এক মুঠো ভালোবাসা পর্ব-০৬

0
1746

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৬

মেহেরের চুলের পানি টপটপ করে নিবিড়ের মুখে পড়ছে। কিন্তু সেদিকে তার খেয়াল নেই। সে ব্যস্ত মনে মেহের কে দেখছে। এই প্রথমবার মেহের কে ভেজা অবস্থায় এতোটা কাছ থেকে দেখছে।মেহের নিবিড়ের শার্ট চেপে ধরে আছে। দু’জনের চোখের দৃষ্টি দুজনের চোখের মাঝে সীমাবদ্ধ হয়ে আছে। চোখের মাঝে জমে আছে হাজারও না বলা কথা ,, কিন্তু মুখে কথা নেই। বেশকিছুক্ষণ সময় ওভাবে স্থীর হয়ে রইলো।আস্তে আস্তে হুশে ফিরলো মেহেরের । পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য চোখ নামিয়ে বললো…

–” দেখেছেন আমি যার জীবনে যাই, তার জীবনটাই কষ্টে করে দেই। আপনাকেও ফেলে দিলাম।হম্ম ,হম্ম”।(কান্নার ভঙ্গি করে মেহের)

এতোক্ষণ নিবিড়ের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করছিলো ।মেহেরের মুখে এমন কথা শুনে ভালো লাগা উবে গেল।মেয়েটা উদ্ভর কথা ছাড়া কিছু জানে না।ইংরেজিতে কথা বলতে পারে আবার কুসংস্কার কে বিশ্বাস করে।মেহেরের বাহুতে হাত রেখে সরাতে সারাতে বললো….

— “আর একবার যদি উদ্ভর কথাবার্তা শুনি কিংবা নাকে কান্না করেছো তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না ।মাইন্ড ইট ।।
উঠো এবার …!!

— “মেহের তোমার জন্য খাবার এনে..!! আমি কিছু দেখি নি। সত্যি বলছি!!( চোখে হাত দিয়ে নিশি)
যা করার দরজা লক করে করবি তো ।এটা তো আমার রুম” ।

সবে মেহেরের জন্য খাবার নিয়ে নিজের রুমে ফিরছিল নিশি।এসেই দুজনকে এমন পরিস্থিতিতে দেখে ঘাবড়ে গেল সে। নিশির এমন গা জ্বালানি কথা বার্তা শুনে মেজার বিগড়ে গেলো নিবিড়ের। চেঁচিয়ে বললো…

–” নিশি কোনো সিরিয়ালের সুটিং চলছে না যে দরজা লক করে করবো। তাছাড়া যখন সিরিয়ালে এমন সিন চলে কই তখন তো তোকে চোখে হাত দিতে দেখি না।যত্তসব।কথা না বাড়িয়ে মেহেরকে টেনে তোল।আমার শরীর অলরেডি আলু ভর্তা হয়ে গেছে”।।

নিশি নিবিড়ের কথা শেষ করার অপেক্ষায় রইল না ।এগিয়ে গিয়ে মেহেরের দিকে হাত বাড়িয়ে দিল। মেহের নিশির হাত রাখ রেখে আস্তে আস্তে উঠার চেষ্টা করলো। উঠার বদলে নিশিকে নিয়ে ধপাস করে পড়ে গেল। নিশির এমনিতেই একটু মোটা। একদিকে মেহের তার উপর নিশি পড়াতে নিবিড়ের নাজেহাল অবস্থা।শরীরটা একদম চেপা লেগে গেছে। একপ্রকার ধাক্কা দিয়ে দুজনকে সরিয়ে উঠে বসলো‌ নিবিড়।বার কয়েক শ্বাস নিয়ে নিজেকে সামলে নিল সে।দম প্রায় বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়েছিল।নিশির দিকে তৃক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে কাঠ কাঠ গলায় বললো…

— “মটি একটা ।চালের বস্তা , ডালের বস্তা ।ড্রাম একটা । সারাদিন খেয়ে দেয়ে একটা শরীর বানিয়েছে। শুধু শরীরই ।কোনো কাজের না ।অন্যকে হেল্প করতে গেলে নিজেকে আবার আরেকজনের হেল্প করতে হয়।আজ থেকে তোর খাওয়া বন্ধ ।শরীরের ৩০ কেজি ওজন করবি।এক গ্ৰাম যদি বেশি হয় ,, সেগুলো চর্বি মনে করে চুড়ি দিয়ে কেটে দিবো”।

মন খারাপ করে ফেললো নিশি।আজ পর্যন্ত তার শরীর নিয়ে কেউ কখনো খোঁচা দেই নি। বরংচ যা খেতে চায় বলার সাথে সাথে হাজির করে দেয়।মেহেরের কোনো হুস নেই।সে ফ্লোরে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে।নিচ থেকে নিবিড়ের ধাক্কা উপর থেকে নিশির পড়ে যাওয়ার। মেয়েটার একদম নাজেহাল অবস্থা।
নিবিড় দুজনের দিকে তাকিয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেল। মিনিট দুয়েক পর পূর্ণরায় রুমে এলো।তবে ভেতরে ঢুকলো না।বাইরে দাঁড়িয়ে কর্কট কন্ঠ বলে গেল…– “চুলের পানি গুলো মুছে নাও ।।ঠান্ডা লেগে যাবে”। বলেই যেমন এসেছিল তেমন করে বেরিয়ে গেল।।

_________________
🎶🎶 আমার কাছে তুমি মানে সাত রাজার ধন
আমার কাছে তুমি মানে অন্যরকম ,,,
তোমার কাছে হয়তো বন্ধু আমি কিছু না…
তাই তোমার স্বপ্নে বন্ধু আমি আসি না।।।।
আমি মানে তুমি আর তুমি মানে আমি‌‌…
আমার কাছে আমার চেয়ে বন্ধু তুমি দামী 🎶🎶

🎶🎶আমার মনে বন্ধু তুমি,, আমার সবকিছু
তাই পাগলের মতো ছুটি তোমার পিছু ।।।
তোমার কাছে হয়তো বন্ধু আমি ভালো না‌…
তাই তো তোমার মনের ভেলায় ,,,আমি ভাসি না🎶🎶

আমার মনে…..

টেবিলের উপর পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নিজের মতো গান গেয়ে চলেছে নিবিড়।আজ কিছুতেই তা কাজে মন বসছে না। সারাদিন চোখ বন্ধ করে মেহেরের কথা ভেবেছে।ছোট একটা হাই তুলে আবার গান গাইতে শুরু করলো।
ক্রমাগত দরজার নক করছে তীব্র ।প্রচুর বিরক্ত সে।এখন তার যাওয়ার সময়,, তাই ফাইলগুলো দিতে এসেছিল । সেদিকে নিবিড়ের খেয়াল নেই।তীব্র আর দরজা নক করলো ,, বিনা পার্মিশনে ঢুকে গেল।শব্দ করে ফাইলগুলো টেবিলের উপর রাখলো।।ব্যাঘাত ঘটলো নিবিড়ের গানে। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলো সামনের চেয়ারে তীব্র বসে আছে। টেবিলের উপর থেকে পা নামিয়ে বললো..

— পার্মিশন নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলে না।

— পার্মিশন নেই নি তাই জন্য আন্তরিক ভাবে দুঃখিত স্যার।আপনার পার্মিশন নিতে হলে কখন বাড়ি যেতে পারবো তার হিসেব নেই।তাই বিনা পার্মিশনে ঢুকে পরেছি ।।(ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে তীব্র)

— কি বলতে চাইছো তুমি(কাঠ কাঠ গলায় নিবিড়)

— দশ মিনিট ধরে আপনার দরজায় নক করছিলাম স্যার ‌। কিন্তু আপনি সারা দিলেন না।আপনি তখন গানের প্রতিযোগিতায় নাম দিয়েছিলেন।তাই বাধ্য হয়ে ।

অপ্রস্তুত হয়ে পড়লো নিবিড় । সামনের চুলে হাত দিয়ে নির্বিকার ভাবে একবার সরি বললো।নিবিড়ের সরি কান পর্যন্ত পৌঁছালে সাথে সাথে মুখ খুললো তীব্র..
— স্যার একটা কথা বলবো??
মাথা নেড়ে সম্মতি দিল নিবিড়।।

— স্যার আপনি কি প্রেমে পড়েছেন??? আমার জানামতে কেউ প্রেমে পড়লে সে এমন বিহেব করে । সারাদিন প্রিয় মানুষটির কথা ভাবে ,, কিছুতে মন বসে না।আজ সকাল থেকে আপনাকে খেয়াল করছি ,, কেমন জানি একটা বিহেব করছেন।

গভীর ভাবে তীব্রের কথাগুলো ভাবছে নিবিড়। তীব্র চলে গেছে আধ ঘন্টা হয়ে গেছে। হঠাৎ ফোনের স্ক্রিনের দিকে চোখ যেতেই চোখ কপালে। এতোটা সময় কিভাবে চলে গেল।।

___আমি চিরনন্দীত ভাবে মায়ায় পড়েছি

তোমার ঐ মুচকি হাসির ,,

আমি যে আটকে গেছি

ভালোবাসার জালে

— ইফা 🌿
____________________
ড্রাইনিং টেবিলের বসে নিশির রুমে দিকে তাকিয়ে আছে নিবিড়।বাসায় এসেই তাড়াতাড়ি ড্রেস চেঞ্জ করে খাওয়ার অজুহাত দিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসে আছে। কিন্তু সামনে নাজমা আর নিশি ছাড়া কেউ নেই। কৌতূহল ভেঙ্গে বলে উঠলো,…

— মেহেরের অবস্থা কেমন ?? এখনো জ্বর আছে ।দেখছি না তো??

— বিকেলের দিকে জ্বর কমে গেছে ,, এখন পুরোপুরি ফিট আছে।। সারাদিন রুমের বাইরে বের হয়নি।

জ্বর কমেছে কথাটা শুনে দেখতে ইচ্ছে হলো নিবিড়ের ।জোরে জোরে চেঁচিয়ে মেহেরকে কয়েকবার ডাক দিতেই বেরিয়ে এলো রুম থেকে। কাছাকাছি আসতেই বসতে বললো সে।তবে বসলো না।নিশি খাবার বেড়ে এগিয়ে দিলো।মেহের মাথা নিচু করে খাবার নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালে থামিয়ে দিলো নিবিড়। বললো..

— তোমাকে আমি এই বাড়িতে এনেছি যাতে তুমি আর পাঁচজনের মতো স্বাভাবিক হতে পারো ,,অস্বাভাবিক নয়।তাই আজ থেকে সরি এখন থেকে। সবসময় আমাদের সাথে খাবে।। বসো..

সবার দিকে একবার কৌতূহলী চোখে তাকালো মেহের।তার টেবিলে বসাতে কারো কোনো সমস্যা হবে কিনা বুঝার চেষ্টা করছে সে।
মেহেরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে অসুবিধা হলো না নিবিড়ের ।চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেল সে।চেয়ারটা একটু পেছনে সরিয়ে দিয়ে ,, মেহেরকে টেনে বসিয়ে দিল। মৃদু হেসে বললো… — “এবার খাও “,, চেয়ারে বসে খাওয়াতে এতো সংকোচ করার কি আছে??

— আমি সবসময় ডাইনিং টেবিলে বসেই খাই। কিন্তু এটা তো আপনাদের বাড়ি তাই আর কি??(মাথা নিচু করে মেহের)

নিবিড় ক্লান্ত চোখে মেহেরের খাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে । সারাদিন পর মেহের কে দেখছে ।দেখা কেন জানি শেষ হতেই চাইছে না।অথচ আজ সারাদিন সে মেহেরের ভাবনায় বিভোর ছিল।।

চলবে…🎀🎀

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে