এক মুঠো ভালোবাসা পর্ব-১২+১৩

0
1712

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১২

অজান্তেই নিবিড় ফোন বের করে পরপর কয়েকবার ছবি তুলে নিয়ে মেহেরের।সেদিকে আক্ষেপ নেই মেহেরের।সে শান্ত মনে দাঁত দিয়ে নখ কাটছে । অপেক্ষা করছে ওয়েটার কখন খাবার সার্ভ করবে। তনুর কয়েকজন ফ্রেন্ড,,তনু ,নিবিড়, নিশি, তৌফিক,,আর মেহের এসেছে। মিনিট পনেরোর মাথায় খাবার দিয়ে গেল । পলকহীন ভাবে খাবার গুলোর দিকে তাকিয়ে রইল।এতো এতো খাবার দেখে পেট ভরে গেছে তার। একপ্রকার খাবার খাবে না বলে জেদ ধরে বসে রইলো। কখনো খাওয়া হয়নি ,, যদি ভালো না লাগে।
সামান্য একটু ভুল হলেই সেটা নিয়ে সিনক্রেট করবে তনু। ইচ্ছে না থাকার সত্ত্বেও হাত বাড়িয়ে নুডুলসের প্লেটটা মেহের দিকে এগিয়ে দিয়ে স্লো কন্ঠে বললো..
— “এইটা খেয়ে নাও”।

কোনো প্রতি উত্তর না দিয়ে প্লেট থেকে চামচ তুলে নুডুলস খেতে লাগলো। কাঁটা চামচের ফাঁক দিয়ে নুডুলস গুলো বেরিয়ে যাচ্ছে।এই খাবারটা সে আরো একবার খেয়েছিল ।বিয়ের শপিং করতে যখন গিয়েছিল।তবে কোনো রেস্তোরাঁয় না ,, বাড়িতে পার্সেল করে এনেছিল।করুন চোখে কিছুক্ষণ তাকিয়ে। অতঃপর টুং টুং শব্দ করে হাত থেকে চামচটা প্লেটে রেখে দিল।
আড় চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো নিবিড়।পা দিয়ে চেয়ারটাকে নিজের দিকে ঘুড়িয়ে নিল।চামচটা হাতে তুলে , নুডুলস নিয়ে মেহেরের মুখে মুড়ে দিল। নিচের দিকে তাকিয়ে বলল…

— “ভালোভাবে দেখ আমি কিভাবে নুডুলসটা চামচে তুলি ,তুমিও সেমভাবে তুলে নিও। কেমন”।।

মেহের গভীর দৃষ্টি দিলো নিবিড়ের হাতের দিকে ।যেন এই কাজটাই তার কাছে সবচেয়ে
গুরুত্বপূর্ণ কাজ। নিবিড় নুডুলসের উপর চামচটা স্বল্প সময় ঘুড়িয়ে পেঁচিয়ে নিল ।পূর্ণরায় মেহেরের মুখে তুলে দিল। ওষ্ঠ যুগলের মাঝে চামচের হালকা ধাক্কায় কিছুটা থুতনিতে গড়িয়ে পড়লো ।হাত দিয়ে সরিয়ে ফেলতে নেওয়া আগেই নিবিড় তুলে নিজের মুখে পুড়ে নিল। ছলছল করে উঠলো মেহেরের চোখ । প্রথমবার কেউ তার এতো যত্ন করছে ।কার্ণিশ ঘেঁষে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লে , হাত তা ধরে নিল সে। মাথায় হাত রেখে অনুভূতি পূর্ন কন্ঠে বলল…
— “আমার স্পর্শে কি তুমি সামান্য পরিমাণে ব্যথিত হচ্ছো‌।তাহলে বলে দাও ,,আমি কখনো তোমাকে ব্যথিত হতে দিবো না।তবুও চোখের জল ফেলে না”।

ঠোঁট প্রশস্ত করে হাসলো মেহের। এই মানুষটার আশেপাশে থাকলে নিজেকে পূর্ণ মনে হয়।আর তিনি বলছে আমি ব্যথিত হচ্ছে।আমি কেন কোনো মেয়েই হবে না।এইসব ভেবে মাথা নিচু করে নিল সে।

চারদিকে মানুষের করতালিতে শব্দে ধ্যান ভাঙলো নিবিড়ের। তনু রক্তচক্ষু দিয়ে দুজনকে গিলে খাচ্ছে।দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সংযত করছে। কিন্তু বেশিক্ষন পারলো না। শব্দ করে উঠে দাড়ালো সে। চেঁচিয়ে বলল..

