এক মুঠো ভালোবাসা পর্ব-১০+১১

0
1794

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১০

— “মিঠাই সিরিয়ালে যে উচ্চে বাবুকে দেখতে পারছ না।সেই উচ্চে বাবুর যময ভাই হচ্ছে ,, আমার ভাই নিবিড়। সারাদিন শুধু চোখ রাঙায়”।।(গালে হাত দিয়ে সিরিয়াল দেখছে ।।আর মেহেরকে উদ্দেশ্য করে বলছে)

মেহের কিছুক্ষন সিরিয়ালের সিদ্ধার্থের দিকে তাকিয়ে নিবিড়ের দিকে তাকালো।কোথাও একটা অদ্ভুত মিল আছে দুজনের মাঝে। কিন্তু এক্সজেকলি কোথায় মিল আছে বুঝতে পারছে না।। অবশেষে মেলাতে সক্ষম হলো ।ক্ষনেক্ষনে সিদ্ধার্থের কপাল কুঁচকানোর সাথে নিবিড়ের সামঞ্জস্য রয়েছে।।গালে হাত দিয়ে মৃদু হাসলো সে। আবার সিরিয়াল দেখায় মন দিল। একপ্রকার বাধ্য হয়ে এখানে বসে আছে সে ।নিশি সিরিয়াল দেখাতে নিয়ে এসেছে। মুখের উপর না করতে পারে নি।
স্বশব্দে টেবিলের উপর গ্লাস রাখলো নিবিড়। সবাইকে জানাই দিচ্ছে নিবিড় এসেছে।। সবাই চোখের পলক নিবিড়ের দিকে দিল। অফিস থেকে আসেনি রুম থেকে বেরিয়েছে। আজকে অজানা নিমিত্তে অফিসে যেতে ইচ্ছে করেনি তার। কালকে অফ ডে।
নিশি – মেহেরের দিকে ক্ষূদ্ধ দৃষ্টিতে তাকালো সে।।মেহের সাথে সাথে চোখ নামিয়ে নিল । নিশি মেহেরের বাহু শক্ত করে ধরলো।। ঘনঘন চোখের পলক ফেলছে।।মনে হচ্ছে বিড়াল মাছ চুরি করতে এসে ধরা পড়েছে। নিবিড় না থাকলে এতোক্ষণে হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে পড়তো মেহের ।। কিন্তু তা কোনো মতে সম্ভব নয়।দাঁতে দাঁত চেপে হাসি আটকানো বৃথা চেষ্টা করছে সে।রিং টোনের আওয়াজে ধ্যান ভাঙল সবার। নিশি স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল।। হাত দিয়ে মুখ আড়াল করে নিম্ন সুরে বললো…

–” ভাইয়া ফোন বাজছে । কোনো দরকারী ফোন হতে পারে। রিসিভ কর!”!

প্রথমে রিসিভ করার চেষ্টা করলো না সে।বাজতে বাজতে কেটে গেলো।পূর্ণরায় ফোন বাজতেই কপালের কোণে বিরক্তিকর একটা ভাব ফুটে উঠলো নিবিড়ের। এগিয়ে গিয়ে ল্যান্ডফোন রিসিভ করলে ,ভেসে এলো এক অতি পরিচিত গলা ।ওপাশ থেকে শোনা গেল মৃদু করুন সুর। ক্রমাগত বলছে..

— “বুবু আইজকা আমি তোমাগো বাসাতে যাইতে পারুম না। হঠাৎ কইরা জুঁইয়ের বাবা অসুস্থ হইয়া পড়ছে।মাথা পানি দিবার পর এহন একটু ভালো আছে।কহন আবার অসুস্থ হইয়া যায় তা তো কহন যায় না।আমি কাইলা ঠিক সময়ে চইলা যামু”।।

–” এখন কেমন আছে চাচাজান “??(কৌতূহল নিয়ে নিবিড়)

— “এহন অনেক ভালা আছে বাবা?? তোমরা আইজকার দিনডা একটু সামলাইয়া লও ।আমি কাইল থেকে আর কামাই করমু না”।।

একটু বলতেই ওপাশের লাইনটা কেটে গেল। নিবিড় ফোনটা রেখে কিছুক্ষণ আনমনে ভাবলো। এগিয়ে যেতে যেতে বললো…

— “আজকে জয়ীতা চাচী আসতে পারবে না। হঠাৎ করে চাচাজান অসুস্থ হয়ে পড়েছে।
এবার দুজনে গিয়ে রান্নার কাজে লেগে পড়”।।

গত তেরো‌ বছর ধরে এই বাড়িতে কাজ করে চলেছে জয়ীতা । সব কাজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে । তার স্বামীর অসুস্থতা ছাড়া কোনোদিন কামাই করেনি।।
রিমোট টা হাতে নিয়ে চ্যালেন চেঞ্জ করতে লাগলো নিবিড়।‌ পরপর কয়টা চ্যানেল চেঞ্জ করার পর আটকে গেল ক্রিকেট খেলার চ্যানেলে।চরম উদাসীন হলো নিশি।। সারাদিন পর একটু সিরিয়াল দেখবে ,, সব ভেস্তে গেল।। করুন সুরে বলল..

— “ভাইয়া আর একটা পর্ব আছে।প্লীজ দে…!!!

নিবিড় চোখ গরম করে তাকাতেই চুপসে গেল নিশি। পাঁচের মতো মুখ করে বসে রইল।। ইতিমধ্যে নাজমা কিচেনে চলে গেছে।চাল ধুয়ে চুলায় বসিয়ে দিল। গ্যাসের চুলা অন‌ করে লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দিল।মিনিট পাঁচেক পেরুবার আগেই আগুন নিভু নিভু জ্বলছে। একটু পর ধপ করে নিভে গেল। করুন চোখে চুলার দিকে তাকিয়ে পূর্ণরায় লাইটার দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো ।। কিন্তু আগুন জ্বললো না। বোঝার বাকি রইল না ,, সিলিন্ডারের গ্যাস শেষ হয়ে গেছে।গতকাল জয়ীতা গ্যাস শেষ হয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল । কিন্তু সিরিয়ালে আসক্তিতে কথাটা বেমালুম ভুলে গেছে।চোখ গিয়ে আটকে গেল নিচে রাখা মাটির চুলায়।উপর থেকে সামান্য পরিমাণে কালচে ছাই ,, আর চুলার চারদিকে কালি দেখা যাচ্ছে।।গতমাসে ৫ দিন গ্যাস ছিল না তখন জয়ীতা মাটির চুলায় রান্না করেছিল।
দ্রুত পায়ে কিচেন ত্যাগ করলেন তিনি । ডাইনিং গোছাতে গোছাতে বললেন…

–” সিলিন্ডারের গ্যাস নেই ,, ফুরিয়ে গেছে।।। মাটির চুলায় রান্না করলে আমার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়।। তারচেয়ে অনলাইনে খাবারের অডার দে “।।

— “বাইরের খাবার খেলে তুমি অসুস্থ হয়ে পড় তো”।

” আর কোনো উপায় নেই”।। সংক্ষেপে উত্তর দিয়ে থামলেন তিনি।। এতোক্ষণ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে মেহের ।।কম বেশী মাটির চুলায় রান্না করেছে সে।আজ মানুষটা না খেয়ে থাকবে ,, এটা হতে দেবে না মেহের।উঠে দাঁড়ালো মেহের।। — “আন্টি আমি দেখছি” !!!
শরীরের পেঁচানো ওরনাটা ভালোভাবে কোমরে পেঁচিয়ে কিচেনের দিকে ছুটলো সে। চারদিকে পর্যবেক্ষণ করে কাঠ ,,ডাল পালা তার নজরে এলো না। অপেক্ষা না করে বাগানের দিকে পা বাড়ালো।। বাগানের আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ছোট ছোট কাঠের টুকরো একত্রিত করলো ।।বুকে হাত দিয়ে তৃপ্তিকর দম ছাড়লো। বেশী না পাড়ুক অন্তত নাজমার জন্য খাবার তো বানাতে পারবে। কাঠ গুলো তুলতে গেলে বাঁধলো আরেক বিপত্তি।একটা তুলছে আরেকটা হাতের ফাঁক দিয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছে।। অসন্তুষ্ট হয়ে কাঠহীন কিচেনে ফিরলো সে। উদ্দেশ্য কোনো কিছু সাহায্য নেওয়া। ছাঁকনি হাতে নিয়ে বের হওয়ার আগেই কিছু পরে যাওয়ার আওয়াজ অনুভব করলো সে।পেছনে তাকাতেই নিবিড়ের হাস্যেজ্জ্বল মুখটা ভেসে উঠলো। নিবিড় কাঠগুলো নিয়ে এসেছে। শব্দহীন তৃপ্তিকর হাসলো মেহের। এই মানুষটা কিছু বলার আগেই ম্যাজিক করে বুঝে যায়।
নিবিড় এগিয়ে গিয়ে তাকের উপর বসে পড়ল।অনেক কষ্ট হয়েছে কাঠগুলো তুলে আনতে । কিন্তু মেহেরের মুখের হাসির সাথে সাথে সব কষ্টগুলো বিদায় নিয়েছে।

____________________
আলু কাটছে মেহের । উচ্চে আর বেগুন কাটা হয়ে গেছে।লবন দিয়ে সেগুলো ভিজিয়ে রেখেছে। আজকে রাতের খাবার হবে আলু দিয়ে উচ্চে ভাজি ,, বেগুন ফ্রাই ,, ইলিশ মাছ ফ্রাই ।। নিবিড় উনুনে কাঠ দিচ্ছে।আজ সে যে করেই হোক রান্না শিখেই ছাড়বে। ইতিমধ্যে বত্রিশ বার আগুন নিভিয়ে ফেলেছে আর মেহের ফুঁ দিয়ে ধরিয়ে দিয়েছে। ভাত রান্না হয়ে গেছে ।নিবিড় এখন ইলিশ মাছ ফ্রাই করছে। দু হাত দূর থেকে ইলিশ মাছ গুলো‌ ক্রমাগত নাড়াচাড়া করেই চলেছে ।একটাও আর আস্তো মাছ নেই আলু ভর্তা হয়ে গেছে।

মেহের করুন‌ চোখে ইলিশ মাছ গুলো দিকে তাকিয়ে একটা বাটিতে তুলে রাখলো। ভিজিয়ে রাখা বেগুনে মশলা মাখিয়ে ফ্রাই প্যানে বসিয়ে ঢেকে দিল। নিবিড় ঢাকনা সরিয়ে নিজের মতো নাড়তে লাগল। বিমুখ হলো মেহের ।না নিজে সরছে ,, না মেহেরের কথা শুনছে।।
পূর্ণরায় আগুন নিভে গেল।এভাবে আর মেহেরকে ডাকলো না । একটু ঝুঁকে নিবিড় ছাইয়ের উপর ফুঁ দিল ।বিধায় স্বল্প ছাই নিবিড়ের চোখে ।দুহাতে চোখ ঢলছে আর বলছে ….

— “মেহের আমার চোখ।।আমি আর জীবনেও চোখে দেখতে পারবো না।তোমাকে দেখতে পারবো না”।

তট জলদি কাছে এলো মেহের ।নিবিড়ের গালে হাত রেখে চোখে ফুঁ দিলো।। চোখজোড়া লালচে হয়ে গেছে।নিজের বাহুতে ভড় করে নিবিড়কে বেসিনের সামনে দাঁড় করিয়ে চোখে পানি দিতে লাগলো।।নিবিড়ের কথা থামছে না সে চেচিয়েই যাচ্ছে।।তার চেঁচানো শুরু নিশি আর নাজমা কিচেনে চলে এসেছে।।
সবকিছু জানতে পেতে নিঃস্পৃহ হলেন নাজমা ।।কাঠ কাঠ গলায় বললেন…

— “নিবিড় কিচেন থেকে যা।কাজের কাজ কোনোটাই হচ্ছে না,, শুধু অকাজে ভরিয়ে রেখেছিস।।যা….!!

— “আহহহ মা…।।। এমন করছো কেন ?? আমি অলরেডি দুই আইটেমের খাবার বানিয়ে ফেলেছি ।।
আরেক আইটেম আছে ।।ওটা হলেই চলে যাবো “।(ভাব নিয়ে নিবিড়)😎😎

— “আরেকবার আয় তুই উনুনের কাছে ।।খুন্ডি গরম করে যদি তোর পিঠে আমি না লাগিয়েছি ।।তাহলে আমার নাম মেহের নাম😡😡”(অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে মেহের)

চলবে…🎀🎀

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::১১

— “আরেকবার আয় তুই উনুনের কাছে।।খুন্তি গরম করে যদি তোর পিঠে আমি না লাগিয়েছি ।তাহলে আমার নাম মেহের না” ।।(অগ্নদৃষ্টি দিয়ে মেহের)

মেহের এমন লাগামহীন কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো নিবিড় ।যে মেয়েটা এতোদিন পর্যন্ত তাকে আপনি বলে সম্মোধন করতো । আজ সেই রমনী তাকে তুমি রেখে ডিরেক্ট তুই বলে ডাকছে।। মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই ড্রয়িং রুম থেকে শোনা গেল কয়েকজন মানুষের কথা বলার আওয়াজ। বিরামহীন ভাবে নিবিড় আর নিশি বলে ডেকে চলেছে।। অপেক্ষা না করে সেদিকে ছুটল সবাই। মেহের কৌতূহল নিয়ে একবার সেদিকে থেকে দৃষ্টি সরিয়ে উনুনের উপর দিল। নিভু নিভু তাপে বেগুন ফ্রাই কয়লা হয়ে গেছে।।তট জলদি প্যান টা নামিয়ে উচ্চে বসিয়ে দিল।

__________________

তৌফিক এসেছে তার পরিবার সমেত ।বাবা মা ছোট বোন তনুকে নিয়ে।তনুকে দেখে চরম বিরক্ত হলো নিবিড়। মেয়েটার চাল চলন ,, কথাবার্তা,,ব্যবহার কোনোটাই নিবিড়ের পছন্দ নয়।কেমন একটা ছিপকে
থাকে তার সাথে ।।এক কথায় চুইগামের আঠার মতো।আসার পর থেকে নিবিড়ের পেছনে পরে আছে ।খাবার টেবিলে বসেও শান্তি নেই।তার পাশের সিটটা বিনা বাধায় দখল করে আছে।। বোনের ননদ বলে কিছু বলতে পারছে না। চুপচাপ খাবারের দিকে মন দিল।।

টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে স্বযত্নে খাবার পরিবেশন করছে মেহের । তৌফিকের পরিবার আসাতে অনলাইনে খাবার অর্ডার দিয়েছে নিশি।গ্লাসে পানি ঢেলে তনুর দিকে এগিয়ে দিলে বাঁধল আরেক বিপত্তি।নিবিড়ের হাতের সাথে ধাক্কা লেগে সবটা পানি তনুর জামা।
নিজের শরীরে পানি পড়াতে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো তনু।আগে পিছনে কিছু না ভেবেই চড় বসিয়ে দিল মেহেরের গালে। নিজের কাজের জন্য অনুতপ্ত মেহের । বুঝতে পারেনি তনু এমন কিছু করবে। গালে হাত রেখে মাথা নিচু করে রইল মেহের। গর্জে উঠলো তনু…

— “যে কাজটা ভালোভাবে করতে পারিস না।কেন সেটা করতে আসিস। আমাদের বাড়ির কাজের লোক হলে মারতে মারতে বাড়িতে থেকে বের করে দিতাম। ইচ্ছে করছে তোরে…

রাগে চোখজোড়া বন্ধ করে নিল তনু। কাজের লোক শব্দটা শুনে কেমন অদ্ভুত অনুভুতির সম্মুখীন হলো সে। সকলের দৃষ্টির অগোচরে আড় চোখে একবার নিবিড়ের দেখলো। অপরাধী কন্ঠে বললো…– “সরি ,, আমি দেখতে পাই নি”।।

নিবিড় কিছু বলার আগেই বাহু চেপে থামিয়ে দিল নিশি।করুন চোখে ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো সে। থেমে থেমে নিবিড়। রাগ সংযত করতে টেবিলের উপর থাকা কাঁচা চামচটা চেপে ধরলো । আংশিক শব্দে কাঁটা চামচটা দু খন্ডে পরিনত হলো।সবাই নিবিড়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করলো। বিনা বাক্যেয় খাবারের টেবিলে ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো সে। চপল পায়ে হেঁটে রুমে চলে গেল।

নিবিড়ের ভঙ্গিমা বুঝতে অসুবিধা হলো না নাজমার।তিনি মেহেরের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন..

— “মেহের যাও,খাবারটা নিবিড়ের রুমে পৌঁছে দাও।নিবিড়ের খাওয়া শেষ হলেই নিচে নামবে এর আগে নয়”।।

আজ নাজমা কন্ঠস্বর আগের মতো মনে হয়নি মেহেরের কাছে।। একদম আলাদা ।যেন মেহের কে আদেশ করছেন।মেহের মাথা নেড়ে সম্মতি দিল।নিবিড়ের খাবার সাজিয়ে পা বাড়ানোর আগেই শোনা গেল তনুর কন্ঠ..– “আমার খাবারটাও সাজিয়ে নিবিড়ের রুমে নিয়ে আয়”।।
কথা শেষ না করেই নিবিড়ের রুমের দিকে ছুটল সে‌ ।।মেহের নিবিড়ের খাবারটা পাশে রেখে তনুর খাবার সাজিয়ে নিল।।দুজনের খাবার নিয়ে উপরে পা বাড়ালো।।

পরপর দুইবার নক করার পর ভেতরে ঢুকার পারমিশন দিল নিবিড়।খাবার ট্রে টা টেবিলের রেখে বের হওয়ার আগেই হাত ধরে থামিয়ে দিল নিবিড়।তৃক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলল..

— “আমি তোমাকে একবারও বলেছি খাবার নিয়ে আসতে।।নাকি বলেছি আমার রুমটাকে রেস্তোরাঁ বানাতে ।।স্পিক আউট ” ( চেঁচিয়ে বললো নিবিড়)

ছলছল চোখে তাকালো মেহের।বেশিক্ষন তাকিয়ে থাকার ক্ষমতা হলো না ‌।নিবিড়ের চোখ দিয়ে যেন আগুন বের হচ্ছে। নিবিড় শান্তকন্ঠে বললো…

— “এই মেয়ে তোমাকে এতোক্ষণ আমি কি বললাম শুনতে পাও নি ।।বেরিয়ে যাও বলছি।আর নেক্সাস টাইম আমার রুমে ঢোকার আগে পার্মিশন নিয়ে তবে ঢুকবে ।নাও আউট” ।

এক মুহুর্তের জন্য বেমালুম তনুর কথা ভুলেই গিয়েছিল মেহের। তনুর রাগি ফেসটা দেখে মেহেরের প্রচন্ড হাসি পাচ্ছে। এতোটুকু বুঝতে পারছে ,এখানে সামান্য একটা ছোট খাটো ভূমিকম্প হয়েছিলো।।তনুর হনহন করে চলে গেল।এবার আর হাসি থামাতে পারলো না মেহের । শব্দ করে হেঁসে দিলো।। পরক্ষনেই আবার ভয়ে চুপসে গেল।

নিবিড়ের নয়নজোড়া আটকে আছে মেহের মাঝে। প্রথমবার মেয়েটাকে সে প্রান খোলা হাসতে দেখছে।সব রাগ উধাও হয়ে একরাশ ভালোলাগা এসে ভর করলো তার ভেতরে । আলতোভাবে হাতটা ছেড়ে দিয়ে গালে হাত রাখলো।এই মেয়েটার প্রতি শুধু নিবিড়ের অধিকার।সে মারবে ,,বকবে,আদর করবে ,, ভালোবাসবে ।কেউ কেন এই মেয়েটাকে কষ্ট দেবে।। নিজের অজান্তেই গালে অধর ছুয়ে দিল নিবিড়।
এতোক্ষণ স্তব্ধ ছিলো মেহের , এবার আর পারল না।শরীরটা তার মৃদু কাঁপছে। হাত দিয়ে পড়নের ওরনাটাকে খামচে ধরে পরম আবেশে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিল।।

।মেহের রুমের জিনিস পত্র পূর্বের ন্যায় গুছিয়ে রাখছে। নিবিড় তনুর উপরের রাগ রুমটার উপর ঝেড়েছে। এই রুমে সে একবার নিশির জোড়াজুড়িতে এসেছিল।তবে নিবিড়ের অনুপস্থিতে। রুমটার কোন জিনিসটা কোথা থাকবে সেটা এক দেখাতেই মুখস্ত তার। নিবিড় খাবার শেষে প্লেটে পানি ঢেলে হাত ধুয়ে নিল।একগ্লাস পানি পান করে তৃপ্তিকর ঢেকুর তুললো। এগিয়ে গিয়ে মেহের ঝুলন্ত ওরনাটায় হাত মুখ ভালোভাবে মুছে নিল। হঠাৎ ওরনাটায় টান অনুভব করে পেছনে ফিরলো সে। নিবিড় কে নিজের কাছে দেখে দুকদম পিছিয়ে গেল মেহের।ওরনাটা খসে পড়ে যেতে নিলে ,বুকে হাত রেখে সামলে নিল। লজ্জায় মাথা তুলতে পারছে না ।নিবিড় এখনো মেহেরের ওরনাটা ধরে আছে । এগিয়ে গিয়ে মেহেরের কাঁধে জরিয়ে দিল। আংশিক শব্দে ধ্যান ভাঙল তার।নিবিড় কাবার্ড থেকে একটা প্যাকেট এনে মেহেরের হাতে ধরিয়ে দিলো।। মেহের কৌতূহলী চোখে হাতে নিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল..– “কিসের প্যাকেট এটা” ।

— “নিজেই খুলে দেখ “।।

হালকা ফাঁক করে চোখ বুলিয়ে নিল প্যাকেটের ভিতর।খুশীতে আত্মহারা হয়ে নিবিড়ের গলার জরিয়ে ধরলো। উৎফুল্ল কন্ঠে বলল..–” থ্যাংকিউ ।।থ্যাংকিউ সো মাচ”।
নিবিড় মৃদু হেসে হাত রাখলো মেহেরের পিঠে।

তোমার এই মধুর হাসিটা দেখার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি প্রিয়।।

________ মুখোশের আড়ালে আমার জন্য লুকিয়ে আছে অসীম ভালোবাসা 💝💝

যা তুমি আমাকে বুঝতে না দিলেও
আমি সেটা অনুভব করতে পারি ✨

— ইফা 🌿

________________
— “আ’ম সরি মেহের ।তখন তোমার জন্য কিছু করতে পারলাম না। তাই বলে তুমি আমাদের সাথে যাবে না।এটা হতে পারে না”।(মেহেরের হাত ধরে নিশি)

— “নিশু আপু বিশ্বাস করো ,,আমি তোমার উপর বিন্দু পরিমাণ রেগে নেই ।দেখ এখানে শুধু তোমরা – তোমরা যাচ্ছ ।আমি কাজের লোক গিয়ে কি করবে। তারচেয়ে বরং যখন তোমরা ফিরে আসবে ।সবটা আমাকে বলো ,তাহলেই তো হলো”।(মেকী হাসি দিয়ে মেহের)

নিশি বুঝতে পারল কালকে তনুর কথাটা মেহেরের গায়ে লেগেছে।

— “এখানে কাজের লোকের ব্যাপার না মেহের। তুমি আমাদের বাড়িতে আসার পর থেকে কোথাও বের হয়নি ।তাই আজ তুমি আমাদের সাথে যাবে ব্যস ।।রেডি হও।সবাই অপেক্ষা করছে “।

বলেই দ্রুত পায়ে রুম প্রস্থান করলো নিশি।তৌফিক তার বোনের পাগল।। সামান্য কারণে যদি বিয়েটা ভেঙ্গে দে, তাহলে সেই কষ্ট সহ্য করতে পারবে না নিশি।তাই তো নিবিড়কে থামিয়ে দিলো সে।
ক্লান্ত চোখে নিশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে প্যাকেট টা বের করলো মেহের ।কালকে রাতে এই প্যাকেট নিবিড় তাকে দিয়েছে। শপিং মলে দেখা সেই লাল শাড়িটা ।সাথে দুমুঠো লাল রঙের চুড়ি,, হালকা লাল রঙের লিপস্টিক,,কালো কাজল । শাড়িটার উপর হাত বুলিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।আজ এই শাড়িটা পড়বে সে।

মোটা করে কাজল, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর লাল শাড়িতে তৈরি মেহের। শতচেষ্টা করেও চুড়িজোড়া হাতে ঢুকাতে ব্যর্থ হলো সে। চুড়িজোড়া হাতে নিয়ে বেরিয়ে এলো সে।।

চলবে..🎀🎀

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে