উঠলো নিবিড়..
— “আসলে তুমি কি…!! সাহস কি করে হলো আমাকে না জানিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছ?? তুমি পালিয়ে গিয়ে সবার সামনে আমাকে ছোট করতে চাইছ ?? তোমার পেছনে আমি অনেক টাকা খরচ করেছি ।এই ধর,, তোমার জন্য শপিং করা ,, খাওয়া দাওয়া।।আমার সব টাকা দিয়ে তারপর যেখানে ইচ্ছা চলে যাও ।।টাকা দাও…
ধমকে কেঁপে উঠলো মেহের ।আমতা আমতা করে বলল..
— “আমি টাকা পাবো কোথায়”??
— “সেটা যাওয়ার আগেই ভাবা উচিত ছিলো। যতদিন পর্যন্ত আমার টাকা ফিরিয়ে দিতে না পারছ,, ততদিন আমার কথা মতো চলবে ।।যাওয়ার জন্য এক পা ফেলেছ তো পা ভেঙ্গে বসিয়ে রাখবো ।
চলো এবার”।।
নিবিড় মেহেরের হাত চেপে ধরে বড় বড় পা ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।নিবিড়ের পায়ের সাথে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না মেহের । যার ফলশ্রুতিতে,, বারবার হাতে টান পড়ছে তার। তবুও বাক্য উচ্চারণ না করে নিবিড়ের সাথে সাথে এগিয়ে গেল সে ।
_________________
— “কি খাবে নান রুটি না-কি পরোটা ?? তাড়াতাড়ি বলো সময় নেই”।
তখন মেহের কে নিয়ে সোজা গ্ৰামীন হোটেলে চলে এসেছে নিবিড়।
— “আমার পেট ভরা ।এতো সকালে কিছু খেতে পারবো না”।।
— “না খেলে টাকা দাও আমার..!!(হাত বাড়িয়ে দিয়ে নিবিড়)
— “কিছু খেলে সেই টাকা টাও তো আপনি হিসেব করে রাখবেন! এখন এই টাকা দিতে পারছিনা পরে এর থেকে বেশী দিবো কিভাবে “।(গাল হাত দিয়ে মেহের)
বিরক্তিকর একটা ভাজ ফুটে উঠলো নিবিড়ের কপালে। হাত দিয়ে মেহেরের গালে থাকা হাতটা সরিয়ে দিল। সাথে সাথে থুতনিটা গিয়ে বাড়ি খেল টেবিলের সাথে । তর্জনী দিয়ে আলতোভাবে থুতনিটা ঘসতে লাগলো সে।ভ্রু কুঁচকে ইশারায় জিজ্ঞাসা করলো””কি খাবে””।
ঠোঁট প্রসারিত করে সংক্ষেপে উত্তর দিলো” পরোটা”। যা স্পষ্ট ভাবে শোনা গেল না। ঠোঁটের উচ্চারণের ভঙ্গিতে তা বোঝার বুঝে নিল সে।ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে চেয়ারে পা তুলে বসে রইল ।।
মিনিট দশেক পেরুবার আগেই খাবার টেবিলে পৌঁছে গেল । নিবিড় নিজের মতো খেতে লাগলো। আসেপাশে মেহের নামের কেউ আছে ,,সেটা যেন বেমালুম ভুলে গেছে নিবিড়।মেহেরের ইচ্ছে করছে নিজের চুলগুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে । নিবিড়ের টিকি টাও ছুঁতেও পারবে না তাই।আপাতত নিজের ভেতরের ইচ্ছে টাকে দমন করে পরোটা ছেঁড়ায় মন দিল। দুহাতে দুটো চামচ নিয়ে মাঝখান দিয়ে ছেড়ার চেষ্টা করছে। মেহেরের এমন পাগলামী দেখে শব্দ করে হেঁসে দিলো নিবিড়।।হাসতে হাসতে বলল…
— “হা হা হা ।।লাইক সিরিয়াসলি, তুমি চামচ দিয়ে রুটি ছিঁড়ে খাবে।আজকে শেষ হবে তো” ??
— “তো কি করবো ।সবাই দেখলে হাসবে যে”??(মুখ কালো করে মেহের)
— “কে হাসবে !!( একটু ভেবে আবার) এই ফাঁকা চেয়ার টেবিল,, গ্লাস আর প্লেট গুলো।।নাকি আমি”।।
নিবিড়ের কথায় মুখ তুলে তাকালো মেহের। আসেপাশে সবগুলো চেয়ার টেবিল ফাঁকা। ভেতরে ভেতরে অস্বস্তিতে ফেটে পড়ছে সে। শুধু শুধু এতোক্ষণ বৃথা চেষ্টা করছিল।নিবিড় পরোটা ছিঁড়ে সবজি লাগিয়ে মেহেরের মুখে পুড়ে দিয়ে মৃদু কন্ঠে বললো..
— “নিশির সাথে তেমন কথা বলবে না। ইভেন্ট বিয়েতেও যাবে না। সারাক্ষন রুমের ভেতরে থাকবে । কিছু জিজ্ঞাসা করলে বলবে ,মাথা ব্যাথা করছিলো তাই যাও নি।। মনে থাকবে তো” ।।
শুধু মাথা নেড়ে সায় দিলো মেহের ।পূর্ণরায় খাবারে মন দিল নিবিড়।।
___________________
আজ নিশির হলুদ সন্ধ্যা।।মাঝখানে কেটে গেছে দুইদিন। এই দুদিনে মনের ভুলেও রুমের বাইরে পা রাখেনি মেহের। নিবিড়ের প্রতিটি কথা মেনে চলেছে।
নিশির সাথে টুকটাক কথা ছাড়া তেমন কোনো কথা হয়নি। একপ্রকার জোর করেই হলুদে আসতে রাজি করিয়েছে মেহের কে। মেহের হলুদ রঙের শাড়ি পড়ে তৈরি হয়েছে ।নিশির কথা রাখতে নিবিড়ের অগোচরে একবার নিশির গায়ে হলুদ ছুইয়ে দিয়ে চলে আসবে।
— “আপামনি আপনারে ভাইজান নদীর ধারে যাইতে কইছে। তিনি একটু আগে হেইহানে গেছেগা”।(রুমে ঢুকতে ঢুকতে ফুলি)
মেহের পাশে ফুলি দাঁড়িয়ে আছে ।আজ ফুলিও হলুদ শাড়ি পড়ছে ।দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে।আলতো হেসে নদীর তীরের দিকে এগিয়ে গেল সে। নিবিড় যেতে বলেছে মানে ,তাকে এখন সেদিকে যেতেই হবে।
নদীর পানিতে পা ডুবিয়ে বসে আছে মেহের ।জায়গাটা অনেকটা নির্জন। এবং ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঢাকা।নিবিড় আসতে বলেছে অথচ নিবিড়ের দেখাই পাওয়া যাচ্ছে না।বিরক্ত হলো মেহের । উঠে চলে আসতে নিলে নিবিড়ের কন্ঠস্বর ভেসে এলো।। নিবিড় ক্রমাগত মেহের মেহের বলে ডেকে চলেছে ।।ডাকতে ডাকতে একসময় মেহেরের খুব কাছে এসে দাঁড়াল।কোমরে হাত রেখে ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে বলল …
— “এতো রাতে এখানে কেন ডেকেছ?সবাই ফাংশনের কাজে ব্যস্ত ,,জরুরী কিছু বলার হলে বাড়িতেই তো বলতে পারতে ।খামখা এখানে কেন আসতে বললে”??
আকাশ থেকে পড়লো মেহের ।সে তো নিবিড়কে ডাকে নি বরংচ নিবিড় ফুলিকে দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছে।শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার।।তাহলে কি ভয়ংকর কিছু অপেক্ষা করছে তার জন্য!! শাড়ির আঁচল মুচরাতে মুচরাতে বলল..
–” আমি আপনাকে ডাকি নি ।।বরংচ আপনি আমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন । এখন কেন অস্বীকার করছেন”??
ভড়কে গেল নিবিড় ।সে মেহের কে ডাকেনি ।আর মেহের বলছে তাকে সে ডাকেনি।তাহলে তাদের এখানে ডাকলো টা কে??
চলবে…🎀🎀