— “এই তাহলে আসল কারণ।আমি তো অন্যকিছু ভেবেছিলাম।আমার কালকেই ভাবা উচিত ছিলো। শুধু দরজায় নক না করে ভেতরে যাওয়ার জন্য কেন বকবে।
পাবলিক প্লেসে এইটা রাস্তার মেয়েকে খাইয়ে না দিলেও পারতে।যে যা কখনো চোখে দেখে নি ।তার সেটা না খাওয়াই স্রেও”।

মাথা তুলে তাকালো না মেহের ।অপমানে ভেতরটা ভেঙ্গে গেছে।কখনো তনুর মতো ভেবে দেখেনি সে। অবশ্য একবার ভেবে দেখা উচিত ছিল। নিজেকে আজ বড্ড বোঝা মনে হচ্ছে। নিবিড় মেহের দিকে তাকিয়ে কঠিন স্বরে বললো…

— “তোমাকে আমি কতোবার বলেছি , মেহের আমাদের বাড়ির কাজের লোক নয়। এতো গুলো কথা শুনালাম কিন্তু সত্যি কথা কি জানো,, কুকুরের লেজ জীবনেও সোজা হয়না।ইউর বিহেবিয়ার লাইক বি টাইল”।

— “হাউ ডেয়ার ইউ বাই টাইল।টাইল আমি না তুমি।কি জানো বলেছ ?? মেহের তোমাদের বাড়ির কাজের লোক নয় ।আই সি।ও তোমার আশ্রিতা।আর আশ্রিতা আশ্রয় দেওয়া মহৎ কাজ । কিন্তু তুমি তাকে খাইয়ে দিচ্ছো।তার মুখেরটা খাচ্ছ।লাইক সিরিয়াসলি..
আচ্ছা মেহের তোমার আশ্রিতা নাকি আশ্রিতা নামক রক্ষিতা ।কে হয় তোমার…

ঘৃনায় মুখ ফিরিয়ে নিল মেহের।লাইফে অনেক কিছু তাকে শুনতে হয়েছে। কিন্তু কখনো তার চরিত্র নিয়ে কিছু শুনতে হয়নি।কথা বলার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে। নিঃশব্দে দৌড়ে বেরিয়ে গেল সে।
নিবিড় কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল। একদিকে বোনের প্রতি ভালোবাসা অন্যদিকে মেহেরের প্রতি দায়িত্ববোধ।কোনোটাই অবহেলা করতে পারছে না সে।আঙুল তুলে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল ।পাশে মেহেরের অনুপস্থিত অনুভব করে বেরিয়ে এলো সে।

_________________
নদীর তীরে বসে আছে মেহের ।তার খুব নিকটে বসে ঘনঘন নিঃশ্বাস নিয়ে রাগ সংযত করার চেষ্টা করছে সে।তখন মেহেরকে নিয়ে সোজা নদীর পাড়ে চলে এসেছে। সূর্য অস্ত গিয়েছে বেশকিছু আগে । আকাশের রক্তিম আভাগুলো কিছুক্ষণের মধ্যেই বিদায় নিয়ে তারাদের দেখা মিলবে। ইতিমধ্যে চারদিকে অন্ধকারে অনেকটা ছেড়ে গেছে।
নিবিড় হাত সরিয়ে মেহেরের কোলে মাথা রাখল । তবুও কোনো‌ ভাবাবেগ হলো না মেহেরের । মেহের নিজের গ্ৰামে চলে যেতে চেয়েছে,, তাই নিয়ে ইচ্ছে মতো ঝেড়েছে নিবিড়। তনুর পুরো রাগ ঝেড়েছে মেহেরের উপর। বেশ কিছুক্ষণের নিরবতা ভেঙ্গে মুখ খুললো মেহের..

–” আচ্ছা আজ আমি আপনার দেওয়া লাল রঙের শাড়িটা পড়েছে। কাজলে নয়ন রাঙিয়েছি , লাল আভায় অধর সাজিয়েছি।কেমন লাগছে আমায় বললেন না তো”??

