এক মুঠো ভালোবাসা পর্ব-০৪

0
1939

#এক_মুঠো_ভালোবাসা 💝
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব::০৪

— “দেখুন আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।।আপনি অহেতুক আমাকে জোর করতে পারেন না।আমি যার কাছে যাই তার জীবনটা শেষ করে দেই । আপনার সাথে গেলে শুধু আপনার না ,, আপনার পুরো পরিবারকে শেষ করে দিব।।প্লীজ আমাকে ছেড়ে দিন”!!(দুহাত জোর করে মেহের)

মেহেরের কথা শুনে মাথায় রাগ উঠে গেল নিবিড়ের ।মেহেরের ডান হাত টা শক্ত করে চেপে ধরে সামনের দিকে হাঁটা দিল।।নিবিড়ের হাঁটার সাথে মেহের তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না। কিন্তু সেদিকে আক্ষেপ নেই নিবিড়ের ।সে নির্বিকার ভাবে হেঁটে চলছে ।। কিছুক্ষণ পর হাঁটা থামিয়ে বলে উঠলো…

— “তোমাকে আমি কোয়ার্টারে থাকতে বারবার বুঝিয়েছি।তখন তোমার মনে ছিল না ।।এখন মাঝ রাস্তায় পাগলামি করছো। পাগলামি করে আর যাই করো ।।মনে রাখবে ,, এখন তোমাকে আমার সাথে যেতেই হবে।।আমিও দেখতে চাই , তুমি আমার সাথে গেলে আমার কি ক্ষতি হয়”।।

নিবিড়ের তুমি বলে সম্মোধনে বিন্দুমাত্র চমকালো না মেহের। দুপুর থেকেই তাকে তুমি বলে সম্বোধন করছে।। কিন্তু সমস্যা হলো অন্য জায়গায়।প্রায় মিনিট পাঁচেক পেরুবার আগেই বাস স্টপের জনগন এক হয়ে চারপাশ দিয়ে গিয়ে ধরলো নিবিড় মেহের কে। তাদের ধারণা নিবিড় জোর করে মেহের কে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।।ভয়ে নেতিয়ে গেল মেহের। প্রচন্ড বিরক্ত হচ্ছে নিবিড় ।একেই মেহেরকে নিয়ে যেতে তার সমস্যা হচ্ছে,, তার উপর এই মানুষগুলো।।

— “এ গ্ৰামে ঢুইকা, আবার আমাদের গ্ৰামের মাইয়ারে তুইল্যা নিয়ে যাও ।ভয় ডর কিছুই কি তোর নাই” ।(একজন পাবলিক)

— “একদম ঠিক কইছেন?? আইজকা এমন মাইর দিমু যে।এই গ্ৰামের মাইয়ার দিকে তাকান তো দূরে থাক ।আসার কথা ভাবলেও জ্বরে শরীর পুইরা যাইবো”।।

নিবিড় তৃক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে মেহেরের দিকে তাকালো।।মেহের ভুতুড়ে ঢোক গিলে ইশারায় সরি বলে থেমে গেল।। সাথে সাথে রাগটুকু গায়েব হয়ে গেল।। বললো..

–” দেখেন আপনাদের ভুল হচ্ছে,, ও আমার বিয়ে করা বউ। দেখতে পারছেন না ওর গায়ে বিয়ের শাড়ি”।।

নিবিড়ের কথা শুনে একবার তাকালো মেহেরের দিকে। এতোক্ষণ খেয়াল করে দেখে নি মেহেরকে। তবুও দমে গেল না,, বরংচ লোকগুলো আরো ভয়ংকর হয়ে উঠলো।নিবিড়ের কলার চেপে ধরলেন।। বললেন.. –“আমাদের বোকা পাইছোস। আমাদের গ্ৰামের মাইয়ার বিয়া ভাইঙ্গা তারে লইয়া যাবি।আর আমরা কিছুই কমু না। রহমান পুলিশকে ফোন কর”।।
কথাগুলো বলে নিবিড়কে মারার জন্য হাত বাড়ালো । হাত ধরে কোনোরকম আটকে দিল নিবিড়।।পকেট থেকে কার্ডটা বের করে এগিয়ে দিয়ে বললো..

— “পুলিশকে ফোন দেওয়া দরকার নেই।‌ আপনাদের সামনেই পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে”??

সাথে সাথে শার্টের কলার ছেড়ে দিয়ে আইডি প্রুভ দেখল। একে অপরের মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ইশারায় কথা বললো।। অতঃপর হালকা নিবিড়ের শার্ট ঝেড়ে দিয়ে বললেন….

— “সরি স্যার, গ্ৰামের মানুষ হিসেবে এটুকু করা আমাদের দায়িত্ব। আসলে ম্যাম এতো চিৎকার করছিলেন আমরা ভেবে নিয়েছিলাম আপনি ছেলে ধরা।তাই ..

— “আমি যদি ছেলে ধরা হতাম তাহলে ছেলে নিয়ে যেতাম ,,বউ না।বউয়ের সাথে একটু ঝগড়া হয়েছে ,, তাই এমন করেছে । আপনাদের ডিস্টার্ব করার জন্য দুঃখিত”।

সালাম দিয়ে এক প্রকার পালিয়ে গেলেন তারা। হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো নিবিড়।হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলো এখনো শক্ত করে মেহেরের হাতটা সে ধরে আছে। পরক্ষণেই ছেড়ে দিয়ে হনহন করে বাসের ভেতরে উঠে পড়লো। নিজের কাজের জন্য খারাপ লাগলো মেহেরের।এক বিন্দু অপেক্ষা না করে সেও ছুটে গেল নিবিড়ের পিছুপিছু।

____________________
জানালার পাশে বসে আছে নিবিড় ।বাসটায় এখনো একটা সিট ফাঁকা।। ছাড়তে বাকি আছে মাত্র তিন মিনিট । সন্ধ্যা সাতটার সময় বাস ছুটে চলবে তার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ফট করে নিবিড়ের পাশে এসে বসে‌‌ পড়লো মেহের ।নিবিড়ের মুখটা নিজের দিকে ঘুড়িয়ে চোখে চোখে রেখে বললো…

— “আ’ম সরি।আই রিয়েলি ক্যান নট আন্ডাসট্যান্ট লাইক এ বিগ মিস্টেক” ??

চমকে গেল নিবিড়।তার পাশে বসে থাকা গ্ৰামের মেয়েটা একটু আধটু ইংরেজিও বলতে পারে । তবুও কৌতূহল দেখালো না সে। আবার জানালার দিকে মুখ করে বসে রইলো।প্রায় মিনিট দুয়েক পর শোনা গেল অপরিচিত কন্ঠস্বর ..

— “এটা আমার সিট!! আপনি হয়তো ভুলে এই সিটে বসেছেন”।(মেহেরকে উদ্দেশ্য করে )

মুখ ঘুরিয়ে তাকালো নিবিড়। ইতিমধ্যে মেহের উঠে তাকে বসার জায়গা করে দিয়েছে।বাস কন্ডাক্টর এসে মেহেরের টিকেট দেখতে চাইলো। কিন্তু সে দেখাতে পারলো না।বিধায় তাকে নেমে যেতে বলা হলো।মেহের করুন চোখে নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে নেমে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো। পেছনে থেকে হাত টেনে ধরলো নিবিড়।।কন্ডাক্টরকে উদ্দেশ্য করে বললো…
— “ও আমার সাথে এসেছে।এই সিটে ও বসবে আর আমি দাড়িয়ে যাবো। প্রয়োজনে টিকেট সমপরিমাণ টাকা দিবো”
কন্ডাক্টর কিছুক্ষণ নিবিড়ের দিকে তাকিয়ে রইল।এই মুখটা তার অনেক পরিচিত । অবশেষে সে চিনতে সক্ষম হলো। কারন অনেকবার নিবিড় এই বাসে যাতায়াত করেছে। তিনি নিবিড়কে একটা সিটের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলেন । কিন্তু নিবিড় নাকোচ করে দিয়েছে।
অবশেষে অনেক জোর করে কন্ডাক্টরের জায়গায় তাকে বসার মতো জায়গা করে দিল।নিবিড়ের কথা মতো সামনের সিটটায় মেহেরের বসার জায়গা করে দিল।হেলান দেওয়ার মতো জায়গায় নেই ,, তিনজন বসাতে একটু কষ্ট হচ্ছে। তবু ম্যানেজ করে নিয়েছে নিবিড়। এইটুকু পেয়েছে তাতেই অনেক ।

______________
প্রথমবার বাসে উঠার কারণে মাথা ঘুরছে মেহেরের।শরীরটাও গরম হয়ে এসেছে। বুঝতে অসুবিধা হলো না বৃষ্টিতে ভেজার কারণে জ্বর আসতে চলেছে।বমি বমি ভাব আসছে।মাথা চেপে বমি ভাব কমানোর চেষ্টা করছে সে। সামান্য দূর থেকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছে নিবিড় ।।ঘন্টা পার হবার আগেই বাস আর থেমে গেল অচেনা একটা গ্ৰামে ।ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো নিবিড় মেহের।মেহেরকে বমি করে বলে চারদিকে তাকিয়ে দোকান খোজার চেষ্টা করলো।আবছা আবছা কিছুটা দূরে একটা দোকান নজরে এলো তার।।দুবোতল পানি আর কিছু মেডিসিন কিনে পূর্ণরায় মেহেরের কাছে ফিরে এলো সে।একটা বোতল নিচে রেখে অন্য বোতলের ছিপি খুলে এগিয়ে দিলো নিবিড়। চোখের সামনে পানির বোতল পেতে মুখ পরিষ্কার করে এক ঢোক খেয়ে নিল সে। এতোক্ষণ যেন পানির অপেক্ষাই করছিলো।

হাত ধরে মেহের কে টেনে তুললো নিবিড়।।নিবিড়ের কাঁধে মাথা হেলিয়ে দিয়ে করুন সুরে বললো…

— “আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। যতক্ষন বাসে থাকি মনে হয়,, মাথা ঘুরে এই বুঝি মরে গেলাম”।

— “জীবনে শুনেছো কখনো মাথা ঘুরলে মানুষ মরে যায়।। সামান্য মাথা ব্যাথা সহ্য করতে পারছো না।। আবার পানিতে ঝাঁপ দিয়ে মরতে গেছিলে ।যত্তসব”।।

নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ধপাধপা পা ফেলে সিটে বসে পড়লো মেহের ।। মেহেরেল কান্ড দেখে শব্দহীন হাসলো নিবিড় ।দেরী না করে সেও বাসে উঠে পড়লো। পূর্ণরায় বাস চলতে শুরু করলো।।
মেহেরে এমন করুন অবস্থা দেখে বড্ড মায়া হলো পাশের ছেলেটির।তিনি নিজের সিটটি নিবিড়ের সাথে পাল্টে নিলেন।।
সিটে বসতেই মেহেরের মাথাটা নিজের বুকে নিয়ে নিল সে। কিন্তু মেহের কিছুতেই মাথা রাখবে না ।। সাথে সাথে দিল এক ধমক। গুটিয়ে গেল মেহের।বিনা শর্তে মাথা রাখলো সে। বিরবির করে বললো…

–” নিজেই আমাকে বকবে আবার দরদ দেখাতে আসবে। ফাজিল লোকটা একটা”।।

মেহেরের কষ্ঠস্বর পৌছালো নিবিড়ের কানের কাছে।। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কানে কানে বললো..
— “মানুষ তাকেই বেশি বকে ,, যাকে সে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসে”।।

নিবিড়ের কথায় চোখ তুলে তাকালো মেহের ।আগে থেকেই নিবিড় ঘন চোখে মেহেরের দিকে তাকিয়ে ছিল।।বিধায় দু’জনের চোখাচোখি হয়ে গেল।।মেহেরের কানে বাজছে একটাই কথা।।”” মানুষ তাকেই বেশি বকে ,, যাকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে”

চলবে..🎀🎀

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে