Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"এক মুঠো প্রেম রঙ্গনাএক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা পর্ব-৪০ এবং শেষ পর্ব

#এক_মুঠো_প্রেম_রঙ্গনা
[২য় পরিচ্ছেদ]

৪০.[শেষাংশ]
নিদ্র গুণগুণিয়ে গান গাইছে এবং সিঁড়ি বেয়ে নামছে। তুষারের বিয়ে আগামী মাসে। এ নিয়ে তাঁর খুশির অন্ত নেই। সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় নিদ্র দেখলো লতিফা সিঁড়ি বেয়ে উঠছে। তাকে দেখে রেলিং ধরে চেঁচালো নিদ্র।
–“এই ফটকি বেগম এখানে কী?”
লতিফা চমকে উপরে তাকালো। নিদ্র সন্দিহান নজরে তাঁর দিকে চেয়ে আছে। লতিফা থতমত খেয়ে বলে,
–“তুমারে কমু ক্যা?”
–“আগেরবারের কথা মনে নেই? গোল কী এবারেও খাওয়ার ইচ্ছা আছে নাকি? মৌমাছির কামড় কেমন লাগে বলো তো?”
হতভম্ব চোখে লতিফা চাইলো নিদ্র’র দিকে। শুকনো ঢোঁক গিলে বলে,
–“ও দিয়া কি করবা?”
–“তোমার উপর ছেড়ে দিবো। চেহারা তোমার লাল করে দিবে কামড়ে হিহি!”
লতিফা বিষম খেলো। সাহস জুগিয়ে বললো,
–“মৌমাছি বুঝি এহানে পাইবা?”
–“দেখেছিলাম এক জায়গায়। মৌচাক সহ নিয়ে আসবো তোমার জন্যে।”
–“মানে কী!?”
–“মানে হচ্ছে এখনই কেটে পরো। ওইদিন নিদ্র ভাইয়ার কথা শুনোনি? তোমাকে আবার এ বাড়িতে দেখলে আমি সত্যি এক দলা মৌমাছি এনে তোমার উপর ছেড়ে দিবো!”
–“আমি কিন্তু বড়ো মেডামরে বিচার দিমু!”
–“বিচার দেয়ার আগেই তোমাকে মৌমাছির কামড় খাওয়াবো। জীবন খোয়াতে না চাইলে দ্রুত বের হও, নয়তো আমি এখনই চাক আনতে যাচ্ছি!”
লতিফা কী করবে বুঝে পেলো না। তবে এখানে থাকাটা এখন তাঁর জন্যে ভয়!ঙ্কর ব্যাপার। এই ছেলেকে বিশ্বাস নেই। তাই লতিফা উল্টো পথে হাঁটা ধরলো। নিদ্র পুণরায় গুণগুণিয়ে গান গাইতে গাইতে ইরা’দের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। কলিংবেল চাপতেই মৌসুমি খুলে দিলো। নিদ্রকে দেখে ভ্রু কুচকে বলে,
–“এই অসময়ে এখানে কী?”
–“আমার নৌরি ফুলের সাথে দেখা করতে এসেছি চাচী। দেখি সরে দাঁড়াও!”
–“তোমার আপু নেই!”
–“নেই মানে? কোথায় গেছে? কাল-ই তো ইরা’দ ভাইয়া আমার বাসা থেকে ফুলকে নিয়ে এসেছে।”
–“তোর নওরি আপু তাঁর বাবাকে দেখতে গিয়েছে। ফিরবে কিছুদিন পর। এখন তুই বিদায় হ! আমার মেলা কাজ আছে!”

———
নওরি সারা রাস্তা কেঁদেই চলেছে। ইরা’দ তাকে এক হাতের সাহায্যে নিজের হাতে জড়িয়ে রেখেছে। বারংবার নওরিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে।
–“নৌরি ফুল। কাঁদে না। আঙ্কেলের কিচ্ছু হবে না দেখিও!”
নওরির কান দিয়ে যেন কোনো কথা-ই ঢুকছে না। বারবার নিজেকে দোষারোপ করছে। কেন একটিবারের জন্যে বাবার খোঁজ নিলো না সে। কেন একবার সাহস জুগিয়ে কল করলো না? বাবার রাগের সম্মুখীন হতে চাইতো না বিধায় কখনো কল করেনি। কিন্তু বাবাকে প্রতিদিন মনে পরেছে তাঁর। আল্লাহ্’র দরবারে বাবার জন্যে দোয়া করেছে। কিন্তু এমন কেন হলো? এরকমটা তো হওয়ার কথা ছিলো না। বাবার খারাপ তো সে কোনোদিন চায়নি। নওরি কান্নারত অবস্থায় ইরা’দের উদ্দেশ্যে বললো,
–“আর কতদূর?”
–“তোমার শহরে সবে পৌঁছিয়েছি। আর কিছুটা লক্ষীটি। এত কেঁদো না।”

হসপিটালে একপ্রকার ছুটে এলো নওরি। চোখ-মুখ ফুলে আছে তাঁর। গাল এখনো ভেঁজা। হসপিটালে রিসিপশন থেকে কেবিন নাম্বার জেনে সেদিকেই ছুটলো। ইরা’দ ড্রাইভার এবং গার্ডদের তাঁর গাড়ির সামনে রেখে নওরির পিছে ছুটলো। নওরি কেবিনের কাছাকাছি আসতেই প্রিতম এবং তাঁর মায়ের মুখোমুখি হলো! তাদের দেখে নওরির পা জোড়া থেমে যায়। চমকে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে। প্রিতম নওরির দিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিলো। মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
–“মা, নওরি যে নিজে থেকে আমায় ধরা দিলো!”
তৎক্ষণাৎ ইরা’দ নওরির পিছে এসে দাঁড়ালো। মুখে গাম্ভীর্য ফুটিয়ে নওরিকে নিজের কাছে টেনে এনে বলে,
–“আমার বউয়ের থেকে দূরে থাকো!”

প্রিতম এবং মহিলা দু’জনেই চমকালো। বউ মানে? ইরা’দ কী-সব বলছে? মহিলা বেশ শান্ত কন্ঠে বলে,
–“তোমার বউ হলো কী করে? ও তো আমার ছেলের হবু বউ!”
–“ছিলো, এখন নেই। আমরা বিয়ে করেছি!”
মহিলা কঠিন চোখে চাইলো নওরির পানে!
–“এত বড়ো ধো!”কা!”
–“এখন আপনারা আসতে পারেন।”

বলেই ইরা’দ নওরির হাত ধরে টেনে নিয়ে চলে গেলো। প্রিতম রেগে ইরা’দের পেছন যেতে নিলে মহিলা আটকালো। প্রিতম এতে তেঁতে উঠে বলে,
–“আটকালে কেন? সাহস দেখেছো?”
–“বিয়ে হয়ে গেছে। কিছু বলে লাভ নেই। তোর জন্যে আমি আরও সুন্দর মেয়ে এনে দিবো। আমার ছেলের জন্যে কী মেয়ের অভাব পরেছে?”
–“কিন্তু মা…”
–“চুপ! আর যতো যাই হোক, এই মেয়ের তালাক হলেও এই মেয়েকে আমি বউমা হিসেবে মেনে নিবো না। অনেক শুনেছি তোর জেদ। এখন তুই আমার কথা শুনবি। চল!”

বলেই মহিলা প্রিতমকে একপ্রকার জোর করে নিয়ে গেলো।

——————
নওরি তাঁর বাবার হাত ধরে বসে আছে। নওরির সৎ মা নওরির দিকে অনিমেষ চেয়ে আছে। রোগা-পাতলা মেয়েটার স্বাস্থ্য ভালো হয়েছে। আগের চাইতেও চেহারায় অধিক উজ্জ্বলতা এসেছে। এতক্ষণে হয়তো পালানোর কথা উঠতো। কিন্তু ইরা’দ তাঁর স্বামীর সকল খরচ বহন করছে বিধায় মুখে কুলূপ এঁটেছেন মহিলা। রাফিয়া তাঁর পাশে বসেই বোনকে দেখছে। মনে হচ্ছে নওরির উজ্জ্বলতার কাছে তাঁর উজ্জ্বলতা ফ্যাকাসে। অনেকদিন ধরে নিজের যত্ন না নিলে যা হয় আর কী! রাফিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। এই রূপের জন্যে-ই তাদের বোনেদের মধ্যে ভেদাভেদ, বিরহ আসলো। নওরির বাবা এই মুহূর্তে ঘুমোচ্ছে। গতকাল রাতে সঠিক সময়ে হসপিটালে এনেছে বলেই রক্ষা। নয়তো খা!রাপ কিছু হবার সম্ভাবনা ছিলো। রাফিয়া নওরির দিকে গিয়ে তাঁর কাঁধে হাত রাখলো।
বললো,
–“এভাবে কাঁদিস না। বাবাকে ঘুমোতে দে। বাইরে চল!”
–“আমি বাবাকে ছেড়ে যাবো না।”
–“চলে যেতে বলিনি। বাহিরে আসতে বলেছি। ডাক্তার বলেছে বাবাকে একা রাখতে।”

নওরি কিছু বলে না। রাফিয়ার কথা মেনে নিয়ে রাফিয়ার সাথে বাইরে চলে যায়। নওরির সৎমা থেকে যায় ভেতরেই। কেবিন থেকে বের হতেই একজন অচেনা যুবক রাফিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। যুবকটি ঘুরে ঘুরে নওরিকে দেখছে। রাফিয়া যুবকটির উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
–“জুনাইদ, সুরভী ঠিক আছে তো?”
জুনাইদ একপলক নওরির দিকে চেয়ে বলে,
–“হ্যাঁ। এটা সেটা বুঝিয়ে স্কুলে দিয়ে এসেছি। বন্ধুদের মাঝে থাকলে আঙ্কেলের কথা কম মনে পরবে!”
–“ভালো করেছো!”
বলেই রাফিয়া নওরির দিকে তাকালো। নওরি অবাক চোখে রাফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
–“উনি কে আপা?”
–“জুনাইদ। তোর দুলাভাই। পনেরো দিন হলো আমাদের বিয়ের!”
নওরি আরও অবাক হলো। চমকে চাইলো জুনাইদের দিকে। বেশ সভ্য দেখাচ্ছে তাকে। রাফিয়া বুঝতে পারলো নওরির আগ্রহ। তাই সে সর্বপ্রথম জুনাইদের সাথে নওরির পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলে,
–“ওদিকে নওরির হাসবেন্ড আছে। তুমি ওনার সাথে আলাপ করো। এখন সময়টা নাহয় হোক আমাদের দু’বোনের।”

জুনাইদ ভ্রু কুচকে রসিক সুরে বলে,
–“ইয়ং পলিটিশিয়ান আমার শালীর হাসবেন্ড? ইশ! আমার শালীর কপাল পুড়লো!”
নওরি ফিক করর হেসে ওঠে। জুনাইদও হাসলো। হেসে আবার বললো,
–“ইয়ে মানে, তোমাকে যে এসব বললাম তা যেন ওনার কানে না যায়। নয়তো তোমার বোনটা অসময়ে বিধবা হয়ে যাবে!”
নওরি চোখে অশ্রু নিয়েই আরেক দফা হেসে বলে,”আচ্ছা বলবো না।”

————-
–“বাবা সম্ভবত তোকে নিয়ে চিন্তায় ছিলো। তুই চলে যাবার পর থেকেই বাবার মধ্যে অদ্ভুত চেঞ্জ এলো। সবসময় অন্যমনস্ক, নিশ্চুপ দেখাতো তাকে। তারপর আমি ভাবশূণ্য হয়ে যেসব কান্ড ঘটালাম..”
বলেই দীর্ঘশ্বাস ফেলে রাফিয়া। আবার বলতে শুরু করে,
–“আমার কারণে বাবা হয়তো তোর ব্যাপার মাথা থেকে কিছুটা ঝেড়ে-ই ফেলেছিলো। এরপর আমি স্বাভাবিক হতেই বাবা প্রতিদিন একবার করে জিজ্ঞেস করতো, “নওরি মা কল করেছে?” যখন বাবা আমার কাছ থেকে কোনো আশানুরূপ উত্তর পেত না তখন বেজার মুখে ফিরে যেত। তোর নিখোঁজ হওয়া নিয়ে বাবা কেসও করতে চেয়েছিলো। কিন্তু মা নানান অযুহাতে বাবাকে আটকে দেয়। এদিকে আমি অনুশোচনায় ভুগছিলাম কারণ, আমার কারণেই তুই বাসা ছেড়ে পালিয়েছিস। আমার অন্ধত্ব আমায় ধ্বং!সের পথে ঠেলেছিলো। সেই আঁধার থেকে আমি ততদিন আসতে পারিনি যতদিন না তোর কোনো খোঁজ পাচ্ছি। এদিকে বাবা মুখে কিছু না বললেও বুঝতাম, মনের মধ্যে অনেক অনুতাপ পুষে রেখেছে। কিন্তু কখনো সেসব জিজ্ঞেস করে বাবাকে বিব্রত করিনি। বরং এইটুকু উপলব্ধি করেছি, তোর উপর আমরা কী জু!লুমুটাই না করেছি। এরপর তোর খোঁজ পেলাম। বাবাকেও জানালাম। বাবার হাসিটা সেদিন ভূবন ভুলানো ছিলো জানিস? তোর সাথে যোগাযোগের পরপর-ই আমার জন্যে এক সমন্ধ আসে। জুনাইদের পক্ষ থেকে। বাবা খোঁজ-খবর নিয়ে বিয়ে করিয়ে দিলো। আমি অবশ্য এত আগ্রহী ছিলাম না। তবে একজন সঙ্গীর প্রয়োজন ছিলো আমার যা জুনাইদের মাধ্যমে পেয়েছি। জানিস আমার নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হয়, এত পাপ করার পরেও আল্লাহ্ আমায় এমন স্বামী দিবে আমি কখনো ভাবতে পারিনি!”
নওরি মুচকি হেসে বলে,
–“তুমি অনুতপ্ত হয়েছো, বেপথ থেকে ফিরে এসেছো। তাইতো উপহারস্বরূপ আল্লাহ্ তোমায় এমন জীবন্সঙ্গী দিয়েছে!”
–“না রে। খুব অন্যায় করেছি আমি তোর সাথে। সেই পাপের ভার এখনো আমার কাঁধে রয়ে গেছে।”

–“এভাবে বলো না। তুমি আবেগী মানুষ। আবেগে পরে মানুষ ভুল করেই। এতে নিজেকে এভাবে দোষারোপ করো না। তুমি ওরকমটা করেছো বলেই তো আল্লাহ্ আমায় নেতা সাহেবের মতোন একজনকে পাইয়ে দিলো! আল্লাহ্ যাই করেন ভালোর জন্য-ই করেন। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই!”

–“আচ্ছা ঠিকাছে। এরপর শুন। বিয়ে হয়ে জুনাইদের বাসায় আসার পর মায়ের থেকে জানতে পারি বাবা একা সময় কাটান, মাঝেমধ্যে রাতে উঠলে দেখতে পেতেন পায়চারী করছে। তোর উপর জু!লুমের জন্যে মায়ের সাথে নাকি অনেক রাগারাগিও করেছে। এ নিয়ে অ!শান্তি সৃষ্টি হয়। ঝগড়ার পর বাবা আরও একা হয়ে পরেন। চোখের নিচে কালি পরে। অতঃপর…”
রাফিয়া দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নওরির চোখ বেয়ে আবার জল গড়িয়ে পরে।

ঘন্টাখানেক পর সৎ মা জানায় নওরির বাবার জ্ঞান ফিরেছে। নওরি তখনই ছুটে যায় কেবিনের ভেতরে। মেয়েকে চোখের সামনে দেখে বাবার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো। নিঃশব্দে কাঁদতে লাগলো। নওরি চোখে জল নিয়ে বাবার হাত নিজের মুঠোয় নিয়ে বলে,
–“কে..কেমন আছো বাবা?”
নওরির বাবা কিছু বললো না। অনিমেষ চেয়ে রইলো মেয়ের দিকে। কত যুগ পর যেন দেখছেন মেয়েকে। নওরির বাবা সময় নিয়ে বললেন,
–“পাপের বোঝা কাঁধে নিয়ে কী করে ভালো থাকি রে মা?”
এবার নওরি নিজেকে সামলে উঠতে পারলো না। বাবার বুকে মাথা রেখে হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলো। নওরির বাবা দুর্বল হাতে মেয়েকে জড়িয়ে নিলো। কেবিনের দরজা থেকে ইরা’দ মুগ্ধ নয়নে বাবা – মেয়েকে দেখছে। কত বিরহের পর এই মিলন। চমৎকার লাগছে ইরা’দের নিকট। প্রাণ জুড়ানো দৃশ্য। কিছুক্ষণ আগেই মৌসুমি ফোন দিয়ে নওরির বাবার খোঁজ নিয়েছে। সাথে নওরির খোঁজ নিতেও ভুলেনি সে। যেন ফোনটা নওরির জন্যেই করেছে সে। মাকে নওরির এত খোঁজ-খবর নিতে দেখে ইরা’দ কিছু একটা আঁচ করতে পেরেছে। এর মানে কী মৌসুমি ধীরে ধীরে নওরিকে পছন্দ করতে শুরু করেছে? নির্ঘাত সিদ্দীক সাহেব মশলা মাখিয়েছে। শেষে মৌসুমি এও বলেছে যেন ঘরের বউকে নিয়ে শীঘ্রই ফিরে আসে। এতে ইরা’দের খানিক সন্দেহ নিশ্চিতে রূপ নিলো।
নওরির বাবা ভাঙা গলায় বলে,
–“তুই চলে যাওয়ার পর বুঝতে পারলাম আমার মুক্তার শেষ হিরেটাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। যার মাঝে মুক্তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেতাম তাকেই জীবনের সবচেয়ে বড়ো বেদনা দিয়ে ফেলেছি। আমার যে তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার-ও মুখ নেই রে মা। দিন-রাত এই চিন্তা করেছি যে কী করে এত পাপের বোঝা নিয়ে তোর সম্মুখে দাঁড়াবো?”

–“এভাবে বলো না বাবা। মা চলে যাওয়ার পর একমাত্র তুমি-ই আমার সম্বল। ক্ষমা তো আমি চাইবো তোমার কাছে। আমারই তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়া ভুল হয়েছে। খুব বড়ো অন্যায় করে ফেলেছি তোমার সাথে যোগাযোগ না করে। ক্ষমা করে দাও বাবা, আমার জন্যে তুমি এত কষ্ট পাচ্ছো!”

বাবা-মেয়ের কথোপকথন চললো আরও কিছুক্ষণ। কিছুক্ষণ পর সব স্বাভাবিক হয়ে এলো। নওরি ইরা’দকে বাবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো। ইরা’দ সালাম দিতেই বাবা অবাক হয়ে বলে,
–“তুমি সেই ইয়ং পলিটিশিয়ান নও? ইরা’দ?”
–“জ্বী বাবা!”
ইরা’দের মুখে বাবা ডাকটা শুনে হৃদয় কোমল হলো। নওরি নিচু গলায় বলে,
–“দুঃখিত বাবা। তোমার অনুমতি না নিয়ে-ই বিয়ে করে ফেলেছি!”
–“আরে ধুর বোকা! বিয়ে করেছিস তাঁর জন্যে কিসের ক্ষমা? আয় দেখি দুজনে আমার বুকে আয়!”

ইরা’দ এবং নওরি একে অপরের দিকে তাকিয়ে আলতো হাসলো। অতঃপর দুজনে একসাথে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো। এত সুখ নওরির হাতে ধরা দিয়েছে তা তো সে ভাবতেও পারছে না। সব আজ স্বপ্নের মতো সুন্দর। বাবা নামক ছায়াটা দেরী করে হলেও ফিরে পেয়েছে সে। সাথে ঢাল হয়ে পাশে পেয়েছে ইরা’দকে। আর কী চাই তাঁর? আজ রব যে পৃথিবীর সমস্ত সুখ তাঁর হাতে তুলে দিয়েছে। এজন্য-ই বুঝি বলে, ধৈর্যের ফল মিঠা হয়?”

——————-
আজ ইরা’দ এবং নওরির রিসিপশন প্রোগ্রাম। এই প্রোগ্রামে আজ সবাই উপস্থিত। নওরির পরিবার, নূরজাহানের পরিবার, মাহি সহ আরও অনেকে। সকলের মুখেই হাসি। আজ বোধহয় সবচেয়ে বেশি খুশি মাজেদা। দিব্যি লাঠিতে ভর দিয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে। তাঁর খুশি একটাই, নতুন নাতবউ তাঁর সমস্ত যত্ন-আত্তি করে। ঘর আলো করে রেখেছে। এমন এক লক্ষী নাতবউ-ই তো তার প্রিয় নাতির জন্যে মাবুদের কাছে চেয়েছিলো। নিদ্রও বেশ হেসে খেলে বেড়াচ্ছে। তাঁর নৌরি ফুল এবং নিদ্র ভাইয়ার বিয়ে। তাঁর একটু ভাবও তো নেয়া প্রয়োজন। নইলে আশেপাশের পিচ্চি মেয়ে’রা যে তাকে বা!ন্দর উপাধি দিবে। তাদের দেখাতে হবে না লিটল নিদ্রও ভের‍্যি কুল।

এতকিছুর পরেও রিসিপশনে বর-বউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁরা যে বেরিয়েছে নিখিলের বাইক নিয়ে শহর ভ্রমণে। সঙ্গে পিছু গিয়েছে ফ্রিশাও। ইরা’দ নওরি বর, বউ সাজেই বেরিয়েছে। ইরা’দ এবং নওরি দু’জনেই মুখে হেলমেট পরেছে। যার ফলে কেউ-ই তাদের চিনতে পারবে না। ইরা’দ বাইক চালাতে চালাতে হেসে বলে,
–“স্বপ্ন আমার সত্যি হলো। ভাগ্যিস স্বপ্নে দেখেছিলাম। নয়তো ফাংশন ফেলে ঘুরে বেড়ানোর কথা মাথাতেই আসতো না।”
নওরি আলতো হেসে ফ্রিশাকে এক হাতে আরও শক্ত করে আগলে নিলো। আজ ইরা’দের ফ্রিশাকে নিয়ে কোনো অভিযোগ নেই। বরং আজ সে সবথেকে বেশি খুশি।
তাঁরা ঘুরতে ঘুরতে এতিমখানার সেই জায়গাটায় আসলো, যেখানে ইরা’দ প্রথম ইঙ্গিতে নওরিকে প্রপোজ করেছিলো। এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা নিজ বুকপকেটে আগলে নেয়ার আবদার করেছিলো। আজও সেই গাছে ভৃঙ্গরাজের মেলা। ভৃঙ্গরাজে’রাও যেন হাসছে তাদের একসাথে দেখে। নওরি এক গুচ্ছ ফুল ছিঁড়ে নিয়ে সেগুলো ইরা’দের শেরওয়ানির বুকপকেটে রাখলো। এবং সেই ফুলগুলোর দিকে অনিমেষ চেয়ে লাজুক হেসে বলে,
–“এখানেই প্রথম অনুমতি চেয়েছিলেন, ফুলগুলো আপনার বুকপকেটে ছড়িয়ে দেয়ার। আজ অনুমতি দিলাম, এই বুকপকেটে রইবে একান্তই আমার এক মুঠো প্রেম রঙ্গনা। যেই প্রেমের ঘ্রাণে অনুভূতির প্রকাশ, আজ সেই ঘ্রাণে আমাদের পূর্ণতা। আপনি আমার পূর্ণতার বিরাট অধ্যায় নেতা সাহেব। এই ফুলগুলো আমাদের সেই পূর্ণতার প্রতীক।”

ইরা’দ নওরির দিকে চেয়ে মুগ্ধকর হাসি দিলো। অতঃপর সেই ফুলকে সাক্ষী রেখেই নওরির অনামিকা আঙুলে ভৃঙ্গরাজের আংটি পরিয়ে দিলো। লহু কন্ঠে বললো,
–“এই প্রেম রঙ্গনায় সবসময় সাজিয়ে রাখবো তোমায়। ঘ্রাণ নিবে এবং আমাদের পূর্ণতায় উপরওয়ালার কাছে শুকুরিয়া আদায় করবে।”

ইরা’দ এবং নওরি যখন নিজেদের মধ্যে ব্যস্ত, তখন হুট করে গাছের পেছন থেকে একটি বিড়াল এগিয়ে এলো ফ্রিশার কাছে। বিড়ালটি ফ্রিশার কাছাকাছি আসার চেষ্টা করলে ফ্রিশা তাকে পা দিয়ে লা! থি মে! রে দূরে সরে গেলো। সঙ্গে উচ্চশব্দে চিৎকারও দিলো। চোখ পাকিয়ে এমন ভাবে সেই বিড়ালের দিকে তাকালো যে বিড়ালটা দ্রুত পালালো। ফ্রিশা সেদিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে উড়ন্তি প্রজাপতির দিকে চাইতো। ইশ! ওটাকে যদি খোপ করে ধরতে পারতো! আচ্ছা প্রজাপতি খেতে কেমন?”

®লাবিবা ওয়াহিদ
————————–
~সমাপ্ত!❤️

বিঃদ্রঃ দীর্ঘ তিন মাস পর এই গল্পের সমাপ্তি ঘটলো। শেষবারের জন্যে সকলের মুগ্ধকর মন্তব্য দেখে মন জুড়াতে চাই। আর তো তাঁরা আসবে না, আপনাদের লোভনীয় মন্তব্যও পাবো না। তাই সকলের কাছে অনুরোধ মন্তব্য করবেন। আর ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আবার কবে নতুন গল্প নিয়ে ফিরবো জানা নেই। তবে আপনারা চাইলে শীঘ্রই। ততদিন অবধি আল্লাহ্ সকলকে ভালো রাখুক, আমার জন্যেও দোয়া করবেন। ভালোবাসা রইলো প্রিয় পাঠকমহলের জন্যে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