মাথা তুলে উঠে বসলো নিবিড়। কিছুক্ষণ মোহনীয় দৃষ্টিতে মেহেরের দিকে তাকিয়ে রইল।আজ সে নতুন একজন মেহের কে দেখেছে।যাকে বলে, রক্তিম রানি মেহের।এমন রুপে সব রাগ যেন উধাও হয়ে গেছে তার। আঁচলে ঢাকা হাত জোড়া বের করে কৌতূহলী হয়ে বলল..

— “চুড়ি গুলো কেন পড়োনি”??

নেতিয়ে গেল সে। চুড়িগুলো তার হাতের চেয়ে ছোট সাইজের হয়েছিল ।তাই চেষ্টা করেও পড়তে সক্ষম হয়নি।

— “চুড়িগুলো হাতের মুঠোয় যাচ্ছে না”।

— “কোথায় সেগুলো”।।

সংক্ষেপে উত্তর দিলো “গাড়িতে”।অপেক্ষা করলো না নিবিড়। দ্রুত পায়ে হেঁটে গাড়ির কাছে পৌঁছে গেল। গাড়ির ব্যাক সিট পড়ে আছে চুড়ির মুঠো গুলো।আলতো ভাবে কিছুক্ষণ এপিঠ ওপিঠ করে পর্যবেক্ষণ করে নিল।উপরের ঝিকিমিকি করা ছোট ছোট পাথর গুলো খসে পড়েছে। অর্থাৎ মেয়েটা চেষ্টা করেছে।

মেহেরের পাশে বসে হাত বাড়িয়ে দিল সে। মেহের কাঁপা কাঁপা হাতে নিবিড়ের হাতের করতলে নিজের হাতের করতল স্পর্শ করলো।একটা একটা করে স্বযত্নে চুড়িগোছা মেহেরের হাতে পড়িয়ে থামলো না নিবিড়।এক হাতের সাথে অন্যহাত মেশালো দুহাতের চুড়ির স্পর্শে ঝুনঝুন শব্দ নির্জন জায়গাটা শব্দের তালে ছেয়ে গেল।অনেক ধরনের চুড়ি পড়েছে সে , কিন্তু কখনো এমন শব্দ শুনে নি সে। দূরে গাছে ডালে বসে থাকা একজোড়া পাখি সায় দিলো তার মধুর কন্ঠে।মেহের চুড়িতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল..

— “এই ধরনের ম্যাজিকেল সাইন্ড আমি কখনো চুড়ির মাঝে শুনিনি ।এটা সত্যিই ম্যাজিকেল চুড়ি”।

ম্যাজিকেল শব্দঠি শুনে হাসলো নিবিড় । বলল..
— “এটা ম্যাজিকেল চুড়ি নয়‌। এই যে ছোট ছোট পাথর গুলো দেখছো ।এটা হচ্ছে একটি পাথরের সাথে অন্য পাথরের সংঘর্ষের আওয়াজ। যদি সবগুলো পাথর থাকতো তাহলে আরো সুন্দর আওয়াজ তৈরি করতো”।

মুখটা ছোট হয়ে গেল তাঁর ।যদি তখন বৃথা চেষ্টা না করতো তাহলে এখন সেই সুন্দর ধ্বংনিটা সে শুনতে পারতো।মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল..

— “কষ্ট পেও না ।এমন চুড়ি আমার নজরে এলে আমি আবার তোমাকে কিনে দিবো ।।কেমন”??

শ্বাস টানলো সে। নিজের হাতের বাজে নিবিড়ের হাত যুগল বন্দী করে ।চোখে চোখ রেখে বলল..

— “এতো কেন করছেন আমার জন্য?? কে আমি”??

অবাক হয়ে মেহেরের চোখের দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে রইল। সত্যিই তো কে মেয়েটা,, কেন তার কষ্টে বেশী ব্যথিত নিবিড় হয়।যার কোনো ভাষা তার কাছে নেই ।। সত্যি বলতে ‘” কে আমি শব্দটির মাঝে লুকিয়ে আছে হাজারো অধিকার ।। ভালোবাসা 💝

______ “কে আমি ”তিন শব্দের বচন হলেও
লুকিয়ে আছে হাজারও দায়িত্ব বোধ, অধিকার
যা বোঝার ক্ষমতা সবার হয় না।।✨

— ইফা 🌿

চলবে..🎀🎀

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১৩

দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ নিবিড়ের ক্লান্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে রইল মেহের। নিবিড় চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে। চুলের পানিতে বেডের কিছুটা অংশে ভিজে গেছে। চুলগুলো মুছেনি। পড়নে শুধু ব্ল্যাক রঙের একটা ট্রাউজার ।বুকের উপর বিন্দু বিন্দু পানির ফোঁটা জমে আছে। ফর্সা শরীরে পানি গুলো মুক্তার কণার মতো লাগছে‌। প্রথমবার নিবিড়কে এমন অবস্থায় দেখলো মেহের। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিম্ন দৃষ্টি দিল।হাত বাড়িয়ে নক করতে গিয়েও থেমে যাচ্ছে।ভেতরে ক্লান্ত নিবিড়কে বিরক্ত করতে চাইছে না। খাবারের প্লেট নিয়ে চলে আসার জন্য পা বাড়ালো। তৎক্ষণাৎ শোনা গেল নিবিড় স্বাভাবিক কষ্ঠস্বর..

— “দরজার বাইরে না দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে আছো”।

ছোট তুলে তাকালো মেহের । পূর্বের ভঙ্গিতে নিবিড় শুয়ে আছে‌। চোখ জোড়া আগের মতো বন্ধ।ভেতরে ঢুকে খাবারের প্লেটটা শব্দ হীন টেবিলের উপর রাখলো।যাতে নিবিড়ের ব্যাঘাত না ঘটে। টেবিলের উপর পড়ে থাকা জগটা সামান্য পরিমাণে কালকের পুরোনো পানি রয়েছে। সময় নিলো না ,, দ্রুত গতিতে নিচে নেমে এলো। জগের অর্ধেক অংশ পানিতে পূর্ন করে পূর্ণরায় নিবিড়ের রুমের দিকে ছুটল। পা বাড়িয়ে রুমে প্রবেশ করতে গেছে থেমে গেল সে। নিবিড় কাবার্ডের এপাশ ওপাশ খুঁজে লাল রঙের টি শার্ট বের করে গায়ে জড়িয়ে নিল। বেডে টান টান শুয়ে বলল..

— “একবার তো ভেতরে আসার পার্মিশন দিলাম।তাহলে বারবার একই কাজ কেন করছ? নেক্সাস টাইম থেকে বিনা পার্মিশনে আমার রুমে আসবে ।
এবার ভেতরে আসো”!

ভেতরে এসে প্লেটের পাশে জগটা রাখলো। হাত মুচড়ে ধিধাক্ত ভাব দূর করে বলল…

— “আমি আপনার রুমে এসেছি জানলেন কিভাবে”??

হা হা হাচ্ছু।। টাওয়াল দিয়ে নাক মুছে নিল সে। মেহেরের বাহুতে হাত রেখে টেনে বসিয়ে দিল।বলল..

— শুধু আমার উপস্থিতিতে কেন?? আমার অনুপস্থিতিতে তুমি কখন ,কি করো। আমার মন বলে দিতে পারে?? বিলিভ না হলে জিজ্ঞেস করতে পারো।।

দমে গেল মেহের ।এই মানুষটা বড়ই অদ্ভুত। যেমন অদ্ভুত তার চাল-চলন! তেমন অদ্ভুত তার কথা বার্তা।মেহেরের ধ্যান ভাঙল নিবিড়ের কথায় ।।

— “বাড়িটা এতো স্তব্ধ কেন ? কোথায় গেছে সবা”ই??

— “নিশি আপুর বিয়ের শপিং করতে গেছে! আজকে ফিরবে কিনা বলে যায়নি ।
বাড়িতে কেউ নেই ।তাই আমি আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি।খেয়ে নিন”।

কিছুক্ষণ গভীর দৃষ্টিতে মেহেরের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল নিবিড়। সারাদিনের কাজের চাপে মাথা ব্যাথা করছে তার । বলল..– “মাথা ব্যাথা করছে। খেতে ইচ্ছে করছে না‌। তুমি খাবার নিয়ে যাও।
আর গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ওরা কখন আসবে কিনা ঠিক নেই”!

গেল না মেহের বরংচ নিবিড়কে শোয়া থেকে টেনে তুললো। প্লেটটা নিবিড়ের বরাবর রাখল ।ঢাকা প্লটটা তুলে নিবিড়ের ধুয়ে দিল।বলল.. –” খেয়ে নিন‌।মাথা ব্যাথা সেড়ে যাবে”??

মেহেরের করুন মুখটার দিকে তাকিয়ে না করতে পারলো না নিবিড় । আস্তে আস্তে খাবার খেতে লাগলো।নিবিড়কে খেতে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল মেহের। নিজের ওরনাটার খানিকটা অংশ তুলে স্বযত্ন নিবিড়ের চুল মুছিয়ে দিতে লাগলো। নিবিড় খাওয়া অফ করে মেহেরের দিকে তাকিয়ে বাঁধা দিল তাকে‌। ভেজা মাথায় থাকলে ব্যাথাটা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে না। কিন্তু কোনো বাঁধা তোয়াক্কা করলো না মেহের।যে নিজের মতো কাজ করে যাচ্ছে।

শেষ লোকমা টা মুখে তুলে হাত ধুয়ে নিল নিবিড়। টাওয়ালে হাত দেওয়ার আগে মেহের ওরনাটা অপর প্রান্ত এগিয়ে দিলো। বলল..

— “একটু আগে টাওয়ালে নাকি মুছেছেন । এটায় হাত- মুখ মুছে নিন”।

সময় নিল না সে ।মেহেরের ওরনাটায় হাত ,মুখ মুছে থামলো সে। ড্রয়ার খুঁজে মাথা ব্যাথার মেডিসিন পেল না। বাধ্য হয়ে বালিশে মাথা হেলিয়ে শুয়ে পড়লো।

মেহের স্বল্প সময় নিয়ে বেড থেকে খাবারের প্লেটটা সরিয়ে রাখল ।যাতে বেডের উপর এটোপানি গুলো না পড়ে।লাফ দিয়ে বেডের উপর উঠে আসন দিয়ে বসলো। আলতো হাতে নিবিড়ের মাথাটা নিজের কোলে তুলে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
হাতের স্পর্শে নিবিড় চোখ খুলে তাকালো।মেহের নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে ছিল। বিধায় দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল।পূর্ণরায় আবার চোখ বন্ধ করে বলল..

— “এমনিতেই ব্যাথা সেড়ে যাবে । শুধু শুধু হাত ব্যাথা করার কি দরকার আছে”??

— “আপনার একটু কাছে থাকতে পারলে আমার হাত ব্যাথা হয়না ।বরংচ আমি শান্তি পাই ।আপনি কেন বুঝতে পারেন না??( মনে মনে মেহের)
আসলে আপনারা তো কাল বাদে পরশুদিন গ্ৰামে চলে যাচ্ছেন?? যদি ব্যাথাটা না কমে তাহলে বিয়েতে ইনজয় করবেন কীভাবে”??

— “চলে যাবো মানে?? তুমি যাবে না”??

“না” সংক্ষেপে উত্তর দিলো মেহের।কেউ আর কিছু বললো না।যে যার নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে উঠলো।।।

______________
ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করতে করতে নয়টা আঠারো মিনিটে পৌঁছেছে। সারাদিন জার্নি করে রাতে গিয়ে পৌঁছাবে।জার্নি করার জন্য দিনটাই বেস্ট সময় কারণ রাতের বেলায় পৌঁছে একটু নিরিবিলিতে বিশ্রাম নেওয়া যায়।। বড়দের গাড়ি আগে বেরিয়ে গেছে। ছোটদের টা বড়দের অনুসরণ করে এগিয়ে যাবে।
ডোর খুলে ভেতরে আসতে নিলে সেটে গেল মেহের। নিবিড় একটু চেপে মেহেরের জন্য খানিকটা জায়গা করে দিয়েছে ‌। অবশ্য মেহের যেতে চাইনি ।নিবিড় জোর করে রাজি করিয়েছে।
মেহের উঠে বসে আংশিক শব্দে গাড়ির ডোর টেনে লাগিয়ে দিলো। দু’জনের মাঝে একটা সিটের দূরত্ব। মেহের গাড়িতে উঠতেই তৌফিক গাড়ি ড্রাইভে মন দিল। মিনিট পনের পেরুতে না পেরুতেই মেহেরের মাথাটা চারপাশ নিয়ে ঘুরতে লাগলো। এইজন্যই সে আসতে চায়নি। মাথায় হাত দিয়ে সিটে গা হেলিয়ে দিল।বমি বমি ভাব আসছে।

বোতলের ছিপি খুলে মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিল নিবিড়। দুটো মেডিসিন প্যাকেট থেকে ছাড়িয়ে সেটাও হাতে তুলে দিল সে। স্লো কন্ঠে বলল..– “খেয়ে নাও মিনিট দশেকের ভেতরেই ঠিক হয়ে যাবে” ??

মুখে দিল না মেহের ।ট্যাবলেট দুটো এপিঠ ওপিঠ করে পর্যবেক্ষণ করে বলল..

–” কিসের মেডিসিন”??

বিরক্তিকর ভাব ফুটে উঠলো নিবিড়ের মাঝে। যাকে বলে চরম বিরক্ত।হাত থেকে ট্যাবলেট দুটো নিয়ে বলল..

— “মেডিসিন খাইয়ে তোমাকে মেরে ফেললো । তারপর নদীতে ফেলে দিয়ে যাবো ”।।

মুখ ছোট করে ফেললো মেহের।সে শুধু জানতে চেয়েছিল কিসের মেডিসিন।তার পরিবর্তে একগাদা বচন শুনিয়েছে দিল।নিবিড়ের হাতের বাজ থেকে ট্যাবলেট দুটো নিয়ে বিনা শর্তে খেয়ে নিল।

প্রায় মিনিট দশেক পর চোখজোড়া ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে এলো তার ।হাজার চেষ্টা করেও খুলে রাখতে পারছে না ।গাড়ির কাঁচ নামিয়ে পর পর কয়েকবার পানির ছিটা দিল। কিন্তু কোনো উন্নতি হলো না বরংচ মনে হচ্ছে কাঁচের ফাঁক দিয়ে ঘুমিয়ে নিচে পড়ে যাবে।হাই তুলে সিটে মাথা রাখতেই ,, হাত মেলে দিল নিবিড়।ছোট স্বরে বলল..

— “আসো” ।।

এক মুহুর্ত অপেক্ষা করলো না মেহের। দুহাতে নিবিড়কে শক্ত করে জরিয়ে বিড়াল ছানার মতো গুটিয়ে গেল নিবিড়ের বুকমাঝারে। মৃদু হাসলো নিবিড়। ক্লান্তির হাত থেকে বাঁচাতে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে দিয়েছে মেহেরকে। মেহেরের নিস্তেজ হাতটা নিজের হাতের বাজে বন্দী করে শব্দ করে অধর ছুয়ে দিল সে।

–” তুমি কি বোঝ না,, আমার মনের না বলা জমিয়ে রাখা কথাগুলো ।যদি সত্যিই বুঝতে না পারো ।অবুঝ মনটাকে জিজ্ঞাসা করো । দেখবে সে তোমায় বলে দেবে,, ভালোবাসার কথাগুলি প্রিয় 💓”!!

__________________
রাত তখন তিনটা তেত্রিশ । গভীর তন্দ্রায় ব্যস্ত সবাই।চোখ মেলে তাকালো মেহের। চারদিকে ঘন অন্ধকার। মাথার উপর ফ্যান চলছে।তবে দেখা যাচ্ছে না।। স্বশব্দে অনুভব করা যাচ্ছে।অন্ধকারের মাঝে টিনের বেড়া গুলো জ্বলজ্বল করছে ।কপার কুঁচকে এলো তার।তাহলে কি গ্ৰামে পৌঁছে গেছে। তখনকার কথা মনে পড়তেই নিজের উপর বিরক্ত হলো সে।কখনো এতো গভীর ঘুম সে ঘুমায় না।তাহলে আজ তার কি হলো।ঘুমের রেশ এখনো কাটেনি তার । কিন্তু বকুল ফুলের সৌরভ তার নাকে এসে বাড়ি খাচ্ছে।এই ফুলটা তার সবচেয়ে প্রিয় ফুল। অনেকদিন হয়েছে এই ফুলগুলো ছুঁয়ে দেখা হয়না।। বেড থেকে ধীরে ধীরে নেমে গেল সে। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেল উঠানের দিকে

চলবে..🎀🎀

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে